তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-৩৩+৩৪

0
920

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৩৩+৩৪
#জুনাইনাহ_তাসনিম

ফুটবল খেলা শেষ,বৃষ্টিও থেমে গেছে।মিষ্টার অভ্র মিস সূচীর কাছে হেরে গেছেন।নিজেকে ফিমেল রোনালদো,মেসি,নেইমার সব মনে হচ্ছে এখন।অভ্র ভাই তো মুখ শুকনো করে দাড়িয়ে আছে।আমি আর আমার টিম তো রাজার মতো পার্কের বেঞ্চে বসে আর লুজিং টিমের সবাই আমাদের সামনে প্রজার মতো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে।বেশ মজা লাগছে আমার।আমি পায়ের ওপর পা তুলে বসে বললাম,
–তো মিষ্টার অভ্র ভাই রেডি তো?
–রেডি তো মানে?
–মানে খেলার আগের শর্ত ভুলে গেলেন নাকি?
–না ভুলিনি।বলো কি করা লাগবে?
–আপনাকে আমাদের সবাইকে…
–সবাইকে কি?
–আমাদের সবাইকে আইস্ক্রিম খাওয়াতে হবে।
–হোয়াট?
–জি।আইস্ক্রিম খাবো সবাই।ইয়েএএএএ(আমি এবং পিচ্চিগুলো সবাই মজা করে উঠি)

অভ্র ভাই আমাদের সবার জন্যে আইস্ক্রিম কিনে আনেন।তারপর বাচ্চা ছেলেগুলো অভ্র ভাইকে বলে তারা ছবি তুলবে।অভ্র ভাই ও মোবাইল নিয়ে রেডি।আমি একটু সাইডে দাড়িয়েই আইস্ক্রিম খাচ্ছিলাম আর ওনাদের সেলফি তুলা দেখছিলাম।হটাত একটা ছেলে বলে ওঠে,
–আপু তুমিও আসো না।
–না না তোমরাই ছবি তোলো।আমি এখানেই ভালো আছি।
— না তুমিও আসবা।আসো(ছেলেটা আবার বলে)
–হ্যা আপু তুমিও আসো তুমিও আসো(সব গুলো ছেলে বলা শুরু করে)

অভ্র ভাই ও ইশারা করে আসতে বলে।আমিও গেলাম।আমি এক পাশে দাড়ালেও ছোট্ট ছেলেগুলো আমাকে ঠেলেঠুলে ঠিকই অভ্র ভাইয়ের পাশে দাড় করিয়ে দিলো।অভ্র ভাই ছবি তুলার জন্যে সবাইকে ক্যামেরার দিকে তাকাতে বললেন আমিও তাকালাম।ছবি তুলা শেষে আমি আর অভ্র ভাই দুজনেই এক সাথে একে অপরের দিকে তাকাতে যাই আর ঠিক সেই মুহুর্তেই ওনার ঠোঁট আর আমার ঠোঁট টাচ করে ১ সেকেন্ডের জন্যে ।আমার চোখ তো রসগোল্লার মতো বড়বড় হয়ে গেছে আর উনি তো হেসে ফেলেছেন।অবশ্য উনি যে ফাজিল তাতে হাসবেন না তো আর কিই বা করবেন।কিন্তু আমি বেশ লজ্জাই পড়ে গেছি।আমি তো সেই তখনি অন্যদিকে ঘুরে গেছি ওনার দিকে আর তাকাইনি।এদিকে বাচ্চা ছেলেগুলোও আমাদেরকে বাই বলে চলে গেছে।আমি এখনো অন্যদিক ঘুরেই তাকিয়ে।ওনার দিকে তাকানোর মতো মুখ আমার নেই।কিন্তু উনি তো কম যায় না।ঠিকি ওই কথাটা ভেবে মনে মনে হাসছে।কিছুক্ষন পর জিজ্ঞেস করলো,
–সূচী তখন কি কিছু বলতে চেয়েছিলে?
–কখন?(আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি)
–আরে ওই যে যখন তোমার আর আমার ঠোট..(আমি ওনার কথা শেষ করতে দিই না)
–বাসায় যাবো।বাসায় যাবো এটাই বলতে চাচ্ছিলাম।

