গল্প- তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি
পর্ব- ১৯
লেখিকা- রিয়া খান
তীব্র বসে বসে অপেক্ষা করছে কারো জন্য, বরাবর ই তীব্রর জন্য মানুষ অপেক্ষা করে কিন্তু আজই উল্টো দেখা যাচ্ছে।
এখানে তীব্র কোনো জরুরী কাজে আসে নি, দীপ্তি এমন ভাবে ডেকেছে মনে হচ্ছে কোনো জরুরী প্রয়োজনে ডেকেছে।
তীব্র কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে আসেনি এখানে। প্লেসটাও দীপ্তির বলে দেয়া, তীব্র এখান দিয়েই যাচ্ছিলো তাই উল্টো যেনো আসতে না হয় সেজন্য এখানেই বসে আছে। প্রায় দশ মিনিট অপেক্ষার পর দীপ্তিকে আসতে দেখলো।
দীপ্তি অনেকটাই তাড়াহুড়ো করে আসছিল, দীপ্তিকে দেখতে বেশ মাধুরীময় লাগছে, নীল সাদার কম্বিনেশন শাড়ির সাথে মিলিয়ে সাজগোজ করে এসেছে।
‘‘রাত করে এভাবে সেজে এসেছে কেনো এই মেয়ে? বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আসে নি তো আবার!
এখানেও সেই সাদাই পড়তে হয়েছে, আজব!’’
কথাগুলো তীব্র মনে মনে বলছে।
দীপ্তি সামনে এসে দাঁড়ালো।
‘‘হাই!’’
তীব্র ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘‘বসো।’’
‘‘সরি লেট হওয়ার জন্য, রাস্তায় জ্যামে পড়েছিলাম।’’
তীব্র মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে উত্তর দিলো,
‘‘ইট’স ওকে!’’
দীপ্তি বসতে বসতে আবার বলল,
‘‘আ’ম সো সরি তীব্র, তোমার টাইম ওয়েস্ট করার জন্য।’’
‘‘আরে বাবা ইট’স ওকে, কেনো বার বার সরি সরি করছো? ইংরেজ রা দেশ ছাড়ার সময় সব কিছু নিয়ে গেলেও, সরি শব্দটা ভুলে ফেলে গেছে, যার জন্য বাঙালী সস্তায় পেয়ে যখন তখন সরি শব্দটা ব্যবহার করে।’’
দীপ্তি লাজুক হেসে দিয়ে বলল,
‘‘ওকে আর বলবো না।’’
‘‘বলো কি জন্য ডেকেছিলে?’’
‘‘তোমার কি কোনো তাড়া আছে? মানে কোনো কাজ আছে?’’
‘‘নাহ, ফ্রি আছি বলো।’’
‘‘তাহলে তো হলোই, তোমার সাথে এমনিই এক কাপ কফি খাওয়ার ইচ্ছে ছিল।’’
‘‘কফি কেনো, ডিনার ই করো সমস্যা নেই।’’
‘‘না না আজ কফিই খাবো, ডিনার অন্যদিন।’’
‘‘ওকে এজ ইউর উইশ! বাই দ্যি ওয়ে, তুমি কি কোনো অনুষ্ঠানে যাবে নাকি কোনো অনুষ্ঠান থেকে এলে?’’
‘‘কেনো?’’
‘‘না মানে আগে কখনো তোমাকে এভাবে সাজতে দেখিনি তাই ।’’
‘‘না এমনিই, তোমার সাথে ফার্স্ট টাইম মিট করবো বলে হাল্কা সেজেছি!’’
‘‘হাল্কা সাজ!’’
মনে মনে বলল কথাটা, হাল্কা কাশি দিয়ে বলল
‘‘ফার্স্ট টাইম মিট কোথায়? তোমার সাথে সেই ছোটো বেলা থেকে দেখা হচ্ছে।’’
‘‘সেকাল আর একালের অনেক পার্থক্য আছে।’’
চোখ কুঁচকে তাকিয়ে তীব্র প্রশ্ন করল,
‘‘কি পার্থক্য?’’
‘‘তুমি কি সত্যিই বুঝো না তীব্র?’’
তীব্র একটু চুপ হয়ে গেল, দীপ্তি ঠিক কি বুঝাতে চাইছে, জিজ্ঞেস করলে যদি উত্তর না পায়, সেটা ভেবে এরিয়ে গেল টপিক।
‘‘অর্ডার টা দেই?’’
‘‘হুম শিউর।’’
তীব্র ওয়েটারকে ডেকে দু কাপ ক্যাপাচিনো অর্ডার করল।
তীব্রকে একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে তাপসিন চোখ
বড় বড় করে তাকিয়ে মিশানকে বলল,
‘‘আপি গো দেখো, ভাইয়া একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে।’’
‘‘বৃন্দাবন যাক আমার কি তাতে!’’
‘‘আরে একটাবার দেখো তো, মনে হচ্ছে গার্লফ্রেন্ডের সাথে ডেটিংয়ে এসেছে।’’
মিশান চোখ ঘুরিয়ে দেখল ব্যাপারটা, এতে মিশানের চিলতে পরিমাণেও কিচ্ছু যায় আসে না।
‘‘বাহ মেয়েটা দেখতে মাশ আল্লাহ! উনার সাথে মানাবে। দোয়া কর যেনো এখান থেকে বেরিয়ে দুজন কাজী অফিসে যায়, আর আমার মুক্তি মেলে।’’
‘‘আপি যতোই বলো, তোমারই বর। অন্য একটা মেয়ের সাথে তাও আবার তোমারই সামনে প্রেম করছে!’’
