তেইশতম বসন্ত পর্ব-০৩

0
13

তেইশতম বসন্ত
পরিসংখ্যা ৩
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)

দিবা রাত্রি প্রবাহমান। তিনটে দিন কেটে গেল চোখের পলকে।আজ ঘুরাফেরা থেকে বিরত খুশবু।মন খারাপ হয়ে এলো এই কথা শুনে বাবা মায়ের ফিরতে হবে ঢাকা।কাজ পড়েছে জরুরি।বাধ্য হয়েই যাচ্ছে।তবে ফাহাদ আর খুশবুকে থাকার অনুমতি দিলো।আরো পনেরোদিন ছুটি আছে তাদের। খুশবুর তৃতীয় বর্ষের রেজাল্ট আসলেই চতুর্থ বর্ষে ভর্তির তোড়জোড় শুরু।আপাদত ঘোরাফেরায় কোনো রকমের বাঁধা নেই।

লোকমান চৌধুরী কাপড়ের ব্যাগ টেনে বাহিরে এসে দাঁড়ান।নায়লা বেগম আছেন বাহিরেই।গাড়ি হাজির।এখনই রওনা হবে বাস কাউন্টারের দিকে।লোকমান চৌধুরী ফাহাদের দিকে চেয়ে বললেন,

-“নিজের আর নিজের বোনের খেয়াল রাখবে।বড় ভাই তুমি।তোমার দায়িত্বে দিয়ে গেলাম।ঘুরতে এসেছো তাই ঘুরতে বারণ করবো না।কিন্তু আমাদের অনুপস্থিতিতে যেনো বেশি লাফালাফি না করা হয়। দূরে কোথাও গেলে তোমার মামাকে সাথে নিয়ে যাবে।ঠিক আছে?”

ফাহাদ মাথা দুলিয়ে জবাব দেয়, -“জ্বি বাবা”

নায়লা বেগম বললেন,

-“কি দরকার ওদের একা রাখার এখানে?আমাদের সাথে ঢাকা ফিরে গেলেই পারতো?”

জরিনা বেগম জবাব দেন,

-“এটা তোমরার ফুয়া ফুরির ঘুরবার বয়স।আর আমরা আছি না?এত চিন্তা করা লাগবো না।আল্লাহর নাম লইয়া রওনা হও”

খালার কথার উপরে আর কোনো কথা বললেন না নায়লা বেগম।তারপরও মনের মধ্যে হাঁসফাঁস ভাব।একা কখনোই এদের কোথাও থাকতে দেওয়া হয়নি।ফাহাদকে দরকারে অনুমতি দিলেও খুশবুকে একেবারেই নয়।লোকমান চৌধুরী আশ্বাস দেন স্ত্রীকে।

খুশবু বাবার কাছে এসে বললো,

-“আমার জন্মদিন আগামী সপ্তাহে।তোমরা ততদিনে এসে পড়বেতো বাবা?”

-“চেষ্টা করবো মা। একটু বেশিই চেষ্টা করবো।আমার মেয়ের জন্মদিন আমি দূরে থেকে পারি?”

-“সব কাজ আগে আগে শেষ করে ফেলো।”

-“আচ্ছা মা।সাবধানে থাকবে কেমন?আসি”

-“আল্লাহ হাফেজ বাবা – মা”

আজ শুক্রবার।ফোনটা হাতে তুলে নিলো খুশবু। ডায়াল লিস্টে গিয়ে সাহির নামটায় বৃদ্ধাঙ্গুল এর চাপ দেওয়ার পূর্বেই এক অদৃশ্য বাঁধা আটকে দিলো তাকে।আনমনে কপাল কুঁচকে নেয়।টিলার ঠিক উপরে তার অবস্থিত জরিনা বেগমের চার কামরা বিশিষ্ট বাড়িটি।তার ঠিক পেছনেই উচু স্থান রয়েছে।পাহাড় প্রেমী খুশবু একেই ধরে দিলো একটা ছোট্ট পাহাড় হিসেবে।খালি পায়ে গায়ের অনেকটা শ্রম দিয়ে উঠে বসেছে।চারিদিকে দূর্বা ঘাসের সমারোহ।বাতাসে দুলছে তারা আনন্দে।সাথে খুশবুর কেশ। নানি বাড়ির পাশেই এক আলিশান একতলা বাড়ি।কারুকার্যে তার সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে অত্যধিক।টিলার উপরে পনেরো বিশটা ঘরের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই বাড়িটি।এতকিছু লক্ষ্য করতে করতে সাহিরকে কল মেলানো হলোনা।অবহেলায় পড়ে থাকা মনটাও সায় দিলো না।

আকস্মিক ধড়ফড়িয়ে উঠে খুশবু।পেছনের ওই বাড়িটার কাছে উচ্চ আওয়াজে হর্ন বাজিয়ে চলেছে একটি গাড়ি।বুকে হাত চেপে খুশবু বিরক্তি সহকারে বলে উঠে,

-“উফ! মানুষের কমন সেন্স বলতে কিছু নেই।কেউ এভাবে হর্ন দেয়?”

