তৃষ্ণার্ত প্রেম পর্ব-০২

0
9
তৃষ্ণার্ত প্রেম
বাংলা রোমান্টিক গল্প | তৃষ্ণার্ত প্রেম

#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|২|
#শার্লিন_হাসান

🚫(কপি করা নিষেধ) 🚫

রাতে ডিনার করে তাইজ্যিনের পেছন,পেছন শার্মিলা রুমে প্রবেশ করে। সাধারণ দিনের মতোই আজকে রুমটা। নেই কোন ফুলের উপস্থিতি। শার্মিলা সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে। তাকে এভাবে বসতে দেখে মূহুর্তে তাইজ্যিনের চেহারা রাগে রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। চেঁচিয়ে বলে,
“আমার সামনে অর্ডিনারী কেউ পা উঁচু করে বসা, আমার পছন্দ না মিস শার্মিলা ইবনান শ্রেয়সী।”

“তাহলে তো আপনার সামনেই পায়ের উপর পা তুলে বসা উচিত আমার।”

“ডোন্ট ক্রস ইওর লিমিট।”
আঙুল উঁচিয়ে কথাটা বলে তাইজ্যিন। শার্মিলা উঠে দাঁড়ায়। তাইজ্যিনের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি সুরে শুধায়, ” মিস্টার চৌধুরী
উফফস স্যরি মিস্টার মাফিয়া চৌধুরী এতো তর্জনী দাও কেন সোনা? আমায় চেনো তো?”

শার্মিলার কথায় বিরক্তি নিয়ে তাইজ্যিন প্রতিত্তুর দেয়,
“আহা গো সোনা আমার এমন ভাবে বলছ জেনো তুমি কোন দেশের আইনের লোক যে আমার মতো পাপীকে জেলে পাঠাবে।”

“শ্লা এই জন্যই তোকে নমরুদ ডাকি। তোর নামটা হওয়া উচিত, দেশী নমরুদ চৌধুরী।”

“শার্মিলা……

” আমার নামটা এতো সুন্দর কেন?”

তাইজ্যিনের মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ গাঢ় হচ্ছে। শার্মিলাকে যা ভেবেছিল তার বিপরীত। কত বড় সাহস তার মতো মাফিয়ার মুখে,মুখে তর্ক করে। অন্য কেউ হলে এতোক্ষণ পটল তুলতে যেতো। তাইজ্যিনকে রাগিয়ে শার্মিলা জেনো তৃপ্তি পেলো। আরেকটু খোঁচা মে’রে বললো, “নমরুদ চৌধুরী অনেক তো বেড শেয়ার হলো তা খু’ন কয়টা করা হয়েছে?”

“তোমার বয়সের থেকেও বেশী।”
কিছুটা শান্ত স্বরে জবাব দেয় তাইজ্যিন। শার্মিলা মুখ বাঁকা করে বলে, “অউ আমি তো ভেবেছিলাম শতাধিক হবে। নিশ্চয়ই তোমার বস শতাধিক খু’ন করেছে।”

“সেসব জেনে তোমার কী কাজ? এতো কিছু জানতে হয়না।”

“তোমার বসের নাম জেনো কী?”

“জানি না।”

“অন্যের এসিস্ট্যান্টগিরি করতে ইগোতে বাঁধে না?”

কথাটা জেনো সঠিক জায়গায় তীরের মোক্ষম আঘাত ছিলো। তাইজ্যিন মূহুর্তে চেঁচিয়ে উঠে। তার চেঁচানোর শব্দ দেওয়ালে বা’রি খেয়ে ভয়ংকর ধ্বনি তুলছে। রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে শার্মিলার দিকে তাকায় তাইজ্যিন। মূহুর্তে মুখের রং চেঞ্জ হয়ে যায় তার। শার্মিলার কাছে তার এই রাগ জেনো পানি ভাতের মতো। একটু ভয়ডর তো দূরে থাক কোন রিয়েক্ট ও করেনি। শার্মিলার সাহস দেখে তাইজ্যিনের সন্দেহ হয়। এই মেয়েকে যতটা অর্ডিনারী ভেবেছিল সে ততোটা অর্ডিনারী না। তার মাঝে নিশ্চয়ই বিশেষ কোন গুণ আছে কিছুটা হলেও ধারণা করা যায়। তাইজ্যিনের চমকানো জেনো শার্মিলাকে পুনরায় তৃপ্তি দিলো। সন্দেহের সৃষ্টি হবে ভেবে শার্মিলা ব্যপারটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তাইজ্যিনকে বলে, “হুম ভেবেছিলাম বিয়েটা করব ভালো কোন ছেলেকে যার সাথে বাসর রাতে সুন্দর বাসর কাটানো যায়। এই জন্যই একটা ফুলের অস্তিত্বই নেই রুমে।”

