তেইশতম বসন্ত পর্ব-০২

0
31

তেইশতম বসন্ত
পরিসংখ্যা ২
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)

সাহিরের ভাবনা এক মুহূর্তে কেটে গেছে।ঠিক সেইভাবেই যেভাবে কয়েক সেকেন্ড আগে ফোনটি কেটে গেলো। খুশবু কল করলো পূনরায়।আশ্চর্য্যজনকভাবেই কল যাচ্ছে না সেই নাম্বারটায়।ফোন বন্ধ করা যায়।কিন্তু ল্যান্ডলাইন?এই ফোন কলটি চিন্তার সাগরে ফেলে দিয়ে চলে গেলো খুশবুকে।বারবার কন্ঠস্বরকে স্মরণ করছে।কারো সাথে মিলে কি?কোনো পরিচিত ব্যক্তির সাথে?ভাবনার সময় দীর্ঘায়িত করলো। অতশত চাপ প্রয়োগ করেও বিশেষ কোনো লাভ করতে পারেনি।কারো সাথেই মিলছে না আওয়াজ।একটা সময় পর খুশবু বিরক্ত হয়ে উঠে।ভাবতে থাকে অহেতুক সময় অপচয় করছে সে।হয়তো কেউ মজা করছে কল করে।

মুখ থেকে উচ্চারিত হলো, -“ধ্যাত!”

বলেই ফোনটা ঠাস করে বিছানায় রেখে ঘুমোনোর প্রস্তুতি নেয়। কাঠ আর কাঁচের সামঞ্জস্যতায় তৈরি জানালা ভেদ করে শুভ্র চাঁদের আলো মুখে এসে পড়ছে খুশবুর। স্নিগ্ধ মনে হচ্ছে। খুশবুর এই হালকা আলো বেশ ভালোও লাগলো বটে।টিলার উপর থেকে চাঁদটাও যেনো অনেক কাছাকাছি।এক পলক সাদা চন্দ্রিমার দিকে উকি দিয়ে চোঁখ বুজে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায়।

খুব প্রভাতেই ডাক পড়লো খুশবুর।এত সকালে উঠার অভ্যাস নেই ঘরেও।তার উপর ঘুরতে এসে ভোর বেলায় কিসের কাজ?শুনেও না শুনার ভান ধরে পাতলা কম্বলে মুখ ঢেকে শুয়ে রইলো বিছানার মাঝে।নায়লা বেগমের তীক্ষ্ণ গলার সুর ভাসে পুনর্বার। এবারকার কণ্ঠস্বর পূর্বের চেয়ে দ্বিগুণ ঝাঁঝালো।দরজার দ্বারে দাঁড়িয়ে বলছেন,

-“আরেকবার যেনো আমার ডাকতে না হয় খুশবু।এই বলে গেলাম”

একবার এড়িয়ে গেলেও দ্বিতীয়বার এর মতন মায়ের কথা উপেক্ষা করার সাহস নেই।এই ভয়টা কেনো?সে নিজেও জানে না।ছোটোবেলা থেকে কড়া শাসনে বড় হয়েছে তাই হয়তো।এটা ভেবেই নিজেকে শান্তনা দেয় খুশবু।সকালবেলা গোসল করার অভ্যাস থেকে শীত, গ্রীষ্ম,বর্ষা কোনোকালই তাকে বিরত রাখতে পারবে না।আজও তাই।গোসল করে মাথায় তাওয়াল পেঁচিয়ে এসে বসলো খাবার টেবিলে।চোখ উচুঁ করে দেখলো বড় পেয়ালায় গরম গরম নেহারি। মনটা ভালো লাগায় ভরে যায় তৎক্ষনাৎ।ঝলকানি সারা চেহারায়।

লোকমান চৌধুরী মেয়ের পাতে নাস্তা তুলে দিয়ে বললেন,

-“দেরি করলে যে এত?”