আমি কথাটা বলেই আর এক মুহুর্তও দেরি না করে গাড়ির দিকে রওনা হই।গাড়ির কাছে এসে পিছু ঘুরি ওনাকে এটা বলার জন্যে যে আমরা দুজন তো কাদা মেখে ভূত প্রায়।এই অবস্থায় গাড়িতে উঠলে তো সীট নষ্ট হয়ে যাবে।
–আচ্ছা অভ্র ভাই…(আমি পিছু ঘুরি কিন্তু অভ্র তো নেই।আমি আশে পাশে খুজলাম কোথাও নেই)আজব তো!এখানেই তো ছিলো হটাত কোথায় গেলো আবার?অভ্র ভাই,অভ্র ভাইইইইইইই…(আমি কয়েকবার ডাক দিলাম কিন্তু কোন শাড়া নেই।)

আমি গাড়ির পাশেই দাড়িয়ে রইলাম।বোর লাগছে বেশ,গাড়ির সাথে হেলান দিলাম।সাথে সাথে মনে পড়লো আমার শাড়িতো পানিতে ভেজা আর কাদাও মেখে আছে।তাড়াতাড়ি আবার গাড়ির থেকে দূরে করে দাঁড়ালাম।কোমরে হাত বেধে দাড়িয়ে ছিলাম হটাত কোথা থেকে অভ্র ভাই ছুটে এসে আমার হাত ধরে বলে সূচী চলো।
–কোথায়?
–এখন এতো কথা বলার সময় নেই।তাড়াতাড়ি চলো।

উনি আমার হাত ধরেই হেচকা টান মেরে দৌড় দেন।আমি পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিই।উনি দৌড়াচ্ছেন সাথে আমিও।দৌড়াতে দৌড়াতেই জিজ্ঞেস করি,
–হটাত করে দৌড়াচ্ছি কেন আমরা??
–পিছনে তাকাও বুঝে যাবা।
–কিহ?পিছনে কি আছে আবার?

আমি পিছন ঘুরে তাকাই।পিছনে তাকিয়ে তো শকড।একটা টাক পড়া,ভুড়িওয়ালা দানবাকৃতির লোক লাঠি হাতে আমাদের পিছু পিছু দৌড়াচ্ছেন আর আমাদেরকে দাড়াতে বলছেন।আমি তো কিছুই বুঝছি না।আমি অভ্র ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম,
–উনি আমাদের পিছনে এইভাবে দৌড়াচ্ছে কেন?
–চুরি করেছি তাই।(হাপাতে হাপাতে)
–চুরি করেছেন মানে?কি চুরি করেছেন?

অভ্র ভাই দাড়িয়ে পড়ে।সাথে সাথে হাটু গেড়ে বসে পকেট থেকে একটা রক্তজবা বের করে বলে,
–গোলাপ ফুলের জায়গায় আমি দিলাম তোমায় জবা।

অভ্র ভাইয়ের এরকম সাডেন কাজে আমি তো শকড।আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হলো না।আমি শুধু ওনার মুখের দিকে চেয়ে রইলাম।কারন আমার মন আজকে অন্য কিছু বলছে।সেই কথাটাই বলছে যা অভ্র ভাই এতো দিন জানতে চেয়েছে সেই কারনেই হয়তো চেয়ে আছি।কাদা মাখা সাদা পাঞ্জাবি,কপালে উপচে পড়া এলোমেলো আধভেজা চুল আর মিষ্টি হাসি দেয়া ছেলেটার দিকে তাকালে চোখ সরানো মুশকিল।এতো মিষ্টি কেউ হয় কি??
আমি মনে মনে এসব ভাবছিলাম এদিকে অভ্র ভাই বলে উঠলো,
–তাড়াতাড়ি ধরো।বুইড়া চলে এসেছে কাছেই।(আমি তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই লোকটা খুব কাছে চলে এসেছে।আমি তাড়াতাড়ি ওনার হাত থেকে ফুও নিয়ে নিলাম)

