তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-১৪ + বোনাস পর্ব

0
1153

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:১৪
#জুনাইনাহ_তাসনিম_অরহা

অভ্র ভাই আমার পিছন পিছন শপিংমলের ভিতরে চলে আসে।আমি আর আপু প্রথমে যাই হলুদের শাড়ি দেখতে।অনেক অনেক কালেকশন দেখার পর কাতান একটা হলুদ শাড়ি সিলেক্ট করি।বিয়ের শাড়ি বড়দের সাথে এসেই ঠিক করা হয় তাই বিয়ের শাড়ি না দেখেই চলে যাচ্ছিলাম আমরা তখন দোকানের এক কর্মচারী এসে বলেন,
–ম্যাডাম বিয়ের শাড়ি দেখবেন না??

–না ভাইয়া ওটা পরে(আপু বলে)

–কিন্তু ম্যাডাম আমাদের কাছে অনেক ভালো ভালো কালেকশন আছে ব্রাইডাল শাড়ির।বেনারসি,কাতান,কাঞ্জিভরম,জামদানী,ট্যিসুসিল্ক আরো অনেক ভ্যারাইটিজ পাবেন।আর এর ভেতরেই মোটামুটি অনেক কালার আছে।আর রিসেনেবল প্রাইজ রেঞ্জের মধ্যেই পাচ্ছেন শাড়িগুলো।একবার..

(আপু আর কথা শেষ করতে দেয় না ওনাকে)
–না ভাইয়া আমরা আসলে….

*আমি আপুর হাত ধরে থামিয়ে দিই।তারপর ওই লোকটার দিকে তাকিয়ে বলি,
–আপনি যান আমরা দেখবো।

–কিন্তু সূচী..

–দেখতে ক্ষতি কি?আর তা ছাড়া এই দোকানে কিরকম কালেকশন আছে সেটাও জানা হয়ে যাবে।কি বলেন আকাশ ভাই??

–আমি আর কি বলবো?তোমাদের ইচ্ছা হলে দেখো।

–ওই তো আকাশ ভাই ও পারমিশন দিয়ে দিয়েছে এবার চলো তো আপু।

আমি আপুকে টেনেই নিয়ে যাই।বেশ সুন্দর সুন্দর শাড়িই দেখাচ্ছে।আমরা কম বেশি সব ধরনের শাড়িই দেখতে লাগলাম।একটা আকাশি রং এর জামদানি আপুর বেশ পছন্দ হলো।আপু ওইটা সাইডে আয়নার সামনে দাড়িয়ে ট্রায়াল দিতে লাগলো।আমি এখনো শাড়ি দেখছি।সব শাড়িই বেশ সুন্দর কিন্তু ওতো শাড়ির মাঝেও আমার চোখ পড়লো গাঢ়ো বেগুনি রং এর এক কাতান শাড়ির ওপর।যিনি আমাদেরকে শাড়ি দেখাচ্ছেন ওনাকে ডেকে বললাম,
–ভাইয়া ওই বেগুনি শাড়িটা একবার দেখি?
–এইটা ম্যাডাম?(উনি শাড়িতে হাত দিয়ে বলেন)
–জি।
–আপনার পছন্দ আছে বলতে হবে।

