তৃষ্ণার্ত প্রেম পর্ব-২০+২১

0
6
তৃষ্ণার্ত প্রেম
বাংলা রোমান্টিক গল্প | তৃষ্ণার্ত প্রেম

#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|২০|
#শার্লিন_হাসান

বেশ কয়েকদিন হসপিটালে থাকার পর তিনজনকে চৌধুরী বাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকদিনের নেড রেস্ট সাথে নিউমিত মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যাবে। তাইজ্যিন আজকাল শার্মিলাকে উঠতে বসতে বলে, “গুলি করে আমার হৃদয় ফুটা করে দিয়েছ। এখন তো কাউকে ভালোবাসলো সেটা বলার আগে ছিদ্র দিয়ে বেড়িয়ে যাবে।”

তাইজ্যিন এক বাক্যে শার্মিলা বিরক্ত। তাইজ্যিন ও তাকে রাগাতে মজা পায়৷ শার্মিলার আহত হওয়ার খবর তার টিমে গেছে। তবে ইব্রাহিমের খবর পেয়ে তারা সবাই খুশি।

শার্মিলা সোফায় বসে,বসে ফোন স্ক্রোল করছিলো। তাইজ্যিন তাকে খাটে নিজের কাছে ডাকে। বেশ বিরক্তি নিয়ে সেখানে যায় শার্মিলা। তখন আবার তারিন নক করে রুমে আসে। দু’জনকে দেখে কিছু বলেনা। তবে তাইজ্যিনের দিকে তাকিয়ে আফসোসের স্বরে শুধায়, “কী অবস্থা করেছে দেখো। ভেবেছিলাম লক্ষী বউ। লক্ষীর মঝে যে অলক্ষী থাকতে পারে মাথায় ছিলো না।”

“লিসেন, তুমি কাকে অলক্ষী বললে?”

কঠোর গলায় শার্মিলা বলে। তারিন প্রতিত্তোরে বলে, “তোমাকে!”

শার্মিলা উঠে কাবাডের সামনে যায়। তার ব্যাগ থেকে পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে তারিনের হাতে গুঁজে দেয়। তারিন প্রশ্ন করে, “টাকা দিলে কেন?”

“এতো কষ্ট করে আমাদের রুমে আসো। কাজকর্ম রেখে,মূল্যবান সময় নষ্ট করে আমায় নিয়ে এতো ভাবো। তার জন্য বকশিশ দিলাম। সামনে আরো বেশী দেব চিন্তা করো না।”

অপমানে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তারিনের। টাকাটা শার্মিলার হাতে দিতে যাবে শার্মিলা সরে আসে। দাঁড়িয়ে বলে, “তুমি এখানে দাঁড়াও! আমি তোমার ভাইকে….

” খবরদার আর ক্ষতি করবা না।”

মাঝখানে পোড়ন কেটে বলে তারিন। শার্মিলা মুখশ্রীর ভাব পরিবর্তন করে বলে, “ওকে! ক্ষতি করব না। এমনিতে একটা কাজ করতে যাচ্ছিলাম, তোমার জন্য সময় নষ্ট হলো।”

কথাটা বলে তাইজ্যিনের মুখোমুখি বসে শার্মিলা। তাইজ্যিন আঙুল দিয়ে কপাল স্লাইড করছে। হসপিটাল থেকে বাড়ী আসা অব্দি তারিন,শার্মিলার দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। থামার নাম গন্ধ নেই। শার্মিলা তাইজ্যিনের গালে হাত রাখতে যাবে,তাইজ্যিন বিরক্ত হয়ে হাত সরিয়ে দেয়। তারিন মুখ বাকায় শার্মিলার দিকে চেয়ে। পিঞ্চ মেরে বলে, “ভেবেছিলে আমার সামনে ঢং করবে। সে তো পাত্তা পাচ্ছো না।”

তখন তাইজ্যিন চিৎকার করে শুধায়,”আমি একটু একা থাকতে চাই। আমার রুম থেকে বের হও তোমরা।”

