তেইশতম বসন্ত পর্ব-৩৪

0
10

#তেইশতম_বসন্ত
পরিসংখ্যা ৩৪
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)

সময় আরো দুটো দিন সাথে নিয়ে চলে গেছে। আফতাবকে সাথে নিয়ে। প্রতিবারের বিষন্নতা কাটিয়ে উঠবে খুশবু জানে।তবে বারবার চোখের সামনে ছেলেকে জড়িয়ে লালচে হওয়া নয়নজোড়া বেশ ভুগায় তাকে।নিজের অজান্তে তার নেত্র টলমল করে উঠে।নিয়ম,দায়িত্বের কাছে ভালো মুহূর্তগুলো আসে ক্ষণিকের জন্য।দূরে সরে যায় বিশাল সময়ের জন্য।বুকে পাথর রেখে দেশ সেবায় যে হাত ছাড়া হয় সে হাত কখনো নেমে আসেনা।দূরত্ব কাটিয়ে আরো একবার ধরে ফেলার জন্য বাড়িয়ে রাখে সবসময়।

খুশবু আফওয়ানের দিকে চাইলো।পাখির ন্যায় মাথা এদিক ওদিক ঘোরাচ্ছে।চোখ মেলে দেখছে চারিদিক।খুঁজছে হয়তো কাউকে?হয়তো তার বাবাকে।এটাই মনে হলো খুশবুর।কোলে তুলে নেয় ব্যাঙের ছানাকে।দুহাত ধরে বলতে লাগলো,

-“কাকে খুঁজো ব্যাঙ?”

অত্যন্ত চিকন ঠোঁট জোড়া নড়াতে শুরু করলো আফওয়ান।মুখ হতে অর্থহীন শব্দ করে যেনো মায়ের কথার জবাব দিচ্ছে। খুশবুর আঙ্গুল টেনে মুখে পুড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

খুশবু বললো, -“বাবাকে খুঁজছো?”

আফওয়ান আবারো শব্দ করতে লাগলো।আরো মায়ায় জড়ায় তার এসব পাকামো।চুমু খেলো তার দুগালে। বললো,

-“তোমার বাবা একজন আর্মি অফিসার জানো?তার অনেক অনেক কাজ।অনেক দায়িত্ব।তাইতো আমাদের রেখে চলে গেছে।না থাকলে তোমাকে কক্ষনো একা ফেলে যেতো না।”

পলকহীন দৃষ্টিতে আফওয়ান চেয়ে রইলো।মায়ের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছে।খুশবু আবারো বললো,

-“মা-ও খুব রাগ করতাম বাবার উপর।কান্না করতাম।কিন্তু এখনতো তুমি আছো?আমরা দুজন মিলে অনেক খেলবো, ঘুরতে যাবো ঠিক আছে?তুমি রাগ করো না।বাবা শীগ্রই ফিরে আসবে।তাকেও নিয়েও আমরা ঘুরবো কেমন?”

আফওয়ানের মুখ দেখে ফিক করে হেসে উঠে খুশবু।ঠোঁট উল্টে এবং কপাল কুচকে চেয়ে আছে খুশবুর দিকে। ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে এক ধ্যানে চেয়ে।মুখ মুছিয়ে দিয়ে আবারো গল্পে মজে মা এবং ছেলে।

ফোন বাজলো।ভিডিও কল এসেছে।নাম দেখে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে রিসিভ করে খুশবু। আফওয়ানের দিকে ঘুরিয়ে দিলো।সাথে দেখতে লাগলো নিজেও মাথা ঝুঁকিয়ে।সেই একই পোশাকে আফতাব।পেছনে টেন্ট তৈরির আয়োজন চলছে।সকলের কাছ থেকে দূরে কিছু সময়ের জন্য এসেছে।

-“বাবা?”

মলিন কণ্ঠে বাবা ডাকে ছটফট করতে শুরু করলো আফওয়ান।চোখ বড় বড় করে খুঁজছে। কোথা থেকে আওয়াজ আসছে?চোখ ফোনের স্ক্রিনে পড়তেই হাত পা তুলে দিতে শুরু করলো। খাবলে ধরছে ফোনের স্ক্রিন।খুশবু ছেলের এমন কান্ড দেখে বলে উঠলো,

-“বাবাহ্! বাবার জন্য কি টান?ফোনের ভেতরেই ঢুকে যেতে চাচ্ছে।কই মায়ের জন্য তো এত উতলা হও নি কখনও ব্যাঙ?”