উনি শাড়িটা আমার সামনে মেলে ধরলেন।গাঢ়ো বেগুনি শাড়িতে সোনালি রং এর মিডিয়াম পাড়।পাড়ে আবার কলকা ডিজাইন।সোনালি অাঁচল আর পুরো শাড়িটা জুড়ে ছোট ছোট সোনালি ফুলের কাজ।অাঁচলেও সুন্দর কাজ করা,শাড়িটা এক কথায় অসাধারণ।কেন জানি শাড়িটা হাতে নিয়ে গায়ে জড়িয়ে দেখলাম।তারপর শাড়ির অাঁচলটা মাথায় ঘোমটা স্টাইলে পরে আয়নাই দিজেকে দেখতে লাগলাম।নাহ!বেশ ভালোই তো লাগছে।তবে শাড়িটা আরেকটু ফর্সা কাউকে হয়তো বেশি ভালো লাগতো যেমন আপুকে।আমাকে শাড়িটা ওইভাবে নিয়ে দেখে আপু বলে উঠলো,
–ওয়াও সূচী তোরে তো অনেক সুন্দর লাগছে!মাহশাআল্লাহ।
(আমি কোন কথা বললাম না আপুর দিকে মুচকি একটা হাসি দিলাম)
–সূচী তুই এটা নিবি?
–আমি??আমি এই শাড়ি নিয়ে করবো আপু?
–কেন পরবি।
–এতো ব্রাইডাল কালেকশন।আর আমি তো শাড়ি পরতে পারিও না।
–এখন না হয় শাড়ি পরতে পারিস না তার মানে তো এটা না যে ফিউচারেও পারবি না।আর এগুলো সবাই পরতে পারে বুঝলি?
–হুম বুঝলাম।
–তাহলে তোর জন্যে এটা প্যাক করতে বলি?
–কোন দরকার নেই।
–কেন?
–কারন আমি তোমার বিয়েতে লেহেঙ্গা পরবো তাই।
–হ্যা তো পরিস।কিন্তু এটা কিনে রাখতে তো অসুবিধা নেই তাই না?
–অসুবিধা থাকার দরকার নেই তাও কিনবো না।
–কিন্তু
–কোন কিন্তু না আপু।আমি যখন না বলেছি তখন না।

আপু আর কিছু বলে না কারন আমি যখন বলেছি ওটা এখন নেবো না তখন আমি নেবো না।তাই আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।হলুদের শাড়ি,আকাশি রং এর শাড়ি আর টুকটাক শপিং করে আমরা বাসায় চলে আসি।তবে এবার আর ওই সেলফিস,অসভ্য অভ্রর সাথে আসা লাগেনি।বাবা গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলো আমরা দুবোন চলে আসি।

২০.
–ছবিগুলো ভালো ওঠেনি।ব্লার হয়ে গেছে।
(আকাশের কথাটা শুনা মাত্রই অভ্রর হাত থেকে মোবাইলটা তার মুখের ওপর দুড়ুম করে পড়ে)
–আরে আরে লাগলো নাকি তোর অভ্র?

(অভ্র তাড়াহুড়া করে উঠে বসে।সে শুয়ে শুয়ে ছবি দেখছিলো।কখন যে আকাশ এসে তার পাশে শুয়েছে সে টের পায়নি।আর আকাশ আসলোই বা কি করে দরজা তো দেয়া ছিলো।এটা ভাবতে ভাবতে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে দরজা খোলা।তারমানে সে দরজা না দিয়েই শুয়ে পড়েছিলো আর আকাশ ঢুকেছে।তার নিজের ওপর বেশ রাগ হলো এটা ভেবে যে সে ছবি দেখায় এতোটাই ডুবে গেছিলো যে তার পাশে আকাশ এসে শুয়েছে তা সে টেরই পায়নি।না জানি এবার কি হবে।)

–কি রে আমার ছোট্ট সোনা ভাই?ব্যাথা পাওনি তো তুমি?

–উন না না।ব্যা ব্যাথা লাগিনি।কিন্তু তু তু তুই এখানে কি করছিস?

–এই কি রে অভ্র তুই তোতলাচ্ছিস কেন??ও মা তোমার ছেলে তোতলা হয়ে গেছে গো মাআআআ(আকাশ বেশ চিল্লিয়েই বললো)

–এই এই মাকে ডাকছিস কেন?আর আমি তোতলা হতে যাবো কেন?

–এক্ষুনি তো তোতলাচ্ছিলি সেই কারনেই তো মা কে ডাকলাম।যাই হোক আমার রাইট এংগেল থেকে লেফট এংগেলে ছবি গুলো তুললে আরো বেশি সুন্দর আসতো।

–তোর শালিকার ছবি মানে?ভাই তুই কোন ছবির কথা বলছিস আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।(অভ্র এবার আরো বেশি নার্ভাস হয়ে গেল)

–ওই যে শপিং মলে আমার শালিকা যখন শাড়ির ট্রায়াল দিচ্ছিলো তখন আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে যেই ছবি গুলো তুললেন আর এতোক্ষন একেকটা ছবি ২-৪ মিনিট করে দেখছিলেন।কখনো বা নরমাল ভাবে কখনো বা জুম করে।সেই ছবিগুলোর কথাই বলছি আমি।তা চক্করটা কি?

