তেইশতম বসন্ত পর্ব-২৩+২৪

0
187

#তেইশতম_বসন্ত
পরিসংখ্যা ২৩
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)

-“তোমার আর ভাইয়ার মাঝে কি চলছে বলোতো?সত্যি করে বলবে নেহা।”

নোমান এর অনুপস্থিতিতে ফোন হাতে পেয়েছে।এই সাফল্যের পেছনে তার মায়ের বড় অবদান।মেয়েটাকে হাহাকার করতে দেখেছেন এ ক’টা দিন।ভালোবেসে দিয়ে গেছেন সেটিও নয়।চোখ আর মুখ দিয়ে শাসিয়ে গেছেন।এক ঘন্টার মাঝে ফেরত নেবেন।তার মধ্যে অপরিচিত নাম্বারে পরিচিত গলা। হাই হ্যালো বলেই সরাসরি প্রশ্নের মুখোমুখি হয় নেহা।শুষ্ক ঠোঁট ভেজালো জ্বিভ দিয়ে।

মিনমিনে গলায় বললো,

– “কি চলবে আপু? কিছুইতো না।”

-“আমাদের বাড়ি এসেছিলে দুটো কারণে।এক আমার হালচাল জানতে আর দ্বিতীয় কারণটা জানা হয়নি নেহা।”

খুশবু কঠোর স্বরে কথা বলছে।মনে হলো নেহার।সেও এমন করছে?রাগ করেছে কি?না পারতে বলে উঠলো,

-“আপু আপনিও রুডভাবে প্রশ্ন করছেন আমাকে?আমি কি করেছি বলুনতো?”

ফিক করে হেসে ফেলে খুশবু।কন্ঠস্বর শুনে মনে হলো কোনো বাচ্চা মেয়ে অভিমান করেছে।আফতাব এর দিকে চায় খুশবু মনে মনে ভাবে আপনার বউয়ের চেয়ে বড় অভিমানী পৃথিবীতে আছে।আমি এক পিস নই।খুশবু কন্ঠস্বর নমনীয় করে বললো,

-“সরি তোমার খারাপ লেগেছে?”

নেহা অবলীলায় বলে ফেললো,

-“হু”

-“অনেক সরি নেহা।আসলে সারাদিন ধকল গেছে।আবার তোমার বিষয়টা ভাবছিলাম তাই হয়তো।”

-“ইটস ওকে আপু।”

-“আচ্ছা এবার বলো কি সমস্যা?খুলে হলো আমাকে প্রমিজ আমি কাউকে কিছু জানাবো না।”

কিছুটা সাহস পেলো নেহা। আশার আলো দেখতে পেলো।খুশবু হয়তো তার সমস্যার সমাধান করতে পারবে।ভরসার স্থান দিয়ে তাকে প্রশ্ন করে,

-“সত্যি বলছেন?”

-“হ্যাঁ সত্যিই।”

নেহার বার্তালাপ এলোমেলো। অপরিষ্কার;অস্পষ্ট।সরাসরি কিছুই বলছে না। বাচ্চামো এবং অভিমানে ভরপুর গলার স্বরে বুঝিয়েছে এই অবোধ মন তার দামড়া ভাইয়ের প্রেমে পড়েছে।যেনতেন প্রেম নয়।আকার ইঙ্গিতে বিয়ে করতে রাজি বুঝিয়েছে। অগোছালোভাবেও মনের সমস্ত কথন উজাড় করলো খুশবুর কাছে। ওয়াদা নিয়েছে সে যেনো একটা হেস্তনেস্ত করে এই ব্যাপারটা।এক গাদা অভিযোগও করেছে ফাহাদের নামে।কেনো এতো বড় অপরাধ করলো তার ভাই?কেনো বিনা দোষে তাকে ধমকেছে।তাকে কেনো বয়সের খোটা দেয়?খুশবু এক তালে নেহার সব কথা শুনে কিচ্ছুটি বললো না আর। কিই বা বলবে।হাসবে না চিন্তিত হবে তার নিজের ছোট মস্তিষ্কে ঢুকছে না।আবার এসেছে অন্যের প্রেমের নৌকা পাড় করাতে।

-“আচ্ছা নেহা।তোমার সব কথা শুনলাম।আমি এটার একটা বিহিত করবো।তুমি চিন্তা করো না। মন দিয়ে পড়ালেখা করে পরীক্ষাটা দাও।”

সন্ধ্যার দিকে এসেছিল ফাহাদ খোঁজ দিতে একবার।সাথে সন্ধ্যার নাস্তা এনেছে পরিবারের সকলের জন্য।আগামীকাল চলে যাবে তারা।ইতিমধ্যে এক সপ্তাহ থাকা হয়ে গেছে।আর কত?কাছে জরিনা বেগম এবং জিতু আছেন এটাই সবচেয়ে বড় স্বস্তি।সামলে নিতে পারবে খুশবুকে।নেহা নামটি শুনে দরজার বাহিরের দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো ফাহাদ।পূর্বের কোনো কথাই শুনেনি।মাত্র ফোন রেখে দিলো।এর অর্থ খুশবুর কানে কথা গিয়েছে।এমনেতেই নোমান কম ছিলো এখন নোমানকে পাল্লা দিয়ে খুশবু ঢুকে পড়লো ময়দানে।সবাই মিলে তাকে বল বানিয়ে এদিক ওদিক বাউন্স করবে।

হাত আপনাআপনি চলে গেলো পকেটে।ফোন বের করে বারান্দায় চলে গেলো ফাহাদ।কল করে নেহার নাম্বারে। খুশবুর পর ফাহাদের কল পেয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খায় নেহা।ভাবতে লাগলো এত দ্রুত খুশবু আপু হেস্তনেস্ত করে ফেললো?এত মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!

