তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি পর্ব-৪০

0
118

গল্প- তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি
পর্ব- ৪০
লেখিকা- রিয়া খান

বাইক স্টার্ট করে মিশান সামনের দিকে যাচ্ছে, মোড় ঘুরে বাম দিকে যাবে ঠিক তখনি একটা গাড়ি পেছন থেকে এসে ওর বাইকের সামনে থামানো হয়। মিশান গাড়ি ব্রেক করে , ড্রাইভারকে কেবল ই গালী দেয়ার জন্য মুখ খুলবে সেই সময় তীব্রর মা জানালা দিয়ে মুখ বের করে, মিশানকে ডাক দেয়।মিশান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চেনার চেষ্টা করে উনাকে।
তীব্রর মা গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে মিশানের দিকে,কাছাকাছি আসতেই মিশানের মনে পড়লো, এটা তীব্রর মা ।
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম, তুমি চিনতে পেরেছো তো মা?
-হ্যাঁ আন্টি,আপনি তীব্র স্যারের মা।
-যাক মনে রেখেছো।আমি তোমাকে অনেক্ষণ যাবৎ ফলো করছি, যখন জ্যামে আটকা পড়েছিলাম তখন দেখতে পেয়েছিলাম।
-কোনো জরুরী প্রয়োজন ছিলো কি আন্টি?
-জরুরী প্রয়োজন বলতে, একটু কথা ছিলো তোমার সাথে এই আর কি।
-হ্যাঁ বলুন আন্টি।
-এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে বলবো কিভাবে!
-ঠিক আছে চলুন তাহলে কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি।
-তুমি কি কোনো কাজে যাচ্ছো?
-না কাজ শেষ করেই ফিরছিলাম বাড়িতে।
-যদি তোমার কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে তুমি আমার সাথে আমাদের বাড়িতে চলো।এখান থেকে দূরে না, জ্যামে না পড়লে পাঁচ মিনিটেই পৌঁছে যাবো।
-আরে বাহ!এতো মেঘ না চাইতেও জল!ভাগ্যিস বুঝেনি কিছু, আমি এদের বাড়িই ফলো করতে যাচ্ছিলাম (মনে মনে)
-শিউর আন্টি। আপনি গাড়িতে উঠুন আমি পেছন পেছন আসছি।
-তুমি আবার পেছন থেকে কেটে পড়বে না তো?আমি তোমার সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, তোমাকে এই দেখি এই নেই।ডাক দিতে যাবো আর আগেই কেটে পড়ো। দীপ্তি মারা যাওয়ার পর তোমার ছায়াও মিলেনি।

মিশান একটু ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতাকি করে ভাবলো,তীব্রর মায়ের কথা ফেলে দেয়ার মতোও না, মাঝপথে আবার ভুলেও যেতে পারে তাকে ফলো করার কথা, দেখা যাবে অন্য কাজে কনভার্ট হয়ে গেছে।
-আন্টি যদি কিছু মনে না করেন, যেহেতু আপনার বাড়ি কাছেই, তাহলে আপনি আমার বাইকে উঠুন।এখানে আশেপাশে পার্কিংয়ের কোনো জায়গাও দেখছি না।না হলে আমি বাইক রেখে আপনার সাথে যেতাম।বাইক টা আমার নিজের না তাই রাস্তার কোনো সাইডে রেখে যাওয়ার মতো সাহসও পাচ্ছি না।
-সমস্যা নেই মা, আমি তোমার বাইকেই উঠছি।
মিশান নিজের হেলমেট খুলে তীব্রর মাকে দিলো মাথায় পড়ার জন্য, তীব্রর মা নিতে না চাইলেও মিশান জোর করে পড়িয়ে দেয়।এরপর তীব্রর মা বাইকে উঠে।সামনের গাড়ি ফলো করে তীব্রর বাড়িতে পৌঁছে যায়।

