তৃষ্ণা তব নাহি মেটে পর্ব-১৭

0
15

#তৃষ্ণা_তব_নাহি_মেটে
#পর্ব১৭
#রাউফুন

শিশির শিপার দিকে তাকিয়ে সে বলল, “এটা কী করলে তুমি? মেয়েটি মরে গেছে, শিপা বুঝতে পারছো এখন কি হবে?”

শিশির ক্রমশ ভীত হয়ে পড়ছে। যদিও ওর লোকজন সঙ্গে আছে। ইচ্ছেকে গায়েব করতে বেশি একটা সময় লাগবে না। কিন্তু একদিন না একদিন সত্য উন্মোচন হবেই, সত্য যদি রাত হয় তবে দিনের আলোর মতো একদিন তা প্রকাশ পাবেই৷
শিপা কিছু বলল না। তার মুখ শক্ত হয়ে ছিল, যেন সে নিজেও বুঝতে পারছিল না, এই ঘটনা কীভাবে সামাল দেবে।

সন্ধ্যা তখন গভীর অন্ধকারে রূপান্তরিত হয়েছে। পুকুরপাড়ের ঘটনা সবাইকে হতভম্ব করে দিয়েছিল। ইচ্ছে মিথ্যে আশা নিয়ে সেখানে গিয়েছিল, কিন্তু নিজের জীবন দিয়ে শিপার ষড়যন্ত্রের মূল্য চুকিয়েছে। পুকুরে নিথর দেহ ভাসছিল ইচ্ছের, আর শিপা সেখানে দাঁড়িয়ে এক ধরনের বিজয়ের হাসি হাসছিল। তার মনে একটাই চিন্তা—ইচ্ছের জীবন শেষ হলে তাদের গোপন সত্য আর কেউ সামনে আনতে পারবে না।

“এতো ভেবো না শিশির, জুহাইরের কি খবর বলো? প্ল্যান মাফিক কাজ হয়েছে?”

“নাহ, যতটা খবর পেয়েছি ও প্রা’ণে বেঁচে আছে। আর ওকে মা’রার প্ল্যান ও আমাদের ছিলো না। পঙ্গুত্ব দেওয়াই ছিলো প্ল্যান। তবে ও সামান্যই চোট পেয়েছে। ওর বদলে অন্য আরেকজনের পায়ে আঘাত পেয়েছে!”

“কার?”

“ওর বন্ধু মাহিনের!”

জাকিয়া, শারমিন, আর তুলি তিনজনকে এই মূহুর্তে মুখ বেঁধে জিম্মি করা হয়েছে। পিছ মুড়ো করে হাত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অশ্রুতে টইটম্বুর প্রত্যেকের চোখ! অবাধ ধারায় বয়ছে অশ্রুরা।

শিশির শিপার অপরাধে হাত মেলাতে না চাইলেও এই মূহুর্তে আরও ফাসার চাইতে সবকিছু একেবারে মিটিয়ে ফেলায় যুক্তি সঙ্গত মনে হচ্ছে। কারণ এখন যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। মোটেও দেরি করা চলবে না। একটা ব্যবস্থা দ্রুতই করতে হবে। জুহাইরের সক্রিয়তা এবং সত্য উদঘাটনের সাহস তাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। তাই তাদের সিদ্ধান্ত ছিল জুহাইরকে চিরতরে বিছানায় ফেলে রাখা। এক্সিডেন্ট হওয়ার আগে কোথা থেকে যেনো মাহিন এসে জুহাইরকে সরিয়ে দিলো। আর জুহাইরের জায়গায় মাহিন আহত হলো। শিশির এবং শিপা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে কিছু গুণ্ডাকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছে। সবার মুখ কালো মুখোশে ঢাকা ছিলো।

জুহাইর যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন তার চোখে আগুনের ঝলকানি। ইচ্ছের দিকে প্রায় দৌড়ে আসে ছেলেটা। শিশির আর শিপা কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই জুহাইর ইচ্ছের মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিয়েছে। ওর মাথায় ব্যান্ডেজ৷ ও হসপিটাল থেকে ছুটে এসেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। জাকিয়া, শারমিন, তুলি তিনজনের চোখে অল্প আশার আলো। হইতো ভাবছে একটু আশার আলো হয়ে এসেছে জুহাইর।

