তেইশতম বসন্ত পর্ব-৩১+৩২

0
9

#তেইশতম_বসন্ত
পরিসংখ্যা ৩১
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)

-“একটা প্রশ্ন করবো?”

ব্যথিত মনে আফতাব শুয়ে ছিলো টিলার রুক্ষ জমিনে। দুহাত মাথার পেছনে বাঁধা।চোখ উজ্জ্বল অম্বরে।সবুজ ঘাসগুলো শুকিয়ে গেছে গ্রীষ্মের উত্তাপে। আফওয়ান জরিনা বেগমের কাছে।নাতনির ছেলেকে বুকে পিঠে মানুষ করার সৌভাগ্য হয়েছে তার।মালিশ করে দিচ্ছেন ছোট্ট হাত পা।আফতাব এর মনে আধাঁর।ছেলেটা তার কাছে থাকতে চায় না।প্রথম দিন আহ্লাদ করলেও এখন আর বেশি সময় থাকে না।কোলে নিলেই মুখের দিকে চেয়ে কান্না শুরু করে।সে তার বাবা হয়তো এখনও বুঝে উঠতে পারেনি।এই নিয়ে ভারাক্রান্ত পিতৃ মন।

খুশবুর প্রশ্নের জবাব দিলো রয়ে সয়ে।ছোট্ট করে বলে,

-“হুম বলুন”

খুশবু লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে প্রশ্ন করলো,

-“আমাদের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক।এখানে পুরুষেরা পরিবারের মাথা।দাপট চলে তাদের সব খানে।আমার স্বামী বলে নয়।তারপরও প্রশ্ন করছি আপনি কেনো সবসময় চুপচাপ মাথা নত করে সয়ে যান?আমার মনে পড়ে না আমাদের এত লম্বা সময়ের পথে আপনি আমার সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলেছেন।একবার বলেছিলেন তারপর আবার নিজেই সব মিটমাট করে নিয়েছেন।কেনো?আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়।”

আফতাব হাসলো।এখন কি নিজের প্রশংসা করবে?তবে সত্যিটা বলতে উদ্যত হয়।বলতে লাগলো,

-“আমার বাবা গম্ভীর একজন মানুষ।তবে রাগী নন।ছোটবেলায় যখন দেখতাম বাড়ি ফিরতেন তখন খালি হাতে আসতেন।”

খুশবু কথার মধ্যেই প্রশ্ন করলো,

-“এর সাথে আপনার শান্ত থাকার কি সম্পর্ক?”

আফতাব খুশবুর হাত টেনে ধরে বললো,

– “আরেহ বউ এত তাড়াহুড়ো কিসের?ছটফট স্বভাবটা গেলো না তাই না?”

-“কিসের ছটফট?আমি জানতে চাই”

আফতাব জবাব দেয়,

-“বিশ্লেষণে আলাপ দীর্ঘ হবে;একে অপরের সাথে সময় কাটানো যাবে ততটাই।”

মুখে কুলুপ এঁটে শুনতে লাগলো খুশবু।তাকে থামিয়ে দিয়ে আফতাব পূনরায় বলতে শুরু করে,

-“বাবা যখন বাড়ি ফিরতেন তখন যত ক্লান্ত থাকতেন।কিন্তু দাদীর এক ডাকে এসে ডাইনিংয়ে খাওয়া দাওয়া করতেন।বাবা মা’কে সময় দিয়ে আসতেন আমার আর মা’র কাছে।গল্প করতেন এদিক ওদিকের।আমি গল্পে মজে থাকতাম।জানতাম না আমার বাবা কতদিন নির্ঘুম।কপালে বিরক্তির রেখা দেখিনি যে কখনো তাই হয়তো।এই ক্লান্তি আমার মা ধরে ফেলতেন দ্রুত।আমাকে ঘুমানোর আদেশ দিয়ে বাবার পায়ে তেল মালিশ করে দিতে চাইতেন কিন্তু বাবা কখনো সেটা করতে দেননি।ধীরে ধীরে আমি বাবার অনুপস্থিতি বুঝতে থাকি।মা আর দাদীর কান্না দেখি।জানেন দাদী যখন মারা যায় তখন বাবা ছিলো না।এসেছেন পরদিন।তাকে আমি কাদতে দেখিনি।সে শুধু বলেছে একটা কথাই ‘ইশ আরেকটু যদি মূল্য দিতে পারতাম?আর কয়েকটা কথা মাথা পেতে মেনে চলতে পারতাম মায়ের?’।আমি তখনও বুঝিনি বাবার কথার অর্থ।আমি ভীষণ কেঁদেছিলাম।বাবা মায়ের ছোট থেকে ছোট বড় থেকে বড় আবদার আজ হোক কাল হোক পূরণ করতেন।চুপচাপ;আড়ালে।আমাকে বারবার বলতেন তোমার মাকে দেখে রেখো।আমার মা তো চলে গেছেন।আমি কষ্ট পেতাম তার কথায়।ভাবতাম বাবা এত নিষ্ঠুর কেনো?সব ছেড়ে আমাদের কাছে কেনো থাকে না?একদিন জ্বরের রাতে একা বাড়ি।বাবার পোস্টিং যশোরে।মা একা পারছিলেন না।এক ঘন্টা পর বাড়িতে ডাক্তার হাজির হন।কে ডাক্তার পাঠিয়েছে?কে ঔষধের ব্যবস্থা করেছে? কিছুইতো জানতাম না।অনেক বছর পর জানতাম লুকোচুরি খেলে বাবা না থেকেও ছিলেন।দূরে থেকেও রক্ষা করেছেন।তারপরও তিনি বলতেন কমতি রয়ে গেছে তোমাদের দেখভালে।বাবা প্রতিবার যাওয়ার পূর্বে মা’কে বলে যেতেন যদি না ফিরি তোমাদের জন্য যা করতে পারিনি সেটা নিয়ে কষ্ট পাবে না।বরং নিজের জীবন নতুন করে শুরু করো।”