কয়েক সেকেন্ড এর মাঝে গাড়ীর হর্ন থেমেছে।বিশাল দরজা বেয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। খুশবুর আবার নজর যায় কল লিস্টে।সেখানে আরো একটি নাম্বার চকচক করছে।খুব বিরক্তি নিয়ে ‘বখাটে’ নামে সেভ করে রেখেছিল।বড় ভাইকে দেখিয়ে তার ইতিহাস জানবে বলে।মস্তিষ্ক সজাগ হয়।দুদিন আগে ফোন এসেছিল। খুশবু রিসিভ করেনি।বাজতে বাজতে আপনাআপনি থেমে গিয়েছিল।আজ দুদিন হলো। বখাটে লোকটা বিরক্ত করেনি আর।

খুশবু মনে মনে আওড়ায়,

-“যাক বখাটের সুবুদ্ধি উদয় হয়েছে।”

বাতাসের ঝাপটা উপভোগ করতে দেখলো কেউ তাকে।ধূসর ঠোঁট জুড়ে এক চিলতে হাঁসি ফুটেছে।উড়ন্ত চুলগুলো আবেদন জানাচ্ছে কোনো পুরুষকে।দেহের পোশাকটা অব্দি বদলালো না।নিজের ব্যক্তিগত ফোন তুলে নিলো তৎক্ষনাৎ।মুখস্ত নাম্বারটা ডায়াল করতেই কিছু দুরত্বে থাকা খুশবুর ফোন ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠে।আজ যান্ত্রিক স্ক্রিনে ভিন্ন নাম্বার।আবারো একই দ্বিধা।ফোন ধরবে না ধরবে না।চোখ বুঁজে হেয়ালি করেই ফেলে রাখলো ফোনটা।কপাল কুঁচকে উঠেছে জানালা দিয়ে চেয়ে থাকা পুরুষের।আবার ফোন মেলায়। দ্বিতীয়বারে ফোন আসাতে ত্যক্ত হয়ে ফোনটা তুলে খুশবু।

গলার কন্ঠস্বরে অসন্তুষ্টতা মিশিয়ে বললো, -“হ্যালো”

-“কি ব্যাপার খুশবু?”

-“হায় আল্লাহ!…আপনি!আমি মাত্রই ভাবছিলাম…”

-“আমার কথা ভাবছিলেন খুশবু?”

-“হ্যাঁ ঠিক!আপনার কথাই ভাবছিলাম।ভাবছিলাম যে বখাটে লোকটার সুবুদ্ধি উদয় হয়েছে।আমাকে আর জ্বালাতন করেনা।…. তা আর হলো কই?আবার এসেছেন।”

-“সত্যিইতো এসে গেছি”

গলার স্বরে ভিন্নতা অনুভব করলো খুশবু।যেনো কোনো গভীর খাদে নামানো আওয়াজ।মাতাল করা।খুশবু প্রত্যুত্তরে বললো,

-“আমাকে কেনো জ্বালান বলতে পারবেন?আমি নেহাতই ভালো মেয়ে নাহয় আপনার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলতাম”

আফতাব হাসলো।বললো,

-“করলেন না কেনো তাহলে?…এক কাজ করি?আমার চৌদ্দ গুষ্টিকে নিয়ে আপনার কাছে হাজির হই কেমন?উদ্ধার করে নিবেন”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে খুশবু।নিজের বিরক্তিকে দূরে সরালো।এতদিন মেজাজ দেখিয়ে কথা বলেছে।আজ একটু শান্ত হোক?শীতল গলায় প্রশ্ন করে খুশবু,

-“একটা কথা বলবেন?”

-“গলার স্বর পরিবর্তন হলো কেনো খুশবু?”

