#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_৩৫ (শেষ পর্ব)
#Anika_Fahmida
আদ্র এবং অনুর বিয়ের পাঁচ বছর পাড় হয়ে গেল। এই পাঁচ বছরে আদ্র অনুর চোখে এক ফোঁটা জল আসতে দেয় নি। অনুকে পড়াশোনা করতেও আদ্র কোনো প্রকার বাঁধা দেয় নি। অনুর সব আবদার হাসিমুখে আদ্র মেনে নিয়েছে। অনুকে কোনো কিছুতে আদ্র জোর করে নি। অনুর খুশিতেই আদ্র নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছে।
অনু নিজের রুমের বিছানায় বসে আছে। আদ্র ল্যাপটপের মধ্যে অফিসের কাজ করছিল। অনুকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে আদ্রের কপাল কুঁচকে গেল। মেয়েটার হলো টা কি? আদ্র ল্যাপটপ একপাশে রেখে অনুর ঠিক পাশেই বসে পড়ল। এখন বিকেল বেলা। আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘কি হয়েছে অনু? তোমার মন খারাপ কেন?’
অনু আদ্রের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘আমার কিছু ভালো লাগছে না আদ্র।’
আদ্র অবাক হয়ে অনুকে জিজ্ঞেস করল,
‘কিন্তু কেন ভালো লাগছে না?’
অনু মন খারাপ করে বলল,
‘বলতে পারবো না।’
আদ্র অনুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘বলতে পারবে না কেন অনু?’
অনু অসহায় মুখ করে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অনুকে বলল,
‘কারণটা বলো অনু? তোমাকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখলে আমার ভালো লাগে না।’
অনু চুপ করে মাথানিচু করে বসে রইল। তারপর আবারও আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আই এম সরি আদ্র।’
আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে জিজ্ঞেস করল,
‘কি জন্য সরি বলছো?’
অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
‘তুমি বাবা হতে চেয়েছিলে কিন্তু আমি তোমার কথা গুরুত্ব না দিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করেছি।’
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
‘আমি তোমার উপর একটুও রেগে নেই অনু। তুমি এখনও পড়াশোনা কন্টিনিউ করছো। আমি কি তোমাকে বাঁধা দিয়েছি বলো? দেই নি তো। আর আমি তোমাকে কোনো কিছুতে জোর করবো না।’
অনু কান্না জড়িত কন্ঠে আদ্রকে বলল,
‘তোমাকে আমি বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত করে রেখেছি আদ্র। আমি এখনও একটা সন্তানের মা হতে পারি নি। এটা কি আমার দোষ নয় আদ্র? পড়াশোনার জন্য এতোগুলা বছর আমি সন্তান গর্ভে নেই নি। এখন সত্যি আমার ভীষণ খারাপ লাগছে।’
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে জিজ্ঞেস করল,
‘তাহলে এখন তুমি কি চাও অনু?’
অনু আদ্রের দিকে অবাক চোখে তাকাল। অনুর মুখ মুহুর্তের মাঝেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল। অনু মাথানিচু করে কাঁপা স্বরে আদ্রকে বলল,
‘তুমি বুঝে নাও আমি ঠিক কি চাই।’
আদ্র দুষ্টু হেসে অনুকে বলল,
‘তারমানে এখন তুমি মা হতে চাও অনু?’
অনু লজ্জায় আদ্রের দিকে আর তাকাতে পারলো না। আদ্র সবকিছু বুঝেও কেন অনুকে এতো লজ্জা দেয়?
অনু চুপ করে আছে দেখে আদ্র জিজ্ঞেস করল,
‘কি হলো অনু বলো?’
অনু মাথানিচু করে শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
‘আদ্র তুমি কেন আমাকে এতো লজ্জায় ফেলছো?’