নেহা নিজের ভাবমূর্তি বজায় রেখে কল রিসিভ করে। রূঢ় গলায় বললো,

-“বলুন”

-“কি বলুন? বেয়াদবি করছো?” ফাহাদের মুখ ফুটে আপনাআপনি বেরোয় কথাটি।

-“জ্বি না বেয়াদবি করলে বলতাম কি হয়েছে বল!আমি আপনাকে আদবের সাথে বলেছি ‘বলুন’।”

গতকাল থেকে নেহার কথা শুনে টাস্কি খেয়ে যাচ্ছে ফাহাদ।হুটহাট এরূপ পরিবর্তন?নরম সুরে ফাহাদের হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলানো মেয়ে তেজ দেখাচ্ছে তাকেই? ধানি লঙ্কার চেয়ে কম নয়।নিজেকে ধাতস্ত করে ফাহাদ বললো,

-“খুশবুকে কল করেছিলে কেনো?”

-“আমি কোনো কল টল করিনি।উনিই করেছেন।”

এখানে আবার ঘটনার ভিন্নতা।সেটা নিয়ে মাথা ঘামায় না ফাহাদ।কল যেই করুক।কি কথা হয়েছে সেটা জানা মুখ্য বিষয়।

-“আচ্ছা! কেনো করেছেন উনি কল?”

-“আমাকে প্রশ্ন করলেন আমি উত্তর দিলাম।”

ফাহাদ ঠান্ডা মাথায় প্রশ্ন করলো,

– “কি জিজ্ঞেস করেছে শুনি?”

-“আপনাকে কেনো বলবো?” তেজি গলায় বলে নেহা।

-“বলবে না?”

-“জ্বি না।শুনতে ইচ্ছে হলে আপুর কাছ থেকে জেনে নিবেন।”

-“আমার বোনের সাথে গোপনে ফোনালাপ করেছো।আমি জানতে চাইছি আর আমাকেই বলবে না।…..তুমি বোধহয় চাচ্ছ তোমার ভাইকে আমি বলে দেই তুমি পরীক্ষা শেষে খুশবুর শ্বশুরবাড়ি এসেছিলে।”

ভীত হলো নেহা।এই ঘটনা জানলে সারাজীবনের জন্য ফোন নিয়ে যাবে। বারংবার চোখের পলক ফেলে বললো,

-“আমি বিচার দিয়েছি আপনার নামে।আপু বলেছে আপনাকে দেখে নিবে।আমার মনে কষ্ট দেওয়ার প্রতিশোধ নেবে।”

না হেসে পারলো না ফাহাদ।মনে কষ্ট দেওয়ার প্রতিশোধ নিবে।বললেই হলো?ফাহাদ বুঝতে দিলো না তার হাসি। দাম্ভিক কন্ঠস্বরে বলে উঠে,

-“আমি তোমার মনে কষ্ট দেই, তাতে কি আসে যায়?”

-“অনেককিছু আসে যায়।”

-“আমি বুঝতে পারছি নেহা তোমার অতি দ্রুত বিয়ে দেওয়া উচিত।আমি নোমানকে বলে তোমার জন্য পাত্র দেখছি।”

আরো আধাঁরে ঘনায় নেহার মুখ।এমনেতেই চোখ মুখ কুচকে ছিলো।এখন কিনা পাত্র নিজে অন্য পাত্র খুঁজবে!এই দিনও আসলো তার জীবনে?কান্না আসবে আসবে ভাব।তখনই ফাহাদ বলে,

-“সিলেটি পাত্র হলে ভালো হয়।তাই না?”

-“একদম না!আপনাকে আমার বিষয়ে ভাবতে হবেনা।আমার ভাগ্যে যা লেখা আছে তাই হবে।”

-“তাই?”

-“হ্যাঁ একদম তাই!”

লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে ফাহাদ।শীতল গলায় বললো,

-“আরো একটু বড় হও।মাত্র ইন্টার দিলে।”

-“আর কিছু বলবেন?আমার ফোন নিয়ে যাবে।হাতে সময় কম”

-“হ্যাঁ বলবো”

-“দ্রুত বলুন”

-“তবে ভাগ্যে থাকলে বিয়ে করবো”

________

-“আপনার নতুন ফুড কার্ট-এ খেতে এলাম নেতা সাহেব।জুনিয়র হিসেবে কি খাতিরদারি করবেন?”