টলমল করছে খুশবুর চোখ।অল্পতে আবেগপ্রবন হওয়ার অভ্যেস তার পুরোনো।কথাগুলো অন্তরে গিয়ে বিধলো।আফতাব খুশবুর দুহাত আরো শক্ত করে আগলে নিয়ে বুকে চেপে ধরে।গভীর নয়নে জানতে চায়,

-“আপনি কঠিন পুরুষ দেখেছেন,নমনীয় পুরুষ দেখেননি?”

খুশবু কোনো জবাব দিলো না।বলতে চাইছে আমার চোখের সামনেই সেই নমনীয় পুরুষ।তার ছেলের বাবা তার ভালোবাসার মানুষ।পারলো না।আফতাব বললো,

-“কাঁধে আস্ত একটা ভূখণ্ডের ভার খুশবু।সেখানে আবেগ চলে না।সেখানে চাইলেও অসহায় হওয়া যায় না। কোথায় গিয়ে মাথা গুজবো? কার কাছে গিয়ে বেদনা শুনাবো?নির্জীব সীমান্তে কে ডাক শুনবে?”

প্রতুত্তরে নিশ্চুপ এবারও খুশবু।ভার ভার লাগছে অন্তর।আফতাব বললো,

-“আপনাদের চোখের কাছে পাই ক্ষণিকের জন্য।কিসের কঠোরতা দেখাবো?কয়েক জোড়া চোখ যে দিন রাত আমাদের অপেক্ষায় পাড় করে তাদের সাথে কিসের জোর খাটাবো?চোখ রাঙিয়ে এসেছি সীমান্তে বহিরাগত শত্রুদের।আপন জনের কাছে চোখ নত থাকুক।যেনো শেষ জীবনে আফসোস করতে না হয় আরেকটু যদি ভালো সময় কাটানো যেতো? পুরুষত্বের অহংকার নিয়ে যেনো ভারী নিঃশ্বাস ত্যাগ না করতে হয় খুশবু”

কাতর গলায় খুশবু জবাব দিলো,

– “প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দিয়েছেন আমাদের।”

-“আরো দিতে চাই।অনেক মূল্য দিতে চাই সম্পর্কের।কঠোরতা শুধু শত্রুর জন্য হোক পুরুষ অসহায় হোক তার আপনজনের কাছে।”

আফতাব এর কপালে হাত রাখে খুশবু সযতনে।ছোট ছোট চুলগুলোর উপর হাত ফেরায়।আফতাব আবেশে চোখ বুঁজে নিলো।গ্রীষ্মের খরায় শীতলতা অনুভব করছে স্পর্শে।হুট করে আফতাব চোখ খুলে প্রশ্ন করে,

-“মনে আছে বলেছিলাম আমাদের গল্প অনেকদূর গড়াবে?আমি এখনো আপনাকে প্রথম দিনের মতোই অনুভব করি।আপনার অনুভুতিটা যে এখনও জানা হলো না।বিশ্লেষণ করুন।কখন মনে হলো আপনি আমার মায়ায় নয় ভালোবাসায় জড়িয়েছেন?”

খুশবু শীতল কণ্ঠে শূন্যে চেয়ে বলতে লাগলো,

-“আমাদের বিয়ের পর আপনার প্রথম স্পর্শ?আপনার লম্বাটে আঙুলগুলো যখন আমার হাতের কব্জি ঘেঁষে আমার আঙুলের ভাঁজে এসে আঁকড়ে ধরে তখন আমি চেয়ে ছিলাম নির্বিকার।হাত ধরাটাও এত সুন্দর হতে পারে?তাই ভাবছিলাম।শিউরে উঠছিলাম বারবার।”

খুশবু নিজেও মেনেই নিয়েছে তার লজ্জা কম।তবে কথাটি বলতে বলতে কন্ঠ কেঁপে উঠলো।চক্ষু মনি আড়াল হলো পল্লবে।আফতাব মুচকি হাসে।প্রশ্ন করে,

-“আর?”

