গল্প- তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি
পর্ব- ১১
লেখিকা- রিয়া খান
ভেতরে ভেতরে মিশান রাগে ফুঁসছে শুধু, ইচ্ছে করছে সাপের মতো ছোবল মেরে দিতে।
তীব্র রিপন হায়দারের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘‘আপনার ভাগ্যটা অনেক ভালো, কোনো মতে বেঁচে গেলেন, উঠে দাঁড়ান মাথায় অতো জোরেও লাগেনি চোট।”
রিপন হায়দার উঠে দাঁড়াতে যাবে তার আগেই বসা থেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে শুয়ে পড়লো মাটিতে, দু একটা নিশ্বাস ছেড়ে মাথায় হাত দিতে দিতে দম চলে গেল।আশেপাশে সবাই অবাক হয়ে গেল, কোন এংগেলে মাথায় আঘাত করেছিল যার জন্য এভাবে দম চলে গেল।
মিশান বাঁকা হাসি দিয়ে তীব্রর দিকে নজর করে বলল,
‘‘হুমহ! ধরা খেয়েছি সেটা বড় কথা নয় স্যার, টার্গেট মিস হয়নি সেটাই বড় কথা। হতে পারি আমি আপনার মতো তীব্রতর না, আমি মিশান। নাহ এই মূহুর্তে আমি নিজেকে ক্যাপ্টেইন দাবী করবো না।
এটা আমার নিজের অভিজ্ঞার জোরেই অর্জন করেছি।”
তীব্র সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল,
‘‘নিজের নামটা আস্তে উচ্চারণ কর, যতবার নিজের নাম উচ্চারণ করিস মনে হয় কোনো জোক্সস প্লে করা হচ্ছে আমার কানের কাছে। লোকটা মরেছে তাতে আফসোস নেই, কিন্তু ভবিষ্যতে আর কেউ মরবে না সেটার জন্যই আনন্দ হচ্ছে।”
‘‘স্যার, সব কিছুর গ্যারান্টি দিতে নেই, পাশা যেকোনো মোমেন্টে পাল্টে যেতে পারে, একটু আতংকিত থাকবেন প্লিজ।পরিক্ষার হলে যে স্টুডেন্ট টা বেশি কনফিডেন্ট থাকে তার পরিক্ষাটাই কিন্তু খারাপ হয়।”
‘‘এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও কি মনে হচ্ছে না, খেলা এখানেই সমাপ্তি। সিনেমার গল্পের মতো তোমার মৃত্যু লীলার The END!”
মিশান ঠান্ডা মস্তিষ্কে তুচ্ছ হেসে বলল,
‘‘স্যার! Effort Never Dies. প্রচেষ্টার মৃত্যু নেই, সো জীবনে সমাপ্তি বলে কোনো শব্দও নেই। এখনো অনেক হিসেব বাকি আছে, সব গুলো একত্র করে যোগ করেই
আমি এর অন্তিম রেখা টানবো।”
‘‘আগে বেঁচে থাক, তারপর দেখা যাবে, যত গর্জে ততো বর্ষে না।”
‘‘একদম ঠিক স্যার, তাই বলছি বিনা মেঘের গর্জনে কৃষক ঘরে ফিরে না।”
এতো বড় ভয়ংকর কিলার বলে মিশানের কাছে কেউ আসতে সাহস পাচ্ছে না, সবাই রাউন্ড হয়ে গান পয়েন্টে রেখেছে মিশানকে। শুধু তীব্রই নির্ভীক গতীতে এভাবে মিশানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে লেখচার দিচ্ছে।
এর মধ্যে ইরফান শেখ তীব্রর দেখাদেখি মিশানের কাছে আসলো, এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিল আসবে কিনা, তীব্রকে দেখে ভেতরে সাহস করে
এসেই মিশানকে ধমকের স্বরে বলল,
‘‘অ্যাইত! হিরো সেজে দাঁড়িয়ে আছিস!মাস্ক সানগ্লাস খোল! তোর হিরোগিরী দেখার জন্য আমরা দাঁড়িয়ে আছি?
