তেইশতম বসন্ত পর্ব-২৭+২৮

0
46

#তেইশতম_বসন্ত
পরিসংখ্যা ২৭
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)

-“বন্ধু হিসেবে আজকাল তোর আমার প্রতি মনোভাব ভালো না”

প্রায় এক সপ্তাহ পর ফুডকার্টে এসেছে নোমান।হিসেব বাকি।লাভের চেয়ে লসের পরিমাণ বেশি।তবে পথে ঘাটে থাকা অভাবী মানুষকে অন্তত খাওয়াতে পারছে তাই ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিলো।এই খবর বাড়ি অব্দি যায়নি।গেলে হয়তো মা ভীষণ রাগ করতেন।নিজের জমানো টাকা কোনো রকম ইনভেস্ট করছে।কপালে ভাঁজ ফেলে হিসেব করতে থাকা নোমান থেমে যায়।ফাহাদের কন্ঠস্বর শুনতে পাবে কখনো ভাবেনি।তাও আবার এই রাত দশটায়। সিলেট শহরে। ঘুরে তাকায় নোমান।মুখে হাসি জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে ফাহাদ।তাকে ডেকে বসতে বললো।তার কথার বিপরীতে জানতে চাইলো,

-“তোর এমনটা মনে হওয়ার কারণ কি?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফাহাদ বলে,

-“আগে কল করলে ধরতি।ধরতে না পারলে অন্তত কল ব্যাক করতি।মেসেজ করে খোঁজ খবর নিতি।আমি আগের নোমানকে খুব মিস করি।যে এখন তুচ্ছ কারণে বদলে গেছে।”

হাতের কলম রেখে দিলো নোমান।চাইলো ফাহাদের দিকে সরু দৃষ্টিতে।এই ছেলেটা ভালো।তার খুব ভালো একজন বন্ধু।যদিও পেয়েছে সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে তবে মনে হয় যেনো ছোটোবেলা থেকে একসাথে।আজ তাদের মজবুত সম্পর্কে এক রকমের ঘোলাটে ভাব চলে এসেছে।

ফাহাদ নোমানের মুখের দিকে চেয়ে বললো,

-“আমি এটাও জানি আমাদের মধ্যকার কোল্ড ওয়ার এর কারণ নেহা”

কতবার এড়িয়ে যাবে নোমান। এক না একদিন সরাসরি বিষয়গুলো সামনে আসারই ছিলো।আজ গম্ভীর রুক্ষ নয় মলিন হলো মুখ।বোনকে ভালোবাসে ভীষণ।প্রকাশ করা হয়নি কখনও তবে চিন্তা লেগেই থাকে।নেহার বয়সটাই আবেগের;ভুল করার।সাবধানতা ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলবে তাকে।

-“আমার উপর প্লিজ রেগে থাকিস না।আমরা কথা বলি খোলামেলাভাবে?একটা কনক্লুশোনে আসি।এভাবে এক অপরের থেকে চোখ লুকিয়ে কতদিন নোমান?”

মাথার উপর হরিদ্রা বর্ণের বাল্ব ক্ষণিক প্রভা ছড়াচ্ছে।আশপাশ অনেকটাই জনমানব শূন্য।যে যার কাজ শেষ করে ঘর মুখো।সেখানেই আলাপে বসে দুজন বন্ধু।বন্ধুত্ব সাত থেকে আট বছরের। নোমান শ্রান্ত কণ্ঠে শুধায়,

-“বল।কি বলতে চাস?”

-“আমি তোকে দোষ দিচ্ছি না বন্ধু।তোর জায়গায় আমি থাকলে ঠিক এই কাজটাই করতাম।আমার আগে তোর বোন।বোনের কাছে আমি ফাহাদ খুবই ঠুনকো একটা জীব।কিন্তু একটা প্রশ্নের জবাব দে হ্যাঁ অথবা না-তে?”

-“কর”

-“আমাকে দেখে তোর কি মনে হয়?আমি খারাপ ছেলে?নেশা পানি করি?”

আশ্চর্য হলো নোমান।হুট করে এসব কথা কেনো? ভ্রু দ্বয়ের মধ্যে ভাঁজ ফেলে বললো,

-“এসব কেনো বলছিস?”

-“কারণ আছে!তুই উত্তর দে।আমাকে তুই চিনিস সাত আট বছর যাবত।আমার ছোট থেকে ছোট বিষয় তোর অজানা নয়।মনে আছে একটা মেয়েকে আমি পছন্দ করেছিলাম?তাকে যে এক বছরেও প্রোপোজ করতে পারিনি ভয়ে?আবার মনে আছে এক ছেলেকে মেরেছিলাম?”

-“মেরেছিলি কারণ সে রাস্তায় তোর বোনকে আজেবাজে কথা বলেছিলো।”

-“মারামারিতো একটা খারাপ কাজ তাই না?”

