তেইশতম বসন্ত পর্ব-১৬

0
29

#তেইশতম_বসন্ত
পরিসংখ্যা ১৬
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)

-“সাধ্য থাকলে কখনো একা ফেলে যেতাম না বউ।তবে কথা দিচ্ছি ফিরে এসে পাহাড় দেখতে নিয়ে যাবো।”

বার্তাটি চোখ সম্মুখে ভাসতেই মন কেমন হুহু করে উঠলো।খুব বেশি খারাপ অনুভব করছে খুশবু।যাবার পথে ফ্যাকাশে হয়ে উঠেছিলো আফতাব এর মুখটা। বারবার মুখ ফিরে চাইছিলো।দৃশ্যটা হৃদ কম্পন ধরায় মনে পড়লেই।খুশবু মনে মনে ভাবলো,

-“কখনো কাছে আবার কখনও অনেক দূরে।এভাবেই সারাটা জীবন কাটাতে হবে ক্যাপ্টেন সাহেব?আমার এখনই যে ভীষণ খারাপ লাগছে।”

মন খারাপের বেশে জানালা দিয়ে চেয়ে ছিলো খুশবু।হাতে ফোন।হুট করে কেউ কাঁধে হাত রাখলো।অবচেতন মন আফতাব বলে মনে করলেও সে কোথা থেকে আসবে?এটা ভালো করেই জানে খুশবু।সেতো সকালেই চলে গিয়েছে।ঘুরে চাইলো।দেখলো রুমানা মির্জা দাঁড়িয়ে আছেন।ঠোঁটের কোণে লেগে আছে এক চিলতে হাসি।

বললেন, – “একা লাগছে?”

খুশবু চোখ নামায়।মুখটা ভার তার।মাথা দুলিয়ে না বোধক উত্তর দেয়।রুমানা মির্জার কি দৃষ্টি এড়াবে খুশবুর লটকে থাকা মুখটা?তিনি ঠিক বুঝে নিলেন।মাত্র বিয়ে হয়েছে।কই দুজন একটু সময় কাটাবে? তা না দায়িত্বের কাছে সেটাও হয়ে উঠলো না।রুমানা মির্জা আবার বললেন,

-“মন খারাপ করে কোনো লাভ আছে বলো?…তবে তোমার মন ভালো করার একটা উপায় আছে”

-“কি উপায় মা?”

মা ডাকে মন আরো ভালো হলো রুমানা মির্জার। মেয়েলি গলায় কখনো মা ডাক শোনার সৌভাগ্য হয়নি।তিনি বললেন,

-“আমরা আগামীকাল ঘুরতে যাবো।এই ধরো শহরটা ঘুরেফিরে দেখলাম।তুমি চিনে নিলে।”

আর ঘুরাফেরা! আফতাবকে ছাড়া এখন কোনো ভালো কাজও ভালো লাগবে না।তারপরও শ্বাশুরি মায়ের মন রাখতে হাসি মুখে জবাব দেয়,

-“জ্বি আচ্ছা।”

-“ঘুমিয়ে পড়ো এখন।আগামীকাল তোমার মামী আসবেন।”

ঘুম আসবে না জানে।তাই পুরোটা ঘর ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো খুশবু।এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আফতাব এর নামের ক্রেস্ট।কিছু বই আর কিছু পেইন্টিং।ব্যাস এটুকুই। ক্রেস্টগুলো দেখে বোঝা গেলো পড়ালেখার পাশাপাশি এক্সটার্নাল কারিকুলার একটিভিটিতেও বেশ ভালোই ছিলো সে।কয়েকটা ছবিও টানানো তার।এসব দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে উঠে খুশবু।তার মনে পড়ে না কখনো স্কুলের খেলায় সে কোনোদিন নাম দিয়েছে।তার কাজ ছিল দর্শকের।বসে বসে সবাইকে দেখতো, ঝিমাতো আর তালি দিতো। দেহের অলসতা তাকে কোনোদিন এসব দৌড়ঝাঁপে উৎসাহ দেয়নি।সেখানে তারই স্বামী পুরোপুরি তার চেয়ে ভিন্ন।ঠান্ডা মাথার একজন মানুষ।দেখে বোকা বোকা মনে হয় মাঝেমধ্যে খুশবুর। পরক্ষণেই বুঝিয়ে দেয় বুদ্ধিমতির সিল লাগিয়ে ঘোরা খুশবু নিজেই সবচেয়ে বড় বোকা।