তীব্র গম্ভীর্যতার সাথে শীতল কন্ঠে বলল,
‘‘ইরফান সাহেব! এখানে আমি আছি। দয়া করে আমার সামনে গলার আওয়াজ নিচু রাখবেন। মাস্ক খুলবে নাকি আরো দু চারটা লাগাবে সেটা আমি বুঝবো। আপনি প্লিজ নিজের পজিশনে যান।
ইরফান শেখ তীব্রর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে সরে গেল।
তীব্র পেছন ঘুরে একটু সরে দাঁড়িয়ে রাসেলকে ডাক দিলো,
‘‘জি স্যার বলুন।’’
‘‘শুনো, আমি যেহেতু বলেছিলাম আমি শুধু আসামী শনাক্তকরণ অব্ধিই কাজ করবো, তারপর আমি আমার রাস্তায় চলে যাবো। আমি আমার প্রতিশ্রুতি রেখেছি।সো এখন বাকিটা তোমরা যা করার করবে কিন্তু আমার কিছু কন্ডিশন আছে।’’
‘‘জি স্যার বলুন।’’
‘‘কিলারের মাস্ক আর সানগ্লাস পড়ে যেরকম মুখ ঢাকা আছে সেরকম ই থাক, কারণ আমাদের পেছনে মিডিয়া অনবরত লেগেই আছে ।
আগামী দু চারদিন মিডিয়া কোনো ভাবে যেন না জানতে পারে আমরা কিলারকে পেয়েছি’’
‘‘কিন্তু কেনো এরকম করবো স্যার? জানতে পারি কি?’’
‘‘কারণ আমরা শিউর জানি না কিলার একাই একজন নাকি ওদের কোনো গ্যাং আছে, বাই এনি চান্স যদি ওরা কোনো গ্যাং হয় তাহলে মিডিয়ার থেকে জেনে যাবে ওদের লোক আমাদের কাছে বন্দী।
এসব গ্যাংদের মাঝে একতা বল খুব প্রখর। তখন দেখা যাবে ওকে উদ্ধার করার জন্য, আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। ওরা কিন্তু ঘুরে ফিরে পাওয়ারফুল মানুষদের ই মারছে, বাই এনি চান্স এরকম কিছু হলে এতে আমাদের প্রতিটা কর্মীর জীবন ঝুঁকি আছে। ওকে পুলিশ কাস্টডিতে নিয়ে রাখো এখন, সকালে আমি এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব হিসেব চুকিয়ে যাবে।’’
‘‘ওকে স্যার।’’
‘‘হুম সতর্ক থেকো যেন কোনো ভাবেই এর চেহারাটা মিডিয়ার সামনে না আসে, এখান থেকে প্রয়োজনে একে আলাদা চাদর দিয়ে মুড়িয়ে নিয়ে যাও, বাই এনি চান্স যদি মিডিয়া সামনে পড়ে যায় বলবে অন্য এক আসামী, মাথায় রেখো চেহারা যেন মিডিয়া না দেখে।’’
‘‘শিউর স্যার, কিন্তু ইরফান শেখ স্যার?উনি তো হাঁচি দিলেও মিডিয়াকে জানিয়ে দেয়। বাই এনি চান্স উনি যদি আমাদের বিপরীতে থাকে?’’
‘‘সে ব্যবস্থা আমি করছি, উনার সাথে কথা বলে আমার ঠান্ডা মাথা গরম করতে চাই না। মোশারফ স্যারকে দিয়ে বলাচ্ছি, এরপরেও যদি না শুনে কথা সোজা ক্রস ফায়ার, তারপর যা হওয়ার আমি দেখে নিব।’’
‘‘ওকে স্যার।’’
‘‘হুম’’
‘‘স্যার আর একটা কথা।’’
‘‘বলো’’
‘‘ক্রিমিনালের কাছে যেতে ভয় লাগছে, আপনি যদি হ্যান্ডকাপটা পড়িয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিতেন!’’
