গল্প- তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি
পর্ব- ৪২
লেখিকা- রিয়া খান
-তুমি তো কখনো বলোওনি যে তোমার একটা ভাইও আছে।
-তোমাকে তো আমি এটাও বলিনি আমার ফ্যামিলিতে কে কে আছে, কে নেই। শুধু একদিন তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ফ্যামিলিতে কে কে থাকলে তুমি খুশি হও।
আমার ফ্যামিলিতে তোমার কথা শুধু ভাইয়াই জানতো। ভাইয়া তোমাকে চিনতো, তোমার সম্পর্কীত সব জানতো।
শুরু থেকেই যখন আমি তোমাকে ফলো করতাম,ভাইয়াও আমার সাথে থাকতো তখন, অনেক চেষ্টা করতো তোমার সামনে আমাকে নেয়ার। এমনও হয়েছে গা ধাক্কা ধাক্কিও করেছে আমাকে,তোমার সামনে পাঠানোর জন্য। নিশান যখন তোমায় নিয়ে বের হতো তোমাকে দেখার জন্য আমি একা বের হোতাম না, আমার সাথে ভাইয়াও থাকতো।
ভাইয়া আমার জন্য তোমাকে খুব পছন্দ করতো।আমি তোমার সামনে কড়াকড়ি ভাব নিয়ে থাকলেও ভালোবাসার কথা তোমার সামনে বলতে আমার যেনো কেমন ফিল হতো সেজন্য আমি নিশানের সাথে শেয়ার করতাম,আর নিশানকে দিয়েই প্রস্তাব দেই।তুমি আমার সাথে ফ্রি না হলেও নিশান তো অনেক ফ্রি ছিলো,তাই ওর সাথে ভেতরের কথা শেয়ার করতে পারতাম।
এখন বলবে হয়তো, আমার ফ্যামিলিতে কেনো জানাই নি তোমার কথা। কারণ টা হলো, ভাইয়া। বড় ভাই রেখে তো আমি ছোটো আগে বিয়ে করতে পারবো না, যদি তোমার কথা জানাতাম তাহলে ফ্যামিলি থেকে ভাইয়ার উপর বিয়ের চাপ পড়তো অনেক, শুধু মাত্র আমার কারণে।
ভাইয়া চেয়েছিলো আরেকটা প্রমোশনের পর বিয়ে করবে, ভাইয়া দীপ্তিকে অনেক ভালোবাসতো আর দীপ্তি ভাইয়াকে।
ওদের ভালোবাসা টা কত ইনোসেন্ট দেখেছো?দুজনেই একে অপরকে হারালেও, অন্য কারো হয়নি।
এই একটা কারণেই আমি ফ্যামিলিতে বলিনি,যেনো আমার ছুতোয় ভাইয়ার উপর চাপ সৃষ্টি না করে আমার ফ্যামিলি।
সব কিছুর মাঝে অবাক করা বিষয় কি জানো? আমি যখন প্রথম প্রথম তোমাকে দূর থেকে দেখতাম,তখন কিন্তু আমার সাথে ভাইয়া থাকতো, নিশান তোমাকে নিয়ে বের হতো আমাকে দেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।তখন দেখতাম নিশান আমার দিকে দূর থেকে তাকাতো,ভেবেছিলাম ও আমার সাথে ভাইয়াকেও দেখেছে, কিন্তু আমার পোড়া কপাল,নিশান কেবল আমাকেই খেয়াল করেছে, আমার পাশে ভাইয়াকে কখনো খেয়াল করেনি । যদি খেয়াল করতো, তবে হয়তো পরবর্তীতে আমাকে দেখে ওর মনে প্রশ্ন জাগতো, ঝলকের স্থানে তীব্র কি করে এলো!