বিছানায় পিঠ ঠেকিয়ে ফের মনে করতে ব্যস্ত আফতাবকে।পৌঁছে শুধু একটা মেসেজ করেছে।এখন অব্দি কোনো কল করলো না।তবে ফোনটা বাজে।স্ক্রিনে ভাসে পুরোনো পরিচিত এক নাম্বার। তৎক্ষনাৎ মেজাজ বিগড়ে গেলো খুশবুর।এমনেতেই মেজাজ ভালো নেই তার মধ্যে এর আবার কি চাই?ফোন রিসিভ করলো খুশবু।

-“পুরোনো প্রেমিকের মৃত আত্মা জেগে উঠেছে?”

অন্যপাশ থেকে অবাক হওয়া কন্ঠ ভাসে।বলে,

-“হোয়াট?”

-“কি হোয়াট!ফোন দিয়েছেন কেনো?”

-“শুনলাম বিয়ে করেছো?”

-“ঠিক শুনেছেন।অভিনন্দন জানান”

-“খুব কথা শিখেছো খুশবু তাই না?” সাহির বিপরীতে প্রশ্ন করলো।

-“উহু!কথা আমি আগে থেকেই জানি।তবে কি বলেনতো প্রেমে পড়ে বলদি হয়ে ছিলাম।এখন আবার বাঘিনী হয়ে গেছি।আর্মির বউ বলে কথা।একটু ঠাটবাট থাকতেই হয় নাকি?”

দাঁত খিঁচিয়ে রইলো সাহির। খুশবুর একেকটা কথা তীরের মতন।মেয়েটা আসলেই ভালোবেসে দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো?নাকি তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ঝাঁঝরা করার জন্য এসব বলছে।নিজের কুটিল ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে সাহির বললো,

-“আর্মি পাত্র পেয়ে মোমের মতন গলে গেছো তাই না?এখন আর পুরোনো প্রেম ধরা দেয় না।”

খুশবুও কম যায় না। সোজাসাপ্টা জবাবে বললো,

-“ঠিক তাই।পুরোনো প্রেমিক যদি মেয়েবাজি করে বেড়ায় সেখানে একজন সভ্য দায়িত্ববান আর্মি অফিসার বেটার অপশন। হ্যাঁ আমি আর্মি পাত্র পেয়ে গলে গেছি।কোনো সমস্যা?”

-“সমস্যা হবে কেনো? গোল্ড ডিগার এর ট্যাগ পেয়ে গেলে।”

-“সামর্থ্যতো তোমাকে পুরোটা কিনে নেওয়ার ছিলো বিয়ের পূর্বেও।আমি আবার গার্বেজে টাকা ক্ষয় করিনা।এখন কি কল রাখবে নাকি আর একটু মাল মশলা মিশিয়ে অপমান করবো?”

সাহিরের রাগের পারদ তরতর করে উপরে উঠে গেলো।এই মেয়েটার সাথে কথায় পারছে না?যেকিনা একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য পিছু পিছু ঘুরতো?তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।এই ভেবে জেদ আরো বাড়লো।

-“আমার সাথে বাড়াবাড়ির পরিণাম ভালো হবেনা। ধ্বংস হবে তুমি!”

ভেবেছিলো ভয় পাবে খুশবু।উল্টো হেসে উঠলো।বললো,

-“রিটার্ন থ্রেট শুনো, এইযে মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলছো?মেয়েদের থেকে টাকা নিয়ে রঙ্গবাজি করছো। সবটার প্রমাণ আছে।ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়। জানোতো। এডভাইস দিবো ভালো পথে ফিরে এসো।রাখছি।”

অনেকদিনের জমিয়ে রাখা রাগ ঝেড়েছে আজ। খুশবুর মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা।অবহেলায় পড়ে ছিলো তার সমস্ত অনুভূতি।পলক ঝাপ্টে দেখা মেলে প্রিয় মানুষের পরিবর্তিত রূপ।ভালোবাসার ঘনত্ব বুঝে সেই সুযোগটার সৎ ব্যবহার করেছিলো এই লোকটি। নিকৃষ্ট আচরণ করেছে কখনো কখনো।অবজ্ঞা অযত্নে পড়ে ছিলো কোমল হৃদয়।তখন থেকেই দূরত্বের সৃষ্টি শুরু হয়।শেষ হয় ঘৃণায়।সে কি লোভে পড়েছে সত্যিই?নাকি অগাধ ভালোবাসা পেয়ে নিজেকে আবদ্ধ করে নিয়েছে এই মায়ায়?