কাঁদো মুখ বানিয়ে খুশবু বললো,

-“বিরক্তির সুরে কথা বলেতো কাজ হচ্ছিলো না।ভাবলাম একটু শান্ত কণ্ঠে বলি?”

-“বলুন।আপনার শীতল রাগী সব কন্ঠই আমার কাছে ভালো লাগে।”

-“ফ্লার্ট করছেন?” ফোনের অন্যপাশে থেকেই মুখ ভেংচিয়ে বললো খুশবু।

হতাশ গলায় আফতাব বলে উঠলো,

-“কি করবো আজকালকের মেয়েদের নিয়ে বলেনতো?আগের যুগের সিনেমা দেখেননি?তখন সোশাল মিডিয়া ছিলো না।কিভাবে অপরিচিত নাম্বারে কথা হতে হতে বন্ধুত্ব হতো।তারপর…..”

খুশবু কপাল কুঁচকে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

– “তারপর?”

-“তারপর কি?… তারপরেরটা আপনি খুব ভালো করেই জানেন খুশবু।”

-“হুমমমম! এই মতলব এঁটেছেন তাহলে? মিষ্টার বখাটে!এমন কক্ষনো হবেনা।বলুন আপনি কে?নাহয় আগামীকাল কেস করছি আপনার নামে।”

-“কালকে সরকারি বন্ধ খুশবু।পরশুদিন করবেন কেমন?”

-“আপনি কে বলবেন?”

-“আজ সন্ধ্যায় জেনে নিয়েন?নিজেকে একটু প্রিপেয়ার করি।”

__

ফোনের উপর পুরো নজর গেড়ে আছে খুশবু।ওয়াল ঘড়ির কাঁটার হিসেব তার মাথার তার এদিক ওদিক করে ফেলে।তিনটা কাঁটা হিসেব করতে করতে ঘণ্টা কেটে যায়।এর চেয়ে ভালো ফোনের ক্লক।ঠিক টাইম দেখায়।এক মিনিটও এদিক ওদিক নয়।খাওয়া দাওয়ার কথা ভুলতে বসলো।কি হবে সন্ধ্যায়?কিভাবে জানবে কে এই রং নাম্বারের লোকটা? উসখুস করছে মন।জানার জন্য তীব্র আগ্রহ জন্মালো।পা জোড়া জমিনের এক জায়গায় ঠেকলো না।কেমন স্বভাব এটা!কোনো একটা বিষয়ে দ্রুত উদ্দীপিত হয়ে পড়ে। ভুগতে হয় নিজেকেই!

পেছন থেকে কেউ ঘাড় টেনে ধরলো।মুখ ফেরাতেই ফাহাদের দর্শন।মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। খুশবু ফিরে চাইতেই বলে উঠলো,

-“ফোন হাতে নিয়ে কি ওই অসভ্য ছেলের জন্য অপেক্ষা করছিস?”

ফাহাদ জানলো কি করে?সেকি বখাটে লোকটার কথাও জেনে গেলো। ভীত গলায় খুশবু প্রশ্ন করলো,

-“কোন অসভ্য ছেলে?”

-“জানিস না তাই না?”

-“না ভাইয়া?”

-“সাহির”

আতঙ্কিত মুখখানা মিয়ে আসে। সস্তি পায়। হেঁসে বলল,

-“ধুর ভাইয়া!আমি ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম না।”

সন্দেহের নজরে চেয়ে ফাহাদ জানতে চায়,

-“তাহলে এত অস্থির হয়ে ঘুরছিস কেনো?”

সময় স্বল্প।এরই মাঝে মিথ্যে একটা বাক্য সাজাতে হবে।খুব দ্রুত।কি বলবে ভাইকে?কি বাহানা দেওয়া যায়। মস্তিষ্কের ঘোড়া ছুটিয়ে খুশবু জবাব দেয়,

-“আজকে রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ার কথা।সেটা নিয়েই টেনশনে আছি।”

-“তোর না আরো কিছুদিন পর রেজাল্ট দেওয়ার কথা।”

-“হ্যাঁ কিন্তু কিছু গ্রুপে দেখলাম আজই নাকি দিয়ে দিতে পারে।”

ফাহাদ ভাবুক ভঙ্গিতে মাথা দোলায়।বলে,

-“আচ্ছা আয়।খেয়ে নে।এক্সাম ভালো দিয়েছিস রেজাল্টও ভালো আসবে।”

-“আমি খাবো না।”

-“থাপ্পড় দিবো একটা।দ্রুত আয়।”

