তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-২১+২২

0
995

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:২১
#জুনাইনাহ_তাসনিম_অরহা

২৯.
আপু আর আকাশ ভাইয়ের হলুদ সন্ধ্যার জন্যে রেডি হচ্ছি।সকালে শাড়ি পরেছিলাম তাই এখন লেহেঙ্গা পরেছি।আপুকে পার্লারের লোকেরা সাজাতে এসেছে।স্নিগ্ধা ভাবি,মারিয়াও ওনাদের কাছে সেজেছে।আমারও অবশ্য সাজার কথা ছিলো কিন্তু সকালের ব্যাপারটা নিয়ে এখনো বেশ আপসেট আমি।তাই আমি আর সাজলাম না পার্লারের মেয়েগুলোর কাছে।নিজে নিজে যেটুকু পারি সেজে নিলাম।রেডি হয়ে অনুষ্ঠানের জায়গাতে গিয়ে দেখি আশে পাশের প্রাই সবাই এসেছেন।যদিও খুবই ছোট্ট পরিসরে হচ্ছে সব আয়োজন।আমরা মেয়েরা আপুকে স্টেজে বসালাম।আর অন্তু ভাই,অভ্র ভাই মানে সব ছেলেরা আকাশ ভাইকে আনলেন।হলুদ তো সকালেই হয়ে গেছে।এখন যাস্ট সবাই মিলে একটু মজা করবো,ছবি তুলবো এই।

সকাল থেকেই অভ্র ভাই সুযোগ খুজছেন আমার সাথে কথা বলার কিন্তু আমি বারবার এড়িয়ে গেছি।এখনও উনি কথা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন আমি এড়িয়ে গেলাম।তবে এখন আমার মন অনেকটাই ভালো।আর আমি চাইওনা নিজের বোনের বিয়েতে কোন অসভ্য লোকের জন্যে মুড অফ করে থাকি।আমি আর মারিয়া দুজন কথা বলছিলাম তখনই অন্তু ভাই এলো।
–এই ছোট্ট বোনগুলো আমার,তোরা এখানে নিজেদের মতো কি গল্প করছিস?চল চল ছবি তুলতে হবে।
–হ্যা ভাইয়া ঠিক বলেছো।ছবি তুলা হয়নি তো স্টেজে গিয়ে একটাও(আমি আনন্দে বলি)
–হ্যা সেই জন্যেই তো।তাড়াতাড়ি চল রে বোন তোরা তোদের ভাবি ডাকে।তোরা যদি দেরি করিস তাহলে তোদের ভাবি আমাকে আস্ত রাখবে না।বলবে,”তোমাকে দিয়ে কোন কাজ হয় না,তুমি একটা অকর্মার ঢেকি ব্লাহ ব্লাহ।সারাদিন মাথা খারাপ করে দেয়।কি দেখে যে বিয়ে করেছিলাম!সারাদিন খ্যাট খ্যাট করে।”

অন্তু ভাইয়া শরীর নেড়েচেড়ে স্নিগ্ধা ভাবির নকল করছিলো।কিন্তু স্নিগ্ধা ভাবি যে অন্তু ভাইয়ার পিছনে দাড়িয়ে তা দেখছে তা ভাইয়া জানেই না।আমি আর মারিয়া স্নিগ্ধা ভাবিকে দেখে অন্তু ভাইয়াকে ইশারা করে পিছনে ঘুরতে বলি কিন্তু উনি বোঝেই না।অন্তু ভাইয়া তো স্নিগ্ধা ভাবির নকল করেই যাচ্ছে তখনি স্নিগ্ধা ভাবি এসে অন্তু ভাইয়ার কান টেনে ধরে।অন্তু ভাইয়া ঘুরে এসে স্নিগ্ধা ভাবিকে দেখেয় জিহবায় কামড় দেয়।স্নিগ্ধা ভাবি রাগি ফেস নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
–আমি সারাদিন মাথা খারাপ করি তাই না?সারাদিন খ্যাট খ্যাট করি।আর কি যেন ছিলো?কি দেখে যে বিয়ে করেছিলে তাই তো?
–এই না না।তুমি যা ভাবছো তা নয় সোনা।আমি তো ইয়ারকি মারছিলাম।সত্যি।
–তোমার ইয়ারকি আমার ভালো মতো জানা আছে বুঝলে(স্নিগ্ধা ভাবি আরো জোরে কানে মলা দেয় আর অন্তু ভাইয়া ব্যাথা পায়)
–আরে আরে বউ কি করো ছাড়ো,ব্যাথা লাগে তো।
–লাগুক ব্যাথা।কত্তো বড় সাহস তোমার,তুমি আমার নামে উল্টা পাল্টা কথা বলো।