তীব্র হাত বাড়াতেই রাসেল হ্যান্ডকাপ তুলে দিলো, মিশানের কাছে গিয়ে মিশানের হাতে হাত কড়া পড়িয়ে দিলো।
‘‘কাল রাতেও তোকে হ্যান্ডকাপ পড়িয়েছিলাম, আজও পড়াচ্ছি। দুই দিনের ডিফারেন্স এইটুকুই কাল তোর কুকীর্তিটা সামনে পড়ে নি, আজ পড়ল।’’
‘‘জি স্যার, আমার ক্ষেত্রেও একই স্যার, আজ রাতেও আপনার সাথে দেখা হয়েছে আবার আরেক কোনো এক রাতে দেখা হবে। ডিফারেন্স এইটুকুই আজ আমি অসহায় আছি কাল পাওয়ারফুল থাকবো।’’
‘‘কাল সকালেই দেখা হচ্ছে আমাদের, রাত অব্ধি অপেক্ষা করতে হবে না।’’
‘‘স্যার কিই বা গ্যারান্টি আছে? হতে পারে আজ ভোরের আগেও আপনার সাথে আমার আরেকবার দেখা হলো।’’
‘‘ভালো হতে এখন অনেক পরিশ্রম, যদিও তোর ভালো হওয়ার সুযোগ নেই। সোজা মৃত্যুদন্ড পড়বে।’’
‘‘আমি আমার টার্গেট ফিল আপ করেই ছাড়বো স্যার। বাই হোপ অর বাই ক্রোক।’’
তীব্র চোখ গরম করে মিশানের দিকে তাকিয়ে মিশানকে ধরে গাড়িতে উঠাল, সাথে দু জন এএসআই আর ছয় সাতজন পুলিশ কনস্টবলদের পাহারা দেয়ার জন্য রাখল।
রিপন হায়দারের ডেড বডিটাও আলাদা একটা গাড়িতে উঠানো হয়েছে।
সমস্ত পুলিশ ফোর্স গার্ডের সাথে ঢাকার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
আর এদিকে ডি আইজি স্যারকে দিয়ে ইরফান শেখ কে ভালোমতো বুঝিয়ে ওয়ার্নিং দিয়েছে।
সবাইকে পাঠিয়ে তীব্র নিজের পথে গন্তব্য নিল। নিজের র্যাবের পোস্টিং টা কনফার্ম করল। সকাল বেলা একবার গিয়ে মিশানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে, তারপর সোজা র্যাবের অফিসে চলে যাবে। বাই এনি চান্স ক্রিমিনাল যদি হাত থেকে ছুটে যায় তবে তার দায় তীব্র নেবে না, দ্বিতীয় বার পিছু ফিরবে না একে ধরার জন্য।তীব্রর এই মন্তব্য সিনিয়ররা কোনো আপত্তি জানায় নি। কারণ তীব্রর নিজস্ব মিশন আছে।
এখন তীব্র নিজের জন্য আঁকানো পথে চলবে।
এতো সহজেই মিশানকে ধরে ফেলার প্ল্যানের জাল ছড়ালো তীব্র তার ছোট্টো একটা ফ্ল্যাশব্যাক ।
গত রাতে মিশানকে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে গাড়িতে উঠালো তখনি ওর খেয়াল হলো, রিপন হায়দার বলেছিলো নীল রঙের জ্বলজ্বল করা চোখ ওর দিকে তাকিয়েছিলো। তীব্রর মনে পড়লো মিশানের চোখের মণিটা নীলচে, রাতে ভালোমতো খেয়াল করে দেখে মিশানের চোখের মণি যেহেতু নীলচে সেহেতু ও যদি নীল রঙের কোনো লেন্স পড়ে চোখে তাহলে ওর চোখের নীল মণি হাল্কা আলোতে জ্বলজ্বল করবে। আবার মিশান রাত বিরাত বাইরেও থাকে।
ওকে দিয়ে এটা সন্দেহ করা যুক্তিসংগত।
সেদিন ভোর থেকেই লোক লাগিয়ে রাখে মিশানের এক্টিভিটিস ফলো করার জন্য।গাড়িটা অমন জায়গায় রেখেছিল কারণ মিশানকে কে নিয়ে যায় বা কিভাবে গাড়ি থেকে বের হয় সেটা যেনো ভালো মতো দেখতে পারে সেই জন্য। সেই ভোর থেকে রাত অব্ধি ওকে ফলো করা হয়েছে শুধু।
রাত প্রায় সাড়ে বারোটারও বেশি বাজে তখন,
তীব্র অফিসে বসে কেস সলভের প্রচেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। ওকে সাহায্য করার জন্য এএস আই রাসেল এখানেই বসে আছে, যেন কোনো কাজে আসতে পারে। ‘‘রাসেল।’’
‘‘জি স্যার?’’
