তৃষ্ণার্ত প্রেম পর্ব-২৫

0
3
তৃষ্ণার্ত প্রেম
বাংলা রোমান্টিক গল্প | তৃষ্ণার্ত প্রেম

#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|২৫|
#শার্লিন_হাসান

‘শার্মিলা তোমাকে কিছু কন্ডিশন দেওয়া হবে। মানলে ভালো না মানলে আরো ভালো।”

বেশ কোমল স্বরে বলে তাইজ্যিন। শার্মিলা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে প্রতিত্তোর দেয়, “বলো?”

“আমার পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলেমিশে থাকতে হবে। সারাদিন রুমের এক কোণে পড়ে থাকলে হবে না। আমার পরিবারের সদস্যদের সাথে রুড বিহেভ করা যাবে না। এই কন্ডিশন মানলে আমি তোমায় সাহায্য করব। তবে আমার প্ল্যান তোমায় জানাব। অবশ্যই তোমাকে হেল্প করব। আরেকটা কথা আমাকে চেঞ্জ হতে,তোমার বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য করো না।”

শার্মিলা কিছু বলেনা। তাইজ্যিন ফোন কলের ব্যস্ততা দেখিয়ে বারান্দায় চলে যায়। কিছুক্ষণ পর এসে শার্মিলাকে বলে, “সবার সাথে ডিনার করবে নিচে আসো। সময়টা দেখে নেও,প্রতিদিন ঠিক দশটায় ডিনার করি আমরা।”

শার্মিলা গম্ভীর মুখ করে তাইজ্যিনের পেছন,পেছন যায়। পরিবারের সবাই উপস্থিত সেখানে। শার্মিলাকে দেখে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী মুখটা গম্ভীর করে ফেলেন। শার্মিলার দম বন্ধ হয়ে আসছে। সবাইকে কেমন অচেনা মনে হচ্ছে। এই তাইজ্যিন! কখন অচেনা হয়ে যায় টেরই পায়না সে। কোনরকম খাবারটা শেষ করে উঠে দাঁড়ায় শার্মিলা। জেসিয়া ইসলাম তখন শার্মিলাকে বলেন, “আমার দু’টো ছেলের বউ। একজনকে কাছে পাই আরেকজন দেখাই দিতে চায়না। শুনেছি তোমার বাবা-মা নেই। আমার নিজের ও মেয়ে নেই। নিজের মায়ের মতো করো, দেখবে আমিও তোমায় নিজের মেয়ের চেয়েও বেশী করবো। তুমি না গম্ভীরতা নিয়ে থাকলে আমি কীভাবে কথা বলব?”

তখন তাইজ্যিন শুধায়, “যেহেতু সবাই উপস্থিত। এখন থেকে শার্মিলা সবার সাথে মিলেমিশে থাকবে। বাকীটা আমি দেখব।”

তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী শার্মিলার মুখের পাণে তাকিয়ে নজর সরিয়ে নেয়। মনে,মনে শুধায়, “সবাই প্ল্যান করুক। তোমার শেষ দিন খুব শীঘ্রই আসছে ইন্সপেক্টর।”

আজকে ডিনারের সময় একগাদা জ্ঞান শ্রবণ করেছে শার্মিলা। যে যার মতো রুমে চলে যেতে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী তাইজ্যিনকে ডাকে। দু’জনে গার্ডেনে বসে কফি পান করতে,করতে কথা বলছে। এক পর্যায়ে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী তাইজ্যিনকে বলে, “শার্মিলাকে বিদায় করে দাও। তারিনের সাথে তোমার বিয়েটা দেব আমরা।”

“ইম্পসিবল। তোমাকে বলছি, এই জনমে আমি শার্মিলাকে ছাড়ছি না। যদি সাত জনম বলেও কিছু থাকে সে জনমেও আমি তাকেই খুঁজে বের করব। কিছুতেই ছাড়ব না তাকে।”

“ও আমাদের শত্রু।”

“আমাদের নয়, তোমার আর ইব্রাহিমের।”

“হ্যাঁ একই!”

“শোন, শার্মিলার গায়ে টাচ করতে হলে তোমায় আগে আমাকে ডিঙিয়ে যেতে হবে।”

“তাইজ্যিননন!”