আফতাব এর হৃদ আকাশে মেঘ ঘনায়। খুশবুর কথার উত্তরে বললো,

-“আমার ছেলে আমাকে বেশি ভালোবাসে”

খুশবু নিজের দিকে ফোন ঘুরিয়ে বললো, -“তাই না?কষ্ট করলাম আমি জন্ম দিলাম আমি?আর ভালোবাসে আপনাকে”

-“বাসবেইতো।বাবা ছেলে একদল”

খুশবু মুখ ভেংচি কাটলো।বললো, -“কিছুদিন আগে কাদো কাদো অবস্থা ছিলো আপনার। বলছিলেন আপনার ছেলে আপনাকে চেনে না।এখন যা অবস্থা দেখছি আপনাকে না আমাকেই চিনবে না কিছুদিন পর।”

-“হিংসুটে মহিলা”

-“আর আপনি চতুর।অল্প সময়ের জন্য এসে আমার ছেলেকে বশ করেছেন।দেখুন কিভাবে হাত পা ছুঁড়ছে”

যান্ত্রিক ফোনে বাবার দর্শনে ভীষণ খুশি ছোট্ট প্রাণ।হাত পা ছুঁড়ে এই জানান দিচ্ছে।ছেলেকে চোখ ভরে দেখে নিলো।পরপর খুশবুকে।আফতাব বললো,

-“কিছু বলার ছিলো?”

-“হুম বলুন”

অস্থির লাগছে আফতাব এর।বুকের মধ্যে অজানা হাহাকার।চোখে মুখে শীতল পবন ছুঁয়ে গেলে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়।জানে না কি আদেশ আসতে যাচ্ছে তার জন্য।তারপরও চায় এই দূরত্ব আর না বাড়ুক।সহ্য হয়ে গেছে এতটুকু দূরত্ব।অতিরিক্ত কিছুই সহ্য হবেনা। আফতাবকে চুপ থাকতে দেখে খুশবু আবার প্রশ্ন করে,

-“কি হলো বলুন?”

-“আপনার পড়ালেখা আমার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে খুশবু।এরপর আফওয়ান এলো।আমি চাই না আমার কারণে আপনি পিছিয়ে থাকুন কোনো কিছুতে।আমার ছেলে আর পরিবারের দায়িত্ব এর পাশাপাশি আপনার জীবনের উন্নতির বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে।আমি চাইছি আপনি ট্রান্সফার নিন।আমাদের এখানে আবারো ভর্তি হয়ে যান।আরেকটা বছর বাকি ছিলো আপনার।”

খুশবু আফতাব এর কথায় চোখ নামায়।ছেলের দিকে চাইলো।ভেবে চিন্তে বললো,

-“আফওয়ান এখন ছোট আমি পড়ালেখা আর ওকে একসাথে কি করে সামলাবো?”

-“পারবেন খুশবু।বাবা মা আছে। দু কদম হাঁটলে আরো একজন অভিজ্ঞ মানুষ আছেন আপনার নানু।জিতু মামা এবং মামীও আছেন।আমি চাই আপনি আবারো পড়ালেখা শুরু করুন।আমি কখনও চাই না আপনি সংসার আর বাচ্চা সামলানোর গন্ডিতে আটকে থাকুন।আমি চাই মুক্ত পাখির ন্যায় উড়ে বেড়ান এই ধরণীতে।”

-“আমি কখনও পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী ছিলাম না আপনি জানেন।আমার কাছে এসব উটকো ঝামেলা মনে হয়”

-“আমার জন্য?আমার ইচ্ছের জন্য নাহয়?”

খুশবু আফতাব এর মুখ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে।এক অন্যরকম চঞ্চলতা তার মাঝে বিরাজ করছে।যেনো কোনো তাড়াহুড়ো। বেজায় অস্থির। খুশবু ধরে ফেলে আফতাব এর এমন বিচলন।প্রশ্ন করে,

-“মানবো…তবে তার আগে আমাকে একটা প্রশ্নের জবাব দিন”

ভারী নিঃশ্বাস ফেলে আফতাব জানতে চায়,

– “কি প্রশ্ন?”

