#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_২২
#Anika_Fahmida
অনু এগিয়ে গিয়ে রুমের লাইটটা অন করে দিলো। মুহুর্তেই ঘরটা অন্ধকার থেকে আলোকিত হয়ে গেল। যাতে আদ্রের মুখটা স্পষ্ট দেখতে পায়। তারপর অনু আদ্রের একদম কাছে এসে দাঁড়াল। একদৃষ্টিতে আদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্র এখনও সেই ব্যথিত দৃষ্টি নিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রের চোখের কোণে অল্প জল দেখা যাচ্ছে অনু তা একদম কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছে। অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
‘আমাকে তুমি ভালোবাসো আদ্র ভাইয়া?’
আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘কতবার বলবো তোমাকে? হ্যা আমি তোমাকে ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি অনু।’
অনু ধীরে ধীরে আদ্রের আরও কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো। আদ্র বুঝতে পারছে না অনুর আবার কি হলো? কেমন যেন অনুকে স্বাভাবিক লাগছে না। অনুকে অস্বাভাবিক লাগছে। অনু হেসে আদ্রকে বলল,
‘চলো বারান্দায় যাই। আকাশে অনেক বড় চাঁদ আছে হয়তো। দুজন মিলে দেখবো। খুব ভালো হবে না?’
অনুর কথা শুনে আদ্র কিছুটা অবাক হলো। স্থির দৃষ্টিতে আদ্র অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। অনু মুচকি হাসছে। আদ্র অনুকে সন্দেহী গলায় বলল,
‘অনু তুমি হঠাৎ এমন পাল্টে গেলে কেন?’
অনু হাসি থামিয়ে আদ্রকে বলল,
‘কই আমি পাল্টে গেলাম?’
আদ্র কপাল কুঁচকে সন্দেহী গলায় বলল,
‘কেমন যেন হঠাৎই বদলে গেছো এমন।’
অনু হেসে আদ্রকে বলল,
‘তোমার ভুল ধারণা। বারান্দায় যাবে না? চলো?’
অনু আদ্রের ডান হাতটা নিজের দুই হাতে চেপে ধরলো। আদ্র এখনও অনুর দিকেই তাকিয়ে আছে। মেয়েটার হঠাৎ এমন পরিবর্তন আদ্র মেনে নিতে পারছে না। এই রেগে যাচ্ছে তো এই শান্ত হয়ে যাচ্ছে। আদ্র অনুকে নিয়ে বারান্দায় গেল। আকাশে চাঁদ উঠেছে। চাঁদের পাশে কতগুলো জ্বলমল তারা। অনু আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। তারপর আবারও আদ্রের দিকে ফিরে তাকিয়ে হাসলো অনু। আদ্র অনুর হাসি দেখে নিজেও মুচকি হাসলো। তীব্র বাতাস বইছে। বাতাসের বেগে অনুর খোলা চুলগুলো উড়ছে। শ্যামলা বর্ণের মায়াবী দুই চোখের অনুকে দেখতে আদ্রের কাছে ভীষণ ভালো লাগছে। অনুর চুলগুলো বাতাসে মুখে এসে পড়ছে। সেই চুলগুলো অনু আবারও কানের কাছে গুঁজে নিচ্ছে। অনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদ্রকে বলল,
‘তোমাকে কিছু কথা বলি আদ্র ভাইয়া?’
আদ্র আকাশের তারাগুলোর দিকে তাকিয়েই অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
‘হুম বলো অনু।’
অনু আদ্রকে এবার গম্ভীর স্বরে বলল,
‘আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে আমি বলি নি। আমার দিকে একটু ফিরে তাকাও।’
আদ্র অনুর দিকে চমকে ফিরে তাকালো। আদ্র অনুর থেকে উচ্চতায় অনেক লম্বা। অনু এগিয়ে গিয়ে হাত উঁচু করে বাড়িয়ে আদ্রের গালে স্পর্শ করলো। আদ্র এখনও অবাক হয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। অনু শান্ত স্বরে আদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘অবশেষে তুমি আমাকে ভালোবেসেই ফেললে?’