স্নিগ্ধা ভাবি আর অন্তু ভাইয়ার এই কান্ড দেখে আমি আর মারিয়া হাসতে হাসতে ফ্লাট।আমাদের হাসি দেখে স্নিগ্ধা ভাবি অন্তু ভাইয়ার কান ছেড়ে দিলো।তারপর আমাদের কাছে এসে বললো,
–শোন আমি কিন্তু মোটেও ওরকম করি না।তোমাদের ভাইয়া মিথ্যা বলেছে।
–আমরা তো জানি ভাবি তুমি অনেক কিউট এরকম করতেই পারো না(মারিয়া ভাবিকে জড়িয়ে ধরে বলে)
–এই তো দ্যাটস লাইক মাই ননদিনি।আচ্ছা এবার ফ্যামিলি ফটোশুট হবে চলো।

আমরা সবাই স্টেজে আসি।প্রথমে আমরা মানে আপুর ফ্যামিলির সবাই ছবি তুলি তারপর মামার ফ্যামিলি।এইভাবে একসময় দুই ফ্যামিলিই একসাথে ছবি তুলতে আসে।আমার পাশে মারিয়া দাড়িয়ে ছিলো যদিও ও আমাদের ফ্যামিলি মেম্বার না কিন্তু ফ্যামিলি মেম্বারের থেকে কমও তো না।আমরা সবাই মুখে হাসি নিয়ে ছবি তুলছিলাম।কিন্তু হটাত কানের কাছে কেউ একজন বলে ওঠে,
–আমি সত্যিই সরি।
আমি সাইডে তাকিয়েই শক খাই।আমার পাশে অভ্র ভাই দাড়িয়ে।আমার পাশে উনি কিভাবে আসলো,কখন আসলো কিছুই তো বুঝলাম না।আমার পাশে তো মারিয়া ছিলো।আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি মারিয়া আমার অন্য পাশে দাড়িয়ে।আমি চুপ থাকাই অভ্র ভাই আবার বলে,
–ক্ষমা করা যায় না?
–আপনি এখানে কখন এলেন?(আমি সামনের দিকে তাকিয়েই বলি)
–সরি।
–দেখুন আপনার সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছা নেই।
–এভাবে বলো না।তোমার সাথে কথা না হলে আমি মরে যাবো।
–কিহ?আমার সাথে কথা না হলে আপনি মরবেন কেন?(আমি ওনার দিকে তাকিয়ে খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি)
–ডায়েরি তো কেন এর উত্তরটা ভালো মতোনই দেয়া আছে।তাও আবার জিজ্ঞেস করছো?
–ডায়েরি মানে?কোন ডায়েরি?তখনও বললেন ডায়েরি আবার এখনও কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
–কোন ডায়েরি মানে?শীট ম্যান!(উনি মাথায় হাত দেন)

আমি আবার কিছু শুনবো তার আগেই ফটোগ্রাফার তাকাতে বলে।আমরা সামনের দিকে তাকাই।ছবি তুলে স্টেজ থেকে নেমে আসার পর মনে মনে একটা কথাই ভাবছি উনি কোন ডায়েরির কথা বলতে চাচ্ছেন এতোক্ষন?ডায়েরিতে কিই বা এমন লেখা?এসব ভাবছিলাম তখনই সৌরভ এসে বলে আমাদের নাচের সময় হয়ে গেছে।আমি খুব এক্সাইটেড হয়ে স্টেজে যাই।নাচগান সব মিলিয়ে অনেক মজা করি।প্রায় সবাই কিছু না কিছু পারফম করেছে,এমনি মামা-মামি বাবা-মা ও গান গেয়েছে।শুধু একজনই বাকি আছে।অবশ্য তিনি তো আবার এ বাড়ির ছোট নবাব তার ভাবই আলাদা।সে কিছু করবে বলে মনে হয় না,যে ভাব তার!
আমি আর মারিয়া সেলফি তুলছিলাম তখনই মাইকে স্নিগ্ধা ভাবির গলা পেলাম।
–অনেক তো মজা হলো এবার আজকের অনুষ্ঠানের সব থেকে সুন্দর পারফরমেন্সটা হতে চলেছে।তা সবাই রেডি তো?