তীব্রর মা মিশানকে নিয়ে ভেতরে বসে,কাজের লোক এসে তীব্রর মায়ের ব্যাগ এগিয়ে নিয়ে যায়।
-আপনি কোথাও গিয়েছিলেন আন্টি?
-আমি একটু দীপ্তিদের বাড়ি গিয়েছিলাম,কাল সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম,রাতে ফিরতে দেয় নি ওর মা, তাই মাত্র এলাম।
-একা একাই গিয়েছিলেন?
-হ্যাঁ,আর কে যাবে। দীপ্তির মা আমার অনেক ঘনিষ্ঠ, আমাদের সম্পর্ক বান্ধুবীর মতো।তীব্র চাইলে সম্পর্ক টা আরো ঘনিষ্ঠ হতো, সেটা তো হলো নাহ!তাঁর আগেই মরে গেলো মেয়েটা।
-দীপ্তি ম্যাডাম অনেক ভালো একজন মানুষ ছিলেন।সৃষ্টিকর্তা উনাকে পরকালে শান্তি দিক।
-হ্যাঁ সেটাই, বাবা মা বেঁচে থাকতে সন্তানের মৃত্যু দেখাটা যে কতো যন্ত্রণার সেটা কেবল সে পিতা মাতাই জানে।
আজ যদি আমার তীব্রর কিছু হয়ে যায় তাহলে কার কি হবে জানি না আমি ঠিক মরে যাবো।
-হ্যাঁ সেটাই তো স্বাভাবিক।
-তুমি তো এর আগেও আমাদের বাড়িতে এসেছিলে, কিন্তু সেদিনের পরিস্থিতির জন্য আমার মনে অনেক নেগেটিভ চিন্তা ছিলো তোমাকে নিয়ে। যখন দেখলাম দীপ্তিকে তুমি বাঁচানোর চেষ্টা করেছো, তখন চিন্তায় কিছু পরিবর্তন এলো।মেয়েটা বেঁচে না ফিরলেও কিছুদিন তো বেঁচে ছিলো, সেটা কেবল তোমার মাধ্যমেই আল্লাহ ওকে সুযোগ দিয়েছিলো। সেদিন থেকে মনে হলো তোমার সাথে একটু কথা বলা জরুরী।
-আন্টি সেরাতের জন্য আমি এক্সট্রিমলি সরি!অই রাতে আসলে আমি পরিস্থিতির স্বিকার হয়েছিলাম। যা হয়েছিলো সবটা আনফরচুনেটলি।
দিনের বেলা যখন আমি রিয়ালাইজ করতে পারলাম একটা বাজে ব্যাপার ঘটে গেছে, আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করি, আপনার বাড়ির এড্রেস টা তো আমার জানা ছিলো না, আর নেশার ঘোরে রাতে কিভাবে এখানে এসেছি গিয়েছি কিছুই খেয়াল করতে পারছিলাম না।আমার শুধু মনে হচ্ছিলো আমি একটা বাড়ি গিয়েছিলাম,সেখানে আপনি ছিলেন, আপনি আমাকে দেখে ভয়ও পেয়েছেন, বিশেষ করে আমার হাতের ছুরি দেখে।এরপর এখান থেকে চলে গেছি।
আমার মনে হয়েছিলো আপনার কাছে ক্ষমা চাওয়াটা প্রয়োজন, আপনার মনে আমাকে নিয়ে ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে।
-তুমি সে রাতে ওভাবে নেশা করেছিলে কেনো মা?
-আসলে আন্টি সেদিন যা হয়েছিলো আনফরচুনেটলি,আমি ইচ্ছে করে করি নি। আমার এক ফ্রেন্ডের বার্থডে ছিলো,সেখানে আমাকে জোর করে ড্রিঙ্কস করিয়েছিলো, যার কারণে আমি তালগোল কোনো কিছুর দিশে পাচ্ছিলাম না।আর সেদিন আপনার দিকে ছুরি ধরেছিলাম, নিজের আত্মরক্ষা করার জন্য।
আত্মরক্ষার জন্য আমি সব সময় সাথে ছুরি রাখি, বলা যায় না কখন কোন বিপদে পড়ি
আমি সত্যিই দুঃখিত আন্টি।
আপনি আমাকে খারাপ মেয়ে ভাববেন না।
ভেবেছেন হয়তো নাইট ক্লাব থেকে পার্টি করে নেশা করে ফিরছিলাম।