আদ্র নিজের গালে রাখা অনুর হাত স্পর্শ করে হাসার চেষ্টা করে ব্যথিত স্বরে অনুকে বলল,
‘হুম। তোমাকে ভালোবেসে ফেললাম। কিন্তু তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না। আমাকে বিশ্বাসও করো না। আমাকে তো তুমি ঘৃণা করো অনু।’
আদ্রের কথা শুনে অনুর খুব খারাপ লাগলো। অনু চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। যেই আদ্রের কাছ থেকে অনু পালাতে চেয়েছিল আজ সেই আদ্রের কাছেই নিজেকে ধরা দিতে হলো। অনু কখনো নিজের মন কাউকে দেয় নি। দিবে কেন? একজনের জন্যই অনু নিজের মন রেখেছিল। শেষে কিনা আদ্র অনুকে চুরি করে ফেললো। যখন আদ্রের চোখে অনু জল দেখলো। যেই ব্যথিত দৃষ্টি নিয়ে আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে ছিল অনুর সবকিছু সেই মুহূর্তেই যেন এলোমেলো হয়ে গেল। আদ্রের উপর যত রাগ ছিল সব যেন হাওয়ায় উড়ে গেল। অনু গম্ভীর হয়ে আদ্রকে বলল,
‘আমাকে ভালো না বাসলেও তুমি পারতে। খুব কষ্ট পাবে তুমি। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না।’
আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করল,
‘কষ্ট কি এতোদিনে তুমি আমাকে কম দিয়েছো অনু?’
অনু চমকে আদ্রের দিকে তাকাল। আসলেই তো! সেই শুরু থেকে আদ্রকে অনু কষ্টই দিয়েছে। এতো কষ্ট না দিলেও তো পারতো। আদ্রকে অনু কত অপমান করেছে। অনু হঠাৎ করেই মাটিতে বসে পড়লো। অনু এভাবে মাটিতে বসে পড়ায় আদ্র ঘাবড়ে গেল। অনুকে বিচলিত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘অনু তোমার কি হলো?’
আদ্র অনুকে টেনে তুলতে নিলে অনুর আদ্রকে থামিয়ে দিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল,
‘আমাকে টেনে তুলো না আদ্র ভাইয়া। আমি এখানেই একটু বসে থাকতে চাই।’
আদ্রও অনুর পাশে মাটিতে বসে পড়ল। অনুর দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো এমন কেন করছে অনু?
অনুর মাথায় সবকিছু এলোমেলো হতে লাগলো। অনু চোখ বন্ধ করে নিজের মাথায় হাত দিয়ে চোখের জল ফেলে কাঁদতে কাঁদতে আদ্রকে বলল,
‘আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও আদ্র ভাইয়া। তোমাকে আমি কারণে অকারণে অনেক অপমান করেছি। আসলে আমি কি করেছি না করেছি নিজের কাছেই কেমন অস্পষ্ট লাগতো। আমি দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। তুমি খুব বেশি কষ্ট পেয়েছো তাই না?’
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
‘অনু এজন্য তুমি এভাবে কাঁদছো?’
অনু কিছু বললো না। কাঁদতে লাগলো। ভালোবাসা কেমন হয় অনু জানে না। আদ্র কেন অনুকে চাইতো তাও অনুর কাছে অজানা ছিল। অনু ভাবতো আদ্র অনুকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বিয়ে করতে চায়। কারণ অনু বিভিন্ন খবরের কাগজের পড়তো কিভাবে গৃহবধূর প্রতি কিছু স্বামী নামক পশু অত্যাচার করে। অনুর মনে স্বামী নামক কিছু পুরুষের প্রতি ঘৃণা জন্মে গিয়েছিল। যেহেতু অনু চুপচাপ আর বাচ্চা স্বভাবের তাই সকলের কাছে অপছন্দ ছিল অনু৷ সকলের কাছে। কেউ অনুকে একটুও ভালোবাসতো না৷ এমনকি এই গম্ভীর আচরণের জন্য অনুর মা-বাবাও অনুকে ভালোবাসতো না। অনু কাঁদছে দেখে আদ্র অনুকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে। অনু আদ্রের বুকে মাথা রেখেই কাঁদতে লাগলো। নিজের মনের কথা সবার কাছে বলতে অভ্যস্ত না অনু। তাই আদ্রকেও অনু বলতে পারছে না। আদ্র অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
‘এই অনু এভাবে কাঁদছো কেন? এভাবে কেঁদো না প্লিজ। তুমি কান্না করলে আমার ভালো লাগে না।’
অনু আদ্রের বুক থেকে সরে গেল। তারপর আদ্রের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘তুমি কি খববের কাগজের কিছু মেয়ের স্বামীর মতো খারাপ হবে? আমাকে মারবে? পাল্টে যাবে নাতো?’
