#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:২৫
#জুনাইনাহ_তাসনিম
মামাদের এখানে এসেছি ৪ দিন হয়ে গেছে।এই ৪ দিনে এ বাড়ির সবার সাথেই অনেক মজা করেছি শুধু মাত্র একটা মানুষের সাথেই আমার দেখা পর্যন্ত হয়নি।কিন্তু এতে আমার খুব বেশি খারাপ লেগেছে তাও না।কিন্তু হ্যা ওনার কথা মনে পড়ে খুব,একই বাড়িতে থেকেও দেখা হলো না।অন্তত্য একবার দেখা হওয়া উচিত ছিলো মনে হয়।
৩৩.
আজ সকাল থেকে খুব টেনশনে আছি।আমার রেজাল্ট বের হবে দুপুরের পর।অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের রেজাল্ট তাই বেশ টেনশনে আছি।সারা বছর ফাকি দিলেও পরীক্ষার আগের এক মাস তো একটু হলেও পড়াশুনা করেছি।যদি সিজিপিএ খারাপ আসে মা তো আমাকে আছাড় মেরে দেবে একদম।আল্লাহ আল্লাহ করে যাচ্ছি তাই এখন।সকাল থেকে কিছু খাইওনি।আপু,মামি,মামা কতো চেষ্টা করেও আমাকে এক দানা খাবার মুখে তুলাতে পারিনি।এদিকে মারিয়া বার বার কল দিচ্ছে।ও তো আরো বেশি টেনশনে আছে।অবশ্য ও সবসময়ই একটু ওভাররিয়াক্ট করে ফেলে।কিন্তু এইবার আমারও খুব টেনশন হচ্ছে।এসব ভাবতে ভাবতেই ফোনে টুং করে একটা নোটিফিকেশন আসে।ফোন চেক করেই দেখি মেসেজ এসেছে কলেজ থেকে।মেসেজের মধ্যে ঢুকে রেজাল্ট দেখে তো আমি শকড।নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছি না।আমার সিজিপিএ ৩.২৮।আমি তো আনন্দে লাফানো শুরু করলাম।সাথে সাথেই মারিয়ার কল।ওর রেজাল্টও ভালো এসেছে,৩.২৯ হয়েছে ওর।ও বরাবরই আমার থেকে পড়াশুনায় ভালো।তাই এবারও ওর রেজাল্ট আমার থেকে ভালো হয়েছে অবশ্য তা নিয়ে আমার কোন খারাপ লাগা নেই।আমি তো আছি আমার আনন্দে।না পড়েও এতো ভালো রেজাল্ট আর কি চাই??!!আমি তাড়াতাড়ি বাবা আর মা কে কল দিয়ে রেজাল্টটা জানিয়ে দিলাম তারপর ঘর থেকে বের হয়েই মামা,মামি,আপু সবাইকে নিয়ে নাচতে শুরু করলাম।মামা,মামি,আপু কেউই তো কিছু বুঝতে পারছে না।আমি তো মামাকে নিয়ে ঘুরতেই আছি,মামা তো একসময় পড়ে যেতে গেলো।
–আরে আরে কি করছিস মা?পড়ে যাবো তো…
–মামা,মামা,মামা জানো কি হয়েছে??আমি আজকে অনেএএএক হ্যাপি।
–কেন রে মামা কি এমন হলো যে তুই এত্তো হ্যাপি?(মামি জিজ্ঞেস করে)
–হ্যা তাই তো বোন।কি হয়েছে তাতে তুই এতো খুশি?এতো নাচানাচি করছিস।
–আমি অনার্স ফার্স্ট ইয়ার পাশ করে গেছি ৩.২৮ সিজিপিএ নিয়ে।
–হোয়াট?রিয়েলি?(আপুও আনন্দে উত্তেজিত হয়ে ওঠে)
–হ্যা আপু।
–আলহামদুলিল্লাহ সূচী।এ তো অনেক ভালো খবর রে।তাই না অন্তুর মা??
