তৃষ্ণার্ত প্রেম পর্ব-০৩

0
7
তৃষ্ণার্ত প্রেম
বাংলা রোমান্টিক গল্প | তৃষ্ণার্ত প্রেম

#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|৩|
#শার্লিন_হাসান

🚫(কপি করা নিষেধ) 🚫

তাহলে তুই তোর গাড়ী গলায় ঝুলিয়ে বসে থাক। শরবত বানিয়ে সার্ভ কর। আমার জন্য গাড়ীর অভাব পড়বে না। আর আমার পেছনে লোক লাগালে তোর ওইটা আমি ভে’ঙে দেবো।”

তাইজ্যিন চোখমুখ শক্ত করে জবাব দেয়, “আসতাগফিরুল্লাহ!”

“আমি খারাপ কিছু মিন করিনি। আসতাগফিরুল্লাহ বলার কিছু নেই। হাত-পা, মুখ এসব ভা’ঙার কথা বলেছি।”

“ডেঞ্জারাস লেডি।”

বিড়বিড় করে কথাটা বলে তাইজ্যিন। বাক্যব্যয় না করে দরজা খুলে বাইরে বের হয়। পেছন দিয়ে শার্মিলা ও আসে। জেসিয়া ইসলাম এবং তিথিয়া চৌধুরী কিছুক্ষণ পর চলে যাবেন তাদের অন্য বাড়ীতে। তাইজ্যিন তাঁদের সাথে বসেই নাস্তাটা করে। শার্মিলা নাস্তা খাচ্ছে আর বাড়ীটা আড় চোখে দেখছে। তিথিয়া চৌধুরী এবং জেসিয়া ইসলাম চলে যাবেন ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। মনে,মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দেয়। তার রাস্তাটা আরেকটু ক্লিয়ার। নাস্তা খাওয়া শেষ হতে তিথিয়া চৌধুরী শার্মিলাকে নিয়ে সোফায় বসেন। শার্মিলা চুপচাপ শাড়ীর আঁচল আঙুলে পেঁচাচ্ছে।

“শোন ছোট নাত বউ। এই বাড়ীটা তাইজ্যিনের। এখানে আমাদের তেমন আসা হয়না। তাইজ্যিন একাই থাকে। তুমি যেহেতু এখন থেকে থাকবা আমার নাতিকে দেখে রাখবা।”

“ওনাকে দেখার জন্য লোকের অভাব নেই।”

“স্ত্রী হিসাবে তোমার কর্তব্য এটা।”

“ঠিক আছে। দেখে শুনেই রাখব! তবে কথা কাজের গড়মিল হলে গরম খুন্তিও কিন্তু হাতে,কপালে চড়বে।”

চোখমুখ শক্ত করে জবাব দেয় শার্মিলা। তিথিয়া চৌধুরী শার্মিলার কথায় ভড়কে যায়। মেয়েটা বেশ তেজী শুরুতেই টের পেয়েছেন এখন শিওর হয়ে গেছেন। জেসিয়া ইসলাম আসতে শার্মিলা উঠে দাঁড়ায়। চলে যাবেন ভেবে শার্মিলার গাল টেনে চুমু একে দেন জেসিয়া ইসলাম। তার বড় ছেলের বউয়ের কথা মনে পড়ে গেলো। শার্মিলার মুখশ্রী তে তাকিয়ে হেঁসে পুনরায় জড়িয়ে ধরেন। শার্মিলা জেসিয়া ইসলামের ভালোবাসা মাখা পরশ পেয়ে জেনো গলে গেলো। নিজের মায়ের কথা মনে পড়তে মুখশ্রীতে জেনো মেঘ জমে গেলো। জেসিয়া ইসলাম বেশ নরম মনের মিশুক একজন মানুষ। তিথিয়া চৌধুরীর এতো শাসন,আদেশ শার্মিলার পছন্দ হচ্ছেনা এই মূহুর্তে। কোন কালেই এতো বেশী বন্দী জীবন বা শাসনে বড় হয়নি। সবসময় নিজের মর্জি আর ইচ্ছেতেই সব। শুধু বাবার ইচ্ছেতে সিআইডি পদটা বেছে নিয়েছে। ভাবনার মাঝেেই জেসিয়া ইসলাম এবং তিথিয়া চৌধুরী বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে চৌধুরী অন্দরমহলের উদ্দেশ্য।