আদ্র অনুর গালে আলতো ছুঁয়ে বলল,
‘অনু আমি কেন তোমাকে মারতে যাবো? আর কি বলছো তুমি? খবরের কাগজের মেয়ের স্বামীর মতো আমি খারাপ হবো মানে?’
অনু চুপ করে আদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছু বললো না। আদ্র অনুর গাল থেকে হাত সরিয়ে নিলো। তারপর কিছুক্ষণ ভেবে অবাক হয়ে আদ্র অনুকে বলল,
‘ওয়েট! অনু তুমি কি আমাকে নিউজপেপারের কিছু নির্দয় মানুষগুলোর মতো ভাবছো? যেসব স্বামী তার স্ত্রীর উপর অত্যাচার করে? আমি নিউজপেপারের মেয়েগুলোর স্বামীর মতো হবো না অনু। তুমি আমাকে অতটা খারাপ মানুষ ভাবো? সিরিয়াসলি?’
অনু মাথানিচু করে আদ্রকে বলল,
‘আসলে আমার ভয় লাগে। যদি আমার স্বামীও এমন হয় তখন আমার কি হবে?’
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। কিন্তু হাসিটা অনুকে দেখানো যাবে না তাই আগের মতো হয়ে গেল। অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল,
‘জানো আদ্র ভাইয়া? আমার খুব ইচ্ছে ছিল আমি যাকে বিয়ে করবো সে আমাকে খুব খুব খুব ভালোবাসবে। কিন্তু টিভিতে আর ঐ নিউজপেপার যেভাবে স্বামীরা স্ত্রীদের প্রতি অত্যাচার করে ওসব ভাবলেই আমার গায়ে কাঁটা দিতো। বিয়ে করার ইচ্ছেটাও শেষ হয়ে যায়। তুমি তো খুব রাগী। তাই আমি তোমাকে তেমন ভাবতাম৷ তুমি এই কথা শুনে রাগ করো নিতো?’
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
‘না। রাগ করি নি।’
অনু হেসে আদ্রকে বলল,
‘সত্যি রাগ করো নি?’
আদ্র অনুকে আবারও গম্ভীর স্বরে বলল,
‘বললাম তো আমি রাগ করি নি।’
চাঁদের আলোয় অনুর মুখটা বেশ সুন্দর লাগছে। আদ্র অনুকে ভালো করে দেখছে। কান্না করে অনু চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। আদ্র হাত বাড়িয়ে অনুর চোখের জল মুছে দিলো। অনুর আদ্রকে এখন খুব ভালো লাগছে। অনু লজ্জায় লাল হয়ে আদ্রকে বলল,
‘তোমাকে একটা সত্যি কথা বলি?’
আদ্র অনুকে বলল,
‘হুম বলো।’
অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় রাঙানো মুখ করে শান্ত স্বরে বলল,
‘যেদিন আমি তোমাকে প্রথম দেখি ঠিক সেদিনই আমি তোমার উপর বড়সড় ক্রাশ খেয়েছিলাম আদ্র ভাইয়া।’
আদ্র অনুর দিকে শান্ত চাহনিতে তাকালো। যেন আদ্র জানতো অনুও আদ্রকে মনে মনে পছন্দ করে। অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
‘কি হলো আদ্র ভাইয়া তুমি কিছু বলবে না?’
আদ্র অনুকে হেসে শান্ত স্বরে বলল,
‘আমি জানতাম তুমি আমাকে প্রথম দেখায় পছন্দ করে ফেলো। তুমি আমার প্রতি তোমার মনের অনুভূতি লুকানোর কতো চেষ্টা করতে। আমি ঠিক বললাম তো?’
অনু আদ্রের দিক থেকে চোখ নামিয়ে ফেললো। অনেক লজ্জা লাগছে। অনু অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
‘এতো বেশি বুঝা ভালো না আদ্র ভাইয়া।’
অনুর কথা শুনে আদ্র হাসলো। হঠাৎই মন খারাপ করে আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করল,
‘আমি তোমার ক্রাশ সেটা আমি জানতাম অনু। কারণ আজ পর্যন্ত আদ্রকে দেখে কেউ ক্রাশ খায় নি এমন মেয়ে পাওয়া মুশকিল। সবাই আমার উপর ক্রাশ খেয়েছে। কিন্তু তুমি তোমার ক্রাশকেও ঘৃণা করো অনু?একটুও কি আমার প্রতি তোমার অনুভূতি নেই?’