–হ্যা তাই তো।দাড়াও তোমরা আমি মিষ্টি আনি।এতো সুন্দর একটা খবর কি শুকনো মুখে মানায়?সেলিব্রেট করা লাগবে তো।(মামি বলে)
–হ্যা যাও যাও।
মামি মিষ্টি এনে সবাইকে দেই।সবাই আগে আমাকে মিষ্টি মুখ করাতে আসে।আমি এমনিতেই মিষ্টি খুব বেশি পছন্দ করি না কিন্তু আজকে কাউকে নাও বলতে পারছি না।একের পর এক মিষ্টি খেতেই আছি।কিন্তু সবার আনন্দ দেখে আমিও না করলাম না চুপচাপ মিষ্টি গিলতে থাকলাম।
*সন্ধ্যা ৬:৩০টা
–কমলা কমলাআআআআ…(অভ্র ভাই কমলা কমলা বলে চিল্লিয়ে বাড়ি মাথায় তুলছে)
কমলা ছুটতে ছুটতে অভ্র ভাইয়ের ঘরের সামনে গিয়ে দাড়ায়।অভ্র ভাই ওনার ঘরের দরজার এক পাশ খুলে হাতে কফির মগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে চোখ গুলো রসগোল্লার মতো বড় বড়।কমলা অভ্র ভাইকে দেখেয় বুঝে গেলো অভ্র ভাই ক্ষেপে আছে।ওর তো ভয়ে অবস্থা খারাপ।কাপাকাপা গলায় বলে,
–ভাইজান কিছু হয়ছে কি??
–কি দিয়েছিস এটা?(উনি কফির মগটা সামনে এনে বলে)
–কেন ভাইজান?ওইটা তো কফি।
–মিস কমলাআ..সে তো আমিও জানি এটা কফি।কিন্তু এটা কি আমার খাওয়ার কফি?(উনি খুব সুন্দর করে নরম সূরে বলেন।তারপর,)চিনি এতো কম দিছিস কেন?তুই জানিস না আমি মিষ্টি বেশি খায়(অভ্র ভাই এবার ধমক দিয়ে ওঠেন।এতো জোরে চিল্লানি দেন যে কমলা ভয়ে কেঁপে ওঠে)
–ভা ভাইজান আসলে।আসলে..
–আসলে আসলে করছিস কেন?তুই জানিস না আমি কফিতে কয় চামচ চিনি খায় তা?আজ প্রথমবার কফি বানিয়েছিস না কি??
–………..
–কি হলো চুপ করে আছিস কেন?বল
–না ভাইজান।
–তাহলে আজ এরকম হলো কেন??তুই জানিস না পরীক্ষার আগে আমি ডিস্টার্বেন্স একদম পছন্দ করি না।আর ঠিক সেই কাজটাই তুই করলি,খারাপ কফি করে আমার মনোযোগটাই নষ্ট করলি।কেন করলি এমন বল?
–ভাইজান কফি তো আমি করিনি।
–তুই করিসনি মানে?তুই না করলে কে করলো? মা,বড় ভাবি,সূমনা ভাবি কে বল?
–ওনারা কেউই না ভাইজান।
–বা বা বাহ!মজা করছো তুমি আমার সাথেএএ??তুমি না,মা না,ভাবীরা না তাহলে কি ভূতেএ??(উনি আরো বেশি চিল্লিয়ে বলেন)
কমলা কিছু বলার আগেই আমি ওখানে ওনার সামনে গিয়ে বললাম,
–আমি বানিয়েছি।ওকে বকাঝকা করছেন কেন?কতো সুন্দর বাচ্চা একটা মেয়ে মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ে।ওরে এতো বকা দিচ্ছেন কেন?
আমাকে দেখে অভ্র ভাই তো পুরো থ মেরে গেছেন।আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
–কি হলো বকা দিচ্ছেন কেন?কি সমস্যা?
