তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি ২ পর্ব-২০+২১

0
1036

#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_২০
#Anika_Fahmida

অনুর ভীষণ মন খারাপ। এই পৃথিবীতে আসলেই আপনজন ছাড়া পর মানুষকে ঠিক তেমন মানুষ গুরুত্ব দেয় না। নিজের আপনজনের দোষ ঢাকতে পর মানুষের উপর দোষ দিতে যেন মানুষের একটুও বুক কাঁপে না৷
প্রিন্সিপাল কামরুল আহমেদ আসলেই স্বার্থপর। নিজের ভাইয়ের ছেলেকে বড় করার জন্য অনুকে ছোট করলো।
অনু আদ্রের কথাও ভাবতে লাগলো। আদ্র এতো রাগ করে কেন? অনু বিছানায় বসে মনে মনে বলল,

‘আদ্র ভাইয়া সবটা না জেনেই আমাকে দোষী ভাবলো। তিনি পুরোটা দেখলে বা শুনলে হয়তো এমন করতেন না। এতো রাগী কেন উনি! ভালো লাগে না।’

অনু আগামীকাল ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিলো। আদ্রের কথা অনু শুনবে কেন? আদ্র কি অনুকে ভালোবাসে নাকি? ভালোবাসে নাতো। তাই অনুও আদ্রের কথা শুনবে না। পরেরদিন সকালে রেডি হয়ে অনু বাসা থেকে বের হতে নিলে আমেনা বেগম অনুর সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘তোকে আমি ভার্সিটিতে যেতে নিষেধ করেছি।’

আমেনা বেগমও যে রেগে আছে অনু ভুলে গিয়েছিল। অনু আমেনা বেগমকে শান্ত স্বরে বলল,

‘আম্মু তুমি আমাকে বাঁধা দিও না। আমি ভার্সিটিতে যাবো। আমার আজকে অনেক জরুরি ক্লাস আছে।’

আরমান রহমান আজ অফিসে যায় নি। তিনি ড্রইংরুমের সোফায় বসে নিউজপেপার পড়ছিলেন। আমেনা বেগম আরমান রহমানকে বলল,

‘তোমার মেয়েকে ভার্সিটি যেতে মানা করো। আবারও ছেলেদের সাথে তোমার মেয়ে ঘুরঘুর করবে।’

আমেনা বেগমের কথা শুনে অনুর চোখে জল চলে আসলো। আরমান রহমান অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,

‘অনু তুই ভার্সিটিতে যাবি না।’

অনু মন খারাপ করে আরমান রহমানকে বলল,

‘আব্বু তুমি আম্মুর মতো কথা বলো না। আমার সত্যি আজকে জরুরি ক্লাস আছে। সামনে আমার পরীক্ষা।’

আরমান রহমান অনুকে এবার রেগে বলল,

‘বললাম তো তুই ভার্সিটিতে যাবি না।’

অনু মাথানিচু করে কাঁদতে লাগলো।কেউ অনুকে ভালোবাসে না। কেউ না। সবাই খুব নিষ্ঠুর। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠার শব্দ এলো। আমেনা বেগম দরজা খুলে দেখলো আদ্র এসেছে। আদ্র আমেনা বেগমকে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,

‘আন্টি অনু ভার্সিটিতে যায় নিতো?’

আমেনা বেগম আদ্রকে শান্ত স্বরে বলল,

‘অনু এখনও যায় নি। তবে যাওয়ার জন্য আমাদের পাগল করে ফেলছে। তুমি ভিতরে আসো বাবা।’

আদ্র বাসার ভিতরে প্রবেশ করে আরমান রহমানকে সোফায় বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে হেসে বলল,

‘কেমন আছেন আংকেল?’

আরমান রহমান হেসে আদ্রকে বলল,

‘ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?

