তৃষিত তরঙ্গ পর্ব-১০

0
2

#তৃষিত_তরঙ্গ—১০
#প্রানেশা_আহসান_শীতল
(সংবেদনশীল ১৮+🔞)

” তরঙ্গ?”

সাথে সাথেই সুরসুর করে হাতের দুটো বই মুসাওয়াদের দিকে এগিয়ে দেয়। মুসাওয়াদ বইটা হাতে নিয়ে কিছু সময় তাকিয়ে বলে—–

” পড়ালেখা বাদ দিয়ে তাহলে এসব পড়ছেন, ছিহ্; অশ্লীল মেয়ে!”

হতমত মুখে খানিক সময় তাকিয়ে রইলো সাবরিহা। ঠিক কি কারনে মুসাওয়াদ তাকে অশ্লীল বলেছে? ঠোঁট ঠোঁট চেপে চোখ ছোট করে নিজের কোমড়ে হাত রাখলো সাবরিহা তারপর সন্দিহান গলায় বলে—–

“ ওয়েট এ্য মিনিট! আপনি জানলেন কি করে এগুলো অশ্লীল বই?”

মুসাওয়াদ এক ভ্রু উঁচিয়ে দাঁড়ালো। সাবরিহা হাটু ভাজ করে ছিলো বিধায় এখনো মুসাওয়াদকেই লম্বা লাগছে। মুসাওয়াদ উঠে দাঁড়িয়ে বলে—–

“ আপনি আমার হাটুর বয়সী মেয়ে; আমাকে এসব জিজ্ঞেস করতে এসেছেন?”

সাবরিহাও এবার ঠিক মতো উঠে দাঁড়ালো তারপর কোমড়ে হাত রেখেই কঠিন গলায় বলে—–

“ হ্যাঁ। করছি! কারণ আমার জানতে হবে!”

মুসাওয়াদ এবার একটু এগিয়ে এসে বলে—–

“ আমি মুখের থেকে করে দেখাতে বিশ্বাসী মিসেস লেফটেন্যান্ট! ইউ ওয়ানা সি?”

থতমত খেয়ে সরে এলো সাবরিহা৷ তারপর চোখ বড় বড় করে হতভম্ব গলায় বলে—–

“ আপনি তো ভারি কন্ট্রোলেস লেফটেন্যান্ট!”

মুসাওয়াদ কোমরের এক হাত রেখে আরেকহাত নিজের কপালের ডান পাশে চুলকে বলে,

“ আপনি নিজেই গতকাল থেকে আমায় অসভ্য কনট্রোলেস বানিয়েছেন! এখন সব আমার দোষ?”

সাবরিহা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে নিজের দিকে নিজের আঙ্গুল তাক করে অবাক গলায় শুধায়—–

“ আমি?”

“ জ্বি আপনি!”

চোখের পলক ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করতে চাইলো সাবরিহা তারপর বলে—–

“ আপনি কথা ঘুরাচ্ছেন লেফটেন্যান্ট!”

“ কথা আর আমি?”

কথাটা বলেই হুট করে সাবরিহার কোমড়ো হাত গলিয়ে পেঁচিয়ে নিলো মুসাওয়াদ। সাবরিহা এমন করায় ভরকে যায়! ততক্ষণে তার পিঠ ঠেকেছে মুসাওয়াদের বুকের সাথে। শীতল এক শিরশিরানি দিয়ে উঠলো পুরো শরীর! সাবরিহা ঢোক গিললো। মুসাওয়াদ থুতনী নামিয়ে সাবরিহার কাঁধে রাখলো তারপর ফিসফিস করে বলতে শুরু করে—-

“ কবুল বলার পর প্রথম কে জড়িয়ে ধরেছে?”

“ আমি!”

“ চুমু কে চেয়েছে?”

“ আমি!”

“ আমাকে উস্কেছে কে?”