–কফি,কফি..
–কফি কফি করছেন কেন?কি হয়েছে কফিতে?
–চিনি কম।
–কয় দেখি..
আমি ওনার হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে চুমুক দিয়ে এক ঢোক কফি খেলাম।
–ঠিকই তো আছে।আমি চিনি কম খায় তাই সেই হিসাবেই কফিটা বানিয়েছিলাম।আমি তো আর জানতাম না যে আপনি মিষ্টি বেশি খান।যাই হোক,এতো চিল্লাচিল্লি করবেন না।কমলা আবার কফি নতুন করে কফি বানিয়ে নিয়ে আসবে।কমলা যাও নতুন করে কফি আনো।
–না না তার প্রয়োজন নেই।আমি এটাই খেয়ে নেবো।(উনি আমার হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে নেয়)
–এজ ইউ উইশ।
আমি কথাটা বলে ওখান থেকে চলে আসি।আর উনি তো পুরো হা করে দাড়িয়ে আছেন।আমাকে ওখানে উনি হয়তো একদমই আশা করেননি।আমি চলে আসার পর কমলা ও চলে আসছিলো কিন্তু অভ্র ভাই ওকে ডাক দেয়।
–কমলা দাড়া।
–আবার কি হলো ভাইজান?আমি কি আবার কফি বানাই আনবো?
–না তার কোন প্রয়োজন নেয়।আচ্ছা ও কখন এলো?
–ও কেডা ভাইজান?
–আরে ও।আই মিন সূচী।
–ওহ আপা।আপা তো ৫ দিন হয়ছে আইছে।
–কি?৫দিন হয়ে গেছে ও এসেছে?আমাকে কেউ জানায়নি কেন?
–আপনারে কেউ ডিস্টার্ব করলে তো আপনি রাগ করেন।তাই কেউ জানায়নি।আচ্ছা ভাইজান আমি পড়তে বসবো।আমি যাই??
–হুম যা।
কমলা চলে যায়।অভ্র ভাই ঘরের দরজা দিয়ে টেবিলে গিয়ে বসে।তারপর নিজে নিজেই বলে,
–আমার পাখিটা ৫ দিন হয়ে গেলো এসেছে আমি জানতেই পারলাম না!কতোটা মিস করেছি ওকে,ও আমার এতো কাছে থেকেও আমি জানলাম না।ধুর!আচ্ছা আমার পাখিটা আমার জন্যে নিজে হাতে কফি বানিয়েছে?হায়!!!ম্যা মারজাভা।
(উনি বুকে হাত দিয়ে বসে থাকেন।পরে টেবিলের ওপর থেকে কফিটাই চুমুক দিয়েই চোখ মুখ শিটকায়)
–চিনি টা কম।তবে ব্যাপার না।ইসরাক এহসান অভ্র মানিয়ে নেবে।অভ্র তুমি পারবে।তোমাকে পারতেই হবে।আচ্ছা আচ্ছা অনেক হয়েছে এবার পড়তে বসো।কতোদিন পর পাখিটারে দেখলাম মনটাই ভালো হয়ে গেলো।
*রাতে খাওয়ার জন্যে টেবিলে বসলাম।মামি সবাইকে খেতে দিচ্ছিলেন তখনই অভ্র ভাই দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আমার সামনের চেয়ারটাই বসে পড়েন।ওনাকে দেখে এ বাড়ির সবাই হা করে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।উনি একবার ডানে তাকালেন একবার বামে।তারপর চোখ ছোট ছোট করে এক ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করেন,
–কি হয়েছে সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
–অভ্র,তুই?সত্যিই তুই?(অন্তু ভাইয়া চোখ ডলে ডলে জিজ্ঞেস করে)
–সত্যিই আমি মানে?
–তুই এখানে?তুই ঘর থেকে বের হয়েছিস?
–হ্যা হয়েছি।কেন খেতে আসা যাবে না??