ব্যাস! শার্মিলা আর একমূহুর্ত দাঁড়ায় না। এমনিতে অপমানে চোয়াল শক্ত তার। শার্মিলা যাওয়ার পেছন দিয়ে তারিন ও বের হয়ে যায়।

সবার সাথে বসেই রাতের ডিনার করে শার্মিলা। চৌধুরী পরিবারের কেউই তার সাথে কথা বলে না। শুধু তারিনের সাথে ঝগড়া হয়,সেটাও সবাই ভালো চোখে দেখে না। শার্মিলা অনুভব করে,খুব শীঘ্রই হয়ত তার স্থানটা তারিনের হবে। এই বাড়ী থেকে তার বিদায়ের ও বেশী সময় নেই।

সৈয়দ ইব্রাহিমকে টেক কেয়ার করার জন্য লোক রাখা হয়েছে। সে লিভিং রুম অব্দী সহজে আসে না। তাইজ্যিনের খাবার রুমেই দেওয়া হয়। বাকী দিক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী সামলায়। সবাই ডিনার শেষ যে,যার রুমে চলে যায়।শার্মিলা যায় না। সে লিভিং রুমের সোফায় বসে থাকে। হয়ত রুমে যাবেও না। নিজে কাছে ডেকে নিয়েছে,আবার চামচা একটা রেখেছে যখন যা নয় তাই শোনাবে। তারউপর রুম থেকে বের করে দিয়েছে।

পানির পিপাসা অনুভূত হতে শার্মিলা কিচেনের দিকে পা বাড়ায়। পানি পান করে বের হতে হাত টেনে দেওয়ালের সাথে কেউ তাকে চেপে ধরে। চোখ মেলতে ইব্রাহিমের ক্ষোভের দৃষ্টি চোখে পড়ে। শার্মিলা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হলে ইব্রাহিম তাকে আরো বেশী চেপে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, “এই মূহুর্তে তাইজ্যিন এখানে আসবে। পেছন থেকে দেখলে বুঝা যাবে লিপ কিস করা হচ্ছে। তবে ভুল ধারণা! ও আসার সাথে,সাথে আমি মেইন ডোরে চলে যাব। তবে আমার মুখ ও দেখবে না। শুধু ব্যাকসাইড দেখবে।”

“তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”

“হাহা! দেখা যাবে।”

বেশ কিছুক্ষণ সময় চেপে ধরার পর কারোর পদধ্বনি হয়। দু’জনে টের পায় তাইজ্যিন এসেছে। ইব্রাহিম শার্মিলাকে ছেড়ে পাশ কাটিয়ে, সোজা সামনে হেঁটে মেইন ডোরে চলে যায়। শার্মিলা তাইজ্যিনের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকায়।

সিঁড়ির মাঝে দাঁড়িয়ে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয় তাইজ্যিন। সামনের দৃশ্য তার চোখ এড়ায়নি। শার্মিলা মেঝেতে তাকিয়ে আছে। কী বলবে,করবে তার জানা নেই। সে জানত তাইজ্যিন ঠিক এসে নিয়ে যাবে। রাগ ভাঙাবে। কিন্তু ইব্রাহিম!

তাইজ্যিনের মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। হেঁটে শার্মিলার মুখোমুখি দাঁড়ায়। তখন আবার তারিন আসে। তারিনকে দেখে শার্মিলা অবাক হয়। তাইজ্যিনের দিকে তাকিয়ে তারিন শুধায়, “থ্যাংক গড ভাইয়া নিজের চোখে দেখেছে। আমি তো ভিডিও করে রেখেছিলাম পরে ভিডিও দেখলে তো আমায় দোষ দিতা এডিট করিয়েছি। শার্মিলার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র!”

তাইজ্যিন কিছু না বলে শার্মিলা কে নিয়ে চলে যায়। শার্মিলার ধারণা হয়েছে ইব্রাহিমের পরিকল্পনা সম্পর্কে। রুমে এনে শার্মিলার হাত নিজের হাত থেকে ছুঁড়ে মারে। ঠাস করে দরজা লক করে। শার্মিলা নিজে থেকে বলে ” যা দেখেছ এটা সাজনো। আর ওটা….

“কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি?”

“না।”

মুখোমুখি দাঁড়ায় দু’জন। তাইজ্যিন শার্মিলার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।

“ওটা ইব্রাহিম ছিলো! বলেছিলাম না? আমাকে কেউ বাজে ভাবে স্পর্শ করতে চায়।”

“তো করুক সমস্যা কোথায়?”

কথাটা বলে সোফায় বসে তাইজ্যিন। শার্মিলা হতভম্ব হয়ে যায়। নিজের রাগ,জেদ দমানোর বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে তাইজ্যিন। শার্মিলা কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। নিজেকে বোকা মনে হচ্ছে। কেমন জেনো! ইব্রাহিমকে চড় দিলো না কেন? বেশ কিছুক্ষণ মৌনতা বজায় রেখে তাইজ্যিন উঠে দাঁড়ায়। ঘুমানোর প্রস্তুতি নিবে। তখন শার্মিলা তার সামনে এসে দাঁড়ায়। কোমল স্বরে বলে, “আমাকে ইব্রাহিম চায় আর তোমাকে তারিন। দেখো না কীভাবে ও যাওয়ার পরপর তারিন আসলো। সব সাজানো নাটক। তোমার চোখে আমায় খারাপ বানাতে চায়।”

“তোমার থেকে কিছু শোনতে চেয়েছি আমি?”

শার্মিলার দু’ কাধ চেপে ধরে চিৎকার করে বলে তাইজ্যিন। ডান হাতে অপারেশন হয়েছে। ছেড়ে দিতে শার্মিলা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে। তড়িঘড়ি খাটের উপর গিয়ে বসে।
তাইজ্যিন নিজেও বোকা বনে যায়। তড়িঘড়ি শার্মিলার সামনে বসে। ব্যাথায় চোখের পানি ঝরছে শার্মিলার। তাইজ্যিন শুধায়, “স্যরি,অ্যাম এক্সট্রিমলি স্যরি।”

শার্মিলা রাগে,ক্ষোভে তার বুকে ধাক্কা মে-রে শুধায়, “তোর স্যরি তোর পকেটে রাখ।”

পুনরায় হাতের ব্যথায় বসে পড়ে সে। ধাক্কা দিতে শক্তি প্রয়োগ হয়েছে। তারউপর ব্যথাযুক্ত হাত দিয়ে। তাইজ্যিনের বুকে আঘাত করায়, তাইজ্যিনের ডান হাত বুকের বা পাশে চলে যায়। শার্মিলা তড়িঘড়ি বা হাত দিয়ে তাইজ্যিনের বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে, “বেশী লেগেছে?’

” একদম না! অনেক মজা লেগেছে।”

দাঁতে দাঁত চেপে বলে তাইজ্যিন। শার্মিলা আমতাআমতা করে শুধায়, “অ্যাম স্যরি।”

দু’জনে কোন কথা বলছেনা। নিজেদের ব্যাথাযুক্ত হাত আর বুক নিয়ে ব্যস্ত। শার্মিলা মেডিসিন নিয়ে বালিশ উঁচু করে তাতে হেলান দিয়ে বসে। তাইজ্যিন রুম জুড়ে পায়চারি করছে। এই ব্যথার জন্য রাগটাও প্রকাশ করতে পারলো না। তখন শার্মিলা চেঁচিয়ে বলে, “আর যদি তারিন রুমে এসেছে তাহলে তোমার খবর আছে।”

“ও রুমে আসার সাথে আমাকে জড়াচ্ছো কেন?”

“তোমার জন্যই রুমে আসে,তোমার জন্যই আমায় কথা শোনায়।”

“তুমি আমায় গুলি করেছ কেন?”