–এই দাড়া,দাড়া।ব্যাটা আমার গাছের ফুল চুরি করে আবার প্রপোজ করছিস?দাড়া..
–কাকু পারলে ধরে দেখাও..
(অভ্র ভাই উঠে দাড়িয়ে আমার হাত ধরে বলে হাসি দেয়।আর আবার দৌড় শুরু করে।অভ্র ভাই দৌড়াচ্ছে আর পিছন দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু আমি সারাটা পথ ওনার দিকে চেয়ে।আমার কেন জানি না এই মুহুর্তে আর কোন কিছুর দিকে চোখ ফেরাতে ইচ্ছা করছে না।আমি বুঝতে পারলাম আমিও হয়তো ওনাকে এবার সত্যি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি ধীরে ধীরে।)
আমি আর অভ্র ভাই দৌড়াতে দৌড়াতে একটা বাস পেয়ে যায়।অভ্র ভাই আগে বাসে ওঠে তারপর আমার হাত ধরে আমাকেও টেনে তোলে।বাসে উঠে অভ্র ভাই উকি দিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।আর আমি দেখি ওনাকে।কেন জানি না এই প্রথমবার আমি কনফিউজড হলাম না।আমার মন বলেছে উনিই সেই মানুষটা যার প্রেমে আমি হাজারবার পড়তে পারি।উনিই সেই মানুষ যার সাথে আমি নিজের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পার করতে পারি।আমি ওনার দিকে তাকিয়েই ছিলাম তখনই উনি আমার দিকে তাকায়।
–কি হয়েছে সূচী?কষ্ট হয়ে গেছে কি দৌড়ে?
–উহু।
–আচ্ছা চলো বসি।ব্যাটা বুইড়া মেলা দৌড় করায়ছে।

অভ্র ভাই কথাটা বলেই বাসের গেট থেকে ভিতরে চলে যায়।আমিও ওনার পিছন পিছন যায়।কিন্তু বাসে উঠে দেখি জায়গা নেই তেমন।মানুষে ভরা,সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে।অবশ্য তাকানোর কারনও আছে।আধভেজা কাদা মাখা অবস্থায় দুজন বাসে উঠেছি।এরকম অবস্থা দেখলে মানুষ তাকাবেই।আমি হলেও তাকাতাম।ভিড় থাকায় আমি বসলাম এক মহিলার পাশে আর আমার অন্য সাইডের দুই সীট সামনে অভ্র ভাই বসলেন এক বয়স্ক লোকের পাশে।কিছু পথ যাওয়ার পর আমার পাশে বসা মহিলাটি উঠে গেলেন।অভ্র ভাই আমার দিকে তাকিয়েই ছিলেন হয়তো সাহস পাচ্ছিলেন না উঠে এসে আমার পাশে বসার।আমি কোন কথা না বলেই জানালার সাইডে গিয়ে বসলাম।ওনাকে করা আমার ইংগিত বুঝে উনিও আমার পাশে এসে বসলেন।দুজনই চুপচাপ বসে আছি।এতো বকবক করা আমিটাও যেন কথা হারিয়ে ফেলেছি আর অভ্র ভাইয়ের কথা তো বাদই দিলাম।এতোক্ষন জনাব বকবক করলেও কেন জানি না এখন চুপ করেই আছে।আড়চোখে আমার দিকে দুয়েকবার তাকিয়েছে হয়তো।আমিও তাকাচ্ছি বারবার ওনার থেকে বেশিই।কারন এই প্রথমবার আমি আমার কাজিন অভ্র বা আমার ক্রাশ অভ্রর পাশে বসে নেই।আমি বসে আছি আমার ভালোবাসার মানুষটার পাশে।এতোদিনে আমার মন যা বুঝিয়ে দিয়েছে আমাকে।বেশ নার্ভাস লাগছিলো,অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করলাম।অভ্র ভাই চুপ থাকলেও আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।
–ধন্যবাদ।(আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলি)
–হুম?(উনি কিছুটা না বুঝেই হয়ে বলেন)
–বললাম ধন্যবাদ।
–কেন?
–এটার জন্যে(আমার হাতে থাকা জবা ফুলটা দেখিয়ে)
–ওহ ওয়েলকাম।
(আমি আর কিছু বলতাম তার মাঝেই কন্ডাক্টার এসে ভাড়া চাই)
–ভাই কই যাবেন?
–যতোদূর তোমার আপা যাবে।(অভ্র ভাইয়ের কথাটা শুনে কন্ডাকটর কিছু না বুঝলেও আমিও তাকিয়ে পড়ি।ওনার এই ছোট্ট কথাটা আমার বুকে গিয়ে লাগে ভালোবাসার তীরের মতো)
–ও আপা যাবেন কই?(কন্ডাকটর জিজ্ঞেস করে)
–…..(আমি এখনো অভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আর উনিও)
–ও আপা..
–জি?
–যাবেন কই?