–কো কোন চক্কর নেই।তুই যা ভাবছিস সেরকম কিছু না।

–অভ্র,আমার ভাইইই।হতে পারে তুই অন্তু ভাইয়ার সাথে বেশি ক্লোজ কিন্তু এটা তো সত্যি যে তোরে আমি কম চিনিনা।সেই ছোটবেলা থেকে তুই কোন কথা লুকানোর হাজার চেষ্টা করলেও আমি ঠিকই জেনে যেতাম।হ্যা তুই আর অন্তু ভাইয়া বরাবরই ক্লোজ ছিলি আমি সেইভাবে মিশতে পারিনি কোনদিন কিন্তু আমিও তো তোদের ভাই।তোদেরকে একটু হলেও জানি,বুঝি।যাই হোক সে আলাদা ব্যাপার।এসব কবে থেকে শুনি?

–কোন সব?

–এই যে লুকিয়ে লুকিয়ে সূচীর ছবি তুলছ এসব।ভালোবাসিস ওরে??

–কিহ!?ভালোবাসা?তোর ওই উড়নচন্ডী শালিরে??কোন প্রশ্নই ওঠে না।

–সে তো বোঝাই যাচ্ছে।তা বাড়ির লোক জানে?

–দেখ ভাই আমাদের মধ্যে এরকম কিচ্ছু নেই যে বাড়ির লোক জানবে।আর তুই যা তো আমি ঘুমাবো।যা যা বেরো

–তাড়িয়ে দিচ্ছো তো আমাকে??দাও দাও।কতোক্ষন আর তাড়াবা ভাইজান??সত্যিটা তো সামনে আসবেই।

আকাশ মুচকি হেসে চলে যায়।অভ্র তাড়াতাড়ি উঠে দরজা দিয়ে দেয়।তারপর,
–শীট!এই ভয় টাই পাচ্ছিলাম।অভ্র মার তুই এবার ভালো মতোই খাবি রে ভাই।
অভ্রর বোকার মতো দাড়িয়ে থাকে*

২১.
–মা,ও মা ফুচকা বানাও না।কতোদিন খাইনা।
(রান্নাঘরে মায়ের কাছে গিয়ে ফুচকা খাওয়ার জন্যে ঘ্যান ঘ্যান করছি মুলতো)

–সূচী একদম ঝামেলা করবি না।আমি রান্না করছি কিন্তু।আর নিজেও তো বানিয়ে খেতে পারিস এতো বড় হয়েছিস।

–কিন্তু মা আজকে তুমি একটু বানিয়ে দাও।নেক্সট দিন আমি বানিয়ে খেয়ে নিবো।পাক্কা প্রমিস।

–তুই আর বানিয়ে খাবি??এই কথা বিশ্বাস হয়না।যা বাইরে যেয়ে খেয়ে আয়।

–বাইরেএএএ?

–হুম বাইরে।এরকম ভাব করছো যেন বাইরে খাওনা।

–না না তা হবে কেন?!ওকে মা।

আমি আর কোন কথা না বলে ঘরে চলে আসি।তারপর মারিয়ারে কল দিয়ে বিকালে বাসায় আসতে বলি।মারিয়া ও রাজি হয়।

বিকালে আসলে আমি আর মারিয়া মিলে বাইরে বের হই দুজন।উদ্দেশ্য বাসার পাশে যেই পার্ক সেইখানে যেয়ে ফুচকা খাওয়া।আমি আর মারিয়া রিক্সা নিয়ে নিলাম।১৬-১৭ মিনিটের মধ্যে পৌছে গেলাম।আর ভাগ্য ভালো থাকাই ফেভারিট ফুচকা ওয়ালারেও পেয়ে গেলাম।
–কাকু জলদি জলদি দুই প্লেট ফুচকা দেন।ঝাল একটু কড়া।