– না না মা!এখানে খারাপ মেয়ে ভাবার কি হলো,বিপদ মানুষেরই আসে।এটা নিয়ে এতো অনুতপ্ত হয়ে পড়ো না।
-ওকে আন্টি।
-আচ্ছা দীপ্তি তো অনেক রাতে এক্সিডেন্ট করেছিলো, তুমি অতো রাতে বাইরে কি করছিলে?
তোমার হাইট যেরকম,তাতে মনে হয় পুলিশের চাকরি করো।
তোমার কি অইদিকে ডিউটি ছিলো?
– আন্টি আমি কোনো চাকরিই করি না।
আগে করতাম,আমি সেনাবাহিনী ছিলাম।
প্রায় এক বছর আমি চাকরী ছেড়ে দিয়েছি।
-চাকরি ছেড়ে দিয়েছো কেনো?
-একটা বোন ছিলো ও মারা গেছে, ওর মৃত্যুর পর আমি মেন্টালি নিতে না পেরে ভেঙে পড়ি।আমাকে এক কথায় সাইকো বলতে পারেন,কঠিন নাইটমের প্রবলেমে ভূগছি।
মনভোলা রোগে আক্রান্ত হয়ে যাই, কখন কি করি তাঁর ঠিক নেই,এরকম হাজারটা সমস্যা মিলিয়ে আমার দ্বারা চাকরী কন্টিনিউ করা পসিবল হচ্ছিলো না।
-তোমার পরিবারে কে কে আছে?
-মামা,মিমি,দুটো মামাতো ভাই আর আমি।
এই চারজনের সাথেই আমার জীবন।আমার মামা একজন কর্নেল, আর আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম।
-আর তোমার বাবা মা?
-নেই।
-ওহ সরি,কষ্ট দিয়ে ফেললাম তোমাকে।
-ইট’স ওকে আন্টি,এক্সিডেন্ট মানুষের জীবনেই হয়।আমার ভাগ্যে ছিলো এমনটা তাই আজ আমি এমন।
দীপ্তি ম্যাডামের এক্সিডেন্টের রাতে আমি এমনিই হাঁটাহাঁটি করছিলাম,তখনি আর কি ঘটনাক্রমে আমি অইখানে উপস্থিত হই।
-তীব্র কি তোমার পরিচিত?
-পরিচিত বলতে উনার সাথে রাস্তায় দুই একবার সম্মুখীন হয়েছিলাম,স্যার হয়তো আমাকে চেনেন কিন্তু আমি উনার নাম আর পেশা ছাড়া আর কিছু জানতাম না। দীপ্তি ম্যাডামের অই ঘটনার পর স্যারের সাথে বেশ কিছু সময় কাটাতে হয় সাক্ষীসাবুদের জন্য।
-বুঝতে পেরেছি।তীব্রকে তোমার কথা বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছি,ও কোনো উত্তর দেয় নি।তোমার বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে ও এড়িয়ে যায়। তোমার সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো এই কারণেই,আমি তোমাকে তীব্রর সাথে বেশ কয়েকবার দেখেছি। তীব্রর ধারে কাছে কখনো কোনো মেয়েকে দেখি নি ওভাবে কিন্তু তোমাকে দেখেছি,তাই মনে হলো তুমি হয়তো ওকে চেনো ওর ভেতর টা বুঝো।
আমার ছেলেটা যেনো কেমন! সেই আগে থেকেই, কারো সাথে মিশে না তেমন,মনের ভাব প্রকাশ করতে যেনো ওর কিসে বাঁধা দেয়।এক ছাদের নিচে থাকলেও ছেলেটার জীবন বৃত্তান্ত সব অজানা। কখন কি করে, কোথায় যায়, ভালো আছে কিনা মন্দ আছে,কি প্রয়োজন এসবের কিছু বলে না। ওর ঘরটার ভেতরে কি আছে তাও অজানা।
-কেনো উনার ঘরে যান না?
-কি করে যাবো? অই ঘরের যে দরজা সেটা তো সিকিউরিটি লক করা, হয় তীব্রর ফিঙ্গারপ্রিন্ট লাগবে নয়তো পিনকোড।তা ছাড়া ঘর ওটা খুলা যায় না, অই ঘরে ও কাউকে ঢুকতে দেবে তো দূর উঁকিও দিতে দেয় না। যখন এই বাড়িটা করা হলো তখন ই একজনকে নিয়ে ঘরের ভেতর সেটিং করায়।আর কেউ বলতে পারবে না ওর ঘরের ভেতর কি আছে কি নেই।
-উনি এমন কেনো?
তীব্রর মা হতাশা নিয়ে বললো,
-জানি নাহ, ছোটো বেলা থেকেই যেনো কেমন ও। ওকে নিয়ে আমার অনেক দুঃখ। বড় হয়েছে কিন্তু দায়িত্ব জ্ঞান হয়নি মনে। আগে সব সময় লেখাপড়ার তাড়া দেখাতো আর চাকরি হওয়ার পর কাজের তাড়া।ওর বাবা কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়, হসপিটালে এডমিট থাকে, অথচ তীব্র একটাবারও দেখতে গেলো না,ওর বাবা মনে মনে খুব কষ্ট পায় কিন্তু ছেলের সামনে তো আর প্রকাশ করে লাভ নেই।
কিন্তু সেদিন একটু অবাক হয়েছিলাম, দীপ্তিকে দেখতে তীব্র হসপিটালে চলে গিয়েছিলো।
আমরা সবাই জানি কিশোর বয়স থেকেই তীব্র দীপ্তিকে পছন্দ করে।অথচ ও ইদানীং এমন হয়েছে সেই দীপ্তিকেই বিয়ে করতে নারাজ। বলে কিনা বিয়েই করবে না।
ওর রহস্যভরা জীবন আমি চোখে নিতে পারি না।
-ব্যাপার কি, নিজের মা এই কথা বলছে!
ঝলকের আগে এই শালার রহস্যটা আগে ভেদ করতে হবে।আমি তো ভেবেছিলাম শুধু আমার সাথেই এমন! এখন দেখি নিজের পরিবারের সাথেও!(মনে মনে)