আদ্র অনুকে টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে আছে।
অনু আদ্রের বুকের উপর গিয়ে পড়ে। আদ্র অনুকে জড়িয়ে ধরে শান্ত স্বরে বলল,
‘তুমি তো জানোই অনু তোমার লজ্জাভরা মুখটা দেখতে আমার ঠিক কতটা ভালো লাগে। আর হ্যা তুমি যেহেতু মা হতে চাও তাহলে তোমাকে তো মা বানানোর জন্য আমার আরও ভালোবাসতে হবে। তাই না অনু?’
আদ্রের এমন কথায় অনু লজ্জায় লাল হয়ে গেল। চোখ তুলে অনু আর আদ্রের দিকে তাকাতে পারলো না। আদ্র অনুকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘অনু তোমাকে লজ্জা পেতে দেখতে দারুণ লাগে।’
অনু আদ্রের হাতে জোরে চিমটি কেটে হাসতে লাগলো। অনু এতো জোরে চিমটি দেওয়ায় আদ্র ব্যথা পেল। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল অনু চিমটি দিয়ে হাত লাল করে ফেলেছে। তবুও আদ্র অনুর উপর রাগ করলো না। অনু হাসছে দেখে আদ্র নিজেও হাসলো।
ইদানীং অনুর খুব মাথা ঘুরছে। মাঝে মাঝেই মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে। যা খাচ্ছে তাই অনু বমি করে দিচ্ছে। আদ্র অনুর এমন অবস্থা দেখে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। তাই অনুকে নিয়ে আদ্র হাসপাতালে গেল।
ডাক্তার সালমা অনুর চেকআপ করিয়ে আদ্রকে জানায় অনু প্রেগনেন্ট। কথাটা শুনে আদ্র খুশিতে অনুকে কোলে তুলে অনুর পুরো মুখে চুমু দিলো। অনু লজ্জায় লাল হয়ে গেল। অনু মা হতে চলেছে এই খবর শুনে অনুর মনের মাঝে আলাদা এক ভালোলাগা কাজ করতে লাগলো। অনুর গর্ভে আদ্রের সন্তান। আদ্র এবং অনুর তো খুশির শেষ নেই। এই দশমাস অনুর সব যত্ন আদ্র নিজের হাতে নিয়েছে। কখনো অনুকে আদ্র একটুও কষ্ট পেতে দেয় নি। ডেলিভারির সময় অনুর কষ্টে আদ্রের বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল। হাসপাতালের মধ্যে নরমাল ডেলিভারিতে অনু কন্যা সন্তান জন্ম দেয়। ডাক্তার ওটি থেকে বের হয়ে আদ্রকে জানায় আদ্র কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছে। অনু এবং সন্তান দুজনেই সুস্থ আছে। ডাক্তারের কথা শুনে আদ্রের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখা গেল। আদ্র ভীষণ খুশি তার অনু এবং সন্তান দুজনেই সুস্থ আছে। অনুর জন্য আদ্র বেশি চিন্তিত ছিল। এখন সব চিন্তা যেন দূর হলো।
আদ্র নিজের মেয়ের নাম রাখে অনিন্দিতা হোসেন অন্তরা। সারাদিন অনিন্দিতার খেয়াল আদ্র নিজে রাখে। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর অনু শারীরিকভাবে একটু অসুস্থ হয়ে যায়। অনিন্দিতার তেমন খেয়াল অনু রাখতে পারে না। মাঝরাতে ছোট্ট অনিন্দিতা যখন কান্না করতো তখন অনুর আগে আদ্রই বিচলিত হয়ে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করতো। ছোট্ট অনিন্দিতাও বাবার কোলে মাথা রেখে কান্না থামাতো। আদ্র নিজের মেয়েকে আবারও ঘুম পাড়িয়ে অনুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়তো। অনু তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকতো।
কেটে যায় আরও দশটি বছর। আদ্র আজ নিজের অফিসের কাজে খুবই ব্যস্ত। অন্য সময় অনিন্দিতাকে আদ্র নিজে স্কুলে পৌঁছে দেয়। কিন্তু আজ আদ্রের অফিসে বেশি কাজ থাকায় অনু আজকে অনিন্দিতাকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। ড্রাইভার গাড়ি ড্রাইভ করছে। অনু এবং অনিন্দিতা গাড়ির পেছনের সিটে বসে গল্প করছে। অনিন্দিতা অনুর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
‘জানো আম্মু তুমি খুব লাকি।’
অনু অবাক হয়ে নিজের মেয়েকে বলল,
‘কেন?’