ফোন তুললো।বার্তা লিখলো,

-“আমার তমসাচ্ছন্ন অন্তরকে কুড়িয়ে খুব যত্নে আগলে নিয়েছেন ক্যাপ্টেন।তবে আমি আপনার উপর ভীষণ রাগ।ভীষণ!”

________

বাবা চাচাদের ন্যায় বাড়ির ছেলেটাও হয়েছে রাজনীতির পরম ভক্ত।যেনো এটাই জীবন তার জন্য।বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকে।বাড়ি ফেরে মাঝেমধ্যে।আজ একমাস পর বাড়ি ফিরেছে নোমান।ইতিমধ্যে ফাহাদের সাথে তার কথা হয়েছে একবার। খুশবুর বিয়ের ব্যাপারে জানানোর জন্য এবং দাওয়াত করার জন্য কল করেছিলো।আসা সম্ভব হয়নি।সবসময়ের ন্যায় বাড়ি ফিরেই নেহাকে খুঁজতে লাগলো এদিক ওদিক।যৌথ পরিবারে বিশাল বাড়িতে মত আটটা ঘর।কখন এই মেয়ে কোথায় থাকে বলা দায়। হাতে নেহারি।নেহার প্রিয় খাবার।সাথে চকলেটও এনেছে।নীরবে এক রুম থেকে আরেক রুমে ঘুরে ঘুরে নেহাকে খুঁজতে লাগলো।

খুঁজে না পেয়ে অবশেষে নেহার ঘরে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বললো,

– “নেহা কই তুই?ভ্যানিশ হয়ে গেলি নাকি?”

ঠিক তখনই ওয়াশরুম থেকে চেঁচানোর আওয়াজ ভেসে উঠে।বলে,

– “গোসল করছি।পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করো।”

খাবারগুলো সাইড টেবিলে রেখে বিছানায় পা ছড়িয়ে বসলো নোমান।ঘরের নাজেহাল অবস্থা। কবে বড় হবে এই মেয়ে?এসব ভাবছে।তখনই নেহার ফোনটা বেজে উঠলো।নোমান উঠে দাঁড়ায়।ফোন হাতে তুলে নিয়ে দেখলো ফাহাদের নাম। ফাহাদ কল করেছে? নেহাকে?কিন্তু কেনো?

পেছন থেকে ছো মেরে ফোনটা কেড়ে নেয় নেহা।নোমান ঘুরে চাইতেই দেখলো বোনের ভীত মুখ।স্বাভাবিক হতে চাচ্ছে।বলে উঠলো,

-“ভাইয়া..”

নোমান সরাসরি প্রশ্ন করলো,

-“ফাহাদ তোকে কল করছে কেনো?”

বুক কাপছে নেহার।ভয় পেয়ে গেছে অল্পতেই।কি বাহানা দিবে?আর এই লোক কেনো কল করলো?প্রয়োজন ছাড়া তো মেসেজ অব্দি করেনা।নেহা আমতা আমতা করে জবাব দিলো,

-“ফাহাদ ভাইয়া?…উম!হয়তো ছবি! হ্যাঁ তুমি না বলেছিলে যে প্রোফেশনাল এডিটর।আমার বিদায় অনুষ্ঠান এর ছবিগুলো দিয়েছিলাম এডিট করতে।হয়তো সেই কারণেই”

নোমান এর কপাল কিঞ্চিত কুচকানো।নেহার সাথে তার কথা হয় সেটা ফাহাদ কেনো বলেনি তাকে?দুজনের মধ্যে আলাদা বার্তা কিছুটা সন্দেহজনক।