-“আর কি?আমি মজেছি আপনার স্বচ্ছতায়,সরলতায়।আপনার মুখে আমাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধনটা আমার ভীষণ প্রিয়।”

ছোটবেলা থেকে আবেগপ্রবণ আফতাব।তবে তখনও প্রকাশ করা হয়নি।ম্লান হাসির আড়ালে লুকিয়ে ছাপিয়ে রেখেছে সবটুকু।বুক ভার হলে একমাত্র আকাশ ছিলো তার সঙ্গী। খুশবুর কোলে মুখ গুঁজে বললো,

-“জানি না কি পেয়েছি এই ভালোবাসার নাট্যমঞ্চে।আপনার মাঝেই সর্ব জগৎসুখ।”

-“আমার অতীতে যা ছিলো সবটাই মোহ।সঠিক মানুষ আর সঠিক ভালোবাসার মায়া বুঝার মত শক্ত ছিল না আমার মস্তিষ্ক।আপনার সাথে জুড়ে মনে হলো আমাদের সম্পর্কে শীতলতা আছে।আমি প্রায়শই অস্থির হয়ে উঠতাম আমার অতীত জীবনে।এখন যতবার অস্থিরতা গ্রাস করে?তখন আপনার শান্ত মুখে আমাকে নিঃশব্দে বলে উঠে এত চিন্তা করে কি হবে?”

-“সত্যিইতো আফওয়ানের মা জগৎ সংসার অল্প দিনের।কি হবে এত চিন্তা করে?”

আফওয়ানের মা ডাক শুনে লজ্জা বোধ করে খুশবু।এখন যে একজন সন্তানের মা।এক সময় নায়লা বেগম বলতেন নিজে মা হলে বুঝবি।আজ মা হয়েছে।বুঝতে পারছে না হওয়ার মর্ম আর তার চেয়ে বেশি সুখ।

-“আফওয়ান এর মা?আপনার ছেলেটা তার বাবাকে পাত্তা দেয় না”

-“বাবা দূরে দূরে থাকলে কি করে পাত্তা দিবে শুনি?”

-“তার বাবা যে নিরুপায়।”

-“জন্মের পর দিন থেকেই আপনার ছবি প্রতিরাতে দেখিয়েছি অবুঝ ব্যাঙকে।তারপরও না চিনলে আমার কোনো দোষ নেই।”

-“সে কি ভুলে যাবে আমায়?”

-“আফওয়ানের মা সেটা কক্ষনো হতে দিবে না।প্রতিরাতে গল্প শোনাবে আফওয়ানের বাবার।”

ঝড় নিঃশ্বাস ফেললো আফতাব।চোখ বুজে রইলো কিছুক্ষন।সময় অতিবাহিত করে বললো,

-“আপনি জানেন আপনার আশেপাশে থাকলে এক সুভাষ আমার ঘ্রাণইন্দ্রিয়কে গ্রাস করে।আমি ডুবতে থাকি সেখানে।নিজেকে পাই এক ঘোরের জগতে।আপনার এই গায়ের ঘ্রাণটা আমার ছেলেও পেয়েছে।”

-“ঘ্রাণ আমার দেহের পেলেও চরিত্র যেনো তার বাবার হয়।বাবার মতো দায়িত্বশীল হয়।বুঝদার ঠান্ডা মাথার পুরুষ হয়।সবকিছুর ঊর্ধ্বে যেনো তার আপনজনরা থাকে।যখন তার বউ আসবে তখন আমায় যেনো বলে ধন্যবাদ শ্বাশুড়ি মা এমন ভদ্র শান্ত একটা ব্যাটালোক তৈরি করার জন্য।”

এভাবেই কাটছে দুজনের সময়।ঘন্টাখানেক।অন্যদিক দিকে জরিনা বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন।বললেন,

-“খুশবু তোর ফুয়া কান্দে নিয়া যা।মালিশ শেষ”

আফতাব খুশবু দুজনেই নেমে এলো টিলা থেকে। এখন কি আর প্রেমিক প্রেমিকার মত একান্ত সময় পাড় করার সময় আছে।এখন জীবনের সবটুকু জুড়ে তাদের ছোট্ট ব্যাঙের আভা।

________

-“আমি সিলেট আসবো।এসে তোদের দুজনের চার হাত এক করার ব্যবস্থা করবো”

ফোস করে নিঃশ্বাস ফেললো নোমান।বন্ধুর কাছে পরামর্শ নিতে এসেছিল কি করে এই জিনিয়া নামক জ্বীন থেকে পিছু ছাড়ানো যায়।সে উল্টো সারাজীবনের জন্য গলায় ঝুলিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।

-“ভালো কোনো বুদ্ধি দিবি ফাহাদ?আমি এই মেয়েকে চাই না”

-“সত্যিই চাস না?”