-“আশ্চর্য ফাহাদ! বোনের জন্য করেছিস প্রোটেক্ট করেছিস তাকে।তার কান্না তুই সহ্য করতে পারিস নি।এতে খারাপ কিছু আমি দেখছি না।”

ফাহাদ নোমানের দিকে চেয়ে বললো,

-“তোর বোন আমাকে ভালোবাসে”

বিষম খেয়ে গেলো নোমান।এভাবে সরাসরি স্পষ্টভাবে কথাটি তার কর্ণপাত হবে সে আশা করেনি।মস্তিষ্কের তাড়না বুঝে উঠতে পারলো না।একদিকে বোন হলে অন্যদিকে বহু দিনের বন্ধুত্ব।নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে নোমান প্রশ্ন করলো,

-“আর তুই?”

-“আমি ওর মন ভাঙতে চাই না।”

বারবার বাকহারা করে ফেলছে ফাহাদ তাকে।থেমে থেমে যাচ্ছে কথার জবাবে।ক্ষণিক বাদে আবারো প্রশ্ন করলো,

-“কিভাবে মন রাখতে চাস?”

-“যদি তুই নিজ হাতে তোর বোনের দায়িত্ব আমাকে দিস।যত সময় আর পরীক্ষার প্রয়োজন আছে নিতে পারিস।যেভাবে আমাকে পরখ করতে চাস করতে পারিস। আফটার অল তোর বোনের জীবনের ব্যাপার।বন্ধু হিসেবে না দেখে আমাকে মানুষ হিসেবে যতবার বিচার করতে চাস কর!”

-“মাথা ঠিক আছে তোর ফাহাদ?”

-“আছে! সজ্ঞানে কথাগুলো বলতে এসেছি তোকে।এক না একদিনতো বিয়ে দিবিই।সেটা যদি….”

যত সাহস ছিলো দেখিয়ে ফেলেছে।আর বাকি নেই।বলতে পারলো না ফাহাদ বিয়েটা আমার সাথেই দিক।বন্ধুর দিকে আবারো এক দৃষ্টিতে চেয়ে।ফাহাদ নিজেকে সামলে বলতে লাগলো,

-“আমাদের বয়সের গ্যাপ বেশি।এটা নিয়ে তুই চিন্তিত?”

গম্ভীর গলায় নোমান জবাব দিলো, -“না”

-“তাহলে?”

-“আমি কোনো কিছু নিয়েই চিন্তিত না”

-“এখনো নিজের পায়ে দাঁড়ানো বাকি নোমান। হয়তো তোর বোনের যোগ্য হওয়া হয়নি তাই না?”

রেগে গেলো নোমান।বললো, -“আলতু ফালতু বকবি না।নিজেকে আমার সামনে ছোট করছিস!তুই কি ভেবেছিস আমি তোর যোগ্যতা সম্পর্কে অজ্ঞ?”

-“রেগে যাচ্ছিস কেনো?আমি বলেছি আমি পাত্র হিসেবে অযোগ্য”

নোমান উঠে দাঁড়ালো তড়াক করে। হাঁটতে লাগলো ফাহাদের সাথে।কিছু সময়ের নীরবতা শেষে নোমান বললো,

-“মন মেজাজ ভালো না কিছুদিন যাবত।মাইন্ড ফ্রেশ করা দরকার। কাল চলে আসিস জাফলং এর দিকে যাবো।”

ফাহাদ অবাক চোখে চাইলো নোমানের দিকে।কখনো কখনো এই ছেলেটাকে বোঝা ভারি মুশকিল।এইতো চুপ ছিলো আবার রেগে গেলো।এখন আবার ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছে।ফাহাদের হতভম্ব দৃষ্টিতে নোমান লম্বা হেসে বললো,

-“কি?নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে চাইছিস?ভালো ছেলেরা রাত বিরাতে ঘরের বাহিরে ঘুরাফেরা করেনা।বাড়ি যা।আমিও যাচ্ছি হলে”

_________

সেনাবাহিনীর শর্ত এবং নিয়মাবলী অনুযায়ী কোনো সেনা সদস্য ইঞ্জুরি হওয়ার পর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা পুরোপুরি স্থিতিশীল না হলে সে পূনরায় যোগদান করতে পারবে না।আবারো ট্রেনিং পিরিয়ড এর মতন তাকে ফিটনেস টেস্ট দিতে হবে।নিজেকে দুইমাস সময় দিয়েছে আফতাব।একজন সেনা সদস্যের জীবন নিয়মনিষ্ঠা এবং কসরত আর মধ্যে থাকে সবসময়।বিগত দিনগুলোর মধ্যে নিজেকে পুরোপুরি ফিট রেখেছিল আফতাব।সেই কাজগুলো তাকে প্রেরণা যোগায় অনেকাংশে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যয়াম এবং মানসিকভাবে অটল করে নিজেকে।আজ তাকে যেতে হবে ফিটনেস টেস্ট এর জন্য।কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা হবে তার। অতঃপর আবারো জয়েন করতে পারবে কাজে।তাকে ছাড়া তার টিমটাও অনেকটা নড়বড়ে।একজনের সাথে এতদিনের কাজের তালমেল হুট করে এভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়া ব্যাপারটা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদেরও।

-“খুশ?আমার ইউনিফর্মটা আয়রন করেছিলেন?”