-“ঘুমাচ্ছিলাম বাবা”

লোকমান চৌধুরী হেঁসে উত্তর দেন,

-“সেটাতো আমিও জানি মা।ঘুরতে এসেছো বলে বেলা পর্যন্ত ঘুমোলেতো হবে না।”

-“বেলা?..কিন্তু এখনতো মাত্র সকাল দশটা বাজে।” মিনমিনে সুরে বললো খুশবু।

-“আচ্ছা বাদ দাও।তোমার জন্য তোমার নানু নেহারি করেছেন।”

খুশবু দুষ্টু হেসে বললো,

-“এটা আগে বললেই পারতে এক লাফে উঠে যেতাম”

প্রিয় খাবারের কাছে হার মানা সৈনিক।মায়ের কিছুক্ষণ আগে রেগে যাওয়াটাও ভুলে গিয়েছে খুশবু।বাবা যত্ন করে মেয়ের প্লেটে তুলে দিলেন গরম গরম নেহারি আর রুটি।চা হচ্ছে তার মামী রান্নাঘর থেকে জানান দিলেন।যেনো আর কিছু জীবনে চাই না।এক মুহূর্তের জন্য ভুলে গেছে কিসের প্রেম?কিসের বেদনা?আসল শান্তি প্রিয় খাবারেই মাঝেই।

ফাহাদের সইলো না এই শান্তি।নিজের প্লেটের খাবার রেখে আড়ালে হাত বাড়ায় খুশবুর প্লেটের দিকে।খাবার চুরি করার ভনিতা।শুধুই খুশবুকে জ্বালাতন করার উদ্দেশ্যে।হাত বাড়াতেই খপ করে ধরা পরে।যা ছোটোবেলা থেকে হয়ে আসছে তাই হলো।রাগী চোখে খুশবু চাইলো ফাহাদের দিকে।হাতের উপর খামচে ধরেছে।

ফাহাদ ধারালো নখের আঁচড় লাগায় চেঁচিয়ে উঠে।হাত সরিয়ে বলে,

-“রাক্ষসী মহিলা!”

-“আর তুমি?তুমি একটা চোর”

ফাহাদ মায়ের দিকে চেয়ে বলল, -“দেখেছো মা?”

নায়লা বেগম স্বভাবত রাগী।দুজনের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,

-“এই বয়সে তোদের এমন নাটক আমার একদম সহ্য হয়না।চুপচাপ খা”

জরিনা বানু বললেন,

-“দুইজন সেয়ানা আছে।বাহিরে সাহেব আর মেমসাহেব এর মতন হাঁটাচলা করে।ঘরের ভিতরে সাপ বেজির লড়াই।”

ফাহাদ ঠোঁট চেপে হাসলো। সাথে খুশবুও।নিজের বাড়ি,নিজের ঘর আর নিজের আপন মানুষদের মধ্যে বেরিয়ে আসে মানুষের আসল ব্যক্তিত্ব।মনের বাচ্চামোকে এই স্থানে প্রকাশ করা যায়।এখানে বিচার করার কেউ নেই। অথচ ফাহাদ বাহিরের জগতে একজন নম্র আর শান্ত পুরুষ।অন্যদিকে খুশবু অনেকটা বিপরীত দিকের মেয়ে।ঘরের চার দেয়ালে চঞ্চলতায় ঘেরা তার অলসতায় পূর্ন রাজ্য।

খাওয়ার প্রায় শেষ পর্যায়ে খুশবু বললো,

-“আচ্ছা আজ ঘুরতে যাবো না?”

ফাহাদ উত্তর দেয়,

-“হ্যাঁ।নোমান আসবে। জাফলং যাচ্ছি”

খুশবুর মস্তিষ্কে জাগে অদ্ভূত এক প্রশ্ন।করেও ফেললো ঝটপট,

-“আচ্ছা ভাইয়া আমরা ইন্ডিয়া বর্ডারে পা রাখবো কেমন?একটা ছবি তুলবো তারপর টুপ করে ফিরে আসবো কেমন?”

অধমের মতন কথাবার্তা শুনে ফাহাদ বিচিত্র মুখ বানায়।মুখে পুড়ে আছে খাবার।কোনো রকম চিবিয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা না করেই বলে উঠলো,

-“হ্যাঁ আর্মিরাতো তোমার শ্বশুর আব্বা হয়।বরণ করবে তোমাকে রাইফেল দিয়ে।তারপর ছবি তুলো তুমি!”