জিনিয়া নামক মেয়েটা নির্ভিক।চোখের মাঝে তেজের আভাস।সেদিন একগাদা রাজনীতি নিয়ে নৈতিক বানী পেশ করার পরও মেয়েটির দেমাগ কমেনি।শেষ অব্দি নোমানকে ভীষণ তুচ্ছ করেই হেঁটে চলে গেছে।আজ এসেছে তার ফুড কার্টে।নতুন বিজনেস।সাথে জনসেবা।খাবার বিক্রির পাশাপাশি পথচলা অভাবী মানুষের মুখে দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা।বাহবা পাচ্ছে চারিদিকে।তার এই ভালো কাজে অনেকেই তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।তবে মেয়েটি এসেই মেজাজ বিগড়ে দিলো।

সাধারণত নোমান থাকে না এখানে। শেফ আর স্টাফ রাখা হয়েছে।সে বিভিন্ন মিটিং মিছিলে সময় দেয়।আজ এসেছিল তদারকী করতে।আর আজই এই মেয়েটির দর্শন।প্রথমে খুব শান্তভাবে বললো,

-“অর্ডার করুন খাবার হাজির হবে”

জিনিয়া ধপাস করে ব্যাগ রাখে টেবিলে।আয়েশ করে বলে,

-“সিনিয়র ভাইয়া?মেনু প্লিজ”

হাত শক্ত করে মুঠ করে ধরলো নোমান।চোখের ইশারায় স্টাফকে বললো মেনু নিতে।মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো।জিনিয়া ফের চেঁচায়।বলে,

-“এতো দিনে দুপুরে লুট চলছে!এত দাম খাবারের?”

স্টাফ বললো,

– “ম্যাডাম কাঁচামালের দাম বেড়েছে।ওই অনুযায়ী আরকি…..”

-“তারপরও একদিকে পথের মানুষকে খাওয়াচ্ছেন অন্যদিকে আমাদের মত মধ্যবিত্তদের কাছ থেকে এত টাকা আদায় করছেন?”

দুটো চেয়ার নিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিতে বসে ছিলো নোমান।দেহ এক চেয়ারে আর পা আরেক চেয়ারে ঠেকিয়ে।এত ক্যাটক্যাট সহ্য হলো না।উঠে আসে জিনিয়ার সামনে।প্রশ্ন করে,

-“তোমার সাধ্যের মধ্যে যা আছে সেটি অর্ডার করো।খাও আর প্রস্থান করো।”

-“কাস্টমারদের সাথে এমন বিহেভ করেন?”

-“কাস্টমার অযথা ঘ্যানঘ্যান করলে এমনি করতে হয়।”

জিনিয়া উঠে দাঁড়ালো।কপাল কুঁচকে বললো,

-“আমি ঘ্যানঘ্যান করছি! আর আপনার অ্যাটিটিউড?নেতাদের থেকে কম না!ভেবেছেন কি নিজেকে?এত দামে খাবার বিক্রি করবেন আর প্রতিবাদ করবো না?”

ভাগ্যিস আজ সাথে থাকা জুনিয়র ভাই ব্রাদারগুলো নেই।নাহয় মান ইজ্জত ধূলিসাৎ হয়ে যেতো।যাকে মোটামুটি সবাই ভয় পায় তার সামনে গলা উচুঁ করে কথা বলছে মেয়েটি।নোমান নিজের রাগ দমন করলো চোখ বুঁজে।বললো,

-“আমি মেয়ে মানুষের সাথে কোনো প্রকার সিন ক্রিয়েট করতে চাচ্ছি না।আমাদের খাবারের দাম এটাই আর এমনি থাকবে।”

ঠোঁট চেপে হাসলো জিনিয়া।এই জব্দটাই করতে চাচ্ছিলো।হয়ে গেলো।যত তেজ দেখাক মিটিং মিছিলে এখানে এসে ধরা খেয়েই গেছে।নোমান ঠোঁট কামড়ে মাথা নামিয়ে নিজেকে পুরোপুরি শান্ত করে। স্টাফকে বললো,

-“ওনার কি লাগে দেখ।১০% ডিসকাউন্ট দিস।”

বলে চলে গেলো নোমান।মনে মনে পণ করলো সেও।এই জব্দ করার টেকনিক ভালো করেই জানা তার।তাকে জব্দ করতে এসে না ঝামেলায় পড়তে হয় জিনিয়াকেই। বাঁকা হাসে নোমান।ভাবতে লাগলো বাঘ থাবা দেওয়ার পূর্বে দু পা পেছনে নেয় এমনেতেই।

_______

আফতাব এর মাথার ব্যান্ডেজ খুলেছে অনেকদিন হয়েছে।ড্রেসিং করতে হয় তিনদিন পরপর।খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হয় তার আশেপাশে।অনেকে আসছে তাকে দেখতে। হায় হুতাশ করছে। খুশবুর রাগ হচ্ছে এসব দেখে।কেনো এমন ব্যবহার করছে সকলে?একটা মানুষ কথা বলছে না, নড়ছে না এর মানে তার জীবন শেষ?এই লোকটা বেঁচে আছে সেটিই কি যথেষ্ট নয়?একেবারে চলে যাওয়ার চেয়ে যেকোনোভাবে রয়ে যাওয়া ভালো।