‘‘এই অদ্ভুত মার্ডার প্রথম কোথায় হয়?’’
‘‘স্যার চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট এরিয়াতে।’’
‘‘ আর সর্বশেষ কোথাকার খবর এসেছে?’’
‘‘স্যার তোরাগের এমপির ছোটো ছেলের পর আর কোনো নিউজ পাই নি।’’
‘‘ভালোমতো খোঁজ নিয়ে দেখেছো তো?’’
‘‘হ্যাঁ স্যার’’
‘‘এই মাসের প্রথম আর আগের মাসের শেষ মার্ডার কোথায় হয়েছে?’’
‘‘স্যার এই মাসের প্রথমে হবিগঞ্জ জেলারটার খবর এসেছিল, কিন্তু ফরেন্সিক রিপোর্ট থেকে জানা যায় ওটার মার্ডার হয়েছিল আরো দু তিন দিন আগে। আর আগের মাসের শেষেরটা ঢাকাতেই ছিল। ’’
‘‘হুম। রিপন হায়দার কি আসছে?’’
‘‘জি স্যার।’’
‘‘ওকে বলো আশুলিয়ার পরের বাস স্টপে যেন নেমে যায়।’’
‘‘ওকে স্যার।’’
রাসেল অনবরত কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না, হয়তো গাড়ীতেই ঘুমোচ্ছে।
‘‘স্যার রিসিভ হচ্ছে না।’’
‘‘রিসিভ না হওয়া অব্ধি কল দিতে থাকো।আগামী ত্রিশ মিনিটে যদি কল রিসিভ না হয় তাহলে সোজা সিআইডি অফিসে চলে যাবে, আর মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করবে।’’
তীব্র ইরফান শেখকে কল দিতে গিয়ে কল দিলো না, একটা ভয়েস ম্যাসেজ পাঠাল।
‘‘ইরফান সাহেব ফোর্সকে রেডি হতে বলুন, আমি ৩০ মিনিট পর নক দিলে সব বেরিয়ে পড়বেন।’’
তীব্রর মনে কিছু একটা গাইছে হয়তো কোনো একটা হিসেব মিলে যাচ্ছে যাচ্ছে।
ক্রিমিনাল ধরতে না পারলেও এর ইতিহাস উদঘাটন হয়ে যাবে।
মিনিটের কাটা ঘুরেই যাচ্ছে, রিপন হায়দার কল রিসিভ করছে না।
ত্রিশ মিনিট পেরিয়ে গেল,এবার তীব্রর নির্দেশ মতে সবাই বেরিয়ে পড়ল, এমন ভাবে বের হলো যেন মিডিয়া কিছু জানতে না পারে।
৩৫ মিনিট পেরুতেই রিপন হায়দারের নাম্বার থেকে কল আসে। রাসেল রিসিভ করে সাথে সাথে,
‘‘আসসালামু আলাইকুম স্যার।’’
‘‘ওয়ালাইকুম আসসালাম, দুঃখিত আমি ঘুমিয়ে গেছিলাম বাসে, ফোন বেজেছে আমি বুঝতেই পারি নি।’’
‘‘ইট’স ওকে স্যার। স্যার আপনি কোন পর্যন্ত এসেছেন?’’
‘‘আমিইই তো ঠিক বলতে পারছি না, এলাকাটা বেশ অন্ধকারই লাগছে।এলাকার নামও কিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না তেমন।’’
‘‘বাসের কোনো যাত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করবেন একটু স্যার?’’