-“স্পষ্ট এবং সুন্দর করে কথা বলা ক্যাপ্টেন এর বাক্যগুলো আজ এত অগোছালো কেনো?”

বুকটা ধ্বক করে উঠলো।অস্থিরতা যেনো জলের ঢেউ।একটুকরো শান্তি পায় না খুঁজে।কখনো মেঘে ঢাকা আকাশের মতো।কখনো ঝড়ের রাতে হাওয়া।মনের ভেতর চলছে ঝড়।বিক্ষিপ্ত ভাবনায় ভরা প্রহর।হৃদয়ে তৃষ্ণা বেড়ে ওঠছে।দুর থেকেও দূরে যাওয়ার প্রক্রিয়া।গভীর চোখে চেয়ে বলে উঠে,

-“হয়তো কাছাকাছি নয়তো স্মৃতি হয়ে আমার জীবনের প্রতিটি প্রাণ ঢেলে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ”

-“এইতো বাক্যগুলো এখন লাইনে এসেছে”

আফতাব আকস্মিক বলে উঠে, -“ভালোবাসি ক্যামেলিয়া….আরো এক গুচ্ছ ক্যামেলিয়া নিয়ে রঙিন সুবাসিত সন্ধ্যায় দেখা হবে”

________

সামসুল সাহেব নোমানকে ডেকেছেন।নেহাকে ভারী কন্ঠে আদেশ করেছেন যেনো এক্ষুনি ভাইকে ডেকে আনা হয়। নেহাও বাবার সুর আওড়ায়।বাবার হুট করে এভাবে ডাকা সুবিধাজনক মনে হলো না।এক ডাকে সময় ব্যয় না করে হাজির বাবার দ্বারে। স্টাডি রুমে বসে আছেন তিনি।নোমানের উপস্থিতি আন্দাজ করে বললেন,

-“দরজা লাগিয়ে সামনে এসে বসো”

নোমান কিছুটা নয় অনেকটা আশ্চর্য্য হয়।দরজা লাগিয়ে বাবার সামনের চেয়ারে এসে বসলো জবানবন্দি দেওয়া অপরাধীর ন্যায়।সামসুল সাহেব অতিরিক্ত কোনো বাক্য ব্যয় না করে সরাসরি বললেন,

-“তোমাকে আমি সবসময় দেখেছি রাজনীতির প্রতি অনুগত।কখনো মেয়ে জাতীয় কোনকিছু আমার চোখে না কানে আসেনি। তবে এত বছর পর কেনো আসছে?”

নোমান জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,

-“মানে বাবা?”

-“মানে জানো না?তোমার ফুড কার্টে ইদানিং একটা মেয়ের আনাগোনা।এমনকি ক্যাম্পাসেও।তুমি ভেবো না লায়েক হয়ে গেছো বলে তোমার দিকে আমার নজর থাকে না।নিজের আর আমার রেপুটেশন ধুলোয় মিশানোর চিন্তায় আছো?”

সামসুল সাহেব যে জিনিয়ার কথা বলছেন সেটায় কোনো সন্দেহ নেই। একেবারে নিশ্চিত সে জিনিয়ার সাথেই বাবার চোখে ধরা পড়েছে। আসামীর ন্যায় মাথা নুয়ে ফেললো।কোনো যুক্তি দেওয়ার জায়গা নেই এখানে।সামসুল সাহেব বললেন,

-“তোমার সাথে ওই মেয়ের কোনো সম্পর্ক আছে?”

ঝটপট নোমান জবাব দিলো, -“না বাবা”

-“সত্যি তো?”

-“হুম”

ছেলের মুখ পানে চেয়ে সামসুল সাহেব বললেন,

-“তাহলে মেয়ের বাবা এত কষ্ট করলেন কেনো?কেনো আমার অফিসে এসে তোমার হাত চাইলেন তার মেয়ে জিনিয়ার জন্য?”

আকাশ হতে টুপ করে পড়লো নোমান। বিস্ফোরিত নয়নে চাইলো বাবার দিকে। মস্তিষ্কে তালগোল পাকিয়ে গেলো।সে যা শুনেছে তাই কি বলেছে সামসুল হক?বুক ধড়ফড় শুরু হয়।কপাল বেয়ে ঘাম ঝরবে বলে।এই মেয়ে কতটা মরিয়া হলে এমন কান্ড ঘটায়?