স্নিগ্ধা ভাবির কথা শুনে সবাই অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি কার পারফরমেন্স হবে এবার।কারন বর-কনের ডান্সও তো হয়ে গেছে।স্নিগ্ধা ভাবি আবার বলে উঠলো,
–এবার আমাদেরকে সুন্দর একটা গান শুনাতে আসছে অভ্রওওওও।হাততালি..

সবাই হাততালি দিতে থাকে কিন্তু আমি পাত্তা দিইনা,কারন ওই মানুষটারে আমার সহ্য হয় না।অনেকেই সিটি দেই,অভ্র অভ্র করে আর স্টেজে জনাব তখন দাত কেলাতে কেলাতে গিটারটা নিয়ে ওঠে।স্নিগ্ধা ভাবি ওনাকে অল দা বেস্ট জানিয়ে স্টেজ থেকে নেমে যায়।জনাব একটা চেয়ারে বসে মাইক টা মুখের কাছে নেয়।স্টেজের লাইট অফ হয়ে গিয়ে ওনার দিকে একটা লাইট ফোকাস করা হয়।আমি অন্যদিকে ঘুরে যাই কারন আমার কোন ইচ্ছা নেই ওনার গান শুনার।আমি মোবাইল নিয়ে ঘাটছিলাম সেই সময় ওনার গলা ঝাড়ার আওয়াজ আসে।তারপর,
–আজকে আকাশ ভাই আর সুমনারর হলুদ।সরি সুমনা ভাবির।ওদের জন্যে অনেক অনেক দোয়া আর ভালোবাসা।ওরা যেরকম তাদের মনের মানুষকে পেয়েছে না জানি আমার কপালেও ওরকম পিচ্চি কোন মেয়ে আছে কিনা।

পিচ্চি মেয়ে কথাটা শুনেই আমার বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে।কারন উনি আমাকে অনেকবার পিচ্চি মেয়ে বলে ডেকেছেন।আমি সাথে সাথে ওনার দিকে তাকাই।উনি তো আমাদের এদিকেই তাকিয়েই কথাটা বলেছে।আমার পাশে মারিয়া,সৌরভ,অন্তু ভাইয়া,স্নিগ্ধা ভাবি বসে।আমার খুব অদ্ভুত লাগছে।উনি এখনো আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে ফেলেন কিন্তু হাসিটা কার দিকে তাকিয়ে দেন তা বুঝলাম না।আমি ওনার দিকে আছি তখনই,

~তুমি কি জানো কেউ আড়ালে বসে,
তোমাকে জীবন দিয়ে ভালো সে বাসে।
তুমি কি জানো কেউ আড়ালে বসে,
তোমাকে জীবন দিয়ে ভালো সে বাসে।

তার মনের যতো কথা,তার গোপন প্রেমের ব্যাথা,,
বলে যাই আমার এ গান,আজ বলে যাই আমার এ গান..
মনে রেখো আমার এ গান,শুধু মনে রেখো আমার এ গান।

(গানের মাঝে চোখ খুলে উনি আবার এদিকে তাকান।কিন্তু এবার কেন জানি না মনে হলো উনি আমার দিকেই তাকিয়েছেন)

কতো যে কথা মনে লুকানো,
হয়নি তোমাকে আজও শোনানো…
ওওও..হয়নি তোমাকে আজও শোনানো।
বলে যাই আমার এ গান,আজ বলে যাই আমার ও গান,,
মনে রেখো আমার এ গান,
শুধু মনে রেখো আমার এ গান।
শুধু মনে রেখো আমার এ গান……

উনি গানটা শেষ করে গিটারটা নিচে রাখেন সবাই হাততালি দেয় শুধু আমি বাদে।কারন এই মুহুর্তে আমার চোখে,মনে হাজারো প্রশ্ন যার উত্তরও আবছা।উনি স্টেজ থেকে নিচে নেমে আসেন।ওনার বন্ধু আরো কয়েকজন ওনার কাছে যান।
–বাহ ফাটয়ে দিয়েছো পুরো মামা।কি গানটাই না গাইলে!সেই একদম।
–থ্যাঙ্কস(মুচকি হেসে)
–তা ভাই অভ্র গানটা কি কোন স্পেশাল কারোর জন্যে ছিলো নাকি?
–উম তা তো ছিলো।
–ওরে বাবা!তা কে সেই সুন্দরি?নামটা তো বলো ছবি টবি দেখাও।
–আস্তে আস্তে সব হবে।আগে সে নিজে তো বুঝুক আমার মনের কথা।
–মানে?ভাবি এখনো জানেই না?
–না।পিচ্চি মানুষ তো টাইম লাগছে একটু বুঝতে।আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এখনও যদি সে না বোঝে আমার আর কিই বা করার থাকে?(উনি লাস্টের কথাগুলো আমার দিকে তাকিয়েই বলেন)