‘‘বাসে কোনো যাত্রী নেই। সেদিনের মতো আমি আর ড্রাইভার ই।’’
রাসেল ফোন কান থেকে সরিয়ে তীব্রকে বলল,
‘‘স্যার উনি বলছেন সেদিনের মতো নাকি আজও গাড়ি ফাঁকা।’’
‘‘ফোনটা দাও।’’
তীব্র ফোন কানে নিল,
‘‘হ্যালো।’’
‘‘আসসালামু স্যার।’’
‘‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। রিপন সাহেব আপনি একটা কথা কান খুলে শুনুন, বাই এনি চান্স গাড়ি যদি ঢাকার আগে থেমে যায় আপনি সাথে সাথে আমাদের জানাবেন, সেদিনের মতো যদি কেউ আজকেও উঠে তবে তো কথায় নেই, প্রয়োজনে গাড়ি থেকে আপনি নেমে পড়বেন। সাথে সাথে অন্য গাড়িতে উঠবেন, অন্য গাড়ি কোথায় যাবে না যাবে সেটা জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। যদি দেখেন ওই গাড়িও জনশুন্য তবে অই গাড়ি থেকেও নেমে অন্য গাড়িতে উঠবেন।’’
‘‘ওকে স্যার।’’
‘‘আর শুনুন।’’
‘‘জি স্যার বলুন, ’’
‘‘গাড়ির জানালা দিয়ে চোখ রাখুন, আপনি যে গাড়িতে যাচ্ছেন সে গাড়ির পাশ দিয়ে যদি কোনো জনবহুল গাড়ি দেখেন তবে হাতের ইশারা করে থামাবেন, এই গাড়ি থেকে অই গাড়িতে উঠে পড়বেন।’’
‘‘ওকে স্যার।’’
‘‘হুম, সাবধানে থাকবেন, রাখছি।’’
তীব্র ফোন কেটে, রাসেলকে লোকেশন ট্র্যাক করে সেদিকেই যেতে বলল।
তীব্রর ধারণা অনুযায়ী কিলার সেই জায়গা থেকে বাসে উঠবে যেখান থেকে আগের দিন উঠেছিল। ওদিকে ইনফরমেশন পায় মিশানও বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছে। তিনে তিনে তেত্রিশ যেনো মিলতে বসেছে।
সব কিছুই তীব্রর প্ল্যান মতোই সেট করা থাকে, কিন্তু রিপন হায়দার টেনশনের মাঝেও ঘুম যেনো আটকে রাখতে পারে না। বাসে অনবরত ঘুমিয়েই যাচ্ছে।
‘‘রাসেল,’’
‘‘জি স্যার!’’
‘‘মৃত্যু কি একটা জিনিস তাই না? একটা হাদীস আছে শুনেছিলাম, যে যেখানকার মাটি দিয়ে তৈরী তার মৃত্যু সেই স্থানেই হয়। মৃত্যুর জাল তাকে নানান কৌশলে সেই স্থানে টেনে আনে।’’
‘‘মানে বুঝলাম না স্যার!’’
‘‘রিপন হায়দারের মৃত্যুটা কিন্তু যে স্থানে ছিল সেখানেই হতে পারতো, কিন্তু তাঁর মৃত্যু হবে ঢাকার গন্তব্য পথে।’’
রিপন হায়দারের বাড়ির নাম্বারটা পারলে কালেক্ট করো।
‘‘স্যার কোনো ভাবেই কি তাকে বাঁচাতে পারবো না?’’
‘‘আমার কোনো এংগেল থেকে মনে হয় না আমরা তাকে বাঁচাতে পারবো। তবে হ্যাঁ ৯৯% শিউর ক্রিমিনালকে ধরতে পারবো।
একজনের মৃত্যুর বিনিময়ে যে আরো কতজনের জীবন বেঁচে যাবে সেটাই এখন শান্ত্বনা।’’
‘‘স্যার কি এমন রিজন হতে পারে এদেরকে শিকারির মতো মারার?’’
