#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_৩২
#Anika_Fahmida
ভোরের মিষ্টি আলোতে আদ্রের ঘুম ভেঙে যায়। আদ্র চোখ খুলেই অনুর ঘুমন্ত মুখটা নিজের বুকের উপর দেখে মুচকি হেসে প্রশান্তির নিশ্বাস ফেললো। অনুকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদ্র মনে মন বলল,
‘তোমাকে সারাজীবন নিজের এই বুকের মাঝে আগলে রাখবো অনু। তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি কখনো শেষ হবে না৷ আমার প্রতিটা নিশ্বাস জুড়েই যে শুধু তুমি আছো। খুব ভালোবাসি তোমাকে আমার কিউট বউ।’
অনু এখনও গভীর ঘুমে মগ্ন। আদ্র যে নেশাভরা দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে তা অনু দেখল না। যদি অনু আদ্রের এমন দৃষ্টি দেখতে পেতো তাহলে নিশ্চয়ই লজ্জায় শেষ হয়ে যেতো। ভালোবাসার মানুষের গভীর দৃষ্টিতে এক আলাদা ভালোলাগা কাজ করে৷
যখন অনুর ঘুম ভাঙলো তখন অনু দেখতে পেল আদ্র অনুর সামনে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আদ্র অনুর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনু আদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে একটু পরেই আদ্রের চুলগুলোর মাঝে দৃষ্টি গেল। আদ্রের চুলগুলো ভেজা। তারমানে আদ্র গোসল করে ফেলেছে। আর অনু এখনও পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে! অনু কিছুটা লজ্জা পেয়ে কম্বলে মুখ লুকালো। আদ্র শব্দ করে হেসে অনুকে বলল,
‘আমার এই লজ্জাবতী বউটা এতো লজ্জা পায় কেন?’
অনু কম্বলের নিচ থেকেই শান্ত স্বরে বলল,
‘জানি না।’
আদ্র হেসে শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘তুমি সবকিছুই জানো। শুধু বলতে চাও না।’
অনু আদ্রকে কিছু বললো না। কিন্তু অনু ভীষণ লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসলো। আদ্র অনুর মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে নিলো। অনু চোখ বন্ধ করে একইভাবে শুয়ে আছে। অনু এতো কেন লজ্জা পাচ্ছে অনুর জানা নেই।
আদ্র অনুর গালে আলতো ছুঁয়ে হেসে বলল,
‘অনু এখনও তুমি বিছানায় শুয়ে থাকবে? ফ্রেশ হবে না? ওহ বুঝেছি। আমার কাছ থেকে তুমি আরও আদর পেতে চাও। যদি তুমি চাও তাহলে আমি তোমাকে এখন আরও আদর করতে পারি।’
অনু চোখ খুলে শুয়া থেকে উঠে বসে আদ্রের দিকে তাকাল। অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
‘তুমি খুব বেশরম আদ্র। তোমার একটুও লজ্জা নেই।’
আদ্র অনুর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘লজ্জা মেয়েদের জন্য অনু। ছেলেদের লজ্জা পাওয়া শোভা পায় না। তোমার কাছে আমি আরও বেশরম হতে চাই। তুমি না চাইলেও আমি হতে চাই।’
অনু লজ্জা পেয়ে রেগে আদ্রের মুখে বালিশ ছুঁড়ে মারলো। আদ্র বালিশটা বলের মতো ক্যাচ করে ফেললো। অনু বাচ্চাদের মতো মুখ করে আদ্রকে বলল,
‘তুমি শুধু আমাকে লজ্জা দাও আদ্র। তোমার সাথে আমি কথাই বলবো না। খুব পঁচা তুমি।’
অনু তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গোসল করতে চলে গেল। আদ্র হাসতে লাগলো। অনু গোসল করে ড্রেস চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখতে পেল আদ্র অনুর জন্য কফি হাতে নিয়ে বসে আছে। আদ্র অনুর দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। অনু কালো রঙের সালোয়ার-কামিজের পড়েছে। অনুকে ভেজা মুখে,ভেজা চুলে দেখে আবারও আদ্রের নেশা ধরে গেল। আদ্র কফিটা হাতে নিয়ে অনুর কাছে এগিয়ে গিয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘অনু তোমার জন্য এই প্রথম আমি নিজের হাতে কফি বানিয়ে আনলাম। টেস্ট করে দেখো কেমন হয়েছে।’
অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
‘কেন আমার জন্য এতো কষ্ট করে কফি বানাতে গেলে?’
