তেইশতম বসন্ত পর্ব-৩৫ এবং শেষ পর্ব

0
14

#তেইশতম_বসন্ত
পরিসংখ্যা ৩৫ (শেষ পর্ব)
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)

নিজের বিয়ে সেরে যে ভাইয়ের বউ আনতে যেতে হবে সেটা ছিলো কল্পনার বাহিরে।ভাইয়ের বউ নিয়ে আসার পর সাময়িক বিদায় নিতে হবে সেটাও কি ভেবেছিলো?সিলেটের ইতিহাসে উল্টোপাল্টা বিয়ের রেকর্ড গড়েছে ফাহাদ নেহা এবং নোমান জিনিয়ার বিয়ে।এখন অব্দি কোনো জুটিই পুরোপুরিভাবে বিষয়টা হজম করতে পারেনি।একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না।নেহা খুশি তবে অস্থির।জিনিয়া বেজায় খুশি।ক্ষণে ক্ষণে দাঁত বের করে হাসছে।অন্যদিকে থমথমে মুখে জীবনের সব সুখ উজাড় হয়ে যাওয়া দেখছে নোমান আর ফাহাদ।একসাথে দুজনকে বলি দিলো তার বাবা?নাটক সিনেমায় দেখেছে একসাথে দুটো তিনটে বিয়ে হতে।সেটা ঘটে গেলো বাস্তবে। উভয় বউয়ের পরনে একই রঙের লাল শাড়ি।আর নোমান এবং ফাহাদের পরনে অফ হোয়াইট রঙের পাঞ্জাবি।

ছোটবোনের সাথে প্রাণ প্রিয় বন্ধুর বিয়ে সম্পন্ন করে তবেই নোমানের ছোটখাটো বরযাত্রীতে অংশগ্রহণ করে ফাহাদ আর নেহা। পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় শুধু আকদ হবে তাদের।নেহা এবং জিনিয়ার পড়ালেখা শেষ হলে তারপরই যে যে যারযার সংসারের হাল ধরবে।

খুশবু বাচ্চাকে মামার কোলে দিয়ে এদিক ওদিক উড়ে বেড়াচ্ছে।ফাহাদের পাঞ্জাবির অবস্থা নাজেহাল করে ছেড়েছে।নেহা ফাহাদের পাশে নত গলায় বললো,

-“আফওয়ানকে আমার কোলে দিন।আপনি ওকে সামলাতে পারছেন না”

-“এক বাচ্চা আরেক বাচ্চাকে সামলাবে তাই না?”

নেহার মুখ কুচকে গেলো। অপরদিকে জিনিয়ার সাথে খাতির জমে খুশবুর।দুজনের এদিক ওদিকের গল্পে কানের পোকা নড়ে উঠল নোমানের।উঠে চলে গেলো।পূনরায় ফিরে আসে।একদিনের জন্য যে বোনকে বিদায় দিতে হবে।

নেহাকে বিদায় করে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো নোমান।মাথা চুলকে যাচ্ছে অনবরত।ভেতরেই ঘাপটি মেরে বসে আছে উড়নচণ্ডী মেয়েটা।কে জানে কি হতে চলেছে।ঘরে প্রবেশ করতেই জিনিয়া একলাফে নেমে সালাম করলো নোমানকে ঝড়ের গতিতে।চোখ বড় বড় করে নোমান বলে উঠে,

-“কি করছো কি?”

-“সালাম করছি”

-“এসবের কোনো দরকার নেইতো”

-“এখন করে ফেলেছি আমার দেনমোহরের টাকা আর বাসর রাতের উপহার দিন।”

নোমান পকেটে হাত রাখে।দুই টাকার কয়েন বের করে জিনিয়ার হাতে রাখলো।জিনিয়া রেগে বললো,

-“আপনি খুব খারাপ!মাত্র এক লক্ষ টাকা কাবিন লেখা হয়েছে।ইচ্ছে ছিল দশ লক্ষ লিখবো।আপনার কথা ভেবে কমালাম।আর আপনি!”

-“খুব উপকার করেছো যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।”

নাক ফুলিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো জিনিয়া।নোমান বেরিয়ে গেস্টরুমের ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে আবার ফিরে এলো ঘরে।জিনিয়া বেরিয়ে নোমানকে অন্য পোশাকে দেখে বললো,

-“চেঞ্জ করলেন কিভাবে?”

