গল্প- তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি
পর্ব- ৪৫
লেখিকা- রিয়া খান
ঝলকের কথা মতো তীব্র ইনিভেস্টিগেশন শুরু করে দেয় মোনায়েম হকের ব্যাপারে।
সত্য তথ্য জোগাড় করা মুখের কথা না।
মাস দুয়েক কেটে যায়, মোনায়েমের কার্যকলাপ ফলো করে ওর সমস্ত তথ্য কাজ কর্মের লিস্ট করে নেয়।
শুধু দুধে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রিতেই থেমে নেই, দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মাদকের সেবা পৌঁছে দিতে ড্রাগসের প্যাকেট ভালো মতো র্যাপ করে দুধের প্যাকেটে ভরে দেয়।
যে গাড়ীতে সরাবরাহ কাজ চলে, সেই গাড়ীর চারপাশে দুধের প্যাকেটের বক্স রেখে মাঝ বরাবর দুধের প্যাকেট যুক্ত ড্রাগসের প্যাকেট সাজায়। এরপর জেলায় জেলায় সেগুলো পৌঁছে দেয়।
তীব্র এসবের প্রমাণ সাক্ষীসাবুদ এক করে।
মোনায়েমের ব্যবসায় লাল বাতি জ্বালিয়ে, আটক করে।আটকের পর রিম্যান্ড মজুর করে।এসব কিছু হচ্ছিলো মিডিয়ার বাইরে, মিডিয়ার লোক হলো পয়সা প্রভাবের পূজারী, সত্যকে মিথ্যা জারি করে সেই এংগেল থেকে জনগণকে দেখিয়ে তাদের চোখে ধুলো দিয়ে লাল কাপর বাঁধতে দু বার ব্রেইন খাটাতে হয় না। এছাড়াও মিডিয়ার মাধ্যমে খবর প্রচার হয়ে গেলে, বাকিরা সতর্ক হয়ে যাবে এবং শত্রু আরো বাড়ার শঙ্কা থেকে যায়।
রিম্যান্ডে ঢুকে তীব্র নিজের হাতে মোনায়েমকে শায়েস্তা করে পেটের কথা টেনে বের করার চেষ্টা করে, কিন্তু কোনো ভাবেই পেটের কথা বের করা যায় না। একদিন হাত পা বেঁধে পায়ের তলায় টগবগে গরম পানি রেখে লাঠি দিয়ে পেটানো শুরু করে, মোনায়েম চিৎকার করতে থাকে অনবরত, সব কিছু সহ্য হলেও পায়ের তলার টগবগে গরম পানিটা সহ্য হচ্ছিলো না।
অবশেষে চিৎকার করে করে মুখ খুলে,ওদের এই চক্র কিভাবে সাজানো,কে কে দাবার গুটি গুলো চালছে,সন্ত্রাসবাদীর বিস্তার কতোটা হয়েছে,
সব ভড়ভড় করে বলতে থাকে।
সমস্ত স্বীকারোক্তি নেয়ার পর মোনায়েম অনুরোধ করে তীব্রকে, যেনো তীব্র না বলে মোনায়েম সবটা খুলে বলে দিয়েছে, না হলে জাফর নিজের হাতে মোনায়েমকে খুন করবে।তীব্র মোনায়েমকে কথা দেয়, ও কাউকে বলবে না, এসব কিছু ও মোনায়েমের থেকে শুনেছে।
এরপরেও তীব্র প্রমাণের অভাব রাখে নি, মোনায়েমের কথার রেকর্ডিং, কাগজে স্বীকারোক্তির সই,সব কিছুই রাখে নিজের কাছে,যার এক কপি সিনিয়রদের দিয়ে মেইন কপি নিজের কাছে রাখে ।
রিম্যান্ড থেকে বের হতেই। দেখে সেই পাওয়ারফুল পলিটিশিয়ান হাজির, একটা শক্তপোক্ত উকিল ধরে, টাকা পয়সা ঢেলে সব কিছু মিথ্যে দাবী করে মোনায়েমকে নিয়ে যায়।এতে তীব্র একটুও বিব্রত হয় না,বরং আরো খুশিই হয়।মোনায়েম বেরিয়ে যাওয়ার সময় তীব্রর দিকে তাকাতেই তীব্র বাঁকা হাসি দিয়ে ওর কাজে মন দেয়।
মোনায়েম বাইরে বেরিয়ে গেলে তীব্রর ই লাভ,ওকে ব্ল্যাক মেইল করে খবর আরো টানা যাবে।
