তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-৩১+৩২

0
996

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৩১
#জুনাইনাহ_তাসনিম

উনি হাটতে থাকে।চারিপাশে বেশ গাছগাছালি।উনি তার মধ্য দিয়ে হেটে যাচ্ছে,আমিও ওনার পিছু পিছু এরকম একটা জায়াগায় এই সময়ে আমাকে নিয়ে এলেন।কেমন একটা লাগছে!কিন্তু উনি আর যাই হোক উল্টা পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করবে না,এটুকু বিশ্বাস আমার আছে ওনার প্রতি।
–আচ্ছা কোথায় যাচ্ছি বলেন তো?এতো জংগল চারিদিকে।
–আরে আসোই না।সারপ্রাইজ আছে বললাম তো।তোমার ভালো লাগবে দেখো।

আমি বিরক্তি নিয়ে ওনার সাথে হাটতে থাকি।দু মিনিট মতো পর আমরা থেমে যায়।আমি তো অনেকটা ভয়ও পাই।কারন জংগল শেষে একটা খাদ।নিচের দিকে তাকিয়েই তো ভয়ে আমার বুক কেঁপে ওঠে।অনেকটা গভীর খাদ আর বেশ বড়,সামনে খোলা আকাশ।এখান থেকে যদি কেউ পড়ে বেঁচে ফিরা কঠিন।সকাল হবে আর একটু পরেই।তাই ভালোই বোঝা যাচ্ছে খাদের গভীরতা, তবে ধারে কাছে গিয়ে পা পিছলে পড়লেই শেষ সব।আমার তো ভেবেই বুকটা কেঁপে উঠছে বারবার।এদিকে মনের মধ্যে চলছে হাজারটা প্রশ্ন।
–অভ্র ভাই আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন?আমাকে আবার মেরে টেরে ফেলবেন না তো?কিন্তু উনি তো আমাকে ভালোনাসেন।তাহলে মেরে ফেলবে কেন??না না মারবে না।কিন্তু যদি আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়?তখন?নায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া………

আমি চিল্লিয়ে উঠি।কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে।
–কি হলো সূচী??কি হলো কি হলো?তুমি এভাবে চিল্লাছো কেন?(অভ্র উতলা হয়ে জিজ্ঞেস করে বারবার)
–আ আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন??(আমি চোখ খুলে জিজ্ঞেস করি)
–এখানে নিয়ে এলাম কেন জানতে চাও?ওই দেখো..
(উনি হাত বাড়িয়ে খোলা আকাশে দিয়ে তাকায়।আমিও তাকায় কিন্তু কিছুই নেই।আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।এ তো শুধু আকাশ,সূর্যও ওঠেনি।আমি আবার ওনার দিকে তাকাই।উনি এখনো আকাশের দিকেই তাকিয়ে,মুখে সুন্দর হাসি।আমি আবার তাকাই ঠিক তখনই আমি জীবনের সব থেকে সুন্দর মুহুর্তগুলোর একটি দেখি।সূর্যোদয় হচ্ছে আকাশে আর আকাশ জুড়ে পাখির মেলা,পাখির কিচিরমিচির শব্দে ভরে চারিদিক।আগেও সূর্য উঠতে দেখেছি তবে এই প্রথমবার সূর্যোদয় দেখে আমি চোখ ফেরাতে পারলাম না।সূর্যটা যেন একদম আমার হাতের কাছেই,হাত বাড়ালেই ছুয়ে ফেলা যাবে।আমি হা করে তাকিয়ে আছি।এত্তো সুন্দর একটা দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।আমি হা করে তাকিয়ে আছি হটাত অভ্র ভাই আমার হাত ধরেন।কিছুক্ষন পর যখন আমি বুঝতে পারি ব্যাপারটা আমি ওনার দিকে তাকাই।উনি খুবই শান্ত,স্নিগ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে।
–শুভ জন্মদিন প্রিয়তমা।(উনি মুচকি হেসে বলেন)
আমি যে কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।আমার কিছু বলার অপেক্ষা না করেই উনি আবার বলেন,
–আমি চেয়েছিলাম তোমাকে খুব কাছ থেকে নতুন একটা দিন শুরু হতে দেখাবো।জানো আমি এখানে প্রায় আসতাম শুধুমাত্র এই কিছুক্ষনের অপরুপ মোমেন্টটা ফিল করার জন্যে।তবে আমি না কোনদিন কাউকে সাথে নিয়ে আসিনি,বলতে পারো একটু হিংসামো করেই।কারন আমি চাইনি আমার এই মোমেন্টের ভাগিদার আর কেউ হোক।তুমিই প্রথম।যার সাথে আমি আমার লাইফের খুব স্পেশাল এই মোমেন্টটা শেয়ার করলাম।
–কেন?(আমি অবাক হয়ে আস্তে করে জিজ্ঞেস করি)
–কারন তুমি আমার সেই মানুষটা যার সাথে আমি আমার সবকিছু হাসিমুখে শেয়ার করতে পারি।(উনি মুচকি হাসেন)আচ্ছা এবার বাসায় চলো।সকাল হয়ে গেছে তো।ফুপি ফুপা যদি….
–শীট!আমি তো ভুলেই গেছিলাম।বাসায় চলুন আগে।