-“অবশ্যই হাত দিয়ে!”

-“ত্যাড়া লোক!”

নোমান বিছানা থেকে ফুল সরিয়ে পরিষ্কার করে দিলো।হাত পা ঝিমঝিম করছে।সামনেই নব্য বিবাহিত স্ত্রী দাঁড়িয়ে।অন্তরে ভিন্ন কিছু অনুভব হচ্ছে।হয়তো পবিত্র সম্পর্কের প্রভাব।নিজের জায়গা মোতাবেক শুয়ে পড়ে দুজনেই। হুট করে কান্ড ঘটায় জিনিয়া।নিজে থেকে জায়গা করে নেয় নোমানের বুকে। প্রায় আটকে যাওয়া নিঃশ্বাস ছাড়লো নোমান।নিজেকে নিজেই সান্ত্বনা দিলো।জিনিয়া বললো,

-“আপনি আগের বোকামির কারণে আমার উপর উপর রেগে থাকবেন না ঠিক আছে?আমরা দুজন মিলে সব ঠিক করে নিবো।এই সম্পর্কটাকেও।”

নোমান হাসলো।জিনিয়ার মাথায় হাত রেখে ছোট্ট উত্তর দিলো, -“হুম”

হুট করে মনে পড়ে জিনিয়ার শর্তের কথা।মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে প্রশ্ন করলো,- “তোমার কি যেনো শর্ত ছিলো?বললে না যে?”

-“আমার শর্ত এটাই বিয়ের পর আপনার কোনো শর্ত আমি মানবো না”

_________

-“এই হলো বয়সে অনেক ছোট মেয়েকে বিয়ে করার ফল।বাসর ঘরে এসে মনে হচ্ছে কত বড় অপরাধ করছি।”

কুঁজো হয়ে গেল নেহা আরেকটু খানি।জরিনা বেগমের বাড়িতে অবস্থান করছে আপাতত তারা।ফাহাদ ঘরে ঢুকেই বিশাল একটা ভাষণ দিলো।কান্না চলে আসে নেহার।সে কি সাধে অল্পবয়সী?

ফাহাদ এক পা ভাঁজ করে নেহার সামনে বসে।প্রশ্ন করে মৃদু বাহু ঝাঁকিয়ে,

-“এই তুমি কি আবারো নিব্বি মেয়েদের মত অভিমান করে মুখ ফুলিয়েছো?”

নেহা জবাব দিলো না। শাড়ির আড়ালে দেহ এবং ঘোমটার আড়ালে মুখ সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলছে নিচু হতে হতে।কয়েকবার নাক টানলো।ফাহাদ আবার প্রশ্ন করে,

-“রাগ করেছো?”

-“এভাবে বলবেন না।আমি সাধে আপনার চেয়ে বয়সে ছোট নাকি?”

ফাহাদ হেসে উঠলো।এগিয়ে এসে অভাবনীয় কাজ ঘটিয়ে নেহাকে জড়িয়ে ধরে।বলে,

-“থাক ছোট বউ কাঁদে না।”

অস্থির অনুভব করলো নেহা।সাথে তার অভিমান। মূর্তির মত রইলো ফাহাদের বাহুডোরে।ফাহাদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

-“তুমি বয়সে অনেক ছোট হলেও বশীকরণ জানো। নাহয় আমার মত একটা মানুষের হৃদয় নিয়ে প্রেম প্রেম খেলা এত সহজ নয়।”

নেহা প্রশ্ন করে, -“আপনি প্রেমে পড়েছেন?”

