#তেইশতম_বসন্ত
পরিসংখ্যা ১২
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)
‘প্রণয়ীর দুখে দুঃখ কুড়াচ্ছে অন্তর নিরন্তর’
সুদূর দিগন্তে অবিরাম খোলা আকাশ, সেই আকাশের নিচে গোলাকার শশাঙ্ক অভিব্যক্ত।ক্ষপা প্রান্তরে সৃষ্ট অতুলনীয় একটি দৃশ্য। ধাঁধিয়ে তুলছে লোচন।আকাশে হাজারো তারা জ্বলে উঠেছে।ঠিক নিম্নস্থে চোখ নামালে দেখা যায় প্রতিমুখ ছবি।শহরের রাতের জীবন অতি শহঁস্র হাওয়ায় বেষ্টিত আঁধারে নিষণ্ণ। স্নিগ্ধ এই রাতে,আলো কার্যকরী প্রভা ছড়িয়েছে সমস্ত দিকে।একই সময়ে নিখুঁত পাহাড়ের সুদৃশ্য অবস্থিত রয়েছে শহরের গা ঘেঁষে। এই সুন্দর রাতের অনুভূতি আরাধ্য ও অমূল্য।চারিদিকে বিস্তৃত একটি সম্পূর্ণ নিরব অবস্থান, যেখানে প্রকৃতির শান্তি এবং সৌন্দর্য প্রভাবিত করে উতলা হৃদয়।এই মনোহর পরিবেশে মাথার পেছনে হাত ঠেকিয়ে শুয়ে থাকা মানুষের হৃদয় মাঝারে ভিন্ন অনুভুতি জাগ্রত হচ্ছে।হৃদ কেমন করে পাগলাটে হয়ে উঠলো?এতটা জেদী কোনোকালেতো ছিলো না সে।প্রেম হৃদয়ে হানা দিতেই পাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে। হইচই শূন্য মানবমূর্তী।অন্তরে সঙ্ঘাত।একদিকে জন্মদাতা পিতা মাতা,অন্যদিকে সদ্য হৃদয়ে পদার্পণ করা রমণী,আরেকদিকে সেই রমণীর এক অতীত।
অম্বর অভিমুখে দৃষ্টি তুলে একাকী আফতাব বলে উঠে,
-“জেদ দেখিয়ে আদায় করে নেওয়া আমার স্বভাবের সাথে যাচ্ছে না।আপনাকে একাকী পিছু ফেলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না।হাজারটা কাঠখড় পোহাতে হয়েছে এই পেশায়।দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে কর্মের দায়ে।আজ ব্যক্তিগত জীবনে কোনো কূলে নির্দ্বিধায় মুখ ঘুরাতে পারছি না।”
আরিফ আফতাবের একা একা কথা বলা শুনেছে।তাকে চমকে দিয়ে পাশে এসে বসে বললো,
-“সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন ক্যাপ্টেন সাহেব?”
শুনে ফেললো কি?একা একা কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে আকাশপানে বাক্যগুলো পাঠাচ্ছিলো।এভাবে যদি কেউ শুনে ফেলে।আফতাব উঠে বসলো তৎক্ষনাৎ।এলোমেলো নজর।জবাবে বললো,
-“তেমন কিছুই না”
আরিফ এবার শুয়ে পরে।তারও আকাশ দেখার লালসা জেগেছে।মৃদু হেঁসে বললো,
-“ভাগ্যিস ট্রেনিং পিরিয়ডে তুমি প্রেমে পড়োনি।তখন হয়তো আমাদের পেশার বাধ্যবাধকতায় আর বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে।”
-“আমরা কি কম বিষাদগ্রস্ত?” আফতাব এর তরফ থেকে প্রশ্ন এলো।
-“তা একটু বটে।কিন্তু তোমার মতন কাম অ্যান্ড কুল মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি।এতকিছু গিয়েছে আমাদের উপর দিয়ে।ট্রেনিং এর সময় কত কষ্ট করেছি সেটা আমরা ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারে?এখনও কি করছি না?তোমার কপালেতো আমি কখনও একটা ভাজ দেখিনি।কিভাবে পারো?”