একে একে তীব্র ঝোপ বুঝে কোপ মারতে থাকে। জাফর অভিজিৎয়ের এতোদিনের সাজানো একটা পরিকল্পনায় তীব্র নামের কাঁটা পথ আটকে দিয়ে বিনাশ খেলায় মেতে উঠেছে।
দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন টেকনিকে আনা মাদক গুলো দেশে আনা অনেক রিস্কি হয়ে যায়। তীব্র এমন ভাবে ফাঁদ পাতে যে দেশে এগুলো প্রবেশ করার চেষ্টা করলেই ধরা খাচ্ছে।
এরপর জাফর ও অভিজিৎ মিলে একদল লোক ফিট করে।বিদেশী ভিসা বানিয়ে দেখায় ওরা বিদেশ যাচ্ছে,বিদেশ থেকে ফিরছে, এমনটা।
ওদের সাথেই কৌশলে আদানপ্রদান চলে এসবের।এয়ারপোর্টে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে ওদের বাংলাদেশের বর্ডার পেরিয়ে যাতায়াত চলে।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা মোট ৩২ টি,এর মধ্যে ভারতের সাথে ৩০ এবং মায়ানমারের সাথে ৩ টি।
এদিকে রাঙামাটির বর্ডার মিলিত হয়েছে ভারত মায়ানমার উভয়ের সাথে।
আর এই রাঙামাটিটাই জাফর অভিজিৎয়ের জন্য হয় প্লাস পয়েন্ট।
কারণ বাংলাদেশের এয়ারপোর্টের মতো সমুদ্র বন্দর দুটিতেও জায়গা পায়নি ওরা।তীব্র এমন ভাবে গলা চেপে ধরেছে ওদের ব্যবসার যে, মানুষের মাধ্যমে মাদক আদানপ্রদান খুব একটা জুড়ে আসছিলো না।
মাত্র একজন এসপি, যে কিনা এমন ভাবে লেগেছে,
সামান্য মাদকের ক্ষেত্রেই ওদের এই হাল, যখন অস্ত্রর সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারটা হাতে নিবে , তখন ওদের কি হাল হবে সেটা ভেবেই ওদের ঘুম হারাম হয়ে যায়।
এদিকে দেশের অভ্যন্তরে ছোটোখাটো মাদক ব্যবসায়ী যেমন ওষুধের দোকানের লোকটা, এমন টাইপের লোক গুলোকে নগদে ধরে সোজা রিম্যান্ডে পাঠিয়ে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করে জরিমানা সহ জেল দিয়ে দেয়।
সময়ের সাথে তীব্র ওর প্রচেষ্টায় তীব্র সফলতা পেতে থাকে। কিন্তু সফলতার সাথে বেপরোয়া তীব্রর জীবনে কালো ছায়াও ঘনিয়ে আসতে পারে যেটা তীব্র কখনো মাথায় ই রাখে নি। এতো বড় বড় কাজ করে দুবার ভাবেনি ওর জীবনের ঝুঁকি কতোটা। ডিপার্টমেন্টের লোক গুলো তীব্রর কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও কখনো তীব্রকে বলেনি নিজেকে সেইফ করো আগে,কিংবা নিজের খেয়াল রেখো।
দিন শেষ সবাই স্বার্থের ই পূজারী।
তীব্র সফলতা নিয়ে এলে,
ডিপার্টমেন্টের নাম হবে,সরকার থেকে সম্মাননা পাবে এগুলোই ছিলো সিনিয়রদের টার্গেট, যার জন্য তীব্র আগুন হলে তাঁরা সর্বদা ঘি ঢেলে থাকতো। তীব্র দিনে হাজারটা এনকাউন্টার করলেও জবাবদিহি করতে হবে না, এমন পাওয়ার থাকলেও
,ডিপার্টমেন্ট কুড়ি পাঁচটা তীব্রকেই ব্যবহার করে যাচ্ছে।
অথচ তীব্র রিস্কি কাজের সময়, নিজের সাথে সহকর্মীর ব্যবহার খুব কম করতো।
মানুষ জন খুব কম বিশ্বাস করতো তীব্র, এই সহকর্মীদের মাঝে থেকেই যে কেউ একজন পাল্টি মারবে না, তাঁর কি গ্যারান্টি?