আফতাব এর দিকে ঝুঁকে খুশবু বলেছিলো,

-“আপনার নিঃশ্বাসের মূল্য কি এরা বুঝবে?সে বুঝবে যে এই শুদ্ধ নিঃশ্বাসকে কাছ থেকে অনুভব করেছে।”

এতোটা দিন সবকিছু একা হাতে সামলে শরীরের অধঃপতন খুশবুর।কোমড় আর মাথা ব্যথার পরিমাণ বেড়েছে।সাথে মুখশ্রীর গুমোট ভাবটা।চোখের নিচে কয়লার কালি।প্রতিরাতে এক জাদুমুগ্ধ ঘ্যাম মুখে চেয়ে থাকে।অনুভব করে শ্বাস প্রশ্বাস।তার অব্যক্ত কথাগুলো শুনতে চায়। কান পেতে রয় সেখানে।মনে করে তার প্রশ্নগুলোর জবাব দিচ্ছে।

– “জানেন আমার ভাইয়ের প্রেমে এক পুঁচকে মেয়ে পড়েছে।আর নালিশ করছে তার নামে।সে কি অভিমান!… আমার কিন্তু ভালো লেগেছে নেহাকে।ভাইয়ের বউ হিসেবে পারফেক্ট,কি বলেন?”

আফতাব এর হাত পায়ের ব্যয়াম করাতে করাতে খুশবু আবার বললো,

-“নিজের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলে অন্যেরটাও দেখতে ভালো লাগে।আমি কোমর বেঁধে মিশনে নামবো আপনার সাথে। মিশন ফাহাদ ভাইয়া আর নেহার বিয়ে।”

খুশবুর বেশ প্রেম প্রেম পেলো আজ।চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা মানুষটির প্রতি অন্যদিনের চেয়ে বেশি ভালোবাসা আসছে।শ্যাম রং তার,ছোটছোট চুলগুলো বড় হয়েছে এতদিনে।ক্লিন শেভ করা গালে দাড়ি গোঁফ গজিয়েছে।চোখ আকর্ষণ করার মতন কিছুই নেই তারপরও টানে খুশবুকে।সুন্দর লাগছে এই পরিবর্তন। কান্ড জ্ঞান হারিয়ে ঠোঁটে চুমু বসায় খুশবু।সাথে সাথে নিজেই লজ্জিত অনুভব করলো।অসুস্থ স্বামীর সুযোগ নেওয়া হচ্ছে?

খুশবু কানের কাছে গিয়ে বললো,

-“আপনাকে আগের তুলনায় বেশি সুন্দর লাগছে তাই আরকি একটু অসভ্যের মতন আচরণ করলাম।আমি আপনার স্ত্রী একটু আধটু এমন করতেই পারি।”

ভালোবাসার মুহূর্তে এই ফোনটা হয়ে দাঁড়ালো বাঁধা। বিরক্ত হলো খুশবু।একাকী লজ্জার মাঝেও একটা স্বস্তি ছিলো।কেড়ে নিলো সেটা।ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলে খুশবু।বিগড়ে গেছে মেজাজ। রোমান্টিক মুডটা তছনছ করলো কে?সেটাই দেখতে ফোন হাতে নেয়। আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।সাথে একটি মেসেজ।ফোন রিসিভ করে খুশবু।

-“বলেছিলাম না ধ্বংস হবে?অনেক উড়ছিলে আকাশে! সাহিরের মুখের কথা ফেলনা নয়।বিয়ে হতে না হতেই এই অবস্থা স্বামীর।খুব খারাপ লাগছে তার কথা ভেবে আর তোমার অবস্থা দেখে পৈশাচিক আনন্দ বোধ করছি খুশবু।”

ধীরস্থির;অবিচল সম্পূর্ণ কায়া। তমাসার অস্পষ্টতায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে খুশবু।কত পরীক্ষা আছে সামনে বাকি?এই শক্ত স্তম্ভকে নড়াতে তোড়জোড় করছে সকলে।তাদের তালিকায় সাহিরের নামটা যোগ হলো। হৃদপিণ্ডে ছুরির ন্যায় কথার আঘাত করে করে। অদৃশ্য রক্তক্ষরণ হচ্ছে বক্ষপিঞ্জিরার আড়ালে লুকিয়ে থাকা চিত্তে।কেটে যাওয়া ফোনটি এখনও কানে নিজে দাঁড়িয়ে।ধীরে ধীরে নামায় খুশবু ফোনটি।স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করা মেসেজ পড়ে।নিষ্প্রাণ প্রতিমার ন্যায় ভঙ্গি তার।চোখ বেয়ে গড়ালো না এক বিন্দু অশ্রু।হেঁটে গেলো তার শান্তির জায়গায়।পাশে বসলো আফতাব এর।কঠিন মুখে তার হাত তুলে নিজের উদরে রেখে বললো,