বন্ধুদের সাথে কথাগুলো বলেই উনি চলে যান ওখান থেকে।আমি বোকার মতো দাড়িয়ে থাকি,উনি কি বুঝাতে চাইলেন??আর ডায়েরির ব্যাপারটা।হটাত মনে পড়লো আগেরদিন উনি আমাকে গিফট পেপারে র‍্যাপ করা কিছু একটা দিয়েছিলেন।তবে কি??না আর কোন কথা না ভেবেই আমি দৌড় দিই।নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়েই ব্যাগ থেকে ওনার দেয়া উপহারটা বের করি।উপহারটা খুলতেই দেখি একটা শাড়ির প্যাকেট।আমি প্যাকেটটা খুলেই বেশ বড়সড় শক খাই।প্যাকেটের ভিতর সেই বেগুনি কাতান শাড়িটা।যেটা আমি আপুর বিয়ের শপিং এ গিয়ে পছন্দ করেছিলাম।আপু কিনে দিতেও চেয়েছিলো আমিই নেইনি তখন।উনি আমাকে সেই শাড়িটা গিফট করেছেন? আমার বেশ অবাক লাগলো কিন্তু কেন??শাড়ির কথা ভাবতে ভাবতেই আমার চোখে পড়ে একটা ডায়েরি।ডায়েরিটা দেখে আমি আরো বেশি শকড।এটা তো সেই ডায়েরি যেটা আমি ওনার বাড়িতে গিয়ে ওনার রুমে পেয়েছিলাম।এক পেজ পড়েছিলাম।উনি কি আমাকে এই ডায়েরিটার কথাই বলেছিলেন তবে?কি আছে এই ডায়েরিতে?আমার খুব নার্ভাস লাগছে।দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে ডায়েরিটা খুলি।প্রথম দিনের মতো আজকেও প্রথমে সেই লেখাটাই আছে,
‘I think I got her’

লেখাটা আমি আগেও দেখেছি তাই কিছু মনে হলো না।আমি পেজ উল্টালাম,পেজ ভর্তি লেখা ওনার সুন্দর হাতের লেখা দিয়ে।

“জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছি কিন্তু এই প্রথমবার কোন মেয়েকে দেখে বেশ অন্যরকম একটা ফিলিংস আসছে।আমার গাড়ির সামনে এসে যখন তুমি পড়েছিলে আর মুখ ভর্তি ভয় নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়েছিলে আমি তো তখনই তোমার মায়ায় পড়ে গেছি।জানো তখন আমার কানের কাছে কেউ যেন ফিসফিস একটা গানই গাইছিলো,”Khirki bichate dekha,aj meine suva ha to dekha to dil ne kaha hein mujhse,,
walla walla lagta hein,kuch to alag sa hein,,
dur mein huwa hu mujhse..
Ishq di feeling new new hein,na jani aisa kuy kuy hein..কিন্তু তোমার ওই শয়তান এক্স ফিয়নসের জন্যে গানটা আর বেশিক্ষন চললো কয়?কি যে রাগ হয়ছিল না।কোন সাহসে ও তোমার সাথে রুড বিহেভ করেছিলো??মন চাচ্ছিলো ওরে খুনই করে দিই।অভ্রর ভালোবাসার মানুষটিকে কষ্ট দেয়ার অধিকার কারোর নেই এক আল্লাহ ছাড়া।অবশ্য আল্লাহই বা কেন তোমাকে কষ্ট দেবে?তুমি কতো মিষ্টি একটা মেয়ে!তবে হ্যা আমার একটু খারাপ লেগেছিলো জানো,তুমি আমাকে একবার ধন্যবাদ জানালে ভালো করে কথাও বললে না।ধন্যবাদ জানাওনি তাতে কিছু যায় আসে না কিন্তু একটু মিষ্টি করে তো কথা বলতে পারতে তা না রাগ দেখিয়ে চলে গেলে।আচ্ছা তোমার নামটা কি?উমম দেখতে তো একদম পিচ্চি।তোমার নাম তো জানা নেই,পিচ্চি বলেই ডাকি বলো?
আচ্ছা আজ আর কথা বলবো না।ঘুমাতে হবে,রাগ করো না যেন।কাল আবার তাড়াতাড়ি যেতে হবে হাসপাতালে।গুড নাইট পিচ্চি।”