আমি ঠিকানা বলি।অভ্র ভাই মানিব্যাগ বের করে ভাড়া মিটিয়ে দেই।এরপর আমি আর কোন কথা বলি না।অভ্র ভাই বকবক করতেই থাকে।

*বাস থেকে নামি দুজন।কিছুটা হেটেই আমার বাসার সামনে চলে আসি।অভ্র ভাই বলেন,
–আমি আর ভিতরে যাবো না।বাসায় যাবো।টেক কেয়ার পাখি।
আমি আর কোন কথা বলতে পারিনা।কেন জানি না বলতে ইচ্ছা করছে ওনাকে আর কিছুক্ষন থেকে যেতে।কিন্তু আমি পারলাম না বলতে।আমি বাসার গেটের দিকে হাটতে লাগলাম।কিছুপথ গিয়ে আমি দাড়িয়ে পড়ি।পিছু ঘুরে তাকিয়ে দেখি উনি এখনো দাড়িয়ে।আমিও ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি ইশারা করে জানতে চাইলেন কিছু বলব কিনা?আমি ঘাড় নেড়ে না বললাম।কিন্তু আমার মন বলছে আমি যেন ওনাকে বলি যে আরেকটু খানি থেকে যেতে।আমি বলতে পারলাম না।বাসার মধ্যে চলে এলাম।উনিও চলে গেলেন।
রুমে এসে পড়ার টেবিলের ওপর ফুল রেখে ওয়াশরুমে ঢুকলাম শাওয়ার নেয়ার জন্যে।যে অবস্থায় আছি তাতে শাওয়ার নেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে আমার।

শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েই বিছানার এক কোনে পড়ে থাকা অভ্র ভাইয়ের শার্টের দিকে চোখ গেলো আমার।আমি কাছে গিয়ে দেখি সত্যিই ওটা ওনার শার্ট যেটা উনি কাল রাতে পরে ছিলেন।কিন্তু এটা এখানে কিভাবে এলো?খেয়াল হলো উনি আমার রুমেই চেঞ্জ করেছিলেন তখনি হয়তো রেখে গেছেন।যাক ভালোই হয়েছে।আমি শার্টটা থেকে ওনার স্মেল নেয়ার ট্রাই করলাম।স্পষ্ট ওনার স্মেল পেলাম।বেশ লজ্জা লাগলো কেন জানি না কিন্তু ভালোও লাগলো।আমি ওনার শার্টটা গায়ে জড়িয়ে আয়নার সামনে ওনাকে মিমিক্রি করা শুরু করলাম।কিছুক্ষন পর আমি থেমে গেলাম তাকিয়ে রইলাম আয়নাই।নিজের দিকে তাকিয়ে আছি।ওনার শার্টে আমাকে বেশ অন্যরকম লাগছে।আমার চেহারাটাই যেন বদলে গেছে।গ্লো করা শুরু করেছে।আমার ভাবনাগুলো ফিলমি শোনালেও আমার এরকমটাই মনে হচ্ছে।প্রথম প্রেম হয়তো এমনই হয়।মানুষ নিব্বিদের মতো বিহেব করা শুরু করে।যেটা আমি এই মুহুর্তে করছি।নিব্বা নিব্বি সাজা অনেক হয়ছে এবার বাস্তবে ফিরা দরকার।আমি শার্টটা খুলে ভাজ করে ওয়ারড্রবে রেখে দিলাম।তারপর বিছানাই শুতে শুতেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম।

চলবে….

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৩৪
#জুনাইনাহ_তাসনিম

৩৮.
বিয়ে ঠিক হওয়ার পর কেটে গেছে এক মাস।আমরা এখন প্রতিদিন সকাল,দুপুর,রাতে কথা বলি ঘড়ি ধরে।কোন বেলা যদি কথা না হয় আমার ভালো লাগে না।এটা আমার অভ্যাস বলুন বা ভালোবাসার টান সেটা জানা নেই কিন্তু কথা আমার বলা লাগবেই।তবে আমি একটা ব্যাপার নিয়ে খুব মজা পাই।উনি প্রতিদিন একবার করে জিজ্ঞেস করেন যে আমি এখনো ওনাকে ভালোবাসতে পেরেছি কিনা।এই কথার উত্তরে আমি প্রতিদিন বলি,”কি জানি বুঝতে পারি না।সময় লাগবে আমার,হুট করে ভালোবাসা হয় না”।আমার কথা শুনে উনি চুপ করে যান।হয়তো মুখ ভার করে বসে থাকেন,আমি মোবাইলের এপাশ থেকে ওনাকে দেখতে না পেলেও কল্পনা করতে পারি ওনার মুখ ভার করে ঠোঁট উল্টে থাকার চেহারাটা।আমার বেশ মজাই লাগে।মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় বলে দিতে যে ওনার প্রতি আমারও একটা অনুভুতি কাজ করে কিন্তু আমি বলি না।আমি ওনাকে এভাবে নিজের মনের কথাটা জানাতে চাই না।উনি যদি হিরো হন তো আমিও হিরোইন।আমি কেন এরকম শুকনো শুকনো জানাবো।আমিও বড়সড় কিছু প্লান করেই জানাবো।

*ভার্সিটিতে ক্লাস করছি আমি আর মারিয়া।তাও আবার ভার্সিটির অন্যতম এক রাগী স্যারের ক্লাস।ক্লাসের মাঝে কোনরকম কথাবার্তা,আওয়াজ বা ফোন কলস স্যার একদমই সহ্য করেন না।খুব রাগ করেন প্লাস বাজে বিহেভ করেন।তাই অনেক কষ্টে এই বোরিং ক্লাস করা লাগে।ক্লাসের মাঝেই আমার ফোন বেজে উঠে,অভ্র ভাই কল করেছে।আমি কলটা কাটার আগেই স্যার চশমার ভিতর আড়চোখে তাকান।আর গম্ভীরভাবে বলেন,
–ক্লাসের মাঝে ফোন কলস?
–স সরি স্যার।

আমি কলটা কেটে দিয়ে ফোন সাইলেন্ট করে দিই।অভ্র ভাই কল দিয়েই যাচ্ছে।আমি রিসিভ করলাম না।স্যারের লেকচার নোট করছিলাম সবাই তখনই স্যারের আওয়াজ পেলাম,
–হে,হু আর ইউ?এইভাবে ক্লাসে ঢুকছো কেন??