শিশির ভয়ে ভয়ে বললো,“তোমরা দাঁড়িয়ে কি দেখছো, গু’লি করে উড়িয়ে দাও ছেলেটাকে। এরপর একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেবে প্রত্যেককে।”

বসের অর্ডার পাওয়া মাত্রই গু’লি ছো’ড়া হলো জুহাইরের দিকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই বিদ্ধ করলো জুহাইরকে এক’টা বু’লে’ট। চিৎকার করে উঠে জুহাইর। তার সাদা পাঞ্জাবি ভেদ করে র’ক্তের ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে। চোখ গুলো স্বাভাবিকের চাইতে বড়ো আর রক্তিম হলো৷ ইতোমধ্যেই ইচ্ছের কালো বোরখায় রক্তের ছিটে মেখে গিয়েছে। জুহাইর শিপার দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে এগিয়ে যায়।

“তুই আমার বউকে মেরে ফেলেছিস, না?” জুহাইর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে৷

পরপরই তীব্র আক্রোশপ্রসূত হয়ে বলল, “তোকেও আমি বাঁচতে দেব না।”

এ কথায় শিপা ঘাবড়ে গেলেও শিশির তার হাতে ইঙ্গিত করে। শিশির চিৎকার করে বলে, “এখনই শেষ কর ওকে!”

এরপর যা হলো, তা যেন এক দুঃস্বপ্ন। একের পর এক গুলি ছুটে যায় জুহাইরের দিকে। প্রথম গুলিটা তার পেটের পাশ কে’টে গেলেও,দ্বিতীয়টা বুকের ডান দিকে বিদ্ধ করে, তৃতীয়টা কাঁধে, কাধের ক্ষ’তটা কেবল ছু’য়ে গেছে সাদা পাঞ্জাবীটাই। জুহাইর মাটিতে পড়ে যায় । কিন্তু তার প্রতিশোধের আগুন তাকে থামতে দেয় না। জখম অবস্থাতেও সে উঠে দাঁড়ায় এবং শিপার দিকে এগিয়ে যায়। ভয়ে শিপা কেঁপে ওঠে পিছনে পিছিয়ে যেতে থাকে। পরিস্থিতি হয়ে উঠে ভয়ং’কর’। বেঁধে রাখা তিনজন মেয়ে বোবা চিৎকারে ফেঁটে পড়ে৷ সহ্য হয় না এই দৃশ্য।

“তুই আমার বউকে মেরেছিস!” জুহাইর তার কণ্ঠে কষ্ট মিশিয়ে বলে। পে’ট চেপে উঠে দাঁড়িয়ে ভয়াবহ ভাবে তে’ড়ে আসে।

“তোর মতো খু”নি বাঁচার অধিকার নাই। খু’নি–তোকে আজ শেষ করে ফেলবো আমি।”

নিজের র’ক্তা’ক্ত হাতে চেপে ধরে শিপার গলা। শিপা ছাড়াতে চাই জুহাইরের হাত, কিন্তু সব হারানো জুহাইরের ক্ষীপ্র, ক্ষ্যাপা শক্তির সঙ্গে পারে না। পা দিয়ে আঘাত করে জুহাইর শিপার পেটে। কুকড়ে যায় শিপা। দূরে সিটকে পড়ে যায় জুহাইরের থেকে।

এদিকে তুলি, জাকিয়া, এবং শারমিন দূর থেকে সব দেখে আঁতকে ওঠে। জুহাইর আসতে আসতে পুলিশে খবর দিয়ে এসেছে। এখনো পুলিশ আসছে না কেন? তৎক্ষনাৎ সাইরেন বেজে উঠে। মুখোশধারী গুণ্ডারা পুলিশের উপস্থিতির খবর শুনে পালানোর পরিকল্পনা করে।

পালাতে দেখে জুহাইর শিশিরের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তার মুখোশ ধরে টানতে শুরু করে। মুহূর্তের জন্য মুখোশ খুলে পড়ে যায়, এবং শিশিরের মুখ দৃশ্যমান হয়। জাকিয়ার ততক্ষণে তুলি বুদ্ধি করে পেছন থেকে খুলে দিয়েছিলো৷ জাকিয়া সুযোগ বুঝে, অন্তর্বাসে লুকিয়ে রাখা ফোন বের করে দ্রুত সেই মুহূর্তের ছবি তোলে। এই প্রমাণ তাদের জন্য অমূল্য হতে পারে।