অনু আদ্রের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো। হঠাৎ করেই অনু আদ্রকে জড়িয়ে ধরলো। অনুর এমন নিজে থেকে জড়িয়ে ধরাতে আদ্র ভীষণ অবাক হলো। অনু আদ্রের কানের কাছে মুখ নিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
‘আমি এখন তোমাকে মুখে কিছু বলতে পারবো না। তুমি তোমরা মন থেকে বুঝে নাও।’
#চলবে…
#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_২৩
#Anika_Fahmida
অনুর কথা শুনে আদ্রের বুকের ভিতরের কম্পন যেন বেড়ে গেল। অনু হেসে আদ্রের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। আদ্র কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল। অনু যে আদ্রকে মন থেকে মেনে নিয়েছে এই ভেবে আদ্র খুব খুশি। আপনমনে নিঃশব্দে হাসলো আদ্র। অনুর দিকে তাকিয়েই আদ্র মনে মনে বলল,
‘অনু তোমার কাছ থেকে হয়তো মুখে আমি ভালোবাসি কথাটা শুনতে পাই নি। কিন্তু তুমি যে মন থেকে আমাকে ভালোবাসো এটা আমি বুঝতে পেরেছি।’
আদ্র চুপ করে আছে দেখে অনু জিজ্ঞেস করল,
‘কি হলো আদ্র ভাইয়া? চুপ করে আছো যে? কি এমন ভাবছো তুমি? আমার কথায় কষ্ট পেয়েছো?’
আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘না অনু। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি কি বলতে চাইছো। আমার এখন আর কোনো কষ্ট নেই। তুমি ঘুমাবে না?’
অনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদ্রকে বলল,
‘আমার ঘুম আসছে না।’
আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করল,
‘আচ্ছা অনু তোমাকে একটা কথা বলি?’
অনু মুচকি হেসে আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
‘কি কথা বলো?’
আদ্র অনুরোধ করে অনুকে বলল,
‘আমাকে শুধু আদ্র বলবে। ভাইয়া ডাকটা আমার কাছে খুব বোরিং লাগে। প্লিজ অনু আমার এই কথাটা রাখো।’
অনু স্থির দৃষ্টিতে আদ্রের দিলে তাকাল। হাসিমুখে নরম স্বরে অনু আদ্রকে বলল,
‘তুমি যা চাও তাই হবে।’
অনুর কথা শুনে আদ্র খুব খুশি হলো। বেশ অনেকক্ষণ নিরবতা কাটলো। হঠাৎ করেই অনুর মা-বাবার কথা ভীষণ মনে পড়ছে। আদ্রকে অনু চিন্তিত স্বরে বলল,
‘আমার আম্মু আব্বুর কথা খুব মনে পড়ছে আদ্র। তুমি তো আম্মু আব্বুর কাছে কোনো কিছু না জানিয়েই আমাকে বিদেশ তুলে নিয়ে এসেছো। আম্মু -আব্বু যে আমার জন্য খুব চিন্তা করছে। তুমি কি বুঝো না?’
আদ্র অনুর দিকে তাকাল। তারপর শব্দ করেই হাসতে লাগলো। অনু কিছু বুঝতে পারছে না। এভাবে হাসছে কেন আদ্র? হাসতে হাসতেই আদ্র অনুকে বলল,
‘অনু তোমার আম্মু আব্বুকে আমি অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছি যে তুমি আমার কাছে আছো। আংকেল আন্টি তোমার ব্যাপারে কোনো চিন্তা করছে না। তাই মন খারাপ করো না।’
অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
‘তুমি আম্মু আব্বুকে কখন জানালে যে আমি তোমার কাছে আছি?’
আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘যেদিন তোমাকে সুইজারল্যান্ড এনেছি ঠিক সেই দিনই ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি।’
অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
‘আম্মু আব্বু তোমার উপর রাগ করে নি?’
আদ্রের মুখটা হঠাৎ করেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল। হাসার চেষ্টা করে আদ্র অনুকে বলল,
‘একটুও রাগ করে নি।’
অনু সন্দেহী গলায় আদ্রকে বলল,
‘তুমি আমাকে মিথ্যা কথা বলছো নাতো?’