“ আমি!”
মুহুর্তেই সাবরিহা বুঝলো সে ঠিক কি কি স্বীকার করেছে! দ্রুত বলে—– “ এই না না; আমি আপনাকে উস্কানি দেই নি!”

“ দেন নি?”

“ না!”

“ শাড়ির পিন কে খুলে দিতে বলেছে?”

“ আমি!”

“ ব্যাকহুক?”

“ আমি!”

“ ওখানে যে একটা রেড মোল ছিলো তা আপনি জানতেন?”

“ হু- না কি? কি বলছেন! ছাড়ুন আমায়! আপনি তো ভারী নির্লজ্জ —!”

কথায় কথায় জবাব দিতে দিতে মুসাওয়াদের কথার এই কথাট বিপরীতে সাবরিহা অনেকটা ভরকে যায়! নড়েচড়ে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো তবে মুসাওয়াদ ছাড়লো না। উল্টো নিজের পুরুষালি হাতের বেষ্টনী আরেকটু শক্ত করে। যেনো সাবরিহাকে নিজের ভেতর নিয়ে যাওয়ার ছোট্ট এক প্রচেষ্টা। তারপর কাঁধেই নাক ঘষলো৷ সাবরিহা চোখ বন্ধক রে ফেললো। তিততির করে কাঁপছে মেয়েটা। মুসাওয়াদ যেনো টের পেলো। তাই বিরবির করে আবারো বলে—–

“ ইউ নো হোয়াট, ইউ স্মেইল লাইক এ্য ড্রাগ! হাউ কুড আই স্টপ এন্ড কনট্রোল মাই সেলফ?

বড়বড় শ্বাস ফেলে নিজেকে সামলাতে চাইছে সাবরিহা। হাতের মুঠোয় শাড়ির অনেকটা চলে গিয়েছে। সে এখন এমন কিছুই করবে না। কিছু না! তাই অস্পষ্ট ভাবে জবাব করে—–

“ বাট আ’ম নট রেডি ফর দিস!”

“ প্লিজ গিভ মি এ্য লিটল চান্স তরঙ্গ! বিলিভ মি, ইট ওন্ট হার্ট!”

ঢোক গিললো সাবরিহা। মুসাওয়াদের এমন চাওয়া প্রত্যাখ্যান করার মতো সাহস নেই! মুসাওয়াদের এতো ধৈর্য হলো ঘুরালো নিজের দিকে। সাথে সাথে সাবরিহা চোখ নামিয়ে নিলো। মুসাওয়াদ সাবরিহার মুখ দেখলো। তারপর সাবরিহার মুখ নিজের দুহাতের আঁজলায় নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে—–

“ ভয় পাচ্ছেন!”

“ হু!”

মুসাওয়াদ হাসলো তারপর ধীরে আবারো কপালে চুমু খেয়ে কানের কাছে ফিসফিসে বলে—–

“ ডোন্ট বি এফ্রাইড, আই’ল বি সফট!”

লজ্জায় চোখ মুখ ভারী হয়ে উঠলো সাবরিহার। ঢোক গিললো তবে গলা শুঁকিয়ে কাঠ। চোখ মুখ লালচে আভায় শিক্ত হয়ে উষ্ণ হয়ে উঠলো। সাবরিহা জবাব না দেয়ায় মুসাওয়াদ সাবরিহাকে নিজের সাথে আরেকটু মিশিয়ে নিয়ে কানের কাছে বলছে—–

“ প্লিজ, ফর ওয়ান্স! আই ওন্ট বি রাফ!”