নোমান কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো।সে চায় তবে তাকে চায় যার সাথে এতদিন দুষ্টু মিষ্টি বার্তালাপ হয়েছে।অজান্তে যাকে মনের একাংশে জায়গা দিতে শুরু করেছিল।হুট করে ঝড় এসে যেনো থামিয়ে দিলো সবকিছু।চাওয়া আর না চাওয়ার দ্বন্দ্ব।

ফাহাদ বললো,

-“মেয়েটা যদি জিনিয়া না হয়ে অন্য কেউ হতো তাহলে গ্রহণ করতি না?”

কোনো কথা বললো না নোমান।এর উত্তর ফাহাদের জানা আছে।তারপরও জিজ্ঞেস করে উস্কে দিতে চাইছে তার অন্তরকে।ফাহাদ পূনরায় প্রশ্ন করে,

-“বল?”

-“করতাম”

-“তাহলে?”

-“জিনিয়ার সঙ্গে আমার যায় না। ও আমাকে পছন্দ করেনা।”

-“পছন্দ না করলে তোকে তুলে নিয়ে যেতো! বলতো বিয়ের প্রস্তাব দিতে তার বাড়িতে?”

কথাগুলো হেসে বললো ফাহাদ।কিছুটা গায়ে লাগে নোমানের।সত্যিই তাকে ছুরি দেখিয়ে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো।পরপর কিছুটা হাসি পেলো এমন কান্ড মনে করে।জবাব এবারও দিলো না।ফাহাদ বলে,

-“তোদের জুটি বেশ জমবে নোমান।তুই সময় যে ওর সাথে মিচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং পাকাপোক্ত কর।”

-“ওসব আমার দ্বারা হবেনা।”

-“তাহলে ডাইরেক্ট বিয়ে করে সংসার আর বউয়ের মন বুঝতে চেষ্টা কর”

-“এতো সোজা সবটা?”

-“এই যুগে অনেক কিছুই সোজা।আগের কালে নর নারীরা বিয়ের রাত অব্দি জানতো না কে তাদের স্বামী অথবা স্ত্রী।আর তাদের সম্পর্ক মৃত্যুর আগ অব্দি টিকতো”

ফাহাদ আর নোমান এর কথা হয়েছিলো সন্ধ্যায়।ফাহাদ ভালো মতো ব্রেইন ওয়াশ করেছে নোমানের।আর ফাহাদের ব্রেইন ওয়াশ করেছে জিনিয়া খোদ।ফাহাদের ফেসবুক একাউন্ট খুঁজে খুঁজে বের করে সাহায্য চেয়েছে।ফাহাদ নিজে কিছুক্ষন টাস্কি খেয়ে বসে ছিলো।একটা মেয়ে তার বন্ধুকে বিয়ে করার জন্য এতটা মরিয়া হতে পারে? হেসেছিলো বটে।তারপর জিনিয়ার আকুতি মিনতিতে রাজি হয়। আশ্বাস দেয় বোঝাবে তাকে।

তখন ফোন বাজলো ফাহাদের।তার একমাত্র বোন ফোন করেছে।দ্রুত ভিডিও কল রিসিভ করেই বললো,

-“দেখি দেখি আমার মামাকে দেখি?”

খুশবু মুখ বাঁকা করে বললো,

-“মামার মা’কে দেখো”

-“উহু ডায়নীর মতো মুখ দেখার আমার কোনো শখ নেই।”

-“আমার ছেলে আমার মত হয়েছে দেখতে এর মানে কি তুমি বলতে চাইছো ওর মুখও ডায়নীর মতো?”

-“তোর মত দেখতে হলেও স্বভাব আফতাব এর মত।আমি এডজাস্ট করে নিবো”

খুশবু ফোন হাতে নিয়ে আরামে পিঠ এলিয়ে দিলো বিছানার হার্ড বোর্ডে।অন্যদিকে আফওয়ান এর বাবা যুদ্ধে নেমেছে।সে যে তার বাবা হয় চিনিয়ে ছাড়বে। বাচ্চামোতে নেমে এসেছে।আমি তোমার বাবা বলে বলে মুখে ফেনা তুলছে।এই দেখে খুশবুর হাসির ঠিকানা নেই।খুশবু ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললো,

-“হাহ!ভেবেছিলাম ঢাকা আসবো আমার ব্যাঙ আর ব্যাঙের বাবা দাদা দাদীকে নিয়ে।এসে বাবা মাকে বলবো তোমার আর নেহার বিয়ের কথা।আমাকে এভাবে ডায়নী ডাকলে এখন ইচ্ছে হচ্ছে একটা গিরিঙ্গী বাজিয়ে দেই।তোমার নামে উল্টোপাল্টা বলে বাবার মাথা গরম করে দেই।”