অনিন্দিতা মুচকি হেসে বলল,
‘আমার আব্বু তোমাকে খুব ভালোবাসে তাই।’
অনু চোখ বড়বড় করে অনিন্দিতাকে বলল,
‘অনিন্দিতা তুমি তোমার বাবার মতো খুব দুষ্টু হয়েছো।’
নিজের দুচোখে সানগ্লাস লাগিয়ে অনিন্দিতা অনুর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
‘আম্মু আমি আমার আব্বুর মেয়ে। আমি আব্বুর মতোই তো দুষ্টু হবো। এটাই স্বাভাবিক।’
অনিন্দিতার কথা শুনে অনু হেসে বলল,
‘আর আমি যে তোমাকে দশমাস পেটে ধরলাম অনিন্দিতা। আমার কথা তুমি ভুলে গেলে?’
অনিন্দিতা অনুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ভুলি নিতো আম্মু। আচ্ছা আম্মু আমার উপর তুমি কি রাগ করলে? তুমি আমার উপর রাগ করে থাকলে আমার মন খারাপ হয়। প্লিজ রাগ করো না আম্মু।’
অনু আর কিছু না বলে অনিন্দিতার কথায় মুচকি হাসলো। সত্যি অনিন্দিতা পুরোই আদ্রের স্বভাব পেয়েছে। দেখতেও আদ্রের মতোই হয়েছে। অনিন্দিতা আদ্রের মতোই খুব রাগী এবং চঞ্চল। অনু যেই ভীতু এবং গম্ভীর। অনুর স্বভাব তার মেয়ে তেমন পায় নি।
অনিন্দিতাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে অনু গাড়িতে উঠার আগেই কেউ একজন শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘কেমন আছো অনু?’
অনু পেছন ফিরে পল্লবকে দেখে অবাকের সাথে স্তব্ধ হয়ে যায়। অনেকদিন পর আজ পল্লবকে অনু দেখলো। পল্লবের একি করুণ হাল হয়েছে। পল্লবের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। মুখের দাঁড়ি ,মাথার চুলও কত লম্বা হয়ে গেছে। অনু শান্ত স্বরে পল্লবকে বলল,
‘আমি ভালো আছি। কিন্তু আপনার এমন হাল কেন?’
পল্লব হেসে অনুকে বলল,
‘আমার হাল আর কি হবে অনু? ভালো আছি আমি।’
অনু পল্লবকে জিজ্ঞেস করল,
‘আপনাকে দেখে তো ভালো আছেন বলে মনে হয় না। আপনার স্ত্রী কি আপনার খেয়াল রাখে না?’
পল্লব হেসে অনুকে বলল,
‘আমি এখনো বিয়ে করি নি অনু।’
অনু অবাক হয়ে পল্লবের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কি? কিন্তু কেন?’
পল্লব শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘অনু আমি আজও তোমাকে ভালোবাসি তাই।’
অনু অবাক হয়ে গম্ভীর স্বরে পল্লবকে বলল,
‘এটা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই না পল্লব। আমি তো কোনোদিন আপনাকে ভালোবাসি নি। আমি আদ্রের স্ত্রী জানা সত্বেও কেন আমার জন্য এভাবে আপনি আপনার নিজের জীবনটা নষ্ট করছেন?’
পল্লব হেসে শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘এটা আমার জীবন অনু। তাই আমার ইচ্ছেতেই আমার জীবনটা এমন হয়েছে। এতে তোমার কোনো দোষ নেই। তাই নিজেকে দোষী ভেবো না।’
অনু নিজের কপালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বলল,
‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আপনি এখনও আমাকে কেন এতো ভালোবাসেন?’