আদ্র হাসার চেষ্টা করে আরমান রহমানকে বলল,

‘আমি ভালো আছি।’

কিন্তু আদ্র যে ভালো নেই। অনু কেন আদ্রকে কষ্ট দেয়? আদ্র অনুর দিকে তাকাল। অনু দেখলো আদ্র একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অনু অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। আরমান রহমান আদ্রকে বলল,

‘দাঁড়িয়ে আছো কেন আদ্র? বসো।’

আদ্র সোফায় বসলো। অনু আরমান রহমানকে বলল,

‘আমি তাহলে ভার্সিটিতে গেলাম আব্বু।’

আরমান অনুকে রেগে গিয়ে ধমকে অনুকে বলল,

‘আমি তোকে কি বলেছি শুনতে পাস নি?’

অনু চুপ করে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। আদ্র আরমান রহমানকে শান্ত স্বরে বলল,

‘আংকেল আমি অনুকে ভার্সিটি নিয়ে যাই। তাহলে তো আর কোনো প্রবলেম হবে না।’

আরমান রহমান কিছুক্ষণ ভেবে আদ্রকে বলল,

‘ঠিক আছে তুমিই অনুকে ভার্সিটিতে নিয়ে যাও বাবা।’

অনু আরমান রহমানকে বলল,

‘আমি আদ্র ভাইয়ার সাথে যাবো না আব্বু।’

আরমান রহমানকে অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,

‘তাহলে তোকে ভার্সিটিতেও যেতে হবে না।’

অনু উপায় না পেয়ে মন খারাপ করে বলল,

‘ঠিক আছে আমি আদ্র ভাইয়ার সাথে যাবো।’

আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

‘তোর ভার্সিটিতে গিয়ে অন্য ছেলেদের সাথে রঙঢঙ করা আমি বের করবো অনু। তুই ভাবতেও পারছিস না সামনে তোর জন্য ঠিক কি কি অপেক্ষা করছে।’

অনু আদ্রের সাথে বাসা থেকে বের হলো। অনু গাড়িতে আদ্রের পাশের সিটে উঠে বসলো। আদ্র গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসেই অনুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। অনু আদ্রের রাগী দৃষ্টিতে তাকানো দেখে ভয় পেয়ে গেল। অনু ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,

‘আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছো কেন?’

আদ্র মাথানিচু করে গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘অনেক শখ তোর ছেলেদের সাথে প্রেম করার তাই না?’

অনু বুঝতে না পেরে আদ্রকে বলল,

‘এসব তুমি কি বলছো আদ্র ভাইয়া? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। আমি কেন ছেলেদের সাথে প্রেম করবো?’

আদ্র রাগী দৃষ্টিতে আবারও অনুর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ওহ কিছুই বুঝতে পারছিস না। তাই না? ওকে এবার থেকে তুই খুব ভালোমতো বুঝবি।’

আদ্র পকেট থেকে রুমাল বের করে অনুর মুখে চেপে ধরলো। অনু বুঝতে পারছে না আদ্র এমন করছে কেন। অনু শ্বাস নিতে পারছে না। সবকিছু কেমন অসহ্য লাগছে অনুর কাছে। অনুর মাথা ঘুরতে লাগলো। ধীরে ধীরে অনু দুই চোখ বন্ধ করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। আদ্র রুমালে এমন কিছু মিশিয়েছিল যাতে অনু তাড়াতাড়ি অজ্ঞান হয়ে যায়। আদ্র অনুকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে অনুর কপালে চুমু দিয়ে দিল। অনু অজ্ঞান অবস্থায় আদ্রের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আদ্র অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

‘আমি তোকে আমার কাছ থেকে দূরে যেতে দিবো না অনু। তুই শুধু আমার। তোকে আমার সামনে অন্য কেউ নিয়ে চলে যাবে তা আমি কি করে হতে দেই বল তো? আমি কখনো তা হতে দিবো না।’

