তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-৩৬

0
937

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৩৬
#জুনাইনাহ_তাসনিম

আমি আজকে আমার মনের কথা তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি।আমি তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি আমি তাকে কতোটা ভালোবাসি।বৃষ্টির মাঝে একে অপরকে জড়িয়েই ছিলাম তখনই অভ্র ভাই মুখ সরিয়ে বললো,
–পাখি বিয়ে করবে?
–কি?বিয়ে করবে মানে?ইয়ারকি নাকি?
–আহা ইয়ারকি মারবো কেন?বলো না বিয়ে করবে?(অভ্র অনেক এক্সসাইটেড হয়ে বলে)
–আচ্ছা করবো(অভ্রর এক্সাইটমেন্ট দেখে আমি না করি না)
–চলো তাহলে এক্ষুনি বিয়ে করি।(উনি আমার হাত ধরে টেনে টেনে নিয়ে যেতে যান।)
–আরে আরে ওয়েট(আমি ওনার হাত ধরে থামিয়ে দিই)
–কেন?এইমাত্রই তো বললে আমাকে বিয়ে করবে তাহলে এখন আবার ওয়েট কেন?(অভ্র মুখ গোমড়া করে বলে)
–হ্যা বলেছি বিয়ে করবো।কিন্তু তার মানে এখন না।
–তো কখন?আগামীকাল?(অভ্র আবার এক্সসাইটেড হয়ে বলে)
–জী না স্যার।আগামীকালও না।(আমি অভ্রর হাতটা জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে বলি)
–তাহলে কবে??(অভ্র ঠোট উল্টে বলে)
–আগে বাসায় বলবো তারপর এ।বুঝলেন স্যার?
–ধুর!ভাল্লাগে না(অভ্র আবারো ঠোট উল্টে বলে)
–হাহাহহাহাহহহ..ওলে বাবালে বাবু লাগ করেছো তুমি??(আমি ইয়ারকি মেরে বলি)
–না।চলো তোমার বাসার দিকে যাই।সবাই অপেক্ষা করছে হয়তো।
–হুম কিন্তু এই ভেজা কাপড়ে?
–তাই তো।কথা তো ভুল বলোনি।আচ্ছা চলো আগে আমাদের বাসায় যাই ওখানে চেঞ্জ করে তারপর না হয় যাওয়া আচ্ছে।

আমি আর অভ্র ওদের বাসার দিকে যায়।এখনো কারেন্ট আসেনি।এদিকে বাসার জেনেরেটর ও নষ্ট।দুজন কোনরকম ফোনের ফ্লাস অন করে বাসার ভিতরে ঢুকি।