আমি ওনার হাত ধরে টানতে টানতে বাইক পর্যন্ত নিয়ে আসি।আমি ভয়ে ভয়ে আসলেও উনি ব্যাপারটাতে অনেক মজা পান।
–উঠুন উঠুন।তাড়াতাড়ি চলুন(আমি নার্ভাস হয়ে বলি)
–আমার না খুব ঘুম পাচ্ছে।আমি না এখন বাইক চালাতে পারবো না।
–মানে।
–মানে তুমি চালাও।আমি পিছনে তোমাকে জড়িয়ে ধরে বসছি।
–হোয়াট?ইয়ারকি হচ্ছে??চলুন(আমি চিল্লিয়ে ধমক দিয়ে উঠি)
–আরে আরে রাগ করছো কেন।যাচ্ছি তো,ওঠো..

বাসার খুব কাছাকাছি চলে এসেছি।সকাল হয়ে গেছে,বাসায় হয়তো এতোক্ষন জেনেও গেছে সবাই যে আমি বাসায় নেই।ভয়ে তো আমার অবস্থা খারাপ।মা তো আজ মেরেই ফেলবে।আমি কেন যে এসেছিলাম ওনার সাথে।না আসাই ভালো ছিলো আমার।এসবই ভাবছিলাম এর মাঝেই উনি বললেন,
–তোমার বাসায় এসে গেছি।
–হুম?
–পৌছে গেছি বাসায়।নামো
(আমি নেমে দাড়াই।বাসার দিকে তাকিয়েই আমার ভয় আরো বেড়ে যাই)
–আচ্ছা সূচী তুমি যাও তাহলে(মুচকি হেসে বলেন)

আমি আর কোন কথা না বলেই বাসার ভিতর ঢুকি কিন্তু দরজার সামনে এসেই আমার পা থেমে যাই।হাত পা কাঁপছে,বুক কাঁপছে।আমি কলিং বেল বাজাতে গিয়েও বাজাতে পারলাম না।বার বার কলিং বেলে হাত দিয়েও হাত সরিয়ে নিচ্ছি বার।কখন যে অভ্র ভাই এসে দাড়িয়েছে পিছনে আমি খেয়ালই করিনি।উনি পিছন থেকেই বলে ওঠেন,
–সরো।
–আপনি?
–সরো।বেল টা বাজাতে দাও।

উনি আমাকে সরিয়ে বেল বাজায়।মা এসে দরজা খোলে।মা কে দেখে আমি তো শেষ ভয়ে।আমাকে তো এইবার আর আস্ত রাখবে না।কি অদ্ভুত ব্যাপার মা আমাকে কিছুই বললো না।অভ্র ভাইকে জড়িয়ে ধরে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করছে।তারপর ওনাকে নিয়ে ভিতরে যাচ্ছে আর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
–হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।খাবার ঠান্ডা হচ্ছে।

মার এতো স্বাভাবিক আচারনে আমি তো শকড।যেন কিচ্ছু হয়নি।আমি ভিতরে ঢুকে দেখি বাবা আর সৌরভও গল্প করছে ওনার সাথে হেসে হেসে।আমাকে দেখে বাবাও খুব স্বাভাবিক ভাবে বলে,
–যাও যাও উপরে যাও আগে।হাতমুখ ধুয়ে আসো।আর অভ্র বাবা তুমিও ফ্রেশ হয়ে নাও।
–জী ফুপা।