আদ্র অনেক আগেই অনুর পাসপোর্ট রেডি করে ফেলেছে। এখন শুধু অনুকে নিয়ে সুইজারল্যান্ড পাড়ি দেওয়ার পালা। অনুকে নিজের কাছে রাখতে হবে। কারও হতে দেওয়া চলবে না। কিছুতেই না। আদ্র অনুর হাতে পায়ে লোহার শিকল বেঁধে দিলো। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এয়ারপোর্টের সামনে গাড়ি থামালো আদ্র।

আদ্র অনুকে কোলে নিয়েই প্লেনে উঠলো। অবশ্য এয়ারপোর্টের অনেকেই অনুকে সাথে নিয়ে যেতে আদ্রকে বাঁধা দিচ্ছিল কারণ অনুকে অজ্ঞান দেখে। কিন্তু আদ্র তাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দেয়। যাতে করে তারা চুপ হয়ে যায়। আর বাকি যাঁরাই জিজ্ঞেস করে তাদেরকেই আদ্র বলেছে অনু অসুস্থ। সাথে এটাও বলেছে অনু মানুষিক পাগল। তাই অনুকে সুইজারল্যান্ডে চিকিৎসা করতে নিয়ে যাচ্ছে। আদ্রকে আর কেউ বাঁধাও দিলো না। আদ্র অনুকে কোলে করে প্লেনের পাশের সিটে বসালো। অনুর এখনো জ্ঞান ফিরে নি। অনুকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলো আদ্র। কিছুক্ষণ পরেই প্লেন আকাশ পথে পাড়ি দিল। অনু এখনও আদ্রের বুকে মাথা রেখে আছে। বেশ কয়েক ঘন্টা পর অনুর জ্ঞান ফিরলো। চোখ খুলে নিজেকে আদ্রের বুকে দেখে অনু তাড়াতাড়ি আদ্রের কাছ থেকে সরে গেল। অনু এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে প্লেনে বসে থাকতে দেখে চরম অবাক হলো। অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,

‘আদ্র ভাইয়া আমি প্লেনে কেন? আমাকে তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?’

‘তুমি এখন আমার সাথে সুইজারল্যান্ড যাবে অনু।’

অনু চোখ বড়বড় করে অবাক হয়ে বলল,

‘কি? কিসব বলছো তুমি?’

আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

‘আমি ঠিকই বলছি।’

অনু রেগে গিয়ে আদ্রকে বলল,

‘তুমি এতো খারাপ আদ্র ভাইয়া? আমি তোমার সাথে কোথাও যাবো না।’

অনু বসা থেকে উঠতে গিয়ে দেখল অনুর পায়ে শিকল বাঁধা। অনু নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল হাতেও শিকল বেঁধে রাখা। অনু আদ্রকে রাগী স্বরে বলল,

‘এগুলো কি আদ্র ভাইয়া?’

আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,

‘কেন কি হয়েছে?’

অনু আদ্রকে অসহায় স্বরে বলল,

‘তুমি আমার হাতে পায়ে লোহার শিকল বেঁধেছ কেন?’

আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,

‘যাতে তুমি পালাতে না পারো।’

অনু দাঁতে দাঁত চেপে রেগে আদ্রকে বলল,

‘তুমি এতোটাই খারাপ? এতোটা?’

আদ্র অনুর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

‘হুম আমি এতোটাই খারাপ। এবার তোমাকে খাবার খেতে হবে।’

একটু আগে একটা লোক প্লেনের সবাইকে খাবার দিয়ে গেল। আদ্রের হাতে বার্গার আর অরেঞ্জ জুস দেখে অনু অন্যদিকে মুখ করে রাগী স্বরে বলল,

‘আমি খাবো না।’

আদ্র এবার রেগে অনুর গাল চেপে ধরে বলল,

‘খাবি না মানে? তোকে খেতেই হবে।’