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে আফতাব।আয়নায় দেখা যাচ্ছে ঠিক তার পেছনে বিছানায় খুশবুর অবস্থান।বসে বসে কোনো ফন্দি আটছে নিশ্চয়ই।মেয়েটাকে খুব গভীরভাবে চিনে গেছে আফতাব।নখ কাটতে থাকা খুশবুর মধ্যে চলতে থাকা কোনো দুষ্টু বুদ্ধি খেলছে হয়তো।

আফতাব চুল মুছে ফিরে এলো।অন্যমনস্ক খুশবুর দিকে সামান্য ঝুঁকে আলতো করে চুমু খায় গালে।ইচ্ছেকৃত ফিসফিস করে বললো,

-“এতো প্ল্যানিং করবেন না।একটু পর সেটা বানচাল হয়ে যাবে।”

ধড়ফড়িয়ে উঠে খুশবু।আফতাব বিনিময়ে হেসে উঠলো।বললো,

-“আমার ইউনিফর্ম?”

-“হারিয়ে গেছে” কাটকাট জবাব দিলো খুশবু।

আফতাব আরেক দফা হাসে।বলে,

-“এতো মহা মুশকিল!এখন কি করা যায় বলুনতো?”

বলেই হাটা দিলো।দরজার পেছনের হ্যাঙ্গারে কাপড়ের নিচে লুকিয়ে রাখা ইউনিফর্মটা বের করে বললো,

-“পাচ্ছি না যে?আসলেই হারিয়ে গেলো?কি করবো এখন খুশরানী?”

খুশবু দৌঁড়ে এলো এক প্রকার। শাড়িতে পা আটকে পড়ে যেতে চাইলে আফতাব ধরে ফেলে সাথেসাথে।পাঁচ মাস চলছে তার প্রেগন্যান্সির।সেদিকে তার কোনো খেয়াল আছে?আফতাব কিছুটা উচ্চস্বরে বললো,

-“খুশবু!পাগল আপনি?এভাবে দৌঁড়ে আসার কি খুব প্রয়োজন ছিলো?”

আফতাব এর কথার গুরুত্ব না দিয়ে ইউনিফর্ম টেনে নেয় নিজের কাছে।একই গতিতে পিছনে হটে গিয়ে বললো,

-“আমি দিবো না আপনাকে যেতে।একদম দিবো না!ওটা কাজ না একটা মরণ ফাঁদ!আমি আপনাকে যেতে দিবো না”

-“এসব বলতে হয়না। ইউনিফর্ম দিন দেরি হচ্ছে আমার।”

জোরে চেঁচায় খুশবু।বলে, -“নাহ!আপনার চাকরি করা লাগবে না আর”

আর নিজেকে নরম রাখতে পারলো না আফতাব।রাগ কালেভদ্রে মাঝেমধ্যে আসে।আজ এসেছে। রাশভারী গলায় খুশবুর দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,

-“আমার কাজে আমার যেতে হবে”

-“দিবো না আমি”

-“খুশবু!”

-“না মানে না”

-“আস্তে কথা বলুন!বাড়াবাড়ি হচ্ছে এবার।”

আফতাব এর রাগান্বিত মুখশ্রী প্রথমবারের মতন চোখে পড়ে।সবসময় তাকে মনে মনে খুশবু উপাধি দিয়ে বেড়াতো ‘কুল এন্ড কাম ক্যাপ্টেন’।তবে আজ আবহাওয়া ভিন্ন। উচ্চস্বর তার সাথে তেজী ভঙ্গিমা।

-“আপনি”

-“খুশবু আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি।ভীষণ।কিন্তু এর মানে এই নয় আপনার অহেতুক জেদ আমি মেনে নিবো।মানুষ ততদিন বাঁচবে যতদিন তাদের জীবন এই পৃথিবীতে নির্ধারিত।একদিন বেশি অথবা একদিন কম নয়।এর মানে কি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে মানুষ?”

কথাগুলো হৃদয়ে বিধছে।নিজের দিক থেকে নিজেকেই ঠিক মনে হচ্ছে খুশবুর।সে চায় না কোনোভাবে আর কোনো বিপদ হোক।সেই যুক্তি আফতাবকে দিয়ে বললো,

-“তাই বলে সাবধানতা অবলম্বন করবেন না?ভুলে যাবেন না আপনি এখন একা নয়।আপনার সন্তানও আসছে।”

-“জানি আমি!অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবো।কিন্তু সব ছেড়ে ঘরে বসে থাকা কোনো সলিউশন না।”

-“আমার কথাও ফেলে দিবেন?”

-“আপনি চাইল্ডিশ বিহেভ করছেন।আপনি চঞ্চল তবে যথেষ্ট স্ট্রং আর ম্যাচিওর ছিলেন খুশবু।এখন কি হলো?আমাকে আমার কাজ থেকে দূরে সরিয়ে ফেলতে চাইছেন?এটা কোনোভাবে সম্ভব?”

