তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-৩৫

0
1025

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৩৫
#জুনাইনাহ_তাসনিম

৩৯.
–অভ্র ভাই,অভ্র ভাই…
আমার ডাকে অভ্র ভাই ধড়মড়িয়ে উঠে বসে ঘুম থেকে জেগে।লোডশেডিং হয়েছে তাই আমি হাতে একটা মোমবাতি নিয়ে বসে ছিলাম ওনার মাথার কাছে।উনি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,
–সূচী তুমি এসেছো?
–হুম।
–তুমি কি সত্যিই এসেছো নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি?
(ওনার কথা শুনে আমি ওনার হাতে একটা চিমটি কেটে দিই)
–আহ!(চিমটি খেয়ে উনি ব্যাথায় আহ করে ওঠেন।কিন্তু এটুকু শিউর হন যে আমি সত্যিই এসেছি।ওনার সামনে সত্যিই বসে আছি)সূচী বিশ্বাস করো আমি মজা করেই পানিতে ঝাপ দিয়েছিলাম।আমি যদি জানতাম তুমি ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিবা তাহলে আমি কোনদিনি এটা করতাম না।আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।তুমি প্লিজ রাগ করে থেকো না আমার ওপর(অভ্র আমার হাত ধরে মিনতি করতে থাকে)
–কফি খেতে যাবেন?
–………….(আরকম শান্ত ভাবে কথা বলাই উনি হয়তো বুঝে উঠতে পারেন না।তাই কোন কথা না বলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন আমার মুখের দিকে)
–কি হলো যাবেন না?
–কেন যাবো না?অবশ্যয় যাবো।আমাকে ৫ মিনিট দাও আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি।(অভ্র তাড়াহুড়া করে বিছানা থেকে নামতে লাগলো কিন্তু আমি ওনার হাত ধরে ফেললাম)
–তাড়াহুড়া করা লাগবে না।আমি আছি তো আপনি ধীরে সুস্থে নামেন।
–আচ্ছা।কিন্তু তুমি এ সময় এখানে?কটা বাজে এখন?বিকাল হয়ে গেছে কি?
–সন্ধ্যা ৭ টা বাজে এখন।
–কি?সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আমি সেই দুপুরে ঘুমাইছি।আর এখন এতো বেজে গেলো।লাইক সিরিয়াসলি আমি এতো ঘুমালাম?
–হুম।
–আচ্ছা তুমি এখানে আছো তা বাড়ির বাকিরা…(আমি ওনার কথা শেষ করতে দিলাম না)
–বাসায় কেউ নেই।
–কেউ নেই মানে?
–কেউ নেই মানে কেউউউউউউ নেই।সবাই গেছে আমাদের বাসায়।আজকে দাওয়াত আছে।আপনাকে নিতে এলাম আমি।কিন্তু তার আগে কফি খাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে বেশ।
–সে খাওয়ায় যাবে।কিন্তু তুমি হটাত নিতে এলে যে?
–কেন আপনি খুশি হননি?আমি কি চলে যাবো?
–এই না না।আমি অনেক খুশি হয়েছি।অনেক বেশি(উনি ক্ষপ আমার হাত ধরে বলেন।ওনার এরকম ছেলেমানুষি দেখে আমার খুব হাসি পাই)
–ঠিক আছে।এবার রেডি হয়ে নিন।
–ওকে।
(উনি বিছানা থেকে নেমে আলমারি থেকে একটা শার্ট বের করেন।)
–অভ্র ভাই।
–হ্যা সূচী
–পাঞ্জাবি পরা যাবে?সাদা পাঞ্জাবি?
–পাঞ্জাবি!এখন?
—হুম।কোন সমস্যা থাকলে দরকার নেই।
— না না কিসের সমস্যা?পরছি আমি।