শার্মিলার কথা তাইজ্যিন আমলে নেয়নি। এসবে তার ইন্টারেস্ট নেই। বিগত কয়েক বছর ধরে মোটামুটি বেড শেয়ার টা চললেও শার্মিলা তার বিয়ে করা বউ অথচ তার কোন হেলদোল আসছে না। এটা ভেবে শার্মিলা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। বিয়ে যেহেতু হয়েছে একদিন হলেও হয়ত ফিজিক্যাল রিলেশন গড়তে হবে। সাতশ ত্রিশ দিন তো দেখতে,দেখতে পার হবে না। কিন্তু শার্মিলা চায় না এসব কিছু তাদের মাঝে ঘটুক। নিজের কাজ শেষ হলে এই বাড়ীটাও ছেড়ে দিবে সে। তাইজ্যিনের কী মনে হতে বাঁকা হাসে শার্মিলার পাণে চেয়ে। তাইজ্যিনকে হুট করে এভাবে হাসতে দেখে কিছুটা ভড়কে যায় শার্মিলা তবে প্রকাশ করার আগে নিজেকে সামলে নেয়। শার্মিলার হাত ধরে টেনে বসা থেকে উঠিয়ে দেয় তাইজ্যিন। শার্মিলাকে দাঁড় করিয়ে নিজে বসে পড়ে সোফায়। পায়ের উপর পা তুলে বসতে শার্মিলা বিরক্ত হয়। তখন তাইজ্যিন শুধায়, “মিস শার্মিলা তুমি হয়ত জানো তাইজ্যিন এক নারীকে একবারের বেশী ছুঁয়ে দেখে না। তুমিও সেই এক নারীদের কাতারে পড়ে গেছ যেহেতু আমার আয়ত্তে আছ।”

“তো?”
ব্রু কুঁচকে বলে শার্মিলা। তাইজ্যিন মূহুর্তে জবাব দেয়, “সাতশ ত্রিশ দিনের মধ্যে আমি শুধু তোমায় একবারই ছুঁয়ে দেখব।”

কথাটা বলে বসা থেকে উঠে শার্মিলা কে পাশ কাটিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে। শার্মিলা নিজের দিকে তাকায়। লাল শাড়ী এখনো কায়ায় জড়ানো। এক্সট্রা জামাকাপড় কিছুই নেই। রাতে শাড়ী পড়ে ঘুমাতে হবে ভাবতে আঁতকে উঠে। শাড়ী পড়ার অভ্যাস থাকলেও সবসময় স্লিভলেস শর্ট টপস পরেই ঘুমানোর অভ্যাস তার। এই অভ্যাস চেঞ্জ করতে হবে ভাবতে বিরক্তি চলে আসে। রুমে এসে চলছে তবুও মূহুর্তে, মূহুর্তে ঘেমে একাকার হয়ে উঠছে শার্মিলা। তাইজ্যিন শার্মিলা কে ডাক দেয়। হাত দিয়ে ইশারা করে খাটে বসার জন্য। সাদা চাদরে মোড়ানো গোলাকার খাটের একপাশে তাইজ্যিন বসা। শার্মিলা তাইজ্যিনের দিকে তাকিয়ে শুধায়, “তোমার সাথে এডজাস্ট করতে আমার কিছুটা সময় লাগবে।”

“অকে! যত সময় লাগে নেও। তো খাটটা ভাগ করে দেব?”