-“আপনার কাজ আপনাকে আমাদের থেকে দূরে রাখে তার বেলায়?এত বড় একটা বিপদ গেলো তারপরও আপনার এত সাহস?”

-“আমার বাবা,মা আপনি আমার সন্তান আমার কাছে যতটা ইম্পর্ট্যান্ট ততটাই আমার পেশাও।আপনার সব ইচ্ছে,সব আবদার,অভিমান,রাগ সব মাথা পেতে নিয়েছি এবং নিবো।তবে এই কথাটা আমি রাখতে পারবো না।”

গরগর করে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। ঠোঁট কাপছে খুশবুর।আফতাব এর আচরণ এই অবস্থায় আরো বেশি হৃদয়ে প্রভাব হানে।চোখের জল থামার পরিবর্তে আরো বাড়তে থাকলো। পেটে হাত রেখে জানলার পাশে থাকা চেয়ারে গিয়ে বসে।মুখ ঘুরিয়ে।আফতাব চোখ বুজলো শক্ত করে। দাঁতে দাঁত চেপে নিবারণ করতে চাইলো হুট করে মাথায় চড়ে বসা রাগটা। ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে।কল আসছে একের পর এক।নিচে জিপ রেডি। আফতাব দ্রুত গতিতে কাপড় বদলে এক পলক চাইলো খুশবুর দিকে।কিছুটা এগিয়ে এসে বললো,

-“আসি”

জানা আছে উত্তর আসবে না। এলোও না।নির্বিকার খুশবু।গাল বেয়ে শেষ ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুর। হাত বাড়ায় আফতাব। বৃদ্ধাঙ্গুল এর সাহায্যে মুছে নিলো।আর বললো,

-“ভুল করছেন…নিজেকে নিজেই কষ্ট দিচ্ছেন।আসি”

বলে চলে যায় আফতাব। খুশবু যাওয়ার সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়।জানালার পর্দার পেছনে নিজেকে আড়াল করে দেখতে লাগলো আফতাবকে।লোকটা বারবার উপরে চাইছে। খুশবুকে দেখার লোভে নিশ্চয়ই?তবে দিবে না দেখা।আজকের এই ব্যবহারের বিনিময়ে শাস্তি তাকে দিবেই।আফতাব আশাহত হয়ে জিপে চড়ে বসলে খুশবু বললো,

-“সাবধানে যাবেন অসভ্য লোক আর সহি সালামতে ফিরে আসবেন আমার কাছে।তারপর আপনার আর্মিগিরী ছাড়াবো আমি।”

_________

-“আপনাকে রাজনীতি বিষয়ক জ্ঞান দিচ্ছি বিগত কয়েকমাস যাবত অথচ জানলাম না আপনি কে?”

সামনেই বাইকের উপর বসে আছে নোমান।ফোনের দিকে তার মনোযোগ পূর্ণ।আশপাশের কোলাহলের দিকে তার কোনো প্রকার মনোযোগ নেই। ফোনে কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে সেটাও অজানা নয়।জিনিয়া হেসে ক্যাম্পাসে হাঁটতে হাঁটতে জবাব দেয়,

-“আমি কে সেটা জেনে কি হবে?”

-“রাজনীতি তো আর চুপিচুপি হয়না।এখানে অনেক এক্টিভিটিস আছে।যেখানে আপনাকে অংশগ্রহণ করতে হবে।আমিতো আপনাকে বেসিক ক্লিয়ার করলাম।”

-“বেসিক আর ক্লিয়ার করলেন কোথায়?একদিন মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে সাতদিন উধাও।এভাবে ইগনোর করছেন আমায়?সাহায্য চেয়েছি বলে এত ভাব?”

দূর হতে নোমান এর হাস্যোজ্জ্বল মুখটা দেখতে পেলো।ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। নিশ্চয়ই তার মেসেজের বিনিমনে ফুটেছে এই হাসি। জিনিয়া চেয়ে রইলো।হাসতেও জানে ব্যাটা? বাহ!চমৎকার। নোমান মেসেজের বিপরীতে বললো,

-“আপনার সাথে প্রতিদিন কথা বলতে হবে,সেটা বলছেন?”

-“বললে বলতেই পারেন”

-“এই আপনার মতলব কী বলেনতো?ট্র্যাপে ফেলতে চাইছেন নাতো?”

-“আশ্চর্য্য ট্র্যাপে ফেলবো কেনো?”

-“চাইলেও পারবেন না।এই নোমানের হাত বেশ ভালোই লম্বা।ঝামেলা করবেন ঝামেলা হবে।”

-“আমি কি ঝামেলা করবো আপনার সাথে? আমারতো বয়েই গেছে তাই না?কাউকে বুঝানো,সাহায্য করাও এক প্রকার মানবতা,জনসেবা।আপনি সেটা করতে গিয়েও আমাকে সন্দেহ করছেন।এসব কি ঠিক?”

নোমান পূনরায় হাসলো। বললো, – “আমি কখন বললাম সন্দেহ করছি?”