পরক্ষনেই বাবার মুখের দিকে চোখ পড়ে ফাহাদের।কথার জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল।এখন ফিরে চেয়ে বিপদ দেখতে পাচ্ছে।খাবারটুকু গলা দিয়ে নামছে না। ছাব্বিশ বছরের এক তাগড়া পুরুষ লোক কিনা বাবার ভয়ে ভেতরে ভেতরে শুকিয়ে মরুভূমি।

নায়লা বেগম বললেন,

-“কথার কি শ্রী!তোদের এত রেস্ট্রিকশনের মধ্যে বড় করেও কি লাভ হলো?”

মায়ের কথায় ঢোক গিলে খুশবুও। রেস্ট্রিকশন শব্দটা ভীষণ ভারী আর ভয়ঙ্কর।যদি জানতে পারে এই রেস্ট্রিকশনের মধ্যেই মেয়ে প্রেম করার দুঃসাহস দেখিয়েছে?আর সেই সম্পর্ক ভেঙে দেবদাসী হওয়ার উপক্রম?তাহলে সিলেট থেকে সোজা কক্স বাজার নিয়ে গিয়ে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেবে।দ্রুত চোখ নামায় খুশবু।চা খেয়ে দৌড় লাগায়।

রুম থেকে চেঁচিয়ে বলো,

-“আমি রেডি হচ্ছি।তুমিও দ্রুত দেরি হও ভাইয়া।মেয়েদের চেয়ে বেশি সময় লাগে তোমার।”

ঘন্টা খানেক এর মাঝে দুই ভাইবোন বেরিয়ে পড়েছে জাফলং এর উদ্দেশ্যে।নায়লা বেগম দুজনকে একা ছাড়তে চাইছিলেন না কোনো ভাবেই।ফাহাদ এর আশ্বাসে লোকমান চৌধুরী রাজি হন। অনুমতি দেন। স্ত্রীকে এই বলে শান্ত ‘একা চলাফেরা করে শিখুক’।বাবার আদেশে দুই সন্তান যেনো সুযোগ পেয়ে বসেছে।হাওয়ায় উড়ে বেড়াচ্ছে খুশবু।মাঝেমধ্যে ফাহাদ তাকে দেখে অবাক হয়।হৃদয় ভাঙ্গা এক নারী কখনো বিরহে আবার হঠাৎ করে উচ্ছাসে মত্ত।আসলে সে দুঃখী নাকি অত্যন্ত আনন্দিত সেটাই বুঝে ওঠা দায়।নোমান হাজির তার নিজস্ব গাড়ি নিয়ে। খুশবুকে কোম্পানি দেওয়ার জন্য নিজের ছোট বোন নেহাকে সাথে এনেছে।

একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক আকর্ষণ। এই পাহাড়িতে অবস্থিত ঝর্ণার জলের গোটা দৃশ্য অত্যন্ত মনোহর। পাহাড়ির পার্শ্বে ঘনঘন আবৃত্তি করা সবুজ বন এবং নীল আকাশের সমন্বয়ে হৃদয় ছুঁয়ে দেয় গভীরভাবে। বিশেষভাবে বৃষ্টির সময়, জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ঝর্ণার সুন্দর ঝর্নাধারা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে।তবে আজ বৃষ্টি নেই।হালকা শীতল পরিবেশ। জাফলং এর এই দৃশ্য চিত্ত আনন্দিত করছেপ্রাকৃতিক শান্তির অনুভূতি দিচ্ছে খুশবর হৃদয়ে।কথায় আছে আনন্দের সাথে মনে পড়ে পুরোনো কিছু বিজড়িত স্মৃতি। হঠাৎ সৌন্দর্য্যে মেতে মনে পড়লো অন্তরে ক্ষত সৃষ্টি করা মানবের কথা।হতে পারতো একটা সুন্দর দিন আজ। প্রতিবেশের সৌন্দর্যের সাথে হৃদয়ে থাকতো শীতলতা।তবে নেই।হয়তো নৈসর্গের মহিমায় গ্লানিটাকে ধাপাচাপা দিতে হবে।