-“উহু তবে একটু একটু করে এই পুচকে মেয়ের ভালোবাসায় জড়িয়েছি।”

ফাহাদ নেহার কপালে অধর ছুঁয়ে দেয়। সামান্য স্পর্শে লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো নেহা।তাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমানোর পূর্বে ফাহাদ বললো,

-“আপাতত এতটুকু ভালোবাসায় সন্তুষ্ট থাকো।বয়স অনুযায়ী ভালোবাসবো তোমাকে”

___________

এক শীতল কণ্ঠে শুনেছিলো খুশবু, ‘নব্য কোনো বসন্তের আগমনী বার্তায় পুরোনো সব ঋতুর গ্লানি মুছে যাবে।’ আবারো প্রকৃতিতে বসন্তের আসর বসেছে।ছাদ বাগানে ক্যামেলিয়া ফুলের সমাহার।পবনে ঝরে রঙিন পাখির গান।আসমানে উল্লাসের মেঘলা রঙ।নিজেদের মধ্যেই আমেজে মাতোয়ারা এই বাতাবরণ।উদযাপন করছে ফাগুনকে।বসন্তের নীলগাগনে মধুর নীল বিলাস।কি যেনো আছে এই বসন্তে?কখনো ঢুকরে কেঁদে উঠে কখনও হাসিতে মজে যায়।

খুশবুর আজ তুমুল ব্যস্ততা।স্কুল থেকে শিক্ষকতা করে ফিরে এখন ঘর সামলাতে হবে।রান্না নাকি।রুমানা মির্জার আজকাল কোমর ব্যথা বেড়েছে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননা।তারপরও বারবার চলে আসেন সাহায্য করতে বৌমাকে।আর তার বৌমা তাকে নিজের মেয়ের মতো করেই আদুরে শাসনে ঘরে পাঠিয়ে দেয়। আফওয়ান দরজার দ্বারে দাঁড়িয়ে চেঁচাচ্ছে আপন সুরে।রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই নিঃশ্বাস আটকে এলো খুশবুর।তার ছোট্ট ব্যাঙ আর ছোট নেই।দৌঁড়ে মায়ের আঁচলের পেছনে লুকায় অপরিচিত লোককে দেখে।

বলে, -“মা দেখো…”

ছেলের অস্পষ্ট কথার দিকে নজর নেই খুশবুর ঠোঁট ভেঙে কান্না আসছে।এতদিনের জমিয়ে রাখা আর্তনাদ বুক চিরে বেরিয়ে আসতে চাইছে।সামনে দাঁড়ানো মানুষটা তার সবচেয়ে প্রিয়।সবচেয়ে ভালোবাসার।তিন তিনটে বছরে এমন কোনো সময় যায়নি তাকে মনে করেনি খুশবু। পাঁচশত চিঠি জমেছে সিন্দুকে। টালমাটাল হয়ে পড়ে যেতে চাইলে তাকে শক্ত বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়া হয়।তিন বছরের ছোট্ট ছেলেটা মায়ের হাত ধরে তাকে আগলে ধরার চেষ্টায়।শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে আফতাব বললো,

-“অনেক বেশি অপেক্ষা করিয়ে ফেলেছি তাই না?”

হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো খুশবু।আফতাব এর ইউনিফর্ম ধরে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়ে।তার কান্না দেখে আফওয়ানও মুখ ঢেকে কান্না করতে শুরু করলো।আফতাব একহাতে খুশবুকে আগলে রেখে অন্যহাতে আফওয়ানকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।মিশনের শেষে ফিরে এসেছে।নতুন বসন্তের আগমনে,আগমন ঘটেছে তারও।প্রিয় মানুষের দেখা পাওয়ার সুখ অসহনীয়।অদ্ভুত জ্বালা বক্ষস্থলে।

আফতাব মুখ তুলে ছেলের দিকে চাইলো। খুশবু নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। হাঁটু গেঁড়ে ছেলের সামনে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিচ্ছে তাকে।বিশ্বাস করতে পারছে না কোনরূপে।চোখের পলকে কি করে এত বড় হয়ে গেলো?যাওয়ার পূর্বে বলেছিলো খুশবুর মত দেখতে সে।আজ তাকে দেখে মনে হচ্ছে নিজের এর শৈশব আবার দেখছে নিজেরই চোখে।পাগলের মত চুমু খেতে শুরু করলো আফওয়ানের মুখে,হাতে এবং চোখে। আফওয়ান বিরক্ত হয়ে সরে গেলো পিছনে। আধো আধো গলায় বললো,

-“তুমি কে?”