আমি যে ঝলক সেটা হয়তো আরো আগেই প্রকাশ হয়ে যেতো তোমার সামনে।
ভাইয়া বেঁচে থাকলে এতোদিনে ভাইয়ার প্রমোশনেও হয়ে যেতো,সঙ্গে আমারও।ভাইয়ার ইচ্ছে ছিলো দুই ভাই আরেক ধাপ সাফল্য নিয়ে,একসাথে এক দিনে ধুমধাম করে বিয়ে করবো।হলো না সেরকমটা!দমকা কালো মেঘ এসে সবটা উলটপালট করে দিলো।
কারো কোনো স্বপ্নই পূরণ হলো না,মাঝপথে সবাই খাদে পড়ে গেলাম।
কি আর বলবো, সব ই নিয়তির খেলা! সেরকমটা হয় নি,যেরকমটা চেয়েছিলাম।সব উল্টো তো হয়েছেই,সঙ্গে ভয়ানকও হয়েছে পরিস্থিতি ।
-জীবনের কিছু কিছু ফল দেখে বুঝে উঠতে পারি না,এটা কোন কর্মের ফল!আমার জীবনের কিছু কিছু মানের হিসেব মিলে না,কি কারণে হলো,কেনো হলো, না হলে কি হতো, হওয়ার পর কি হলো,এরকম হাজার টা প্রশ্ন ঘুরে মাথায়।বাবা মাকে দিয়ে হারানোর হাতেখড়ি হয়,এখনো হারিয়েই যাচ্ছি।
আচ্ছা আংকেল আন্টি কি কখনো আন্দাজ করে না, এটা তীব্র নাকি ঝলক? উনারা তো বাবা মা,উনারা বুঝার কথা তো।
-বাবা শুরু থেকেই সবটা জানে,মা জানে না।
ঝলকের মৃত্যু মা মেনে নিতে পারলেও তীব্রর মৃত্যু মেনে নিতে পারবে না।
কারণ আমাদের তিন ভাই বোনের মধ্যে ভাইয়া ছিলো অতি আদরের একজন ছেলে।অতি আদরের হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।বিয়ের পর নাকি মায়ের বাচ্চা হচ্ছিলো না, অনেক ডক্টর দেখায়, সব ডক্টর রা বলে, মায়ের বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা ১০%আর, না হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ %।
এতে বাবা-মা হতাশ হয়ে পড়ে,তাঁরা বাচ্চার আশা ছেড়ে দেয়,বছরের পর বছর যেতে থাকে, সন্তানহীন জীবন নিয়ে। একসময় হঠাৎ করেই মায়ের মধ্যে বাচ্চা হওয়ার সিম্পটম ফিল করে,যখন জানতে পারে মা অন্তঃসত্ত্বা তখন তাদের জীবনে ঈদের মতো খুশি বিরাজ করে। বাবাও মাকে প্রচুর কেয়ারে রাখতো। দিনের পর দিন মা সময় গুনতে থাকতো কবে তাঁর সন্তান পৃথিবীতে আসবে, তাঁর সন্তানকে নিয়ে হাজারটা স্বপ্ন বুনতে থাকে। নিজেই নিজেকে অনেক কেয়ারে রাখতো, যেনো তাঁর কারণে তাঁর বাচ্চার কোনো ক্ষতি নাহয়।ডক্টর রা যা যা বলতো মা হরফে অক্ষরে পালন করতো।
এতো কেয়ারিংয়ের পর ধৈর্য্য ধারণের পর, ডেলিভারির দিন যখন, বাচ্চা ভূপৃষ্ঠ হতেই ডক্টর রা জানায় বাচ্চা মৃত, হার্ট চলছে না। এর চেয়ে হতাশাময় আর কোনো বাক্য হতে পারে না, একটা দম্পতির কাছে। মা চিৎকার করে করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে আর ঠিক আধ ঘন্টা পর জানতে পারে বাচ্চার হার্টবিট চলছে,সুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে ।
এই খবরে মায়ের দেহে প্রাণ ফিরে আসে।
তুমিই বলো এতো সাধনার ছেলে তাকে অমায়িক আদর ভালোবাসা টা কি অস্বাভাবিক?
ভাইয়াকে এতো এতো ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতো। মায়ের কাছে তখন পৃথিবীর সমস্ত সুখ সৃষ্টিকর্তা তাঁর কোলে দিয়েছে বলে মনে করতো।জীবনে আর কিছু চাওয়ার ছিলো না ভাইয়াকে পাওয়ার পর।তারপর তো তৃপ্তি হলো, আমি হলাম ।
মায়ের ধারণার বাইরে ছিলো ভাইয়ার পর
সে আরো দুই সন্তানের মা হবে।
এমন না, যে মা শুধু ভাইয়াকে নিয়ে পড়ে থাকতো, আমাদের সবাইকেই ভালোবাসতো, আদর করতো।কিন্তু ভাইয়া ছিলো মায়ের অন্যরকম এক ইমোশনের নাম, ভাইয়ার নামটা তো মা ই রেখেছিলো “তীব্র!”কারণ ভাইয়ার নামের মধ্যেই ছিলো ভাইয়ার প্রতি মায়ের তীব্র ভালোবাসা, ভাইয়াকে পাওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে তীব্র শুকরিয়া আদায়,ভাইয়ার আগমনে মায়ের জীবনে আসে তীব্র সুখ!