আমি তো অবাক।কিছুই বুঝতে পারছি না,আমি আর এখানে না দাড়িয়ে তাই তাই তাড়াতাড়ি উপরে চলে যাই।নিজের রুমে এসে ভাবতে থাকি মা বাবার এই আচারনের কথা।আমি যে বাসায় ছিলাম না এটা তো মা বাবা জানে তাও এতো স্বাভাবিক।আমার মাথাই তো কিছুই ঢুকছে না।এসব ভেবে আরো মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যাচ্ছে আমার।তাই মারিয়া কে কল দিলাম
–হ্যালো মারু..
আমি মারিয়াকে সব বললাম।ওউ তো শকড।সকাল সকাল এরকম কথা শুনে ওউ আমার মতো কনফিউজড যে হচ্ছেটা কি।মারিয়ার সাথে কথা বলছিলাম তার মাঝেই অভ্র ভাই আমার রুমে ঢুকে পড়ে।ওনাকে দেখে আমি তো ভয় পেয়ে যাই।বাসায় মা বাবা আর উনি এইভাবে আমার রুমে ঢুকছে যেন নিজের রুম।আমি তাড়াতাড়ি মোবাইল রেখে দিই।
–এই এই আপনি এখানে কি করছেন?আমার রুমে এভাবে ঢুকে গেলেন কেন?
–টাওয়াল দাও..

উনি আমার হাত থেকে টাওয়াল কেড়ে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।আমি বোকার মতো দাড়িয়ে থাকি।তখনি আপু আসে আমার ঘরে।আপুকে দেখে আমি আবার শকড।
–আপু তুই এখানে?
–একি সূচী তুই এখনো রেডি হসনি?তুইও না।তোরে নিয়ে আর পারা যায় না।
–আপু তুই এখানে কি করছিস?এতো সকালে।
–চুপ থাক তো তুই।চল তাড়াতাড়ি রেডি হতে হবে।

আপু আমাকে টানতে টানতে নিজের রুমে নিয়ে যায় তারপর একটা শাড়ির বাক্স থেকে গোলাপি রং এর শাড়ি বের করে আমার গায়ে ধরে।
–বাহ!খুব মানাবে তোকে
(আপুর বিহেভিয়ার আমার মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।হচ্ছে টা কি এসব?আপু এতো সকাল সকাল এই বাড়িতে আবার আমাকে শাড়ি পরাতে যাচ্ছে।কিন্তু কেন?)
–আপু কি হচ্ছে এসব?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
–চুপচাপ বসে থাক।এতো কথা বলিস কেন বল তো?

আপু আমাকে শাড়ি,হালকা গহনা আর হালকা সাজগোজ করিয়ে দিলো।কিন্তু আমার মাথাই ঢুকছে না কিছুই।আমি এতোক্ষন আপুর বকা খেয়ে চুপ থাকলেও এবার রাগ করে উঠলাম।
–আপু।আমার কিন্তু সত্যিই এবার মেজাজ খারাপ হচ্ছে।কি হচ্ছে বলবি তো।
–সবুর করো,সবুর করো।সবুরে মেওয়া ফলে(আপু চোখ মেরে বলে)
আপুর কান্ড দেখে আমি বোকা বনে যাই।তারপর আপু আমাকে বলে,
–চল
–কোথায়?
–নিচে।সবাই অপেক্ষা করছে তো।
–সবাই??!(আমি খুব অবাক হয়ে বলি)
–হুম সবাই।

আপু আমাকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছে।আমি ড্রয়িংরুমে তাকিয়েই তো আবার শকড।আজকে আমি শক খেতে খেতে মরে যাবো হয়তো।নিচে মামা-মামি আর পুরো পরিবার বসে।সবাই চা-নাস্তা খাচ্ছে।মামাদের দেখে আমি চোখ বড়বড় করে ভয় ভয় মুখ নিয়ে আপুর দিকে তাকাই।আপু মুচকি হেসে বলে,
–ছোটবেলার পুতুল খেলার মতোন সত্যি সত্যিই তো আমার জা হয়ে যাচ্ছিস সূচী।

আপুর কথা শুনে আমি কি রিয়াক্ট করবো বুঝতে পারছি না।ওদিকে আমাকে দেখে স্নিগ্ধা ভাবি উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।তারপর আপু আর স্নিগ্ধা ভাবি আমাকে নিয়ে গিয়ে মামা-মামি,নানি আর সবার সামনে একটা চেয়ারে বসায়।অভ্র ভাইও আছে ওখানে পাঞ্জাবি টাঞ্জাবি পরে নতুন বর সেজে আছে।আমাকে দেখে মামা বলে,
–আগে ব্রেকফাস্ট করবে নাকি আমাদের প্রশ্নের উত্তর দেবে?