একজন বাবার কাছে এর চেয়ে দুঃখের কি হতে পারে আর?তার ছেলে তাকে চিনতে পারছে না দূরত্বের কারণে। অতি শোকে পাথর হয়ে চেয়ে রইলো আফতাব। আদুরে পরশ দিয়ে বললো,

-“আমি…আমি তোমার বাবা”

আফওয়ান খুশবুর দিকে চাইলো।অবুঝ স্বরে আওড়ায়, -“বাবা”

প্রথমবার বাবা ডাকে আরো একবার তাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে আফতাব।ছেলেটি এখনও অবুঝ।বুঝতে পারছে না কিছুই।বুঝবার বয়স হয়নি তাই।নিজেকে ছাড়িয়ে মায়ের আচল ধরে বললো,

-“বাবা গল্পে…”

আফতাব খুশবুর দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো, -“কি বলতে চাইছে ও?”

খুশবু কান্না থামিয়ে বললো,- “ওকে প্রতিরাতে আপনার গল্প বলতাম।নিজে থেকেই ভেবে নিয়েছে বাবা গল্পে আছে।”

-“ও আমাকে চিনতে পারছে না খুশবু!”

কণ্ঠ কেঁপে উঠলো আফতাব এর। ইতিমধ্যে রুমানা মির্জা এবং রফিকুজ্জামান মির্জা হাজির।ছেলেকে হুট করে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে রইলো। আশা করেনি আফতাব আসবে।মস্তিষ্ক সচল হতেই কোমরের ব্যথা আর হাঁটুর ব্যথা ভুলে ছেলের দিকে এক প্রকার দৌঁড়ে এসে বুকে জড়িয়ে নেন একমাত্র পুত্রকে।কতদিন অপেক্ষায় ছিলো এই মা ছেলেকে ছুঁয়ে দেখবে বলে।ঠিক একজন বাবাও।

________

মাথার ভার মুষ্টিবদ্ধ হাতের উপর রেখে অর্ধ শুয়ে আফতাব।চেয়ে আছে ছেলের দিকে।নাক,চোখ, চেহারা তারই প্রতিচ্ছবি।চুলের কাটিং পুরপুরি তারই মতো।খুশবু তাকে দ্বিতীয় আফতাব বানিয়ে রেখেছে।তবে ছেলে তার কাছে আসেনা।বই নিয়ে বসেছে।সাথে কিছু ক্যান্ডি।আফতাব কাছে এসে বসলে সে একটু দূরে সরে যায়।এই দৃশ্য ছুরি আঘাত চালালো হৃদপিণ্ডে।তবে সহ্য করে নিলো আফতাব।এই ছোট বাচ্চা বাবা কি জিনিস বুঝবার সময় তার বাবা ছিলো না তার পাশে। আফওয়ান তার ছোট হাতে একটি ক্যান্ডি প্যাকেট থেকে বের করে মুখে পুড়ে নিলো। চোরা চোখে আফতাব এর দিকে চাইলো।আফতাব এর দৃষ্টি আগে থেকেই তার মধ্যে নিবদ্ধ।বাচ্চাটির মায়া হয়।একটি ক্যান্ডি আফতাব এর দিকে এগিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করে,

-“এই কাবে? ক্যান্দি মজা…কাবে তুমি?”

আফতাব এর মুখে চওড়া হাসির ঝলক ফুটে উঠলো।বুকে ভর দিয়ে শুয়ে মুখ হা করে দেখিয়ে বললো,

-“তুমি খাইয়ে দাও”

আফওয়ান কি যেনো ভাবলো শূন্যে চেয়ে।তারপর সাবধানে আফতাব এর মুখে পুড়ে দিলো।আফতাব দুষ্টুমির আফওয়ান এর হাত খপ করে মুখ দিয়ে আটকে দ্রুত ছেড়ে দিয়ে বললো,

-“কামড়ে দিলাম এবার?”

আফওয়ান দাঁত বের করে হেসে বলে, -“ব্যাতা পাইনি!ব্যাতা পাইনি!”

-“ওহ শিট!এসো আবার কামড়ে দেই?”