–না ন তা কেন।তুমি তো পরীক্ষার আগে বের হও না ভাইয়া তাই আর কি(আপু বলে)
–হ্যা হই না।আজ হয়েছি।যাই হোক এতো কথা বলার সময় নেই।মা খেতে দাও,তাড়াতাড়ি।আমি রুমে যাবো খেয়েই।
মামি তাড়াতাড়ি খেতে দেয় ওনাকে।জনাব খাচ্ছে আর কিছুক্ষন পর পরই আমার দিকে তাকাচ্ছে।আমারও না চাইতেও কেন জানি না ওনার দিকে চোখ চলে যাচ্ছে।বেশ অস্বস্তি লাগছে ওনার ওইভাবে তাকানোতে।এইভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে খাবার খাওয়া যাই নাকি?লোকটা পারেও বটে।
খাওয়া শেষে জনাব আবার নিজের ঘরে গিয়ে ধাম করে দরজা দিয়ে দিলো।ওনার দরজা দিয়ার শব্দ সারা বাড়িতে শোনা গেলো।
*রাত দেড়টা তো মতো বাজে।আমি ঘুমিয়ে গেছি প্রায়,তখনি ফোনে রিং বেজে উঠলো,আননোন নাম্বার চিনতে পারলাম না।কল কেটে গেলো।২য় বার আবার বেজে উঠলো এবার আমি রিসিভ করলাম।
–হ্যালো(ওপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠে কেউ একজন হ্যালো বলে উঠলো)
–কে??
–পাখি আমি।অভ্র।
চলবে……
#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:২৬
#জুনাইনাহ_তাসনিম
–আচ্ছা একটা সিগারেট ধরাবো?
(অভ্র ভাইয়ের কথায় আমি চোখ বড় বড় করে তাকাই।আমাকে ওইভাবে দেখে অভ্র ভাই একটু ভয় পেয়ে গেলো।)
–তুমি মানা করলে খাবো না।আসলে অনেক দিন খাইনি তো।ঘর থেকে না বেরোলে তো আর হয় না।তাই আর কি একটু…প্লিজ(উনি একদম বাচ্চাদের মতো মুখ করে বলেন কথাটা)
–……………(আমি কিছু না বলেই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম)
–ঠিক আছে খাচ্ছি না(বেশ মন খারাপ করেই বলে)
–আচ্ছা খেতে পারেন।
–হ্যা?সত্যি?
আমি হ্যা বোধক ইশারা করলাম।উনি তো খুশিতে নেচে উঠলেন।
–থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ সো মাচ।
উনি সিগারেট হাতে নেন।তারপর পকেট থেকে
ম্যাচ বক্স বের করে সিগারেট ধরান।
–আহ!শান্তি…
ওনার রিয়াকশন দেখে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাই।আমাকে ওইভাবে দেখে উনি কেবলা মার্কা হাসি দেন।
–না মানে অনেক দিন পর তো..
–ডাক্তার হয়েও সিগারেট খান।লজ্জা করে না?জানেন সিগারেট খেলে…(আমার কথা শেষ করতে দিলেন না)
–জানি হেলথের জন্যে ক্ষতিকারক।
–জেনে শুনেও নিজের ক্ষতি করছেন?বাহ!বাহ!বাহ!মানুষ যাদের কাছে শরীর খারাপের জন্যেই যায় তারাই যদি এরকম হয় দেশের যে কি অবস্থা হবে আল্লাহই ভালো জানেন..
–আমি মানছি এটা শরীরের জন্যে খুবই ক্ষতিকারক।কিন্তু এই হেবিটটা তো আজকের না।ডাক্তারি পড়ার আগে থেকেই।
–কবে থেকে শুনি?