-“একবার উঠুন অনেক অভিযোগ করার আছে….আপনার বাহুডোরে আবদ্ধ না হওয়া অব্দি আমার চোখ থেকে অশ্রু ঝরবে না।না দুঃখের,না সুখের।”

যামিনীর মধ্য প্রহরে বলিষ্ঠ আঙ্গুল কম্পিত হয়।এক শীতল হওয়ার ঝাঁপটায় মাতোয়ারা উষ্ণ নিঃশ্বাস। আত্নচিৎকার এলো বুকের অতল গহ্বর থেকে।প্রিয় মুখের ছোঁয়া লাগুক ভোরের আলোয়।অপেক্ষায় সর্বাঙ্গ।প্রভাতের প্রথম কিরণ যেনো আসে তারই আমর্শে।বিশ্রামে স্থির স্বপ্নের জগত। পাশে থাকা মানুষের অনুভব নিবিড়।নিজের দেহের সাথে লড়াইয়ে অবতীর্ণ রাতের প্রহর।এবারও হার মানলো।আরেকবার!

চলবে….

#তেইশতম_বসন্ত
পরিসংখ্যা ২৪
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)

তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা খুশবু।আজ থেকে আরো তিন মাস আগে এই খবরটা সর্বপ্রথম আফতাব জেনেছে।তারপর একে একে বাড়ির সকলে।কোনো খুশির রেশ নেই খুশবুর মুখে।বাড়িতে কোনো হইচই নেই।তবে রুমানা মির্জা নিজেকে স্বাভাবিক করেছেন স্বামীর সাথে। পাঁচ মাস যাবত একই ছাদের নিচে থেকেও অচেনার মতন ব্যবহার করছিলেন।চোখে চোখ পড়লেও এড়িয়ে যেতেন।ঘরে নতুন অতিথি আসছে শুনে অন্তত ছেলের এই অবস্থার শোক কিছুটা কাটিয়েছেন। খুশবুর যত্ন করতে চাইলে মেয়েটা কেমন পালিয়ে বেড়ায়।কারো সাথে কথা বলে না তেমন।নিজেকে শক্ত করেছিলো আফতাব এর এই অবস্থার পরবর্তীতে।হুট করে অনুভূতিহীন হয়ে পড়লো কেনো?নায়লা বেগম ফোনের উপর ফোন দিয়ে যান।রিসিভ করেনা খুশবু।জরিনা বেগম অন্তত একবার হলেও এসে দেখে যান আফতাব খুশবু দুজনকেই।কোনো লাভ হয় না। খুশবুর মুখ ভঙ্গি শক্ত।মনেই হয়না সে তার অনাগত সন্তানের মা হতে চলেছে।দুই রকমের পরিবর্তন দেখে খুশবুর মাঝে।

রিতা খালা রুমানা মির্জার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,

-“দেখেন বড় আপা ফুরির মুখটা?এতদিন কত শক্ত হইয়া আছিলো। সবাইরে সাহস দিতাছিলো।হুট কইরা কেমন মন মরা হইয়া গেলো।মা হওয়ার কোনো খুশি নাই মুখে।নিজের যত্নও করেনা।”

অযথা ভাজ করা কাপড় খুলে আবার ভাজ করছে খুশবু।মাথা ঠিক জায়গায় নেই তার।কি থেকে কি করে নিজেও জানে না।একটু আগে অন্যমনস্ক হয়ে ডালে চিনি দিয়ে এসেছে।রিতা বেগম খেয়াল করেন বিষয়টি।রুমানা মির্জা কি বলবেন ভেবে পেলেন না।উল্টো চোখ থেকে অশ্রু ঝরিয়ে বললেন,

-“খুশি দুজনের।একজন একা কিভাবে অনুভব করবে?”

রিতা বেগম একটা শেষ চেষ্টা করেন।এক গ্লাস দুধ গরম করে নিয়ে দাঁড়ালেন খুশবুর সামনে।মুখে হাসি টেনে বললেন,

-“বউ তুমি না চকলেট দুধ পছন্দ করো?এইযে দুধ আনছি।কয় চামচ পাউডার দিমু?”

নিষ্প্রাণ চোখ তুলে চায় খুশবু। গোলগাল প্রতিক্রিয়াহীন মুখ।বলে উঠলো,

-“খাবো না”

-“এটা কেমন কথা একটু খায়া দেখো”

-“রান্না ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যান।”

এরূপ রুষ্টতা বিগত তিনমাস যাবত দেখে আসছে পরিবারের সকলে।এক কথার মানুষ হয়ে উঠেছে খুশবু।মেলামেশা একদমই কম।নিজের মতন একাকী কাজ করে।নিশ্চুপ খেয়ে উঠে যায়।প্রশ্নের উত্তর ভদ্রতা বজায় রাখতে দেয়।তাছাড়া একগুঁয়ে স্বভাবে গ্রাস করে ফেলেছে তাকে।আজকাল বারান্দায় দেখা যায় তাকে।আফতাব এর কাছে তেমন একটা যায় না।রাত দশটা অব্দি রিতা খালার দায়িত্ব আফতাব এর পাশে থাকার।