–ও আবার কি বলবে?আমি যা বলবো তাই হবে।মেয়ে দেখতে এসেছি,আমরা যা চাইবো ওকে তাই করতে হবে(নানি বলে)
–হ্যা ঠিকই তো।মা আপনিই প্রশ্ন করেন আগে(মামি বলে)

–তা মেয়ে তোমার নাম কি?(নানি আমার দিকে গম্ভীর হয়ে বলেন।আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না হচ্ছে টা কি)কি হলো?কথা বলতে পারো না নাকি?ও খোকা এ কি মেয়ে দেখতে আসলাম রে?মেয়ে তো কথায় কয় না।(নানি মামাকে বলেন)

–আহ মা!মেয়েটাকে ওইভাবে জিজ্ঞেস করলে ও তো ভয় পেয়ে যাবে।তুমি থামো আমি জিজ্ঞেস করছি।মা নাম কি তোমার?(মামা জিজ্ঞেস করে)

–মামা তুমি আমার নাম জিজ্ঞেস করছো কেন?তুমি তো আমার নাম জানো।(আমি বোকার মতো তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি)

–সূচী কি করছিস কি?ওনারা তোকে দেখতে এসেছে।ভদ্র ভাবে থাক আর যা যা বলে চুপচাপ উত্তর দে(আপু আমাকে চিমটি কেটে কানের কাছে এসে বলে ফিসফিসিয়ে)

–কিন্তু আপু

–চুপ।চুপ কর(আমি চোখ গরম করে বলে)

–মা,বলো তোমার নাম কি?(মামি জিজ্ঞেস করে)

–জী,জী আমি তাসনুভা আমিন সূচী।

–পড়াশুনা কতদূর?

–অ অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।

–তা পড়ে পাশ করেছো তো না নকল করে গা?(নানি জিজ্ঞেস করে ওঠে মাঝ থেকে)

–কি?

–মা!কি বলছো এসব?(মামা বলে)

–কি বলছি হ্যা?আমার নাতির জন্যে মেয়ে দেখতে এসেছি আর ভালো মতো প্রশ্ন করবো না?আমার ছোট নাতি হলো লাখে এক।যে সে মেয়ের সাথে তো আর বিয়ে দিতে পারিনা।আমাকে প্রশ্ন করতে দে।তো বলো মেয়ে রান্নাবান্না জানো?

-……(আমি চুপচাপ রইলাম)

–কি হলো বলো?

–জী টুকটাক।

–কোরআন পড়তে জানো?

–জী(আমি মাথা নাড়িয়ে সাড়া দিলাম)

–একটু হেটে দেখাও তো।

–হোয়াট?

–এই মেয়ে ইংরেজি দেখাবা না আমকে।হেটে দেখাও।(নানি ধমক দিয়ে ওঠে)

–সূচী।চুপচাপ হেটে দেখা।যা বলে শোন(আপু বলে)

আমি উঠে হেটে দেখাই।তারপর আবার এসে বসি।মামি আমার পাশে এসে আমার হাতটা ধরে বলে,
–আমার ছোট ছেলেটাকে তোর হাতে তুলে দিতে এসেছি মা।আগলে রাখিস কিন্তু।মনি,ভাই আপনাদের মেয়েকে আমাদের খুব পছন্দ।আমার অভ্রর জন্যে এর থেকে ভালো মেয়ে আর পাবো না কোথাও।
(আমি অভ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম। ওমা!উনি লজ্জা পাচ্ছেন।আর মা তো খুশিতে কেঁদে ফেলেছে।আপু সবাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে।আমাকেও খাইয়ে দিলো।দেখতে দেখতে কয়েক মিনিটে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো)

প্রশ্ন উত্তর শেষ করে সবাই খেতে গেলেন আর আমি চলে এলাম উপরে।আমি বিছানায় বসে মাথাই হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি যে হলো টা কি!আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল।আমার বিয়ে!