শার্মিলা সিয়াকে কল দেয়। লোক পাঠিয়েছে তাইজ্যিনের, যাতে তার গুছিয়ে রাখা ব্যাগটা দিয়ে দেয়। এই মূহুর্তে বাড়ীর বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে আসছে না। তাইজ্যিন তার আম্মু আর দাদীনকে বিদায় দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। তাইজ্যিন চলে যেতেই জেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে শার্মিলা। সবার আগে এই বাড়ীটা ঘুরে দেখবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় সে। তার বাবা-মায়ের খু’নি অব্দি পৌঁছাতে তাইজ্যিনকে চাই তার। এছাড়া তাইজ্যিনের অপকর্ম সম্পর্কে বেশ ধারণা আছে তার। নেক্সট টার্গেট জানা এবং তাদের টার্গেট আনফুলফিলড করাই জেনো বর্তমানে তার উদ্দেশ্য। তাইজ্যিন যার কথায় এতো নাচে তাকে ধরাটাও আরেকটা উদ্দেশ্য।

সময় ব্যয় না করে শার্মিলা সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে যায়। তাদের রুমের অপজিটে বেশ কয়েকটা রুম রয়েছে। উপরে, কোণায় বেশ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে শার্মিলা কোন সিসিক্যামরা আছে কী’না। করিডোরে কোনরকম সিসিক্যামরা চোখে না পড়লেও সর্বশেষ একটা রুম চোখে পড়ে। যেটার উপর সিসিক্যামরা লাগানো। শার্মিলা না দেখার মতো করে রুমটার সামনে যায়। যাতে তাকে দেখলে বুঝা যায় এই সম্পর্কে অবগত না সে। রুমের সামনে আসতে বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে পেলে সে। দরজা লক করা তাও প্রিঙ্গারপ্রিন্ট অর পাসওয়ার্ড ছাড়া খোলা যাবে না। হতাশ হয়ে ফিরে আসে সেই জায়গা থেকে। কিছুক্ষণ পর তার ব্যাগ আসতে রুমে চলে যায় শার্মিলা। শাড়ী চেঞ্জ করে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে থ্রি-পিস পরিধান করে বের হয় ওয়াশরুম থেকে। নিজের ল্যাপটপটা নিয়ে বসে পড়ে সে। তাইজ্যিন সম্পর্কে কিছু আপডেট তার টিমকে দিয়ে দেয়। সেই সাথে রুমের কথাটাও বলে। শার্মিলার ধারণা নিশ্চয়ই ওই রুমে এ টু জেড সকল তথ্য পাওয়া যাবে। এখানে আরো কয়েকদিন থেকে তাইজ্যিনের চলাফেরার একটা রুটিন বানিয়ে নিবে। দ্যান কয়েকদিনের জন্য খন্দকার বাড়ীতে যাবে। সেখান থেকে হেডকোয়ার্টারে যাবে। নিজের সিদ্ধান্তকে একদিকে সরিয়ে ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নেয় শার্মিলা। নিজেকে বেশ দুর্বল মনে হচ্ছে একটু এনার্জির দরকার।