আদ্র এবার রাগী স্বরে অনুকে বলল,
‘অনু আমি তোমাকে মিথ্যা কথা কেন বলতে যাবো? আমি তোমাকে মিথ্যা কথা বলছি না। তুমি আর তোমার আম্মু আব্বু টেনশন করবে ভেবে এতো চিন্তা করো না।’
অনু আর কিছু বললো না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে চোখ বন্ধ করতেই অনু ধীরে ধীরে গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়লো। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে দেখল অনু ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই ঘুমন্ত অনুকে আদ্র কোলে করে রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। অনুর মাথায় হাত বুলাচ্ছিল আদ্র। ঠিক এমন সময় আদ্রের ফোনে কল এলো। আদ্র ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতে পেল রিনির ফোন। রিনি কেন ফোন করেছে বুঝতে পারছে না আদ্র। কল রিসিভ করতেই রিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে আদ্রকে বলল,
‘আদ্র তুই আমাকে একা ফেলে সুইজারল্যান্ড চলে গেলি? একটুও আমার কথা ভাবলি না?’
আদ্র গম্ভীর স্বরে রিনিকে বলল,
‘তোর কথা আমি কেন ভাবতে যাবো? তুই জাস্ট আমার বন্ধু। তাই বন্ধুর মতো হয়ে থাক। অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করবি না রিনি।’
রিনি বিচলিত স্বরে আদ্রকে বলল,
‘আদ্র আমি তোকে খুব ভালোবাসি। কেন বুঝিস না তুই?তোর কাছে আমার অনুভূতির কোনো দাম নেই?’
আদ্র রাগী স্বরে রিনিকে বলল,
‘না। আমার কাছে তোর অনুভূতির কোনো দাম নেই। রিনি আমি তোকে ভালোবাসি না। কেন আমাকে বার বার ফোন করে তুই জ্বালাচ্ছিস? একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ আমি অনুকে ভালোবাসি। তোকে নয়।’
আদ্র অনুকে ভালোবাসে কথাটা শুনে রিনির মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। নিজের দুই চোখের জল মুছে নিয়ে রিনি চিৎকার করে আদ্রকে রেগে বলল,
‘ঐ ফকিন্নি মেয়ের মধ্যে কি এমন পেয়েছিস তুই? যার কোনো ক্লাস নেই। একটা থার্ড ক্লাস মেয়ে অনু। অনুর থেকে হাজার গুণে সুন্দরী আমি। আদ্র তোর বাবার টাকার থেকে আমার বাবার টাকা কোনো অংশে কম নয়। তাও কেন তুই আমাকে ভালোবাসতে পারছিস না?’
আদ্র চিৎকার করে রিনিকে কিছু বলতে গিয়েও বললো না। কারণ রুমে অনু শুয়ে আছে। অনুর ঘুম ভেঙে যেতে পারে। তাই বারান্দায় গিয়ে আদ্র রেগে রিনিকে বলল,
‘রিনি মুখ সামলে কথা বল। অনুর সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা বললে তোকে আমি খুন করে ফেলবো।’
রিনি কান্না করতে করতে আদ্রকে বলল,
‘বাহ্ আদ্র বাহ্! আমরা এতো বছরের ভালো বন্ধু। আর তুই কিনা ঐ দুই দিনের পরিচয় হওয়া অনুর জন্য আমাকে খুন করে ফেলবি বলতে পারলি?’
আদ্র গম্ভীর স্বরে রিনিকে বলল,
‘হ্যা অনুর জন্য আমি সব করতে পারি। সবাইকে শেষ করে দিতেও আমার হাত কাঁপবে না। তোরা আমাকে আর জ্বালাস না। এক তো তুই জ্বালাচ্ছিস আর এক সুমি জ্বালাচ্ছে। তোদের বন্ধু বানানোই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে। তানিয়াও আমার পিছে অনেক ঘুরেছিল কিন্তু শেষে সে বুঝেছিল আমি ওকে ভালোবাসবো না তাই আমার আশা ছেড়ে দিয়েছিল। তোরা দুইজন কেন আমার পিছে লেগে আছিস বল তো? আমি তোদের কাউকে ভালোবাসি না বার বার বলছি তো। মানে সুন্দর ছেলে দেখলে তোরা লোভ সামলাতে পারিস না। তাই তো?’