বঙ্গোপসাগর ও মেগনা নদীর মোহনায় সৃষ্ট বিশাল ভূখণ্ডটির নাম, “স্বর্ণদ্বীপ “যেটা নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা থেকে ১৩.৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
দ্বীপটি (১৯৭৮)সালে, বহুবছর আগে জেগে উঠলেও মূলত এখানে ছিলো ডাকাত, জলদস্যু ও সন্ত্রাসীদের অভয় আশ্রম ছিলো। এরপর বাংলাদেশ সরকারের কল্যাণে,দ্বীপটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীদের হস্তান্তর করে।১০১০ সাল হতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনার পর এই দ্বীপটি একটা পরিপূর্ণ বাসযোগ্য অঞ্চলে রূপ নিয়েছে।
বিলিন করে দেয় জলদস্যু ডাকাতদের,উদ্ধার করে অসংখ্য অস্ত্র গোলা বারুদ।
চারপাশে তৈরী করেছে সমন্বিত বনায়ন।
এখানে তৈরী করেছে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
মূলত এই দ্বীপটি সেনাবাহিনীদের ই দিয়ে দেয়া হয়েছে স্থায়ী ভাবে।
ঝলক এই স্বর্ণদ্বীপের সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ট্রেনিংয়ের জন্য অবস্থান করে।
ঝলক যখন স্বর্ণদ্বীপে, তীব্র তখন একেক দিন বাংলাদেশের একেক প্রান্তে।
জাফর তখন অভিজিৎয়ের সাথে কাতারে।
আর মোনায়েম ও পলিটিশিয়ানের ভাই কাদের মোল্লা তখন দেশেই, এদিকের হাল চাল ওদের জানানোর জন্য দেশেই পড়ে থাকে।যদিও মোনায়েম তখন স্বাভাবিক পরিস্থিতে নেই,রিম্যান্ডে টগবগে গরম পানিতে পা ডুবিয়ে লাঠির বাড়িতে পা দুটো বিকল হয়ে গেছে প্রায়,চলাফেরার জন্য হুইল চেয়ার নিয়ে চলতে হয়।
একমাস ট্রেনিংয়ের চলাকালীন তীব্র ঝলককে ওর সাথে দেখা করতে বলে,ঢাকা হয়ে দুজনে রাঙামাটি যাবে।
তীব্রর কথা মতো ঝলক ছুটি নিয়ে ঢাকা যেতে প্রস্তুত হয়।
সেনাবাহিনীর গাড়ি নিয়েই ঢাকা যাচ্ছিলো, কিছুটা পথ যাওয়ার পর ঝলক খেয়াল করে ওর মোবাইলটা সাথে নেই।উলটো ঘুরে আবার ক্যাম্পে যায়। রুমে খুঁজতে থাকে কোথাও মোবাইল নেই। এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও পায় না।এবেলা যেখানে যেখানে গিয়েছে সেখানে সেখানেই গিয়ে খুঁজতে থাকে, পাওয়া গেলো না। মোবাইলটা কোথাও পড়ে গিয়ে নষ্ট হলে সমস্যা নেই,কিন্তু কারো হাতে পড়লে বিপদ আছে। মোবাইলের ভেতর অনেক প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আছে।