আদ্র জোর করে অনুকে বার্গার খাইয়ে দিয়ে সাথে অরেঞ্জ জুসটাও খাইয়ে দিলো। অনু কাঁদতে লাগলো। আদ্র রুমাল দিয়ে অনুর মুখ মুছে দিলো। অনুর হঠাৎ মনে হলো অনুর মাথাটা আবারও ঘুরছে। সবকিছু কেমন যেন ঘোলাটে লাগলো। অনু আবারও অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে যেতে নিলে আদ্র অনুকে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো। আদ্র অনেক আগেই অরেঞ্জ জুসে ঘুমের ঔষধ মিশিয়েছিল যাতে অনু আবারও ঘুমিয়ে পড়ে। আদ্র অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

‘আই থিংক…আই লাভ ইউ অনু।’

জ্ঞান ফেরার পর অনু চোখ খুলে নিজেকে একটি বন্ধী ঘরে শিকল বাঁধা অবস্থায় দেখেছিল। আজও অতীতের সব কথা অনুকে ভয় পাওয়ায়। আদ্র এতো নিষ্ঠুর কেন? ভেজা শরীরে এখনও অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। সব অতীত এখনও অনুর চোখে ভাসছে। অনু যেন কিছুই ভুলতে পারছে না। চোখের জল এখনও অনু ফেলছে। এখন এই বর্তমানেও আদ্রকে অনু ভয় পাচ্ছে। ভীষণ ভয় পাচ্ছে। মানুষটা আসলেই অদ্ভুত। আদ্র অতীত মনে করে হঠাৎই অনুকে জড়িয়ে ধরলো।

#চলবে….

#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_২১
#Anika_Fahmida

অনুকে আদ্র এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যে অনু নিজেকে আদ্রের কাছ থেকে ছাড়াতে পারছে না। অনুর মনে কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। আবার আদ্রের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। অনু রাগী স্বরে আদ্রকে বলল,

‘আমাকে ছাড়ো আদ্র ভাইয়া। প্লিজ ছাড়ো।’

আদ্র অনুকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই বলল,

‘ছাড়ার জন্য তো আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরি নি অনু।’

অনু অনেকক্ষণ আদ্রের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করলো। কিন্তু শেষে না পেরে থেমে গেলে অনু। চুপ করে আদ্রের বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে রইল। আদ্র কিছুক্ষণ অনুকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে একটুপর নিজেই অনুকে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াল। অন্যদিকে তাকিয়ে আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে বলল,

‘ড্রেস চেঞ্জ করে নাও। তোমার উপর মদ ফেলাটা আমার ঠিক হয় নি। আই এম সরি।’

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,

‘সরি বললেই কি সব ভুল মাফ করা যায় আদ্র ভাইয়া? তুমি আমার সাথে এমন কেন করলে? কেন আমাকে জোর করে সুইজারল্যান্ড আনলে?’

আদ্র অনুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অনু বুঝতে পারল না আদ্র এভাবে কেন তাকিয়ে আছে? আদ্র অনুকে মাতাল করা স্বরেই বলল,

‘কারণটা তোমার জানা আছে অনু। না জানার ভান করো না। একটা কথা আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করার কোনো মানে হয় না। তুমি কি ভুল করেছো জানো না? অন্য একটা ছেলেকে ভার্সিটির সবার সামনে তুমি আই লাভ ইউ বলেছো। আবার তুমি বলছো তুমি কিছু জানো না? তুমিই তো আমাকে বলেছিলে অনু যে তুমি কাউকে ভালোবাসো না। আমাকে মিথ্যে কেন বললে?’

অনু চিৎকার করে আদ্রকে বলল,

‘আমি তোমাকে মিথ্যে বলি নি আদ্র ভাইয়া। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে মিথ্যে বলি নি। ঐ ছেলেটাকে আমি ভালোবাসি না বললে আমাকে ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হতো। কারণ পল্লবের চাচ্চু আমার ভার্সিটির প্রিন্সিপাল। আর পল্লব নামের ছেলেটা খুব ডেঞ্জারাস। ওর কথা মতো ওকে ভালোবসি না বললে আমার পিছু নিতো। শত্রুর মতো লেগে থাকতো। তাই তো আমি বাধ্য হয়ে পল্লবকে ভালোবাসি বলি।’