বদলে যাওয়া নিয়ম মোতাবেক খুশবু বারান্দায় বসে। সোফার উপর পা তুলে বসেছিলো কিছুক্ষন।পরপর হুট করে মনে এলো তার মধ্যে আছে অন্য একজনের বসবাস।তার নড়চড় সবটাই অনুভব করবে সে।এভাবে পা গুটিয়ে বসে থাকলে সমস্যা হবে তার। সেও কিছু বলতে পারবে না।গোপনে কষ্ট সহ্য করে যাবে।আকাশের গোলকার চাঁদের দিকে মনোযোগী ভঙ্গিতে চেয়ে আছে।ঠিক তখনই অনুভব করলো কারো উপস্থিতি।

সাদা পাঞ্জাবি পড়ে পেছনে হাত বেঁধে এসে দাঁড়িয়েছেন রফিকুজ্জামান মির্জা।বিগত পাঁচ মাস যাবত পরিবারে এক গুমোট পরিস্থিতি।কখনো চঞ্চল,কখনো শক্ত মেয়েটি আজ কঠিন।ভারী গলায় প্রশ্ন করলেন,

-“ ঘুমাবে না?”

খুশবু মুখ ফেরায় রফিকুজ্জামান মির্জার দিকে।ক্লান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,

-“ঘুম আসছে না বাবা”

-“আফতাব এর পাশে গিয়ে নাহয় বসো?”

খুশবু আর জবাব দিলো না।কেনো বসবে ওই লোকটার পাশে?সে শুনেও তার কথা শুনে না।আফতাব এর নিস্তব্ধতায় অতিষ্ট হয়ে উঠেছে খুশবু।মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।মনে হচ্ছে যসে ইচ্ছে করে এমন করে।কত হাসি নিয়ে বাবা হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছিলো। ভেবেছিলো হয়তো জোর পাবে।কই পেলো না যে!প্রতিরাতে অপেক্ষা করেছে উঠেই শক্তভাবে জড়িয়ে ধরবে।এই অপেক্ষায় আরো তিনমাস কেটেছে।একা গর্ভে ধারণ করছে,নিজেকে সামলাচ্ছে।তাকে সামলানোর জন্য আফতাব নিজের মধ্যে নেই।চোখ নামিয়ে নিলো খুশবু।যাবে না সেই লোকের কাছে।

রফিকুজ্জামান মির্জা এসে বসলো খুশবুর সামনে।বললো,

-“রেগে আছো আমার ছেলের উপর?”

তুচ্ছ হাসলো খুশবু।রেগে?সে কি রাগ বুঝে?রাগ বুঝলে হয়তো এভাবে পড়ে থাকতো না।খুশবু মাথা দুলিয়ে না বোধক উত্তর দিলো।

-“দেখো মা?আমরা কিই বা করতে পারি বলো?তুমি না খুব স্ট্রং একটা মেয়ে?তুমিই আমাদের সামলেছো আর তুমিই এখন ভেঙে পড়লে চলবে?আমার নাতি অথবা নাতনির জন্য অন্তত…..”

খুশবু জবাব দিলো,

– “আমি ভেঙে পড়িনি বাবা।ভেঙে পড়লে হয়তো আমিও আপনার ছেলের পাশে নিথর পরে থাকতাম।”

-“এসব বলতে নেই।তোমার কি করতে ইচ্ছে করে বলো?আমার মনে হয় তোমার মাইন্ড ফ্রেশ করা দরকার।কোথাও যাবে?ঢাকা যাবে?”

ঢাকা যাওয়ার কথায় নারাজ খুশবু।যতই রাগ অভিমান জমুক। আফতাবকে ফেলে ঢাকা যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।খুশবু বললো,

-“না বাবা ঢাকা যাবো না।আমি এখানেই ঠিক আছি।”

-“তাহলে আশপাশ থেকে একটু ঘুরে এসো।তোমার জিতু মামাকে নিয়ে যাও সাথে।ঘুরলে ফিরলে অন্তত তোমার ভালো লাগবে।”

মায়ের কষ্ট একমাত্র মা- ই বুঝতে পারে। অধীর ইচ্ছে জাগছে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে।খুশবু শ্বশুর মশাইয়ের উদ্দেশ্যে বললো,

-“আমি ঢাকা যাবো না বাবা।যদি আপনি অনুমতি দেন তাহলে মা-কে বলি কিছুদিনের জন্য আমার কাছে আসতে?”