উনি আলমারিতে শার্টটা রেখে একটা সাদা পাঞ্জাবি বের করেন।তারপর ওটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যান।মিনিট ৫ পরে উনি পাঞ্জাবি পরে বের হন।আমি মোমবাতিটা নিয়ে ওনার কাছে এগিয়ে যাই।উনি আমার দিকে খুব স্নিগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকেন।আমি চোখ ছোট ছোট করে বলি,
–কি দেখছেন?
–তোমাকে।
–কেন আমাকে আগে কোনদিন দেখেননি বুঝি?
–দেখেছি তবে এইভাবে তো আগে দেখা হয়নি(সুন্দর করে হালকা হেসে বলে)
–এইভাবে মানে?
–এই যে মোমের আলোই তোমার কাজলে অাঁকা
চোখদুটো ভয়ংকর রকম সুন্দর লাগছে।চোখের গভীরতাই ডুবে যেতে ইচ্ছা করে।
–আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে।এবার চলেন।
–এখনি যাবে?বাইরে তো মনে হচ্ছে বৃষ্টি হচ্ছে।
–হুম হচ্ছে।তো?
–এর মাঝেই যাবে?
–হ্যা যাবো।কেন আপনাদের বাসায় বড় ছাতা নেই?
–আছে তো।
–তাহলে আবার এতো কথা কিসের?আর তা ছাড়া কফি শপ তো কাছেই।হেটে গেলেও বড় জোর ১২-১৩ মিনিট।
–ঠিক আছে চলো।

আমি আর অভ্র ভাই ছাতা নিয়ে দাড়াই আছি।এখনো বের হয়নি।অভ্র ভাই রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে একবার আর আকাশের দিকে তাকাচ্ছে একবার।
–আমার কিছু কথা আছে
(আমার কথা শুনে অভ্র ভাই আমার দিকে তাকাই)
–হ্যা বলো..
–বলছি।চলুন আগে হাটা শুরু করা যাক।
–ওকে।

–সূচীকে আজ বেশ অন্যরকম লাগছে।কথাও একটু অন্যরকম মতো।তাহলে কি আজ ও নিজের মনের কথা বলবে আমাকে?(অভ্র মনে মনে ভাবে)
–কি ভাবছেন?
–না কিছু না।চলো।

*আমরা হাটা শুরু করি।খুব জোরেই বৃষ্টি হচ্ছে।এক ছাতাতে দুজনের ভালোভাবে ঠেকাচ্ছে না।পানি গায়ে লাগছে।এলাকাই কারেন্টও নেই বেশ অন্ধকারও আছে।অভ্র ভাই কোনরকম ফোনের ফ্লাস লাইট অন করে হাতে ধরে আছে,আর আরেক হাতে আছে ছাতা।অভ্র ভাই হাটতে হাটতে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–সূচী বললে না তো কি বলবে।
–হুম।বলছিলাম যে,আপনার শরীর ভালো আছে?
–হ্যা আছে তো।
–আপনার প্রাকটিস কেমন চলে?
–ভালোই তো চলে।
–আচ্ছা মন দিয়ে প্রাকটিস করেন।মামা মামি অনেক আশা নিয়ে আছে আপনাকে নিয়ে।আপনাকে(আমার কথা শেষ করতে দেই না অভ্র ভাই)
–সূচী।তুমি কি এসব বলার জন্যে আমাকে নিয়ে আসলে এই কাদার মধ্যে?(উনি কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলেন)
–কেন?আমি বুঝি খারাপ কথা বলছি?
–না তা না।
–হ্যা তাই ই অভ্র ভাই।আমার কথাও এখন আপনার ভালো লাগে না।আপনার সাথে আমি কোথায় একটু কফি খেতে চাইলাম আর আপনি রাগ দেখাচ্ছেন।আমারই ভুল।
–তুমি ভুল ভাবছো সূচী।আমি তো..
–আমি ভুল ভাবছি কি ঠিক তা আমার ভালো মতোই বোঝা হয়ে গেছে।আমি চললাম,একদম আমার পিছু নেবেন না।(আমি ছাতার মধ্য থেকে বের হয়ে গেলাম)
–সূচী শোনো তো..
–বললাম না পিছু নেবেন না।ভালো হবে না কিন্তু(আমি পিছু ঘুরে বলি)ওহ হ্যা।আপনার জন্যে একটা উপহার ছিলো(আমি ব্যাগ থেকে একটা গল্পের বই বের করি)এই নেন ধরেন।ভালো লাগলে পুরোটা পড়বেন না হলে ৩৭ নম্বর পেইজ টা পড়বেন।চললাম আমি।