ঝাল ঝাল ফুচকা খেয়ে প্রচুর ঝাল লেগে গেছে দুজনেরই।আমি তো না পেরে মারিয়াকে বকা দিলাম ঝালে শিষাতে শিষাতে।
–এতো ঝাল দিতে বলেছিস কেন??এতো ঝাল খাওয়া যায়??বাবা রে নাক,কান সব দিয়ে ঝাল বেরোচ্ছে আমার।
–আমি ভাবিনি যে এতো ঝাল দিয়ে ফেলবে উনি(মারিয়াও শিষাচ্ছে)
–এই কাকু পানি দেন আমাদের।
দুজন পানি খেয়েও ঠিক হলো না।তাই আইস্ক্রিম খাওয়ার প্লান করলাম।কারন ঝালে তো অবস্থা খারাপ দুজনেরই।এই শীতে ও তাই আইস্ক্রিম কিনে খাচ্ছি দুজন।আমি আর মারিয়া দুজন হেটে হেটে যাচ্ছিলাম ঠিক সেই সময় কয়েকটা ছেলে আমাদের পিছন থেকে এসে ধাক্কা দিয়ে চলে যায় মারিয়াকে।ওর হাত থেকে আইস্ক্রিম পড়ে যায়।আমার ছেলে গুলোর কাজটা একদমই পছন্দ হলোনা।আমি তো ছেলেগুলোকে ডেকেই ফেললাম,,
–হে ইউ ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছেন কই??মেয়ে দেখলেই গায়ে পড়তে হয় তাই না?
আমার কথা শুনে ছেলেগুলো তাকালো।ছেলেগুলো দেখে আমার দুই সেকেন্ড ও লাগলো না।ছেলেগুলো আর কেউ না সেইদিন রাতের ছেলেগুলো যারা আমাকে হ্যারাস করেছিলো।এদের দেখে আমার রাগ তিন-চার গুন বেড়ে গেলো।আমি তো ছেলেগুলোকে শিক্ষা দিতে এগিয়ে গেলাম কিন্তু ছেলেগুলো আমাকে দেখেই কেমন ভয় পেয়ে গেলো।একটা তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসে কিসব বলতে লাগলো,
–ভাবি আমরা ইচ্ছা করে কিছু করিনি।আজকে সত্যিই ভুল করে হয়ে গেছে।প্লিজ আপনি ভাইকে বলবেন না।উনি তাহলে আবার….ভাবি পায়ে লাগি ক্ষমা করে দেন।

(ছেলেটা আমার পা ধরতে গেলো কিন্তু আমি আগেভাগেই সরে আসলাম।ছেলেটা কি বলছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না।)
–কি বলছো এসব তোমরা?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

–ভাবি প্লিজ বলবেন না আমাদের কথা।এবার শেষ করেই ফেলবে মনে হয়।

–কাকে বলবো না?কে শেষ করবে,কেনোই বা?

–আপনার পায়ে ধরি আমাদের জীবন ভিক্ষা দেন(সবাই প্রায় আকুতি মিনতি করতে লাগলো)

–ধুর কি বলছো এসব?কে মারবে হ্যা?

–কেন আপনার স্বামী।

–আমার স্বামী মানে?কে??

–আপনার সাথে সেদিন যিনি ছিলো উনিই তো।ও ভাবি বলবেন না তো আমাদের কথা?আমরা সত্যিই ইচ্ছা করে কিছু করিনি।

আমি ওনাদের যে কি বলবো বুঝলাম না।ওনাদের চলে যেতে বললাম।আর আমি,মারিয়া কিছুক্ষন বোকার মতো দাড়িয়ে রইলাম।কারন ছেলেগুলোর কথা আমার মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে।

চলবে……

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:১৪(বোনাস পার্ট)
#জুনাইনাহ_তাসনিম_অরহা