ট্রলারে চড়ে বসেছে।সচ্ছ পানিতে হাত ডুবিয়ে সারাদেহে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। খুশবু মনে মনে বললো,

-“এই সচ্ছ পানিতে আমার হৃদয়ের কালো দাগটা যেনো ধুয়ে যায়।ভুলে যেতে পারি এমন মানুষকে যে আমায় ভালোবাসেনি।হয়তো আমার ভাগ্যে তার সঙ্গ লেখা ছিল না।মেনে নিতে পারি এই সত্যকে।হয়তো অন্য কেউ লিখিত আছে ভাগ্যে?”

এক লম্বা দীর্ঘশ্বাস ব্যতীত আর কিছুই পেলো না খুশবু বিপরীতে।নিঃশ্বাস ফেলার সাথেসাথে মনে হলো হালকা লাগছে।ভারী বুকটা ওজনহীন হয়েছে। জাফলং এর আশপাশে ঘুরেছে তারা সকলে।

উচুঁ পাথরের উপর বসে ঠান্ডা জলে পা ভিজিয়ে আছে তারা চারজন।নোমান এর বোন নেহা এতক্ষন চেয়েছিলো চুপচাপ মন খারাপ করে থাকা খুশবুকে।এখন সামান্য হাস্যোজ্জ্বল দেখে জানতে চাইলো,

-“আপনি পড়ালেখা করছেন আপু?”

খুশবু উত্তর দেয়, -“হ্যাঁ অনার্স তৃতীয় বর্ষে আছি।”

-“বাহ!”

-“আপনি?” নেহার কাছে জানতে চায় খুশবু।

নোমান তাদের মধ্যে জবাব দেয়, -“ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে আছে ও”

-“অনেক ছোট আমার”

সংক্ষিপ্ত আলোচনা।নতুন মানুষের সাথে যোগাযোগে অতটা পটু নয়।নোমান বললো,

-“আমরা ভিজি চলো!”

ফাহাদ সরাসরি হাত তুলে না বোধক ইশারা করে।বললো,

-“নাহ! এখানে অনেক ছেলেদের দল আছে।ওদের পানিতে না নামাটাই ভালো।আমরা আগামীকাল লালাখাল যাবো।সেখানে যত ইচ্ছে ভিজবে।”

__

সুন্দর এক দিন কাটিয়েছে।তবে আসা যাওয়ার পথে অবস্থা বেহাল।পুরো শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ ব্যথায় মুষড়ে উঠেছে। জাফলং আসা যাওয়ার পথ ভয়াবহ রকমের খারাপ। গাড়িতে থাকা সত্বেও অবস্থা নাজেহাল।বাড়ি ফিরেই হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে খুশবু।ঘুরতে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে মাঝেমধ্যে। জার্নির কথা মাথায় আসলে।

এতোটা ক্লান্তির মাঝে মন ভুললো না একজনকে।ফোন তুলে একটি মেসেজ লিখে ফেলে,

-“আজ কি একটু কথা বলা যাবে সাহির?”

দ্রুতগতিতে জবাব আসে, -“নাহ!”

আর কোনো ফিরতি মেসেজে করলো না খুশবু।হতাশ হয়ে আরামদায়ক স্থানে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বুজে। ফোন বেজে উঠে পাঁচ মিনিট পর।মন আবারো আশা করেছিলো।তবে ফোনের দিকে নজর পড়তেই সেই আশা হাওয়ায় উড়ে যায়।সেই গতকালকের ল্যান্ডলাইন নাম্বার।মন খারাপ বিরক্তিতে পরিণত হয়।

ফোন রিসিভ করে কিছু বলার পূর্বেই অন্যপাশ থেকে কন্ঠ আসে,

-“কেমন আছেন খুশবু?”

খানিক রাগী গলায় খুশবু উত্তর দেয়,

-“আপনি গতকালকের সেই বখাটে লোকটা না?”

হাসির শব্দ ভেসে আসে আবারো।এই পুরুষের হাসিটাও অসহনীয়।সে বললো,

-“আবার! আমি বখাটে নয় কতবার বলবো”

-“আমাকে ডিস্টার্ব করছেন কেনো তাহলে?”