মিশান কিছুক্ষণ থেমে থেকে তাপসিনের দিকে ঝুঁকে বলল,
‘‘প্রেম করছে?’’
‘‘তাই ই তো।’’
‘‘তুই শিউর?’’
‘‘দেখে মনে হচ্ছে, তবে এইবার ১০০% না ৯৯% শিউর, ১% এরও মার আছে ।’’
মিশান একটু ভেবে চিন্তে আবার বলল,
‘‘তারমানে মেয়েটা উনার জি এফ?’’
‘‘৯৯%।’’
মিশান আবারো ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের কথা বলার ধরণ লক্ষ্য করল।
‘‘যদি কোনো ক্লাইন্ট হয়?’’
‘‘আর যাই হোক আপি, এই মেয়ে ক্লাইন্ট না। কিছু একটা কাহিনী আছেই। তীব্র ভাইয়া না হয় ভালো কথা বললেও মনে হয় ঝগড়া করছে, কিন্তু তুমি লক্ষ্য করো
মেয়েটার কথা বলার ধরণটা, কেমন লাজুক লাজুক ভাব নিয়ে মিষ্টি হেসে কথা বলছে, তীব্র ভাইয়াও মাঝে মাঝে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।’’
‘‘তাপসিন!’’
‘‘বলো,’’
‘‘সুযোগ বার বার আসে না। যদি এটা তাঁর গার্লফ্রেন্ড হয় তবে এটাই সুযোগ এশিয়ান বাঁশ দেয়ার।’’
‘‘কি করবে এখন?’’
‘‘কয়টা বাজে?’’
‘‘১০ টা।’’
‘‘শালা এখানে বসে টাকার অভাবে শুকনো পিজ্জা চাবাচ্ছি, আর অই ব্যাটা ডেটিংয়ে এসেছে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে টাকা উড়াতে! জানিস, বিকেলে উনার কাছে মাত্র দশ হাজার টাকা চেয়েছিলাম। পকেট থেকে টাকার বান্ডিল বের করে মাত্র এক হাজার টাকা দিয়েছে। এবার দেখ খেলা কোন দিকে নেই, বসে বসে সিনেমার ফিল নে।
আগুন লাগিয়ে আসি।’’
কফি দিয়ে ওয়েটার চলে যাওয়ার পর দীপ্তি তীব্রর দিকে একটু অন্য রকম নজরে তাকিয়ে আছে, তীব্র আড়চোখে দেখে পরিস্থিতি কিছুটা আঁচ করতে পারলো। মহা মাইনকার চিপায় পড়ে গেছে। কিছু বুঝেও না বুঝার ভান করে কফিতে চুমুক দিচ্ছে।
দীপ্তি লাজুক লাজুক ভাব নিয়ে বলল,
‘‘তীব্র!’’
‘‘হুম বলো,’’
দীপ্তি থেমে থেমে বলল,
‘‘I want to say something!’’
‘‘বলো,’’
তীব্র মনে মনে বলছে,
‘‘হে খোদা! এ আবার কোনো ভাবে প্রপোজ করে দেবে না তো? কি মুশকিলে পড়লাম! বেরুবো কিভাবে এখান থেকে?মেয়েটা অনেক নরম, ওকে আঘাত করেও কিছু বলা যাবে না। কিভাবে রিজেক্ট করব!’’
‘‘বাসা থেকে বিয়ের জন্য বেশ চাপ দিচ্ছে। আমি যতোই এস্টাবল হই না কেনো, বাবা মায়ের চিন্তার শেষ নেই আমাকে নিয়ে। যে ভাইয়া আমায় সব সময় সাপোর্ট করে সে ভাইয়াও আমাকে বলছে বিয়ে করতে। সবার শুধু একটা প্রশ্ন কোনো পছন্দ আছে কিনা, ছেলে দেখতে শুনতে যেমনই হোক আমার পছন্দের ছেলের সাথেই বিয়ে দেবে।
আমি বাসায় এখনো কোনো এন্সার জানায় নি।’’
‘‘তাহলে কি করতে চাচ্ছো? বিয়ে করছো না কেনো?’’
‘‘দু বছর আগেও তুমি আমায় বলেছিলে তোমার কিছুদিন সময় লাগবে, এখনো কি একই কথা বলবে?’’
‘‘কি বলেছিলাম?’’
‘‘তুমি নিজে থেকেই আমাকে বলেছিলে, যতক্ষণ তুমি না ফিরছো, আর তোমার এন্সার না জানাচ্ছো, তোমার জন্য অপেক্ষা করতে। কোনো ভাবেই যেনো তাড়াহুড়ো করে বা তোমায় না জানিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে রাজি না হই।
তীব্র আবার মনে মনে বলতে লাগল,’’
‘‘হাইরে তীব্র, আর কি করেছিস? নিজের কেসে নিজেই ফেঁসে গেলাম! কি করবো? হে মাবুদ রক্ষা করো এ যাত্রায়!’’