“তার প্রয়োজন নেই।”

তাইজ্যিন বেশ ক্লান্ত সেজন্য আর কথা বাড়ায়না। দুটো বালিশ খাটের দু’পাশে রেখে, গোলাকার খাটের চারপাশের পাতলা সাদা রঙের পর্দা গুলো টেনে দেয়। শার্মিলাকে শুয়ে পড়ার জন্য ইশারা করে। মাঝখানে অনেকটা জায়গা ফাঁকা আছে।

“শার্মিলা রুমটা নিজের মনে করে ইউজ করতে পারো।”

শার্মিলা জবাব দেয়না। জানে তাইজ্যিন বেশ চালাক। এই রুমে তাইজ্যিনের পার্সোনাল কোন কিছুই পাওয়া যাবে না। একটা সুতোও না। তাইজ্যিনের গড়া পা’পের রাজ্য ধ্বংস করার জন্যই শার্মিলার আগমন। কিন্তু কোন কিছু সহজে সে পাবে না এটা শিওর। শার্মিলার চোখে ঘুম নেই মাথা ভর্তি অজস্র চিন্তাভাবনা তার। এই বাড়ীর বাইরে নিজের ইচ্ছে মতো যেতে পারবে না এটাও নিশ্চিত সে। দিনের বেলা তো না-ই রাতে তো তাইজ্যিন থাকবে, রাতেও না। তিথিয়া চৌধুরী না জানি তাকে আর কত নিয়ম দেয়। এই বাড়ীটা বেশ অদ্ভুত! গার্ডস,সার্ভেন্ট, তিথিয়া চৌধুরী এবং জেসিয়া ইসলাম ব্যতীত কাউকেই চোখে পড়েনি। শার্মিলার জানা ডিটেইলস অনুযায়ী চৌধুরী বাড়ীর বড় ছেলে কোন এক্সিডেন্টে মা-রা গিয়েছে সাথে তার ওয়াইফ আর একটা বাচ্চাও মা-রা গিয়েছে তবে সত্যতা শার্মিলা জানে না। ওই অব্দি পৌঁছাতে পারেনি। এই চৌধুরী পরিবার সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে শুধু তাদের প্রফেশন জানে। বিশেষ করে তাইজ্যিনের জন্য তাদের অনেক বিষয় মাঝেমধ্যে লোকমুখে হাইলাইট হয়।

পরের দিন সকালে শার্মিলা ফ্রেশ হয়ে নিজের ফোন নিয়ে বেলকনিতে যায়। বেলকনিটা দেখে রাগ হয় শার্মিলার। এটাকে বেলকনি না বলে রুম বললেই ঠিক হয় এতো জানালা দরজা লাগানো। ভারী সাদা কাচ জেনো ভেতরের অবস্থান করা মানুষগুলোকে সুরক্ষা দেয়। কিন্তু বেলকনি মানেই তো একটু খোলামেলা জায়গা যেখানে প্রকৃতির একটা ঠান্ডা বাতাস পাওয়া যাবে। কার্পেটে সবুজ রঙের আর্টিফিশিয়াল ঘাস বসানো। দু’টো সোফা রাখা মাঝে গোল টেবিল যেটাও ভারী কাঁচের। শার্মিলা একটা সোফায় বসে ফোন ওপেন করে। কিছু ডকুমেন্টস পুনরায় দেখে নেয়। তার ফোনে অনেক ম্যাসেজ ইতোমধ্যে জমা হয়েছে। তার ডিপার্টমেন্টের কলিগ এবং সিনিয়ররা ইতোমধ্যে জেনে গেছে তার আর তাইজ্যিন চৌধুরীর বিয়ে নিয়ে। ব্যপারটা হাইলাইট করার ইচ্ছে শার্মিলার নেই। তবুও কাজের ক্ষেত্রে তা জানাতেই হয়। নিজে যেই কাজে এসেছে,যেই মিশনে নেমেছে সেটা সাকসেস হলেই তার ডিপার্টমেন্টের জন্য বেশ বড় একটা অর্জন হবে।
তাইজ্যিন উঠেছে ভেবে শার্মিলা ফোনটা পুনরায় সুইচড অফ করে ভেতরে যায়। তাইজ্যিন সবে ফ্রেশ হয়ে বসেছে। শার্মিলাকে দেখে ব্রু জোড়া প্রসারিত করে। কিছুটা নম্রতা দেখিয়ে বলে, “স্যরি আমার খেয়াল ছিলো না তুমি এখনো শাড়ী পড়েই আছ।”

“আমার হালকা জামাকাপড় চাই।”

“নাস্তা করেই বেরুচ্ছি আমরা।”

“তার দরকার নেই। আমার বাসায় আমার জামাকাপড় আছে সেগুলো আমি নিয়ে আসব।”

“বিয়ে করেছি আমি আমার বউকে আমি আমার টাকায় জামাকাপড় দেব।”

“হারাম টাকার জামাকাপড় বেশীদিন যাবে না। ছিঁড়ে যাবে এক ধোঁয়ায়।”