–ওই তো ক্লাস সেভেন(উনি কথাটা বলেই জিহবায় কামড় দেন)কলেজ থেকে।কলেজ থেকে খাওয়া শুরু করি আসলে।
–মিথ্যা বলবেন না।সত্যি করে বলেন।
–কলেজ থেকে,সত্যি।
–আবার মিথ্যা?(আমি চোখ গরম করে তাকাই)
–ক্লাস সেভেন(উনি মুখ শুকনো করে বলেন।ওনাকে ওইভাবে দেখে আমার খুব হাসি পাই।কিন্তু হাসিটা কন্ট্রোল করি)
–আচ্ছা যাই হোক,কেন ডাকলেন ছাদে?কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন আমার ঘুম পাচ্ছে।
–স্পেশাল কোন কারন তো নেই।অনেকদিন ছাদে আসা হইনি।ঘরে থেকে বোর হচ্ছিলাম তাই আসলাম।একা একা সময় ভালো কাটতো না তাই তোমাকেও ডাকলাম।
–এর আগে বুঝি একা কখনো আসেননি?সাথে বুঝি সবসময় কেউ না কেউ থাকতোওও?
–না তো।একা আসতাম।
–তাহলে তখন সময় কিভাবে কাটতো?
–আ…।না মানে অন্যসময় তো সারাদিন মানুষের সাথেই থাকি।কিন্তু এই দশ বারোদিন তো ঘর থেকেই বেরোই না তাই আর কি।কারোর সাথে কথা বললে ভালো লাগতো আরকি।
–ওহ।তা কথা বলার জন্যে তো বাড়িতে আরো মানুষ ও ছিলো।আমিই কেন?
–অন্যদের সাথে কথা বলে যেই ভালো লাগাটা কাজ করতো তার থেকে হাজার গুন ভালো লাগা তোমার সাথে কথা বলে লাগে।
(আমরা এই কথাগুলো ছাদে দাড়িয়ে করছিলাম।তখন:-
–হ্যালো(ওপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠে কেউ একজন হ্যালো বলে উঠলো)
–কে??
–পাখি আমি।অভ্র।
–আপনি?এতো রাতে?
–হুম ছাদে আসো।
–হোয়াট?
–হোয়াট হোয়াট?
–হ্যা??
–আই মিন হোয়াট কেন?হোয়াট বলার কারন?
–এতো রাতে ছাদে যাবো কেন?আর আপনি নাম্বারটা কোথায় পেলেন?
–আচ্ছা নাম্বার ম্যানেজ করা কোন ব্যাপার?আমার ভালো লাগছে না তাই ছাদে এসেছি।তুমিও আসো।
–আমি পারবো না।
–কেন?
–আমার ঘুম পাচ্ছে।
–আমি ওতো কিছু জানি না।তুমি আসবা মানে আসবা।এটাই ফাইনাল।
–আর যদি না আসি?
–যদি না আসো তাহলে,উম তাহলে,তাহলে আমি তোমার রুমে চলে যাবো এখন।আর তুমি কিন্তু ভালো করেই জানো আমি সেটা করতে পারি।
–কি?
–জী।এখন তুমি ঠিক করো আসবে কিনা।যদি না আসো দেন ওকে।আমিই আসছি।
–এই না না।প্লিজ আপনি আসবেন না।আসছি আমি।
–এইতো দ্যাটস লাইক আ গুড গার্ল।তাড়াতাড়ি আসো।আই এম ওয়েটিং।
ফোনটা কেটে দিলো।এদিকে আমি রেগে আগুন।
–এই লোকটাকে আমি খেয়েই ফেলবো।অসভ্য,বেয়াদব,সাদা বাদর কোথাকার।ছাদে না গেলে নাকি রুমে চলে আসবে।বেয়াদব একটা।
আমি বসে বসে ওনার নামে খারাপ খারাপ কথা বলছি।তখনই আবার কল এলো সেম নাম্বারটা থেকে।আমি ফোন রিসিভ করলাম।
–আমি কি আসবো??