-“কথার ধাঁচ সেটাই বলে।”

-“ঠিক আছে দেখা দিন তাহলে।আসুন আমার সাথে মিটিং মিছিলে যোগ দিন।নিজেকে প্রমাণ করুন।আমি ভুল হলে কোনো প্রকার ইগো ছাড়া আপনার কাছে ক্ষমা চাইবো।”

_________

-“আপনি আমাকে অবহেলা করেন।”

আবারো অভিমানীর অভিমান জমেছে। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে নিজেই ফোন করলো আর নিজেই অভিমান করে মুখ ফুলাচ্ছে।ফাহাদ অফিসের ফাইল রেখে ইজি চেয়ারে পুরো শরীর এলিয়ে দিয়ে বলে,

-“তোমার ভাইকে অনেক কষ্টে পটিয়েছি জানো।যদি সে জানতে পারে তুমি রাত বিরাতে আমাকে বিরক্ত করো তাহলে দুঃখ পেতে হবে চিরকাল।”

-“এর মানে আমাদের বিয়ে হচ্ছে তাই না?”

অভিমান ছাই!কণ্ঠে উৎফুল্লতা এলো।ফাহাদ প্রশ্ন করলো,

-“এভাবে একটা পুরুষকে বিয়ের কথা বলতে লজ্জা করেনা?”

-“নাহ”

-“আমার করে।আর আমার লজ্জা হলে যে লজ্জা দিয়েছে তাকে একটা ঠাটিয়ে চড় দেই।খাবে নাকি?”

-“না”

-“তাহলে গুড গার্ল এর মতন ফোন রেখে ঘুম দাও।আগামীকাল ভার্সিটি আছে না?”

নেহা মলিন সুরে বললো, -“হুম”

-“ঘুমিয়ে পড়ো মেয়ে।সামনে অনেক সুযোগ পাবে ফেস টু ফেস কথা বলার।”

ফোন রেখে দিল নেহা।সে বাধ্য কথা শুনতে।যে পর্যন্ত তাদের বিয়ের শুভক্ষণ না আসে সেই অব্দি।ফোন কেটে মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ বুলায় ফাহাদ।নেহার একটি ছবি ভাসছে সেখানে।আনমনে হাসলো বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁয়ে।মনে মনে বললো,

-“নিব্বি টাইপ মেয়েটাই আমার কপালে জুটতে হলো?”

চলবে…..

#তেইশতম_বসন্ত
পরিসংখ্যা ২৮
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)

‘দেখা না দিলে বন্ধু,কথা কইও না’ গানের লিরিক্স এর সাথে মিলে মিশে যাচ্ছে জিনিয়ার পরিস্থিতি।এতদিন এই বেনামী ভদ্রমহিলা সেজে নোমানকে জালে ফেলার চিন্তাধারাটা ভেস্তে যাবে মনে হয়। দেখা না দিলে কোনো প্রকার কথাবার্তায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সে।আর দেখা দিলে একে অপরের সাথে কুরুক্ষেত্র ঘটবে তার বেলায়? মিসাইল ছুড়াছুড়িও হতে পারে।ভাবনায় ছেদন ঘটে সুপরিচিত গলার কন্ঠে,

-“তুই কি এখনও নোমান ভাই এর ব্যাপারটা নিয়ে পড়ে আছিস?”

-“পড়ে নয় দাঁড়িয়ে আছি বান্ধবী”

সীমা বিরক্ত হয় জিনিয়ার উপর।কিন্তু ওর সঙ্গ ছাড়া আর ভালোও লাগেনা।কি করবে?বন্ধুত্বের বন্ধনে ফেঁসে গেছে।জিনিয়া থেকে জেনে নিলো সবটা।সব শুনে হতবাক সীমা। বান্ধবীকে খুঁচিয়ে বলতে লাগলো,

-“ এহম! এহম! এই প্রতিশোধ যেনো আবার প্রেম অব্দি না গড়ায়”

শিহরিত ক্ষণকাল এর জন্য জিনিয়ার কায়া।পরপর নিজস্বতায় ফিরে এলো অকপটে।চোখে মুখে বিতৃষ্ণা ফুটিয়ে বললো,

-“অসম্ভব!”

নোমানের দলবল যাচ্ছে হেঁটে সামনে দিয়ে।অজান্তেই চোখ খুঁজতে লাগলো নোমানকে।ভিড়ের মাঝে ভিআইপি ট্রিটমেন্ট পাওয়া লোকটা।মধ্যমণি হয়ে জিনিয়ার চোখের আড়ালে।তার দুপাশে অনেক মানুষ।ঢেকে আছে তাদের দেহের অন্তরালে। চঞ্চল চোখ জোড়া কেনো খুঁজলো নোমানকে?এই উত্তর চাচ্ছে আপাতত জিনিয়া নিজের কাছেই।

মাঝরাতে ফাহাদের ফোনে ফোন এসেছে নোমানের।অজানা ভয় হানা দেয় ফাহাদের মনে। সর্বপ্রথম নেহাকে নিয়েই।দ্রুত হাতে ফোন রিসিভ করতেই নোমান প্রশ্ন করলো,

-“ডিস্টার্ব করলাম বন্ধু?”