দ্রুত আসতে বলে নিজেই হাত টেনে নিয়ে গেল খুশবুকে।বাবার অনুপস্থিতিতে নিজে বাবা সেজে বসেছে।খাবার বেড়ে দিচ্ছে প্রতিদিনের ন্যায়। অতিরিক্ত অধিরতায় খাবারটা অব্দি নামছে না গলা দিয়ে।ফোন চেয়ে দেখলো দুপুর তিনটে বাজে।এখনও অনেক সময় সন্ধ্যা হতে।

খাওয়া দাওয়া শেষে ফাহাদ বেরিয়েছে।নোমান এসে তাকে নিয়ে গেছে।যাওয়ার পূর্বে কড়া গলায় আদেশ করে গেলো বাহিরে পা না বাড়াতে।এই আদেশের বিনিময়ে জরিনা বেগমের কাছে একদফা ধমকও খেয়েছে।মাথা নিচু করেই চলে যায় ফাহাদ।ঘরে এসে ঢুলে পড়লো বিছানার উপর। প্লে লিস্ট থেকে সবচেয়ে পছন্দের হাইওয়ে ব্যান্ড এর ‘ঘোরগাড়ী’ গানটি খুঁজে নিলো।কানে হেডফোন গুঁজে খুশবু।গান চলছে,

“চাঁদনী রাইতে নদীর ওপারে
আকাশ থেইকা নামলো পরী
আমার চোখে চলে ঘোরগাড়ী
আমি হাবলায় নদীর এপারে
ঘুমের ঘোরে দেখি তারে
ছবির মত ডাকে আমারে

দেখাও কত রঙিল ছবি
ছবির আশায় হারাইলাম সবই
দয়াল বানাও কত মায়ারও ছবি
ছবির নেশায় ছাড়লাম সবই…”

ঘোরগাড়ীর ঘোরে আচ্ছন্ন খুশবু।গায়কের কন্ঠস্বরে মাতাল।মন শীতল হলো ধীরেধীরে।অজান্তে চোখ বুজে ঘুমের ঘোরে ডুবে যায়।তার ভাষ্যমতে এই গানটি হ্যালুসিনেশনের মতন কাজ করে।বিভ্রমে মুড়িয়ে নেয়।

ঘুম ভাঙলো ফোনের আওয়াজে।মস্তিষ্ক সজাগ হওয়ার পূর্বেই মনে পড়ে বখাটে লোকের বলা কথা।আজ ঠিকঠিক ধরতে পেরেছে কে কল করেছে।চোখ ডলে ফোন রিসিভ করলো নাম্বার না দেখেই।সেই কাঙ্ক্ষিত গলার আওয়াজটাই ভেসে উঠলো।

কেউ মায়াভরা গলায় ডাকলো, -“খুশবু?”

-“হুম?…বলেন?”

আফতাব ধরতে ভুল করেনি।মেয়েটি ঘুমোচ্ছিলো।গলার আওয়াজ সেটাই জানান দিচ্ছে।প্রশ্ন করলো,

-“ঘুমোচ্ছিলেন?”

-“হ্যাঁ”

-“ঘুম হয়েছে?”

-“হু….আপনি না বলেছিলেন সন্ধ্যায় জানবো আপনি কে?বলুন এবার?কে আপনি?”

পুরুষালি গলাটি মিয়ে আসে।মিনমিন করে বলে,

-“নার্ভাস লাগছে”

ঘুমের আবেশ দৌড়ে পালালো যেনো।গলা পরিষ্কার করে খুশবু উচু আওয়াজে বললো,

-“আরেহ মিয়া রাখেন আপনার নার্ভাসনেস।নিজের পরিচয় দেন!”

দরজার দ্বারে দাঁড়িয়ে লম্বা একটা নিঃশ্বাস টানে আফতাব।হৃদয়ের উঠানামার গতি এখনই এক লাফে উপরে উঠে যাচ্ছে।একহাতে ফোন।অন্যহাতে আইডিকার্ডটি শক্ত করে চেপে ধরলো। ঠোঁট কামড়ে ধরছে বারবার।মন,বিবেক,মস্তিষ্ক সবটা মিলেই ঠাট্টা শুরু করলো। ‘পুরুষ হয়ে এত কিসের ভয়?’।জানতে চাইলো।চোখ বন্ধ করে পুনরায় খুলে তাকায় আফতাব।

অপেক্ষারত খুশবুকে বললো শীতল কণ্ঠে,

-“আপনাদের বাড়ির পেছনের টিলায় আসতে পারবেন?জাস্ট ফর ফাইভ মিনিটস”

ঝড়ের গতিতে জবাব দেয় খুশবু,

-“কেনো?আপনাকে বিশ্বাস করে আমি কেনো বাহিরে আসবো?আর আপনি কিভাবে চেনেন আমাদের বাড়ি?”