–কোন দরকার নেই আসছি আমি(রাগ করে ফোনটা কেটে দিলাম)
ওড়নাটা নিয়ে ছাদে চলে গেলাম।আমাকে দেখে জনাব সুন্দর করে দাত বের করে একটা হাসি দিলেন।
–এই তো গুড গার্ল)
বর্তমান:-
–সূচী..
–হুম।
–চাঁদটা সুন্দর না?
–হুম।
–আচ্ছা তুমি কি খুব রাগ করবে আমি যদি সিগারেট খাওয়া বন্ধ না করি তো?
–আমি কেন রাগ করতে যাবো?আজব!আপনি সিগারেট খান বা না খান তাতে আমার কি এসে যাই?
–তোমারই তো এসে যাই।
(আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাই।উনি মুচকি হেসে আবার সিগারেটে টান দেন)
–জানো আমার আরো একটা বাজে অভ্যাস আছে।
–কি সেটা?
–কাউকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলার।এতোটাই ভালোবেসে ফেলার যে তাকে হারালে যেন মরেই যাবো আমি।অনেক বেশিই ভালোবেসে ফেলেছি যে।জানো সেই মানুষটা কে?
–কে?(আমি খুব নরম সূরে জিজ্ঞেস করি)
উনি আমার সিগারবটটা বাম হাতে নিয়ে ডান হাত দিয়ে আমার একটা হাত ধরেন।আমি হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইলে উনি আরো শক্ত করে ধরেন।তারপর আমার দিকে বিভোর হয়ে তাকিয়ে বলেন,
–অনেক বেশিই ভালোবাসি তোমায় সূচী।আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ।বলো না,যাবে না তো ছেড়ে..
–অভ্র ভাই..(আমি হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছি।আমি খুব বেশি কমফোরটেবল হতে পারছি না।এর আগে তো এরকম হয়নি।উনিই প্রথম আমার হাত ধরেছেন তাই একটু অন্যরকমই লাগে)
–কি হলো বলো না?যাবে না তো ছেড়ে?কবে যে তোমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি টেরই পাইনি জানো।(ওনার কথার মাঝেই আমি ওনার চোখের দিকে তাকাই)আমি কোনদিনই লাভ এট ফার্স্ট সাইটে বিলিভ করতাম না।খুবই চাইল্ডিস আর ফানি মনে হতো ব্যাপারটা।কিন্তু তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর বুঝলাম,আই ওয়াজ রং।এভাবেও কাউকে ভালোবাসা যাই।এতোটাই ভালোবাসা যাই যে তাকে হারানোর কথা ভাবলেই বুকটা কেঁপে ওঠে।অনেক ভালোবাসি তোমাকে,অনেক।
উনি আস্তে আস্তে আমার ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট এগিয়ে আনেন।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি।তখনই,
–আহ!(অভ্র ভাই হাত ঝাড়া দিতে থাকেন।আমি ওনার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি সিগারেটটা মাটিতে ফেলে দিয়েছেন,পুড়ে গেছে ওটা।ওনার হাতে থাকা সিগারেটটা পুড়ে ছ্যাকা খেয়েই উনি আহ করে ওঠেন তাহলে।)
অভ্র ভাই হাত ঝাড়া দিতে দিতে আমার দিকে তাকায়।আর আমি ওখান থেকে এক দৌড় দিয়ে নিজের ঘরে চলে আসি।ঘরে এসেই তখনকার কথা মনে করি।উনি আমার দিকে নিজের ঠোঁটটা এগিয়ে আনছেন।তখন যদি সিগারেটে ওনার হাত না পুড়তো তাহলে…না না আমি আর ভাবতে পারছি না তাহলে কি হতো।তবে যেটা হতে যাচ্ছিলো সেটা ঠিক না।
*সকালে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছি,সবাই আছে কিন্তু সাদা বাদরটা আর আজকে আসেনি।কমলা ওনার খাবার নিয়ে গেলো।অবশ্য আসেনি ভালো হয়েছে।উনি আসলে আমার আবার কাল রাতের কথা মনে পড়তো আর আমি আনকামফোরটেবল ফিল করতাম।তাই রুমে আছে ভালো হয়েছে।
আজ সারাদিন উনি আর ঘর থেকেই বেরোলেন না,তাই আর দেখাও হলো না।রাতে শুয়েছি কেবল হটাত ফোন বেজে উঠলো।আমি রিসিভ করলাম,
–ছাদে আসবে একবার??