তৃপ্তি আপির নাম রাখে দীপ্তির মা ,
আমার নামটা রাখে আমার বাবা।
সো, দিন শেষে কথা একটাই, যে ছেলের মৃত্যু সংবাদ একবার শুনে মা ঠিক ছিলো, তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুর কথা মা হজম করতে পারবে না। এখন আমাকে সন্দেহ করার কোনো প্রশ্নই আসে না,আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি ভাইয়ার ক্যারেকটার টা ভালোমতো প্লে করার।
আর মায়ের মাঝে যেনো ভুল করেও সন্দেহ না আসে সেজন্য মায়ের সাথে কথাও কম বলি, অবশ্য ভাইয়াও খুব একটা কথা বলতো না কারো সাথে, ভাইয়া একরোখা স্বভাবের ই ছিলো, কথা কম বলা, মুড নিয়ে চলা,একটুতেই রেগে উঠা ,ভেতরের কথা অপ্রকাশ রাখা ,স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড ছিলো তাঁর কথার ধরণ ।
যাই হোক মায়ের মনে কখনো সন্দেহ এলেও, সেটা সত্যি প্রমাণের চেষ্টা করবে না। মায়ের ধারণারও বাইরে তাঁর এক ছেলের রূপে আরেক ছেলে বেঁচে আছে।
– তুমি মারা গেছো শোনার পর আমি তখন এতোটা ভেঙে পড়ি যে, কুল-কিনারা কোনো দিশা থাকে না। জানো তো আমি একটু কাঁদিও নি।”তুমি নেই “এই শব্দটা নিজেকে বিশ্বাস করানোটা আমার কাছে ছিলো আত্ম যুদ্ধ। তুমি যদি আমায় ছেড়ে চলে যেতে,আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে, তবে আমি মেনে নিতাম।কিন্তু এভাবে নিরবে ভালোবেসে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া অনুভূতি গুলো মেনে নেয়া কষ্টসাধ্য ছিলো।
কোনো ভাবেই যখন মানিয়ে নিতে না পারি,তখনই আমি এলকোহলের আশ্রয় নিই।রাতের পর রাত এতোটা এলকোহল এডিকটেড হয়ে পড়ি যে, আমি তাল হারিয়ে ফেলি,নিজস্ব হিতাহিত জ্ঞান বুদ্ধির তাল হারিয়ে যাই। তুমি যখন আমাকে বিয়ে করলে জোর করে,আমি ভেবে পাই না কোন ঘোরে সেদিন বিয়ে করেছি । বিয়ের পর পর তুমি মিসিং হয়ে যাওয়ার পর ভাবলাম হয়তো সব কিছু আমার মস্তিষ্কের বিভ্রম ছিলো, বিয়ে টিয়ে কিছু হয়নি। একটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর বুঝলাম,না আমার সত্যিই বিয়ে হয়েছে তীব্র নামের একটা ছেলের সাথে। তবে বিয়ে নিয়ে আমার ভেতরে কোনো শোক আফসোস জাগে নি কখনো, কেনো জানি না!হয়তো আমার আরো ভেঙে পড়ার কথা ছিলো,কিন্তু তা হয়নি।
আমি তো বিয়েটা মানিই নি কখনো, কষ্ট হবে কি করে? তোমার সাথে যখন দেখা হতো আমি সেরকম ভাবে তোমার দিকে তাকাতামই না।আমি যেখানেই থাকি মন থাকে ভবঘুরে। রোজ আমার সাথে কি হয় না হয় সেগুলো নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা হয় না।কারণ একটাই ছিলো,আমার হারানোর ভয় নেই,জীবনের সমস্ত মূল্যবান অংশগুলো হারিয়ে ফেলেছি,হারানোর মতো আর কিছু নেই।আমি নিজের প্রতি ছন্নছাড়া, আমি মরলে কোনো আফসোস নেই, বাঁচলেও দুঃখ নেই। শুধু জীবন কেটে গেলেই হলো একভাবে।তোমার নতুন রূপটার সাথে বহুদিনের পথ চলা হলেও, আমি তোমাকে কখনো পরোখ করে দেখিনি।দেখিনি কারণ, দেখার প্রয়োজন মনেই করিনি, আমার ভেতরে তো কেবল ই ঝলক! তুমি শুধু আমাকে দিয়ে খুন ই করিয়েছো, আর তো কিছু করাওনি। খুনি তো আমার একদিন না একদিন হতেই হতো, এসব ভেবেই নিজেকে বুঝ দিতাম।
তুমি আমার সাথে ভালো ব্যবহার করলেও আলাদা আনন্দ হতো না, খারাপ ব্যবহার করলেও কোনো কষ্ট হতো না, সব ই নরমাল লাগতো।
বড় কথা হলো, নেশা করতে করতে আমার ব্রেইন এমন পর্যায় চলে গেছে,দৈনন্দিন জীবন নিয়ে কোনো ভাবনা নেই আমার, সব কিছু তোমার সেই বুলির মতো লাগে।
“Everything was normal.Everything is normal.Everything will normal.!