সাবরিহার দম বন্ধ হয়ে আসছে চাইছে। কি বলবে কি করবে? এমন একটা সিচুয়েশনে বিয়ের পরেরদিনই পড়বে সে কল্পনাও করে নি। অথচ মুসাওয়াদ বারবার চাইছে। লম্বালম্বা শ্বাস ফেলে কিছু এলটা বলতে চাইলো। এইবার মুসাওয়াদ যেনো নিজের ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করে নিয়ন্ত্রণ হারালো। আঁকড়ে ধরলো সাবরিহার ওষ্ঠ। সাবরিহা প্রথমে কিছুটা ভরকে গেলেও পরে যখন নিজেকে সামলে মুসাওয়াদের ঘাড়ে নিজের হাত রাখে তখন যেনো মুসাওয়াদ পুরোপুরি সম্মতি পেয়ে নিয়েছে। সাবরিহার হাতের চুড়ি থেকে শুরু করে পায়ের নুপুর সব কিছু যেনো ঝংকার তুলছে। মুসাওয়াদের সেদিকে খেয়াল নেই সে খুব যত্নে সাবরিহাকে বিছানায় রেখে যখন ওষ্ঠ দক্ষল করা অবস্থায় শাড়ির আঁচলে হাত রাখে। সাবরিহা তখন প্রায় হাঁপিয়ে উঠেছে। নিজেকে কোনো মতো দমিয়ে এনে হাঁপিয়ে যাওয়া গলায় বলে—–

“ ওয়েট মুসাওয়াদ হোল্ড অন, আই কান্ট ব্রিথ!”

“ আই কান্ট!”

“ আমায় নুপুর আর চুড়ি গুলো তো খুলতে দিন; শব্দ হচ্ছে!”

মুসাওয়াদ শীতল চোখে তাকায় সাবরিহার দিকে তারপর আবারো ফিসফিস করে গতকাল রাতের বিরবির করা বাক্য আওড়ায়—–

“ আপনি অতল সমুদ্রের মতো নীল সমুদ্র আমায় নির্ভীক বানিয়েছে আর আপনি সেই তরঙ্গ যে আমার নির্জীবতাকে চূর্ণবিচূর্ণ করেছে! আপনি যেমন আপনার তাণ্ডবী ঢেউয়ে আমাকে উন্মাদ করবেন, আমিও আপনাকে ছিন্নভিন্ন করব আমার শর্তে। আপনার চুড়ির শব্দ, নূপুরের কম্পন; সবকিছু আমার ছোঁয়ায় এমনভাবে আপনাতে গেঁথে যাবে, যা কখনোই আপনার থেকে মুক্তি পাবে না। নট ইভেন হোয়েন আই টিয়ার ইউ অ্যপার্ট পিসেস বাই পিসেস, হোয়াইল ইউ উইশপার মাই নেইম বিটুইন ইউর স্যাটার্ড ব্রেথ, —- এন্ড নাউ ইউ কান্ট সেপারেট দেম ফরম ইট! আই উইল ইনজয় দ্য সাউন্ড!”

সাবরিহা একটু ঘাবড়ালো। মুসাওয়াদ দেখলো। তাই কপালে গাঢ়ো এক চুমু খেয়ে আবারো বলে—–

“ লেটস রিক্রিয়েট ইউয় ফেবরেট সীন ফরম ইয়োর — অশ্লীল বই! “

“ মুসাওয়াদ —”

কথা সম্পূর্ণ করার আগেই মুসাওয়াদ দক্ষল করলো সাবরিহার সবটা! মিলেমিশে একাকার হয়ে এলো। অদ্ভুত সব নিয়ম কানুন ও জড়তা সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে সমুদ্রের রাজপুত্র তার তরঙ্গকে নিজপর মাঝে ধারণ করলো। এই বুঝি সূচণা! সাবরিহা ভালোবেসেছিলো আর মুসাওয়াদ আশকারা দিয়ে তা নিয়ে গেলো আমৃত্যু যন্ত্রণা ও ভালোবাসার জায়গায়!