ততক্ষণে শিশির ও শিপা পালানোর জন্য গাড়ি নিয়ে ছুটে যায়। দুর্বল জুহাইর তাদের থামানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তার ক্ষত তাকে আরো দুর্বল করে তোলে। পুলিশের গাড়ির সাইরেনের শব্দ শুনতে পায় জুহাইরও। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।

জুহাইর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার সাদা পাঞ্জাবি লাল রক্তে ভিজে যায়। তার চোখে এক অদ্ভুত নির্জীবতা, কিন্তু প্রতিশোধের তীব্রতা তখনো তার মুখে স্পষ্ট। পুলিশের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও, তাদের সামনে শুধু নিথর, রক্তাক্ত দেহটাকে টেনে নিয়ে যায় ইচ্ছের দিকে । একপাশে ইচ্ছের নিথর দেহ। সবকিছু এক ভয়ংকর ট্র্যাজেডি লাগছে। মেয়ে তিনজনই পুলিশকে সবকিছু খুলে বলতে চেয়েও পারে না৷ প্রচন্ড ভয়ে তটস্থ তারা। কাঁদতে কাঁদতে কন্ঠ রোধ হয়ে আসছে তাদের। পুলিশের জীপ ছুটে গেছে শিশিরদের গাড়ির পিছনে পিছনে।

প্রান্ত ছুটতে ছুটতে আসে কোথা থেকে যেনো। এসেই জুহাইরকে টেনে তুললো, পরণের শার্ট খুলে বেঁ’ধে ডান বুকে যে স্থানে গু’লি লে’গেছে সেখান থেকে ডান হাত পেঁচিয়ে দেয়৷ এম্বুলেন্স এসে গেছে এতক্ষণে। ইচ্ছেকে মহিলা পুলিশ এবং জুহাইরের নিস্তব্ধ দেহখানা তুলে প্রান্ত। এখনো জ্ঞান আছে জুহাইরের। কিভাবে আছে তা কেউ-ই জানে না। প্রান্ত উদ্ভ্রান্তের ন্যায় বন্ধুকে আঁকড়ে ধরে৷ পুলিশের সঙ্গে জাকিয়ারাও যায়।

“চোখ খুলে রাখ জুহাইর। জ্ঞান হারালে চলবে না।”

গালে চাপড় দেয় প্রান্ত। জুহাইর কথা বলে না। কেবল ইচ্ছের নাম জপতে থাকে। হসপিটালে পৌঁছানোর পর কিছুতেই জুহাইরকে কেবিনে নেওয়া গেলো না। ইচ্ছের কি অবস্থা না জেনে সে নড়বে না। ডাক্তার তাড়া দেয়। কিন্তু জুহাইর অনঢ়! ডাক্তার জানালো ইচ্ছে বেঁচে নেই। স্টোমাকে অনেকটা পানি ঢুকে, শ্বাস নালী বন্ধ হয়ে গেছে আরও আগেই। জুহাইরকে স্ট্রেচারে উঠানো হলে ও জোর করে নেমে দাঁড়ায়। কি হবে এই জীবনের মায়া করে? যদি না প্রিয় নারীটি না থাকে? কেবল স্তব্ধ হয়ে এগিয়ে যায় ইচ্ছের দিকে।

“জুহাইর, নামছিস কেন?”