পেজ ভর্তি লেখাটা পড়ে আমি থ মেরে বসে আছি।আমি কি রিয়াক্ট করবো বুঝতে পারছি না।উনি আমাকে ভালোবাসে?লাইক সিরিয়াসলি?উনি কি মজা করে লিখেছে এসব?ডেট চেক করলাম তা ডেট ও ঠিক ওইদিনেরই।এই পেজের লেখাটুকুই পড়েই আমার হাত পা-ঠান্ডা হয়ে আসছে না জানি এর পর আমার কি অবস্থা হবে!আমি পেজ উল্টালাম ফাকা পেজটা আবার পেজ উল্টালাম।এখানেও পেজটা ভর্তি লেখা।

চলবে…..

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:২২
#জুনাইনাহ_তাসনিম_অরহা

“এতো তাড়াতাড়ি দেখা হয়ে যাবে ভাবিনি।ভাগ্যিস আজ ক্লাস ছিল না,আয়ানকে বাইরে খাওয়াতে নিয়ে আসছিলাম।আমার গায়ে কফি মেরেছো মানলাম কিন্তু এতো রাগ কি ঠিক পাখি?জানো
আমি বরাবর ভাবতাম আমি অনেক লাকি
কিন্তু এই প্রথমবার নিজের ভাগ্যের ওপর হাসি পাচ্ছে।হাজারটা ফ্লার্ট,শ খানিক প্রেম করার পর কিনা ভালোবাসলাম কাউকে,সেও আবার আপন ফুপাতো বোন হতে হলো?!আল্লাহ!কেন করলে এমন?তবে যাই হোক না কেন,ভালো যখন বেসেছি ছাড়বো না এতো সহজে।আচ্ছা বাসায় গিয়ে লাঞ্চ করে নিও।আমিও বাসায় যাবো,আয়ান তাড়া দিচ্ছে আর গাড়িতে বসে লেখা অনেক কষ্টের।টাটা”

লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে উনি কথাগুলো ডায়েরিতে না যেন বাস্তবেই আমাকে বলছেন।তবে লেখাগুলো পড়ার পর আমার খুব অবাক লাগলো,তারিখটা দেখে।ওনার সাথে আমার প্রথম দেখার ঠিক পরের দিনই মানে আমি যখন ওনার গায়ে কফি ফেলি তারপরই।লেখাটা তো সেরকমই মিন করে।কিন্তু উনি কিভাবে জানলেন আমি ওনার ফুপাতো বোন?আমি তো ওনাকে কিছুই বলিনি,আমি নিজেও তো জানতাম না।ওইদিনি তো আবার অন্তু ভাইয়া,আকাশ ভাইয়া আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন।এর মধ্যে কি কোন কানেকশন আছে?
আমার ভাবনার মাঝে কে যেন দরজা ধাক্কাতে লাগলো।দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পেয়ে আমি তাড়াতাড়ি ডায়েরি আর শাড়িটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেললাম আবার।দরজা ধাক্কাতেই আছে,আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে খুলে দিলাম।সামনে মা দাড়িয়ে,

–কি ব্যাপার সূচী তুমি এখানে কেন?সবাই নিচে আর তুমি ঘরে কেন?তোমার শরীর ভালো আছে তো??দেখি তো(মা আমার কপালে হাত দিয়ে দেখেন)না তাপমাত্রা তো ঠিক আছে।অন্য কোন প্রবলেম হচ্ছে কি?
–না মা তেমন কিছু না।
–কিছু তো বটেই।তুমি তো এরকম মেয়ে না যে আনন্দ বাদ দিয়ে দরজা আটকিয়ে বসে থাকবা।কি হয়েছে সত্যি করে বলো।
–হালকা মাথা ব্যাথা মা।সিরিয়াস কিছু না।
–এই তো ঠিকই ভেবেছিলাম।আচ্ছা নিচে এসে খেয়ে নাও তারপর ওষুধ খেয়ে নিও একটা।কাল তো আবার অনেক কাজ,দৌড়াদুড়ি করা লাগবে।
–হুম মা।তুমি যাও আমি আসছি।

আমি মায়ের পিছু পিছু হাটছি।আর মনে মনে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম,
–সরি মা।তোমাকে মিথ্যা বললাম।কিন্তু কোন উপায় ছিলো না।সত্যিটা তো তোমাকে কোন মতেই বলা যাবে না।