আদ্র কফিটা টেবিলে রেখে অনুর কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের আরও কাছ এনে বলল,
‘তুমি কফি খেতে ভালোবাসো। তাই আমি তোমার জন্য কফি বানিয়েছি।’
অনু একদৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুমি জানলে কি করে আমি কফি খেতে ভালোবাসি?’
আদ্র অনুর গালে গভীর চুমু দিয়ে হেসে বলল,
‘ভালোবাসার মানুষের সব পছন্দ অপছন্দ এমনিতেই জানা যায় অনু ৷ সবকিছু জিজ্ঞেস করে জানতে হয় না।’
আদ্র এভাবে হঠাৎ করে অনুর গালে চুমু দেওয়ায় অনু কেঁপে উঠে। অনু আদ্রের গালে হাত ছুঁয়ে বলল,
‘আদ্র তুমি যে মাত্রাতিরিক্ত পাগল তা কি তুমি জানো?’
আদ্র নেশাভরা কন্ঠে অনুকে বলল,
‘হ্যা আমি জানি অনু। তোমার জন্য পাগল হয়ে পাগলাগারদে যেতেও আমি রাজি।’
অনু হেসে ফেলে আদ্রকে বলল,
‘হয়েছে এবার আমাকে ছাড়ো। কফি তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আমি কিন্তু আবার ঠান্ডা কফি খেতে পারি না।’
আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘কফি ঠান্ডা হলেও কোনো সমস্যা নেই। আমি নাহয় তোমার জন্য আবার কফি বানিয়ে আনবো। কিন্তু এখন তোমাকে ভেজা চুলে দেখে আমি যে নিজের মধ্যে আর নেই অনু। আমি তোমার মাঝে হারিয়ে গেছি।’
অনু লজ্জা পেয়ে আদ্রকে বলল,
‘আমার খিদে পেয়েছে আদ্র। ছাড়ো তো আমাকে।’
আদ্র অনুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘তোমাকে ছাড়তে আমার একটুও ইচ্ছে করছে না। তুমি আমাকে খেয়ে ফেলো অনু। আমি বাঁধা দিবো না।’
অনু চোখ বড়বড় করে আদ্রকে বলল,
‘তুমি কি আসলেই পাগল হয়ে গেছো আদ্র?’
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
‘কতবার বলবো আমি তোমার জন্য পাগল হয়েছি?’
অনু লজ্জা পেলেও গম্ভীর মুখ করে বলল,
‘আদ্র আমি কফি খাবো। প্লিজ ছাড়ো আমাকে।’
আদ্র অসহায় মুখ করে অনুর দিকে তাকিয়ে অনুকে ছেড়ে দিলো। আদ্রের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে অনু মুচকি হেসে সোফায় বসে কফি খেতে খেতে বলল,
‘আদ্র তুমি কিছু খাবে না?’
আদ্র মন খারাপ করে গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
‘আমার খিদে নেই।’
অনু হতাশ হয়ে আদ্রকে বলল,
‘তুমি আমার উপর রাগ করেছো আদ্র?’
আদ্র মন খারাপ করে অনুর পাশে বসে বলল,
‘না, আমি তোমার উপর রাগ করি নি। ‘
অনু আর কফি খেলো না। আদ্র মন খারাপ করবে তা জানা ছিল না। অনু আদ্রের গাল ছুঁয়ে শান্ত স্বরে বলল,
‘তুমি মন খারাপ করে থাকলে আমার একটুও ভালো লাগে না আদ্র। তোমাকে হাসিখুশিতেই বেশি মানায়।’
আদ্র অনুর দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকাল। আদ্রের এমন দৃষ্টি দেখে অনুর বুকের ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে। কি দরকার ছিল গম্ভীর হয়ে আদ্রকে ওভাবে ছেড়ে দিতে বলার? আদ্র তো অনুকে শুধু একটু আদর করতেই চেয়েছিল। আর অনু কিনা এমন আচরণ করলো! অনুর নিজের উপরই এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে। অবশ্য আদ্রের স্পর্শে অনুর এক আলাদা ভালোলাগা কাজ করে যা অনু কখনো আদ্রকে বলতে পারবে না। আদ্র গম্ভীর হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে যা অনুর কাছে একটুও ভালো লাগছে না। অনু আদ্রকে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘আদ্র আমার দিকে তাকাও।’
আদ্র অনুর দিকে তাকানো মাত্রই অনু আদ্রের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। আদ্র প্রচুর অবাক হলো। অনু যে এমন করতে পারে আদ্রের ধারণার বাইরে ছিল। অনু আদ্রের ঠোঁট ছেড়ে শান্ত স্বরে বলল,
‘এখনও কি আমার উপর তুমি মন খারাপ করে থাকবে আদ্র? প্লিজ আমার উপর আর তুমি মন খারাপ করে থেকো না। আমার ভালো লাগছে না কিছু।’
আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,
‘অনু তোমার উপর আমার একটুও রাগ ছিল না। তোমার রিয়েকশন দেখার জন্য আমি মন খারাপ করে বসে ছিলাম। কিন্তু তুমি আমার সাথে যা করেছো তাতে আমি ভীষণ অবাক হয়েছি। তুমি তো দারুণ কিস করতে পারো অনু। আই লাইক ইট।’
অনু আদ্রের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে কাঁপা স্বরে বলল,
‘তারমানে তুমি মন খারাপ করার অভিনয় করছিলে?’