পল্লব জলভরা চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কারণটা আমার নিজের কাছেও অজানা অনু। জানো অনু আমার বোন রিনিও তোমার স্বামী আদ্রকে খুব ভালোবাসে। আমি রিনির টেবিলের উপর থাকা ডায়েরি পড়ে এটা জেনেছি। আর এখন বর্তমানে রিনি লন্ডনে থাকে। রিনি এখনও আদ্রকে ভুলে নি অনু। তাই আমার মতো রিনিও কাউকে এখনও বিয়ে করে নি।’
অনু অবাক হয়ে পল্লবকে বলল,
‘রিনি আপু আপনার বোন?’
পল্লব হেসে অনুকে বলল,
‘হ্যা রিনি আমারই বোন। আর সুমি এখন আদ্রের জন্য মানসিক হাসপাতালে আছে। এখনও সুমি মেয়েটা আদ্রকে ভুলতে পারে নি। সুমিও কাউকে বিয়ে করে নি। কি অদ্ভুত তাই না অনু?’
সব কথা শুনে অনুর শ্বাস নিতেও কষ্ট হতে লাগলো। পল্লব বুঝতে পারল অনু এসব কথা শুনে মন খারাপ করছে। তাই পল্লব অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
‘তুমি কোনো চিন্তা করো না অনু। এতে তোমার এবং আদ্রের কোনো দোষ নেই। সবার জীবনে কি আর সুখ আসে বলো? আসে নাতো। এটাই হয়তো আমার, সুমি আর রিনির ভাগ্যে ছিল। আর হ্যা তোমার স্বামী এবং সন্তান নিয়ে ভালো থেকো অনু। আমি তোমাদের মাঝে কখনও কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াব না। তুমি তোমার আদ্রকে নিয়ে সুখে থাকো আমি এটাই চাই।’
পল্লব অনুর মুখের দিকে কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অনুর মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। পল্লবের দিকে তাকানোর সাহস অনু আর পেল না। কি করে তাকাবে? আজ অনুকে মন থেকে ভালোবেসে যে পল্লবের এই অবস্থা হয়েছে।
পল্লব একটু নিঃশব্দে হেসে অনুকে বলল,
‘তুমি ভালো থেকো অনু। খুব খুব ভালো থেকো।’
অনু পল্লবের দিকে অবাক চোখে তাকাল। পল্লব অনুর দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হেসে আর কোনো কথা না বলে ধীর পায়ে রোড পেরিয়ে চলে গেল। পল্লব রাস্তার একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। অনুকে না পাওয়ার বেদনা আজও পল্লবের মনকে কাঁদায়। কিন্তু অনু পল্লবের চোখের জল দেখতে পেল না। মেইনরোডের একপাশে অনু হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় কত গাড়ি হর্ণ বাজিয়ে চলে যাচ্ছে। বাতাসের তীব্র হাওয়ায় অনুর খোঁপায় বেঁধে রাখা চুলগুলো হঠাৎ খুলে গিয়ে উড়তে লাগলো। অনু গম্ভীর হয়ে মনে মনে বলল,
‘আজ আমার এবং আদ্রের জন্য এতোগুলা মানুষের জীবন এমন হয়ে গেল? আমার খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু আমাদেরই বা কি করার ছিল! আমি আদ্রকে ভালোবাসি। আর আদ্র আমাকে ভালোবাসে। এখানে ওদের জীবন যদি এমন হয় তাতে কি আমার আর আদ্রের দোষ কি সত্যি আছে? পল্লব, রিনি, সুমির জন্য আসলেই আমার খুব খারাপ লাগছে।’
বাসায় ফিরে অনু মন খারাপ করে নিজের রুমের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্র এবং অনুর মেয়ে অনিন্দিতা তার নিজের রুমে বসে পড়াশোনা করছে। আদ্র খেয়াল করে দেখল অনুকে আজ ভীষণ গম্ভীর লাগছে। আদ্র এগিয়ে গিয়ে অনুর কাঁধে হাত রাখতেই অনু পেছন ফিরে আদ্রকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘আমার মনটা আজ খুব খারাপ লাগছে আদ্র। মনের মাঝে এতো কষ্ট কেন হচ্ছে?’