খাবার ওখানে যাওয়ার সময় কয়েকবার এদিক ওদিক তাকালাম কিন্তু জনাব ইশরাক এহসানকে কোথাও দেখলাম না।অবশ্য উনি এই মুহুর্তে সামনে না আসাটাই ভালো।মা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে,মাথা ব্যাথার কথা শুনে।খেতে খেতে একটা কথাই ভাবছি অভ্র ভাই আমাকে ভালোবাসে?সত্যিই কি ভালোবাসে?ডায়েরির কথা গুলো কি সত্যিই লিখেছেন উনি?ওনার কথা ভাবতে ভাবতেই মায়ের হাতে মার খেলাম আস্তে করে,
–সূচী,না চাবিয়ে খাবার মুখে নিয়ে বসে আছিস কেন বাচ্চাদের মতো?
–উমম(মাকে বকা দিয়ার মতো চোখ মুখ করে শব্দ করলাম।কারন আমার গাল ভর্তি ভাত,কথা বলার উপাই নেই)
–খা তাড়াতাড়ি।আমি কি সারারাত বসে থাকবো?তাড়াতাড়ি খাবারটা শেষ করে ওষুধ খাবি।

আমি খাবারটা তাড়াতাড়ি শেষ করেই নিজের ঘরে চলে গেলাম।ভাগ্য ভালো ছিলো মারিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে।আমার আর অপেক্ষা করা লাগলো না।আমি ডায়েরিটা নিয়ে কাথার মধ্যে চলে গেলাম।ফোনের ফ্লাস ওন করে ডায়েরিটা খুললাম।
“আমি জীবনে সরি শব্দটা খুব কম বারই ব্যাবহার করেছি।আজ তোমার গায়ে আমার কফি ছুড়ে মারাটা আমার ঠিক হয়নি।তাই সরি।আমি আসলে তোমাকে একটু ক্ষেপাতে চেয়েছিলাম।দ্যাটস ইট।”

এটা পড়ে মনে মনে ভাবলাম,
–বাব্বাহ!সাদা বাদরটা তো খুব ড্রামা জানে।আমাকে চিনেও ইচ্ছা করে এতোকিছু করলো।ডায়েরিতে আমাকে উদ্দেশ্য করে সরিও লিখলো কিন্তু সামনে এরকম ভাব নিতো যে আমাকে যেন সহ্যই করতে পারে না।ড্রামা বাজ কোথাকার।

এরপর আমাদের দুজনের একসাথে কাটানো,ভালো-খারাপ,হাসি-কান্নার সব মুহুর্ত খুটিয়ে খুটিয়ে লেখা আছে।আর সাথে কিছু অজানা কথাও আছে।ডায়েরিটা না পড়লে এগুলো কোনদিন জানা হতো না আমার।এই যেমন,
উনি প্রায় প্রতি রাতে আমার বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে থাকতেন গাছের আড়ালে।মশার উত্তাপ সহ্য করেও দাড়িয়ে থাকতেন আমাকে একবার হলেও দেখার জন্যে।কোনদিন দেখা পেয়েছেন তো কোনদিন পাননি।আবার মাঝেমাঝে উনি আমার ভার্সিটির সামনের টং দোকানেও বসতেন।আমাকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন বুনেছেন,আমাকে নিয়ে হাজারো অজানা কথা লিখেছেন এই ডায়েরিতে।কিন্তু এই লেখার মাঝেও একটা লেখা আমি বারবার করে পড়েছি,

কিছু ভুল ইচ্ছে করেই করি,
ওতে আমার ছাপ থেকে যায় জানো?
আমার মতন অন্য কেউতো নেই,
ব্যথা দিলে মনে বড্ড বেশি লাগে তা কি তুমি মানো?