আদ্র মদের বোতল হাতে নিয়ে আবারও মদ খেতে লাগলো। এতোই মদ খাচ্ছে যে পুরোই মাতাল অবস্থা। আদ্র হাসতে হাসতে অনুকে বলল,

‘বাহ্ অনু তুই আবারও আমাকে মিথ্যে বলছিস। খুব ভালো অভিনেত্রী তুই।’

অনু আদ্রের কথা শুনে থমকে গেল। আদ্র একটুও অনুকে বিশ্বাস করছে না? কিন্তু কেন? অনু আদ্রের কাছে এগিয়ে এসে অসহায় স্বরে বলল,

‘বিশ্বাস করো আমাকে আদ্র ভাইয়া। আমি তোমাকে মিথ্যে বলছি না। আমি সত্যি বলছি। তুমি প্লিজ আমাকে বাংলাদেশে যেতে দাও। আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমার একটুও ভালো লাগছে না।’

আদ্র মদের বোতল টেবিলে রেখে অনুর দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকাল। অনু ভয় পেয়ে চুপ করে গেল। এক পা করে অনু পিছাতে গেলে আদ্র অনুর দুই হাত চেপে ধরে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসে। অনু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে বলল,

আমি তোকে আমার কাছ থেকে কোথাও যেতে দিবো না। বুঝলি? তুই না বুঝলেও আমার কিছু করার নেই। কেন আমাকে তুই এতো কষ্ট দিস অনু? কেন? বল আমাকে? কেন আমাকে এতো কষ্ট দিস?

অনু শুকনো ঢুক গিলে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র এখন হুঁশে নেই অনু বুঝতে পারছে। কেমন মাতাল মাতাল অবস্থা। অনুর ভীষণ ভয় লাগছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। তবুও সাহস করে অনু বলল,

‘তোমাকে তো আমি কষ্ট দেই নি।’

অনুর কথা শুনে আদ্র হাসতে লাগলো। অনুকে ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বলল,

‘হাসালি রে অনু। আচ্ছা তুই তো অনেকক্ষণ এই ভেজা ড্রেস পড়ে আছিস। ড্রেসটা চেঞ্জ করে নে। নাকি তোর ড্রেসটা আমি চেঞ্জ করে দিবো? আমি কিন্তু তোর ড্রেস চেঞ্জ করতে রাজি আছি।’

অনু চোখ বড়বড় করে আদ্রকে অবাক হয়ে বলল,

‘এসব তুমি কি বলছো আদ্র ভাইয়া? রুম থেকে বের হও বলছি। তুমি খুব অসভ্য ছেলে।’

আদ্র হতাশ গলায় অনুকে বলল,

‘পোড়া কপাল আমার। কোনো শান্তি নেই। আচ্ছা তুই ড্রেসটা চেঞ্জ করে নে। আমি গেলাম।’

আদ্র রুম থেকে চলে গেল। অনু ড্রেসটা চেঞ্জ করে বিছানায় বসে রইল। আদ্রের এতো পাগলামি অনু সহ্য করতে পারছে না। কি ভাবে টা কি নিজেকে? অনুকে কি খেলার পুতুল পেয়েছি নাকি? অনু মনে মনে ভীষণ রাগে ফুঁসতে লাগলো। আদ্রকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে। অনু বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলল,

‘এই আদ্র ভাইয়া তো আমার কথা বিশ্বাস করছে না। আমি এখন কি করবো? নিজে তো একটা পাগল। সাথে আমাকেও পাগল বানিয়ে ছাড়বে। এতো ঝামেলা আর ভালো লাগে না। আমি কি দেশে ফিরতে পারবো না?’