চলবে……

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৩২
#জুনাইনাহ_তাসনিম

ঘরের মধ্যে পাইচারি করছি আর একটা কথাই ভাবছি যে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো।তাও আবার অভ্র ভাইয়ের সাথে।কিন্তু বাসার লোক হটাত এতোকিছু করে বসলো,আমি আবার স্বপ্ন দেখছি না তো?!এতোকিছু ভেবেই তো আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছে।আমি ঘরের মধ্যে মাথা নিচু করে এসবই ভাবছিলাম আর বিড়বিড় করছিলাম হটাত সামনে কেউ যেন চলে এলো আর আমি ধাক্কা খেয়ে সোজা মাটিতে গিয়ে পড়লাম।
–উহ মা গো!কে রে?

(মাটিতে পড়েই হাতের কনুইয়ে ব্যাথা পেলাম আর বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করি।কিন্তু সামনে তাকিয়ে আর কিছু বললাম না।অভ্র ভাই হাত বাড়িয়ে দিলেন আমাকে উঠানোর জন্যে।কিন্তু আমি উঠলাম না ওনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকলাম)
–কি হলো হাতটা ধরো।(আমি ওনার হাত ধরে উঠে
দাড়াই)তারপর কিছু বলো পাখি।

–কি বলবো?(আমি নাক শিটকে বলি)

–কি বলবা মানে?তোমার ফিলিংসটা বলো।এই যে বাড়ির সবাই আমাদের বিয়ে ঠিক করে দিলো।তোমার ভালো লাগছে না?

–এক্সাক্টলি আমি ঠিক এটাই বুঝতে পারছিলাম না এতোক্ষন।সবাই রাজি হয়ে গেল কিভাবে?আমার মাথাই তো কিচ্ছু ঢুকছে না।

–তোমার এই পিচ্চি মাথায় ঢুকবেও না।(উনি আমার কপালে চাটি মেরে বলেন।)

–আউচ!মারলেন কেন?(আমি কপালে হাত দিয়ে বলি)

–কফি খেতে যায়?তোমার যতো প্রশ্ন আছে ওখানেই না হয় তোমার উত্তর দেবো।

–কফি?আর এখন?

–আজ আবার চলে যেতে হবে।স্যারকে অনেক রিকুয়েস্ট করে একদিনের ছুটি নিয়েছি।প্লিজ..

–ওকে।আমি চেঞ্জ করে আসছি

–এই না না।চেঞ্জ করা লাগবে না।শাড়িতেই থাকো,সুন্দর লাগছে।হিজাবটা পরে নাও ওতেই হবে।

আমি হিজাব পরে নিলাম।তারপর বাসার সবার পারমিশন নিয়ে অভ্র ভাইয়ের সাথে কফি খাওয়ার জন্যে বের হলাম।উনি গাড়ি চালাচ্ছেন আমি পাশের সীটে বসে।সফট মিউজিক বাজছে গাড়িতে বেশ সুন্দর একটা এনভাইরোনমেন্ট।উনিও গানের সাথে সাথে গুনগুন করছিলেন।হটাত উনি গান থামিয়ে বলেন,
–আচ্ছা সূচী এজ আ জিএফ বিএফ এটা আমাদের ফার্স্ট ডেইট বলো?
–জিএফ বিএফ?!(আমি বেশ অবাক হয়)
–কেন?আমরা জিএফ বিএফ না?
–আজব তো!জিএফ বিএফ কবে থেকে হলাম আমরা?(বিরক্ত হয়ে বলি)
–আচ্ছা বাবা জিএফ বিএফ না হয় ফিয়নসে তো নাকি?এটা তো অস্বীকার করতে পারবে না।