——-

সাবরিহা ঘুমিয়ে আছে মুসাওয়াদের বক্ষ দক্ষল করে, আর সে তাকিয়ে আছে সাবরিহার দিকে, সাবরিহার লম্বা চুল গুলো ঢেকে দিয়ে আছে তাকে। মুসাওয়াদ আলতো ঠোঁটে হাসলো তারপর ধীরে চুল সড়িয়ে দিয়ে পিঠের সেই তাল তিলটা দেখলো। একদম রক্ত কুন্ডুলির মতো হয়ে আছে। শ্বাস ফেলে মুসাওয়াদ সে শুধু সাবরিহার ভয় কমানোর জন্যই বলেছে সে সফট থাকবে আদোও পেরেছে? মেয়েটা কান্না করেছে পাগলের মতো! তখন কোনো কিছু অনুভব না হলেও এখন ভীষণ রিগ্রেট হচ্ছে! এমনটা করা তার উচিত হয় নি! মুসাওয়াদের কি হয়েছে জানে না তবে এখন তাকে কনট্রোললেস উপাধি দিলেও বোধহয় কম হয়ে যাবে! কিন্তু সে তো এমন ছিলো না? হয়েছে কি? কেনো হলো? চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের উত্তর খুঁজতে চাইলো তবে সে ব্যর্থ! মুহূর্তেই বালিশের পাশে ফোনটায় বিপবিপ শব্দে বেজে উঠল। মুসাওয়াদ আলতো ঘাড় ঘুরিয়ে ফোনটা দেখলো তারপর ধীরে হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো। মেইল এসেছে! শীতল চোখে ফোনের মেলবক্স থেকে মেল চেক করে ঢোক গিলে আবারো সাবরিহার দিকে তাকালো। সাবরিহা ঘুমিয়ে আছে! আচ্ছা তার তো আরো চারদিন ছুটি ছিলো কিন্তু হুট করে মিশনের ডাক পড়ায় ছুটি ক্যান্সেল কেনো হলো? আর কয়েকদিন কি তার তরঙ্গের সাথে থাকা যেতো না? আর কটা দিন এখানে থাকলে কি হতো? আবারো বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। ফোনটা পাশে রেখে মুসাওয়াদ সাবরিহার মাথায় হাত বুলায় তারপর নরম গলায় ডাকে—–

“ সাবরিহা? ওও সাবরিহা? উঠুন ম্যাডাম!”

নড়েচড়ে উঠে মৃদু আর্তনাদ করে কেঁদে উঠলো সাবরিহা তারপর বলে—–

“ ইট’স হার্ট এ্য লট কায়ান!”

মন খারাপ হয়ে এলো মুসাওয়াদের। মেয়েটা কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছে এখন আবারো ঘুম থেকে উঠে কান্না করছে। ধীরে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে—–

“ আ’ম স্যারি তরঙ্গ! আমার হার্ড হওয়া একদম উচিত হয় নি! আমি আসলে কন্ট্রোল করতে পারিনি। এখন উঠুন, আমার যেতে হবে!”

সাবরিহা আদুরে ভঙ্গিতে মুসাওয়াদের পুরুষালি বক্ষে নাক ঘষছিলো। চলে যাবার কথা শুনে তড়াক করে তাকায় সাবরিহা তারপর অদ্ভুত গলায় শুধায়—–

“ কোথায় যাবেন আপনি? এখনো তো চার দিনের ছুটি আছে।”

“ উহু সোনা, মেইল এসেছে – মিশনের তাই ছুটি ক্যান্সেল হয়েছে। ”
কথা বলতে বলতে চুল সরাতে সরাতে আদুরে ভঙ্গিতপ কথা গুলো বলছিলো মুসাওয়াদ। অথচ ছলছল চোখে তাকিয়ে সাবরিহা যেন না যাবার আকুতি জানাচ্ছে সে। তাই অদ্ভুত গলায় শুধায়—–

“ আ’ম আমি—!”

কথা সম্পূর্ণ করার আগে মুসাওয়াদ ঢোক গিললো সে জানে এটা ঠিক হবে না তবুও ধীরে আবদারের সুরে বলে——-

“ সন্ধ্যায় যেতে হবে আমার, প্লিজ ওয়ান্স মোর…”


চলবে! [ রিচেক দেই নি ]