‘‘কিছু বলছোনা যে?’’
‘‘আসলে বিয়ের ব্যাপারটা সারাজীবনের জন্য, তাই সময় যেহেতু আছেই, ভেবে চিন্তে করাই ভালো। তাড়াহুড়ো করে ভুল ডিসিশন নেয়া যাবে না।’’
দীপ্তি মুখ শুকনো করে বলল,
‘‘তুমি কি আরো সময় নিতে চাচ্ছো তীব্র?’’
তীব্র আবার মনে মনে নিজেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে,
‘‘লাইক সিরিয়াসলি তুই এরকম একটা মেয়ের থেকে বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে, ঝুলিয়ে রেখেছিলিস তীব্র ? এসব মেয়েকে নগদে বিয়ে করে ফেলতে হয়! কিন্তু আমি এরকম একটা ব্লান্ডার করলাম কি করে! তীব্র ভাব ভাব দীপ্তিকে বুঝা তোর বিয়ে করা পসিবল না ওকে! কিন্তু তীব্র তুই কবে ওকে এভাবে সিরিয়ালে রেখেছিস? মনে পড়ছে কিছু! নাকি জানিই না!’’
মনে মনে তীব্র নানান রকম কল্পনা করছে, কিন্তু মাথায় কিছুই ধরছে না, আগে যদি বুঝতো দীপ্তি এরকম পরিস্থিতিতে ফেলবে তাহলে প্রস্তুতি নিয়েই আসতো।
হাল্কা গলায় কাশি দিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় ই মিশাম তীব্রর পেছন থেকে নিজের হাত দিয়ে তীব্রর চোখ চেপে ধরলো। এই দৃশ্য দেখে দীপ্তি পুরো সুইচ হয়ে গেছে। ড্যাবড্যাব করে মিশানের দিকে তাকিয়ে আছে।
তীব্র চোখের উপর থেকে হাত সরানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
‘‘কে?’’
মিশান কন্ঠস্বর অন্য রকম করে বলল,
‘‘গেস করো!’’
‘‘আরে ভাই কি গেস করবো, এরকম চোখ ধরাধরির সম্পর্ক নেই আমার কারো সাথে।’’
মিশান তীব্রর চোখ ছেড়ে দিয়ে, ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
‘‘বেইবি ইট’স মি!’’
মিশানের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
‘‘এ আবার কোন নাটক শুরু করল! যাকগে ভালোই হয়েছে।’’
‘‘তুমি এখানে?’’
‘‘আমি তো এখানে আমার ফ্রেন্ডের সাথে এসেছিলাম, বাট বেবি তুমি তো কিছুক্ষণ আগেও বলছিলে অফিসে আছো, তাহলে এখানে কি করে? জান তুমি আমার সাথে মিথ্যে বলেছ! ’’
মিশানের কথাবার্তা শুনে তীব্র পুরো ফিউজ! দীপ্তি তীব্রর দিক শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।
‘‘তীব্র উনি কে?’’
মিশান দীপ্তির মুখের দিকে তাকালো, তীব্র মিশানের মুখের দিকে, আর দীপ্তি তীব্রর উত্তর শোনার জন্য অধীর আগ্রহ দৃষ্টি প্রকাশ করছে।
মিশান তীব্রর দিকে তাকিয়ে একটু ন্যাকামো মিশিয়ে কাঁদোকাঁদো ভাব নিয়ে বলল,
‘‘জান! উনি কে? তুমি কি আমার আড়ালে আমার সাথে চিট করার চেষ্টা করছো?
বছরের পর বছর আমার সাথে অভিনয় করে যাচ্ছো! তুমি আমাকে ধোঁকা দিচ্ছিলে!’’
দীপ্তি পরিস্থিতি দেখে প্রায় কান্না করে দেবে দেবে ভাব, ও শুধু তীব্রর মুখের উত্তর শুনতে চাইছে।
‘‘তীব্র উত্তর দিচ্ছো না কেনো?’’
মিশানের অভিনয় দেখে তীব্র আর ইহজগতে নেই। দীপ্তি একটু ঝাঁকি দিয়ে প্রশ্ন করায় তীব্র বাস্তবে ফিরলো।
‘‘দী দী দীপ্তি শি ইজ….
আই মিন শি ইজ মি মিশান, আমার গার্লফ্রেন্ড। এন্ড মিশান, ও দীপ্তি। আমার ছোটো বেলার ফ্রেন্ড।’’
‘‘ওহ আ’ম সো সরি বেইব, আমি তোমাকে ভুল বুঝছিলাম।’’
এবার দীপ্তির দিকে তাকিয়ে একটা চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
‘‘হ্যালো আপি! আ’ম সরি! আসলে তীব্র আমাকে আগে কখনো বলে নি ওর কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড আছে। ও হয়তো ভেবেছিলো আমি জানলে কষ্ট পাবো, বাট ইট’স নরমাল। একটা ছেলের মেয়ে ফ্রেন্ড থাকতেই পারে, আমারও ছেলে ফ্রেন্ড আছে। প্লিজ কিছু মনে করবেন না, আমি না বুঝেই উল্টো পাল্টা কথা বলেছি।
আর তীব্র! বাবু এই সামান্য একটা বিষয় নিয়ে আমার সাথে মিথ্যে কেনো বললে?