স্যারের কথা শুনে সবাই সামনের দিকে তাকাই।আমি তো সামনের দিকে তাকিয়েই শক খেলাম।অভ্র ভাই ক্লাসের মধ্যে ঢুকে এদিক ওদিক উঁকিঝুঁকি খুজছে।আর স্যার তো ওনার পিছন পিছন ঘুরছে।অভ্র ভাইকে এখানে দেখে আমি তো ভয়ে শেষ।মারিয়া আমার কানের কাছে এসে বলে,
–সূচী রে তোর কাজিন এখানে কি করে??
–আমি কিভাবে জানবো সেটা??

–এই ছেলে,কে তুমি?কাকে চাও?ক্লাসের মাঝে বিনা পারমিশনে ঢুকে গেছো।কোন ম্যানারসই তো নেই।(স্যার বলে)

স্যার তো বকেই যাচ্ছে কিন্তু কে শোনে কার কথা।অভ্র ভাই স্যারের কথার কোন পাত্তাই দিলো না।ক্লাসের কেউই বুঝতে পারছে না যে উনি আসলে কি চান বা খুজছেন কিন্তু আমি তো ঠিকই বুঝেছি।আমি মারিয়ার আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করলাম নিজেকে কিন্তু উনি ঠিক দেখে ফেলেন।আমাকে দেখেই ৩২টা দাত বের করে লম্বা একটা হাসি দিলেন।আর আমি মনে মনে বললাম,
–খাইছে রে!আজকে স্যারের কাছে আমি শিউর পানিসমেন্ট খাবো।
অভ্র ভাই আমাকে দেখেই দ্রুত আমার বেঞ্চের কাছে চলে এলো।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
–সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি কলই ধরো না।কি ব্যাপার?চলো…(আমার হাত ধরে বলে)
–চলো মানে? কোথায় যাবে ও?আর তুমিই বা কে?(স্যার বলে ওঠে)
–আমি কে তা আপনাকে কেন বলতো যাবো মিষ্টার এংরি ওল্ড ম্যান?(অভ্র ভাই স্যারের দিকে তাকিয়ে বলে)
–হাউ ডেয়ার ইউ!!(স্যার তো রেগে আগুন।আর পুরো ক্লাস তো হা করে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে যে কে এই ব্যক্তি যার এতোটা সাহস?)
–দেখুন আমার এখন ওতো সময় নেই এখানে কথা বলার মতো।সূচী চলো তো..

অভ্র ভাই আমার হাত ধরে টান দিয়ে ক্লাসের বাইরে চলে আসে।আর স্যার তো ওদিকে ক্ষেপে গেছে।বার বার সবার কাছে জিজ্ঞেস করছে যে কে ছেলেটা?কেউই তো ভালোভাবে অভ্রকে চেনে না মারিয়া ছাড়া।মারিয়া ও চুপ করে আছে কিন্তু স্যার মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
–এই মেয়ে তুমিই তো বসে ছিলে ওই মেয়েটা কি যেন নাম হ্যা তাসনুভা,তাসনুভার পাশে।তুমি কি ওর ফ্রেন্ড?
–আ আ আসলে স্যার(মারিয়া উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলে)
–তোতলাচ্ছো কেন তুমি?যেটা জানতে চেয়েছি সেটা বলো ড্যামিট।(স্যার ধমক দিয়ে ওঠে)
–ইয়েস স্যার ইয়েস।ও আমার ফ্রেন্ড।
–ডু ইউ নো দা গাই?
–ইয়েস স্যার(মারিয়া ভয়ে ভয়ে বলে)
–হু ইজ হি?
–হি ইজ সূচীর না মানে হি ইজ হার কাজিন স্যার।মামাতো ভাই হয়।
–ওহ আই সি!কিন্তু এত্তো অসভ্য কেন?কোন ম্যানারসই নেই।আর মেয়েটাও কিচ্ছু বললো না একবার।আমি তো এই ইনসাল্ট মেনে নেবো না।ওই মেয়েটার নামে ভিসির কাছে কমপ্লেন করবো।
–কিন্তু স্যার?
–কোন কিন্তু নয়।আমিও দেখছি ওই মেয়ে কিভাবে এই ভার্সিটিতে পড়ে।