তীব্রর মায়ের সাথে বসে বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে কথা বললো মিশান,এর মধ্যে তীব্রর সম্পর্কে অনেক কিছু জানলো। মিশানের ভেতর ঝলকের মৃত্যুর রহস্য নিয়ে যতোটা কিউরিয়াসিটি তাঁর থেকে বেশি কিউরিয়াসিটি কাজ করছে তীব্রর রহস্য উৎঘাটনের ব্যাপারটা।তীব্রকে নিয়ে তীব্রর মা বেশ কিছুক্ষণ আক্ষেপ প্রকাশও করলো।তীব্রর মার মনে অজানা সন্দেহ ঢুকেছে, তীব্রর সাথে মিশানের হয়তো কোনো সম্পর্ক আছে কিন্তু ওরা কেউ তাঁর সামনে প্রকাশ করছে না। সেজন্য মিশানের সাথে কথা বলার জন্য এতো ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলো।মিশানের সাথে কথা বলে যেনো উনার ভেতর টা একটু হাল্কা হয়।

মিশানের মাথায় এখন তীব্রর ব্যাপারটা ছাড়া আর কারোটা নিতে পারছে না।

একের পর এক চিন্তা মনে হচ্ছে, তীব্রকে সকাল থেকে এতোবার কল করে যাচ্ছে তীব্র একবারও রিসিভ করছে না।
তীব্রর মায়ের সাথে কথা বলে বাড়ি থেকে বের হবে অমনিই তীব্রর সামনে পড়তে হলো।তীব্রকে দেখে মিশানের ভেতর খানিকটা ভয় কাজ করতে লাগলো, এভাবে তীব্রর পারমিশন ছাড়া ওর বাড়িতে আসাটা তীব্র এলাও করবে না।
-স্যা স্যার, আ আমি নিজে থেকে এখানে আসি নি।আ আন্টি আসতে বলেছিলো তা তাই!
তীব্র ফরমাল হাসি দিয়ে মিশানের দিকে রহস্যভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-ইট’স ওকে।ভয় পাওয়ার কি আছে,তুমি তো আর চুরি করতে আসো নি!
এখনি চলে যাচ্ছো যে? বসো লাঞ্চ করে যাও।
-না স্যার, আমার মিমি আমার জন্য রান্না করে বসে আছে।
এটা বলেই মিশান তীব্রর পাশ কাটিয়ে চলে যায়।তীব্র আড়চোখে মিশানের যাওয়া দেখে নজর ফিরিয়ে ভেতরে ঢুকলো।

মিশান তীব্রর কথোপকথনে তীব্রকে দেখে মিশানের চোখে আচমকা ভয় দেখে তীব্রর মায়ের মনে খটকা লাগলো,উনার মন যেনো কেনো অকারণে তীব্রকে দিয়ে মিশানকে কিছু একটা সন্দেহ করছে। তীব্রর মা বোকা বোকা আর অসুস্থ ভাব নিয়ে থাকলেও ভেতরে ভেতরে উনি যথেষ্ট চালাক যেটা কাউকে বুঝতে দেন না,রাজনীতি উনি অনেক ভালোই বুঝেন । উনার পেট থেকেই তীব্র জন্ম নিয়েছে তাই তাঁর থেকে কয়েক ডিগ্রী উপরে তীব্র হয়েছে।মায়ের থেকে ছেলে দশ কাঠি উপরে হওয়ার কারণে পেরে উঠে না তীব্রর সাথে।
তৃপ্তিও মায়ের মতো চিকন চালাক হয়েছে, কিন্তু ওদের মায়ের কথায় ব্যাপারটা প্রকাশ না পেলেও, তৃপ্তির কথার মাঝে ওর চালাকি প্রকাশ পায়।