তুমি তোমার বাবুকে চেনো না?’’
তীব্র মিশানকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় দীপ্তি উঠে দাঁড়িয়ে তীব্রকে বলল,
‘‘তীব্র আমার একটা জরুরি কাজ পড়েছে যেতে হবে এখন। আমরা অন্য দিন মিট করবো কেমন?’’
‘‘বাট দীপ্তি কফিটা শেষ করে যাও।’’
‘‘না মানে কফিটা খেতে গেলে অনেক টাইম ওয়েস্ট হয়ে যাবে, আমি আসছি এখন। বাই!’’
বাই, বলেই দীপ্তি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে চলে গেলো।
তীব্র নির্বাক হয়ে দীপ্তির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। দীপ্তি চলে যেতেই মিশান ভিলেনের মতো কিটকিটে হাসি দিতে শুরু করল, যেনো তীব্রকে বাঁশ দিয়ে সফল হয়েছে বলে স্বর্গীয় সুখ পাচ্ছে।
আর তীব্র চোখ গরম করে মিশানের দিকে তাকিয়ে রইল।
‘‘কি স্যার? কেমন দিলাম বলুন? পুরো পাব্লিক প্লেসে স্মুথ একটা বাঁশ।
সকালে আপনি আমায় বেইজ্জতি করেছিলেন এখন আমি করলাম, হিসেব ইকুয়াল ইকুয়াল!’’
‘‘মজা লাগছে খুব তাই না?’’
‘‘আবার জিগায়!’’
‘‘খুব মজা?’’
‘‘ইয়েস স্যার!’’
‘‘আমারো মজা লাগছে।’’
নিমেষেই মিশানের হাসি মিশে গেল।তীব্রর দিকে মাথা ঝুঁকে চোখ কুঁচকে প্রশ্ন করল,
‘‘আপনার কেনো মজা লাগছে স্যার?’’
‘‘আমার প্রচ্চুর মজা লাগছে!’’
বাঁকা হাসি দিয়ে তীব্র মিশানের দুই গাল টেনে বলল,
‘‘এই না হলো আমার অর্ধাঙ্গিনী!’’
একটু আগেও ভাবছিলাম এখান থেকে কিভাবে বেরুবো, তুমি না চাইতেও আমার উপকার করে দিলে গো মিশান।
‘‘আমি আবার কি উপকার করলাম?’’
‘‘আমার ছোটো বেলার ফ্রেন্ড, বিয়ের জন্য প্যারা দিচ্ছিলো খুব, ইন্ডাইরেক্টলি না করা সত্ত্বেও বার বার বিয়ের জন্য প্যারা দেয়, এক কালে প্রেমের জন্য প্যারা দিতো এখন বিয়ে নিয়ে খেপেছে। ওকে ডিরেক্ট নাও করতে পারি না, খুব ভালো মেয়ে, মন মানুষিকতাও খুব নরম। তুমি এসে পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করে দিলে। আশা করি নেক্সট টাইম আর ও বিয়ে বিয়ে করবে না।’’
দীপ্তির সম্পর্কিত প্রায় সব কিছু মিশানকে খুলে বলল, দীপ্তি ওকে কতোটা ভালোবাসে, আর তীব্র ওকে কতোটা ইগনোর করে।
তীব্র কথাগুলো কত সহজে বলে দিলো,কিন্তু মিশান বুঝতে পারছে দীপ্তির ভেতরের ভেঙে যাওয়ার আওয়াজটা।
একটা মেয়ে একটা ছেলেকে ঠিক কতোটা ভালোবাসলে তার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে পারে। আর অপেক্ষা শেষেও যখন ভালোবাসার মানুষটিকে তো পায় ই না, উল্টো চোখের সামনে অন্য একটা মানুষের হতে দেখে।
মিশানের নিজের ভেতর গিল্টি ফিল হতে লাগলো, যদি আগে থেকে জানতো এসব তাহলে কখনোই এখানে আসতো না।
শুধু মাত্র তীব্রকে হেনস্তা করার জন্য ভুল ডিসিশন নিয়ে মেয়েটাকে কষ্ট দিলো।
‘‘স্যার উনাকে দেখে মনে হলো অনেক কষ্ট পেয়েছে। উনি তো দেখতেও বেশ সুন্দর মার্জিত, আপনি চাইলেই উনাকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে থাকতে পারতেন।
জানেন ই যখন আপনাকে এতোটা ভালোবাসে উনি, তারপরও কেনো উনাকে এতো কষ্ট দিলেন? আর বিয়ে যখন করবেন না, উনাকে অপেক্ষা করিয়েছেন কেনো? যখন বুঝতে পারতেন ও আপনাকে ভালোবাসে তখনি বলে দিতেন আপনি উনাকে ভালোবাসেন নি।’’
‘‘আরে আমি বলেছি অনেক বার, আর আমার কোনো অঙ্গভঙ্গিতেও প্রকাশ পায় নি ওকে আমি ভালোবাসি এরকম কিছু, ওকে আমি অনলি ফ্রেন্ড হিসেবেই দেখতাম। নিজের কোনো কাজ ওকে দিয়ে করাই নি, এমন না যে ওকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করে ছেড়ে দিয়েছি, সেরকম কিছুও না। যখন এক কোয়াটারে থাকতাম ছোটোবেলায় একসাথে খেলাধুলা করতাম, ক্যাডেটে চান্স পাওয়ার পর আমি চলে যাই।
ক্যাডেট থেকে বাসায় ফেরার পর ওর সাথে দেখা হতো, আমাদের বাসায় আসতো। আমার থেকে আমার মায়ের সাথেই বেশি কথা বলতো, আমার সাথে পড়া বিষয়ক কথা ছাড়া কোনো কথা হতো না। ও আমার অনেক জুনিয়র।
বড় হওয়ার পর ওর সাথে দেখাও কম কম হতো। দেখা হলে টুকিটাকি কথা হতো। এইটুকুতেই যদি কেউ আমায় ভালোবেসে ফেলে তাহলে আমার আর কি করার?