এই লেখাটা মূলত ওইদিন লিখেছিলেন যেদিন আমি ওনাকে অপমান করেছিলাম আমার সাথে ঘটা হ্যারাসমেন্টের জন্যে।এই মুহুর্তে আমার বেশ খারাপ লাগছে ওনাকে সেদিন কথা শুনানোর জন্যে।কিন্তু আমারই দোষ কোথাই?আমিও তো জানতাম না যে উনি সেদিন রাতে ওই ছেলেগুলোকে পিটিয়েছিলেন।ডায়েরির একদম শেষের দিকে আমার কিছু ছবি ছিলো।সবই আমার অজান্তে তোলা।শাড়ির দোকানে শাড়ি গায়ে জড়ানো ছবি,কাদার মধ্যে বসে থাকা অবস্থার ছবি,হাসপাতালে মায়ের সুস্থতার কথা জেনে আনন্দে নাচছিলাম সেই মুহুর্তের ছবি,বেলকনি দাড়িয়ে কফি খাচ্ছি সেই ছবি আরো অনেক।মোট ৩০-৩৫টা মতো,প্রতিটা ছবির পিছনে আবার তারিখ,সময় আর ওনার অনুভুতি প্রকাশ করা হয়েছে।তবে সব থেকে মনে গিয়ে লাগলো একটা পড়ে যেই ছবিটাতে আমি বেগুনি কাতান শাড়িটা জড়িয়ে আয়নাই নিজেকে দেখছি।
“জানো আমার গাঢ়ো বেগুনি রং কোনদিনি পছন্দ না।দেখলেই রাগ লাগে কিন্তু এই প্রথমবার আমি রংটার প্রেমে পড়েছি।আচ্ছা কেন প্রেমে পড়লাম বলতে পারো?উম,নাহ!মনে হই না তুমি পারবে,পিচ্চি মেয়ে তো।আচ্ছা আমিই বলছি।আমি তোমার মায়ায় পড়েছি যে পাখি।তাই তোমাকে ঘিরে থাকা সবকিছুই আমাকে আকৃষ্ট করে।আমার অপছন্দগুলোও তোমার ছোয়াতে সুন্দর হয়ে ওঠে আমার চোখে।কারন তুমি সুন্দরিতমা:)”

লেখাগুলো যেন আমার মনে বসে গেলো। উনি যে কবে কবে আমার এই এত্তোগুলো ছবি তুলেছেন আমি তো টেরও পাইনি।আর ওনার লেখাগুলো।অভ্র ভাই যে এতো সুন্দর করে কথা বলতে পারেন বা লিখতে পারেন আমি কল্পনাতেও ভাবিনি।ডায়েরিটা বন্ধ করে আবার ব্যাগে রেখে দিলাম।বিছানাই শুয়ে বারবার ওনার লেখাগুলো মনে পড়ছে,উনি কি সত্যিই আমাকে এতোটা ভালোবাসে?এসব ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে গেলো।মাথা ব্যাথা শুরু হলো আমার তাই ঘন্টা তিনেক ঘুমিয়ে নিলাম।

৩০.
আপুকে পার্লারের লোকেরা সাজাচ্ছে।আমি,মারিয়া,স্নিগ্ধা ভাবি আরো ২-৩ জনও সাজছি।আমি আগে কোনদিন পার্লারের থেকে সাজিনি।ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা আমার দিয়ে হই না।আর তার থেকে বড় কথা আমি ওতো হেভি মেকাপ পছন্দও করিনা।কিন্তু আজ আপুর বিয়ে তাই সবার সাথে সাজতে বসলাম।কিন্তু আমি আগেই বলে রেখেছি আমাকে খুবই লাইট মেকাপ দিতে।আমার কথা মতো মেয়েটি লাইট মেকাপ লুকই দেয়।নিজেকে আয়নার সামনে দেখি,
–নট ব্যাড সূচী।মেকাপ ওতোটাও বোঝা যাচ্ছে না।ভালোই লাগছে তো তোমাকে।অবশ্য তুমি তো এমনিতেই সুন্দর।সুন্দর মানেই তুমি(আয়নার সামনে দাড়িয়ে মনে মনে এগুলোই ভাবছি)