*স্যার রুম থেকে বের হয়ে যায়।মারিয়া ধপ করে বসে পড়ে।ওদিকে অভ্র ভাই আমাকে টানতে টানতে আমাদের বিল্ডিং এর পাশের পুকুরটার কাছে আনেন।পুকুরের কাছে এনে আমার হাত ছেড়ে দেন,
–অভ্র কি হচ্ছে এটা?ক্লাসের মাঝখান থেকে আমাকে এইভাবে টেনে আনলেন,স্যারের সাথেও আবার রুড বিহেভ করলেন।কোন ভদ্র বাড়ির ছেলে এরকম করে শুনি?(আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলি)

–দেখো বাড়ির লোক কেমন তা আমার জানা নেই।তবে আমি মানুষটা অভদ্র এটা তোমার অজানা না।আর তাছাড়া আমি এখানে এসব কথা বলতে আসিনি।কথা আছে আমার তোমার সাথে।

–কি কথা?

–তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?তোমার মনে কি একটুকুও ফিলিংস নেয় আমার জন্যে?(উনি বাচ্চাদের মতো মুখ নিয়ে বলেন)

–…….(আমি চুপ করে থাকলাম)

–আমার আর এভাবে ভালো লাগে না সূচী।আজকে তোমাকে বলতেই হবে তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা?বলো ভালোবাসো?হ্যা বললে তো ভালোই আর না বললে(ওনার মুখ শুকনো হয়ে আসে)

— না বললে?(আমি ভ্রু নাচিয়ে বলি)

–না বললে মনের দুঃখে আমি এই পুকুরে ঝাপ দেবো(অভিমানি সুরে বলেন উনি)

–আচ্ছা ঝাপ দেন।

–হোয়াট?(অভ্র ভ্যাবাচাকা খেয়ে বলে)

–বললাম পুকুরে ঝাপ দেন।

–আর ইউ সিরয়াস??

–ইয়েস আই এম।

আমি কথাটা অন্যদিকে ঘুরেই বলছিলাম।কথা শেষ হতে না হতেই পুকুর থেকে ঝপ করে শব্দ এলো।আমি তো পাশে তাকাতেই দেখি অভ্র নেই পুকুরে পড়ে হাত পা ছুড়ছে।আমাদের ভার্সিটির এউ পুকুরটা অনেক গভীর,সহজে কেউ নামে না।আর অভ্র ভাই এখানে সত্যি সত্যিই ঝাপ দিলো।আমি তো ওনাকে দেখে হাউমাউ করে চিতকার করে উঠলাম।ওনার পুকুরে লাফ দেয়ার সময়ই অনেকে খেয়াল করে জড় হয়েছিলো আর আমার চিতকার চেঁচামেচিতে তো অনেক ভিড় জমে গেলো।
–অভ্র ভাই কি করলেন এটা??আরে কেউ বাচাও ওনাকে উনি ডুবে যাচ্ছেন তো..(আমি কেঁদে ফেললাম)
আমি কেঁদে কেঁদে সবাইকে হেল্প করতে বললাম এতোক্ষনে মারিয়াও চলে এসেছে।ওউ সবাইকে বলছে হেল্প করার কথা।ওদিকে অভ্র ভাই নিমিষে পানির নিচে ডুবে গেলো।আর কোন সাড়া শব্দ নেই।আমি আরো জোরে কাঁদতে শুরু করলাম,হাউমাউ করে।আমি নিজেই তো কাঁদতে কাঁদতে পানির মধ্যে ঝাপ দিতে যাচ্ছিলাম কিন্তু আমার বন্ধুরা আমাকে ধরে ফেলে।আমি মুখে হাত দিতে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ি।আমি খুব কাঁদছি হটাত মারিয়া আমাকে বলে ওঠে,
–সূচী অভ্র ভাই।
মারিয়ার মুখে অভ্র ভাই শুনেই আমি ওর দিকে তাকাই।ও ইশারা করে সামনের দিকে আমি তাকাতেই দেখি অভ্র ভাই হিরোদের মতো চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে পুকুর থেকে উঠে আসছে।পাতলা সাদা শার্টটা ভিজে গিয়ে ওনার শরীর স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।ওনার মাসল,বুক মানে শরীর খুব ভালোভাবে ফুটে উঠেছে।আশেপাশের মেয়েগুলো তো হা করে তাকিয়ে আছে,মনে হচ্ছে উনি যেন বলিউডের হিরো।এরকম সুন্দর ছেলে যেন আর জীবনে কোনদিন দেখিনি এরকম ভাব করছে মেয়ে গুলো।কিন্তু আমি চুপচাপ তাকিয়ে আছি।অভ্র আমার সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে।
–কাদছো কেন এতো?খুব ভয় পেয়ে গেছিলে বুঝি?আমি তো মজা করছিলাম।(উনি হাসি মুখে বলেন