২০ মিনিটের মধ্যে পৌছে গেলাম ক্যাফেতে।দুজনের জন্যে দুটো ক্যাপিচিনো,চকলেট মুজ কেক আর চিকেন স্যান্ডুইচ অর্ডার দিলেন অভ্র ভাই।সকালে এমনিও দুজনের কিছু খাওয়া হয়নি।তাই ক্ষুধাও পেয়েছে খুব।অর্ডার দিয়ে এসে উনি বসলেন আমার সামনে।উনি কিছু বলবার আগেই আমি প্রশ্ন করা শুরু করে দিলাম।
–আমি আপনার সাথে সকাল বেলা বাসায় আসলাম কেউ কিছু বললো না কেন?মামা মামি আর পুরো ফ্যামিলি আবার আমাদের বিয়ের কথা বলতে এলো।বিয়েও ঠিক করে ফেললো।কি হচ্ছে এসব?আমি তো…
–সূচী সূচী সূচী..ব্রেক লাগাও কথায়।বাপ রে ননস্টপ কথা বলেই যাচ্ছো।
–না না আপনি আগে সব উত্তর দেন।
–খাবার আসুক তারপর বলি?
–না না না..
–ওকে বাবা ওকে।তোমাকে আমার ভালো লাগে এই কথা আমাদের দুই ফ্যামিলি অনেক আগে থেকেই জানে।
–আগে থেকে জানে মানে?কবে থেকে?
–আকাশ ভাই আর সূমনা ভাবির বিয়ের সময় থেকেই দাদি,আমার দুই ভাই,ভাবি,তোমার বোন জানতো।
–হোয়াট?
–হুম।আর আমার মা বাবা এবং ফুপি ফুপা জানে তুমি যখন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে যাও তখন।
–মানে টা কি?(আমি চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করি)
–প্রথম যেদিন আমরা ছাদে দেখা করি ওইদিন মা তোমাকে ছাদে যেতে দেখে ফেলে।মা তোমার পিছু নিয়েছিলো সেদিন তুমি টেরও পাওনি।তোমার পিছু নিতে নিতে একটা সময় মা আমাদের দুজনকে দেখে ফেলে ছাদে।মা ওই মুহুর্তে আমার ঘরে চলে যায়।তোমার সাথে কথা বলা শেষ করে যখন রুমে যাই দেখি মা বিছানায় বসে।আমি তো বেশ ভয় পেয়ে গেছিলাম।কিন্তু মা খুব স্বাভাবিক ভাবেই তোমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে।আমিও কোন কিছু না ভেবেই বলে দিলাম আমার মনের কথা।তারপর মা ওটা বাবাকে বললো আর বাবা তোমার মা কে।
মানে ফুপিকে।আর সকালের ব্যাপারটা হলো আমি কাল রাতেই বাসায় জানিয়ে দিই যে আমি ঢাকায় আসছি ওনারা যেন তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়।বাবা মা সেই কথা অনুযায়ী ফুপি ফুপাকে রাতেই সব জানিয়ে দেয়।তাই সকাল বেলা ফুপি তোমাকে বাইরে থেকে আসতে দেখেও কোন রিয়াক্ট করেনি।বুঝলে ম্যাডাম?এই তো খাবারও এসে গেছে।উম!প্রচন্ড খুদা লেগেছে।

(উনি খাবার নিয়ে খেতে শুরু করে দিলেন।আর আমি ওনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।সবাই তার মানে সবকিছুই জানতো।জানতাম না শুধু আমিই?!সবাই কি না কি ভেবেছে আল্লাহই ভালো জানেন!আমি আর উনি প্রেম করতাম এটাই হয়তো জানে।কিন্তু আমি তো প্রেম করতাম না।ধুর ছাই!)
–কি হলো কি ভাবছো?খাও(উনি খেতে খেতে বলেন)
–হুম।
আমিও খেতে শুরু করি।আর ভাবতে থাকি বাসার লোক এতোদিন সব জেনেও আমাকে কিছু বুঝতে দিলো না!

*খাওয়া শেষে ক্যাফে থেকে বের হবো সেই সময়ে ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হলো।উনি আমাকে হাত ধরে তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে এনে গাড়ির দরজা খুলে দিলেন।আমি উঠে বসলাম।উনিও উঠে বসলেন।গাড়ি ড্রাইভ করছে বাইরে ঝিরঝির বৃষ্টি।আমার এই ওয়েদারটা কেন জানি না খুব ভালো লাগে।আই থিংক সবারই ভালো লাগে।কিন্তু এই ঝিরঝির বৃষ্টিতে বাইরে ভেজা ঘাসের ওপর হাটতে ভালো লাগে।আমি মুখ শুকনো ঠোঁট উল্টে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছি।হটাত অভ্র ভাই বলে ওঠে,
–পাখি বৃষ্টিতে ভেজা ঘাসের ওপর হাটবে?
(আমি ওনার কথা শুনে চোখমুখে এক্সাইটমেন্ট নিয়ে তাকাই)
–কি হলো হাটবে?যাবে বাইরে?
–হ্যায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
–তো দেরি কিসের?চলো…..