অনেক সময় ধরে খুঁজেও কোনো লাভ হলো না। তীব্রর সাথে যোগাযোগের অবস্থাতেও নেই।কার ফোন দিয়ে কথা বলবে আর কোন বিপদে পড়বে এটা ভেবে থেমে আছে।
নিজেকে শান্ত করে ঝলক আবার ঢাকার পথে উঠে।
স্বর্ণদ্বীপ ছাড়ার আগেই রাত নেমে আসে।
ঝলক চিন্তা করে হয়তো তীব্র ওকে ফোন করছে অনেক। আবার এটাও ভাবে যেহেতু হারিয়ে গেছে ফোন, তীব্র কল দিলে অন্যকেউ রিসিভ করলেই বুঝবে, ফোনটা হারিয়ে গেছে।
তবুও অন্তত তীব্রকে একটাবার নিজে থেকে জানানো উচিৎ মনে করে ঝলক।সেজন্য ড্রাইভারের থেকে ফোন নিয়ে তীব্রর ফোনে কল করতে থাকে কিন্তু কল তীব্রর ফোন অব্ধি যাচ্ছে না। ঝলক বুঝতে পারে, কল না ঢুকার কারণ নেটওয়ার্ক প্রবলেম হয়তো। যে এরিয়াতে আছে, এখানে আশেপাশে কোনো টাওয়ার নেই।তবুও ঝলক চেষ্টা চালিয়ে যায়, একটা সময় পর কল ঢুকলেও তীব্রর ফোন সুইচ অফ দেখায়।বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে ফোন সুইচ অফ।হয়তো ওদিকেও নেটওয়ার্ক প্রবলেম ই ছিলো।
সেদিন নিত্যদিনের মতো সব ই ঠিক ছিলো,শুধু সময়টা ছিলো নিষ্ঠুর। ঝলকের ফোনটা হারিয়ে যায়নি,সরানো হয়েছিলো।
সেদিন সব কিছু হচ্ছিলো নিত্যদিনের রুটিনের বাইরে।সকাল বেলাও বুঝতে পারেনি সন্ধ্যার সাথে ওদের জীবনে কি ঘনিয়ে আসছে।
ঝলকের ফোন সাফাই করার বেশ কিছুক্ষণ পর তীব্র ঝলককে ফোন করতে থাকে, রিসিভ হয় না । এটা তীব্রর কাছে অস্বাভাবিক লাগে,কারণ ঝলক যতোই ব্যস্ত থাক তীব্রর ফোন একটা রিং হলেই রিসিভ করে।জরুরী কাজ থাকলে ঝলকের ফোন অফ রেখে বাইরে যায়। কিন্তু এখানে তো তীব্রর ভেতর ভয় ঢুকিয়ে দেয়, সামান্য ফোন কল রিসিভ না হওয়াতে।
একটা সময় পর যখন কল রিসিভ হয়, ফোনের ওপাশের কন্ঠটা থাকে অপরিচিত।
-হ্যালো আসসালামু আলাইকুম,তীব্র স্যার!
কথার সুরটা অন্যরকম মনে হয়। তীব্রর ভেতরে প্রশ্নের সাথে ভয় ঢুকে প্রবল ভাবে,ঝলকের ফোনে অন্য কেউ কি করে!
-ঝলক কোথায়?
-আরে স্যার আপনার কথার মাঝে চিন্তা প্রকাশ পাচ্ছে কেনো? ঝলক ঠিক আছে তো। আপনি চাইলে ঝলক একদম ইনটেকও থাকবে।
তীব্র রাগান্বিত স্বরে আবার বললো,
-ঝলক কোথায়?