★★★

বিশাল জায়গা জুড়ে উঁচু দেওয়াল তোলা হয়েছে। ভেতরে বেশ কয়েকটা দালান দাঁড়িয়ে। তবে সেগুলোর গড়ন আলাদা টাইপের। একটা বেশ পুরোনো বাকী গুলোর রং চেঞ্জ হয়ে পুরোনো দেখা যাচ্ছে। জায়গটা শহর ছেড়ে কিছুটা সাইডে। এদিকটা অনেকটা সুনশান নিরব স্থান। খুব কম মানুষের আনাগোনা এখানে বলা চলে। বাইরে থেকে দেখলে মনেই হবে না এখানে মানুষের অস্তিত্ব আছে। তাইজ্যিন গাড়ী থেকে নামতে একজন ছাতা তার মাথার উপর রাখে। এতে তাইজ্যিন বিরক্ত হয়। সে কোন দেশের এমপি,মন্ত্রী নয় যে এভাবে ছাতা ধরে গায়ের সাথে ঘেঁষে থাকতে হবে। হাত দিয়ে ইশারা করতে লোকটা ছাতা নিয়ে সরে যায়। ত্রস্ত পায়ে বিল্ডিংয়ের ভেতর প্রবেশ করে তাইজ্যিন। আজকে কী মনে হতে ছাঁদের দিকে যায় সে। ছাঁদ থেকে আশেপাশের ভিউ সুন্দর আসে। মাথায় একটা চিন্তাই ঘুরছে কীভাবে শার্মিলার থেকে কথা বের করবে।
সেই জায়গায় তাইজ্যিনের গাড়ী থামে। তাইজ্যিন গাড়ী নিয়ে প্রবেশ করতে, ভেতর থেকে গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাইজ্যিন ভাবছে শার্মিলাকে বিয়েটা করে ভুল করেনি তো? নিজেই খাল কেটে কুমির আনেনি তো? শার্মিলার সাথের প্রথম দেখার কথা মনে পড়ে যায়। অন্ধকার পরিবেশ গভীর রাতের জানান দিচ্ছিলো। তাইজ্যিন মিটিং শেষ করেই বাড়ী ফিরছিলো। রাস্তার পাশে ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বলছিলো। জায়গাটা ছিলো সুনশান নিরব। গুলির শব্দ পেয়ে গাড়ী থামায় তাইজ্যিন। তবে নিজে প্রথমে বের হয়না। কয়েকজন দূূর থেকে ব্যপারটা দেখে তাইজ্যিনকে অবগত করে। সীটের উপর পড়ে থাকা রিলভারটা হাতে নিয়ে গাড়ী থেকে বেড়িয়ে আসে তাইজ্যিন। তার গার্ডস কয়েকজন আলো জ্বালাতে সামনে এগিয়ে যায়। ব্লাক জিন্সেট সাথে হোয়াইট কালারের স্লিভলেস শর্ট টিশার্ট সাথে ব্লাক জ্যাকেট দেখে তার মতোই একজনকে মনে হয়েছিল। শিওর হওয়ার জন্য আগ বাড়িয়ে বলে, “আমার যদি ভুল না হয় তুমি আমার পেশারই একজন হবে।”

তাইজ্যিনের কথায় শার্মিলা ছেলেটার মুখের সামনে থেকে রিলভারটা বের করে। তবে এক হাতে ছেলেটার কলার ধরা ছিলো। তাইজ্যিনকে দেখে হাসে শার্মিলা। প্রতিত্তোরে বলে, “আপনার পেশা?”

“খু’ন করা।”

তাইজ্যিনের কনফিডেন্সের সাথে দেওয়া জবাবে শার্মিলা মুখ বাকায়। ছেলেটার কলার ছেড়ে দিয়ে রিলভারের উপর স্লাইড করে বলে, “আপনি একজন খু’নি। এখন ধরুন আপনি আমার হাতে খু’ন টা হলেন তাহলে….

কথাটা শেষ করতে না দিয়ে তাইজ্যিন বলে, ” তোমার হাতে খু’ন হওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত।”

“খুন করার সাথে,সাথে ফ্লার্টিং ও আয়ত্ব করে নিয়েছেন। বেশ ভালো!”

“ফ্লার্ট করার মুডে এখন আমি নেই। অ্যা’ম সিরিয়াস।”

“শিওর?”

“ইয়াহ্!”