“মন চেয়েছে।”

“এটা কেমন কথা?”
কপাট রাগ দেখিয়ে বলে তাইজ্যিন। শার্মিলা জবাব দেয়, “গুলিটা তোমার বাবাকে করতাম। তুমি সামনে ছিলে তাই তোমায় করেছি।”

“মুখ সামলে কথা বলো শার্মিলা।”

“তুমি নিজের হাত পা সামলাও তাইজ্যিন৷ তোমার জন্য আজকে আমার রাতের ঘুম শেষ।”

তাইজ্যিন জবাব দেয়না। দু’জনে বিলাপ করে! শেষ রাতে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে শার্মিলা নিজের জায়গায় যায়। অনেকদিন হলো তাইজ্যিন জড়িয়ে ধরেনা। তাই নিজে তার বুকে স্থান গুজে। ঘুমের মাঝেও তাইজ্যিন ব্যাথা অনুভব করে। শার্মিলার মাথা তার বুকে। কী করবে ভেবে পাচ্ছেনা। তবে জেদ আসে মনে। এতো ঘুমানোর শখ তো গুলি করলো কেন? শার্মিলার মাথা নিজের বুক থেকে সরাতে সেটা ঠাস করে বিছানায় পড়ে। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে শার্মিলা। হাতেও ব্যাথা পেয়েছে। এই মূহুর্তে তাইজ্যিনকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে। তা তো সম্ভব না রাগ দেখিয়ে বলে, “আমার মাথাটা কী ফুটবল পেয়েছো?”

“আমার বুকটাকে কী তুমি মাঠ পেয়েছো? এতো ঘুমানোর শখ তো গুলি করার সময় মনে ছিলো না?”

#চলবে

#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|২১|
#শার্লিন_হাসান

ঘুমের মাঝেও তাইজ্যিন ব্যাথা অনুভব করে। শার্মিলার মাথা তার বুকে। কী করবে ভেবে পাচ্ছেনা। তবে জেদ আসে মনে। এতো ঘুমানোর শখ তো গুলি করলো কেন? শার্মিলার মাথা নিজের বুক থেকে সরাতে সেটা ঠাস করে বিছানায় পড়ে। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে শার্মিলা। হাতেও ব্যাথা পেয়েছে। এই মূহুর্তে তাইজ্যিনকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে। তা তো সম্ভব না রাগ দেখিয়ে বলে, “আমার মাথাটা কী ফুটবল পেয়েছো?”

“আমার বুকটাকে কী তুমি মাঠ পেয়েছো? এতো ঘুমানোর শখ তো গুলি করার সময় মনে ছিলো না?”

“না ছিলো না। গুলি করেছি বেশ করেছি। প্রয়োজনে আরো কয়েকবার করবো।”

“তাহলে আমাকে টাচ করতে এসো না। উইদাউট পারমিশন, ইও ডোন্ট টাচ মি।”

কথাটা বলে বিরক্তি নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে তাইজ্যিন।শার্মিলা হতভম্ব হয়ে যায়। তাইজ্যিন তার ডায়লগ তাকেই শোনাচ্ছে। তাইজ্যিন বদলে যাচ্ছে। শার্মিলা এটাই চাইছে। তাইজ্যিন বদলে গেলে সে আর ফেঁসে যাবেনা। অনুভূতিরা দাম্ভিকতার জালে আটকা পড়ে যাবে। তখন পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, পেছন থেকে আঘাত করলেও খারাপ লাগা কাজ করবে না। অজস্র চিন্তাভাবনা নিয়ে আর ঘুমাতে পারেনা শার্মিলা। উঠে সোজা বেলকনিতে যায়। ভোরের আলো ফুটছে,চারদিকে আজান হচ্ছে। বাইরে হয়ত মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে। এই কাঁচের দেওয়াল ভেদ করে শার্মিলাকে ছুঁতে পারছেনা স্নিগ্ধ বাতাস।

কিছুটা বেলা করেই ঘুম থেকে উঠে তাইজ্যিন। শার্মিলা কাউচে ঘুমাচ্ছে। তাইজ্যিন দেখে কিছু বলেনা। হয়ত রাগ করেছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে যায় তাইজ্যিন। নাস্তাটা সেরে আগে ঔষধ খেয়ে নেয়। গতকাল রাতে জোরেই ধাক্কা দিয়েছে শার্মিলা। তারউপর মাথা দিয়ে ব্যাথা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে।