-“ডিস্টার্ব করা কাকে বলে জানেন?”

-“অপরিচিত মেয়েদের কল করাকে ডিস্টার্ব করা বলে।”

-“উহুম! বারবার মেসেজ, বারবার কল করে যন্ত্রণা করা, উত্যক্ত করাকে ডিস্টার্ব বলে।অথচ আমায় দেখেন রাতের ঠিক নয়টার দিকে আপনাকে কল করে একবার খবর নিচ্ছি। ব্যাস!”

বিরক্তি বৃদ্ধি পায়।বলে,

-“কারণটা কি জানতে পারি?আমার যতদূর মনে পড়ছে আমি আপনাকে চিনি না।আপনার কন্ঠস্বর অপরিচিত।”

ফোনের অন্যপাশে মিনিট খানেক এর নীরবতা ছেয়ে গেল।শুষ্ক ঠোঁটের হাসিটা খুশবুর অজানা। নিদারুণ অসুখের লক্ষণ অনুভব করছে আগন্তুক।এই অসুখে ভীষণ সুখানুভূতি হচ্ছে।

জবাব দিলো,

-“কারণটা বিশেষ।তবে ভয়ের পাওয়ার কোনো কারণ নেই।এইযে আমায় বখাটে বলছেন?একদিন ভাগ্য চাইলে সরজমিনে দেখবেন,জানবেন সেদিন একবার বখাটে বলে ডাকবেন কেমন?”

-“আমারতো বয়েই গেছে আপনাকে দেখতে যাবো।জানতে যাবো।ফোন রাখুন বলছি।রাত বিরাতে মেয়েদের কল করে ডিস্টার্ব করে নির্লজ্জ!”

-“রেগে যাচ্ছেন খুশবু?” ব্যঙ্গ করে বললো।

-“এভাবে কেউ কাউকে বিরক্ত করলে রাগ করবো নাতো কি খুশি হবো?”

-“রাতের খাবার খাওয়া হয়নি বুঝি।ক্ষুদা পেলে মানুষের মাথা গরম থাকে।”

খুশবু নাক ফুলিয়ে বললো,

-“দেখেন মিস্টার বখাটে!আপনি আমার বাবাকে চেনেন না!আমাকে আরেকবার কল করবেন আমি আপনাকে পুলিশে দিবো”

খুশবুর কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে হাসলো কেউ।বললো,

-“আমায় পুলিশে দেবেন?”

-“হ্যাঁ”

-“ট্রায় করে দেখেন।”

-“ট্রায় না করে দেখাবো। বখাটে কোথাকার!”

হাসি যেনো থামছে না খুশবুর রাগী স্বরে।উচ্চ আওয়াজে হাসা নিষেধ নাহয় হেসে গড়াগড়ি খাওয়া যেতো।কেনো যেনো ভীষণ রকমের ভালো লাগছে তাকে বিরক্ত করে।পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করলে হাসি মিয়ে আসে।গলা ঝাড়া উঠলো।

বললো, -“রাতের খাবার খেয়ে নিন খুশবু।মাথা ঠাণ্ডা হবে।”

চরম পর্যায়ের বেহায়া লোকতো!এত অপমানের পর স্বাভাবিক সুরে কথা বলেই যাচ্ছে!রাগ বাড়াচ্ছে দ্বিগুণ।খুশবু রাগী ভাবমূর্তি বজায় রেখে বললো,

-“আপনি বলেছেন তাই আমি আজ ডিনার করবো না।ওকে?”

