তৃষিত তরঙ্গ পর্ব-১১

0
2

#তৃষিত_তরঙ্গ —১১
#প্রানেশা_আহসান_শীতল

“ সন্ধ্যায় যেতে হবে আমার, প্লিজ ওয়ান্স মোর…”

“ কিন্তু—!”

“ প্লিজ?” — থেমে গেলো মেয়েটা। এগিয়ে এসে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মুসাওয়াদকে। মুসাওয়াদ তার জবাব পেয়ে গেছে তাই খুব আদরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ফোন খুঁজে কাউকে কল দিলো। কল রিসিভ হতেই ধীরে বলে——-

“ ছুটি ক্যান্সেল হয়েছে আম্মু। আমায় সন্ধ্যায় চলে যেতে হবে।”

আমেনা বেগম অবাক হলেন। তবে সেনাসদস্যদের জীবন তো এমনই। নিজেও তো সেনাসদস্যের স্ত্রীই ছিলেন। তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে—–

“ ওকে টেইক ইয়োর টাইম বেটা!”

মুসাওয়াদ হাসলো। সবরিহা তাকিয়ে আছে মুসাওয়াদের দিকে। মুসাওয়াদ সাবরিহার কপালে আলতো ঠোঁট ছোঁয়ায় তারপর ফোনের বিপরীতে থাকা আমেনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে—-

“ আচ্ছা, রাখছি আম্মা। “

“ আচ্ছা। “ — সাথে সথে আমেন বেগমের সাবরিহার কথা মনে পড়তেই আবরো কিছুটা জড়তা নিয়ে বলে—–

“ আচ্ছা শোন না, সাবরিহা?”

“ আছে, চলে যাবো শুনে মন খারাপ করেছে!”

সাবরিহা অবাক চোখে তাকায় মুসাওয়াদের দিকে তারপর বিরবির করে বলে—–

“ আপনি মিথ্যা বলছেন কেনো আম্মুর কাছে?”

মুসাওয়াদ জবাব দিলো না সবরিহার কথায়। আমেনা বেগম ফের বললেন—–

“ আচ্ছা, ওকে বোঝা আর সময় দে। আমি কি খাবার —!”

“ খেয়েছি আমরা। দরকার নেই আম্মু!”

“ আচ্ছা।” — আমেনা বেগম আর কথা বাড়ালেন না। কল কেটে দিলেন, নতুন বিয়ে হয়েছে তারউপরে ছেলে চলে যাবে। কবে আসবে কেউ জানে না। একটু পার্সোনাল কোয়ালিটি সময় কাটাক নাহয়। ছেলেটাতো আর সাবরিহাকে সাথে করে নিয়ে যাবে না! এসব ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমেনা বেগম। এদিকে কল বিচ্ছিন্ন হতেই সাবরিহার দিকে তাকায় মুসাওয়াদ তারপর এক ভ্রু উঁচিয়ে বলে—-

“ আমি চলে যাবো শুনে, আপনি একটু মন খারাপ করেন নি?”

“ ন-না!”— কথাটা বলেই কেনো যেনো কেঁদে দেয় সাবরিহা তারপর ক্রন্দনরত গলায় আবদার স্বরুপ বলে—–

“ প্লিজ আরেকটু থেকে যান?”

“ সম্ভব নয় সাবরিহা। আমার নিজেরও এবার যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ভাবছিলাম ছুটিটা আরেকটু বড় হলে কি এমন হতো? অথবা আপনার সাথে আরেকটু আগে কেনো দেখা হলো না? তাহলে জানতে পারতাম আমায়ও কেউ এতোটা ভালোবাসে।”

তারপর একটা শ্বাস ফেলে ফের বলে—–

“ কিছু করার নেই মিসেস, নাও গিভ মি সাম প্লেজার মাই সী অ্যাঞ্জেল, যেন ফিরে আসার আগ পর্যন্ত এই আবেশ আমায় আপনাতে জড়িয়ে রাখে আপনাকে এক মুহুর্তের জন্যও না ভুলি।”

“ আমাকে ভুলে যাবেন?”

“ উহু, আপনাকে ভুলে যাবার আগে যেনো আমার—!”

কথা শেষ করার আগেই সাবরিহা মুখ উঁচিয়ে মুসাওয়াদের ওষ্ঠে চুমু খেয়ে বলে—–

“ যতসব অলক্ষুণে কথা!”