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
‘অভিনয় করছিলাম না৷ বললাম তো আমি তোমার রিয়েকশন দেখছিলাম। আমার মন খারাপে যে তোমারও মন খারাপ হয় আমি আজ বুঝতে পারলাম।’
অনু মাথানিচু করে শান্ত স্বরে বলল,
‘আদ্র তুমি এমন কেন?’
আদ্র অনুর মুখের কাছে ঝুঁকে এসে শান্ত স্বরে বলল,
‘শুধু তোমার জন্যই আমি এমন।’
অনু লজ্জা পাওয়া দৃষ্টিতে আদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে আবারও চোখ সরিয়ে নিলো।
আদ্র অনুর গালের পাশের চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে নেশাভরা কন্ঠে বলল,
‘আমার অনু যে এতো বেশি রোমান্টিক তা আমি আগে জানতাম না। একটা কথা কি জানো অনু?’
অনু কাঁপা স্বরে আদ্রকে বলল,
‘কি কথা?’
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
‘তোমার ঠোঁটের স্পর্শে মধু আছে।’
অনু চোখ বড়বড় করে আদ্রকে বলল,
‘আদ্র তুমি চরম অসভ্য।’
আদ্র অনুর কথা শুনে শব্দ করে হাসতে লাগলো। অনু না চাইতেও নিজেও মুচকি হাসলো।
রিনি মন খারাপ করে বই পড়ছিল। এমন সময় রিনির ফোনে কল এলো। বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নিয়ে রিনি দেখলো সুমি ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে রিনি ওপাশ থেকে সুমির কান্নার শব্দ শুনতে পেল। অবাক হয়ে রিনি সুমিকে বলল,
‘কি হয়েছে সুমি তুই কাঁদছিস কেন?’
সুমি কাঁদতে কাঁদতে রিনিকে বলল,
‘আমার সাথে আদ্রের বিয়েটা ভেঙে গেল রিনি।’
সুমির কথাটা শুনে মনে মনে রিনি খুব খুশি হলো। সুমির সাথে আদ্রের বিয়েটা তাহলে আর হবে না। নিজের বান্ধবী বলে সুমির সাথে আদ্রের বিয়ে ঠিক হয়েছে যেনেও এতোদিন রিনি কিছু বলতে পারে নি। কিন্তু রিনি সবসময় মনে মনে এটাই চাইতো সুমির সাথে আদ্রের বিয়েটা যেন ভেঙে যায়। এবং এখন সেটাই হলো। রিনি খুশি ভাবটা চেপে শান্ত স্বরে সুমিকে বলল,
‘তুই কাঁদিস না সুমি। কান্না করা বন্ধ কর।’
সুমি চোখ মুছে কান্না জড়িত কন্ঠে রিনিকে বলল,
‘কি করে আমি কান্না বন্ধ করি তুই বল সুমি? আদ্র যে অনুকে বিয়ে করেছে।’
আদ্র অনুকে বিয়ে করেছে শুনে রিনি চরম অবাক হলো। বুকের ভিতরটা কষ্টে জমে গেল। রিনির শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো। রিনি কাঁপা স্বরে সুমিকে বলল,
‘এসব তুই কি বলছিস সুমি? তুই মজা করছিস আমার সাথে? আমি তোর কথা বিশ্বাস করি না।’
সুমি রেগে রিনিকে বলল,
‘আমি কেন তোর সাথে মজা করবো? যা সত্যি আমি তোকে তাই বলছি। আদ্র ঐ ন্যাকা ফালতু অনু মেয়েটাকে বিয়ে করেছে। একটু আগেই আদ্রের বাবা আমার বাবাকে ফোন করে জানিয়েছে যে গতকাল সবাইকে কিছু না বলে আদ্র অনুকে বিয়ে করেছে। আমার সাথে আদ্রের বিয়ে নাকি আর সম্ভব না।’
রিনি সুমির ফোনটা কেটে দিলো। মন খারাপ করে বসে রইল। পল্লব রিনির রুমে এসে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘কি হয়েছে রিনি? কে ফোন করেছিল?’