আমি ওনার কথার কোন উত্তর দিলাম না।ওনার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ঠাস করে খুব জোরে একটা থাপ্পড় বসালাম ওনার ডান গালে।পুরো ক্যাম্পাস হা করে তাকিয়ে পড়লো।আমি কোন কিছু না বলেই উঠে চলে এলাম।অভ্র ভাইও বোকার মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো আমার চলে যাওয়াটা।

*বাসায় এসে প্রচন্ড রাগ হলো।রাগে ঘরের যা কিছু ছিলো সব ভাংতে শুরু করলাম।ছোটবেলাই আমার এই অভ্যাসটা ছিল।হাতের কাছে যা পেতাম ভেঙে ফেলতাম।আজকে বহু বছর পর আবার সেই সেইম কাজটা করছি।মা একাই বাসায় ছিলো।মা তো ভাংচুরের শব্দে আমার রুমে চলে এসেছে বকাবকি শুরু করেছে।আমি মায়ের কোন কথাই কানে নিলাম না।ভাংতে ভাংতে এক সময় আমার ঘরের টেবিলল্যাম্পটা নিয়ে আছাড় মারতে গেলাম কিন্তু অভ্র ভাই এসে আমার হাত ধরে ফেলে।
–কি করছো কি এটা??আমার রাগ অন্যকিছুর ওপর কেন দেখাচ্ছো?
(ওনাকে দেখে আমার আরো বেশি রাগ হলো।আমি এক ঝটকাই হাত ছাড়িয়ে নিলাম।উনিও জোর করলেন না)
–মা ওনাকে চলে যেতে বলো(আমি চিতকার করে বললাম)
–সূচী আমার কথাটা তো শোন(অভ্র ভাই কথা বলার চেষটা করলেন কিন্তু আমি শুনলাম না)
–মায়ায়ায়ায়া চলে যেতে বলো ওনাকে তা না হলে আমি কিন্তু সব শেষ করে দেবো।
–সূচী কি পাগলামি হচ্ছে এটা?(মা রেগে বলে)
–ফুপি,ফুপি তুমি ওকে কিছু বলো না।আমি চলে যাচ্ছি(অভ্র ভাই মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে)

অভ্র ভাই চলে যায়,মাও অভ্র ভাইয়ের পিছু পিছু চলে যায়।আমি ঘরের দরজা লাগিয়ে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে মাটিতে বসে পড়ি।ঘেমে আমার শরীর পুরো গোসল আর শরীরেও যেন কোন বল নেই।

চলবে……
(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন.কোন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন
ধন্যবা