মনে পড়ে সেদিনের কথা যেদিন প্রথমবার বাড়ি ছেড়েছিলো।বাবা ছিলেন মহাখুশি। কেনোনা তারই ঐতিহ্য ধরে রাখতে যাচ্ছে আফতাব।সাথে কিছুটা দুঃখী।মায়ের অবস্থা ছিলো কেঁদেকেটে নাজেহাল।এতকাল স্বামীর দূরত্ব সহ্য করেছেন।এখন ছেলেরও?নিজেকে সেদিন আফতাব প্রকাশ করতে পারেনি। বিমূঢ় হয়ে ছিলো দুজনার সামনে। স্বচ্ছ পানির স্রোতের ন্যায় এক হৃদয় থেমে ছিল।সেদিন বোঝাতে পারেনি এই লোহার দেহের ভেতরে একটা নরম হৃদয় অবস্থিত।তারপর শুরু হলো দায়িত্ব! হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম।একবার চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরেছিলো।মনে হয়েছিলো আর পারছে না।তখনই বাবার মুখটা ভেসে উঠে।মায়ের আকাঙ্ক্ষা। কতশত স্বপ্ন নিয়ে হয়তো বাড়িতে বসে আছেন।নিজেকে সামলায়।ধীরে ধীরে এই দলটাকে।একটু একটু করে এগিয়ে কমান্ড এবং নেতৃত্বের ভূমিকা পায়।এখন তার দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে সৈন্য ইউনিটের সমন্বয় ও নির্দেশনা, যুদ্ধ বা অভিযানের পরিচালনা, ও সৈন্য সংস্কৃতির উন্নতি।তার দলের সদস্যদের প্রশিক্ষণ আর মাতৃভূমিকে বহিরাগত অপশক্তি থেকে রক্ষায় নিজের জীবন আত্মসমর্পণ করতে হয়।
অনেক সময়ের ভাবনা চিন্তার পর আফতাব বললো,
-“জীবনে অভিযোগ করে কি লাভ বলো?এক সময় করতাম।ভাবতাম আমি ছন্নছাড়া জীবন চাই।আমার এসব ভালো লাগেনা।সময় আমাকে এই শিক্ষা দিলো জীবন আমার,তবে আমার মতন করে চলবে না।তাই খুঁজে নিয়েছি এই লাগামহীন জীবনে সুখ।”
-“তবে ঝামেলায়তো ফেঁসে গেছো।নিজের বাবার মতামতকে সম্মান দিলে প্রিয়তমাকে হারাতে হবে। প্রিয়তমার হাত ধরলে বাবা মায়ের খেলাফি হয়ে যাবে।”
এই দুশ্চিন্তাটাই-তো চাচ্ছিলো না আফতাব।তত্সত্ত্বেত্ত সত্য এসে কর্নে তুড়ি বাজিয়ে চলেছে।দুহাতের সাহায্যে আর্মি কাট ছোট ছোট চুলগুলো টানার চেষ্টা করলো। ঘাড় নামিয়েছে নিম্নে, নেত্রদ্বয় বন্ধ।কয়েকবার নিঃশ্বাস ফেলে আফতাব।অস্থিরতার নিঃশ্বাস।
________
ইন্টার্ভিউ দেওয়ার পর জানানো হবে বলা হয়েছে। বাবার ব্যবসায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছে তেমন নেই ফাহাদের।নিজের প্রচেষ্টায় কিছু করার ইচ্ছে।তবে এই ইচ্ছেটা বেশিদিন টিকবে না।লোকমান চৌধুরীর বয়স বৃদ্ধির সাথেসাথে একমাত্র পুত্র সন্তান হিসেবে তারই হাল ধরতে হবে পারিবারিক ব্যবসার।ফাহাদের মাথায় তখনই বুদ্ধি খেলেছে। যতদিন বাবার বাহুতে শক্তি আছে ততদিন নিজের শখটা পূরণ করে নেক।বাবাকে নাহয় সাহায্যও করলো।এতে বিশেষ কোনো ক্ষতি হবে না।লোকমান চৌধুরীও রাজি ছেলের এই সিদ্ধান্তে।
ইন্টার্ভিউ এর তিনদিন পর কল এলো।সেলফোন এর অন্যপাশ থেকে জানানো হয় চাকরিটা হয়ে গেছে ফাহাদের।আগে ছোটখাটো একটা কোম্পানিতে চাকরিরত ছিলো। এবারের চাকরি শহরের বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।ফোনের স্ক্রিনের এক কোণে এক নীল রঙের কাপড় পরিহিত নারীর ছবি। বার্তা এসেছে। নেহা পাঠিয়েছে সে বার্তা।ফাহাদ এই মুহূর্তে খুশি। ঝটপট মেসেজ দেখলো।উৎসাহী হয়ে নেহার উদ্দেশ্যে বললো,
-“একটা খুশির সংবাদ আছে জানো?”