-“ডিস্টার্ব করছিস কিনা জানতে চাইছিস?এত ভদ্র হয়েছে নেতাসাহেব?”

হল রুমের বারান্দায় একা বসে আছে নোমান। পা জোড়া রেলিংয়ের উপরে ঠেকানো আর দেহ শক্ত স্টিলের চেয়ারে।বন্ধুকে ফোন করেছে জরুরি তলবে।নয়তো এত রাতে কল করার প্রশ্নই উঠেনা।ছেলেদের মাঝেও কথা শেয়ার করার প্রবণতা আছে। ফাহাদকে না বলে যেনো জান যায় যায় অবস্থা।

নোমান ফাহাদের কথার বিপরীতে হেসে বলে,

-“না ভাবলাম ঘুমিয়ে গেছিস। তোর তো সকালে অফিস।”

-“কিছু কাজ ছিলো রে..সেগুলো শেষ করে ঘুমোতেই যাচ্ছিলাম” ফাহাদ উত্তর দিলো।

নোমান ফাহাদের কথার বিপরীতে বলে, -“ওহ”

-“কিছু কি হয়েছে?”

বর্তমানে ফাহাদ চৌধুরী নামক মানুষ বার্তালাপনে বেশ সংকীর্ণ।সংশয়াপন্ন প্রতিরূপ।ভয়ে ভয়ে থাকে বুঝি? আচ করতে পারে নোমান।নেহার কারণেই এরূপ আচরণ তার।নিজের বোন যেহেতু তাই জ্বালালো না।নোমান স্বাভাবিক গলায় বললো,

-“কিছুই হয়নি”

নিঃশব্দে ঠান্ডা নিঃশ্বাস ফেলে ফাহাদ।প্রশ্ন ছুঁড়ে,

-“আচ্ছা বল কি বলতে কল করেছিস?”

-“একটা মেয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছি”

ফাহাদ আশ্চর্যান্বিত।মেয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চাইছে?সেটাও নোমান?এত অলৌকিক ঘটনা।উৎসাহ বাড়লো।বললো,

-“বলতো ঘটনা কি?”

-“ঘটনা তেমন কিছুই না।কিছু মাস যাবত একটা মেয়ের সাথে আমার আলাপ।মেয়েটা রাজনীতি করতে চায় বলে আমাকে নক করেছিলো।আমি জানি রাজনীতি ফাজনীতি ওসব কিছুই না।শুধু একটা ছুতো মাত্র।সে মূলত আমার সাথে কথা বলার ধান্দায়।”

অতি আগ্রহী হয়ে ফাহাদ প্রশ্ন করে,

-“তারপর?”

-“তারপর কি?যে উদ্দেশ্যে মেসেজ করেছিলো সেই ব্যাপারে তেমন কোনো কথাই বলেনা সে। আগডুম বাগডুম কথা। বেশিরভাগই আমার জীবন নিয়ে।”

-“তুই ওই মেয়েকে চিনিস?দেখেছিস?”

-“না আমি ওর পরিচয় জানি না।কিন্তু এতটুকু জানি সে আমাদের ক্যাম্পাস এরই আর আমায় খুব ভালো করে চেনে।”

ফাহাদ আকস্মিক হাসে।হেসে দুষ্টুমিপূর্ণভাবে বলে,

-“দেখিস আবার মেয়ে রূপী ছেলে নাতো!”

-“আমার মনে হয়না ছেলে।ছেলেদের কথার ধাঁচ ঝাঁঝ অন্য।একটু ভালোভাবে অবজার্ভ করেছি আমি ওকে।এখন বললাম আমার সাথে সরাসরি দেখা করতে।সে আমার প্রেমিকার মতো আমাকে দু চারটে কথা শুনিয়ে অভিমান করলো।আমি সাথেসাথে মেসেঞ্জারে কল করি।আমার সব কথার উত্তরে শুধু ‘হুম হুম’ করলো।পূর্ণ কোনো বাক্য বলেনি। কন্ঠটাও বুঝতে দিলো না মেয়েটা।”

নোমান এর গলায় উৎফুল্লতা।কথা বলার ধরন অন্যরকম।ফাহাদ কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো।বললো,

-“সে হয়তো তোকে পছন্দ করে”

-“কি জানি?”

-“তুইও পা পিছলে পড়ছিস ধীরেধীরে বন্ধু”

_________

নেহার ভার্সিটির ক্লাস শুরু হয়েছে বেশকিছুদিন হলো।নতুন নতুন জায়গা নতুন মানুষ।সাথেসাথে নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে।নেহা চরিত্রটা মিশুক।কয়েকদিনে বেশ সংখ্যক বন্ধু জুটিয়েছে।এদের সাথেই ভার্সিটির সময় হেসে খেলে পাড় হয়।মেয়ে বন্ধুর পাশপাশি ছেলে বন্ধুও আছে।তারা একত্রে একটা ছবি ফেসবুকে আপলোড করা হলো।দুয়েক মিনিটে সেই ছবিটি ফাহাদের নজরে পড়ে।অফিসে বসে মাত্রই কাজ শেষ করে কিছু সময়ের বিশ্রাম করছিলো ফাহাদ।ফোন হাতে তুলেছিলো।ঠিক তখনই ছবিটি নজরে আসে।ফোন সামনে ধরে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।সাথেসাথে ফোন করে নেহাকে।ফাহাদের কল এই সময় দেখে আশ্চর্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে নেহা।হাসিমুখে ফোন রিসিভ করে বলে,

-“হ্যালো”

-“কোথায় তুমি?”