হেসে ফেলে মুসাওয়াদ তারপর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে—-
“ এসব বাদ আপতত আপনাকে চাই…”

কথাটা বলেই সাবরিহাকে আবারো নিজের দখলে নেয় মুসাওয়াদ। সাবরিহা খানিক সময় সারা দিলেও কিছু একটা মনে পড়তেই ঠেলে সরাতে চাইলো মুসাওয়াদকে। তবে মুসাওয়াদ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে উল্টো সাবরিহার ছোটদুই হাত নিজের মুঠোয় পুরে নিয়ে উপরের দিকে উঠিয়ে চেপে ধরে রেখে নিচু গলায় কানের কাছে শুধায় —–

“ আ’ম নট ডান ইয়েট সাবরিহা। বি এ্য গুড গার্ল আই’ল বি ইয়োর — ।”

কথাটা বলেই চোখ টিপলো মুসাওয়াদ তবে সাবরিহা শুনলো না মাথা নাড়িয়ে লম্বা শ্বাস টেনে বলে—-

“ ছাড়ুন আমায়, আপনি অনেক ডেস্পারেট।”

হতাশ শ্বাস ফেললো মুসাওয়াদ। তারপর সাবরিহার হাত ছেড়ে দিয়ে তার বক্ষে মাথা রাখলো। সাথে সাথে নরম হয়ে এলো মেয়েটা। আলতো হাত রাখলো মুাসওয়াদের চুলে। মুসাওয়াদ চোখ বন্ধ করে সাবরিহার হৃৎকম্পন অনুভব করছে। সাবরিহার হুট করেই চোখ গেলো মুসাওয়াদের পিঠের দিকে তাই ঢোক গিলে ধীরে বলে—–

“ লেফটেন্যান্ট?”

“ হু?”

“ একটা অনুরোধ রাখবেন?”

“ বলুন মিসেস লেফটেন্যান্ট?”

“ ক্যাম্পে গেলে কিছুদিনের জন্য উদোম শরীরে ঘুরবেন না!”

কথাটা না বুঝতে পেরে চোখ মেলে তাকায় মুসাওয়াদ তারপর ধীরে সাবরিহার দিকে তাকিয়ে অবাক গলায় বলে—–

“ মানে?”

ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে নিলো সাবরিহা, তা দেখে ভ্রু কুঁচকে নিজের দিকে ঘুরালো মুসাওয়াদ তারপর গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে—–

“ বুঝিয়ে বলুন, কি হয়েছে আম—”

সাথে সাথেই টনক নড়লো মুসাওয়াদের। সাথে থেমে যেয়ে শীতল চোখে তাকালো সাবরিহার দিকে তারপর সাবরিহার গ্রীবাদেশের ওখানে এক রক্তাভ কুন্ডলী পাকানো জায়গায় হাত বুলাতে বুলাতে দুষ্টুমির গলায় বলে—–

“ অনুরোধ মঞ্জুর করা যায় কিন্তু এক শর্তে মিসেস লেফটেন্যান্ট!”

অবাক চোখে তাকায় সাবরিহা। এই লোকের কি লজ্জা-লজ্জার বালাই নেই? সাবরিহা মুখে উত্তর না দিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে—- “ কি?”

“ ওই যে —!”

ভারী অভিমান হলো সাবরিহার। মুখ লুকাতে চাইলো চাদরের নিচে। মুসাওয়াদ দেখলো সাবরিহাকে তারপর ধীরে চাদরসহ উল্টে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ধীরে শুধায়—–

“ হোয়াট হেপেন সী এঞ্জেল?”

সাবরিহা জবাব না দিয়ে মুসাওয়াদের বুকে মাথা রাখলো। এবার একটু ঘাবড়ালো মুসাওয়াদ তারপর ধীরে সাবরিহার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করে—-

“ কি হয়েছে আপনার?”

“ কিছু না‌।”

মুসাওয়াদ হাসলো। তারপর কানের পাশে চুমু দিয়ে ফিসফিস করে বলতে বলতে সারা চাদর পেচিয়ে নেয় নিজেদের সাথে তারপর ফিসফিস করে বলে—–

“ ইউ উইল হ্যাভ এ্য লিটল ট্রাবল। বাট টলারেট এ্য লিটল, দিস ইজ দ্য লাস্ট ওয়ান, ইট উইল নট হার্ট দিস টাইম মাই লিটল ওয়েভ।”