বিচলিত কন্ঠে বলে প্রান্ত আঁকড়ে ধরে বন্ধুকে। জুহাইর ওকে সরিয়ে দেয়৷ ওর এই অবস্থা দেখে প্রান্তর চোখ জোড়া ভিজে উঠে। ইচ্ছের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে মুখ থুবড়ে পড়ে ছেলেটা। তবুও প্রবল জোর দিয়ে শরীরের অবশিষ্ট শক্তিটুকু প্রয়োগ করে উঠে দাঁড়ায়। ওর চোখ বেয়ে অশ্রুদের বারিধারা বয়ে যাচ্ছে৷ বিড়বিড় করে ছেলেটা,

“এতো অল্প সময়ের জন্য কেন এলে ইচ্ছে, কেন দীর্ঘ হলো না আমাদের পথ চলা? এমন হলে কি খুব ক্ষতি হতো, তুমি আর আমি বৃদ্ধ বয়সে এক সঙ্গে পার করে দিতাম ঝগড়া করতে করতে। নাতি-নাতনীদের দেখভাল করতে তুমি, আমায় সময় না দেওয়ার জন্য খানিক গাল ফোলাতাম না হয়৷ খুব কি ক্ষতি হতো? নিষ্ঠুর রমনী, আমার থেকে এই সব প্রহর কে’ড়ে নেওয়ার জন্য কখখনো ক্ষমা করবো না। শুনে রাখো মেয়ে, আমার সুন্দর স্মৃতি গুলো আঁকড়ে ধরার আগেই হারিয়ে যাওয়ার জন্য তোমায় ক্ষমা করবো না।”

“জুহাইর ভাই, আমরা চেয়েও ইচ্ছেকে বাঁচাতে পারিনি! আপনি কেন এতো দেরি করে এলেন?”

জাকিয়ার কথায় জুহাইর কেমন করে যেনো তাকালো,“হুশশ,আর একটা কথাও না৷ দেখতে পারছো না, আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি? কোন সাহসে মাঝখানে ঢুকছো? মেনার্সলেস মেয়ে।”

সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে ইচ্ছের পাতলা দেহখানা তুলে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছু করতে পারছে না৷ পুলিশ ইচ্ছের মৃতদেহ পরিক্ষা করানোর জন্য বলে। মহিলা কন্সটেবল এগিয়ে আসে। কিন্তু জুহাইর তাদের থামিয়ে হিংস্র সুরে বলে উঠল,

“খবরদার! আমার স্ত্রীর দেহ কেউ ছোঁবেন না। মহিলা পুলিশও না। ও ঘুমাচ্ছে! আমি নিজে ওকে সুন্দর করে মাটির নিচে রেখে আসব। আপনারা কেউ ওর কাছে আসবেন না।”

তুলি, জাকিয়া, আর শারমিন এমন দৃশ্য দেখে ভেঙে পড়ে। তারা জানে, জুহাইর আসলে তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। চোখের সামনে এত বড়ো ঘটনা ঘটেছে, তবু সে নিজেকে শক্ত করে রেখেছে। তাদের চিৎকার, কান্না পুরো জায়গাটা ভরিয়ে দেয়। জুহাইর প্রান্তর দিকে তাকালো, বললো,“আমার ইচ্ছেকে, যারা মে’রেছে তা তাদের কাউকে ছাড়বি না, কাউকে না। আমি যদি নাও ফিরি তবে ওঁদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করবি। আমার চাচ্চুকে খবর দে, আর ঘটনা সব খুলে বলবি, ব্যস। ওরা যেনো বা’র বা’র মৃ’ত্যু চায়, এমন অবস্থা করবি। তোর দায়িত্ব এটা।”

জুহাইরকে থামাতে চায় পুলিশ, তবে জুহাইরের পাগলামী দেখে পুলিশও আর কিছু করতে পারেনি। তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে, তবু সে যেন অদম্য এক শক্তির অধিকারী। ধীর পায়ে সে ইচ্ছের নিথর দেহ তুলে নেয়। যেনো অলৌকিক শক্তি ছেলেটার দেহে ভর করেছে। হইতো বহিরাগত ক্ষ’তর চাইতে ভেতরের ক্ষ’ত এতোটাই প্রখর যে বাইরের ক্ষ’তর অস্তিত্ব ছেলেটাকে টলাতে পারছে না।
ভার্সিটি থেকে হসপিটাল বেশি দূরত্বে নয়। প্রান্ত ওর সঙ্গে আসতে চাইলেও জুহাইর বললো,“আমার আর ওর একান্ত মূহুর্তে আমি কাউকে চাই না। কাউকে না।”