–হুম??(আমি নার্ভাস হয়ে গেলাম)
–ভয় নেই।কাল রাতের মতো কিছু করতে যাবো না।তুমি রিলাক্সে আসতে পারো।
–আচ্ছা।
৩৪.
আপুদের বাড়িতে এক সপ্তাহ হয়ে গেছে এসেছি।গত তিন রাত আমি আর অভ্র ভাই ছাদে দেখা করেছি সবাইকে লুকিয়ে।প্রথমদিন উনি একটু অন্যরকম হয়ে গেলেও পরের দুই দিন উনি খুব স্বাভাবিক ছিলেন।যেই অভ্র ভাইকে এতোদিন চিনেছি ঠিক তেমন।তাই পরের দুই দিন আর আমার একটুও আনকমফোরটেবল ফিল হইনি।প্রায় ৩০-৪০ মিনিট মতো গল্প করতাম।উনি মাঝে মাঝে ফাজলামি করতেন আমি রেগে যেতাম।
আপুর রেজাল্ট বের হয়েছে আজ।আপু ও ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে ফাইনাল ইয়ারে উঠলো।কয়েকদিনের মধ্যেই আবার আমাদের ক্লাস শুরু হবে তাই আমাকে এবার বাসায় যেতে হবে।আর ওদিকে মামা-বাবা,নানী একা আছে।সৌরভেরও পড়াশুনা আছে আর থাকা হবে না।বেশ খারাপ লাগছে আমার।এই কয়দিন খুব মজা করেছি এ বাড়ির সবার সাথে।দেখতে দেখতে যাওয়ার সময় হয়ে এলো।আমি আর সৌরভ সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলাম।সবাই আমাদের বিদায় দিতে এলেও অভ্র ভাই এলো না।কেন জানি না একটু খারাপ লাগলো।বাইরে এসে বেলকনিতেও তাকালাম কিন্তু ওনাকে পেলাম না।গাড়িতে উঠে বসলাম।কিছুক্ষন পরেই কল এলো একটা নাম্বার থেকে,বেশ চেনা লাগলো নাম্বারটা।আমি তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করলাম।
–হ্যালো পাখি আমার হাতে মাত্র এক মিনিট সময়য়।তাই যা বলছি শোন চুপচাপ।আমার পরীক্ষার আর ১১ দিন বাকি তাই আর কথা হবে না বুঝলে?একেবারে পরীক্ষা শেষে যোগাযোগ করবো।এই কয়দিন আমার ফোন অফ থাকবে।তুমিও তো সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছো।মা বলছিলো তোমার রেজাল্ট নাকি ৩.২৮ হয়েছে।তুমি আমাকে আগে বলোনি কেন এটা?শোন এই রেজাল্ট কিন্তু একদমই চলবে না।৩.৫০+ থাকা লাগবে তা না হলে মার খাবা।সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছো প্রথম থেকেই সিনসিয়ার হও,নো মোর ফাকি।গট ইট?আচ্ছা সাবধানে যাবে,নিজের খেয়াল রাখবে।খাওয়া দাওয়া করবে ঠিক মতো,আর রাগটা একটু কম করবে।আর আই লাভ ইউ।আমার এক মিনিট শেষ,টাটা।
উনি গড়গড় করে মুখস্ত পড়ার মতো কথাগুলো বলেই কলটা কেটে দিলেন।
চলবে……
(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন.কোন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন
ধন্যবাদ)