রফিকুজ্জামান ঠোঁটে চওড়া হাসি ঝুলিয়ে জবাব দেন,

-“অবশ্যই!কেনো নয়?তোমার মা পরিবারের বাহিরের কেউ নাকি?তার যখন ইচ্ছে সে আসতে পারবে।তুমি কালই বেয়াইনকে চলে আসতে বলো।”

-“জ্বি আচ্ছা”

________

-“আমার কিন্তু পরীক্ষা শেষ বহু আগে”

প্রাণোচ্ছল মানুষ আর তার উচ্ছাসে ভরপুর কন্ঠস্বর।নেহাকে যেদিন থেকে বিয়ে করবে বলেছিলো হুট করেই গিরগিটির মতন রং বদলে ফেলে এই মেয়ে।তেজ কমে এসে লজ্জায় পরিণত হয়েছে।ফাহাদের নিজেরও এই অবস্থা।দ্বিতীয়বার সেই বিষয় তোলে নি।তবে নেহা যেনো পরীক্ষা শেষ করে হাতে ফোন রূপে আকাশের চাঁদ পেয়েছে।সময়মতো ফোন করে ফাহাদকে। ল্যাপটপে কাজ করতে করতে ফোন রেখেছে মাথা আর কাঁধের মাঝামাঝি চেপে।

জবাবে বললো,

-“এতো খুশির সংবাদ।”

-“এখন ভার্সিটিতে যাবো।”

-“হুম যাবে তো”

-“যেহেতু ভার্সিটিতে যাচ্ছি তার মানে আমি বড় হয়ে গেছি তাইনা?”

-“না”

ফাহাদের জবাবে রুষ্ট নেহার মুখ ভঙ্গি।এসব কিছু ভঙ!আঠারোর উপরে কেউই শিশু নয়।তার আঠারো বছর দুইমাস চলে।

-“আমার বয়স কিন্তু আঠারো আপ”

ফাহাদ ভাবলেশহীনভাবে বলে,

– “তো?”

-“তো কি?আপনি সেদিন কি বলেছিলেন?”

ফাহাদ মৃদু হেসে প্রশ্ন করে,

– “কি বলেছিলাম?”

-“মনে নেই?”

-“না নেই”

বিরক্ত হলো নেহা।বিয়ে করবে বলেছিলো।এই কথা ভুলা যায়?কক্ষনো না! ফাহাদও ভুলে নি।নেহা রাগী সুরে বললো,

-“ইচ্ছে করে এমন করছেন না?আমার জন্য আপনার কোনো মায়া দয়া নেই?”

“তুমি আমার প্রেমিকা নও।কেনো মায়া দয়া করবো?যা বলেছি সেটাই মাথায় রাখো।এরমধ্যে প্রেম জাতীয় কিছু আসবে না। হ্যাঁ মাঝেমধ্যে কথা বলতে পারো কল করে।কাঙ্খিত দিন আসার পূর্বে আমার কাছ থেকে তেমন কোনো আচরণ পাবে না যা তুমি আশা করো।”

নির্বোধের মতন আচরণ করলো না আর নেহা।দরকার নেই তার ফাহাদকে প্রেমিক হিসেবে। চিরদিনের জন্য জীবনসঙ্গী হোক।এটাই একমাত্র চাওয়া।নেহা দুষ্টুমির ছলে বললো,

-“হুম! মানলাম সবই।তবে কি জানেন আপনি আসলেই নির্দয়।”

-“ফাইন!ফোন রাখো আমার কাজ আছে।” জবাব দিলো ফাহাদ।

-“এই এই দাঁড়ান”

-“বসে আছি”

-“না মানে…আমি আরো একটু বড় হলে আপনিও আরো একটু বড় হবেন। মানে বুড়ো হবেন।”

নেহার এরূপ কথায় দুদিকে মাথা দোলায় ফাহাদ।নেহাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তবে সামলানো কঠিন।জবাবে বললো,

-“তুমি নিজে চুস করেছো আর কোনো অপশন রাখোনি হাতে।আর আমি এখন ফোন রাখছি।”

_______

-“আপনি নিষ্ঠুর হবেন ভাবিনি….আমার জন্য না হোক আপনার সন্তানের জন্য একবার চোখ মেলে চাইতে পারতেন।তাকে ছুঁয়ে দিতে পারতেন।আমাকে আর তাকে বিগত তিনমাস যাবত একা করে রেখেছেন!”

শীতল নিশি,নিস্তব্ধতায় মেশা অসুখ।জ্যোৎস্না ঢালা অখিলে নেই কোনো নক্ষত্রের মেলা।পবন বইছে তবে হিম।শান্ত সুরে অভিষঙ্গের গোপন বাণী শুনিয়ে গেলো এইমাত্র।নিভৃত রাতের প্রান্তরে হৃদয় জুড়ে অস্থৈর্য।দৃষ্টি উচু টিলার দিকে গেলো।সেথায় স্মৃতিরা সব ভেসে বেড়াচ্ছে।শুধুই স্মৃতি!প্রণয়,পরিণয়।নির্জনতায় প্রেমের ভাষা বিনিময় সেখানেই।রাতের বুকে স্বপ্ন খেলে।ফিরে পাওয়ার আর্জি করে কখনো কখনো।সেই আর্জি বরাবরের মতন খারিজ হয়ে নিঃশব্দ বাতাসে ভেসে আসে বিরহের ধ্বনি আর গোপন কান্না।