-“আমি..আমি এসব কিছুই জানি না বাবা”

-“তাহলে কি না করে দিবো তাদের?দেখো যদি কোনো সম্পর্ক থাকে তোমাদের মধ্যে ভালোয় ভালোয় বলে দাও। পরবর্তীতে যেনো কেউ আমাকে এসে না বলে আপনার ছেলেকে ইদানিং এক মেয়ের সাথে দেখা যায়।একটা সম্মান আছে আমার।তোমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আছে।যদি তোমার তরফ থেকে না হয় আমি তাদের না বলবো। পরর্বতীতে কোনো রকম কথা আমি শুনবো না।এক্ষুনি সিদ্ধান্ত নিবে আমার সামনে বসে।দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া শিখো।”

পুরোপুরি ফ্যাসাদে পড়ে গেলো নোমান।এখন কি করবে?কপাল থাপড়াতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না বাবার সম্মুখে।সামসুল সাহেব দশ মিনিট সময় দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।হিসাবের খাতা নিয়ে বসলেন একটু দূরত্বে।ঘাম ঝড়া শুরু হলো নোমানের কপাল বেয়ে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।পাঁচ মিনিট পর শুকনো ঢোক গিলে নোমান বাবার পানে প্রশ্ন করলো,

-“জীবনের ছোটবড় অনেক সিদ্ধান্ত আপনি নিয়েছেন বাবা।এবারও নাহয় আপনি বলুন।কি করা উচিত আমার?”

চোখের চশমা নামিয়ে সামসুল সাহেব জবাব দিলেন,

-“হারাম সম্পর্ক আর মেলামেশা আমার পছন্দ নয়।যদি তুমি ওই মেয়েকে অল্পখানিও পছন্দ করো তাহলে বিয়ে করে মাথা উঁচু করে বাঁচো।আমি তোমাকে উপদেশ দিলাম।সিদ্ধান্ত তুমিই নিবে।”

-“তাহলে কালকে নেহার জন্য কেনো বললেন আপনি যা সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই নেহা মেনে নিবে?”

সামসুল সাহেব বললেন, -“বাপ হই তোমাদের।আমি জানি আমার মেয়ে আমার সিদ্ধান্তে খুশিই হবে।”

কথায় আছে বাপের উপরেও বাপ থাকে।নিজের বাবার সামনে বসে এই কথার যথার্থতা খুঁজে পেলো নোমান।তবে দোটানা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।সামসুল সাহেব ঠিক দশ মিনিট পর বললেন,

-“সময় শেষ তোমার।বলো কি সিদ্ধান্ত?”

কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া নোমানের মুখ ফুটে বেড়িয়ে এলো,

-“আমি রাজি”

_________

নেহাদের বাড়িতে এসে হাঁসফাঁস অবস্থা ফাহাদের।বুকের কম্পন থামছে না কোনোভাবেই। এখনই তো সব ঠিক হয়ে যায়নি!তাহলে?এমন অস্থিরতার কারণ কি?চোখ তুলে এদিক ওদিক চায়।এক বন্ধুকে দেখেও শান্তি মিললো না।সে হলো আরেক বলির পাঁঠা।নিজের অজান্তেই।

ফাহাদ এর পরিবারের পাশাপাশি আরও একটা পরিবার দেখে চমকিত নোমান।বুঝতে এবং চিনতে পারলো না এরা কারা।তবে বোনকে দেখতে আসার পর যত আপ্যায়ন আছে সবটা বড় ভাই হিসেবে তাকেই দেখতে হচ্ছে।

সামসুল সাহেব এবং সোলায়মান সাহেব এর মুখে আজ বিশাল হাসি।অতিথির সামনে গম্ভীর মুখে বসে থাকা যায়?তাদের এমন চওড়া হাসি নোমান প্রথমবার দেখলো।সামসুল সাহেব ফাহাদের পরিবার আর জিনিয়ার পরিবারের সাথে পরিচয় করালে মাথায় বাজ পড়ে নোমানের।সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ প্রিয় বন্ধুর পানে চায় গোল চোখে।ফাহাদ হাসি লুকানোর আপ্রাণ চেষ্টায়।নোমানের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।প্রশ্ন একটাই তার,

-“এটা কখন হলো?কিভাবে হলো?”