রিনি ব্যথিত স্বরে পল্লবকে বলল,
‘সুমি ফোন দিয়েছিল ভাইয়া।’
রিনির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সুমি। তাই সেই কারণে পল্লব সুমিকে চিনে। মাঝে মাঝে সুমি রিনির বাসায় আসতো। পল্লব রিনিকে জিজ্ঞেস করল,
‘তোর বান্ধবী তোকে ফোনে কি বলেছে?’
রিনি শান্ত স্বরে পল্লবকে বলল,
‘সুমির বিয়ে ভেঙে গেছে ভাইয়া। যার সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল সে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে।’
পল্লব অবাক হয়ে বলল,
‘কি বলছিস রিনি? মেয়েটার বিয়েটা ভেঙে গেল! তুই তো বলেছিলি সুমি নাকি সেই ছেলেকে খুব ভালোবাসে।’
রিনি গম্ভীর স্বরে বলল,
‘হ্যা ভাইয়া সুমি ছেলেটাকে ভীষণ ভালোবাসে।’
পল্লব রিনিকে জিজ্ঞেস করল,
‘সেই ছেলেটা সুমিকে ভালোবাসতো না?’
রিনি পল্লবের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘না ভাইয়া। সেই ছেলেটা সুমিকে ভালোবাসতো না। সেই ছেলে অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসতো এবং তাকেই গতকাল বিয়ে করেছে।’
পল্লবের ভীষণ খারাপ লাগলো। ভালোবাসার মানুষের বিয়ে অন্য একজনের সাথে হয়ে গেলে বুকের ভিতর যে কি কষ্ট হয় তা পল্লবের থেকে ভালো আর কেউ জানে না। পল্লব হতাশ হয়ে রিনিকে বলল,
‘রিনি যেই ছেলেটার সাথে সুমির বিয়ে ঠিক হয়েছিল সেই ছেলেটার নাম কি?’
রিনি গম্ভীর স্বরে পল্লবকে বলল,
‘ভাইয়া সেই ছেলেটার নাম আদ্র।’
রিনির মুখে আদ্র নাম শুনে পল্লব স্তব্ধ হয়ে গেল।
#চলবে…
#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_৩৩
#Anika_Fahmida
রিনি আদ্রের নাম বলায় পল্লবের বুঝতে বাকি রইল না যে কোন আদ্র হতে পারে। কারণ পল্লব গতরাতই জেনেছে আদ্রের সাথে অনুর বিয়ে হয়েছে। তাই সুমির সাথে যেই আদ্রের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সে যে অনুর স্বামী আদ্র তা সহজেই বুঝতে পেরে যায় পল্লব। রিনির রুম থেকে পল্লব মুহুর্তের মাঝেই গম্ভীর মুখে করে বেরিয়ে গেল। রিনি বুঝতে পারল না ভাইয়ার হলো টা কি? আদ্রের নাম বলায় এভাবে মন খারাপ করে ফেললো কেন? পল্লব নিজের রুমের বিছানায় বসে ঘন নিশ্বাস ফেলছে। বুকের ভিতরটা ভারি হয়ে আসছে। সব কিছু যেন অসহ্য লাগছে। অনুকে কিছুতেই পল্লব ভুলতে পারছে না। চাইলেও পারছে না। কেন পারছে না? ভালোবাসার মানুষকে বুঝি ভুলে যাওয়া খুবই কঠিন!
বেশ কয়েকদিন চলে গেল। আজ আদ্র অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। অনু চুপচাপ বিছানায় বসে আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রকে কত সুন্দর লাগছে।
আদ্র অনুর দিকে ফিরে তাকিয়ে হেসে বলল,
‘আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে কি দেখছো অনু?’
অনু হেসে আদ্রকে বলল,
‘তোমার দিক থেকে আমি চোখ সরাতে পারছি না।’
আদ্র অনুর কাছে এগিয়ে এসে মুখের কাছে ঝুঁকে বলল,
‘কেন চোখ সরাতে পারছো না?’
অনু অপলক দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘বহুবার তোমাকে দেখেছি। কিন্তু ধীরে ধীরে তোমাকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। তাই বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকি তোমার দিকে। কেন এমন হচ্ছে আদ্র?’