-“আমি ক্যাম্পাসে”

-“ক্লাস শেষ?”

-“সেতো কখনই শেষ”

-“তো কার চেহারা দেখছো ক্যাম্পাসে বসে?বাড়ি যাও এক্ষুনি।বাড়ি গিয়ে আমাকে কল করবে।”

ফাহাদের দাম্ভিক কন্ঠস্বরে ভীতু হয় নেহা।হুট করে তার আবার কি হলো?নেহা পোটলাপুঁটলি বেঁধে দৌড় লাগালো বাড়ির উদ্দেশ্যে।বাড়ি গিয়ে এক সেকেন্ড দেরি না করে ফাহাদকে ফোন করে।ফাহাদের গলার স্বর আরো তেজি হয়।বলে,

-“ভার্সিটিতে গিয়ে এখনই পাখা গজিয়েছে তোমার?”

-“কি করেছি?”

-“কি করেছো? জানো না? ফেসবুক এর ছবিতে তোমার দুপাশে দুজন ছেলে ঘেঁষে দাঁড়ানো। মানে কি এসবের?ফাজলামো করো!”

-“আরেহ ওরা আমার পেছনে ছিল।ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলো না।”

-“এসব আমি শুনতে চাচ্ছি না।ছিলো কিনা বলো? ছিলোতো?সেটাই কেনো থাকবে?”

-“আপনি এমন করে কথা বলছেন কেনো?”

-“মনে রং লেগেছে আমার তাই বলছি।”

নেহার মাথার কয়েকশত ফুট উপর দিয়ে যাচ্ছে কথাগুলো।কেনো রাগ করলো বলেছে।সামান্য একটা ছবি নিয়ে এমন করছে?ফাহাদের রাগী কন্ঠটাও শুনে নিলো।জবাব দিতে চাইলো,

-“আচ্ছা আর….”

-“আই ওয়ার্ন ইউ নেহা।নেক্সট টাইম এমন কিছু আমার চোখে পড়লে অথবা আমার চোখের আড়ালে এমন কিছু হলে আমাকে আর কল করবে না কখনো।”

-“করবো না মাথা ঠাণ্ডা করুন”

লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে ফাহাদ।বেশি হাইপার হয়ে গিয়েছিল।শক্ত করে চোখ বুজে আবার খুলে।বলে,

-“মাথা ধরেছে আমার।রাখি”

________

অভিমানী হৃদয়,শব্দহীন ক্ষপা যামিনীর সঙ্গীত।ভাবুক চোখে স্বর্গ দেখে স্তিমিত নয়নার বিবৃতি বুঝলো না? অন্তরের কাকুতি ভয়ে ভয়ে জর্জরিত।নিঃশব্দে আসে, নিঃশব্দে যায়।অভিমানের ছায়া অনুত্তর বহমান।আকাশে নীরদ জমে পবনে দুঃখের বাঁশরী বাজিয়ে।ঘোলাটে হয়ে উঠা চক্ষু জোড়া প্রতিক্ষারত।প্রত্যাবর্তনে মৃদু উৎফুল্ল হবে চিত্ত।
আড়ালে তার দৃষ্টি অভিমান মুছে দিবে। আসবে সুখেরক্ষণ।

-“বউ?”

সর্বাঙ্গ ঢাকা পড়েছে চওড়া দেহের ভাজে।মুখ সম্মুখে একগুচ্ছ ক্যামেলিয়া ফুল। ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা মানবের দেহ ঘ্রাণ মাখলো ঘানেন্দ্রিয়তে। চোখ বুঁজে আসে সমীপে।বন্ধন গাঢ় হলো।একহাতে ফুল অন্য হাত উদরে অবস্থানরত।

-“পুষ্পের মহলে শুনলাম আমাদের প্রেমের চর্চা চলছে।আমার ভারাক্রান্ত মুখ দেখে তারা জানতে চাইলো কেনো আধাঁর ঘনিয়েছে আমার মুখে?”

খুশবু চোখ খুলে। আড়চোখে চায় আফতাব এর দিকে। ইউনিফর্ম এর বুকে লাগানো নেম ট্যাগটা তার পিঠে লাগছে।আফতাব খুশবুর গালে গাল মিশিয়ে বললো,

-“তাদের জানালাম আমার ফুলের অভিমান হয়েছে”

একটু থেমে আবার বললো,

– “ভাবনায় পড়লো তারাও।একে অপরের সঙ্গে আলোচনায় বসলো।কি করে সমাধান করা যায়?”