জীবনের কাছে হেরে গেছি কিনা! তাই বাক্যটা খুব সহজলভ্য রূপ নেয় আমার কাছে।
-আমি তোমার দিকটা বুঝতে পারতাম মিশান।মাঝে মাঝে আকাঙ্ক্ষা হতো তুমি আমাকে পরোখ করে দেখো, তোমার ঝলকের সাথে সামনে থাকা মানুষটার বৈশিষ্ট্য মেলাও। কিন্তু তুমি যে, অন্য একটা ঘোরে থাকো সব সময় সেটা আমি বুঝতাম। আমার ব্যর্থতা ছিলো আমি তোমাকে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারতাম না। সেজন্য আমি সব সময় তোমার সাথে রহস্য লাগিয়ে কথা বলতাম। নিশান আর দ্বীপের বিয়ের ব্যাপারটা তো তুমি আর আমিই জানতাম,সেটা তীব্র জানলো কি করে এরকম প্রশ্ন তোমার মনে আনার জন্য,আমি তোমাকে সরাসরি বলেও উঠি,তারপরও তোমার মনে নাড়া দেয় না, কিছু একটা ব্যাপার আছে আমার মাঝে। আবার তোমার বাবা মা সম্পর্কীত কথাও বলতে থাকি,তবুও তোমার মনে কিছু আঁচ করে না। এরকম অনেক চেষ্টা করি, তোমায় ক্লু দেয়ার,কিন্তু তুমি পাত্তাই দাও নি।আমার সর্বশেষ চেষ্টা ছিলো লাস্ট যেদিন তোমাকে ইন্ডাইরেক্টলি বুঝালাম,ঝলক এক্সিডেন্টে মারা যায়নি,ওর মার্ডার হয়েছে,তখন হয়তো তোমার ভেতরে নাড়া দিয়েছে সব কিছু।
আমার ধারণা ছিলো তুমি কোন স্টেপে কি করবে। কিন্তু ভয়ও হচ্ছিলো, প্ল্যান মতো তোমাকে সত্যির সম্মুখে আনতে পারবো তা?তুমি কি সবটা বুঝবে নাকি উল্টো ভুল বুঝে দূরে সরে যাবে? আমি খুবই ভয়ে ছিলাম।এখন সে ভয়টা নেই আমার ভেতর।
-একটা সত্যি কথা বলবে ঝলক?
-কি ?
-কুয়েতে মিশনের লিস্টে তো তোমার নামও এসেছিলো,তুমি কেনো ক্যান্সেল করে দিয়েছিলে তোমার নাম?তুমি কেনো গেলে না আমার সাথে?
ঝলক মলিন হেসে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-মিশান!