আদ্র হাত বাড়িয়ে অনুর ডান গাল ছুঁয়ে হেসে বলল,
‘কারণ তুমি আমাকে ভালোবাসো অনু।’
অনু লজ্জা পেয়ে মাথানিচু করে ফেলে মুচকি হাসলো। আদ্র বুঝতে পেরেছে অনু লজ্জা পেয়েছে তাই অনুর বাম গালে হঠাৎ করে চুমু দিয়ে হেসে বলল,
‘অনু আমি অফিসে গেলাম। নিজের খেয়াল রেখো।’
আদ্র রুম থেকে চলে গেল। অনু আদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। দুপুর ঘনিয়ে বিকেল হলো। অনু এখনো নিজ রুমে বসে আছে। অনেকগুলো দিন কেটে গেল কিন্তু আজও অনুর বাবা-মা অনুর উপর রেগে আছে। অনু ফোন করলে তারা ফোন ধরেন না। অনুর শ্বশুর শ্বাশুড়ি এখনও অনুকে মন থেকে মানতে পারে নি। অনুর সাথে আদ্রের মা-বাবা একটুও কথা বলে না। তাই মাঝে মাঝে অনুর মন খারাপ হয়। অনুকে বাসার কোনো কাজই করতে হয় না। কারণ কাজের লোকেরাই বাসার সব কাজ করে দেয়। অনু নিজের রুমে সবসময় চুপ করে একা বসে থাকে। এমনিতেও অনু ভীষণ চুপচাপ। কারও সাথে তেমন কথা বলে না। হঠাৎ করে অনুর ফোন বেজে উঠল। অনু ভেবেছিল আদ্র ফোন করেছে। তাই ফোনটা হাতে নিয়ে মুচকি হেসে তাকাতেই অনুর হাসিটা মিলিয়ে গেল। আদ্র ফোন করে নি। একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। অনু দ্বিধা নিয়ে ফোন রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে পল্লব হেসে বলল,
‘কেমন আছো অনু?’
অনু চিনতে না পেরে বলল,
‘কে আপনি?’
পল্লব দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শান্ত স্বরে বলল,
‘অনু আমি পল্লব। আমাকে ভুলে গেলে?’
অনু থমকে যায়। পল্লব কেন ফোন করেছে অনু বুঝতে পারছে না। অনুর মনে অজানা ভয় কাজ করলো। পল্লব কি অনুকে আবারও ভালোবাসার জন্য বিরক্ত করবে? অনুর সাড়া শব্দ না পেয়ে পল্লব জিজ্ঞেস করল,
‘চুপ করে আছো কেন অনু?’
অনু গম্ভীর স্বরে পল্লবকে বলল,
‘কি বলবো? আর আমাকে ফোন করেছেন কেন?’
পল্লব হেসে অনুকে বলল,
‘আমার ভালোবাসার মানুষটি কেমন আছে তা জানার জন্যই তো ফোন দিলাম অনু।’
অনু দুচোখ বন্ধ করে রাগী স্বরে বলল,
‘আমি আপনার ভালোবাসার মানুষ নই পল্লব। আমি এখন একজন বিবাহিত মেয়ে। আদ্র আমার স্বামী। আমাকে আর আপনি বিরক্ত করবেন না।’
পল্লব হতাশ গলায় অনুকে বলল,
‘আমি জানি অনু, আদ্র তোমার স্বামী। কিন্তু তুমি আমাকে ভালো না বাসলেও আমি যে তোমাকে ভালোবাসি। ভয় পেয়ো না অনু। আমি জোর করে তোমার কাছ থেকে ভালোবাসা চাইবো না।’
অনু রাগী স্বরে পল্লবকে বলল,
‘যেহেতু আপনি জানেন আমি বিবাহিত। তাই আমাকে আপনি আর কোনোদিন ফোন করে বিরক্ত করবেন না।’
পল্লব ব্যথিত হৃদয় নিয়ে অনুকে বলল,
‘আমি তোমাকে বিরক্ত করি নি অনু। বিশ্বাস করো তোমাকে বিরক্ত করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। শুধু তোমার কন্ঠস্বরটা একটু শোনার জন্য আমি তোমাকে ফোন দিয়েছি। আমার উপর রাগ করো না।’
অনু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পল্লবকে বলল,
‘আপনি আমার ফোন নাম্বার পেলেন কি করে?’
পল্লব অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘ভার্সিটি থেকেই তোমার নাম্বার জোগাড় করেছি।’
অনুর ভীষণ রাগ হচ্ছে। নিজের রাগ দমিয়ে অনু বলল,
‘আমি ফোন রাখলাম। বাই।’
পল্লব তাড়াহুড়ো করে বিচলিত স্বরে অনুকে বলল,
‘অনু ফোন রেখো না। আগে বলো তুমি কেমন আছো?’
অনু বিরক্ত হয়ে গম্ভীর স্বরে পল্লবকে বলল,
‘আমি ভালো আছি।’
পল্লব হেসে অনুকে বলল,
‘এটাই আমার কাছে অনেক। তুমি ভালো আছো এতেই আমি খুব খুশি অনু। তুমি ভার্সিটিতে আসো না কেন?’