লিভিং রুমের সোফায় বসে, ল্যাপটপে কাজ করছে তাইজ্যিন। তখন সৈয়দ ইব্রাহিম সাথে তারিন ও উপস্থিত হয়। তাইজ্যিন তাঁদেরকে দেখেও না দেখার ভাণ করে। শার্মিলাকে ইব্রাহিম টাচ করেছে,করতে চায় এসব তার মস্তিষ্ক জুড়ে চলছে। নির্দিষ্ট নিয়মে আবদ্ধ নাহলে এই অসভ্যতামীর জন্য তাইজ্যিন তাকে খু’ন করত। গতকাল রাতে রাগে,জেদেই শার্মিলাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো সে। শার্মিলাকে সে বিহীন অন্য কেউ টাচ করেছে। হোক আপসে বা জোর করে। টাচ তো করেছে।

শার্মিলা ব্রেকফাস্ট করার জন্য চেয়ারে বসেছে। ওদের তিনজনকে একনজর দেখে নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। তখন তারিন সোফায় বসতে,বসতে বলে, “আজকে এতো লেইট করে ব্রেকফাস্ট করলে যে?”

তাইজ্যিন বিরক্ত হয়। প্রতিত্তোরে বলে, “বউকে আদর করতে,করতে লেইট হয়ে গেছে।”

তাইজ্যিনের কথা কর্ণধার হতে,শার্মিলা কফিতে চুমুক দিতে গিয়েও দেয়নি। ইব্রাহিম চেহারায় কৃত্রিম স্বাভাবিকতা প্রকাশ করে রেখেছে। তারিন বিরক্ত হয়। তাইজ্যিন তাঁদের কারোর দিকে তাকায় না। নিজের ল্যাপটপ নিয়ে রুমে চলে যায়। শার্মিলা নাস্তা শেষ করে তাইজ্যিনের পেছনে ছুটে। রুমে এসে থেমে দীর্ঘ শ্বাস নেয়। তাইজ্যিন তার কাজে মত্ত। শার্মিলা নিজের ফোন নিয়ে স্ক্রোল করতে থাকে। তাইজ্যিন কখন তাকে ডাক দিবে,কথা বলবে এটার অপেক্ষায় আছে।

একজন সার্ভেন্ট দরজায় নক করে। তাইজ্যিন পারমিশন দিতে সে ফল আর ছুড়ি নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। তাইজ্যিনের সামনে তা রেখে প্রস্থান করে।
তাইজ্যিন শার্মিলার দিকে একনজর তাকায়। কী মনে হতে শুধায়,
“এদিকে আসো তো।”

“কেন?”

“আসতে বলেছি।”

শার্মিলা মাথা নাড়ায়। তাইজ্যিনের সামনে দাঁড়াতে সে জিজ্ঞেস করে, “হাতের ব্যাথা কমেছে?”

“না।”
থমথমে গলায় জবাব দেয় শার্মিলা। তাইজ্যিন হতভম্ব হয়ে তাকায়। পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়ে শুধায়, “তোমাকে কে বলেছিলো সেদিন ওইখানে যেতে?”

“আমার ইচ্ছে। এমনিতে তোমরা তো খু’নি,নারী পাচার কারী।”

“হুম জানি।”

“তাইজ্যিন তুমি নারী পাচার করতে?”

“একসময়!”

শার্মিলা কিছু বলেনা। তখন তাঁদের দরজায় নক পড়তে তাইজ্যিন উঠে দাঁড়ায়। তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী এসেছে। তাইজ্যিন তাকে দেখে শুধায়, “আর্জেন্ট আছে?”