আবারো খুশবুর আড়চোখে চাওয়া দেখে আফতাব ধরেই দিলো খুশবু জানতে চাইছে।জানতে চাইছে কি হলো এরপর?

আফতাব কোমল কপোলে ঠোঁটের ধীর বিচরণ চালিয়ে গভীর গলায় বলতে লাগলো,

-“পুষ্প মহলের মহা আলোচনার পর তারা আমার হাতে ধরিয়ে দেয় এক গুচ্ছ ক্যামেলিয়া। লোকে বলে বউকে ফুল দিতে।এতে সম্পর্ক ভালো থাকে।আমি তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে নিয়ে এসেছি”

খুশবু ঝড়ো নিঃশ্বাস ফেলে।হাসি পাচ্ছে এই আগডুম বাগডুম গল্পে।সে কি তাকে বাচ্চা পেয়েছে?কিন্তু রাগ এখন এই সময় হাসা বারণ। আফতাব ফুলগুলো খুশবুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,

-“অসময়ের ক্যামেলিয়া আমার ক্যামেলিয়ার জন্য।গ্রহণ করুন আর এই অধমকে ক্ষমা করুন।”

-“গ্রহণ করলাম তবে ক্ষমার আবেদন বরখাস্ত করা হলো”

অধরজোড়া থাকে কানের লতিতে। ধীমা কন্ঠ বলে,

-“তারা আমাকে যাওয়ার পূর্বে বলেছিলো এই যে অভিমান?অভিমানে আরো শক্ত হবে সম্পর্ক।ভালোবাসা গভীর হবে।সম্পর্কে শুধু প্রেম থাকলেই হয় বলুন?একটু রুষ্টতা,একটু অভিমানেরও দরকার আছে”

চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত ফুলে থাকা মুখখানা।এত ভারী অভিমানী মুখ।মা হওয়ার পূর্বে বদলে যাওয়া মুখশ্রী। পরিবর্তন এসেছে চলাচলে।আরো মনোমুগ্ধ শোভা পাচ্ছে চেহারায়।আদুরে গলায় আফতাব জানতে চায়,

-“প্রিয়তমা?অভিমানীর সুরে বলো কী দোষ করেছি?
বুকের মাঝে লুকানো যত কথা উন্মুক্ত করো।”

বুকে স্রোতস্বিনী প্রেম পুরুষের প্রতিটি কথা।না চাইতেও রাগ দেখাতে পারছে না। গলে যাচ্ছে অভিমান। উত্তপ্ত সংস্পর্শে শীতল অনুভূতি? এ আবার কেমন কথা? মিষ্টি অস্থিরতা শুরু হলো।আফতাব খুশবুকে মুখ বরাবর ঘুরিয়ে নিলো। থুতনিতে হাত রেখে নুয়ে থাকা মুখ তুলে ধরে।খুশবু চাইলো দেখতে।যাওয়ার সময় তাকায়নি তার দিকে ঠিক মতো।পূনরায় ইউনিফর্ম এ কেমন দেখাচ্ছে তাকে?ঠিক আগের মত সুন্দর?আফতাব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

-“অভিমানী চোখে চেয়ে আমি যেন হারিয়ে যাই সৃষ্টির পীঠে।”

-“এতো কথা বলবেন না!”

মিথ্যে রাগ দেখিয়ে এবার জবাব দিলো খুশবু।রাগে নাক ফুলায় বারবাব।আফতাব থামলো না।বরং হাসলো। খুশবুর ডান হাত ধরে বুকের বামপাশে রেখে বললো,

-“তুমি তো জানো হৃদয়ের কথা, কতটুকু গভীর আমার ভালোবাসা?তোমার স্পর্শে জীবন যেন এক অপার্থিব আশা।তোমার অভিমানী মুখশ্রীতে মনের ভাঙ্গা সেতু গড়ি নতুন করে।বলো কেনো এত আসক্ত তোমার প্রতি?

মুখখানি কালো খুশবুর। হাসি বিনা প্রাণহীন দেখাচ্ছে।তবে এই নেত্রদ্বয়? গভীরতায় হারাতে চাইছে এই চোখের।এরূপ আকস্মিক ঝড়ের কারণ কি হৃদয়ে?রাগের পরশ যেনো ভস্ম করছে। দ্বিধায় পড়ছে আফতাব।অভিমান ভাঙাবে?না এভাবেই থাকুক।এই শ্রীটাও দেখতে ভীষণ সুন্দর।

দুজনের মধ্যে ফুলগুচ্ছ।খুশবু হাত দিয়ে ফুলগুলো নড়াচড়া করতে করতে বললো,

-“আমাকে রাগও করতে দিবেন না আপনি?”

-“করুন…একটু দেখি?”

চোখ তুলে চেয়ে জানতে চাইলো, – “কি?”

-“আপনার রাগী মুখ।”

-“তাহলে নিয়ম করে রাগ করবো।আর আপনি দেখবেন।”

একটি ফুল নিয়ে খুশবুর কানে গুঁজে দিলো।চুমু খেলো সেখানে।বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“সর্বরূপে আপনি সুন্দর এবং আমার”

চলবে……