আদ্র আবারও রুমে আসলো। অনু আদ্রকে দেখে কোথায় পালাবে বুঝতে পারছে না। অসহায় দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্র অনু্র পাওয়া দৃষ্টি দেখে এগিয়ে এসে শান্ত স্বরে বলল,

‘ভয় নেই। আমি এখন আর মাতাল নেই।’

অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,

‘তুমি না একটু আগে এতো এতো মদ খেয়ে মাতাল হলে? নেশা কাটলো কি করে?’

আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,

‘তোমাকে জানতে হবে না।’

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

‘এই ছেলের মাঝে মাঝে হয় টা কি? এই আমাকে তুমি করে বলে তো এই তুই করে বলে। আমার মনে হয় এই আদ্র ভাইয়া পুরোই মেন্টাল হয়ে গেছে।’

আদ্র বিছানায় অনুর পাশে শুয়ে পড়লো। অনু লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে কাঁপতে কাঁপতে আদ্রকে বলল,

‘তুমি কি আমার সাথে ঘুমাবে নাকি?’

আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘হুম। তোমার সাথেই তো ঘুমাবো। শুয়ে পড়ো ডার্লিং। অনেক রাত হয়েছে। আর ডিসটার্ব করো নাতো।’

অনু রেগে আদ্রকে বলল,

‘অসভ্য ছেলে তোমার সাহস হয় কি করে এই কথা বলার? আমি তোমার বউ নাকি যে তোমার সাথে ঘুমাবো? তোমার এই বিদেশি কালচারে এসব নষ্টামি চললেও আমাদের বাংলাদেশে এসব চলে না।’

আদ্র শুয়া থেকে উঠে বসে অসহায় স্বরে অনুকে বলল,

‘এভাবে বলছো কেন সুইটহার্ট? আমি নিজেও তো বাংলাদেশী। বিদেশে থেকে পড়াশোনা করেছি বলে আমাকে এতোটা খারাপ ভেবো না। তোমাকে তো আমি বিয়ে করতে চাইছি। কিন্তু তুমিই তো রাজী হচ্ছো না। এতে আমার দোষ কি তুমি বলো?’

অনু দাঁতে দাঁত চেপে আদ্রকে বলল,

‘তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাইলেও তোমার মতো এরকম অসভ্য, বদমেজাজী ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না। তুমি আমাকে আমার মা-বাবার কাছ থেকে বহুদূরে নিয়ে এসেছো। আমাকে বাংলাদেশে যেতে দিচ্ছো না। তোমাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।’

আদ্র অনুর দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর বিছানা থেকে নেমে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে সবুজ ড্রিম লাইট জ্বালালো। রুমের সবকিছু এখন আবছা আবছা অন্ধকার। সবুজ আলোয় চারদিক ছেয়ে গেছে। অনুর ভয়ে আত্মা কেঁপে যাচ্ছে। অনু চারদিক তাকিয়ে ভয়ে মনে মনে বলল,

‘আদ্র ভাইয়া রুমের লাইট অফ করে দিলো কেন? কি করতে চাইছে? আমাকে বাঁচাও কেউ। কিন্তু কে আমাকে বাঁচাবে? এখানে আর কেউ তো নেই!’

আদ্র অনুর কাছে এগোতে লাগলো। অনু ভয়ে পিছাতে পিছাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো। ড্রিম লাইটের আলোয় আদ্রকে খুব সুন্দর লাগছে। অনু ভাবতেও পারে নি কাউকে এই অল্প সবুজ আলোতেও এতোটা সুন্দর লাগতে পারে। অনু ভয় পাওয়া অবস্থাতেই আদ্রের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। আদ্র অনুর একদম কাছে চলে আসে। আদ্রের নিশ্বাসের শব্দ অনু শুনতে পারছে। আদ্র ডান হাত বাড়িয়ে অনুর গাল স্পর্শ করলে অনু কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আদ্র মুচকি হেসে অনুর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

‘অনু তুমি আমাকে এতো অসভ্য কেন বলো? তোমার সাথে কিছু না করেই আমাকে তুমি অসভ্য বলছো? আচ্ছা এবার যদি তোমার সাথে আমি একটু দুষ্টুমি করি তুমি কিন্তু আবার আমাকে কিছু বলতে পারবে না?’