বাসায় ফিরে ছেলেগুলোর কথাটা বুঝতে চেষ্টা করলাম।ওরা বারবার এটা কেন বলছিলো যে, ‘ভাইকে প্লিজ বলবেন না।তা না হলে আমাদের মেরে ফেলবে ‘..ওরা কোন ভাইয়ের কথা বলছিলো?সেদিন তো আমার সাথে অভ্র ভাই ছিলো।কিন্তু উনি তো…..আর তা ছাড়া আমাকে ওরা ভাবিই কেন বলছিলো।আজব!ধুর ছাই,মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না।ছেলেগুলোকে তখন না ছেড়ে দিয়ে ডিটেলসে শোনা উচিত ছিলো।রাতে ঘুম আসছে না।খালি মনে হচ্ছে এর মধ্যের রহস্যটা কি?সেদিন কি এমন ঘটেছিলো যা আমার অজানা আছে।এসব ভেবে ভেবে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো তাই না পেরে মারিয়াকে কল দিই।৫ বারের মারিয়া কল রিসিভ করে।
–এই কল রিসিভ করতে এতো টাইম লাগে কেন তোর?
–রাত ৪টার সময় কে না ঘুমিয়ে বসে থাকে মা যে তার বেস্ট ফ্রেন্ড কল দেবে?(মারিয়া ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে)
–হ্যা তো রাত ৪টা বাজে তো কি হয়েছে??আমার ইম্পর্টান্ট কথা আছে।
–রাতের বেলাতেই কি তোর ইম্পর্টান্ট কথা থাকে?
–হ্যা থাকে।
–সকালে শুনি?
–তুই যদি এখন কল কাটিস আমি ভোর হলেই তোর বাড়িতে গিয়ে তোরে পিটিয়ে আসবো মারু।
–না না তুই বল,শুনছি
–আচ্ছা ছেলেগুলোর ব্যবহার তোর একটু অন্যরকম লাগেনি?ওরা বারবার ওইভাবে কেন বলছিলো যে প্লিজ ভাইকে বলবেন না,মেরে ফেলবে আমাদের।
–কোন ছেলে?
–আরে ওই যে বিকালের ছেলেগুলো।
–ওহ হ্যা।বেশ ভয় পাচ্ছিলো।কি জানি কোন ভাইয়ের।তোর সাথে ওই রাতে একজন ভাই ই ছিলো।আচ্ছা ওনার কথায় বলছিলো না তো?
–ওনার কথা বলছিলো কিনা সেটা জানলে তোরে কল দিতাম?
–তা ওনার কাছে শুনে নিলেই তো পারিস সূচী।
–আমার কাছে তো ওনার নাম্বার নাই।
–কি?তোর কাজিনের নাম্বার তোর কাছে নেই??
–না।তাহলে এখন কি হবে?
–কি আর হবে বাড়ি ওর কলেজ চলে যা ওনার তারপর ডাইরেক্টলি শোন।
–হ্যা ভালো আইডিয়া মারু।তুই মাঝে মাঝে এরকম ইন্টিলিজেন্টের মতো কথা বলিস যে আমি তো অবাক হয়ে যাই একদম।থ্যাকংস মারু।আচ্ছা শোন মারু…হ্যালো,হ্যালো,হ্যালো……..