-“কেনো আপনি আপনার বাবাকে চেনেন না?মেয়েকে না খাইয়ে রাখবে?আমাকে হুমকি দিলেন নিজের বাবার নাম নিয়ে অথচ নিজেই ভুলে যাচ্ছেন? আজব তো”

“আপনি…”

আবারো!আবারো কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগে ফোন কেটে গেছে।মুখের উপর পরপর দুইদিন ফোন কেটে দিলো।নিজের মতন আসে আবার নিজের সময় মত কথা শেষে কেটে পড়ে। খুশবুর অনুসন্ধিত্সু মস্তিষ্ক।বারবার তাড়না দিচ্ছে এই লোকের পরিচয় জানার ইচ্ছে জাগাচ্ছে।ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার টুকে রাখলো তৎক্ষনাৎ।একটু বিশ্রাম করেই মস্তিষ্ক চালাবে। গোয়েন্দা মস্তিষ্ক।

অন্যদিকে ফোন রেখেই ল্যান্ড লাইনের তার বিচ্ছিন্ন করা হয়। পেছন থেকে কেউ এসে বললো,

-“আই কান্ট ইমাজিন!এই মানুষটা এতবড় চোর কি করে হয়?”

আচমকা আওয়াজে ভড়কে উঠেছিল কিছুটা।মাথা দুলিয়ে স্বাভাবিক হয়।তার বিচ্ছিন্ন করে হাসতে হাসতে বললো,

-“কিপ কোয়াইট আরিফ”

আরিফ তার কথার বিপরীতে বলে উঠলো,

-“আমরা বললেই দোষ তাই না?এখানে আপনার মনে প্রেমভ্রমরা উড়ু উড়ু করছে।”

-“আমি কি প্রেম করতে পারি না?আমাকে কি জড়বস্তু মনে হয়?আমার মাঝেও অনুভূতি আছে।আর সেই অনুভূতি কারো জন্যে প্রখর হচ্ছে অতি স্বল্প সময়ে।দেখো কোন পথে এনে দাড় করালো?আজ আমাকে বখাটে ডাক শুনতে হচ্ছে!”

আরিফ পাশে এসে বসলো।বললো,

-“তা পারো।কিন্তু এভাবে?আমি আজ বাহিরে দাঁড়িয়ে না শুনলে জানতাম না আমাদের আফতাব এমন প্রেমিক হতে পারে।পুরোনো দিনের ন্যায় রং নাম্বারে প্রেম!আহা!”

-“রং নাম্বারে প্রেম ব্যাপারটা কি আর সে বুঝবে?অবুঝ,বোকা এই যুগের মেয়ে।সে আমাকে পুলিশের হুমকি দিয়েছে আজ।” হেসে উত্তর দিলো আফতাব।

-“পুলিশ?…নাহ ঠিক আছে!তুমি যে অপরাধ করেছো তার জন্য তোমাকে হাজতে পাঠানো উচিত। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত”

বলেই অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়লো আরিফ। আফতাবের মুখ মুচকি হাসি।ভয়ঙ্কর কাজ ঘটিয়েছে সে!ভাবতে লজ্জা লাগছে। ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে এক মেয়ের দিকে খুব দ্রুত আকর্ষিত হয়ে উঠলো?তার কণ্ঠে অদ্ভূত রকমের মায়া।টেনে নিচ্ছে তার দিকে আনমনে।প্রেমে পড়ার পূর্ব মুহূর্তে আবিষ্কার করলো নিজেকে।মস্তিষ্কে খুশবু নামক এক রমণীর চিত্র।নাম আর নাম্বার খুঁজতেও যে কাঠখড় পোহাতে হয়েছে সেকি জানে?ভাগ্য সহায় ছিলো বলে।নাহয় এই মেয়েকে খোঁজা ছিলো মুশকিল।সত্যিই বলেছে খুশবু। নেহাত বখাটে সে। ভদ্রবেশী বখাটে।মাথায় চিন্তা আসলো,কিভাবে তার সাথে আলাপ দীর্ঘ করা যায়?যত শুনে তত শুনতেই ইচ্ছে হয় তার গলার আওয়াজ।গ্রহণ করবে তো তাকে?নাকি?

নির্ধারিত বিছানায় শুয়ে পড়লো।হাত দুটো বেঁধেছে মাথার ঠিক নিচে।নেত্র শূন্যে তুলে ভাবলো,

-“নব্য বসন্তের আগমনী সুর কানে বাজছে।হয়তো আসছে বড্ড আয়োজন করে।ফুল ফোটাতে নতুন, খুশবু ছড়াতে বেরং সত্তায়”

চলবে…