ওর সাথে আমার লাস্ট কবে দেখা হয়েছিলো সেটাও মনে নেই আমার, আর ও বলছে আমি নাকি ওকে বলেছি আমার এন্সার দিতে টাইম লাগবে।’’
‘‘স্যার!’’
‘‘বলো।’’
‘‘আমি আপনার কাছে এতো যুক্তি শুনতে চাই নি। একটা বিয়ে দিয়ে আপনি তিনটে জীবন নষ্ট করেছেন, প্রথমত নিজের জীবন, দ্বিতীয়ত দীপ্তি, তৃতীয়ত আমার।
তীব্র তুচ্ছ হাসি দিয়ে বলল,’’
‘‘তোমার ওটা আবার জীবন নাকি? নষ্ট হলেই কি না হলেই কি। ওটা এমনিতেই বুড়িগঙ্গা!’’
মিশান চোখ গরম করে তাকিয়ে রইল।
মোবাইলে সময় দেখে সাড়ে দশটা, মনে মনে জেদ ধরেছে যেভাবেই হোক আজকে তীব্রকে কারেন্ট খাইয়েই বাড়ি ফিরবে।
তাই নিজেকে নতুন অভিনয়ের জন্য নরম করল নিজেকে, নরম স্বরে বলল,
‘‘বাদ দিন স্যার। যা হয়েছে হয়েছেই, আফসোস করলে সব ঠিক হবে না। তাই হাসি মুখে মেনে নেয়াই শ্রেয়।’’
মিশানের চেহারার দিকে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে ভাবল,
‘‘ব্যাপার কি ডিগবাজী খেলো কেনো ও!
কাহিনী তো মনে হচ্ছে চলছে কিছু একটা!’’
মিশান তীব্রর চোখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে তীব্রর হাতের উপর হাত রেখে মৃদু স্বরে বলল,
‘‘স্যার!’’
মিশানের থেকে হাত ছাড়িয়ে সরিয়ে নিয়ে উত্তর দিলো,
‘‘বলো।’’
‘‘এভাবে হাত ছাড়ালেন কেনো?’’
‘‘আমার হিচপিচ লাগে। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলো, তেল মারার দরকার নেই।’’
মিশান নিজের চেয়ার টেনে তীব্রর পাশে রেখে গায়ের সাথে গা ঘেঁষে বসে আবারও আদুরে স্বরে বলল,
‘‘আমি না আপনার বউ? বউয়ের থেকে এভাবে কেউ দূরে থাকে?’’
‘‘চলো তাহলে রুমে যাই, হোটেলে বুক করবো? কোন হোটেলে যাবে?রেডিসন,সোনার গাঁও…(মিশান তীব্রর মুখ ছাপিয়ে ধরল)’’
‘‘ছিঃ ছিহঃ! কি বলছেন। আমি বলতে চাইছি আজ তো আমাদের বিবাহ বার্ষিকী, দেড় ঘন্টা পেরুলেই আজকের সময় শেষ। চলুন না আজকের এই তারিখটাকে আমরা স্মরণীয় করে রাখি কিছু স্পেশাল মুহুর্ত দিয়ে।’’
‘‘আরে বাবা সেজন্যই তো বলছি স্পেশাল মোমেন্ট, স্পেশাল এক্সাইটমেন্ট, স্পেশাল ফিলিংস, সব পাবে হোটেল বুক করবো?’’
‘‘ইশ আপনি বিন্দুকে সিন্ধু বানিয়ে ফেলছেন। কাল রাতেই তো বলছিলেন আজকের দিনের উপলক্ষে আপনার কাছে আমি কি চাই। মনে করে দেখুন আমি কিন্তু তখন হ্যাঁ না কোনো উত্তর দেই নি।’’
‘‘উত্তর দিলে না কেনো?’’
‘‘সারাদিন ভেবেছি কি চাওয়া যায়।’’
‘‘ভাবা হয়েছে?’’
মিশান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো।
‘‘ওকে বলো কি চাই?’’
‘‘তার জন্য শপিং মলে যেতে হবে।’’
‘‘ঠিক আছে চলো তাহলে।’’
‘‘স্যার আমার টেবিলে দু পিছ পিজ্জা আছে ওটা খেয়ে আসি, আমার বিলটাও দিয়ে দিন কেমন?’’