না সে আবার ঘুমায় পড়েছে।আমি কল কেটে দিই কিন্তু মারিয়া ভালো আইডিয়া দিছে।ওনার সামনাসামনি গিয়ে শোনাটাই বেটার হবে।সকাল হলেই ওনার সাথে দেখা করবো।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারিনি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ১০টা ৫২ বাজে।এতো বেলা হয়ে গেছে আর কেউ আমাকে ডাকেনি।আমার তো আবার অভ্র ভাইয়ের সাথে দেখা করার ছিলো।আমি তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে ব্যাগটা নিয়ে নিচে চলে যাই।আমাকে দেখে মা জানতে চায় কোথাই যাচ্ছি,আমি মারিয়ার সাথে দেখা করার নাম করে বেড়িয়ে পড়ি।প্রথমে বাড়ির গাড়িতেই যাবো ভাবি মামার বাড়ি কিন্তু পরে কেন জানি না মনে হল এই সময় উনি হয়তো ওনার মেডিকেল কলেজেই থাকবেন আর মামাদের বাড়িতে ওনার সাথে পারসোনালি কথা বলাটাও ভালো দেখাবে না।এসব ভেবেই আর বাড়ির গাড়ি নিইনা।রিক্সা নিই,যাওয়ার পথে মারিয়াকেও পিক করে নিয়েছি বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই ওকে রেডি হয়ে বাসার সামনে দাড়াতে বলেছিলাম,ও না না করলেও আমার ভয়ে রাজি হয়ে যায়।আমি আর মারিয়া অভ্র ভাইয়ের মেডিকেল কলেজের সামনে নামি।রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া মিটিয়ে ভিতরে যাই।কিন্তু সমস্যা হলো আমি এখানে আগে কোনদিন আসিনি।ওনারা কোথায় ক্লাস করে তাও জানি না।আন্দাজে হাটতে থাকি,কারো কাছে জিজ্ঞেসও করতে পারছি না ওনার কথা আন্দাজে।ঘুরতে ঘুরতে পুরো মেডিকেল কলেজটাই চক্কর দেয়া শেষ।মারিয়া এবার দাড়িয়ে পড়ে।
–সূচী কি করছিস বল তো।আর কতো চরকির মতো ঘুরবো এভাবে?কারো কাছে জিজ্ঞেস করলেই তো পারিস।আমি আর হাটতে পারছি না পা ব্যাথা হয়ে গেছে পুরো।
–কার কাছে জিজ্ঞেস করবো আন্দাজে?আর আরেক্টু কষ্ট কর না দোস্ত।
–পারবো না আর হাটতে।আর তুই জিজ্ঞেস না করতে পারলে আমিই শুনছি।

(মারিয়া একটা ছেলেকে ডাক দেই)
–আচ্ছা ভাইয়া আপনি মিষ্টার অভ্রকে চেনেন?কি যেন ভালো নাম,এই সূচী তোর কাজিনের ফুল নেম যেন কি?
–ইশরাক এহসান অভ্র।
–হ্যা ইশরাক…..
–আপনারা অভ্র ভাইকে খুজছেন?(মারিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই ছেলেটি বলে)
–হ্যা চেনেন আপনি?
–আরে ওনাকে চেনে না কে?
–ফার্স্ট ইয়ার থেকে ফাইনাল ইয়ার সবাই ওনাকে চেনে।উনি তো আমাদের কলেজের টপার।বিগত ১১ বছরে ওনাকে কেউ সিজিপিএ তে হারাতে পারেনি।প্রতিবছর টপ করে।স্টুডেন্ট,টিচার সবারই তো ক্রাশ উনি।মেয়েরা তো ওনাকে পটানোর জন্যে লাইন দিয়ে থাকে।আর ক্যাম্পাস রাজনীতি ও করে ভাই।সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসের মোস্ট ওয়ান্টেড চকলেট ভাই।
–হয়ছে,হয়ছে আমরা আর ওনার গুনগান শুনতে চাচ্ছি না।আপনার ভাইকে একটু ডেকে দিতে হবে।বলেন ওনার কাজিন সূচী এসেছে।(আমি ছেলেটাকে বলি)
–ভাই তো ক্যান্টিনে আছে ওনার বন্ধুর সাথে।আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি চলুন।

আমি আর মারিয়া ছেলেটার পিছু পিছু ক্যান্টিনে যাই।উনি একটা পুলিশের সাথে বসে।এই প্রথমবারের মতো হয়তো আমি অভ্র ভাইকে বেশ শান্তশিষ্ট ছেলেদের মতো দেখলাম।ফুল হাতা আকাশী রং এর শার্ট,কালো প্যান্ট আর চুলগুলো যেন জেল দিয়ে সেট করে সুন্দর করে আঁচড়ে রাখা।ওনার কাধে এপ্রোন ঝুলিয়ে রাখা।ঠিক জেন্টালমেন্ট ডক্টর লাগছে।আমার দাড়িয়ে থাকা দেখে মারিয়া ভিতরে যেতে বলে।আমরা ভিতরে যাই।আমি ওনার পাশে দাড়াই কিন্তু উনি আমাকে খেয়ালই করেন না।তাই গলা ঝাড়া দিই,
–উহু উহু!