গায়ে জড়ানো ধূসর রঙের এক শাড়ি।বাতাসে অচল উড়ছে বাধাহীনভাবে। চুলগুলোও নিজের ঠিক জায়গায় নেই। শশাঙ্ক আজ দুঃখিনীর দুঃখে সঙ্গ দিতে এসেছে।ঠিক মুখ বরাবর স্থির। আলো প্রদানের চেষ্টায় তমাসাবৃত মুখশ্রীতে।প্রতিটি ভারী নিঃশ্বাস বাতাসের সাথে মিশে শীতল।

-“আপনাকে ছাড়া প্রকৃতিও সাজে না…তার প্রেমিক ভারী নিদ্রায় মশগুল”

মিনিট দশেক পর খুশবুর ধ্যান ভাঙ্গে উদ্ভট আওয়াজে।জানালার দ্বারে দাঁড়িয়ে ছিলো এত সময় যাবত।সঙ্গেসঙ্গে ফিরে চাইলো।ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় ভূত দেখার মতোন চমকে উঠলো।চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে যেনো। অবিশ্বাস্য দৃষ্টি থমকে গেছে কিছু সময়ের জন্য সাথে সম্পূর্ণ খুশবু।

নিজের সাথে যুদ্ধে জয়ী হয়তো আফতাব। ভুগতে হয়েছে অনেকটা।মস্তিষ্ক তাড়না দিলেও দেহ সায় দেয়নি।কেমন যেনো বিভ্রমের জগতে ছিলো বসবাস।সব গল্প কর্ণপাত হলেও মস্তিষ্ক সেটাকে দেখাতো আবছা;অস্পষ্ট।আজ সবটা পরিষ্কার হতে না হতেই জোর চালায় নিজের উপর।চোখ খুলে উঠে বসার চেষ্টা করছে।অনেকদিন এভাবে শুয়ে থাকার ফলস্বরূপ অবশ লাগছে সর্বাঙ্গ।তারপরও চেষ্টার কমতি নেই।একটি সময় পড়ে যেতে চাইলে এক দৌঁড়ে এগিয়ে আসে খুশবু।যেকিনা মূর্তির মতন দেখছিল সবটা।এখনও বিশ্বাস হয়নি।যদি এটা কোনো সুন্দর স্বপ্ন হয়?তাহলে যেনো ঘুম না ভাঙ্গে।বাহু চেপে ধরে আফতাব এর।কম্পন ধরলো সারা শরীরে। গলা দিয়ে শব্দ বেরোতে চাইছে না।আফতাব এর নেতিয়ে থাকা নজর তার দিকে ঘুরলে চোখ বেয়ে টলমল করে অশ্রু ঝরতে শুরু করলো।

-“আপ..”

আপনি শব্দটি পূর্ণ করার পূর্বে ভাঙ্গা গলায় ডাক পড়ে,

-“খুশবু”

নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারেনি খুশবু।এতদিনের শক্ত স্তম্ভ বিগলিত হয়।হাউমাউ করে কেঁদে উঠে আফতাবকে অগোছালোভাবে জড়িয়ে ধরে।আফতাব অসহায় শক্তি পাচ্ছে না হাত বাড়ানোর।এমনকি কথা বলার।অস্থির হয়ে উঠছে শুধু চিত্ত।

খুশবু মুখ তুলে গালে হাত বুলায়।হেঁচকি তুলে বলতে লাগলো,

-“আপনি সত্যিই ঠিক হয়ে গেছেন না?বলুন!আমি আপনাকে সত্যিই জাগ্রত দেখছি তাই না?”

আফতাব ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে মাথা দোলায়।ভারী কণ্ঠে বলার চেষ্টা করলো,

-“হ.. হ্যাঁ”

উঠে দাঁড়ায় খুশবু।লাইট অন করে আবার ফিরে এলো।আফতাব এর গাল দুহাতে জড়িয়ে বললো,

-“কিছু লাগবে আপনার?পানি খাবেন?আমি বাবা মাকে ডেকে আনছি…. নাহ সবার আগে নার্সকে ডাকবো।”

ছটফট করে আবারো উঠে দাঁড়ানো খুশবুর হাত ধরে আফতাব।নিজের সঙ্গে অদৃশ্য সংগ্রাম করে অস্পষ্ট গলায় বললো,

-“আপনাকে…লাগবে”

-“আপনি ঠিক আছেন না?বলুন? অল্প করে পানি খান?”

আফতাব মাথা দুলিয়ে না বোধক উত্তর দেয়।মাথা নামিয়ে রেখেছে।চিনচিন ব্যথা মাথার পেছনের দিকে।ভার অনেকটাই খুশবুর দিকে।খুশবু বললো,

-“নার্সকে ডাকি? একটু বসুন এখানে।”

-“উহু!”

খুশবু আরেকদফা হেঁচকি তুলে কেঁদে উঠে। মুখে লেপ্টে অশ্রু রেখা।মুখ ভিজে গেছে পুরোটাই।পাশে বসে চেয়ে রইলো মলিন মুখের দিকে।একটু দেখুক শান্তিমত।আফতাব ব্যাকুল গলায় আবদার করলো,

-“একটু জড়িয়ে ধরবেন?আমি শক্তি…পাচ্ছি নাহ”

চলবে…