*আপুর সাজানো কমপ্লিট।রুমে আমি আর আপু আছি শুধু আর বাকিরা বাইরে।আমি আপুর সাথে সেলফি তুলছিলাম।তখনই মা আসে রুমে।
–মা দেখো আপুকে কত্তো সুন্দর লাগছে(আপুকে জড়িয়ে ধরে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলি)
মা এগিয়ে আসে আমাদের কাছে।বিছানার ওপর বসে কোন কথা না বলে আপুর মাথা,মুখে হাত বুলাতে থাকে।মায়ের চোখের কোনে জল টলমল করছে।আমি আপুর পাশ থেকে উঠে মায়ের পায়ের কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসলাম।তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
–মা কি হয়েছে?আজ এতো খুশির দিন আর তোমার মুড অফ কেন??
–…….(মা কোন উত্তর দেয় না)
–মা(আপু খুব মিষ্টি করে ডাকে)
–নতুন জীবন শুরু হচ্ছে মা তোর,সবাইকে সাথে নিয়ে সুখে দুঃখে একসাথে চলবি মা।নতুন সংসার মানে হাজারটা দায়িত্ব,কেউ যেন কোনদিন এটা না বলতে পারে যে আমি তোকে সবাইকে নিয়ে চলা শিখাতে পারিনি।কারোর সাথে কোন ঝামেলা করবি না কেমন?অবশ্য তুই তো আমার লক্ষী মা,সবাই তোকে ভালোবাসবে দেখিস।নতুন পরিবার,নতুন সম্পর্ক পেয়ে মাকে ভুলে যাসনা যেন মা।
–মা গো..
মা আর কোন কথা বলতে পারে না।আপুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।মায়ের কান্নার সাথে সাথে আপুও কেঁদে ফেলে।আপু আর মায়ের কান্না দেখে আমিও আর নিজেকে আটকে রাখতে পারি না।আমাকে কাঁদতে দেখে মা আর আপু আমাকেও জড়িয়ে ধরে।কখন যে বাবা এসে দাড়িয়েছে আমরা খেয়ালই করিনি।
–আজকের দিনে আর মেয়েকে চোখের জলে নতুন সংসারে পাঠিয়ো না মনি।
বাবার কথা শুনে আমরা বাবার দিকে তাকাই।বাবা আপুর কাছে এসে আপুর মাথায় হাত রেখে বলে,
–অনেক মিষ্টি লাগছে মা।দোয়া করি তুমি জীবনে অনেক সুখী হও।
আপু বিছানা থেকে উঠে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।বাবার হয়তো অনেক কষ্ট হচ্ছিলো,কান্না পাচ্ছিলো কিন্তু বাবা কাউকে বুঝতে দিলো না।এর মাঝে সৌরভও এসে দাড়িয়েছে পাশে।সৌরভ এসেই বললো,
–একটা ফ্যামিলি ফটো হয়ে যাক?
–হ্যা হয়ে যাক(বাবা বলে)
–তাহলে সবাই হাসো,স্মাইইইল..
আমরা সবাই কান্না মুছে একটা ফ্যামিলি সেলফি তুলি।ছবিতে হাসি থাকলেও আমাদের কারোর মনের অবস্থাই ভালো না।সবাই আপুর চলে যাওয়া নিয়ে কষ্ট পাচ্ছে।দুষ্টু সৌরভটাও অনেক চেষ্টা করছে ওর ইমোশোন লুকানোর।আমরা কেউই আর আপুর সামনে নিজেদের দূর্বল করলাম না কারন আমরা দূর্বল হয়ে পড়লে আপুই বেশি কষ্ট পাবে।যা আমরা কিছুতেই চাইনা।

*বাইরে এসে বিয়ের অনুষ্ঠানের জায়গাটাতে আসি।এদিক ওদিকে তাকাচ্ছি বারবার হটাত অভ্র ভাই কোথা থেকে এসে বলে,
–আমাকে খুজছিলে?
উনি ওরকম হুট করে আসাতে আমি ভয় পেয়ে যাই।উনি যে কেন এরকম করে বুঝি না।হুট করে চলে আসে,আর তখনি আমার বুক কেঁপে ওঠে সাথে হার্টবিট বেড়ে যাই।
–কি হলো বলো না আমাকে খুজছিলে?
–আপনাকে খুজতে যাবো কেন আজব?আমি আপনাকে খুজিনি মোটেও।
–তাহলে কাকে খুজছিলে?
–কা কাউকে না।
–না,তুমি তো কাউকে খুজছিলেই।মিথ্যা বলবা না।আমি জানি তুমি আমাকেই খুজছিলে।
–মোটেই না।আমি মারিয়াকে খুজছিলাম।

কথাটা বলেই আমি ওখান থেকে চলে গেলাম।ভাগ্যিস মারিয়াকে দেখেছিলাম তাই ওর নামটা বলে দিয়েছিলাম।কিন্তু সত্যিটা তো আমি ওনাকেই খুজছিলাম।কিন্তু কেন খুজছিলাম জানা নেই।

–কি রে সূচী,কোথায় ছিলি এতোক্ষন?আমি তোকে সেই কখন থেকে খুজে যাচ্ছি।(মারিয়া ঠোঁট উল্টে উল্টে বলে)
–আগে বল তুই কোথায় ছিলি?
–আমি তো এখানেই ছিলাম।
–আমিও এখানেই ছিলাম।
–আমি তো দেখলাম না।
–তুই তো কানা।দেখবি কি করে??

চলবে……
(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন.কোন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন
ধন্যবাদ)