তীব্রর বাবাও যথেষ্ট বুদ্ধিমান, তবে উনি প্রচুর শৌখিন মানুষ। পেনশনে আসার পর উনি ঘুরাফেরা করেই জীবন কাটাচ্ছেন। শপিং মলে তাঁর কয়েকটা বন্ধুদের দোকান আছে, সেখানেই তাদের সাথে গল্প আড্ডা, চা স্টলে বন্ধুদের সাথে চা খেয়ে, গল্প করে দিন কাভার হয়ে যায়,ঘরে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা নিয়ে তাঁর মাথা ব্যাথা নেই। উনার মতে,জীবনে অনেক করেছে পরের কথা চিন্তা করা,এবার যতোদিন বেঁচে থাকবে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাববে, নিজেকে সময় দেবে, নিজেকে ভালো রাখবে।
কোথায় কি হলো সে নিয়ে মাথায় চিন্তা নেই।

-বাবু তোর সাথে কথা আছে আমার।

তীব্র গম্ভীর স্বরে উত্তরে বললো,
-আমার নেই,কাজ আছে। সময় হলে বসবো তোমার কথা শুনতে।
-তুই কেনো বার বার এড়িয়ে যাস আমার কথা? মিশান মেয়েটার কথা তুললে তুই ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাস,কেনো?
ওর সাথে তোর কি সম্পর্ক?
-ওর সাথে আমার আবার কি সম্পর্ক! তোমার সমস্যা টা কি বলোতো? রাস্তা ঘাটে থেকে একটা মেয়েকে বাড়িতে ধরে এনে আমাকে জিজ্ঞেস করছো তাঁর সাথে আমার কি সম্পর্ক! এসব কি?
-কারণ রাস্তা ঘাটেই তোকে আমি অই মেয়ের সাথে বারবার দেখেছি, আর কোনো মেয়েকে তো তোর সাথে দেখতে পাই নি। আর তাই ওকে আজ বাড়িতে এনে ওর স্বীকারোক্তি নিলাম।

পাশ কাটিয়ে যেতে চেয়েও যেতে পারলো না তীব্র,মায়ের কথায় থেমে গিয়ে পেছন ঘুরে তাকায়। মায়ের চোখের দিকে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-কার কথায় নাচছো বলোতো?
-তুই বল তুই কেনো এমন লুকাচুপি খেলছিস?তোর কিসে এতো বাঁধা দেয়, আমাদের সব খুলে বলতে?
-কি স্বীকারোক্তি নিলে শুনি?
-যেটা তুই বলতে পারছিস না আমাদের।
-অই মেয়েটার সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই যেটা তুমি ভাবছো।ও সেনাবাহিনীর লোক হলেও কাজ করে ডিটেকটিভের মতো। ওকে মাঝে মাঝে আমার ইনভেস্টিগেশনের কাজে ব্যবহার করি, দ্যাটস ইট।আর আমার প্রফেশনাল কাজের জন্য অবশ্যই অই মেয়েকে আমার বাড়িতে এনে গল্প গুজব করবো না, ওর সাথে রাস্তা ঘাটেই দেখা করে কাজ দিবো, তাই না? মেন্টালি কোথায় যাচ্ছে তোমার? বিকৃত মস্তিষ্ক!
তুমি লোকের কাছে বলো না, তোমার ছেলেটা যেনো কেমন,তোমাদের সাথে ভালোমতো কথা বলে না, খোঁজ নেয় না, এটা আদৌ ছেলের দোষ না কার সেটা একটু ভেবে দেখো।
কোথায় বাবার সাথেও তো আমি কথা বলিনা তেমন।সে তো তোমার মতো ঢোল পেটায় না।তোমরা মেয়েরাই কি এমন?একটু সিম্প্যাথির জন্য যা ইচ্ছে হয় লোকের কাছে বলে বেড়াও! যুক্তি ছাড়া অযৌক্তিক কোনো কথা আমার সামনে পেশ করবে না। দশবার ভেবে নিবে , কথাটা তীব্রর সামনে বলতে যাচ্ছো।

রাগ দেখিয়ে মাকে থামিয়ে দিয়ে তীব্র মায়ের সামনে থেকে চলে যায়।
তীব্রর মা একই স্থানে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বললো,
-ক্লাইন্টের হাত ধরে কেউ রাস্তা ঘাটে টানাটানি, গা ঘেঁষাঘেঁষি করে না। হাত ধরে জোর করে কেউ গাড়িতে উঠায় না। দিন নেই, রাত নেই আনলিমিটেড তাঁর সাথে দেখা যায়।আমার ধারণা যদি ভুল না হয় তুই যে রাত বিরাত বাড়িতে ফিরিস না সেটার পেছনের কারণও এটাই হবে । হতে পারিস তুই অনেক বুদ্ধিমান, কিন্তু ভুলে যাস না আমি তোর মা ।