রিনি আদ্রকে রেগে বলল,
‘আদ্র তুই কিন্তু আমাকে অপমান করছিস। আমি তোর কথায় খুব কষ্ট পাচ্ছি। তুই কি বুঝিস না?’
আদ্র গম্ভীর স্বরে রিনিকে বলল,
‘আমার বোঝার কোনো ইচ্ছে নেই।’
রিনি নিজের চোখ মুছে শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
‘আদ্র এই অনুর জন্য তুই যে এতো পাগল হচ্ছিস। দেখিস এই অনুর জন্য পড়ে তোকে কাঁদতে হবে।’
রিনির কথা আদ্রের কাছে একদমই ভালো লাগছে না। রাগে আদ্র ফোনটা কেটে দিয়ে সাইলেন্ট করে রাখলো। রুমে এসে বিছানার এক কোণে অনুর পাশে বসলো আদ্র। অনুর মুখটা কতটা মায়াবী আর নিষ্পাপ লাগছে। রিনির কথা শুনে আদ্র একটু অবাক হলো। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো,
‘রিনি এটা কেন বললো যে অনুর জন্য আমার কাঁদতে হবে? এতোটা সিউর দিয়ে কি করে বলতে পারলো?’
আদ্র ভাবলো হয়তো রিনি অতি আবেগে যা মন চায় তাই বলেছে। এজন্য আদ্র রিনির কথা এতোটা পাত্তা দিলো না। সকাল বেলায় অনুর ঘুম ভাঙলো। অনু চোখ খুলে নিজেকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো। শুয়া থেকে উঠে বসে অনু মনে মনে বলল,
‘আমি তো আদ্রের সাথে বারান্দায় বসে ছিলাম। তাহলে রুমে আসলাম কি করে? আদ্র নিয়ে এসেছে?’
অনুকে কোলে করে আদ্র রুমে নিয়ে এসেছে কথাটা ভেবেই অনুর মনে কেমন যেন একটা অনুভূতি হলো। আশেপাশে তাকিয়ে অনু আদ্রকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেল না। ঠিক এমন সময় আদ্র গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। অনু হা করে আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্র এখন একটা কালো টি শার্ট আর ব্লু জিন্স পড়ে আছে। চুল থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। অনু আদ্রের উপর আরেক দফা ক্রাশ খেয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। অনুর বুকের ভিতর ধুকপুক করছে। আদ্র অনুর পাশে বসে জিজ্ঞেস করল,
‘অনু তুমি অন্যদিকে তাকিয়ে আছো কেন? আমার দিকে তাকাও? কি হলো তোমার?’
ঘাবড়ে গিয়ে অনু কোনোরকম আদ্রকে বলল,
‘কিছু হয় নি আমার। এমনি অন্যদিকে তাকিয়ে আছি।’
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
‘অন্যদিকে এমনি তাকিয়ে আছো? নাকি আমার দিকে তাকাতে তুমি লজ্জা পাচ্ছো কোনটা?’
অনু আদ্রের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল,
‘তোমাকে দেখে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? বললাম তো এমনি তাকিয়ে ছিলাম।’
আদ্র রুমাল দিয়ে নিজের মাথার চুল মুছতে মুছতে অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
‘আচ্ছা তোমার কথা আমি বিশ্বাস করলাম।’
অনু আড়চোখে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র যেই অনুর দিকে তাকাল ঠিক সেই মুহূর্তে অনু চোখ ঘুরিয়ে দেয়ালের দিকে তাকাল। আদ্র হেসে অনুকে বলল,
‘তুমি ধরা পড়ে গেছো অনু। আমার সাথে তোমার আর লুকোচুরি খেলতে হবে না।’
অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
‘কি বলছো তুমি আদ্র? আমি কেন তোমার সাথে লুকোচুরি খেলতে যাবো? আমি কোনো লুকোচুরি খেলছি না। তুমি ভুল ভাবছো।’
আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘হ্যা আমি ভুল ভাবছি। তুমিই ঠিক বলছো।’
অনুর হঠাৎ মনে হলো আদ্র সারারাত কোথায় ঘুমিয়েছে? অনু আবারও ভয় পেয়ে ঢুক গিলে আদ্রের দিকে তাকিয়ে অসহায় স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘আদ্র তুমি সারারাত কোথায় ঘুমিয়েছো?’