তীব্রর পাশ থেকে মিশান উঠে দৌড়ে গিয়ে তাপসিনের সামনে বসে বড় বড় বাইট দিয়ে পিজ্জা শেষ করে কোক হাতে নিয়ে খেতে খেতে উঠে গেল, তীব্র বিল দিয়ে আগে বের হয় মিশান আর তাপসিন পেছন পেছন যায়।
তীব্র মাথা ঠান্ডা করে বুঝার চেষ্টা করছে মিশানের মাথায় ঠিক কি চলছে। সারাজীবন তো হাত পেতে টাকা নেয়া ছাড়া মিশান আর কোনো আবদার করেনি, আজ সোজা শপিং মলে যাবে বলছে, যা আগে কখনো মুখ ফুটে বলেনি। শপিং মলে সাদরে ভেতরে ঢুকলো ওরা।
প্রায় এক ঘন্টার মতো সময় হবে, মিশান তীব্রকে নিয়ে ঘুরেই যাচ্ছে ঘুরেই যাছে, কিছু পছন্দও করছে না কিনছেও না।
তীব্র কিছু পছন্দ করে দিতে চাইলেও সেটাও সায় দিচ্ছে না।
অবশেষে তীব্র বিরক্ত হয়ে মিশানকে বললোম,
‘‘আজ রাত কি আমরা শপিং মলেই কাটাবো? বাড়ি ফিরবো না? কিছু কি কিনবে নাকি ঘুরতে এসেছো এখানে?’’
‘‘স্যার দাঁড়ান না খুঁজছিতো। পাচ্ছিনা জিনিস টা।’’
‘‘কি লাগবে নাম বলো, আমি এক মিনিটে খুঁজে বের করছি।’’
‘‘নাম কিভাবে বলবো স্যার? আমার তো কিছু পছন্দ হচ্ছেই না।’’
‘‘মানে কি! তুমি ঠিক করে আসো নি কি কিনবে?’’
‘‘পাগল নাকি! মেয়েরা শপিংয়ে আসার আগে মনে মনে কিছু ঠিক করে আসে না। এসে ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরে দেখে যেটা পছন্দ হয় সেটা নেয়।’’
‘‘তুমি যে মেয়ে সেটা আমি আজই জানতে পারলাম।’’
‘‘এই স্যার এই খবরদার পাব্লিক প্লেসে অপমান করবেন না। আমার মতো হাজারটা মেয়ে তাদের বর, বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে এখানে, ওরা তিন চার ঘন্টা ধরে ঘুরছে, তাতে টায়ার্ড হচ্ছে না। আর আপনি কেবল এক ঘন্টাতেই তেজ দেখাচ্ছেন!
এই তাপসিন তোর কি বিরক্ত লাগছে?’’
তাপসিন মাথা নাড়িয়ে না সূচক উত্তর দিলো। তীব্র তাপসিনের দিকে চোখ গরম করে তাকালো।
ছেলেটা বিপদে পড়ে মাথা নাড়ালো, মিশানের সাথে স্বায় না দিলে মিশান কেলাবে ধরে।
‘‘স্যার আপনার টায়ার্ড লাগলে, আপনি কোথাও বসে রেস্ট নিন,আর আপনার কার্ড টা আমায় দিন। আমার কিছু পছন্দ হলেই কিনে এসে পড়ব।’’
‘‘না আমি টায়ার্ড হই নি। তুমি ঘুরতে থাকো।’’
মিশান আগে আগে যাচ্ছে, পেছনে পেছনে তীব্র আর তাপসিন যাচ্ছে। মিশানের মতিগতি বুঝতে পারছে না, সঠিক কি করতে চাচ্ছে মেয়েটা। তীব্র তাপসিনের কাঁধে হাত রেখে বললো,
‘‘ব্যাটারি!’’
‘‘জি ভাইয়া।’’
‘‘জীবনে কোনো মেয়ের পেছনে এভাবে ঘুরি নি, এমনকি নিজের মা বোনের পেছনেও না। তোর বোন আমার ইমেজ টা নষ্ট করে দিলো।’’
‘‘আপনার বোন কতটুকু ভাইয়া?’’
তীব্র চোখ ঘুরিয়ে তাপসিনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,
‘‘সেটা জানা কি খুব প্রয়োজন?’’
‘‘না এমনিই জিজ্ঞেস করছিলাম।’’
তীব্রর হাত কাঁধে থেকে তাপসিনের মাথায় বুলাতে বুলাতে বলল,
‘‘তোর মাথার চুল গুলো জোস তো, মাথা ভরা সেইরকম চুল, আবার সিল্কিও!আরেকটু বড় করে রাখলে সুন্দর লাগবে। কোনো স্পেশাল কেয়ার করিস নাকি চুলের?’’
তাপসিন লাজুক লাজুক ভাব নিয়ে নিজের মাথা হাতাতে হাতাতে বলল,
‘‘আমার গোপন চুলের…’’
‘‘চুলের গোপন!’’