উনি গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ে আর আমিও।পাশেই পার্ক ছিলো,আমি তো দৌড়ে পার্কে ঢুকে নাচতে শুরু করেছি।উনিও আমার পিছু পিছু এসে গেছেন।আমাকে ওইভাবে আনন্দ করতে দেখে পকেট থেকে মোবাইল বের করে ভিডিও শুরু করেছে।আমি মজা করতে করতে খেয়াল করলাম উনি আমার দিকে মোবাইল ধরে আছেন।আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করি,
–কি করছেন?
(উনি তাড়াতাড়ি মোবাইল নামিয়ে ফেলেন হাত থেকে)
— না না কিছু না।
–কিছু তো বটেই।সত্যি করে বলুন কি করছিলেন।
–সেলফি তুলছিলাম।
–সেলফি?কয় দেখি?
–তোমাকে কেন দেখাবো?
–কেন দেখাবেন না?আমি না আপনার হবু বউ!
–হ্যা?(উনি হেসে জিজ্ঞেস করেন)

(কথাটা বলেই তো আমি লজ্জাই পড়ে যাই।কি বলে ফেললাম এটা আমি?!আমি তো লজ্জা পেয়ে যাই খুব।নিজের ওপর বেশ রাগও হয় আমার।মুখ দিয়ে কি বের হয়ে গেলো এটা আর কেনোই বা বের হলো?আমি কি তবে সত্যিই ওনাকে সত্যি কারের ভালোবেসে ফেললাম।আমার ভালো লাগাটা কি তবে অন্য কোন ফিনিংসে রুপ নিলো?কিন্তু এখন যেটা হলো সেটা ঠিক হলো না।উনি তো এবার খুব মজা নেবেন।ছি ছি!আমি তো ভেবেই লজ্জাই শেষ হয়ে যাচ্ছি)

–থাক থাক লজ্জা পাওয়া লাগবে না।আমি এটা নিয়ে তোমাকে লেগ পুল করবো না।সো চিল বেবি।

–ডিন্ট কল মে বেবি।আমার খুব ইরিটেট লাগে এই বেবি ডাকটা শুনলে।

–ওকে পিচ্চি।

–এই আমকে পিচ্চিও বলবেন না।আমি কি পিচ্চি নাকি যে পিচ্চি বলেন?

–হুম তুমি তো পিচ্চিই।তুমি আমার পিচ্চি একটা বউ।মানে এখনো হওনি তবে খুব তাড়াতাড়িই হবে ইনশাআল্লাহ।

–উহুউউহুহু আমি পিচ্চি না।আমার ভালো লাগে না এই পিচ্চি পিচ্চি শুনতে।আমি কিন্তু ওয়ার্ন করছি আমাকে নেক্সট টাইম আর পিচ্চি বলে ডাকবেন না।আমি কিন্তু তখন খুব রেগে যাবো।আর আমি রেগে গেলেই আইস ললিইইই(আমি ললি বলে চিল্লিয়ে উঠি)

–তুমি রেগে গেলেই আইস ললি?!মানে?(উনি বেশ অবাক হয়ে বলেন)

–আরে আমি আইস ললি হবো কেন?আমি আইস ললি খাবো।ওই যে…(আমি হাত বাড়িয়ে গাছের নিচে হাতে একটা বাক্স নিয়ে আইস ললি দাড়িয়ে থাকা একটা লোককে দেখায়।)

–নো।তুমি ওই আইস বার খেতে দেবো না।

–কেন?

–সূচী ওগুলো আনহাইজেনিক হয় অনেক।কোথাকার না কোথাকার পানি দিয়ে,নোংরা হাতে বানাই তার ঠিক নেই।হ্যা আমিও রোড সাইড খাবার খাই কিন্তু এসব না পাখি।

–না না না।আমি খাবো।ওটাই খাবো।ওগুলো খুব ভালো।একদম আনহাইজেনিক হয় না।সত্যি।

–সূচী।

–উহুহুহু!(আমি নাকি কান্না শুরু করি)

–আচ্ছা আচ্ছা বাবা।আর কান্নাকাটি করা লাগবে না।চলো..