আদ্র অবাক হওয়ার অভিনয় করে অনুকে বলল,
‘কেন অনু তুমি জানো না? আমি তো তোমার সাথেই সারারাত ঘুমিয়েছিলাম। তুমি সব কিছু ভুলে গেলে?’
আদ্রের কথা শুনে অনুর কলিজা শুকিয়ে গেলো। অনু ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,
‘মানে? আদ্র তুমি আমার সাথে ঘুমিয়েছো? এতো পঁচা তুমি? আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। আর তুমি আমার সাথে এমন করলে?’
অনুর ভীষণ কান্না পাচ্ছে। বিয়ের আগেই আদ্র অনুর সাথে এক বিছানায় ঘুমিয়েছে এটা অনু শুনতে পেয়ে কিছুতেই মানতে পারছে না। আদ্র অনুর ভয় পাওয়া চেহারাটার দিকে তাকিয়ে আছে। অনু বালিশ হাতে নিয়ে আদ্রের পিঠে মারতে মারতে বলল,
‘তুমি কেন আমার সাথে এমন করলে? কেন আদ্র?’
আদ্র অনুর কাছ থেকে বালিশ কেড়ে নিলো। অনু এখনও কান্না জড়িত চোখে আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘আমি তোমার সাথে মজা করছিলাম অনু। আমি সোফায় ঘুমিয়েছিলাম। তোমার সাথে ঘুমাই নি।’
অনু রাগী স্বরে আদ্রকে বলল,
‘তাহলে আমাকে মিথ্যে বললে কেন?’
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
‘তোমাকে রাগাতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।’
অনু এবার আদ্রের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতেই হেসে ফেললো। আদ্রও হাসছে। আদ্র অনুকে এবার রাগী স্বরে বলল,
‘যাও এবার গোসল করে আসো।’
অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,
‘গোসল না করলে হয় না?’
আদ্র ধমক দিয়ে অনুকে বলল,
‘একটা চড় দিয়ে গাল লাল করে ফেলবো। তোমার শরীরে যে আমি গতকাল মদ ঢেলেছিলাম মনে নেই? গোসল না করলে তোমার প্রবলেম হবে। অসুস্থ হয়ে যাবে তুমি। যাও গোসল করে আসো। নাহলে চড় খাবে।’
অনু না চাইতেও বিছানা থেকে নামলো। গোসল করতে অনু যেই না ওয়াশরুমে যাবে ওমনি অনুর মনে হলো আদ্র তো রুমে আছে। আদ্রের দিকে ফিরে অনু বলল,
‘তুমি রুম থেকে যাও। আমি গোসল করে কাপড় চেঞ্জ করবো। তুমি রুমে থাকলে কি করে চেঞ্জ করবো?’
আদ্র দুষ্টু হেসে অনুকে বলল,
‘আরে প্রবলেম কি?আমার সামনেই চেঞ্জ করবে। দেশে ফিরলে এমনিতেও তো আমরা বিয়ে করবো।’
অনু রেগে দাঁতে দাঁত চেপে আদ্রকে বলল,
‘তোমার মতো লুচু মার্কা ছেলে আমি জীবনেও দেখি নি। তুমি এখনই রুম থেকে বের হবে নাহলে আমি কিন্তু গোসল করবো না।’
আদ্র অনুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘আচ্ছা ঠিক আছে আমি রুম থেকে চলে যাবো। কিন্তু তোমাকে আগে এটা বলতে হবে আমি লুচু হিসেবে একশোতে ঠিক কত পাই?’
অনু কিছু না ভেবেই আদ্রকে বলল,
‘তুমি লুচু হিসেবে একশোতে একশো পাও। এবার রুম থেকে যাও তো আদ্র।’
আদ্র রুম থেকে যেতে নিয়েও থেমে গেল। অনুর কাছে এগিয়ে এসে আদ্র হঠাৎ করেই অনুর ডান গালে চুমু দিয়ে দিল। অনু চোখ বড়বড় করে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র হেসে অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তোমার কাছে লুচুর মার্কে আমি একশোতে একশো পেলাম। আর তুমি একটা চুমু গিফট পাবে না তা কি করে হয় বলো তো অনু? তাই চুমু দিলাম তোমাকে।’
আদ্র রুম থেকে চলে গেল। অনু অবাক হয়ে আদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। অনু মনে মনে বলল,
‘আদ্র আস্ত একটা পাগল।’
#চলবে…