“এক কথা দুবার বলতে পছন্দ করিনা বাবা।”

“ওকে।”
চোখমুখ শক্ত করে জবাব দেয় তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী। তাইজ্যিন উঠো চলে যায়। যার জন্য নিজেকে পরিবর্তন করলো তাকে কী করে হারাবে? তাইজ্যিন অনুভব করে তার হৃদয়ে শার্মিলা মেয়েটা দখলদারিত্ব ঠিক কতটুকু। ভাবনা রেখে রুমে প্রবেশ করে তাইজ্যিন। শার্মিলা খাটের উপর হেলান দিয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। তাইজ্যিন টায়ার্ড সেজন্য একপাশে চুপচাপ শুয়ে পড়ে। শার্মিলা উঠে বেলকনিতে যায়। অসুন্দর গল্পটা নিয়ে ভাবছে। এটা কী কথা ছিলো? বিয়েটা কেনো করেছিলো? আর কী হলো তার সাথে। কেন তাইজ্যিনের মায়ায় পড়ে গেলো? এই মায়া তো কাটবে না। কোনভাবেই না। এই মায়া কাটাতে গেলে হয় ধ্বংস নাহয় জয়। তাইজ্যিন ছাড়া তার অস্তিত্ব আছে?

এতো সব ভাবনার মাঝে নিজের বাবা-মাকে স্মরণ হয়। নিজেকে অসহায় লাগে। কেউ নেই! কিছু নেই। হুট করে চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াচ্ছে। ভেতরে একটা চাপা কষ্ট আছে। যেটা কাউকে বলতে পারেনি সে। আকাশের পাণে তাকিয়ে তারাদের মাঝে নিজের বাবা-মাকে খুঁজছে শার্মিলা। কই? কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। গভীর রাতে রুমে আসে শার্মিলা। তাইজ্যিন গভীর ঘুমে আসক্ত। চুপচাপ তার পাশে শুয়ে পড়ে শার্মিলা।

★★★

শার্মিলার ক্ষতি করবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেয় তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী। এই ব্যপারে ইব্রাহিমকে জানালে সে তেমন কিছুই বলেনা। দিন যত যাচ্ছে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীর অবৈধ বিজন্যাস ততই কমে যাচ্ছে। তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী ভাবছেন, যা আছে তাতেই আলহামদুলিল্লাহ। ইব্রাহিমের সঙ্গটাও ত্যাগ করা দরকার। মুখে বলার সাধ্য নেই। তবেও এসব বাদ দিতে চান তিনি।

সকাল বেলা কিচেনে নাস্তার কাজে হেল্প করছে শার্মিলা। কারোর সাথেই তেমন কথা বলছে না সে। সবার জন্য নাস্তা রেডি করে উপরে চলে যায়। তখন তাইজ্যিন সবে ফ্রেশ হয়ে এসেছে। শার্মিলাকে দেখেও না দেখার ভাণ করে। জেনো অভিমান অনেকদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। দু’জনে আগেপিছে হেঁটে নাস্তা করতে যায়।

এভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। একদিন সন্ধ্যায় শার্মিলার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। রিসিভ করতে ওপার পাশের শুধায়, “তোমার বাবার খু’নি আসলে আমি। এখন আমিকে জানতে হলে একটা জায়গার ঠিকানা দিচ্ছি চলে আসো।”

“ঠিকানায় যেতে পারবো না। এমনিতেও তোকে বের করা ব্যপার না।”

“তাহলে তোর স্বামীকে মে’রে দেই। যেহেতু বের করবি আমায় দু’টো খু’ন করেই জেলে যাই।”

“ওর গায়ে একটা আঁচড় লাগলে তোকে আমি মে’রে ফেলব।”

“এতো দরদ?”

শার্মিলা জবাব দেয়না। ওপর পাশের ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসে। কিছুক্ষণ পর শার্মিলাকে একটা জায়গা টেক্সট করে পাঠায়। জায়গাটার নাম পড়ে অবাক হয় শার্মিলা। এটা একটা পরিত্যক্ত জায়গা। যেটার সামনে লেক আছে। সেখানে তেমন কেউ যায় ও না।

তাইজ্যিন হতভম্ব হয়ে রুমে আসে। তার বাবার নামে কেস হয়েছে। জেল জরিমানা ও হতে পারে। শার্মিলাকে তার সন্দেহ হয়। কিন্তু শার্মিলা কেস দেওয়ার হলে সেই শুরুতেই দিতো। তাহলে নতুন ব্যক্তি আসলো কোথা থেকে?