আদ্র অনুকে দুইহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘অনু তোমার কি হয়েছে?’
অনু চোখ বন্ধ করে আদ্রকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় কাঁপা স্বরে বলল,
‘তোমার এবং আমার জন্য পল্লব, সুমি, রিনির জীবন উলোটপালোট হয়ে গেছে আদ্র। পল্লব আমাকে অকারণেই খুব ভালোবাসতো। এখনও পল্লব আমাকে ভালোবাসে আদ্র। অন্যদিকে রিনি এবং সুমি তোমাকে খুব ভালোবাসে। রিনি এখন লন্ডনে। রিনি বিয়ে করে নি। সুমি তোমার জন্য মানসিক হাসপাতালে পাগল হয়ে আছে। আমার খুব খারাপ লাগছে আদ্র। ওরা আমাদের জন্য খুব কষ্ট আছে ভাবতেই ভীষণ খারাপ লাগছে।’
আদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অনুকে বলল,
‘আমি সবটাই জানি অনু।’
অনু অবাক হয়ে আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
‘তুমি সবটা জানো? কিন্তু কিভাবে জানো?’
আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,
‘ইট’স ম্যাজিক অনু।’
অনু আদ্রের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দূরে দাঁড়াল। অবাক হয়ে অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আদ্র ওদের কষ্টে তোমার কষ্ট হচ্ছে না? তুমি এভাবে ওদের কষ্ট জেনেও হাসছো কি করে? ওদের জন্য একটুও তোমার মন খারাপ লাগছে না?’
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
‘কষ্ট পেলেও কি আমাদের কিছু করার আছে অনু?’
অনু মাথানিচু করে আদ্রকে বলল,
‘না কিছু করার নেই।’
আদ্র কাছে এসে অনুর দুই গাল ছুঁয়ে শান্ত স্বরে বলল,
‘তাহলে ওদের জন্য এতো কষ্ট পেয়ে লাভ কি অনু? তুমি মন খারাপ করো না। অনু তোমাকে ভালোবেসে আমি পাগল হয়েছি। প্রথম প্রথম আমি জানতামও না ভালোবাসার অনুভূতি ঠিক কেমন হয়। কিন্তু যখন আমি তোমার আশেপাশে থাকতাম তখন আমার মনের মাঝে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতো অনু। তখন থেকে আমি বুঝেছি তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতিটা হলো প্রবল ভালোবাসার। অনু তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি ধীরে ধীরে আরও বাড়তে থাকে। তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি পাগলামি করেছি। তুমি আমার ভালোবাসা বুঝতে না তবুও আমি হাল ছাড়ি নি। কারণ তোমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকাটাও অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল। তোমাকে আমি অনেক কষ্ট করে পেয়েছি অনু।
সুমি আর রিনি আমাকে ভালোবাসলেও আমি তাদের কখনো ভালোবাসি নি। এদিকে পল্লব তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু তুমি পল্লবকে কখনো ভালোবাসো নি। তুমি আমাকে ভালোবেসেছো অনু। এখন ওরা যদি আমাদের দুজনকে না পেয়ে কষ্ট পায় এতে আমাদের কিছু করার নেই অনু।’
অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
‘ওদের এমন করুণ দশায় আমাদের কি কোনো দোষ আছে? বলো আদ্র?’
আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘এতে আমাদের কোনো দোষ নেই অনু। তারা আমাদের ভালোবেসেছে। কিন্তু এতে তো আমাদের কিছু করার ছিল না। আমরা তো আর ওদের ভালোবাসি নি। তুমি আমাকে ভালোবাসো অনু আর আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাদের দুজনের ভালোবাসার মাঝে যদি ওরা আমাদের ভালোবেসে ফেলে এতে আমাদের কি করে দোষ থাকতে পারে? আমাদের দোষ নেই অনু।’
অনু গম্ভীর স্বরে আদ্রকে বলল,
‘হুম তুমি ঠিক বলেছো আদ্র।’
আদ্র অনুর কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের আরও কাছে নিয়ে এসে নেশালো কন্ঠে বলল,
‘আমাদের বিয়ের পনেরো বছর পাড় হয়ে গেল অনু। কিন্তু দেখো এখনও তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা একটুও কমছে না। বরং আরও বেশি বাড়ছে। তোমাকে নিজের অজান্তেই এতো বেশি আমি ভালোবাসি। তাই বাকিদের দুঃখ কষ্টের চিন্তা না করে আমার ভালোবাসার কথাগুলো তুমি একটু চিন্তা করো অনু। দেখবে তোমার আর একটুও মন খারাপ লাগছে না। তোমার সব মন খারাপ জানালা দিয়ে পালিয়ে যাবে।’
আদ্রের কথা শুনে অনুর গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেল। অনু চোখ বড়বড় করে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুমি এখনও এতো দুষ্টু কেন আদ্র?’
আদ্র অনুর ঠোঁটে চুমু দিয়ে হেসে বলল,
‘অনু তোমার জন্যই তো আমি এতো দুষ্টু।’
আদ্র হঠাৎ অনুর ঠোঁটে চুমু দেওয়ায় অনু কেঁপে উঠল। অনু লজ্জা পেয়ে হেসে আদ্রের কাছ থেকে সরে যেতে নিলে আদ্র অনুকে চেপে ধরে। এমন সময় কারও পায়ের শব্দ শোনা যায়। আদ্র এবং অনুর রুমে কেউ আসছে। আদ্র বুঝতে পেরে অনুকে ছেড়ে দেয়। অনিন্দিতা রুমে এসে শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
‘আব্বু আমার এক বান্ধবীর টেডি বেয়ার আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমারও ঐরকম টেডি বেয়ার চাই। আমাকে তুমি টেডি বেয়ার কিনে দাও।’
আদ্র অনিন্দিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হেসে বলল,
‘ওকে মামনী। তোমার যতগুলো টেডি বেয়ার চাই ঠিক ততোগুলো টেডি বেয়ারই আমি তোমাকে কিনে দিবো।’
অনিন্দিতা উচ্ছাসিত কন্ঠে আদ্রকে বলল,
‘সত্যি আব্বু?’
আদ্র হেসে অনিন্দিতাকে বলল,
‘হ্যা সত্যি মামনী।’
অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
‘কিছুদিন আগেই তো অনিন্দিতাকে তুমি কতগুলো টেডি বেয়ার কিনে দিলে। আবারও টেডি বেয়ার কিনে দিবে?মেয়েকে আশকারা দিয়ে দিয়ে তুমি মাথায় তুলছো আদ্র। পড়ে দেখবে আমাদের মেয়েটা অতি আদরে আদরে বাদর হয়ে যাচ্ছে।’
মায়ের কথায় অনিন্দিতা মুখ ফুলিয়ে আদ্রকে বলল,
‘আব্বু দেখো আম্মু আমাকে বাদর বলছে।’
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
‘অনু তুমি আমার মেয়েকে আর বকবে না।’
অনু রেগে আদ্রকে বলল,
‘বকবো না বলছো? অনিন্দিতা অকারণেই তোমার কত টাকা নষ্ট করছে। আর আমি বকবো না?
আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘আমার মামনী আমার টাকা নষ্ট করবে নাতো কার টাকা নষ্ট করবে অনু? তুমি আর মামনীর উপর রাগ করো না।’
অনু রাগী স্বরে আদ্রকে বলল,
‘তুমি তোমার মেয়েকে ইচ্ছেমতো আরও টাকা উড়াতে দাও। আমি আর কিছু বলবো না।’
অনিন্দিতা শান্ত স্বরে অনুকে বলল,
‘আম্মু তুমি আব্বুর উপর রাগ করো না। আমি আব্বুর টাকা নষ্ট করবো না। আচ্ছা ঠিক আছে তুমি আমাকে যত খুশি বকা দাও। আমি একটুও রাগ করবো না। আমার টেডি বেয়ারও লাগবে না।’
অনু অনিন্দিতার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
অনিন্দিতা মাথানিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
অনু অনিন্দিতাকে মুচকি হেসে বলল,
‘আচ্ছা ঠিক আছে তুমি টেডি বেয়ার কিনো। আমি তোমাকে আর বারণ করবো না।’
অনিন্দিতা খুশি হয়ে অনুকে বলল,
‘থেংকিউ আম্মু।’
অনিন্দিতা নিজের রুম চলে গেল। আদ্র অনুকে বলল,
‘মামনীকে না বকলেও তুমি পারতে অনু।’
অনু আদ্রকে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘আদ্র তোমার মতোই অনিন্দিতা খুব দুষ্টু হয়েছে। একটু না বকলে মেয়েটা আরও বেড়ে যাবে। সারাদিন খালি দুষ্টুমি আর পাকা পাকা কথা বলে। আদ্র তুমি যেমন আমাকে খুব জ্বালাও। তোমার মেয়েও আমাকে খুব জ্বালায়। আমার মতো অনিন্দিতা যদি শান্ত হতো তাহলে ভালোই হতো। মেয়েটা তাহলে আমাকে একটু কম জ্বালাতো।’
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
‘আমার মেয়ে তো আমার মতোই হবে অনু। অনিন্দিতা তোমার মতো হয় নি বলে মন খারাপ করো না।’
অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
‘আমি মন খারাপ করি নি।’
আদ্র অনুর দিকে এগোতে এগোতে বলল,
‘আমি তোমাকে খুব জ্বালাই। তাই না অনু?’
অনু ভয় পেয়ে আদ্রের দিকে তাকালো। শুকনো ঢুক গিলে অনু কাঁপা স্বরে আদ্রকে বলল,
‘না না। তুমি আমাকে একটুও জ্বালাও না আদ্র।’
আদ্র অনুর একদম কাছে এসে বলল,
‘একটু আগেই যে বললে তোমাকে আমি খুব জ্বালাই?’
অনু চোখ বন্ধ করে ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,
‘ভুলে বলে ফেলেছি আদ্র।’
আদ্র অনুর কোমড় জড়িয়ে ধরে হেসে বলল,
‘তাহলে ভুলের জন্য তোমাকে পানিশমেন্ট পেতে হবে।’
অনু ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আমাকে তুমি কি পানিশমেন্ট দিবে আদ্র?’
আদ্র অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
‘তোমাকে আমি ভালোবাসার পানিশমেন্ট দিবো অনু।’
লজ্জায় অনুর গাল হয়ে গেল। অনু এখনও আদ্রের কথায় ভীষণ লজ্জা পায়। আদ্রের কথা শুনে কেমন যেন অদ্ভুত ভালোলাগা অনুর মনে কাজ করে। ভালোবাসার অনুভূতি যে এতো সুন্দর হয় তা অনুকে আদ্র বুঝিয়েছে।
~সমাপ্ত~
[অবশেষে আমি গল্পটা শেষ করলাম। সিজন ১ এর মতো সিজন ২ আপনাদের কাছে কতটুকু ভালো লেগেছে আমি জানি না। তবুও আমি গল্পটা আপনাদের সবার মনের মতো করে তোলার যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি। আপনারা সকলে এতোদিন ধৈর্য ধরে আমার গল্পটা পড়েছেন তাই সবার জন্য অসংখ্য ভালোবাসা রইলো
।গল্পটা আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন😊😊❤️❤️❤️❤️।]
সিজন-০১ লিংকঃ