খুশবু ছোটবেলা থেকে উল্টোপাল্টা কাজে এক্সপার্ট।কতবার ভুগিয়েছে ফাহাদকে হিসাব নেই।তার এমন কথায় আপনাআপনি ফাহাদের মুখ ফুটে বেরিয়ে এলো,

-“তুই আমার বোন।তুই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে।ভালো মেয়ে!কে বলে তুই ডায়নীর মতো দেখতে?তার মুখ আমি ভাঙবো!দ্রুত আয় ঢাকা।”

চলবে…

#তেইশতম_বসন্ত
পরিসংখ্যা ৩২
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)

আফতাব এর পরিহিত শার্ট বমি করে পুরো নষ্ট করে ফেলেছে আফওয়ান।সিলেট থেকে ঢাকা যাত্রাপথে বাবার বুকের সঙ্গেই লেপ্টে ছিল। ছটফট এর পাশাপাশি কান্নার জোর বেশি তার ছেলের।তবে আফতাব এর যত্নে সামলে গেছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে ভালোভাবে শার্ট পরিষ্কার করে নিলো।ফিরে এসে আফওয়ানকে আবার কোলে তুলে নেয়। তোয়ালেতে মোড়ানো ছোট্ট আফওয়ানকে যেনো বহিরাগত সব অপশক্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা।খুশবু মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো।আকাশি রঙের শার্ট আর কালো প্যান্ট আফতাব এর পরনে।বুকে জড়ানো তার ছেলে।দুজনকেই একসাথে অনবদ্য লাগলো।এক দৃষ্টিতে তাদের পানে চেয়ে রয়।

আফতাব খুশবুর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

-“আমাদের কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।ফাহাদ জ্যামে আটকে আছে।আসছে”

আফতাব এর কথা যেনো খুশবুর কান অব্দি পৌঁছায়নি।সে মুগ্ধ চাহনিতে চেয়ে বাবা ছেলের দিকে।কয়েক মিলি সেকেন্ড বাদে খুশবু স্রোতের বিপরীতে জবাব দিলো।বললো,

-“ক্যাপ্টেন আফতাব মির্জা স্বামী হিসেবে যত না সুদর্শন তার চেয়ে বেশি বাবা হিসেবে।আমি কি পাগল হয়ে গেলাম?এভাবে আমাদের ব্যাঙকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আর আমার চেয়েই থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে।”

আফতাব হাসলো।বললো,

-“কৃষ্ণ বর্ণের প্রতি এত ভালোলাগা?”

-“নিজেকে অবজ্ঞা করছেন?”

-“আমার সেই সাধ্য নেই”

-“তাহলে বললেন কেনো কৃষ্ণ বর্ণের কথা?”

-“সত্যিটা বললাম…তবে আপনার পাশে আমি সুন্দর”

-“শুধু আমার?”

আফতাব ভ্রু উঁচু করে ছেলের মুখপানে চায়।ব্যাঙের মতই মুখ বানিয়ে রেখেছে।শুধু মায়ের কথা বলায় হয়তো ক্ষেপেছে।গোলগোল চোখে আফতাব এর দিকে।

-“মায় এপোলজিস ইউর হায়নেস….এই অধম আপনাদের দুজনের পাশে সুন্দর এবং সে ধন্য।”

খুশবু খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।সাথে আফওয়ানও।কি বুঝলো কে জানে।এইটুকু বাচ্চা আদৌ কিছু বুঝে নাকি? ঠেসে চুমু খেলো তাকে আফতাব।এটাই তার অপছন্দ। নাক মুখ কুচকে হাত দিয়ে হামলা চালায় বাবার মুখে।লাল হয়ে আসে মুখটা তৎক্ষনাৎ।কিছুসময় জেদ দেখিয়ে থেমে গেলো। উপরে জ্বলজ্বল করা আলোর দিকে চোখ গিয়েছে।আপাতত সে সেখানেই মগ্ন।আফতাব আবার বলে,

-“জীবনে রাজত্ব করতে পারলাম না।ছোটবেলা থেকে বাবা মা শাসিয়ে গেছেন।এখন বউ আর ছেলে শাসায়।”

-“আপনি বল দিয়ে নয় ভালোবাসা দিয়ে রাজত্ব করছেন বটে।”

-“আপনিও হুটহাট আদর ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে তুলতে পারেন।বাবা মা হয়েছি বলে আমাদের মধ্যে রোম্যান্স থাকবে না?আমাকে ভুলে যাচ্ছেনতো খুশবু।আমি আপনার ছোঁয়া পাওয়ার জন্য কাতর।ভাবছি এবার যাওয়ার আগে দ্বিতীয় ব্যাঙ এর ব্যবস্থা করে যাবো।”