–সূচী তুমি?(উনি আমাকে দেখে উঠে দাড়াই)তুমি এখানে এসেছো।কিছু হয়েছে কি?

–আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো?বসা যাবে?

–হ্যা হ্যা শিউর।

(আমি আর মারিয়া চেয়ার টেনে বসি।অভ্র ভাই ওনার সাথে থাকা পুলিশ অফিসারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন)
–সূচী ও আমার বন্ধু শাওন।ওর সাথে তোমার আগেও একবার দেখা হয়েছিলো।যেদিন আমি তোমার গায়ে জুস…..জানিনা ওর কথা খেয়াল আছে কিনা।বাই দা ওয়ে ও কিন্তু তোমাদের এলাকাতেই এস.আই পদে জয়েন্ট করছে এই মাস চারেক।

(আমি ওনার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে হাই বলি,ওনার বন্ধু ও হাই দেয়।আমি এবার অভ্র ভাইয়ের দিকে তাকাই)
–সেদিন রাতে ঠিক কি কি ঘটেছিলো যা আমার অজানা রয়েছে।

–কোনদিন রাতে?

–যেদিন আমাকে আপনি রাতের বেলা বাসায় ড্রপ করতে গেছিলেন।আমরা ভুট্টা খাচ্ছিলাম এন্ড…ওইদিন রাতে কি কি হয়েছিলো আর?

–সবই তো তোমার জানা।তাহলে জিজ্ঞেস করছো কেন?

–মিথ্যা বলবেন না।সেদিন আরো কিছু ঘটেছিলো আমি ড্যাম শিউর(আমি ওনাকে সকালের সব ঘটনা বলি)

–আ আমি জানি না।জানি না কিছুই।

*উনি আর কিছু না বলেই উঠে চলে যান।আমি অনেকবার ডাকি কিন্তু দাড়ায় না।তখনি অভ্র ভাইয়ের পুলিশ বন্ধু শাওন আমাকে বলে,
–মিস সূচী তুমি শান্ত হও।তুমি করেই বললাম,তুমি আমার থেকে বয়সে তিন-চার বছরের ছোট তো হবাই।বসো তুমি,আমি দিচ্ছি তোমার প্রশ্নের উত্তর।বসো।
(আমার বেশ অবাক লাগে ওনার কথা শুনে কিন্তু আমি বসি)
–সূচী তোমার মনে আছে সেদিন রাতে যখন কিছু ছেলে তোমাকে ডিস্টার্ব করছিলো সেই সময় একটা পুকিশের জীপ আসে ওখানে?
–হ্যা আসে তো।
–ওই জীপে আমি ছিলাম।অভ্র আমাকে মেসেজ দিয়ে ইমিডিয়েটলি ওখানে যেতে বলে।
–মানে?
–হ্যা।ওই আমাকে ওখানে জীপ নিয়ে যেতে বলে আমি সাথে সাথেই বের হয়ে যাই।পুলিশের গাড়ি দেখে ছেলেগুলো তো পালিয়েও যায়।তাই না??
–হ্যা পালিয়েই তো গেছিলো।
–তুমি রাগ করে বাসায় চলে যাও।কিন্তু সেদিন ওইটুকুই হয়নি।তারপর ঘটেছিলো আরো অনেক কিছুই।
–মানে?
–তোমাকে বাসায় ড্রপ করে অভ্র আবার সেই সেইম জায়গাতে আসে।আমিও আসি তারপর শুরু হয় অভ্রর পাগলামি।তিন ঘন্টা ধরে সেই ছেলেগুলোকে খুজি দুজন।তোমার সাথে ওরকম বাজে আচারন অভ্র মেনে নিতে পারেনা।
–তারপর..
–জানোয়ারের মতো পিটিয়েছিলো অভ্র সেদিন ছেলেগুলোকে।আমি যদি ওকে না আটকাতাম হয়তো মেরেই ফেলতো।অবশ্য ঠিক সময় হাসপাতালে ভর্তি না করালেও হয়তো বা………।তোমার হয়তো মনে হবে যে অভ্র তোমার সামনে ওদের কিছু বলেনি কেন??বলেনি কারন ও চায়নি ওর ওই পশুর মতো রুপটা তুমি কখনো দেখো।সেদিন ওরা তোমাকে যতোটা হার্ট করেছিলো তার থেকে দ্বিগুণ হার্ট ও নিজে হয়েছিলো।আর তুমি পরে ওকেই….যাই হোক,আমাকে যেতে হবে আসি।