হসপিটাল থেকে সোজা চলে আসে জুহাইর পুকুর ঘাটে।
পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে নামিয়ে আনে। কালো বোরখায় আবৃত সেই দেহটিকে ধীরে ধীরে গোসল করাতে থাকে। পুকুরের স্বচ্ছ জল তার রক্তে রঞ্জিত হতে থাকে, তবু তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
তার রক্তে মাখা সাদা পাঞ্জাবি খুলতে শুরু করে। তার কাঁপা কাঁপা হাতে সে ইচ্ছের ভেজা, নিথর দেহের উপর সেই পাঞ্জাবি পড়িয়ে দিল। প্রতিটি আঙুল যেন কথা বলছে, প্রতিটি স্পর্শে অনুভব করছে স্ত্রীর অস্তিত্ব। তারপর গভীর বেদনার সঙ্গে জুহাইর বলল,

“না হোক সাদা শুভ্র পাঞ্জাবি, হোক না তা রক্তে রঞ্জিত। তোমার ইচ্ছেটা তো পূরণ করতে হবে বলো? তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করার জন্য হলেও তো আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। এই পৃথিবীতে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারো, কিন্তু আমি তো তোমার ইচ্ছে অপূর্ণ রেখে যেতে পারব না। তুমি চেয়েছিলে আমাদের জীবনটা স্বপ্নের মতো সুন্দর হোক। হয়তো আমি সেটা দিতে পারিনি। কিন্তু এবার, তোমার শেষ ইচ্ছেটা আমি পূর্ণ করব। তোমাকে আমার নিজের হাতে দাফন করতে হবে তো? আর তুমি যা বলেছিলে সেভাবেই, ঠিক সেভাবেই হবে হ্যাঁ? নিষ্ঠুর রমনী তুমি জানো? দুনিয়ায় সবচেয়ে নির্মম, আর ভয়ংকর ইচ্ছে রেখে গেলে? জানো আমার বক্ষস্থলে কি হচ্ছে? জানবে কিভাবে? নিষ্ঠুর তুমি। বড্ড নিষ্ঠুর। কথা বলবে না আমার সঙ্গে। কখনো না। মনে রেখো ক্ষমা কিন্তু নেই তোমার।”

জুহাইরের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। মনে হচ্ছে, সে ইচ্ছেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পোশাকটি পরিয়ে বিদায় জানাচ্ছে। তারপর নিথর সেই দেহ কাঁধে তুলে নেয়। তার পা ভারী, তার চোখে লক্ষ্য স্পষ্ট।

জুহাইর একা একা গোরস্থানে গিয়ে ইচ্ছের জন্য কবর খনন করে। পুরো সময় সে একটুও দম নেয়নি। নিজের রক্তে ভেজা শরীর নিয়ে মাটি খুঁড়তে থাকে। প্রতিটি কোদালের আঘাতে যেন তার বুক ভেঙে যাচ্ছে। তারপর ইচ্ছেকে কবরের পাশেই একটা খাটিয়া রাখা সেখানে শুইয়ে দেয়।

জানাজার সময় কেউ নেই। কিন্তু জুহাইর একাই দাঁড়িয়ে জানাজা পড়ে। প্রতিটি বাক্যে তার কণ্ঠ কাঁপছে, তবু তার শোক গভীর। জানাজা শেষে ইচ্ছেকে কবরে শুইয়ে সে তার কপালে শেষ চুম্বন এঁকে দিল। যেন তার ভালোবাসার এক চিরন্তন প্রতীক।

সবশেষে, জুহাইর কবরের উপর মাটিতে শুয়ে পড়ল। তার চোখ বন্ধ হয়ে এল। সকাল হলে প্রান্ত সেখানে এসে দেখে, জুহাইর কবরের উপর নিথর হয়ে পড়ে আছে। তার শরীর নিথর, তার আত্মাও যেন প্রিয়তমার কাছে চলে গেছে। এক চিরন্তন ভালোবাসার ইতিকথার ইতি হয়েছে। প্রান্ত জুহাইরের দেহখানা আঁকড়ে ধরে। ক্রোধে তার চোখ আগ্নেয়গিরির ভয়ানক লাভার ন্যায় মনে হচ্ছে।

“একটাও বাঁচবে না, একটাও না!”

প্রান্ত কাঁধে তুলে নেয় জুহাইরের নিষ্প্রাণ দেহ।

#চলবে…