কোনরকম অভ্র ভাইয়ের হাতে বইটা ধরিয়ে আমি চলে আসি।বেচারা মন খারাপ করে দাড়িয়ে থাকে।ছাতাটাকে কোনরকম ধরে ওই হাতে বইটা নেই।মোবাইলের আলোই বইয়ের নামটা দেখে।বইটা হুমায়ন আহমেদ এই “অপেক্ষা”।ওনার হটাত মনে পড়ে আমি ৩৭ নম্বর পেইজের কথা বলেছিলাম।উনি মুখ ভার করেই ৩৭ পেইজে বের করে বইটা আবার বন্ধ করতে যায় কিন্তু ওনার কেন জানি না মনে হলো ওই পেইজে কিছু লেখা আছে নীল কালির কলমের।উনি তাড়াতাড়ি আবার খোলে পেইজটা।

“ডাক্তারদের চোখ এতোটা কমজোর হলে কি হবে জনাব?সামনে সুন্দরী একটা মেয়ে বেগুনী কাতান শাড়ি পরা তাও ভালো করে খেয়ালই করলেন না(লেখাটা পড়ে অভ্র ভাই অনেক অবাক হয়।সে আবার পড়া শুরু করে)।মানছি লোডশেডিং কিন্তু এটুকু খেয়াল করায় যেতো।সারাদিন বলতে থাকেন যে ভালোবাসেন ভালোবাসেন।তা ভালোবাসার মানুষটির দিকে কি একটু খেয়াল করে দেখা যায় না যে সে আপনার দেয়া প্রথম উপহারের শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে(অভ্র ভাই তো পুরোই থ মেরে গেছে।কারন উনি সত্যিই খেয়াল করেননি যে আমি শাড়ি পরে ছিলাম তা।তাও আবার ওনার দেয়া শাড়িটা)আচ্ছা এখন আফসোস না করে ৪৪ নং পেইজে যান তো,,,,”

(অভ্র ভাই তাড়াতাড়ি ৪৪ নং পেইজে যায়)
“উমম কি ভাবছেন,কি বলবো?আপনি যেটা জানার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তা তো আমি এতো সহজে বলবো না জনাব।হাহাহহাহাহহহহ…আচ্ছা এবার ৫৯ পেইজে যান..”

(অভ্র ভাই ৫৯ পেইজে যায়)
“আমি চাইতাম আমার জীবনে যেই প্রিয় মানুষটা মানে আমার ভালোবাসার মানুষটা আসবে তার সাথে আমি কোন এক বৃষ্টির রাতে ছাতা হাতে হাটবো।সাদা পাঞ্জাবি পরা অবস্থায় সে যখন আমার দিকে তাকিয়ে হাসবে তখন মুখের পানে চেয়ে থাকবো বহুক্ষণ।তার এক হাতে থাকবে ছাতা কিন্তু সে হুট করেই ছাতাটা ফেলে দিয়ে আমার সাথে ভিজবে কোন এক ঝুম বৃষ্টিতে।
তো কি মিষ্টার অভ্র?এখনো কি কিছু বলা লাগবে?প্রথম দুটো কিন্তু হয়ে গেছে শেষেরটা কিন্তু এখনো বাকি…”