-“তুলে নিয়ে যাবো নাতো আর”

-“যদি নিয়ে যান?”

-“আপনার বাড়ির এত কাছ থেকে কি করে তুলে নিয়ে যাবো?সামনেই পুলিশের গার্ড আছে।তারপরও এসব আবোলতাবোল ভাবছেন?”

-“আসবো না।”

-“ঠিক আছে বসে থাকুন ঘরে।”

দোটানায় পড়তে পড়তে একদিন অক্কা পাবে খুশবু।এখনও মাথায় জটলা পাকিয়ে গেলো।যাবে? মাত্রতো সন্ধ্যা।কিন্তু যদি সে আসলেই বখাটে হয়?যদি কোনো খারাপ মতলব থাকে?খুশবু জানালা দিয়ে উকি দিলো।কেউ নেই সেখানে।ফোন কানে রেখে বললো,

-“টিলায় কেউ নেই।”

-“আপনি আসুনতো আগে।আমি কিছুই করবো না।বিশ্বাস করুন।”

-“আসছি”

আফতাব এর মুখে হাসি ফুটে।তবে পা জোড়া নড়বড়ে।খুশবু ওড়না পেঁচিয়ে নেয় গায়ে।নিজেকে ভালোভাবে আবৃত করলো।উকি দিয়ে দেখলো মামীর ঘরে সে সিরিয়াল দেখতে ব্যস্ত।পরপর জরিনা বেগমের ঘরে সে বসে বসে ঝিমুচ্ছেন।মামা বাড়ি ফেরেনি এখনও।পা টিপে বেরিয়ে গেলো।দূরত্ব স্বল্প। ধেইধেই করে হাজির টিলার উপরে।মৃদু হাওয়া বইছে চারিদিকে।ঝিম ধরিয়ে গেলো শরীরে।ভীত খুশবু এদিক ওদিক চেয়েই চলেছে।

আকস্মিক আধাঁরে পুরুষালি অবয়ব দেখে নড়েচড়ে উঠে।গাঢ় খয়েরী রঙের টি শার্ট আর ট্রাউজার পরিহিত এক লোক এগিয়ে এলো।পায়ে খুবই সাধারণ একটি স্যান্ডেল।চোখ বেয়ে মুখের দিকে দৃষ্টি পড়লে শ্যামলা মুখখানা দেখে হৃদয় ধ্বক করে উঠে।দেখেছে কোথাও একে! কোথাওতো দেখেছে!কেনো মনে করতে পারছে না?পকেটে রাখা আইডি কার্ড বের করে সামান্য দুরত্বে থেকেই এগিয়ে দিলো খুশবুর দিকে।

বললো, -“ঘুরতে যান ভালো কথা। প্রয়োজনীয় জিনিস এদিক ওদিক ফেলে আসা দায়িত্বহীনতার পর্যায়ে পড়ে।”

খুশবু আইডি কার্ডটি হাতে নিলো।এটাতো তার ভার্সিটির আইডি কার্ড।সবসময় ব্যাগে থাকে।নাম,নাম্বার,প্রয়োজনীয় সব তথ্য এখানে দেওয়া।আইডি কার্ড হারিয়েছে আর তার কোনো হুশ পাত্তা নেই।চোখ তুলে তাকায় খুশবু।

মনে করতে না পেরে বললো, -“আপনি?”

-“ক্যাপ্টেন আফতাব মির্জা…আপনি যাকে বখাটে বলে ডাকেন”

মস্তিষ্কের সব গিট খুলে গিয়েছে।চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেদিনের দৃশ্য।সাদা পাথরে সব ফেলে,আর্মির গায়ে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে গিয়েছিল। গলাটা শুকিয়ে আসছে বারেবারে। ঢোক গিলতে লাগলো চোখ নামিয়ে।বিপদের কত নাম্বার সংকেত সামনে দাঁড়িয়ে বুঝে ওঠা দায়।

-“ভয়ানক আঘাত হেনেছিলেন বুকে;এখনও ব্যাথা উপশম হয়নি খুশবু”

চলবে…