-স্যার, কেবল ফোন দিলেন, আর এখনি আপনার কথার মাঝে ব্ল্যাড প্রেশার হাই হাই লাগছে। একটু ঠান্ডা মেজাজে কথা বলুন।আপনার ভাই একদম ইনটেক আছে, স্বর্ণদ্বীপেই আছে। যদি ভাইকে ইনটেক রাখতে চান তবে আমাদের রাস্তা থেকে কেটে পড়ুন।আমাদের কাজকর্মের যেসব প্রমাণাদি আপনার কাছে বরাদ্দ আছে, সেগুলো নিয়ে রাত নয়টার আগে স্বর্ণদ্বীপে পৌঁছে যান।এখন বলবেন এতো তাড়াতাড়ি কি করে আসবেন,সেটা কেবল আপনিই জানেন।যদি ভাইকে বাঁচাতে চান,তাহলে সময়ের কাজ সময়ে হওয়া চাই।আপনার ভাইটা আপনার মতোই ঘাউড়ামি করছে খুব,দেখে মনে হয় খুব শান্ত ভদ্র, কিন্তু পুরোই আপনার মতোই তেজস্ক্রিয়। শিকল দিয়ে বেঁধেও যেনো টিকে থাকতে পারছি না আমরা।বেশি বাড়াবাড়ি করলে দু একটা গুলি করে থামিয়ে রাখা যেতে পারে,আগেই বলে রাখছি। এখন আপনার কাজ,যতো তাড়াতাড়ি আসবেন ততো তাড়াতাড়িই আপনার ভাই মুক্ত হবে।
স্বর্ণদ্বীপের প্রান্তরে আসুন, আমরা এখানেই অপেক্ষা করছি।
ইউর টাইম স্টার্ট নাও স্যার!
গুড বাই।সি ইউ ইন টাইম।
তীব্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দেয় ওপাশ থেকে । এমন একটা ফাঁদ পাতে যে, তীব্র ঘাবড়ে গিয়ে ফাঁদে পা দেয়।হয়তো ঝলকের জায়গায় অন্য কেউ হলে এরকমটা হতো না।
ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে রাঙামাটি যাওয়ার কথা ছিলো,তীব্র সেই হেলিকপ্টারে স্বর্ণদ্বীপের দিকে যায় ঝলকের জন্য।
ওদের প্রেজেন্টেশন ছিলো এমন যে,ওরা ঝলককে কিডন্যাপ করেছে। কিন্তু ঝলক তো আছে ঢাকা ফেরার রাস্তায়।ঝলককে কিডন্যাপ করা এতো সহজ না, আর ওকে কিডন্যাপ করার চেষ্টা করলে বিপদ আরো বাড়বে ওদের জন্য। কারণ ঝলক তীব্র এক হলে দু ভাইয়ের শক্তি এক হবে।
তীব্র ভেবে পাচ্ছে না ওটা কার গলার আওয়াজ ছিলো, জাফরের কণ্ঠস্বর অমন না, মোনায়েম বা কাদের মোল্লা এরা তো নাই, তবে কি অভিজিৎ?
তীব্র হেলিকপ্টারে থাকার কারণে ঝলক তীব্রকে ফোন দিয়ে ফোনে পাচ্ছিলো না।
সময় যখন বিপরীত স্রোত নেয়, তখন খুব সহজ বিষয় গুলোও পাহাড় সমান জটিল রূপ নেয়। যদি একটা বার ঝলকের কল তীব্রর ফোনে পৌঁছাতো,খুব বেশি না ১০ টা সেকেন্ডের জন্য কথা বলতে পারতো, “ভাইয়া আমার ফোনটা হারিয়ে গেছে,আমি ঢাকায় আসছি।” এইটুকু বাক্য তীব্রর কানে পৌঁছাতে পারলে সব কিছু ঠিক থাকতো।
কিন্তু অই যে সময় আজ ওদের সাথে নেই।
হেলিকপ্টারে বসেই তীব্র আন অফিসিয়াল গান লোড করতে থাকে, পরিস্থিতি সাপেক্ষে এনকাউন্টার করে দিতে হতে পারে।
মূল ভূখণ্ড হতে যেহেতু স্বর্ণদ্বীপ আলাদা,চলাচলের জন্য ট্রলার ব্যবহার করতে হয়।
নয়টার আগেই তীব্র হেলিকপ্টার থেকে ল্যান্ড করে সন্দীপে।