খুশবু তাড়াহুড়ো করে মাথা এদিক ওদিক ঘুরায়।ভড়কে উঠেছে। শ্বশুড় শ্বাশুড়ী আর আশপাশের মানুষগুলো কি শুনে ফেললো এই কথাগুলো।চোখ রাঙিয়ে খুশবু বললো,

-“ইতর লোক!এটা পাবলিক প্লেস।মুখটা সামলে নিন”

-“মুখ সামলে নিবো আপনি আমাকে সামলে নিয়েন।সেটা প্রাইভেট প্লেসে।”

খুশবু মাথা ঝুঁকিয়ে হাতে হাত রাখে।লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বসেছে।প্রথম সন্তানের দুইমাস পূর্ণ না হতেই দ্বিতীয় সন্তানের পরিকল্পনা। ভাগ্যিস রুমানা মির্জা,রফিকুজ্জামান মির্জা এবং জরিনা বেগম নেই পাশে।থাকলে সাহস করতো না এসব বলার।

______

ঘন্টাখানেক হলো বাড়ি পৌঁছেছে খুশবুরা। নাতিকে পেয়ে আহ্লাদ এর শেষ নেই নতুন নানা নানীর।মেয়েকে ভুলতে বসেছেন।অন্যদিকে জরিনা বেগমের প্রেশার হাই।প্রথমবারের মতো উড়োজাহাজে চড়ে ভয়ে কুপোকাত।আফতাব এর হাত আঁকড়ে ধরে এসেছেন।এখন অব্দি ভয় সাড়েনি।সন্ধ্যার নাস্তায় সকলে একত্রিত হলে আফতাব দুষ্টুমির সুরে প্রশ্ন করলো,

-“নানী আমরা কিন্তু ফেরার সময়ও প্লেনে যাবো।”

জরিনা বেগম ভয়ার্ত কন্ঠে বলতে লাগলেন,

-“মাফ চাই আমি যাইতাম না আর পেলেনে।আমার কলিজা বাইর হইয়া হাতে আহে নাই অনেক।”

-“আরেহ নানী ভয় পান কেনো আমি আছি না?আপনার নাত জামাই।আপনি আমাকে ধরে রাখবেন।”

-“না না নাতজামাই আমি যাইতাম না।”

-“আমাকে বিশ্বাস করেন না?”

-“করি”

-“তাহলে?”

জরিনা বেগম বুঝলেন না।সত্যি ভেবে নিলেন আফতাব এর কথা।প্লেনের নাম শুনে মুখ ভয়ে ভার হয়ে রইলো।রুমানা মির্জা হেসে বললো,

-“আরেহ খালাম্মা চিন্তার কারণ নেই।আফতাব আপনার সাথে দুষ্টুমি করছে।আমরা ফ্লাইটে এসেছি আমার দাদুভাইয়ের জন্য।যাওয়ার পথে আপনি আমি,আফতাব এর বাবা বাসে করে যাবো কেমন?”

জরিনা বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,

– “হয় তাই ঠিক”

অন্যদিকে ফাহাদ আফওয়ানকে নিয়ে খেলছে সোফায় পা গুটিয়ে।এক মাসের বাচ্চাকে মামা বলানোর তুখোড় চেষ্টা।হতাশ কন্ঠ জুড়ে দিলো আফতাব।বললো,

-“বাবা-ই ডাকে না আবার মামা”

খুশবু জবাবে বলে,

-“আপনাদের এক্সপেক্টেশন দেখে মনে হচ্ছে আমার ছেলের বয়স একমাস নয় এক বছর!”

সবাই একে অপরের সাথে আড্ডায় মেতেছে।সকলের মূল কেন্দ্রবিন্দু আফওয়ান।নতুন সদস্য এক কোল হতে অন্য কোলে। খুশবুর সবাইকে হাসি খুশি দেখে আত্মা জুড়িয়ে যায়।এই মুহূর্তগুলো পাওয়া যায় না বলেই চলে।সবশেষে চোখ গেলো ফাহাদের উপর।এখনই খেলা শুরু হবে খুশবুর আর ফাহাদের শেষ।খুশবু কিছুটা কেশে নিজের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করে সবার।তবে ফাহাদের মনোযোগ টানতে পারেনি।তুচ্ছ করলো খুশবু আর তার হালকা কাশিকে।

খুশবু লোকমান চৌধুরীর দিকে চেয়ে বললো,

-“বাবা আমি কিছু বলতে চাচ্ছি”

সঙ্গেসঙ্গে টনক নড়ে ফাহাদের। তড়াক করে ঘুরে তাকালো। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে। খুশবুও তীর্যক চাহনিতে তার দিকেই চেয়ে।ফাহাদ ঠোঁট ভেজালো।মুখ ঘুরিয়ে আফওয়ান এর দিকে চাইলেও কান খাড়া করে রেখেছে।

লোকমান চৌধুরী বললেন, -“হ্যাঁ বলো কি বলবে?”