তাইজ্যিন কথাটা শেষ করতে শার্মিলা একটা বুলেট তাইজ্যিনের পায়ের কিছুটা সাইডে শ্যুট করে। আচমকা এমন হওয়াতে তাইজ্যিনের গার্ডসরা সবাই ভড়কে যায়। তবে নিজেদের কাছে থাকা রিলভার বের করে শার্মিলার দিকে ধরে রাখে। শার্মিলা শব্দ করে হেঁসে বলে, “মরতে চান আমার হাতে আবার গার্ডস গুলোও রেখেছেন আপনাকে প্রটেক্ট করার জন্য। মনে হয়না আপনার মন ভাসনা পূর্ণ করার ফলে আমি অস্কার পাব। পেলে দু চারটা বুলেট উপহার পেতে পারি। কিন্তু আমি আমার জীবনকে ভালোবাসি তাই আপনার ইচ্ছে পূর্ণ করার জন্য মর’তে চাইনা। স্যরি মিস্টার।”

শার্মিলার কথা শোনে তাইজ্যিনের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট, পারিশ তাইজ্যিনকে হুঁশে আনার জন্য বলে, “স্যার পাগ’ল হয়ে গেলেন নাকী? যদি সত্যি,সত্যি আপনায় মে’রে দিত।”

“পারিশ তোমার হাঁটুতে থাকা ব্রেইনটা মাথায় নিয়ে আস। আবার ও ভুলে যাচ্ছ তাইজ্যিন সম্পর্কে।”

“স্যরি স্যার।”

তাইজ্যিন প্রসঙ্গ পাল্টাতে শার্মিলার কথা এড়িয়ে যায়। শার্মিলা হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাড়া দেখায় বাড়ী ফেরার। তাইজ্যিন সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শার্মিলার পাণে।

“এতো রাতে একা,একা যাবা, ভয় করবে না?”

“আমি ভয় পাইনা।”

“গুড, বেশ সাহসী মেয়ে তুমি। এমনিতে জায়গাটা বেশ নিরিবিলি রাত ও গভীর। তোমার খোলা চুল দেখলে প্রেতাত্মা ও আসতে পারে।”

“শ্যুট করে দেব।”

“অউ স্যরি ভুলে গেছি…

” কী?”

“তুমি যা ডেঞ্জারাস প্রেতাত্মারা ও ভয় পাবে তোমায়।”

“প্রশংসা করলেন নাকী অপমান?”

“অকে গুড নাইট ডেঞ্জারাস লেডি। অন্যদিন পরিচয় আর এখানে এতো রাতে আসার কারণটা ও জেনে নেব।”

কথাটা শেষ করে তাইজ্যিন চলে আসে সেখান থেকে। গাড়রতে বসতে পারিশ পুনরায় প্রশ্ন করে, “স্যার কেসটা বুঝলাম না।”

“বোকা! ওই মেয়েকে দেখে তোমার অর্ডিনারী মনে হয়? এতো রাতে!”

“একা এসেছে?”

“মোটেও না। আমাদের দেখা হওয়ার রাস্তা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত জায়গা আছে। মাঠের মতো! সাথে কিছু পুরোনো বাড়ী ও আছে। আর পুরোটাই সাজানো প্লান আমি নিশ্চিত।”

“এক কিলোমিটার কম দূূরেও না।”

“আশেপাশে কেউ আছে।

থেমে,
” আচ্ছা তুমি নোটিশ করেছ ওই ছেলেটা কোনদিকে গিয়েছে?”

“না তো!”

“বোকা!”

“” এতো কিছু নোটিশ করেছেন আপনি?”

“ওই ছেলেটা ঠিক পেছনের রাস্তাটায় চলে গিয়েছে যেখান থেকে গেলে পরিত্যক্ত উদ্দ্যান।”

সেদিনের কথা ভেবে হাসে তাইজ্যিন।

এখানে বেশী সময় না কাটিয়ে বাড়ীতে চলে যায় তাইজ্যিন। এসে দেখে শার্মিলা ঘুমাচ্ছে সেজন্য আর ডাকাডাকি করে না। তাইজ্যিন আসার পেছন দিয়ে শার্মিলা ঘুম থেকে উঠে বসে। কেউ কারোর সাথে কোন কথা বলছে না। শার্মিলা নিজে থেকেই বলে বসে, “কোথায় গিয়েছ?”

“জাহান্নামে! তুমি যাবা?”

“তোমার মতো নমরুদ ওইখানেই যাবে। ভালো কোথাও না।”

“মুখ সামলে কথা বলো শার্মিলা। ভুলে যেও না বর্তমানে আমি তোমার স্বামী।”


#চলবে