অভ্র ভাই বইটা বন্ধ করে।উনি যে কি রিয়াক্ট করবে বুঝতে পারছেন না।উনি আনন্দে কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা।আমি ইনডাইরেক্টলি কি বুঝাতে চেয়েছি সেটুকু বুঝার ক্ষমতা ওনার আছে।ওনার হটাত আমার কথা মনে পড়ে।উনি আমাকে এদিক ওদিক খুজতে থাকেন।কিছুটা পথ হেটে এসে আমাকে দেখতে পান।আমি বৃষ্টির মাঝে দাড়িয়ে ভিজছিলাম।উনি দৌড়ে আমার কাছে এসে হাত থেকে ছাতাটা ফেলে দিয়ে কোন কথা না বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে।আমিও আর নিজেকে বেধে না রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি ওনাকে।কতোক্ষন ওভাবে দাড়িয়ে আছি খেয়াল নেই কারোর।হটাত খুব জোরে বিদ্যুৎ চমকাই।আমরা একে অপরকে ছেড়ে দিই।উনি এক পা পিছিয়ে গিয়ে আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেন।তারপর আমার কাছে এসে আমার হাতটা ধরে বলেন,
–অনেক সুন্দর লাগছে শাড়িটাতে তোমাকে।
–থাক আর বলা লাগবে না।আমি না বললে তো খেয়ালই করতেন না।হাহ!
–না আসলে…
–ওতো আসল নকল জানতে চাচ্ছি না আমি এখন।আমি কতো কষ্ট করে শাড়িটা পরেছি ইউটিউব দেখে,কারোর হেলপ নেইনিন তাও আপনি খেয়াল করলেন না।আপনি খুব পচা অভ্র ভাই!(আমি অভিমানি সুরে বলি)
–আচ্ছা বাবা আমি কান ধরছি।সত্যিই সরি(উনি এক হাত দিয়ে কান ধরেন অন্য হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেন)
–ছাড়ুন।আপনার আর ঢং করা লাগবে না অভ্র ভাই।
— না ছাড়বো না।আচ্ছা অভ্র ভাই অভ্র ভাই কেন বলো?কেমন একটা শুনাই তো(উনি আহ্লাদী সুরে বলেন)
–যা শুনাই শুনাক আমি তো অভ্র ভাই ই বলবো।আর আপনি একদম কথা ঘুরাবেন না এখন।আমাকে তো আর ভালো লাগে না তাই না?পুরোনো হয়ে গেছি তো?নতুন মানুষ লাগবে।সব বুঝি আমি বুঝলেন?
–আচ্ছা আমি কি পাগল না আমার ঘাড়ে দুটো মাথা যে আমি নতুন কাউকে লাগবে এতোবড় একটা কথা ভাববো?ওতো সাহস নেই বাবা(উনি আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে)
–তাই নাকি?(আমি ওনার বুক থেকে মুখ উঁচু করে বলি)
–জী ম্যাডাম।
–মনে থাকে যেন।অন্য কোন মেয়ের কথা ভাবলে খুন করে ফেলবো।
–ওরে বাবা এতোবড় হুমকি।আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম।এ জীবনের মতো আর ও কথা কল্পনাতেও আনা যাবে না।
–হাহাহহাহহহহ(আমি হেসে ফেলি ওনার কথা শুনে উনিও হেসে ফেলেন)
–আচ্ছা এবার তো ওটা বলো?
–ওটা আবার কি?(আমি অবাক হয়ে)
–আরে ওটা।আমি যেটা শুনার জন্যে এতো দিন ধরে ঘুরছি।থ্রি ম্যাজিকাল ওয়ার্ড।
–সে আবার কি?(আমি না জানার ভান করলাম)
–ধুর ওইটা।
–কোনটা?
–আরে ভালোবাসার কথা।তুমি আমাকে ভালোবাসো সেটা।
–ও এটা।
–হ্যা এটা।বলো না পাখি।এই কথাটা শুনার জন্যে আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যায়।আমার মন যে আর মানছেনা।আমার কান মরিয়া হয়ে উঠেছে তোমার মুখ থেকে ওটা শোনার জন্যে।
–আচ্ছা।তোও অভ্র ভাই,আমি..
–তুমি…
–আমি…
–হ্যা হ্যা তুমি।তুমি তারপর বলো..
–আমি এখন আপনাকে জড়িয়ে ধরে থাকবো।ব্যাস..
–কিন্তু…
–এখন আমার আর কোন কথা বলার মুড নেই
–কিন্তু পাখি।
–মুড নেইইইইইইইইইইইইই(আমি চিল্লিয়ে উঠি)
–ওকে ওকে।ঠিকাছে রে বাবা।

আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে নিজেদের হার্টবিট মিশে যাওয়ার মুহুর্তটাই ভেসে যায়।

চলবে……
(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন.কোন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন
ধন্যবাদ)