“না। তবে তোমায় আমি কিছু বলতে চাই। আমার রুমে এসো।”

তাইজ্যিন মাথা নাড়ায়। তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীর পেছন,পেছন সে রুমে প্রবেশ করে। তখন তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী দরজা লক করে সোফায় বসে। তাইজ্যিনকে তার সামনের সোফায় বসার অনুমতি দেয়। তাইজ্যিন আসন গ্রহণ করতে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, “তাওহিদকে বিডি আসতে বলেছি।”

“হুয়াটটটট!!”

চিৎকার করে বলে তাইজ্যিন। তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী জবাব দেয়, “দুঃখীত তাইজ্যিন। এটা একটা সাজানো প্লান ছিলো। ইব্রাহিমের প্লান! শুধু তুমি জানতে আমার ছেলে, তাওহিদ ইশতিয়াক চৌধুরী, আমার নাতনি আর বউমা মৃ’ত এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। পরিস্থিতি আমার হাতের বাইরে চলে যেতে সময় নিবে না। আমি চাইনা, আমার পূত্রদের ক্ষতি হোক, আমার দূর্বলতায় কেউ আঘাত করুক।”

তাইজ্যিন জবাব দেয়না। তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী পুনরায় বলেন, “ওরা কিছুদিনের মধ্যে দেশে আসবে । তুমি খুশি হওনি?”

“হয়েছি! অনেক বেশী খুশি হয়েছি। প্রকাশ করার মতো শব্দ নেই আমার কাছে।”

ছেলের কথা শোনে,বিনিময়ে হাসেন চৌধুরী। তখন তাইজ্যিন রুম কাঁপানো চিৎকার দিয়ে বলে, “তাহলে আমার সময় কেন নষ্ট করালে? কেন শার্মিলাকে আমার জীবনের সাথে জড়াতে বাধ্য করলে?”

ভয়ে কিছুটা তটস্থ হোন তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে জবাব দেন, “তোমাকে তো বলেছিলাম ওকে মে-রে ফেলার জন্য।”

“তারপর?”

“তুমি ওকে বিয়ে করলে কেন?”

“ইচ্ছে হয়েছে তাই।”

“তাহলে এখন ভালো না লাগলে ছেড়ে দাও।”

“শেইম ওন ইও পাপা!”

কঠোর গলায় কথাটা বলে তাইজ্যিন বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। রাগে মাথায় জেনো দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। কপালের রগ ফুটে উঠেছে। তেজ নিয়ে রুমে প্রবেশ করতে দেখে ইব্রাহিম দাঁড়ানো তার রুমে। মূহুর্তে আরো বেশী রাগ উঠে যায় তাইজ্যিনের। ইব্রাহিমের কলার চেপে ধরে বলে, “আমার রুমে তোমার কাজ কী? শার্মিলার দিকে আর একবার তাকালে তোমার চোখ উপড়ে ফেলতে আমি দু’বার ভাববো না।”

ইব্রাহিম নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে শুধায়, “তোমার একদম উচিত হয়নি ওকে বিয়ে করার। ওকে আমার জন্য রাখা উচিত ছিলো।”

তাইজ্যিন একটা ভাজ মেঝেতে ছুঁড়ে মারে। ইব্রাহিম বাঁকা হেঁসে বেড়িয়ে পড়ে। শার্মিলা রুমে নেই। তাইজ্যিন সোফায় বসে কপাল স্লাইড করে৷ নিজের রাগ দমানোর চেষ্টা করে। কিছুতেই সফল হয়না। উঠে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যায়। সেখানে থাকা পারফিউমের বোতল,শার্মিলার জিনিসপত্র সবই ভাংচুর করে।

জেসিয়া ইসলাম এবং রিশা তাইজ্যিনের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। ভেতরে প্রবেশ করতে রুমের বেহাল দশা চোখে পড়ে। তখন জেসিয়া ইসলাম শুধায়, “কী হয়েছে তাইজ্যিন?”