অনু ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,

‘এসব তুমি কি বলছো আদ্র ভাইয়া?’

অনু ভয় পেয়ে পালাতে নিলে আদ্র অনুর হাত চেপে ধরে। অনু নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারলো না। আদ্র অনুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে একটান দিয়ে অনুকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। আদ্র কি করতে চাইছে অনু বুঝতে পারছে না। অনু এবার রেগে চোখ বন্ধ করে আদ্রকে বলল,

‘ছাড়ো বলছি আমাকে। আমি তোমাকে ঘৃণা করি।’

অনুর কথা শুনে আদ্র থমকে গেল। অনুকে ছেড়ে দিয়ে ব্যথিত স্বরে বলল,

‘অনু তুমি কেন ঘৃণা করো আমাকে?’

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘কারণ তুমি মানুষটাই একটা জঘন্য। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না। তাহলে কেন আমার সাথে এমন করছো? ছিঃ তোমার লজ্জা করে না আমার শরীরে স্পর্শ করতে? এতো বেহায়া কেন তুমি? কেন আমার পিছনেই পড়ে আছো? হ্যা মানলাম আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি বলেছি। বাধ্য হয়েই বলি বা ইচ্ছে করেই বলি তাতে তোমার কি? আমি ঐ ছেলের সাথে প্রেম করি বা না করি তুমি নাক গলানোর কে? তুমি কেন আমাকে জোর করে সুইজারল্যান্ড তুলে এনেছো? যেতে দাও আমাকে। আর টর্চার করো না।’

অনুর কথা শুনে আদ্রের ভীষণ রাগ হচ্ছে। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে রাগটা আদ্র হজম করে নিচ্ছে। আদ্র চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর অনুর দিকে তাকিয়ে আদ্র গম্ভীর স্বরে বলল,

‘তোমাকে আমার ভালো লাগতো অনু। ধীরে ধীরে আমি উপলব্ধি করেছি তোমার প্রতি আমার এই অনুভূতিটা শুধু ভালো লাগা নয় বরং ভালোবাসা। কারণ আমি চাইলেও তোমার কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারি না। তোমার মাঝে এমন কিছু আছে যা কারও মধ্যে নেই। তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার অসহ্য লাগে। যেদিন তোমাকে আমি প্রথম দেখি সেদিনই তোমার প্রতি একটা আলাদা অনুভূতি আমার কাজ করে। অনু আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমাকে বেহায়া, অসভ্য যাই বলো, আমাকে যতই তুমি অপমান করো, তোমার প্রতি আমার এই ভালোবাসার অনুভূতি কখনো যাবে না অনুু। আমি চাইলেও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না। আমি তোমাকে ভালোবাসি অনু।’

অনু আদ্রের দিকে অনুভূতি শূন্য হয়ে তাকিয়ে রইল। হাসার চেষ্টা করে অনু আদ্রকে বলল,

বাহ্ আদ্র ভাইয়া তুমি খুব ভালো নাটক করতে পারো। তোমার নাটকের প্রশংসা করতে হবে। তুমি আমাকে ভালোবাসি বললে আর আমিও তোমার কথা এতো সহজে বিশ্বাস করে নিবো তা তুমি ভাবলে কি করে? আমার সাথে মশকরা করো?

আদ্রের এবার সত্যি অনুর ব্যবহারে খুব খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে আদ্রের বুকের ভিতরে কেউ তীব্র দাঁড়াল ছুরি দিয়ে অাঘাত করছে। আদ্র হতাশ গলায় অনুকে বলল,

‘অনু আমি তোমার সাথে কোনো নাটক করছি না। আমি সত্যি তোমাকে খুব ভালোবাসি। কেন বোঝার চেষ্টা করছো না? বিলিভ মি অনু আই লাভ ইউ।’

#চলবে…