মোটামুটি সখ্যতা গড়ে উঠেছে ফাহাদ আর নেহার মধ্যে।খুশির সংবাদ এই কথাটি শুনে জানতে আগ্রহী হয় নেহাও।বলে,
-“বলুন কি খুশির সংবাদ।”
-“আমি যে কোম্পানিতে দু’বার ইন্টার্ভিউ দিয়ে রিজেক্ট হয়েছিলাম?সেখানে আমার চাকরি হয়েছে।”
নেহার খুশি তার ফিরতি বার্তায় বেশ করেই ঝলকে উঠে।যেনো তার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হয়নি এই সংবাদে।জবাব দিলো,
-“অভিনন্দন!আমি অনেক অনেক খুশি হয়েছি।আপনিও নিশ্চয়ই ভীষণ খুশি?”
ফাহাদ জবাব দিলো,- “তাতো বটেই”
-“আমি প্রার্থনা করবো আপনি আরো অনেক অনেক সফল হন।জীবনের সব ছোটবড় ইচ্ছে পূরণ হোক।”
-“কেনো বলোতো নেহা?আমার সাফল্যে তোমার খুশি হওয়ার কারণটা কি? আমার প্রতি তোমার বিশেষ আগ্রহের কারণটা কি?….আমি কি বিশেষ কেউ?”
হতবিহ্বল হয়ে গেলো নেহা।থমকে আছে ফোন হাতে নিয়ে। একেবারে প্রতিক্রিয়া শূন্য। অপ্রস্তুত ছিলো পুরোপুরি।এই মুহূর্তে হৃদয়ে যে কম্পন ধরেছে সেটা অনুভব হয়নি আগে কখনও।শুকিয়ে এলো গলা।কোনো জবাব না পেয়ে ফাহাদ আবার বলে,
-“চুপ হয়ে গেলে কেনো?”
এবার হাত দ্রুত চলে নেহার।জবাব দেয়,
-“আমার ঘুম পাচ্ছে। গুড নাইট।”
যান্ত্রিক ফোনের অন্যপাশে ফাহাদের বাঁকা হাসিটা আড়ালেই রয়ে গেলো।জবাব দিলো,
-“ঠিক আছে ঘুমাও।তবে আগামীবার আমার প্রশ্নের জবাব নিয়ে ফিরবে কেমন?”
অস্থৈর্য সময় অতিবাহিত হচ্ছে নেহার।আধাঁরে বিছানায় বারেবারে দিক পাল্টে নিশপিশ করতে শুরু করেছে।লোকটা কি ধরে ফেললো?ক্ষুদ্র যে অনুভূতিগুলো হানা দিচ্ছে, সে কি বুঝে গেছে?বুঝলে তার মুখোমুখি হবে কি করে?উত্তর ছাড়া তো আলাপে বিরতি পড়বে।
————
অপ্রত্যাশিত অভাবনীয়রূপে বক্ষস্থলে আঘাত হেনেছিলো।সেই আঘাতের উপশম করতে করতে এই পর্যন্ত পথ চলা।সত্যিই কি সামনে একত্রে সময় আছে?হয়তো আছে তাই নিয়তি টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এসেছে।দিক বেদিক করে মিল ঘটাতে চলেছে। আফতাবকে আরো একটু জ্বালাতন করার ইচ্ছে জাগলো।বেনামী হয়ে ফোনালাপ খুশবুকে ভাবতে বাধ্য করেছিল।অযথা তার ছোট্ট মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ হয়েছিলো।সুদে আসলে হিসেবটা না নিলেই নয়।আজকের পরিকল্পনা।কথা না বলে এই লোকের দিন শেষ হবে না।কল আসবে শতভাগ নিশ্চিত। অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
ঠিক রাত এগারো ঘটিকায় ফোন বাজলো।অপেক্ষায় ছিলো খুশবু।ফোন রিসিভ করার পূর্ব মুহূর্তে একটা বিষয় উপলব্ধি করলো সে।এই অপেক্ষাটা আফতাব এর জন্য।তার শীতল নির্মল কণ্ঠের জন্য।তবে কি সেও ধীরেধীরে বসন্তের রঙের সাথে মিশে যাচ্ছে ক্যাপ্টেন এর সত্তায়?
ফোনটা বেজে বন্ধ হয়ে যায়।এক ঝটকায় হুশ ফেরে খুশবুর।সে পূনরায় ফোন মেলায়।একবার রিং হয়ে রিসিভ হলো।শোনা গেলো ওই নমনীয় ডাক,
-“খুশবু”
কি যেনো ছিলো এই ডাকে।এক মুহুর্ত সময় লাগেনি আওয়াজের আবল্য ধরে ফেলতে।দুষ্টুমির ইচ্ছেটা ধামাচাপা দিয়ে সাড়া দেয় খুশবু।বলে,
-“খুব ক্লান্ত?”