“শার্মিলা, ডোন্ট ক্রস ইওর লিমিট।”

“সত্য বললেই দোষ।”

“আমার ফালতু সময় নেই তোমার সত্য শোনার জন্য।”

“অকেহ্! শোন, তোমার দাদীকে একটু সামলে রাখবে। বিয়ে করেছি এই না যে আমি তোমাদের কথায় উঠবস করবো। আমার যখন,যেই মূহুর্তে ইচ্ছে হবে আমি বাড়ীর বাইরে বেরুবো। কারোর বাঁকা কথা যাতে না শুনি।”

“এভাবে বললে তো হবে না। ইউ নো, তাইজ্যিন ইশতিয়াক চৌধুরী একজন খু’নি, পা’পী এককথায় মাফিয়া। যার কাজই ব্যাংক লুটপাট করা,মানুষ খু-ন করা ইটিসি। আমার পেছনে অনেকেই পড়ে আছে। বিশেষত প্রশাসনের একটা দল! যেটা চাইলেও দমানো পসিবল হচ্ছে না। খুব তেজী! ভীষণ তেজী ওই নারী!…

” কোন নারী?”

তাইজ্যিনের কথা মাঝে পোড়ন কেটে বলে শার্মিলা। তাইজ্যিন কী মনে হতে প্রসঙ্গ পাল্টায়। মনে,মনে নিজেকে কয়টা গা’লি ও দেয়। শার্মিলার সাথে বেশী বলে ফেলেছে। একটা বোঝাতে গিয়ে অনেক সত্যই মুখ ফসকে বেড়িয়ে গিয়েছে।

“এখনো তার পরিচয় জানিনি। তবে খুব শীঘ্রই জানব সমস্যা নেই। তুমি যেহেতু আমার ওয়াইফ ওরা চাইবে তোমাকে দিয়ে আমি অব্দি পৌঁছাতে। সেজন্য আমি যেমন সিকিউরিটি নিয়ে চলাফেরা করি এরপর থেকে সাতশ উনত্রিশ দিনের মধ্যে তোমার বাইরে পথচলায় সিকিউরিটি থাকা আবশ্যক।”

“অসম্ভব! ”

কিছুটা উত্তেজিত হয়ে জাবাব দেয় শার্মিলা। তাইজ্যিন বাঁকা চোখে তাকায়। শার্মিলা নিজেকে ধাতস্থ করে বলে, “আমি পারব না এতো ছেলে নিয়ে বাইরে বেরুতে। আর তোমাকে প্রশাসন ধরলে আমার কী?”

“তোমার কিছু না। আমার ও কিছু না। আমি নিজেও চাইলে সারেন্ডার করতে পারি খুব বেশী ক্ষতি হবে না।”

শার্মিলা তাইজ্যিনের কথায় মুখ বাকায়। পুরোটাই যে তার ধারণা গুলিয়ে ফেলার জন্য বলা হয়েছে সে সেটা ভালোই বুঝতে পেরেছে। এখন যা সত্য জানে রাগের মাথায় বা তাইজ্যিনকে ছোট করার জন্য মুখ ফসকে কিছুতেই বলা যাবে না। তাইজ্যিনের বলা কথা অনুযায়ী নিজেকে আরো সতর্ক করতে হবে। দু’জনেই প্রসঙ্গ পাল্টাতে চায়। সেজন্য শার্মিলা আগ বাড়িয়ে বলে, “আমায় একটা গাড়ীর চাবি দিলেই হবে। হ্যাঁ গাড়ীতে থাকা জিপিএস, ডিজিটাল মেশিন যাই হোক সব গাড়ী থেকে বের করে দিতে হবে। আমি আমার ব্যাগ গুছিয়ে আনার জন্য যাব।”

“ইম্পসিবল! আমার কোন গাড়ীতে তোমায় একা আমি ছাড়ছি না।”

তাইজ্যিনের কথায় শার্মিলার বেশ রাগ হয়। কঠোর গলায় জবাব দেয়,
“তাহলে তুই তোর গাড়ী গলায় ঝুলিয়ে বসে থাক। শরবত বানিয়ে সার্ভ কর। আমার জন্য গাড়ীর অভাব পড়বে না। আর আমার পেছনে লোক লাগালে তোর ওইটা আমি ভে’ঙে দেবো।”

তাইজ্যিন চোখমুখ শক্ত করে জবাব দেয়, “আসতাগফিরুল্লাহ!”


#চলবে