সবার চক্ষুর আলোগোচরে ফাহাদ ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ করে নোমানকে,

-“কোন ম্যাটেরিয়াল এর শূলে চড়তে যাচ্ছিস?”

নোমান সরে যায়।উত্তর দেয়, -“তুই কাকে বলিস শালা!তুই নিজেও বলির পাঁঠা”

ফাহাদ বড়দের কথার সুযোগে ফিরতি মেসেজে লিখে,

-“আমি স্বেচ্ছায় ঝুলতে এসেছি।আর তুই অনিচ্ছায়।তোর বাপ একসাথে আমাদের দুজনের গলায় ছুরি ধরবে দেখে নিস”

-“আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে ভাই!হচ্ছে কি এসব?”

ফাহাদ বলে,- “কি ডেঞ্জারাস মেয়ে ভাবতে পারিস? তোকে তুলে নিয়ে গেলো,হুমকি দিলো,আবার নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দিলো।পুরো হিস্ট্রি ক্রিয়েট করে ফেলেছে।তোমার কপাল পুড়েছে বন্ধু।কিন্তু তোর এমন অবস্থা দেখে আমার পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।বায়”

________

-“আমি আপনার সাথেসাথে আমার ছেলের জীবনটাও নষ্ট করে ফেলেছি খুশবু।কি হতো আপনাকে ভালো না বাসলে?কি হতো আমাদের বিয়ে না হলে?কি হতো একে অপরের মোহে না জড়ালে?আপনার জীবনটা সুন্দর হতো।আমি আপনাকে দূরত্ব ছাড়া আর কিছুই দিতে পারিনি খুশবু।আমি আপনাকে প্রতিবার কাদিয়েছি,অপেক্ষা করিয়েছি।কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনি।আপনার মুক্ত জীবনকে আমার সাথে জড়িয়ে জেলবন্দী করে ফেলেছি আপনাকে।আমি আপনার যোগ্য না,আমি আপনার ভালোবাসার যোগ্য না।দেখুন আবার স্বার্থপরের মত পিঠ দেখিয়ে যাচ্ছি।এই যাওয়া ক্ষণিকের জন্য নয়।চাইলেও দৌঁড়ে এসে আপনাদের বুকে জড়াতে পারবো না।আমার ছেলের প্রথম কথা বলা,প্রথম কদম জমিনে দেখতে পারবো না।খুব ঘৃণা করবেন আমাকে খুব।আপনি আপনার অযোগ্য।”

বাবা ও মায়ের বুকের মধ্যিখানে ছোট্ট এক প্রাণ এর অবস্থান। প্রিয় দুজনকে একত্রে জড়িয়ে বুক ভেঙে সমস্ত দুঃখ উজাড় করছে আফতাব।কপালে কপাল ঠেকিয়ে আছে।বাঁধন অত্যন্ত শক্ত।যেনো মনে হচ্ছে কেউ তাদের ছিন্ন করার জন্য টানছে।দুর্গম পথের শেষে চরম সাহসিকতা নিয়ে যেতে হচ্ছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের শান্তিরক্ষা মিনুষ্কা (MINUSCA)মিশনে।যে ভয় ছিলো সেটাই হয়েছে।ডাক পড়েছে আফতাব এর।মেয়াদকাল অজানা।এক বছরের কম কোনোভাবেই হবে না এটা নিশ্চিত।

ছেলেকে আফতাব এর দুহাতের আদলে রেখে খুশবু।কান্না সিক্ত মুখ দুহাতে মুছে দিয়ে বললো,

-“আম প্রাউড অফ ইউ ক্যাপ্টেন।…..আপনি ভেবেছেন আমি কাঁদবো?বায়না করবো?জেদ করবো?সবাই সুযোগ পায় না সেখানে যাওয়ার।আপনি পেয়েছেন।আপনার বাবা মা আপনার মতো সন্তান পেয়ে গর্বিত।আমার মত গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরাফেরা করা মেয়ে আপনার মত এক প্রেমিক পুরুষ,একজন দায়িত্বশীল পুরুষের স্ত্রী হয়ে গর্বিত।আমার ব্যাঙ আপনার মত বাবা পেয়ে গর্বিত।”