——–

পিটপিটিয়ে তাকালো সাবরিহা৷ চোখে আলো পড়তেই আবারো চোখ বন্ধ করে কপাল কুঁচকে ধীরে ধীরে তাকায় সাবরিহা। তার সাথে লেপ্টে ক্লান্ত মুখে মুসাওয়াদ ঘুমিয়ে আছে। সাবরিহা চাদর টেনে উঠে বসে। তারপর আশেপাশে তাকিয়ে বিছানার পাশে ডিভানে অবহেলায় ফেলে রাখা একটা শার্টের দিকে নজর যায় তাই মৃদুশ্বাস ফেলে চাদরটা ভালো মতো পেঁচিয়ে নিয়ে মেঝেতে পা রাখতেই যেন সারা শরীর চিরচির করে উঠলো সাথে যতগুলো হাড় ছিলো তা নড়েচড়ে উঠেছে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে আর্তনাদ আটকানোর চেষ্টা করে আবারো বিছানায় বসে ধীরে মুসাওয়াদের দিকে তাকায়। মুসাওয়াদকে ঘুমাতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ঘরের বড় ঘড়িটার দিকে তাকায় – দুপুর তিনটা পার হয়েছে৷ এতোটা সময় এখানে আমেনা বেগম কি ভাবছে, ভাবতেই লজ্জিত হলো মেয়েটা। ঢোক গিলে সবটা গিলতে চাইলো তারপর আলতো পায়ে এগিয়ে এসে মুসাওয়াদের শার্ট গলিয়ে তা পড়ে নিলো। পা যেন অবশ হয়ে আসতে চাইছে৷ কান্না পাচ্ছে ভীষণ তবে তা চেপে গেলো কান্না করলে মুসাওয়াদ উঠে যাবে আর পাগলামি তো আছেই; তাই ধীরে রুমের আসবাবপত্র ও দেয়াল ধরে তাদের সাহায্য নিয়ে ওয়াশরুমে এসে মুখে পানি ছিটিয়ে হাত দিয়ে চুলের খোপা করতে যেয়ে চোখে পড়লো অন্য কিছু৷ আয়নায় গাঢ় দৃষ্টি ফেলে ঘাড়ে গলায় ও কিছু দৃশ্যমান সফট জায়গায় আঙ্গুল ছুঁইয়ে দেখে, নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই ঘাবড়ে গেলো মেয়েটা। ঢোক গিলে আবারো দরজা দিয়ে রুমের দিকে তাকালো। এই লোক একটা রা ক্ষস। সাবরিহাকে টুপ করে গিলে খেয়ে ফেলতে পারলে বোধহয় শান্তি পেতো সাথে তাই-ই করতো। মেজাজ খারাপ হয়ে এলো তাই আবারো ধীরে দেয়ালের সাহায্যে রুমে এসে নিজের লাগেজ থেকে একটা করা লাল রংয়ের লিপস্টিক তুলে নিয়ে মুসাওয়াদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে মুসাওয়াদকে দেখে তার পিঠের উপর উঠে বসে পড়ে। তাতেই যে মুসাওয়াদের ঘুম ছুটে এলো। তবে একটুও নড়লো না চুপটি করে ঘুমের মতো পড়ে রইলো। সাবরিহা বসে এবার পিঠে হাত বুলালো। ইশশ, এতো এতো দাগ গুলো সে করেছে, ছিলে যা তা অবস্থা হয়ে র ক্ত বেরিয়ে দগদগে ক্ষত হয়ে শুকিয়ে গেছে৷ মন খারাপ হয়ে এলো তবুও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে, হাতের লিপসিক টা ঠোঁটে দিয়ে তারপর মুসাওয়াদের পিঠে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে ফেলে। এতে লাল লিপস্টিকের দাগ গুলো স্পষ্ট হয়ে এলো মুসাওয়াদের পিঠে। মুসাওয়াদও সাবরিহার এমন অত্যাচারে হুট করে আর চুপ থাকতে না পেরে মেয়েটার হাত টেনে নিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজের দুহাত দিয়ে দুপাশে বেষ্টনীর মতো করে মেয়েটার মুখ পর্যবেক্ষণ করে তারপর বলে—–

“ হচ্ছে কি, জ্বালাচ্ছেন কেন?”

সাবরিহা মুখে কিছু বললো না। তাই মুসাওয়াদ কপাল কুঞ্চিত করে বলে—–

“ পিঠে কি করছিলেন? আর এখন ঠোঁটে লিপস্টিক? এটা দেখে যদি আমি এখন আরেকবার দাবি করি তখন নিতে পারবেন?”

মুহূর্তেই চোখ মুখ রক্তাভ হয়ে এলো সাবরিহার। নড়েচড়ে বলে—–

“ ছিহ্ইই, অসভ্য লোক। ছাড়ুন আমায়।”

“ উহু! এতো সময় আপনি জ্বলিয়েছেন, তাতে কিছু না? নাও ইট’স মাই টার্ন সী এঞ্জেল!”

“ ছাড়ুন কায়ান। আই কা’ন্ট বেয়ার দিস নাও!”

“ উস্কানোর আগে ভাবা উচিত ছিলো সাবরিহা। নাও পে অ্যাটেনশন টু মি। আ’ই উইল মেইক শিউর দ্যাট ইউ উইল নেভার প্রভোক মি… লাইক —”

সাথে সাথে সাবরিহা ছটফটিয়ে উঠে মুসাওয়াদের মুখে হাত চেপে ধরে বলে—–

“ আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ করুন নির্লজ্জ পুরুষ! সারাক্ষণ শুধু—!”

কথা সম্পূর্ণ করার পূর্বই ধৈর্য হারালো মুসাওয়াদ …
লালালালালালাললললাআআআআআ 😵‍💫😏

—-
চলবে…