আফওয়ান একলাফে উঠে দাঁড়ায়।বিছানায় লাফাতে লাফাতে বললো,

-“আম্মুকে বিচাল দিবো আমি”

-“আম্মু বাবাকে কিচ্ছু বলবে না”

-“বাবা গল্পে…বাবা গল্পে”

আফতাব উঠে বসলো।ছেলেকে ধরে কোলে বসালো।হাতের সাহায্যে ছোট্ট প্রাণকে পেঁচিয়ে বললো,

-“বাবা গল্পে না।বাবা বাস্তবে…এইযে দেখো…দেখো আমাকে।আমি তোমার বাবা!বাবা গল্প থেকে বেরিয়ে এসেছে।ছুঁয়ে দেখো?আদর দাও”

আফওয়ান চেয়ে রইলো নিষ্পলক।আফতাব এর মুখ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে হাত রেখে যেনো বিশাল পর্যবেক্ষণে মশগুল।আকস্মিক প্রশ্ন করলো,

-“তুমি বাবা?”

-“হ্যাঁ বাচ্চা আমি বাবা”

-“চক্কেত দিবে?”

-“পুরো চকলেট এর দোকান এনে দিবো।একবার বাবা বলে ডাকো?”

-“চলো দোকান নিবো”

আফতাব হেসে উঠলো।সেও বললো,

-“চলো কিন্তু আগে বাবা ডাকো। গালে পাপ্পা দাও।”

আফওয়ান চুমু দিতে পারেনা।কামড়ে দেওয়াকে চুমু ভাবে।আফতাব এর গালে জোরে কামড়ে দিয়ে বললো,

-“চলো বাবা চলো”

-“যাক অন্তত কামড়ে দিয়ে বাবা ডেকেছো”

আফতাব এর গলা জড়িয়ে আফওয়ান বললো,

-“দোকান নিবো…বেলুন নিবো…কার নিবো…সব নিবো।ভালো কাপল পড়ো যাও।এগুলা পঁচা”

ছেলের আদেশে ঘরের কাপড় বদলে ভালো কাপড় পড়েছে আফতাব।নতুন ইচ্ছে জেগেছে জনাবের।আফতাব এর ইউনিফর্ম এর সাথে রাখা ক্যাপ না পড়ে বের হবেনা।বাধ্য হয়ে তার মাথার চেয়ে অধিক বড় ক্যাপ মাথায় নিয়ে বের হলো বাপ ছেলে।যেমনটা চেয়েছিলো ঠিক সেটাই করেছে। কাঁধে চড়ে পুরো দোকান তুলে এনেছে।বাড়ি এসে মায়ের কাছে দাঁড়িয়ে কান্না জুড়ে দিলো,

-“দোকান নিবো” বলে জমিনে বসে পড়লো।

খুশবু আঁচলে হাত মুছে আফতাব এর দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,

-“কিসের দোকান নিবে ও?”

আফতাব মাথা চুলকে বললো, -“কথায় কথায় বলেছিলাম চকলেট কেনো পুরো দোকান কিনে দিবো বাবা ডাকলে।সে আমার কথা সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে।এখন তার একটা আস্ত দোকান চাই।”

রুমানা মির্জা হেসে বললেন, -“আর্মির ছেলে দোকানদার। কিনে দিলেই পারো আফতাব।এখন থেকেই ব্যবসা শিখুক।”

আফতাব এর কি যেনো হলো।কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলো আবার।ফিরেছে তিনঘন্টা পর।হাতে বিশাল একটা বক্স। আফওয়ান কৌতুহল দেখায় বক্সে কি আছে জানার জন্যে।আফতাব তাকে পাশে বসিয়ে বক্স খুলে দেখায়।বাচ্চাদের টয় হাউজের মতই টয় স্টোর।আফতাব বললো,

-“এই নাও তোমার দোকান।এখানে চকলেট আছে,আইসক্রিম আছে,গাড়ি আছে।”

আফওয়ান খুশিতে লাফায় কিছুক্ষন।আবারো এসে ভালোবাসা দিতে গিয়ে কামড়ে দিলো আফতাবকে।আফতাব খুশবুর দিকে চেয়ে বলে,

-“পরপর দুবার কামড় খেলাম।”

-“আপনার অনুপস্থিতিতে আমি অসংখ্য কামড় খেয়েছি।এবার আপনার পালা।তৈরি থাকুন। এভাবেই তো বাবা ছেলের ভাব জমবে।”