খুশবুর হাসিতে সেই পুরোনো বসন্তের ফুল ঝরে পড়ছে যেনো।তার চোখের মায়ায় বাঁধা আফতাবের মন।দূরত্ব সময়ের নিয়মে।তবুও তাদের প্রণয় অম্লান, অনুপম।

-“কষ্ট হচ্ছে না?” আফতাব প্রশ্ন করলো।

খুশবু হাসি মুখের আড়ালে নিজের চিৎকার খিঁচে আটকে রাখলো।বললো,

-“হতো কষ্ট যদি ফিরে না আসতেন। জানেন আপনার জন্য অপেক্ষার মাঝেও আমি এক শান্তি খুঁজে পেয়েছি।মনে হয় আমার দীর্ঘ অপেক্ষার সাথে আমার ভালোবাসা আরো দীর্ঘতর হয়।”

-“নিজের য…..”

“জানি ক্যাপ্টেন আফতাব মির্জা নিজের যত্ন নিবো,সাথে আপনার ব্যাঙ আর ব্যাঙের দাদা দাদীর।ঠিকমতো পড়ালেখা করবো।একদম কান্না করবো না।আর কিছু?”

আফতাব গাঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে বললো, -“আর কিছু নাহ”

-“এবার আমার কথা শুনুন আমাদের নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না।একজন আর্মির স্ত্রী হয়ে এই অলস খুশবু দায়িত্ব নিতে শিখেছে।আপনি ওদিকটা সামলান আমি এদিকটা সামলে নিবো।ওকে?”

ফ্লাইটের এনাউন্সমেন্ট এসেছে।দলে দলে ইউনিফর্ম পরিহিত সেনা সদস্যরা চলে গেলো ভেতরে।একেক পরিবারের আর্তনাদ একেক রকম।রুমানা মির্জাকে যখন জড়িয়ে ধরে আফতাব তখন ছাড়তে চাইছিলেন না ছেলেকে কোনোভাবে।রফিকুজ্জামান মির্জা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন সামনে চেয়ে। খুশবুর মুখে ম্লান হাসি। বেবি ক্যারিয়ারে তার ছোট্ট ব্যাঙও বাবার যাওয়ার পানে চেয়ে।

খুশবু আফওয়ান এর দিকে তাকালো।চোখ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গোড়ায়।বলে,

-“আজ থেকে আপনার আমার অনেক দায়িত্ব আব্বাজান।চলুন”

শীতল হাওয়ায় আসে আফতাবের চিঠি।কাব্যিক শব্দে ভরা, ভালোবাসার গীতি।খুশবু পড়ে তাতে, অনুভবে লুকায়।দূরত্বে মিলনে মিলে হৃদয় সেথায়। সম্পর্ককে দূরত্ব ম্লান করতে পারেনি।পারেনি বসন্তের রং কেড়ে নিতে। অভিনব কৌশলে আরো জীবন্ত করতে চলেছে আফতাব তাদের নতুন যাত্রা।পুরোনো দিনের ন্যায় চিঠি আসে।প্রথম চিঠিতে লিখা ছিল,

-“আসুন নতুনভাবে প্রেমে মত্ত হই দুজনে।একে অপরের হাতে লিখা শব্দ এবং বাক্যগুলোকে অনুভব করি।উত্তরের অপেক্ষাগুলো হোক অতীব সসুন্দর”

আটটি চিঠি জমা হয়েছে খুশবুর কাছে।এলোমেলো বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে।তার ছেলেটা হয়েছে বাবার মতোই ভদ্র।হাতড়ে দেখে বাবার সব চিঠি তবে ছিঁড়ে নষ্ট করেনা।

“ একজন সেনা সদস্যকে ভালোবেসে দেখো তার রাইফেল এর সর্বপ্রথম গুলি তোমার চিত্তে অদৃশ্য আঘাত হানবে।তুমি তার শত্রু নয় আপনজন। তবেও কোনো রেহাই নেই।ক্ষতবিক্ষত হবে নীলচে রক্তে।কেনো বললাম নীলচে রক্ত? নীল বিষের রং, নীল বিষাদের রং, নীল দূরত্বের রং,কখনো নীল দিবার শেষে নামা সন্ধ্যা আকাশের রং”

চলবে…..