(আমি দৌড়ে ওই লোকের কাছে যায়)
–মামা একটা লাল আইস ললি দেন আর একটা সবুজও দেবেন।
(লোকটা আমাকে দুইটা আইস ললি দেয়।আমি দুই হাতে নিয়ে খেতে থাকি।)
–আপনি একটা খাবেন?অনেক মজা(আমি অভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলি)
–নো থ্যাংকস।মামা কতো?
–১০টাকা।

অভ্র ভাই টাকা দেয় মানিব্যাগ থেকে।তারপর আমরা দুজন হাটতে থাকি।আমি তো আইস ললি এঞ্জয় করছি আর উনি আমাকে ওইভাবে আনন্দ করাটা।আইস ললি খেতে খেতেই মাঠের এক কোনে চোখ গেলো,কিছু বাচ্চা ছেলে ফুটবল খেলছে।বৃষ্টির মধ্যে বাচ্চাগুলো বেশ মজা করছে।ওদের দেখে খুব ইচ্ছে হলো ওদের এই সুন্দর মুহুর্তটা ক্যামেরাবন্দি করে রাখি।কিন্তু খেয়াল হলো আমি তো মোবাইলই আনিনি।অভ্র ভাইয়ের মোবাইলটা চেয়ে নেয়া যাই।আমি ওনার মোবাইল চাইবার জন্যে পাশে তাকালাম কিন্তু উনি নেই।আমি আশে পাশে তাকালাম উনি কোথাও নেই।আমার বেশ অবাক লাগলো।কোথায় গেলো লোকটা?তখনি দূর থেকে বাচ্চা ছেলেগুলোর আওয়াজ এলো।আমি তাকাতেই দেখি অভ্র ভাই ওদের সাথে ফুটবল খেলছে।ব্যাপারটা প্রথমে আমার কাছে খুব অদ্ভুত লাগলেও আস্তে আস্তে বেশ মজা লাগলো।সাদা পাঞ্জাবি,পায়জামা পরে জনাব কাদার মধ্যে ফুটবল খেলছে।মানুষটা পারেও বটে!আমি ওনাদের পাশে গিয়ে দাড়ালাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
–তুমি খেলবে?(উনি চিল্লিয়ে বলেন)
(ওনাদের খেলতে দেখে আমারও খুব ইচ্ছা হলো খেলার।কিন্তু শাড়ি পড়ে ফুটবল খেলতে গেলে অবস্থাটা ভালো হবে না।তাই আর খেলা হলো না)
–না।আপনারাই খেলুন।আমি দর্শক হিসেবেই ঠিক আছি।
–খেলতে পারো না সেটা বলো ম্যাডাম।
–কি আমি খেলতে পারি না??এতো বড় কথা!তবে রে…

আমি শাড়ির আচল কোমরে বেধে মাঠে নেমে পড়ি।জীবনে শাড়ি পরেও যে কোনদিন ফুটবল খেলবো তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।কিন্তু বেশ মজা হচ্ছে।বাচ্চা ছেলেগুলোর সাথে আমরা দুজন সেই মজা করছি।দুটো টিম হয়ে গেছে আমাদের।এক টিমের ক্যাপ্টেন তাসনুভা আমিন সূচী আর অন্য টিমের ইশরাক এসসান অভ্র।অভ্র ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–কি ম্যাডাম হারার জন্যে রেডি তো?
–কে হারে কে জেতে তা তো সময়ই বলে দেবে স্যার।
–ওহোওও।ওকে,লেটস সি।তবে যে হারবে তার জন্যে কিন্তু শাস্তি আছে।
–শাস্তি?
–হ্যা।তুমি হারলে আমি যা বলবো তাই করা লাগবে।
–আর আপনি হারলে?
–হাহহাহাহাহ..যদিও হারবো না।তবে তাও ওই একই রুলস।তুমি যা বলবে তাই করবো।
–শিউর তো??
–ও ম্যাডাম।আমিই জিতবো তাই এতো নাচানাচি করার দরকার নাই।ওকে?
–কনফিডেন্স ভালো।ওভারকনফিডেন্স না।বুঝলেন স্যার?
–হাহ!

আমরারা খেলা শুরু করি।

চলবে……