অনেকদিন পর স্ত্রী আর মায়ের হাতের রান্না খেয়ে তৃপ্ত আত্মা।কতকাল এই স্বাদ পাওয়ার জন্য তরপেছে।দুপুরের খাবার শেষ করেই রফিকুজ্জামান মির্জা এবং রুমানা মির্জাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছে আফতাব।সম্পূর্ণ বডি চেকআপ করিয়ে ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত।জরিনা বেগম প্যারালাইজড।সবসময় সাথে থাকার জন্য একজন নার্সের ব্যবস্থা করে এসে ক্লান্ত প্রায়।ঘুমন্ত আফওয়ানকে বুকে জড়িয়ে চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। খুশবু এসে মাথায় হাত বুলালে চোখ মেলে তাকায় আফতাব। সঙ্গেসঙ্গে ছেলেকে সাবধানে বিছানায় শুইয়ে দুইপাশে কোলবালিশ দিয়ে খুশবুকে টেনে নিয়ে যায় জানালার দ্বারে।পেছন থেকে জড়িয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে আবছা স্বরে বলতে লাগলো,

-“বিতৃষ্ণার তিনটে বসন্ত পাড় করে ফিরে এসেছি আবার।সহস্র প্রতীক্ষা শেষে ফাগুনের সুরে রঙিন চিত্ত।কতটা ভুগেছি জানো এই খুশবুর জন্য?”

-“আমিও কি খুব ভালো ছিলাম?”

খুশবুকে ঘুরিয়ে নিজের মুখোমুখি আনলো।কপালে গাঢ় চুম্বন এঁকে দিলো।চোখে চোখ রেখে বললো,

-“দূরত্ব ভালোবাসা বাড়িয়েছে?যেমনটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে?”

-“অনেকটা গাঢ় করেছে অনুরাগ”

বসন্তের হাওয়া চলছে দিক-বেদিক।শীতল এবং সুবাসিত।বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো আফতাব।এই চোখ জোড়া দেখতে কত ব্যাকুল ছিলো এতকাল।আজ মন ভরে দেখে নিক।আফতাব এর গালে হাত ছুঁয়ে খুশবু বললো,

-“আমি আমার দায়িত্ব পালন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।”

-“এই মুহূর্তে আমাদের মধ্যে কোনো দায়িত্বের আলাপ না আসুক।আকাশে চেয়ে দেখেছেন?”

-“দেখতে চাই না।”

-“কেনো?”

খুশবু আফতাব এর বুকে আলতো করে মাথা রেখে বললো,

-“আপনার চোখে এক আকাশ সমান ভালোবাসা দেখেছি বলে”

-“ জীবনের শেষ বসন্ত অব্দি সঙ্গ চাই আপনার”

___‘এই কাব্য ছিলো প্রণয়ের,পরিণয়ের,দূরত্বের,বিষাদের।শীতল স্নিগ্ধ মোলায়েম অন্তরে সজোড়ে আঘাত হানা এক নারীকে বসন্তের রঙিন লগ্নে হন্যে হয়ে খুঁজে বেরিয়েছিলো এক তৃষ্ণার্ত প্রাণ।মন বলেছিলো পাবে।পূর্ণতা পায় অলৌকিক কাকতালীয়ভাবে।বুকের আঘাত সারাতে বুকে জড়ানো ছাড়া আর উপায় কি?তবে যে বাঁধা আছে!কর্মের বাঁধা,দায়িত্বের বাঁধা।ব্যথা উপশমে বুকে জড়ানো এক মোহনীয় খুশবু সান্নিধ্য ছেড়ে যাওয়ার ব্যাধি।এই ব্যাধি সারাজীবনের জন্য নিজের করে পাওয়ার চেয়ে আরো অনেকটা বিষাদময়।বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার পূর্বেই নিঃশ্বাস আটকে আসে।পূর্ণতার মাঝে এ কেমন অপূর্ণতা।চলছে জীবন আপন গতিতে।কখনো দূরত্বের আর্তনাদ কখনো কাছে পাওয়ার উচ্ছ্বাস।রাত্রির নক্ষত্রেরা তাদের গল্প শোনে।প্রেমের গোপন কথা বাতাসে মিশে যায়।অফুরন্ত ভালোবাসা, অটুট বন্ধনের খণ্ডচিত্র যেনো তারা।আফতাব-খুশবুর প্রণয় চিরন্তন হয়ে রয়।’___

সমাপ্ত ~