“শার্মিলাকে বলো রুমে আসতে। প্লিজ তোমরা চলে যাও।”

চিৎকার করে বলে তাইজ্যিন। তারা দুজন কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। শার্মিলা তখন রুমে প্রবেশ করে। পরিস্থিতি বুঝার আগেই তাইজ্যিন ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। তাতে কিছুটা কেঁপে উঠে শার্মিলা। তাইজ্যিন রেগে আছে। তার সম্পর্কে সব জেনে গেছে তাহলে? প্রশ্ন করার আগে তাইজ্যিন তাকে টেনে নেয়। মাথার পেছনে চুলে শক্তপোক্ত করেই ধরে। অগ্নি চোখে তাকিয়ে বলে, “তোকে কে বলেছিলো সেদিন আমার সামনে পড়তে? তোর জন্য আজকে সব! তোকে আমি খু’ন করব,খু’ন।”
কথাটা বলে ছেড়ে দেয় শার্মিলাকে।

পুনরায় বলে, “ইব্রাহিম তোর দিকে শকুনের দৃষ্টি দিয়েছে। তুই আমার বাড়ী ছেড়ে চলে যাবি। ও যা করার করুক! তবে আমার চোখের সামনে না।”

“তাইজ্যিন তোমার কী হয়েছে?”

“কিছু না।”

কথাটা শেষ হতে তাইজ্যিন বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। শার্মিলা খাটে দপ করে বসে পড়ে। কেউ কিছু বলেছে? তাইজ্যিনকে দেখে মনে হচ্ছে অসহায়! হার্ট হয়েছে। কিন্তু তার কী আসে যায়? নিজের বাবা-মায়ের আসল খু’নি কে পেয়ে গেলেই হলো। বাকী কাজ হয়ে যাবে সময় মতো।

★★★

কেটে যায় একসপ্তাহ। তাইজ্যিন বাড়ী ফিরে না। তার ফোন ও সুইচড অফ। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে শার্মিলা দেখে বাড়ী সাজানো হচ্ছে। মনে হয় কোন গেস্ট আসবে! সাত-সাতটা দিন তাইজ্যিনবিহীন। নিচে আসতে তিথিয়া চৌধুরীর মুখোমুখি হয়। শার্মিলাকে দেখে তিথিয়া চৌধুরী বলেন, “তাইজ্যিনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে?”

“না।”

“আমার নাতিটা যে কোথায় গেলো।”

“আজকে কেউ আসবে?”

“হ্যাঁ।”

শার্মিলা আর কিছু জিজ্ঞেস করেনা। নিজের নাস্তাটা সেরে রুমে চলে আসে। রুম জুড়ে পায়চারি করে শার্মিলা। রুমটা কেমন খালি,খালি লাগছে। জেনো প্রতিটি আনাচেকানাচে তাইজ্যিনের কথার ধ্বনি,শরীরের গন্ধ লেপ্টে আছে। তাইজ্যিনবিহীন তার দিনগুলো কাটলেও একটা শূন্যতা অনুভব হয়। সেই শূন্যতা তাকে ভীষণ যন্ত্রণা দেয়। রাতে ঠিক করে ঘুমাতে পারেনা। এই বাস্তবতা সব ফিকে মনে হয়। তাইজ্যিন কবে আসবে? ফিরবে তো? কিন্তু কবে?

রুমের এক কোণে বসে শার্মিলা তাইজ্যিনকে নিয়ে ভাবছে। সে কোথায় আছে কে জানে। তবে যেখানে আছে হয়তো ভালোই আছে।

সন্ধ্যায় পার্টি আছে। শার্মিলা রেডি হয়ে নিচে আসে। বাড়ীতে গেস্ট এসেছে অনেক। আজকে সবাই বেশ খুশি। শার্মিলা ব্ল্যাক শাড়ী পরিধান করেছে। সব আছে শুধু তাইজ্যিন নেই। চোখের সামনে শুধু ভাসছে তাঁদের খুনসুটি, নজর টিপ দেওয়ার কাহিনী। তাইজ্যিনের শূন্যতা তাকে পোড়াচ্ছে। ভীষণ রকমের পোড়াচ্ছে। এই শূন্যতা অনুভব,তাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্খা, তাকে দেখতে না পেয়ে ব্যকুলতা কী ভালোবাসার লক্ষণ?

#চলবে