-“অনেকটা” একইভাবে জবাব আসে।
-“বিশ্রাম করতেন।ঘুমিয়ে পড়তেন কল না করে।”
-“আপনি জানেন আপনি আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছেন।”
চোখ নামিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে রইলো খুশবু।সরাসরি মনের কথা প্রকাশ করায় পটু ক্যাপ্টেন সাহেব। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শিরশির করে এরূপ কথাবার্তায়।উত্তর দেয় সময় নিয়ে,
-“অভ্যাসটা একদিনের জন্য ছাড়া যায় না?”
-“যেখানে আপনি আমার ক্লান্তি দূর করার ঔষধ সেখানে অভ্যাস ছাড়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না।”
হাসি যেনো সরছে না মুখ থেকে। আয়েশে পিঠ ঠেকে বিছানার হার্ডবোর্ডএ।প্রশ্ন করে,
-“আজ কি কি করলেন?”
-“আর বলবেন না! দেশে অনৈতিকতা দিনদিন বেড়েই চলেছে।কতটা ঝামেলা হলো।বর্ডার থেকে চোরাই মাল অভিনব কৌশলে দেশে আনা হচ্ছিলো।ভেবেছিল আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিতে পারবে।”
-“তারপর তারপর?”
-“অনেকদিন পর আমার রাইফেল গরম হয়েছে।”
বলে হেসে উঠলো আফতাব। খুশবুর চক্ষু চড়কগাছ।যেখানে পিঠ ঠেকিয়ে বসেছিল উৎসুক হয়ে উঠে বসলো।জানতে চাইলো,
-“ফায়ারিং করেছেন?…ইশ! আমি যদি থাকতাম।আমিও দেখতাম।আমি কখনও দেখিনি ফায়ারিং জানেন”
“আপনি থাকলে আপনাকেও উড়িয়ে দেওয়া হতো। চোরা কারবারি করে তারা তবে একবিন্দু অনুশোচনা নেই।”
-“আমাকেও উড়িয়ে দিতেন ক্যাপ্টেন সাহেব?এই সাহসটাও রাখেন?”
আফতাব দুষ্টুমির ভঙ্গিতে বললো,
-“আপনার ভাগের গুলিটা নিজের বুক পেতে নিতাম।”
-“অনেক বড় ধরনের ফ্লার্ট আপনি!”
এই খুনসুঁটি আরো কিছুক্ষন চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো।সেটা হলো না।মায়ের ফোন আসছে।আফতাব বললো,
-“খুশবু মা ফোন করছে।আপনার সাথে একটু পর কথা বলি কেমন?….আর যদি কল ব্যাক করতে না পারি ঘুমিয়ে পড়বেন কেমন?”
ফোন রেখেছে। স্ক্রিনে বড় করে ‘মা’ শব্দটা লেখা।আরেক এবং প্রথম প্রিয় নারী। হাসি মুখে ফোন রিসিভ করলো। বললো,
-“আসসালামু আলাইকুম আম্মাজান।”
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম।কি খবর আপনার?” রুমানা মির্জা একই ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলেন।
-“সকালে মেসেজ করে খবর জানালাম ভুলে গেলেন?”
-“ওসব মেসেজ টেসেজ দেখি না আমি।সকালে তুমি গিয়েছিলে বর্ডার এর দিকে।সেখানে কি হয়েছে না হয়েছে সেটা জানতে চাচ্ছি।তুমি ঠিক আছো?নিউজে দেখলাম গোলগুলি হয়েছে।”
আদুরে গলায় আফতাব বলে উঠলো,
-“আপনাদের দোয়াতে আমি একদম ঠিক আছি।আমার টিমের বাকিরাও সেফ।চিন্তায় খাওয়া দাওয়াটাও বুঝি হয়নি তাই না?”
রুনামা মির্জা চুপ করে গেলেন।চোখ নামিয়ে রেখেছেন।নতুন কি?যতবার বিপদ এসেছে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে জানালার দ্বারে বসে আকাশপানে চেয়ে ছেলের চিন্তা করেছেন।যেমনটা করতেন একসময় স্বামীর জন্য।মাঝেমধ্যে ভীষণ রাগ হয় তার।আবার নিজেকে স্বার্থপরও মনে হয়।দেশটাই যদি নিরাপদ না থাকে দেশের মানুষগুলো কিভাবে বাঁচবে?এই ভেবে সান্ত্বনা দেন নিজেকে।
-“মা আমি ঠিক আছি।খেয়েছি।তুমি খেয়ে নাও।”
-“খাবো তার আগে আমার একটা কথা শুনো।”
-“শুনছি”
-“গতকাল আমাদের পাশের বাড়ির জিতু ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে।উনার সাথে ওনার স্ত্রীও ছিলেন।আমার সাথে কিছু কথাবার্তা বলে সে জানতে চাইলেন আমরা ঢাকা কবে যাচ্ছি?তারাও আমাদের সাথে যাবেন।”
কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না আফতাব।কপাল ক্রমশ কুচকে গিয়েছে।বলে উঠলো,
-“ঢাকা যাবো?কেনো?…..আর আমরা ঢাকা যাবো সেটা ওনারা কিভাবে জানেন?”