‘‘ওহ সরি, আমার চুলের গোপন রহস্য তেলের সাথে পেঁয়াজের রস আর একটু লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় দিয়ে এক দেড় ঘন্টা রেখে তারপর শ্যাম্পু করি। প্রতি সপ্তাহে একবার করি এতেই আমার চুল এতো ঘন আর সিল্কি হয়।’’
‘‘বাহ! চালিয়ে যা এভাবেই। মাথা টাক হওয়ার সম্ভাবনা নেই তাহলে।
চুল গুলো আরেকটু বাড়িয়ে রাখবি, আমরা তো সরকারি লোক মাথায় বড় চুল রাখার নিয়ম নেই। তোদের তো সুযোগ আছে।’’
‘‘তাতে কি হয়েছে ভাইয়া, চুল কেটে আসার পর বাবা ফিতা দিয়ে মাপে চুল ঠিক মতো কাটা হয়েছে কিনা। আর চুল বড় হওয়ার আগেই প্রতি মাসে চুল কাটায়।’’
‘‘তোর বাবা একটু বেশিই বুঝে! পেনশনে এলে তোদের জীবন টিকিয়ে রাখা বড্ড কঠিন হবে।’’
তাপসিন দুঃখের দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। বাবার জন্য অনেক ইচ্ছেই অপূর্ণ রয়ে যায়।
মিশান ঘুরতে ঘুরতে একটা মোবাইলের দোকানে দাঁড়ালো, তীব্র মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখে এটা মোবাইল শো রুম।
মিশানকে এখানে দাঁড়াতে দেখে বড় করে ঢোক গিললো। পকেট এবার বড় রকমের খালি হতে যাচ্ছে।
‘‘ভেবেছিলাম তো পাঁচ দশ হাজারেই কাহিনী খতম হয়ে যাবে, এখন তো মন অন্য কিছুই গাইছে!’’
মিশান কি মোবাইল কিনবে?
তীব্রর মনে পড়ে গেলো, কিছুদিন আগে মিশান সেল্ফি তোলার জন্য মোবাইল বের করে তীব্রর সামনে ধরতেই তীব্র ক্যামেরার দিকে তাকাতে না তাকাতেই মিশানের হাত থেকে মোবাইল ফেলে দেয়।
‘‘কদিন আগেই তো ওর ফোন টা আমিই ভেঙে দিলাম, এখন তো খাজনার থেকে বাজনাই বেশি! ফোন গুলোও তো কম দামী হবে না।’’
মিশান ভেতরে ঢুকেই একটা মোবাইল হাতে নিয়ে তীব্রকে দেখালো,
‘‘স্যার এটা নেবো! এটার অনেক রিভিউ দেখেছি আছাড় খেলে তো দূর হাতুড়ি দিয়ে পেটালেও ভাঙবে না।’’
তীব্র ফোনটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে সেলস্ ম্যানকে জিজ্ঞেস করল,
‘‘দাম কতো?’’
‘‘স্যার মাত্র ৭৫ হাজার স্যার।’’
‘‘৭৫!’’
মিশানের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘‘এটাই নেবে?’’
মিশান নগদে উত্তর দিলো
‘‘হ্যাঁ এটাই নেবো।’’
তীব্র মুখের উপর নাও করতে পারলো না, অসহায়ের মতো কার্ড বের করে বিল পে করল। মোবাইল প্যাকিং শেষে মোবাইলটা নিতে না নিতেই মিশান এরেকটা দোকানে ঢুকে গেলো, সেখানে গিয়ে ঘড়ি পছন্দ করে দাঁড়ালো ।
‘‘স্যার এই ঘড়িটা জোস না?’’
তীব্র ঘড়ি হাতে নিয়ে দেখে ওটার দাম বারো হাজার টাকা, দাম দেখেই মিশানকে বলল,
‘‘হ্যাঁ ঘড়িটা অনেক সুন্দর, কিন্তু তোমার এই চিকন হাতে মানাবে না। ওটা রেখে চলো এখন।’’
‘‘আরে স্যার! সুন্দর অসুন্দরের কি আছে? আমি সময় দেখতে পারলেই হলো। জানেন ই তো আমি সব সময় লেট করি, মোবাইলে যে সময় দেখা যায় সেটা আমার মনে থাকে না, তাছাড়া যতক্ষণে মোবাইল বের করে সময় দেখবো ততোক্ষণে আমি ঘড়িতে অনেক বার সময় দেখতে পারব।’’
‘‘ঠিক আছে তাহলে চলো আমি তোমাকে অন্য ঘড়ি কিনে দিচ্ছি। এসব ব্র্যান্ডের ঘড়ি পড়তে হবে না এগুলো টেকে না বেশি দিন । বাইরে থেকে তোমাকে আমি সুন্দর হাই কোয়ালিটির ঘড়ি ২৫০ টাকা দিয়ে কিনে দেবো।’’
‘‘না না আমি এটাই নেব। আর ব্র্যান্ডের জিনিসের গ্যারান্টি থাকে। জিনিস যেটা ভালো দাম তার একটু বেশি, জানেন না? আমি এটাই নেব।’’
‘‘আমার টাকা নেই এখন, অন্য দিন কিনে দেবো। আমি কথা দিচ্ছি, আমার টাকা’’ হলেই এটা কিনে তোমাকে দিয়ে আসবো।
‘‘বাকি বাবাজীর নাম ফাঁকি! এটা আমি এখনি নেবো, প্রয়োজনে টাকা ধার করে কিনে দিতে হবে।’’
পকেট থেকে কার্ড বের করতে করতে তীব্র মনে মনে বলছে,
‘‘এ তো দীপ্তির থেকেও কঠিন বিপদে ফেলল! শালার সেভিংস যা ছিলো সব গেল আমার। একে নিয়ে সংসার করতে গেলে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে বেতন বাড়িয়ে দেয়ার।’’
মিশানও মনে মনে হাসতে হাসতে বলছে,
‘‘ব্যাটা তীব্র আজ তোমায় জব্দ করেই ছাড়ব!’’