-“ভাইয়ার বিয়ের কথা কিছু ভেবেছো? বয়সতো কম হচ্ছেনা।আর তাছাড়াও আমার ছেলের একটা মামী চাই এখন”

জরিনা বেগম মুখ টিপে হেসে বললেন,

– “তোর ফুয়া এই কথা কানে কানে কইছিলো নি?”

-“হ্যাঁ কানে কানেই বলেছে।”

নায়লা বেগম জবাব দেন,

– “আমিও এই ব্যাপারেই ভাবছি তোর বাবার সাথে কথা বলবো।সময় সুযোগ হয়ে উঠছিলো না।”

-“তো এখন ভাবো।আমার কাছে ভালো একটা প্রস্তাব আছে।”

ফাহাদ যেনো অদৃশ্য।কিছু জানে না,বুঝে না। আফওয়ানকে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে বসলো।নানান তাল বাহানা করে।তার অল্প স্বল্প লজ্জা পাওয়ার স্বভাব আছে।আবার অত্যন্ত আগ্রহী শুনবে বলে।লোকমান চৌধুরী মেয়ের কথায় অবাক হয়ে জানতে চাইলেন,

-“প্রস্তাব?কিসের প্রস্তাব?”

-“ভাইয়া বন্ধু নোমান ভাইয়ার বোনের জন্য।ওর নাম নেহা ভারী মিষ্টি মেয়ে।আর যৌথ পরিবার।আমি আর ভাইয়া গিয়েছিলাম তাদের বাসায়। আচার ব্যবহার মার্জিত।”

-“মেয়ে সিলেটি?”

-“হ্যাঁ”

-“শহরের বাহিরে মেয়ে দিবে?”

-“এখনি দেওয়া না দেওয়ার প্রশ্ন কেনো আসছে বাবা?তোমরা প্রস্তাব নিয়ে যাওই না?তারপর দেখো কি হয়?”

লোকমান চৌধুরী দূরে ছেলের দিকে চেয়ে বললেন,

-“কিন্তু ফাহাদ?”

-“তোমার একান্ত বাধ্যগত সন্তান তোমাদের সিদ্ধান্তে রাজি।আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।”

-“তারপরও জিজ্ঞেস কর আলাদাভাবে।”

খুশবু আর আলাদাভাবে কি জিজ্ঞেস করবে।তারা আগে থেকেই প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।নতুন করে বিশ্লেষণ করার কিছুই নেই।এখন যা হবে শুধুই ভনিতা।ফর্মালিটি দেখাবে ফাহাদ মিছেমিছি।

রফিকুজ্জামান মির্জা বললেন,

– “খুশবু ঠিক বলেছে ভাই সাহেব।এখন ফাহাদেরও উচিত নিজের জীবন সেটেল করে নেওয়া।আর কোনো খবরাখবর নিতে হলে তো আমরা আছিই সিলেটে।যে কোনো সময় শুধু একটা কল করবেন।”

_______

-“রেগে আছেন?”

রেলিংয়ে হাত রেখে শূন্যে চেয়ে ছিলো আফতাব। চাকরিতে জয়েন করার পর রাতে তার প্রিয় কাজ হিসেবে গড়ে উঠে।নমনীয় আওয়াজ ও প্রশ্ন সোজা হয়ে দাঁড়ালো।পকেটে হাত গুঁজে বলে,

-“নাহ”

কণ্ঠ উচ্ছ্বাসহীন।প্রাণ নেই যেনো।খুশবু বুঝতে পারে।কয়েকবার ডেকেছিলো তাকে।ঘরে আসতে বলেছিলো।খুশবু শুনেনি।তাই হয়তো রেগে।

খুশবু এগিয়ে গিয়ে আফতাব এর বাহু পেঁচিয়ে ধরলো।বললো,

-“আমার দিকে চেয়ে বলুন রেগে নেই?”

আফতাব চাইলো না।বরং ঠান্ডা গলায় জবাব দিলো,

-“নেই”

আফতাব এর গালে হাত রেখে ঘুরিয়ে নিজের দিকে এনে খুশবু আবার বলে,

-“দেখুন আজ আপনার পছন্দের রঙের শাড়ি পড়েছি।আপনি বলেছিলেন গোলাপী রংটা আমার জন্য তৈরি?আপনার পছন্দ?”

-“দেখেছি অনেক আগেই”

খুশবু ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চাইলো, -“সত্যিই দেখেছেন?”

-“আপনার কোনকিছু আমার নজরের অন্তরালে নয়।”

-“কি করলে রাগ কমবে?”