অনু রেগে পল্লবকে বলল,
‘আমার যখন ইচ্ছে আমি তখন ভার্সিটিতে যাবো। আমার ব্যাপারে আপনি কোনো নাক গলাবেন না।’
পল্লব হতাশ গলায় অনুকে বলল,
‘হ্যা তাও ঠিক। ভালো থেকো অনু।’
অনু ফোন কেটে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। পল্লব ফোন দেওয়ায় অনুর মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল। এই পল্লব অতিরিক্ত বিরক্ত করে তাই অনু ভয়ে ভার্সিটিতেও যায় না। এদিকে আদ্রকেও পল্লবের বিরক্ত করার ব্যাপারটা অনু মুখ ফুটে বলতে পারে না। যদি আদ্র অনুকে আবার ভুল বুঝে সেই ভয়ে অনু আদ্রকে কিছু বলে না। অনু চায় না আদ্র অনুকে ভুল বুঝুক।
পল্লব ফোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ব্যথিত হৃদয় নিয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করল। এখনও প্রতিদিন পল্লব ভার্সিটিতে গিয়ে অনুর আসার জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু অনু ভার্সিটিতে আসে না। তবুও পল্লব বার বার অনুকে একটিবার দেখার জন্য ভার্সিটিতে ছুটে যায়। ভালোবাসার মানুষকে দেখার জন্য পল্লবের মনটা ভীষণ ছটফট করে। পল্লব বালিশে মুখ গুঁজে মনে মনে বলল,
‘নিজের অজান্তেই আমি অনুকে ভীষণ ভালোবেসে ফেললাম। কিন্তু অনু আমার হলো না। কেন অনু আমার হলো না? আমার কপাল এতো খারাপ কেন? আমাকে অনু একটু ভালোবাসলে কি হতো?
নিজের অজান্তেই পল্লবের চোখে জল চলে আসলো। ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার বেদনা পল্লবের মনটাকে পুড়িয়ে মারছে। না পারছে অনুকে ভুলতে আর না পারছে সব সহ্য করতে।
রাতে আদ্র বাড়ি ফিরে এসে নিজের রুমে ঢুকে দেখে অনু বিছানায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে আনমনে হেসে ফেলে। অনুর কাছে এগিয়ে গিয়ে অনুর মুখের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে আদ্র তাকিয়ে থাকে। তারপর আদ্র অনুর আরও কাছে গিয়ে অনুর কপালে গভীর চুমু দেয়। কপালে কারও ঠান্ডা নরম স্পর্শে অনুর ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে আদ্রকে দেখে অনু শুয়া থেকে দ্রুত উঠে বসে বলল,
‘কখন এলে আদ্র?’
আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,
‘এখনই এলাম। ডিনার করেছো অনু?
অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
‘না আদ্র। আমি তোমার সাথে ডিনার করবো বলে এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম।’
আদ্র মুহুর্তেই রাগী স্বরে অনুকে বলল,
‘তাই বলে আমার জন্য বসে থেকে তুমি না খেয়ে থাকবে অনু? তুমি এটা একদমই ঠিক করো নি। তোমার কিছু খেয়ে নেওয়া উচিত ছিল। না খেয়ে থাকলে তোমার শরীর খারাপ হবে অনু। কেন তুমি বুঝো না?’
অনু মন খারাপ করে মাথানিচু করে বলল,
‘আদ্র তোমাকে ছাড়া একা একা খাবার খেতে আমার ভালো লাগে না। তাই আমি খাবার খাই নি। তুমি কি বাহির থেকে খাবার খেয়ে এসেছো?’
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
‘না আমি এখনো কিছু খাই নি।’
অনু মুচকি হেসে আদ্রকে বলল,
‘তাহলে তো হলোই। আমরা একসাথে খাবো।’
আদ্র অনুর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অনু ধীরে ধীরে আদ্রকে একটু বেশিই ভালোবেসে ফেলছে। আদ্রের উপর অনু প্রচুর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আদ্র হেসে শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘আমাকে অতিরিক্ত ভালোবেসো না অনু। কিছু ভালোবাসা নিজের জন্যেও রাখো।’
অনু আদ্রের দিকে অবাক হয়ে তাকাল। অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,
‘এভাবে কেন বলছো আদ্র?’
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
‘তুমি নিজেকে ভালোবাসতে ভুলে যাচ্ছো অনু। আমি চাই তুমি নিজেকেও একটু ভালোবাসো।’
অনু হেসে আদ্রকে বলল,
‘আমি নিজেকে ভালো না বাসলেও কি হয়েছে? আমাকে ভালোবাসার জন্য তুমি তো আছোই আদ্র।’
আদ্র অনুর পাশে বসে শান্ত স্বরে বলল,
‘তবুও নিজেকে ভালোবাসতে হয় অনু।’
অনু আদ্রকে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘তাহলে তুমি কেন নিজেকে ভালোবাসো না আদ্র?’