তীব্রর মায়ের কোনো চালাকি খাটলো না,মিশান তীব্রর মুখ খুলানোর জন্য।
কিন্তু ওরা কেউ ই মুখ খুলেনি তাঁর কাছে।উনার ইনটেনশন ছিলো মিশানের কাছে একটু দুঃখ শেয়ার করবেন, আর এতে মিশান গলে যাবে, এরপর মিশান তাঁর প্রতি দরদ দেখিয়ে ভরভর করে উনার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবেন, কিন্তু মিশান উল্টোই উনার পেটের কথা বাকিতে নিয়ে চলে যায়।
আর তীব্র তো তীব্রই, পাত্তা না দিয়েই পাশ কাটিয়ে নিতে পারে।

তীব্র মিশানকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছে, ওর বাড়ির ঠিকানা একবার যেহেতু পেয়েছে, মিশান চাইবে বার বার এখানে আসার আর ওর সম্পর্কিত জানার।যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে মিশান ওর গন্তব্যের, সেজন্য তীব্র আরো সতর্ক হয়ে যায়।

মিশানের মাথায় পুরো চাপ ধরা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে, কোনটা রেখে কোনটা করবে।মাথা ঠান্ডা করার জন্য ওর সেই অদ্ভুতুড়ে বাড়িতে বসে, দিনের বেলায় মদ খাচ্ছে, চাপ নিতে পারছে না সোজা কথা।
কি করা উচিৎ এখন সেটাও মাথায় ধরছে না। পায়ের উপর পা তোলে, এক হাতের বাহু কপালের উপর রেখে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চিন্তা করছে পরবর্তী সময় কি করবে।কেনো যেনো বার বার মনে হচ্ছে তীব্রর ঘরবন্দী অজানা রহস্যের ভীড়েই কিছু একটা ক্লু পাবে ঝলকের মৃত্যুর। না হলে কি করে এই তীব্র, মিশান সম্পর্কিত সব কিছু জানে তো জানে, ঝলক অব্ধিও জানে!কখনো মনের কোণে ভুল করেও সাড়া দেয় নি ঝলকের মৃত্যুটা স্বাভাবিক মৃত্যু নাও হতে পারে, তীব্র বলার পর ই মন আনচান করছে, কেনো যেনো মনে হচ্ছে ঝলকের মৃত্যু অস্বাভাবিক। আর এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্যের সাথে তীব্রর নিশ্চয় কোনো না কোনো কানেকশন আছে।

এগুলো ভাবতে ভাবতেই মিশানের দিন যাচ্ছিলো। মাথায় আপাততো একটাই বুদ্ধি আসে,সেটা হলো তীব্রর ঘরের অভিযান।
কিন্তু ওর মায়ের থেকে যে বর্ণনা শুনলো তাতে মনে হলো না কাজটা সহজ।
সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে অই বাড়িতে ঢুকা এরপর তীব্রর ঘরের সিকিউরিটি লক খুলে রুমে প্রবেশ করা, তীব্র ফেরার আগেই সব কাজ শেষ দিয়ে বের হওয়া।

তীব্রর ফিঙ্গারপ্রিন্ট টা নেয়া কোনো ভাবেই পসিবল নয়,এখন পাসওয়ার্ড ই ভরসা। কিন্তু পাসওয়ার্ড টা কি হতে পারে সেটা নিয়ে এক দফা চিন্তা!

মিশান রোজ তাকে তাকে থাকে তীব্রর বাড়ির দিকে।সুযোগ পেলেই ঢুকে পড়বে।
আর সেই সুযোগের জন্য খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয় না। তীব্রর বাবা মাকে একত্র বাড়ি থেক বেরিয়ে যেতে দেখে মিশান, এর মানে দাঁড়ায় বাড়িতে সিকিউরিটি আর কাজের লোক ছাড়া আর কেউ নেই।

চোরের কাছে যেমন ঘরে সিঁধ কাটা আহামরি কিছু না। কঠিন সিকিউরিটি গার্ড পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকা মিশানের কাছেও কোনো ব্যাপার নাহ। তাই বাইরের সিসিক্যামেরা, সিকিউরিটি গার্ড সব ভেদ করে মিশান ভেতরে প্রবেশ করে।মাস্ক পড়ে মুখ ঢেকে মিশানকে চেনার উপায় নেই এমন করে ভেতরে ঢুকে কাজের লোককে ক্লোরোফরম দিয়ে সেন্সলেস করে দেয়।এবার সব থেকে কঠিন কাজ, তীব্রর ঘরের পাসওয়ার্ড ।