‘‘সেটা কিলারের থেকেই জানতে পারবো। দেখা যাক কি হয়।’’
এদিকে খবর পায় মিশান বার থেকে মদের বোতল নিয়ে জুসের প্যাকেটের ভেতর ভরে খেতে খেতে ছন্নছাড়া হয়ে ঘুরছে, তীব্র একবার চাইলো যেনো ওকে ফলো করা বাদ দেয়, কিন্তু কি মনে করে যেনো সে বাঁধাটা দিলো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই মিশান একটা গাড়ি ধরে এদিকে যাত্রা নেয়।
আগের দিন মিশান যে এরিয়া থেকে গাড়িতে উঠে ঠিক তার ১০ মিনিট দুরত্ব থেকে ফোর্স সুন্দর মতো ক্রমে ক্রমে রেডি হয়ে থাকে।
এদিকে মিশান গাড়িতে উঠার সাথে সাথে ঘুমন্ত রিপন হায়দারের শরীরে এক জায়গায় মেডিসিন দিয়ে অবশ করে পয়জন ইনজেক্ট করে দেয়, যে পয়জনটা তার পুরো শরীরের রক্ত শিরাতে ছড়িয়ে পড়ে তাকে আস্তে আস্তে মৃত্যু অব্ধি নিয়ে যাবে।
সে সময় রিপন হায়দার কিছু বুঝতে না পারলেও কিছুক্ষণ পর ঘুম ভেঙে যেতেই ওকে দেখে গাড়ি থামিয়ে তীব্রর কথা মতো নেমে যায়। হয়তো এ যাত্রায় বেঁচে যেতো যদি না ঘুমিয়ে পড়তো গাড়িতে।
যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।
তীব্র নিশ্চিন্তে নিজের বাড়ি ফেরার পথ ধরল। এদিকে মিশানকে স্পেশাল গার্ড দিয়ে ঢাকাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কিন্তু মিশান চট জলদি কোনো প্রকার ছোটাছুটির চেষ্টা না করে ঠান্ডা মাথায় ভাবছে কিভাবে কি করা যায়।
যে করেই হোক দু একটা গুলি খেয়ে হলেও ঢাকা পৌঁছানোর আগে কিছু একটা করতে হবে। কোনো ভাবে যেনো ওর চেহারাটা ওদের সামনে না আসে, বাই এনি চান্স দেখে ফেললে অনেক বড় সমস্যায় পড়তে হবে, এখনো ওর টার্গেট ফিল আপ হয় নি। চেহারাটা যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে চোরের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে টার্গেট ফিল আপ করতে হবে।
শুধু তো তীব্র ওকে চিনে ফেলেছে, আরও সন্দেহ ভাজন কয়েকজন যোগ হয়েছে।
মিশান ঠান্ডা মাথায় প্ল্যান আটছে যারা দেখে নিয়েছে তাদের আজ রাতের মধ্যেই সরিয়ে দিতে হবে, না হলে মহা কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে।
কিন্তু কিভাবে কি করা যায়?
হঠাৎ করেই মিশান কন্ঠস্বর মোটা করে একজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘‘ভাই আজ সকাল থেকে আপনিই তো আমাকে ফলো করছিলেন তাই না? আপনার সাথেও যে আরেকজন ছিল উনি?’’
মিশান পুরো কথাটা আন্দাজি ঢিল ছুড়ল, ভাগ্যবশত ঢিলটা জায়গামতো গিয়ে পড়ল, এক জন কন্সটেবল মিশানের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘‘জি আমিই ছিলাম স্যারের সাথে।’’
‘‘ট্যালেন্ট আছে বস্ আপনাদের। সকাল থেকেই আমি আপনাদের নোটিস করেছি কিন্তু এরকম কিছু হবে ভাবতে পারিনি, তাই বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছিলাম।’’
‘‘অতি বুদ্ধিমানরা সব সময় ছোটো খাটো ভুল করেই ধরা খায়।’’
মিশান রহস্যময় ভাবে উত্তর দিল,
‘‘হুম্মম্মম, ঠিক বলেছেন।’’
‘‘স্যার আপনাদের পুলিশের ট্রেনিংয়ে কি মার্শাল আর্ট শেখানো হয়েছে?’’
‘‘নাহ, তবে এটা নাকি আমাদের শেখানো হবে শুনেছি।’’
‘‘তাই কুন্ডু?’’
‘‘নাহ এটাও কার্যকর হয় নি হবে তবে ক্যারাটি শেখানো হয় আমিও যাবো সামনে ট্রেনিং আছে।’’
‘‘ওহ আচ্ছা’’
মিশান কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে রইল, কিছুক্ষণ পর মনে হলো গলার কাছে বমি এসে রেস করছে।
‘‘ভাই লেবু হবে একটু?’’