মিষ্টার শাওন চলে যান।আমি আর মারিয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকি।নিজের কাছেই নিজেকে ছোট লাগছে এখন।উনি কিনা আমার জন্যে ওতো কিছু করেছিলো আর আমি ওনাকে কতো কথা শুনিয়েছি।মারিয়া তো বারবার বলতে লাগলো যে আমি ঠিক করিনি,ওনাকে ওতো অপমান করা আমার ঠিক হয়নি।কিন্তু আমিও কি জানতাম এরকম কিছু ঘটেছে তা?ওনার সাথে কথা বলার জন্যে অপেক্ষা করেছিলাম কিন্তু আর দেখা হয়নি।তাই বাধ্য হয়ে বাসায় চলে আসি।

২২.
আজকে আপুর আর আকাশ ভাইয়ের বিয়ের আউটফিট কিনতে বের হয়েছি সবাই।শপিং মলে গিয়ে দেখি অভ্র ভাই,মামি,স্নিগ্ধাভাবি আর মামি ও আছে।অভ্র ভাইকে দেখে ভাবলাম সরি বলবো সেদিনের বিহেভিয়ারের জন্যে।কিন্তু প্রবলেম হলো সবার মাঝে তো বলতে পারবো না।সবাই শাড়ি দেখছিলো সেই সময় খেয়াল করলাম উনি নেই।আমিও সেই সুযোগে সবার চোখ ফাকি দিয়ে বের হয়ে গেলাম।উনি দোকানের বাইরে দাড়িয়ে আছেন।আমি ওনার পিছনে গিয়ে ডাক দিলাম,
–অভ্র ভাই।
(উনি আমার দিকে ঘুরে তাকালেন)
–কিছু বলবে।
–হ্যা আসলে,,,,,,,
(আমি সরি বলতে যাবো হটাত ওনার হাতে অরেঞ্জ জুস দেখতে পাই।জুস দেখেই আমার সেই আগের বারের কথা মনে পড়ে যাই যেবার আমি সরি বলতে গেছিলাম আর উনি আমার গায়ে…সেই কথা মনে পড়েই ভয় লেগে গেলো)
–কি হলো সূচী কিছু বলবে?
–না না কিছু না।আমি ভিতরে গেলাম।

আমি তাড়াতাড়ি আবার দোকানের ভিতর চলে গেলাম।আপুর শাড়ি,আকাশ ভাইয়ের পাঞ্জাবি কিনা শেষে আকাশ ভাই মা আর মামিকে নিয়ে চলে বাসায় গেলেন।আমরা নিজেদের জন্যে ড্রেস দেখছিলাম।অভ্র ভাই একটা কালো রং এর পাঞ্জাবি দেখছিলো আর ওইটা প্যাক করানোর জন্যে কাউন্টারে যাচ্ছিলেন।আমিও সাইডে ছিলাম কিন্তু হটাত বলে ফেললাম ওই অফ হোয়াট পাঞ্জাবি টা তো আরো ভালো লাগছে দেখতে।উনি আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকালেন।কিন্তু উনি কিছু বলার আগেই স্নিগ্ধা ভাবি বলে ওঠেন,
–সূচী অভ্র সেটাই করে যেটা ওর মন চায়।ওর সব কিছুই নিজের পছন্দ মতো কেনে বোন।ওর কাছে কালো পাঞ্জাবি টা যখন ভালো লেগেছে ও সেটাই কিনবে।সে যতোই হোক পাশের টা ভালো হোক।চলো আমরা ওদিকে যাই।
–হুম চলুন।
আমরা চলে আসি।আর উনি পাঞ্জাবি কিনে আসেন।

চলবে……