চান্স তিনটে, তিনবার যদি পিনকোড ভুল হয় তাহলে তীব্র ছাড়া আর কারো বাপের সাধ্যিও নেই এই ঘর খোলার।মিশান কিছুক্ষণ চিন্তা করে,মনে মনে ভাবলো কঠিন সমস্যার সহজ সমাধান থাকে, তাই মিশান প্রথমে SRT দিয়ে তীব্রর লাকি নাম্বার 80 বসিয়ে ট্রাই করে,পিনকোড ইনকারেক্ট দেখায় ।দ্বিতীয় বার পিনকোড কি বসাবে মাথায় আসছে না, তীব্রর ড্রাইভারের নাম আব্দুর রহমান দিয়ে ট্রাই করে, এবারও ইনকারেক্ট দেখায়,মিশানের গায়ে রীতিমতো ঘাম ছুটে যায়, মাথা কেমন যেনো ঝিমঝিম করছে।শেষ পিনকোড কি দেবে মাথা আটছে না,হাতে কাঁপুনি উঠে গেছে। পাঁচ মিনিটের মতো লম্বা লম্বা নিশ্বাস নিলো একটানা, নিজের ভেতরটাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
মাথা ঠান্ডা করে মিশান সর্বশেষ চেষ্টা চালালো “MNAHSIMj ”
পিনটা ট্রাই করতেই দুর্ভাগ্যবশত, কার দুর্ভাগ্য সেটা জানা নেই, তীব্রর ঘরটা খুলে গেলো। এই দৃশ্য দেখে সটকে পড়লো মিশান,স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো ঘরের ভেতরটার দিকে।

পা দুটো অনবরত কেঁপে যাচ্ছে।মিশান ভেতরে প্রবেশ করে এটা সেটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। শরীর থেকে ঘাম ঝরছে প্রচন্ড বেগে। ও ভাবতে পারছে না পরবর্তী সেকেন্ড কি হবে,আদৌ কিছু পাবে কিনা।
তীব্রর ঘরের বাইরে কড়া সিকিউরিটি থাকলেও ভেতরে কোনো কিছুর সিকিউরিটি নেই, কোথায় কি এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে এগুলোর হিসেব তীব্রই ভালোমতো বুঝবে,অনেক দরকারি জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে, কোনো ড্রয়ার লক করা না, সব কিছু খোলা ।
তীব্রর ঘরের ডেকোরেশনের সাথে জিনিস পত্র গুলো মানানসই না।দেখে মনে হচ্ছে দুনিয়ার যতো অপ্রয়োজনীয় জিনিস এখানে ফেলে রেখেছে।

খুঁজাখুঁজি করতে করতে একটা সময় মিশান দেখতে পেলো ঘরের এক কোণে মেয়েদের একটা জুতো পড়ে আছে।মিশান জুতোটা হাতে তুলে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো। জুতোটা চেনা চেনা লাগছে খুব।
বেশকিছুক্ষণ পর মিশানের হুঁশে আসে এটা নিশানের জুতো, মিশান নিজে এই জুতো নিশানকে কিনে দিয়েছিলো। নিশানের একটা মাত্র জুতো তীব্রর কাছে কি করে এলো এটা মিশানের মাথায় আসছে না, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়ার মতো অবস্থা।
তীব্রর কম্পিউটারটা দেখতে পেয়ে সেটা অন করলো,মিশান ভেবেছিলো এখানে পাসওয়ার্ড দেয়া থাকবে, কিন্তু কোনো পাসওয়ার্ড নেই।
ভেতরে ঢুকে সমস্ত ফাইল চেক করতে লাগলো, আর একটা পেনড্রাইভে সমস্ত ফাইল কপি করে ট্রান্সফার করছে।

একটা নোট এপ্লিকেশনের ভেতর গিয়ে দেখে এক সিরিয়ালে কয়েকটা লিংক টাইপ করে রাখা।
মিশান নিজের মোবাইল বের করে ম্যাসেনজারে ঢুকে চ্যাট লিস্টের নিজের একাউন্টের ইনবক্সে গিয়ে লিংক গুলো দেখে দেখে টাইপ করে সেন্ড করতে লাগলো, লিংক সেন্ড করার সাথে সাথে মিশান যা দেখলো তাঁর জন্য অপ্রস্তুত ছিলো।