‘‘গাড়ির ভেতর লেবু পাবো কোথায়!’’
‘‘ওকে আমি একটু বমি করছি আপনারা পা টা একটু সরান।’’
‘‘এই দাঁড়ান দাঁড়ান, আগেই করবেন না আমরা দেখি স্যারকে বলে গাড়ি থামিয়ে বাইরে নিয়ে বমি করার ব্যবস্থা করতে পারি কিনা।’’
‘‘শুকরিয়া স্যার!’’
বমি আটকে রেখে বসে রইল।
একজন অফিসার সিনিয়রকে কল দিলো,
‘‘হ্যালো স্যার, ক্রিমিনাল বমি করবে বলছে, অতিরিক্ত ড্রিঙ্ক করেই হয়তো এমন হয়েছে, গাড়ি থামাতে বলবো নাকি ভেতরেই বমি করতে বলবো?’’
ওপাশ থেকে কিছু একটা বলার পর পর ই গাড়ি থামাতে বলে। গাড়ি থামানোর পর একজন এসে কয়েকটা একটা পলিথিন দিয়ে যায়, সেটা মিশানকে দেয়া হলো, পলিথিন নেয়ার সময় খেয়াল করল বাইরের দিকে, ওরা ঠিক কোন জায়গাটাতে আছে। তাতে বুঝতে পারল সামনে একটা নদীর উপর চাপা ব্রিজ আছে। আর গাড়িতে ভেতর থেকে যে তালা দেয়া ছিলো সেটা এখন শুধু ছিটকিনি মেরে রাখল, হয়তো এই কারণেই বমি করা হয়ে গেলে আবার খুলতে হবে পলিথিন টা ফেলার জন্য।
মিশানের হ্যান্ডকাপ খুলে হাত পেছন থেকে এনে সামনের দিকে আটকে দেয়, যেনো পলিথিন ধরে ভালোমতো বমি করতে পারে।
মিশান অন্য দিকে ঘুরে পলিথিনে বমি করে, আচমকা ভাবে ইচ্ছেবশত মুখ ছাপিয়ে রেখেই কিছুটা বমি গাড়ির ভেতর করে দেয়, বাকিরা মদযুক্ত বমির গন্ধ্যে নাক আটকে চোখ বন্ধ করে নেয়। এই সুযোগে মিশান বমির পলিথিন টা একজনের দিকে বাড়িয়ে দেয়,
‘‘স্যার, প্যাকেট টা।’’
লোকটার গা ঘিনঘিন করেও লাভ নেই, বমি দেখে সবার বমির প্রকোপ অবস্থা। যেই ছিটকিনি টা খুলে বমি বাইরে ফেলতে যাবে, ঠিক তখনি কারেন্টের বেগে মিশান অই দুই পুলিশকে এমন ভাবে আঘাত করে যেনো সাথে সাথে লুটিয়ে পড়ে, এতোক্ষণ যে মারপিটের নাম গুলোর কথা জিজ্ঞেস করছিলো, সেটার কারণেই করেছিল এরা কেউ পারে কিনা, কারণ মিশান এগুলো অনেক ভাল পারে।বাইরের কান্ট্রিতে মিশনে যাওয়ার আগে এগুলো সব শিখেছিল। এখন এই টেকনিকে মারলে কেউ ওর সাথে পারবে কিনা, সেই হিসেবটাই মেলাচ্ছিলো।
একজনের থেকে একটা গান নিয়ে
জিওল মাছের মতো পিচ্ছিল মেরে এতোগুলো গার্ডের ভেতর থেকে
গাড়ি চলন্ত অবস্থায় মিশান লাফ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যায়, অন্য পুলিশ পেছন থেকে সাথে সাথে বেশ কয়েকটা গুলি চালায় সেখান থেকে একটা গুলি মিশানের হাতের ডানার মধ্যে লেগে যায় তাতে মিশান কাবু হওয়ার না, সেকেন্ডেই হাতের গান দিয়ে পয়েন্টে গুলি করে দুই হাতের হ্যান্ডকাপের শিকল কেটে ব্রিজ থেকে পানিতে ঝাপ দেয়।
(চলবে)