আদ্র অনুর চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘তোমাকে ভালোবেসে নিজেকে ভালোবাসতে ভুলে গেছি অনু। আমার সব ভালোবাসা যে শুধু তুমি।’
অনু মুচকি হেসে আদ্রকে বলল,
‘তাহলে আমার বেলায় এক হবে না কেন? আমিও তোমাকে ভালোবেসে নিজেকে ভালোবাসতে ভুলে গেছি। বুঝেছো আদ্র?’
আদ্র অনুর গাল টেনে বলল,
‘হ্যা বুঝেছি। আচ্ছা অনু একটা কথা বলি?’
অনু চোখের পলক ফেলে আদ্রকে বলল,
‘হ্যা বলো।’
আদ্র অনুর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
‘তুমি যখন ঘুমিয়ে থাকো তখন তোমাকে প্রচুর কিউট লাগে। মন চায় তোমাকে অসংখ্য চুমু দেই।’
আদ্রের কথা শুনে অনুর গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেল। অনু মুখে কোনো কথা বলতে পারলো না। আদ্র শব্দ করে হেসেই ফ্রেশ হতে চলে গেল। অনু মনে মনে বলল,
‘আদ্র দিন দিন বড়ই অসভ্য হয়ে যাচ্ছে।’
কথাটা মনে মনে বলেই নিজেই অনু আনমনে হেসে ফেললো। আদ্র ফ্রেশ হয়ে আসে। আদ্রের পরনে এখন সবুজ শার্ট এবং কালো জিন্স। আদ্রের চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আদ্রকে এমন স্নিগ্ধ রূপে দেখে অনুর হার্টবিট বেড়ে যায়। চোখ বন্ধ করে অনু আবারও বিছানায় শুয়ে পড়ল। আদ্র নিজ রুম থেকে বের হয়ে অনুর জন্য এবং নিজের জন্য খাবার নিয়ে এসে আবারও রুমে ঢুকলো। তারপর আদ্র অনুকে শুয়া থেকে টেনে তুলে অনুকে নিজহাতে খাবার খাইয়ে দিতে লাগলো। পড়ে আদ্র নিজেও খাবার খেয়ে নিলো। আদ্র যখন অনুকে খাবার খাইয়ে দেয় তখন অনু আদ্রের দিকেই পুরোটা সময় তাকিয়ে থাকে। আদ্রের হাতে খাবার খেতে অনুর কি যে ভালো লাগে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আদ্র হাত ধুয়ে এসে কিছুক্ষণ পর অনুকে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘অনু আজ ছাঁদে যাবে?’
অনু খুশিতে লাফিয়ে উঠে আদ্রকে বলল,
‘সত্যি আদ্র? চলো ছাঁদে যাই।’
আদ্র অনুর খুশি দেখে হেসে বলল,
‘তাহলে চলো।’
অনু মুহুর্তের মাঝেই মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,
‘কিন্তু আমি এভাবে যাবো না।’
আদ্র অবাক হয়ে অনুকে বলল,
‘তাহলে কিভাবে যাবে?’
অনু লজ্জা পাওয়া মুখে হেসে আদ্রকে বলল,
‘আমাকে তোমার কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।’
আদ্র অনুর কথা শুনে হেসে বলল,
‘ আমিও তো তাই চাইছিলাম অনু।’
অনু লজ্জা পেয়ে আর আদ্রের দিকে তাকাল না। আদ্র এগিয়ে এসে অনুুকে কোলে তুলে নেয়। অনু আদ্রের গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরে। আদ্রের চোখের দিকে একবার তাকিয়েই আবার অনু লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে। কারণ আদ্রের চোখের নেশায় অনু হারিয়ে যায়। আদ্র অনুকে কোলে করে ছাঁদে নিয়ে দোলনায় বসিয়ে দেয়। অনুর মুখে হাসি। আদ্রও অনুর পাশে দোলনায় বসলো। অনু লজ্জায় একটু দূরে গিয়ে বসে। আকাশে অনেকগুলোই জ্বলমলে তারা জ্বলছে। সেই সাথে আকাশে রয়েছে বিশাল বড় মনকাড়া একটি চাঁদ। এই চাঁদের সুন্দর আলোয় ছাঁদটা আলোকিত হয়ে আছে। অনু আদ্রের থেকে দূরে সরে বসায় আদ্র রেগে অনুর কোমড় চেপে ধরে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসে। অনু ভয় পেয়ে যায়। আদ্র রাগী স্বরে অনুকে বলল,
‘এতো দূরে বসেছিলে কেন?’