-বলো।
-আমি জানতাম তোমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল নিশান।তাই আমি চেষ্টা করতাম তোমার ঠোঁটে হাসি ফুটানোর আগে নিশানকে হাসানোর । নিশান ভালো থাকলেই তুমিও ভালো থাকবে। হয়তো তোমার সমান নয়,তবে তোমার মতোই নিশানকে আমিও ভালোবাসতাম। যখন কুয়েতে মিশনের লিস্টে আমাদের নাম এলো, আমি চিন্তা করলাম।
যদি তুমি আমি দুজনেই কুয়েত যাই তবে এদিকে নিশান একা হয়ে পড়বে, দ্বীপ আর কতক্ষণ সময় দিতে পারে?তোমার অভাব তো নিশানের জীবনে কেউ পূরণ করতে পারবে না। আর ওদিকে কুয়েতে তুমিও অশান্তির মাঝে থাকতে নিশানের কথা ভেবে ভেবে,আলাদা একটা দুশ্চিন্তা থেকে যেতো তোমার,প্রতিনিয়ত তোমার অই রূপ আমি চোখে দেখতে পারতাম না । তাই আমি ঠিক করি, যেহেতু তুমি আমাকে অনেকটা ভরসা করো, বিশ্বাস করো সেহেতু আমার কুয়েত না যাওয়াটাই বেটার।অন্তত নিশানকে সময় দিতে পারবো।দূর থেকে তোমার দুশ্চিন্তাটাকে কমিয়ে রাখতে পারবো।তোমার কুয়েতের মিশনটাও আমি ক্যান্সেল করতে পারতাম কিন্তু করিনি,তার কারণ হলো,নিশানের চিকিৎসার জন্য সেসময় তোমার অনেক টাকার প্রয়োজন ছিলো,তুমি কারো থেকে টাকার সাহায্যও নিতে চাওনি,এমনকি আমার থেকেও না। তাই তোমার কুয়েত যাওয়াটাই বেটার ছিলো।মিশন তো আর মুখের কথা ছিলো না! তবুও সব দিক দিয়ে চিন্তা করে তোমাকেই বারুদের মুখে রাখি,প্রতিনিয়ত আমি ভয় পেতাম তোমাকে হারানোর।
যখন কুয়েত চলে যাও সব সময় চিন্তা হতো মিশান ঠিক আছে কিনা। কি করছে, না করছে।যে কাজ করছে সেখানে সেইফটি আছে কিনা।প্রতি সেকেন্ডে মনে হতো মিশান কোনো বিপদে পড়লো কিনা ।
হাজারটা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতো।
খুব কষ্টে যাচ্ছিলো দিন রাত গুলো।
তোমাকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখতে রোজ নিশানকে সময় দিতাম, তোমাকে দেখাতাম নিশান ভালো আছে,তোমার হয়ে আমি নিশানের দায়িত্ব নিয়েছি, নিশানের সমস্ত আবদার মিটিয়েছি ।
কিন্তু অভাগা কপাল,শেষ রক্ষা নিশানকে করতে পারলাম না!
-আফসোস করো না ঝলক। নিশানের মৃত্যুর জন্য আমি যথেষ্ট প্রস্তুত ছিলাম। ওর মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই।আফসোস শুধু একটাই নিশানের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারিনি,ওর প্রত্যাশিত মৃত্যু হয়নি,হয়েছে অপ্রত্যাশিত মৃত্যু । একটা জঘন্য মৃত্যু হয়েছে! যেখানে আমার বোনের মৃত্যু হওয়ার কথা ছিলো নিরবে,সেখানে হয়েছে চিৎকার আর্তনাদ করে।
দুর্ভাগ্য!
মিশান থেমে গেলো,কিছুক্ষণ নিরব থেকে তীব্রর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আচ্ছা ঝলক তোমাদের সাথে কি এমন হয়েছিলো? যার কারণে তোমার এই অবস্থা! তোমার ভাই চলে গেলো পৃথিবী থেকে,তোমার জীবন বদলে গেলো।তুমি কিসের ট্র্যাপের কথা বললে?
-সে এক লম্বা কাহিনী! আমাদের এই হারানোর গল্পের শুরুটা কোথা থেকে, আমি তার সঠিক সময়সীমা জানিনা । ভাইয়াই ভালো জানে আদ্যঅন্ত। জানো তো,
আমি যতোটা মৃত্যুকে ভয় পাই আমার ভাই ছিলো ততোটাই বেপরোয়া।বিপদ দেখে যেখানে আমি থেমে যাই, আমার ভাই সেই বিপদের কাছে ছুটে যায়।
ভাইয়ার চাল চলন ছিলো ইউনিক! সিনেমাতে যেমন দেখেছি সুপার হিরোদের,বাস্তবে দেখেছি আমার ভাইকে।
যার মাঝে সমস্ত গুণ সৃষ্টিকর্তা ঢেলে দিয়েছিলো।আমার ভাই ছিলো মৃত্যুঞ্জয়ী!
প্রতিটা স্টেপে রিস্ক নিতে দুবার ভাবতো না।
এক কথায় বলা যায়,তীব্র ছিলো, তীব্র গুণ সম্পন্ন!
(চলবে)