ঘড়ি কিনেই মিশান থেমে রয় নি,এরপর জামা কাপড়ের দোকানে ঢুকে ইচ্ছে মতো জামা শুধু হাতে উঠালো।ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় ১২ টা বাজা অব্ধি ইচ্ছে মতো কেনাকাটা করলো।
তীব্র মনে মনে শুধু নিজেকে গালী দিয়ে যাচ্ছে, কেনো আজ দীপ্তির সাথে দেখা করতে এসেছিলো। দেখা করতে না এলেই মিশানের সাথে দেখা হতো না, আর মিশানের সাথে দেখা না হলে এতো টাকা খরচও হতো না।
এতো এতো কেনাকাটা শেষে মল থেকে বের হওয়ার পালা। তীব্র এবার ভেতরে রাগ চেপে রেখেই মিশানকে তুচ্ছ স্বরূপ জিজ্ঞেস করল,
‘‘আর কিছু কেনার আছে মিশান?’’
‘‘নাহ স্যার, আজকের মতো এনাফ। আর আপনাকে ধন্যবাদ, আমাদের বিয়ের তারিখটা এভাবে স্মরণীয় করে রাখার জন্য।’’
‘‘এখন সোজা বাড়ি যাবে, রাস্তায় থেমে আবার বারে ঢুকে যেও না।’’
‘‘না স্যার কয়দিন বারে টারে যাবো না, ইভেন দিনেও বের হবো না। বাড়িতে কুটনীতিবিধ খালা এসেছে,বের হওয়া যাবে না।’’
‘‘ওটাকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিও, এরকম মহৎকর্মের জন্য তাকে আমার দলে নিযুক্ত করব, এবং মাসিক বেতনও দেবো।’’
মিশান তীব্রর দিকে ভেংচি কেটে, হাত থেকে শপিং ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে রেখে উঠে বসল।
তাপসিন গাড়িতে উঠতেই তীব্রকে বিদায় না জানিয়েই চলে গেল মিশান।
তীব্র দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে সর্বশান্ত ভাব নিয়ে মিশানের যাওয়া দেখছে,আব্দুর রহমান তীব্রর গাড়ি নিয়ে ওর পাশে ভীড়লো। তীব্রর কাটা ঘাঁতে নূনের ছিটে দেয়ার জন্য বলল,
‘‘স্যার পকেট কি সাথে আছে নাকি ওটাও নিয়ে গেছে?’’
তীব্র আব্দুর রহমানের দিকে চোখ গরম করে তাকালো।
গাড়িতে উঠার পর রহমান বলল,
‘‘স্যার দীপ্তি ম্যাডামকে কাঁদতে কাঁদতে বেরুতে দেখলাম, কিছু হয়েছিলো কি ওখানে? মিশান ম্যাডাম কি কোনো সিনক্রিয়েট করেছিল?’’
‘‘আরে না, মিশান আর কি সিনক্রিয়েট করবে ওর সাহস আছে? অবশ্য কাহিনী মিশানকে নিয়েই কিন্তু মিশান উল্টা পাল্টা কিছু করে নি। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।যদিও দীপ্তি কষ্ট পেয়েছে, ওকে কষ্ট দেয়ার মতো কোনো ইনটেনশন আমার ছিলো না, কিন্তু আমার আর কি করার বলো? জানোই তো তুমি সব।’’
‘‘জি স্যার। মন খারাপ করবেন না, সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।’’
তীব্র করুণ স্বরে বলল,
‘‘কিছুই ঠিক হবে না রহমান। কিছুই ঠিক হওয়ার মতো নেই।’’
মিশান তাপসিন বাড়ি পৌঁছানোর আগে দ্বীপ বাড়ি ফেরার পথে, দ্বীপ বাড়ি ফেরার আগে বড়রা দ্বীপের সম্পর্কে আলোচনা করছে, ড্রয়িংরুমে দ্বীপের বাবা, মা, খালামণি তাদের চিন্তা,
দ্বীপ কোনো ভাবেই বিয়ে করার জন্য রাজি হচ্ছে না ওকে কিভাবে রাজি করাবে বুঝতে পারছে না। তাদের মনে সন্দেহ জাগছে দ্বীপ মিশান যেরকম একে অপরের সাথে মিশে থাকে বন্ধুর মতো, কোনোভাবে ওদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলছে না তো?
তার উপর মিশানকে বিয়ের কথা বললে মিশান বিয়ের ব্যাপার এড়িয়ে যায়, দ্বীপকে বিয়ের কথা বললে দ্বীপও এড়িয়ে যায়।
কিন্তু সঠিক উত্তরটা কিভাবে জানবে?নাকি সোজাসুজি মিশান বা দ্বীপকেই জিজ্ঞেস করবে, বুঝতে পারছে না।
ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতের ব্যাপার, কোথাও জোর করে বিয়ে দিলে ভবিষ্যতে খারাপ পরিণাম আসতে পারে।
আজ সবাই এমন ভাবে ঘাটি গেড়েছে যে ফাইনাল সিদ্ধান্ত একটা নিয়েই ছাড়বে।
(চলবে)