শার্মিলার ঘুম হচ্ছে না চিন্তায়। কীভাবে কী? এতদিন পর খু’নি স্ব-ইচ্ছায় ধরা দিচ্ছে। এটাও কী প্ল্যান না? তাইজ্যিনের ক্ষতি করতে চায়। ভেবে চিন্তে বের করে ব্যক্তিটা কে।

★★★

একটা পরিত্যক্ত প্রায় কারখানার সামনের গড়ে উঠা ছোট্টো লেকের পাড়ে দৌড়ে আসে শার্মিলা। হাতে তার রিলভার রেডি। সামনের ব্যক্তিকে মারতে সর্বদা প্রস্তুত সে। কিন্তু আশেপাশে তেমন কাউকে দেখলো না। তার মানে
আগন্তক তাকে ভুল ঠিকানায় এনেছে। হতে পারে এখানে তার মৃত্যু। নাহয় খু’নির সাথে পরিচয় হওয়া। এখানে থেকে যদি তাকে মেরে,কেটে লেকের পাড়ে ফেলে দেওয়া হয় কেউই জানবে না। কারণ সে হেডকোয়ার্টারে তার ডিপার্টমেন্টে কোন ইনফরমেশন দেয়নি তার বর্তমান লোকেশন নিয়ে। এই সত্যিটা তার একার। পরিবারের প্রতিশোধ শুধুই একার!

পরিত্যক্ত প্রায় কারখানার ভেতরের গেট দিয়ে লেকের পাড়ে প্রবেশ করতে তাইজ্যিনের চোখ যায় কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে। পেছন থেকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ এলার্ট সে। হাতে থাকা পিস্তলটা জানান দিচ্ছে তাইজ্যিনের অপেক্ষায় সে। তবে শার্মিলার সাহসের কথা ভেবে মুচকি হাসে তাইজ্যিন। ব্লাক জিন্সের সাথে ব্লাক কালার জ্যাকেট কায়ায় জড়ানো। ছোট চুলগুলো একপাশে ক্লিপ দিয়ে ঠেকানো। মুখশ্রীতে নেই কোন প্রসাধনীর ছোঁয়া তবে মুখশ্রীতে বেশ উত্তেজনা পরিলক্ষিত। তাইজ্যিন নিশব্দে পেছন দিয়ে হেঁটে শার্মিলার দিকে যাচ্ছে। শার্মিলা এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছুটা পাশে সরে যায়। শার্মিলাকে চলে যেতে দেখে তাইজ্যিন ভড়কে যায়। হাতের পিস্তলটার দিকে তাকায় আর যাওয়ার পাণে তাকায়।

লেকের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তাইজ্যিন। শার্মিলা কারোর অস্তিত্ব টের পেতে পাশ ঘুরে এগিয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর তাইজ্যিনের সামনাসামনি হতে চোখমুখ শক্ত করে নেয়। তাইজ্যিনকে দেখে মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা হলো শার্মিলার। দু’জন দু’জনের দিকে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকালেও শার্মিলা নিজের পিস্তল ঠিকঠাক ভাবেই রেখেছে যাতে কপাল বরাবর বুলেট গেঁথে যায়। একটুও যাতে মিস না হয়। তাইজ্যিন ভাবছে গুলি চালাবে নাকী সময় নিবে। তারা কেউ কোন ধরনের কথা বলছে না। অন্য কারোর পদধ্বনি শোনতে শার্মিলা গাড় বাকিয়ে তাকায়। বিশের অধিক গার্ডস এসেছে। শার্মিলা বাঁকা হেঁসে শুধায়, “আমার বাবা মায়ের খু’নি তাহলে তুমি?”

“আমি না….কথাটা বলে তাইজ্যিন একটা বুলেট চালায়। তার বুলেটকে ক্রস করে আরেকটা বুলেট তাদের দিকে আসছে। তাইজ্যিন তখন শার্মিলাকে নিয়ে লেকের পানিতেই ঝাপ দেয়। শার্মিলা হতভম্ব হয়ে যায়। তখন তাইজ্যিন বলে,

” শোন এই দফায় বেঁচে গেলে তোমায় আমার বাবুর মাম্মাম বানাবো।”

শার্মিলা হাসবে নাকী কাঁদবে বুঝতে পারছে না। পানিতে পড়েও মানুষ এভাবে বলে। তাইজ্যিন ভেবেছিলো গভীর পানি হবে। কিন্তু এটা সাইড হওয়ায় গলা অব্দি পানি হয় তাইজ্যিনের।

অন্যদিকে কপালে বুলেট লাগায় আহত হয়েছে ইব্রাহিম। তাইজ্যিন কোথা থেকে আসলো এখানে? তাকে ধরাধরি করে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এদিকে তাইজ্যিন শার্মিলাকে পানি থেকে উঠানোর জন্য গুটি কয়েক গার্ডস আসে।

(চলবে।)