নোমান ভারী গলায় বললো,

– “ও তোর ভাইয়ের বন্ধু।ব্যাপারটা মাথায় রাখিস।এভাবেই বিরক্ত করবি না ওকে ছবি এডিট করার জন্য।কোনো কাজের জন্যই নয়”

-“ওকে”

-“আর যেনো না দেখি।”

নোমানের হাত ধরে নেহা বললো,

– “উফ ভাইয়া! বলবো না আর।তুমি কি এনেছো আমার জন্য সেটা বলো”

-“নেহারি আর চকলেট।খেয়ে নিস আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”

ভাইয়ের মুখ ভার হয়ে গেছে এটা ঠিক লক্ষ্য করেছে নেহা।সন্দেহ করছে নাতো?নোমান এর প্রস্থান নিশ্চিত করে দরজা আটকে দিলো।দ্রুত হাতে ফোন মেলায় ফাহাদের নাম্বারে।ফোন রিসিভ হওয়া মাত্রই বলে উঠলো,

-“আপনি যখন কল করেছেন তখন ভাইয়া আমার ঘরে ছিলো।দেখে ফেলেছে।কিযে ভয়টা পেয়েছিলাম।”

ফাহাদ শুনলো নেহার কণ্ঠের দ্রুত গতি।তারা খুশবুর রিসিপশনের জন্য খুব শীগ্রই সিলেট আসতে চলেছে।এটাই জানানোর উদ্দেশ্যে কল করেছিলো।ফাহাদ প্রশ্ন করলো,

-“নোমান তাহলে জানে না তুমি আমার সাথে কথা বলো?”

-“না! জানাইনি।ব্যাপারটা ভালো দেখায় না।”

-“কেনো?কেনো ভালো দেখায় না?আমি কি তোমার প্রেমিক?”

________

বাড়ি ভর্তি মানুষ বিদায় দিয়ে তবেই ঘরে ঢুকতে পেরেছে খুশবু।হাঁপিয়ে গেছে এত এত মানুষের সাথে পরিচয় হয়ে।কে মামী,কে চাচী সব গুলিয়ে ফেলছে বারেবারে।এত আত্মীয় স্বজন মনে রাখা যায় নাকি?বিগত কয়েকদিন যাবত নতুন বউ দেখতে আশপাশের মানুষজনের আনাগোনা।ঘরে মেহমান ব্যতীত শ্বাশুরি মায়ের সাথে আশপাশ ঘুরেই কাটছে খুশবুর দিন।সেই তার একমাত্র ভরসা।শুনেছিলো শ্বাশুরীরা বউদেরকে ভালো চোখে দেখে না। বিবাহিত সহপাঠীদের প্রায়ই বদনাম করতে শোনা গেছে। আপাতত রুমানা মির্জার মধ্যে তেমন কিছুই দেখা যায়নি।মেয়ের মতন করেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাচ্ছেন সিলেট শহর।প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সবটার খেয়াল রাখছেন রফিকুজ্জামান মির্জা।সবটা মিলিয়ে সব ভালো থাকলেও বাবা মা আর আফতাব এর অনুপস্থিতি মন ভার করে তুলছে বারেবারে।

তিনদিনে ফিরে আসবে কথা ছিলো।তিনদিন যাবত একটাবার ফোনও করেনি।মেসেজ এর উত্তরও দেয়নি।আরো অভিমান জমলো। খুশবুর মন মস্তিষ্ক কিছুতেই মানতে চাইছে না।বুক ভর্তি অভিমান নিয়ে ফোন পাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।

রাত্রির শেষ প্রহরে ঘুমন্ত নগরী। আধাঁরে ঢাকা এই প্রশান্তির শহরে চন্দ্রের আলোয় ভরে উঠে প্রান্তি।একটু দূরেই সুরমা নদীর জল ছলছল করছে শশাঙ্কের তেরছা আলোয়।পাহাড়ের কোলে সবুজের ছায়া।মিলেমিশে যেনো গীত গাইছে।ভারী রাইফেল আর অন্যান্য সরঞ্জাম হাতে তুলে তাবুর দিকে আসা ক্লান্ত শরীর।বুকটা খাঁখা করে উঠলো।আজ প্রকৃতি তাকে টানছে না।টানছে মধুর প্রেম।প্রিয় ক্যামেলিয়া ফুল।পানির ট্যাপ থেকে দ্রুত মুখে পানি ছিটিয়ে নেয়।হাত ধুয়ে মুছে নিলো আফতাব।কাপড় ছাড়ানোর পূর্বেই একটু খোঁজ নেওয়া উচিত নতুন বউয়ের।ফোন হাতে নিলো চার্জিং পয়েন্টে কানেক্ট করে রাতের গভীরতা হিসেব না করেই কল মেলায়।

গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন খুশবু তড়াক করে উঠে বসলো। অন্তরাত্মা ইতিমধ্যে জানান দিয়েছে কল তার ক্যাপ্টেন সাহেবের।একহাতে চোখ কচলে ফোন রিসিভ করতেই শুনলো ঠান্ডা শীতল কন্ঠ,

-“খুশবু?”

কন্ঠস্বর মায়াময়। বিগলিত করতে সক্ষম যেকোনো কঠোর হৃদয়কে।তবে খুশবু নিজেকে সামলে নেয়।অভিমানী গলায় বলল,

-“আমি আপনাকে চিনি না”

অনেক সময় পর আফতাব এর মুখে হাসি ফুটলো। সমতল ভূমি থেকে দুইশত ফুট উপরে তার অবস্থান।বড় পাথরের উপর,তারা ভরা অখিলের নিচে বসে অভিমান মিশ্রিত কন্ঠস্বর শুনছে।জবাব দিলো,

-“আমি আপনার একমাত্র স্বামী।ভুলে গেছেন?”

আফতাব এর দুষ্টুমিপূর্ণ গলার স্বরে আরো বেগ পায় খুশবু।বলে,

-“মনে রাখলে না ভুলবো আমার কোনো স্বামী নেই।আমি সিঙ্গেল”

-“এত রাগ আমার বউয়ের?”

-“আপনি ফোন রাখেন বখাটে লোক কোথাকার! রাত বিরাতে অপরিচিত মেয়েদের কল করে বিরক্ত করেন।”

-“রাখবো না ফোন।আরো বিরক্ত করবো।অনেক বিরক্ত করবো।অধিকার আছে আমার বিরক্ত করার।’

-“আমি মামলা দিবো আপনার নামে।বউকে ফেলে রেখে চলে গেছে আবার অধিকার খাটায়।স্বামী নামের কলঙ্ক আপনি।আমি আপনাকে কোনোদিন ক্ষমা করবো না আমি।”

-“ঠিক আছে।পাহাড়ি মেয়ে পছন্দ হয়েছে আমার।তাকে বিয়ে করে নেই।এখানেই নতুন সংসার পেতে বসবো।আমার আগের বউয়ের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ভালোই হলো।”

-“আপনাকে প্রথম থেকেই আমার ভন্ড মনে হতো। ফ্লার্টবাজ!”

-“আরো ভন্ডামিতো বাকি আছে।বাড়ি ফিরে দেখাবো নাহয়?অল্পতে জাজ করা ঠিক হবে না।”

নীরব হয়ে গেলো খুশবু।এত বুঝিয়েছে তিনটে দিন মনকে।এটা তার কাজ।করতেই হবে।পৃথিবী এদিক ওদিক হয়ে গেলেও করতে হবে।আর খুশবুকে মানিয়ে নিতে হবে। ক্ষণিকের বুঝে শান্ত হলেও আবার অশান্ত হয়ে পড়ে। কোনকিছুতেই মন টিকছে না।কিছু সময় চুপ থাকার পর খুশবু বললো,

-“সরি…বেশি বেশি করে ফেলছি”

-“ভালো লাগছিলো”

-“কি?”

-“আপনার অভিমান….নিজেকে আপনার আপন কেউ মনে হচ্ছিলো।”

ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকটা আরো বাড়লো। খুশবু ফোন হাতে নিয়েই উঠে গেলো।খোলা জানালা বেয়ে রাত্রির অনুষ্ণ পবন বইছে।জানালার দ্বারে দাঁড়াতেই উদাসীন মুখে পড়ে। নিস্তব্ধতার মাঝেও যেনো দুজনার হাজার কথা।

-“আপনার গায়ের খুশবু আমাকে তিন রাত যাবত ঘুমোতে দেয়নি”

চলবে…