আফতাব ফিরে চাইলো। খুশবুর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললো,

-“বাবার বাড়ি নিয়ে এসেও আপনাকে তাদের থেকে দূরে আর আমার কাছে রাখতে চাইছি এটা ভাবছেন নাতো আবার?”

আফতাব এর কাঁধ জড়িয়ে বুকে লুটিয়ে পড়লো খুশবু। দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো,

-“এসব বিশাল বিশাল চিন্তা ভাবনা করার সময় আছে আমার?আপনি জানেন আমি কত খুশি?আমার বাবা মা ভাইয়া আপনি,আমার ব্যাঙ, ব্যাঙ এর দাদা দাদী সকলে এখানে উপস্থিত।আমি সবাইকে একসাথে পেয়ে কতটা খুশি আপনাকে বলে বুঝাতে হবে?”

আফতাব খুশবুকে মুখোমুখি এনে প্রশ্ন করলো,

-“না জানি না।বলে বুঝান কত খুশি?”

হুট করে আফতাব এর গালে ঠোঁট ছোঁয়ায় খুশবু।পরপর নিজেই মিয়ে গেলো।ঠাঁয় নিলো আবারো প্রিয় বক্ষে।মিনমিন করে বললো,

-“এতটা খুশি যে নিজে থেকে আপনাকে ভালোবাসা দিলাম”

আফতাব খুশবুর মাথা তুলে আবারো মুখোমুখি আনলো।আজ যেনো বুকে রাখতেই চাইছে না। কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে আবদ্ধ করে বলতে লাগলো,

-“অল্পদিন আছি কাছে।আবার কালচে সবুজ জীবনে ফিরে যেতে হবে তাই স্বার্থপরের মত আচরণ করে বসেছিলাম।”

খুশবু চক্ষু নত করে বললো, – “আপনি জানেন আপনার রাগ বরফের মতো কিছু সময় পর গলে পানি হয়ে যায়।”

আফতাব দুষ্টুমির সুরে বলে,

-“জানতাম নাতো”

-“জানা লাগবে না।ছেড়ে দিন আপনার ছেলেকে নিয়ে আসি। নানা নানীকে নাহয় ঘুমোতে দিবে না”

-“থাকুন আর কিছু সময়…. আরেকটু নাহয় বিরক্ত করুক নানা নানীকে।”

ভারী নিঃশ্বাস মুখে ঝাপটে পড়লে চোখ পিটপিট করে খুশবু।বুকে রাখা ডান হাত আফতাব এর নিঃশ্বাসের সাথেই উঠানামা করছে।এক সন্তানের বাবা মা হওয়ার পরও নিজের মধ্যকার লাজ সারাতে পারলো না খুশবু।সাহস হলো না চোখের দিকে চাওয়ার। খুশবুর কানের লতিতে কয়েক দফা ওষ্ঠধোরের নরম স্পর্শ করে ঘোর লাগানো কণ্ঠে বললো,

-“এরূপ লাজুক মুখ দেখে আমি বারবার বধ হই।অন্তরে বিশাল তুফান উঠে।অস্থিরতা ঘিরে ধরে।পরিবর্তন এসেছে আপনার মধ্যে।আর এই বদলে যাওয়া রূপ আমাকে চুম্বকের মতো কাছে টানছে। বলুন কি করে সামলাই নিজেকে?নাহয় সব বাদ দিয়ে বেসালাম হয়ে উঠি?”

শেষ রাত্রে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছিলো।আকাশ চিরে সাদা বিদ্যুৎ চমকে আকাশমন্ডলকে প্রজ্জ্বলিত করেছিলো ক্ষণিকের জন্য।দমকা পবনে নড়েচড়ে উঠা পর্দাগুলো যেনো নৃত্যে মগ্ন।আকাশের গমগমে আওয়াজ এখনও থামেনি।ঠান্ডায় কুঁকড়ে আফতাব এর মুক্ত প্রশস্ত বুকের সাথে লেপ্টে থেকে আবদার করেছিলো অদ্ভুত।গান শুনতে চায় তার গলায়।বুঝিয়ে লাভ হয়নি।আফতাব এর কন্ঠস্বর বাজে এই কথা সে নিজেই স্বীকার করেছে খুশবুর কাছে।তবে তার লালচে অসন্তুষ্ট মুখখানা তার কথার জোর টিকতে দেয়নি বেশি সময়।লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে খুব ধীরে সুর তুলে,

“তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কিবা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম

এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম”

বহু কষ্টে কয়েক লাইন গিয়েছে।তৃপ্ত করলো প্রেয়সীর মন। খুশবুকে উষ্ণতার চাদরে মুড়িয়ে নিয়ে বললো,

-“মন আর ভালোবাসা কিছুটা তোমার ব্যাঙকেও দিলাম। তাছাড়া মা ছেলের যে হিংসে আর জেদ নিজেরা জ্বলবে সাথে আমাকেও পোড়াবে”

চলবে…..