অনু কাঁপা স্বরে আদ্রকে বলল,
‘আমার লজ্জা করছিল।’
আদ্র মন খারাপ করে হতাশ গলায় অনুকে বলল,
‘বিয়ের এতোগুলো দিন পাড় হয়ে গেল। তবুও তোমার লজ্জা কমে নি অনু?’
অনু শব্দ করে হেসে আদ্রকে বলল,
‘না। একটুও লজ্জা কমে নি।’
আদ্র হেসে দুষ্টুমি করে অনুকে আরও নিজের কাছে এনে অনুর নাকে নিজের নাক ঘষে বলল,
‘ওরে আমার লজ্জাবতী বউ রে। তোমার লজ্জা আর কতদিন থাকে আমিও দেখবো।’
অনু আদ্রের মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘আদ্র তুমি অনেক দুষ্টু।’
আদ্র গর্ব করে অনুকে বলল,
‘আমি তোমার স্বামী অনু। তোমার স্বামী তো একটু বেশি দুষ্টু হবেই। নাহলে তোমার মতো ঘাড়ত্যাড়াকে আমি সামলাবো কি করে বলো?’
অনু রেগে আদ্রের কাছ থেকে সরে বসে বলল,
‘কি আমি ঘাড়ত্যাড়া?’
আদ্র দুষ্টু হেসে অনুকে বলল,
‘হ্যা তাই তো।’
অনু রেগে ঘন নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,
‘তোমার সাথে আমি আর কোনো কথাই বলবো না।’
আদ্র অনুর দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় এনে বলল,
‘আমার সাথে কথা না বলে তুমি থাকতে পারবে তো?’
অনু অসহায় দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র অনুর এমন দৃষ্টি দেখেই হেসে ফেললো। মুখে যতই বলুক অনু আদ্রের সাথে কথা বলবে না৷ কিন্তু আদ্রের সাথে বেশিক্ষণ কথা না বলে অনু থাকতে পারে না। আদ্র অনুর মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,
‘আমি জানি অনু তুমি আমার সাথে বেশিক্ষণ কথা না বলে থাকতেই পারবে না।’
আদ্র অনুকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরায় অনু আদ্রের বুকের ধুকপুকের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। আদ্রের এতো কাছে আসলেই অনু নিজের মধ্যে আর থাকে না। আদ্রের মাঝেই অনু হারিয়ে যায়। অনুর কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে। অনু মনে মনে বলল,
‘এই অদ্ভুত অনুভূতির নাম বুঝি ভালোবাসা? আদ্র তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি যেন আরও গভীর হচ্ছে। আমি তোমাকে আরও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। ভালোবাসার অনুভূতি এতো ভয়ংকর কেন?’
অনু কথাগুলো মনে মনে বললো কিন্তু আদ্রকে মুখ ফুটে বলতে পারলো না। আদ্র অনুকে জড়িয়ে ধরে রেখেই হেসে গান গাইতে লাগল,
তুমি আমার এমনই একজন
যারে একজনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন
তুমি আমার এমনই একজন
যারে একজনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন
এক জনমের ভালোবাসা
এক জনমের কাছে আসা
এক জনমের ভালোবাসা
এক জনমনের কাছে আসা
একটি চোখের পলক পড়তে লাগে যতক্ষণ
যারে এক জনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন
আদ্রের গানের গলা খুব সুন্দর। অনু আদ্রের গাওয়া গান শুনতে শুনতে চোখ বন্ধ করে আদ্রের বুকের মাঝে মাথা রাখা অবস্থায় ঘুমে তলিয়ে গেল। অনুর কোনো সারা শব্দ না পেয়ে আদ্র গান থামিয়ে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল অনু ঘুমিয়ে পড়েছে। আদ্র মুচকি হেসে অনুর ঠোঁটে চুমু দিয়ে মনে মনে বলল,
‘আমার বুকের মাঝেই তুমি ঘুমিয়ে পড়লে অনু। তোমার সাথে আরও কথা বলার ইচ্ছে ছিল। কত কথাই তো তোমাকে আমার বলতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু বলা হয় না। আমি তোমাকে বলেও বুঝাতে পারবো না অনু আমি তোমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি! শুধু আমি এতটুকুই জানি, “I can’t live without you anu”। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব।’
আদ্র অনুকে অনেকক্ষণ বুকে জড়িয়ে ধরে বসে রইল। তারপর আদ্র অনুকে কোলে করে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। আদ্র নিজেও অনুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
#চলবে..