সন্দীপ হতে ৪.৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত সন্দীপ।সেজন্য সন্দীপে ল্যান্ড করে , ঝলকের ফোনে কল করে। অই লোকটা ফোন রিসিভ করে তীব্রকে ডিরেকশন দেয় কোথায় যেতে হবে।তীব্রকে ওরা একটা বারও বলেনি সাথে কোনো ফোর্স আনা যাবে না, কারণ ওদের ধারণা ছিলো তীব্র কখনোই এরকম ভূল করবে না, ভাইয়ের প্রাণ বাঁচাতে নিজের প্রাণ দেবে কিন্তু এরকম কোনো স্টেপ নেবে না। শুধু তীব্রকে এইটুকু ওয়ার্নিং দেয়, স্বর্ণদ্বীপে এলে যেনো একটা কাক পক্ষীও টের না পায়,যার কারণে তীব্র সন্দীপে ল্যান্ড করে।
এদিকে ঝলক আছে রাস্তার কড়া জ্যামে আটকা পড়ে।
একটা ট্রলার এসে পারি জমাতেই তীব্রকে সেই ট্রলারে উঠতে বলে ।
তীব্র ট্রলারে উঠবে, এমন সময় একটা আননোওন নাম্বার হতে কল আসে,রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ঝলক খানিকটা উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
-থ্যাংকস গড!এট লাস্ট ফোন ঢুকেছে,আর তুমি রিসিভ করেছো।ভাইয়া আমার ফোনটা খুঁজে পাচ্ছি না,হারিয়ে গেছে হয়তো।তোমাকে কল দিচ্ছি কল ঢুকছেই না।
তুমি তো ঢাকাতে, নেট প্রবলেমও থাকার কথা না,তাহলে কল ঢুকছিলো না কেনো?
ঝলকের কণ্ঠস্বর শুনে তীব্রর আত্মায় পানি এলো।তীব্র সেকেন্ডেই সব কিছু বুঝলো,এটা একটা ফাঁদ ছিলো।
-আমি তো সন্দীপ।তুই কোথায়?
-আমি ঢাকার পথে বাট রাস্তায় অনেক জ্যাম। ভাইয়া তুমি সন্দীপ কেনো?আগে বলবে না? আমি উল্টো ঢাকা যাচ্ছি! আমি ট্রলার পাঠাচ্ছি,তুমি আমাদের ক্যাম্পে যাও, আমি আসছি,আমি খুব একটা দূর আসিনি।
ঝলকের কথা শেষ হতে না হতেই কেউ একজন তীব্রকে পিছন থেকে সজোরে মাথায় আঘাত করে, তীব্র পেছন ঘুরে দেখার আগেই ওর পিঠে লাথি মেরে ফেলে দেয়।
মাথায় আঘাত করার কারণে তীব্র সরাসরি কোনো স্টেপ নিতেও পারে না।গান বের করে শ্যুট করার আগেই একটা জাল ফেলে তীব্রকে আটকে দেয়।তবুও তীব্র শ্যুট করতে থাকে, বেশ কয়েকজনের গায়ে গুলিও লাগে।
ফোনের ওপাশে গুলির শব্দ পেয়ে ঝলকের বুঝার বাকি থাকে না, তীব্র বিপদে পড়েছে। গাড়ি ঘুরিয়ে তীব্র বেগে ছুটে যায় সন্দীপের দিকে।তৎক্ষণাৎ ক্যাম্পে ফোন করে সেনাদল পাঠাতে বলে সন্দীপে।
ক্যাম্প থেকে ট্রলার নিয়ে সেনাদল সন্দীপে আসতে আসতে, ততোক্ষণে তীব্রকে ওখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
ঝলক আসার পর তীব্রকে খুঁজতে লাগে, কোথাও পায় না।ওর ফোনে কল করলে রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না কেউ।
তীব্রর নাম্বারের লোকেশন ট্র্যাক করে সেই
লোকেশন বরাবর গিয়ে দেখে সন্দীপের চরের এক জায়গায় তীব্রর মোবাইলটা পড়ে আছে।
ঝলকের মাথায় আসছিলো না তীব্রকে কোথায় খুঁজবে। নিজের ডিপার্টমেন্টের ফোর্স,তীব্রর ডিপার্টমেন্টের ফোর্স চারদিকে ছড়িয়ে দেয়।
এমন একটা জায়গা থেকে তীব্র উধাও হয়েছে, কোন দিকে নেয়া হয়েছে ওকে,কারো ধারণাই আসছিলো না।
(চলবে)