যা যা দেখছে তাতে পুরো মাথা ঘুরে আসার মতো।একে একে যতোগুলো লিংক ছিলো সব টাইপ করে দেখে,আর একেকটা ধাক্কা খেয়ে মিশান মুখ ছাপিয়ে কান্না শুরু করে দেয়।

এগুলো দেখার পর দেখতে পায় একটা অডিও ফাইল, মিশান সেই অডিও টাও প্লে করে। সেখানে তীব্র আর দীপ্তির কথোপকথনের রেকর্ডিং। এক্সিডেন্টের পরদিন যখন তীব্র দীপ্তির সাথে কথা বলে জবানবন্দীর জন্য দীপ্তির সাথে সমস্ত কথা রেকর্ড করে।

পুরো রেকর্ড শুনে পায়ের নিচের মাটি না থাকার মতো।সর্বোশেষ যে দীপ্তি বলছিলো তীব্র মিশানকে ভালোবাসে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে, সব জেনেও মৃত্যুর আগেও দীপ্তি কি করে এই মিথ্যে বললো! তীব্র কখনোই মিশানকে ভালোবাসেনি।
দীপ্তি যেসব কথা বলছিলো সেদিন তাঁর পুরোটা রেকর্ড শুনলো ও। নিজেকে ধরে রাখাটা মুশকিল হয়ে গেলো।মিশানের ইচ্ছে করছে চিৎকার করে করে কাঁদতে।পর পর কয়েকটা রেকর্ডিং পেরিয়ে নিশানের কন্ঠের আওয়াজ পেলো সেখানেও নিশান কিছু বলছে,কথার ভাবে মিশান বুঝতে পারলো এটা নিশানের মৃত্যুর সময়কার কথা ।

মাথা চেপে বসে কিছুক্ষণ কেঁদেই নিলো মিশান।প্রচন্ড রাগ হচ্ছে নিজের উপর।
বুলেট ভর্তি পিস্তল হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে আর কাঁদছে, এমন সময় পেছন থেকে কিছু একটার শব্দ পেলো।মিশান সঙ্গে সঙ্গে পিস্তল নিয়ে পেছনে ঘুরে তাক করতেই দেখে তীব্র। তীব্রও মিশানের দিকে পিস্তল তাক করে রেখেছে।
তীব্র বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
-বুঝলে মিশান ঠিক এই কারণেই তোমাকে আমি কখনো আমার বাড়ির ঠিকানা দেই নি।

কান্না থামিয়ে মিশান হেচকি তুলে তুলে বললো,
-আপনাকে আমি অপছন্দ করতাম কিন্তু অবিশ্বাস করতাম না কখনো। আপনার কঠিন ব্যবহারের আড়ালেও একটা মনুষ্যত্ব বাস করে এরকম একটা ধারণা ছিলো।কিন্তু আজ সব ধারণা চুকিয়ে গেলো।
আপনি তো জানোয়ারের থেকেও খারাপ।
কোনো জানোয়ার যখন মানুষের সামনে আসে তখন আমরা বুঝি ওটা হিংস্র।কিন্তু আপনার হিংস্রতার আড়ালে মনুষ্যত্বের একটা মুখোশ বসিয়ে রেখেছেন। কেনো করেছেন এমনটা? কি ক্ষতি করেছি আপনার?
আমাকে বলেন সাইকো? আরে ভালো সাইক্রিয়াটিস্ট দেখান নিজে।মস্তিষ্ক কতোটা বিকৃত হয়েছে আপনার।আপনার ধারণার বাইরে আপনি কতো বড় মাপের সাইকো।একটা সাইকোর দ্বারা এরকম জঘন্য কাজ করা সম্ভব!
দিন শেষে কেনো আমি এভাবে ঠকি? কার মাথাউ বাড়ি দিয়েছি?হেরে যাচ্ছি প্রতি পদক্ষেপে।
তবে কি জানেন?জীবনের প্রথম বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার হয়েছি। আপনি যে ধরা ছোঁয়ার বাইরে খারাপ!
আপনাকে আমি কি শাস্তি দিবো বলুন?এই পিস্তলের সব কটা গুলি আপনার ভেতর ঢুকিয়েও আমার ভেতর শান্ত হবে না। কেনো? কেনো এতো বড় বড় ক্ষতি করেছেন আমার? বলুন!এভাবে নিঃশ্ব করে দিয়েছেন আমাকে?কি উদ্দেশ্যে করেছেন এমন?
কি করবো আপনাকে?
বলতে বলতে হাত থেকে পিস্তল ফেলে মিশান হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো।
দিন শেষে মেয়েটার জীবনে কান্নাটাই সঙ্গী।
অভিশাপ জীবনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

(চলবে)