-“আমিও তাদের একই প্রশ্ন করেছি।তারা উল্টো অবাক হলেন আমার কথায়।জানতে চাইলেন আমি কি কিছুই জানি না?”
-“তারপর?”
-“তারপর সবটা বললেন আমাকে।তোমার বাবার মাথায় যে তোমার বিয়ের ভূত চেপেছে সেই ভূত নামাতেই ঢাকায় যাবেন।”
গলাটা শুষ্ক লাগছে।অগোছালো চিন্তাভাবনা বেগ পেলো।হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছে।কানে ফোন চেপে নিঃশব্দে ঠোঁট ভেজায় আফতাব।পিটপিট করে চোখের পলক ফেলে আমতা আমতা করে জানতে চাইলো,
-“তাহলে মেয়েটা কি….”
-“মেয়েটা জিতু ভাইয়ের ভাগ্নি।খুশবু।যে মেয়েকে বিয়ে করার আবার আপনার মাথায় চেপেছে।আমি ভাবছি অন্যটা।গম্ভীর মুখে তোমাকে এতটা টেনশন দিলো তোমার বাবা।কতটা ধুরন্ধর লোক!”
খড়ার মৌসুমে কয়েক বিন্দু জল যথেষ্ট তৃপ্তির জন্য।ঠিক তেমনি খড়া চলছিলো আফতাব এর চিত্তে।কয়েক বিন্দু নয় এবারে ভারী বর্ষণ চলছে মায়ের কথায়।মন,মস্তিষ্ক, দেহ সবটাই শীতল হয়েছে।মায়ের শেষ কথায় শব্দ সহিত হেসেও ফেলে।
বলে,
– “আচ্ছা মা? খুশবুদের বাড়ির সকলে জানে এটা?”
-“হ্যাঁ সবাই জানে।মেয়ের বাবা মেয়ের কাছ থেকে অনুমতিও নিয়েছেন।সে সম্মতি দিয়েছে।”
পিত্তি জ্বলে উঠলো আফতাব এর।এই মেয়েটা তাহলে ইচ্ছেকৃত জ্বালাতন করছিলো বিয়ে করে ফেলতে বলে?সেতো সবটা জানে আগে থেকেই।বাবার চেয়ে বড় ধুরন্ধরতো খুশবু।তাকে পরে দেখা যাবে।আফতাব রুমানা মির্জার উদ্দেশ্যে বললো,
-“ভালোবাসি মা”
-“হুম বুঝেছি!ভালোবাসার ভাগ বসাতে আরেকজন আসছে।….এবার মাথা ঠাণ্ডা করে বাড়ি ফিরো। পুত্রবধূ আনতে যাবো দুদিন পর।গোপন সূত্রে এটাও জেনেছি তোমার বাবা তোমার ছুটির ব্যবস্থাও করছেন।”
-“তোমার ভালোবাসার ভাগ কেউ পাবে না।তুমি তোমার জায়গায় শ্রেষ্ঠ।দুটো আলাদা সম্পর্ক।দুটো আলাদা ভালোবাসা।”
-“খুব কথা শিখেছো!এবার ঘুমিয়ে যাও। রাততো কম হলো না।”
ফোন রেখে কয়েকবার নিঃশ্বাস ফেলেছে আফতাব।যেনো সব দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিলো। খুশবু নামক মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।তাকে জ্বালানো হয়েছে তাই না!
লিখে ফেললো বার্তা,
-“আপনি ঠিক বলেছেন খুশবু।আমার উচিত বাবার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলা।”
খুশবুর ঠোঁটে দুষ্টু হাসি।তৎক্ষনাৎ উত্তর আসে।বলে,
-“ঠিক পথে এসেছেন এতদিনে। তা কে সেই মেয়ে?”
-“আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে।সিলেট উপশহরে তাদের বাড়ি।আসবেন কিন্তু আমার বিয়েতে।সর্বপ্রথম আপনাকে দাওয়াত করলাম”
চলবে…