*আমি অভ্রর ঘরে রেগে পায়চারি করছি আর অভ্র বিছানার ওপর বসে ভয়ে ভয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি কিছুক্ষন পর পর ওর দিকে তাকাচ্ছি আড় চোখে আর ও ভয়ে ঢোক গিলছে।এই বাসায় আসার পর বৃষ্টির মাত্রা আরো বেড়ে গেছে।বাইরে যেন সবকিছু ভেঙে চুরে যাচ্ছে তারপর এদিকে আমার ফোনের চার্জ শেষ।ওনার ফোন দিয়ে আমার বাসায় জানানো হয়েছে।সবাই বলেছে এই বৃষ্টির মধ্যে যেন বের না হয়।কিন্তু কথা হলো আমার রাগের কারন এটা না।আমার রাগের কারন হলো আমার পরার মতো এখানে কোন জামা নেই।আমি আপুর রুমেও গেছিলাম কিন্তু ওর ওয়ার্ড্রব বিনা পারমিশন এ খুলতেও তো পারবো না। এদিকে নেটওয়ার্কের অবস্থাও খুবই বাজে।মেসেজ কল কোনটাই দেয়া যাচ্ছে না এখন।ভেজা ভারী কাতান শাড়িটাও বা কতোক্ষন পরে থাকবো।সব মিলিয়ে আমার মেজাজ খুব খারাপ।অভ্রকে তো দুবার বকাও দিয়েছি।বেচারার এখানে কোন দোষ না থাকা স্বত্তেও চুপচাপ আমার কথা হজম করে নিয়েছে।আধা ঘন্টা ধরে দুজন এটাই করছি।এদিকে অভ্রর ফোনের চার্জও শেষের পথে।পাওয়ার ব্যাংকেও চার্জ নেই যে একটু চার্জে দেবে ফোনটা।
আমি পায়চারি করছি হটাত অভ্র বলে উঠলো,
–পাখিই,পাখি(আহ্লাদ করে)
–কি পাখি পাখি লাগাচ্ছে হ্যা?আমি কোন পাখি টাখি না।(আমি ধমক দিয়ে বলি)
–রাগ করছো কেন?আচ্ছা তুমিই বলো আমার দোশ কোথায় এখানে??আমি তো আর মেয়েদের কাপড় কিনে রাখিনি তাই না?আর তুমিও তো বড় ভাবি,মেজো ভাবি কারোর কাপড় পারমিশন ছাড়া নিবাও না।আমি তো বলেছিলাম।
–চুপ একদম চুপ।একটা কথাও বলবেন না আপনি।(আমি মুখ বিরক্তিকর করে ওনার পাশে ধপ করে বসে পড়ি)
–ঠিক আছে।কিন্তু এভাবে থাকলে তো তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।আর ঠান্ডা লেগে যদি জ্বর এসে যায় তাহলে তো বিপদ।যদিও তোমার কোন চিন্তা নেই।তোমার বর আই মিন হবু বর বেশ ফেমাস ডাক্তার(আমি রাগে গিজগিজ করতে করতে ওনার দিকে চোখ বড়বড় করে আড়চোখে তাকাই।আমাকে দেখে উনি আবার ঢোক গেলেন যদিও ইচ্ছা করেই ভয় পাওয়ার অভিনয় করে)।না মানে এখনো হয়নি তবে ভবিষ্যতে হবো তুমি দেখো।তবে যাই হোক এই মুহুর্তে তুমি অসুস্থ হও তা আমি চাই না।এখন তোমার শরীর খারাপ হলে তো আর আমি সেবা করতে পারবো না।তাই না??বিয়ের পর তুমি যতো খুশি অসুস্থ হয়ো।আমি তোমার খুব যত্নে সেবা করবো(কথাটা শেষ করে ক্যাবলা মার্কা হাসি দেয় উনি)
–বিয়ের পর আপনি আমার অনেএএএক সেবাযত্ন করবেন তাই তো?
–হ্যা তো করবোই তো।
–এখন তো সেবা করতে পারবেন না।(আমি দাতে দাত চেপে হেসে হেসে বলি)
–হ্যা(উনিও ৩২ টা দাত বের করে বলে)
–এখন ঠান্ডা লাগলে সমস্যা,ড্রেস চেঞ্জ করা লাগবে।তা আমি পরবো ডা কি আপনার মাথা?নাকি উইথআউট ড্রেসেই থাকবো?(আমি রেগে চিল্লয়ে বলি)
–সে তুমি থাকতেই পারো আমার কোন সমস্যা নেই(উনি সামনের দিকে তাকিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলে)
–কিইইইই??
–না মানে তুমিই তো বললে যে উইথআউট ড্রেসে থাকবা?
–আমি কখন বললাম?
–এই মাত্রই তো
–দেখেন অভ্র ভাই।আমি কিন্তু হাচি..(আমি কথা শেষ করতে পারলাম না।হাচি শুরু হয়ে গেলো আমার)
–এই রে যেই ভয়টা পাচ্ছিলাম ঠিক সেটাই হলো।দেখেছো তোমার হাচি শুরু হয়ে গেলো।দেখি তো জ্বর এসেছে কিনা(অভ্র আমার কপালে হাত দিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো জ্বর এসেছে কিনা তা দেখতে।কিন্তু তাপমাত্রা স্বাভাবিক ছিলো)না জ্বর তো আসেনি।কিন্তু আসতে কতোক্ষন ওঠো তো তুমি ওঠো(উনি উত্তেজিত হয়ে পড়ে অনেক।উঠে দাড়িয়ে আমার হাত ধরে টান দেয়)
–উঠবো কেন?
–ড্রেস চেঞ্জ করবা এখন তুমি।ওঠো(আমার হাত ধরে উঠিয়ে দেয়)
–কোথায় পাবো ড্রেস এখন?
–আমার ড্রেস পরবা তুমি?
–মানে টা কি?
–মানে যেটা শুনলে সেটা।হ্যা একটু বড় আর অনেক বেশি লুজ হবে তাও উপায় নেই।
–কিন্তু আমি..
–চুপ।অনেক ফাজলামি হয়ছে সূচী।এবার আমি যা বলবো ওটাই ফাইনাল।

আমার আর কোন কথাই শুনলেন না উনি।ওয়ারড্রব থেকে ওনার একটা টি-শার্ট আর ট্রাওজার বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।আমি নাও করতে পারলাম না।উনি বাইরে গিয়ে দাঁড়ালেন রুমের আমি দরজা কোনরকম ভিজিয়ে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করছিলাম।হটাত অভ্র ভাইয়ের ফোনের ফ্লাস লাইট অফ হয়ে গেলো।রুমটা একদম অন্ধকার হয়ে গেলো।আমি তো ভয়ে কুকড়ে জোরে অভ্র ভাই বলে চিতকার দিলাম।উনি হুড়মুড় করে দরজা খুলে ভিতরে আসলেন।
–সূচী কি হয়েছে পাখি?(ওনার কন্ঠে কেমন একটা ভয়।আমি ওইভাবে চিল্লিয়ে উঠেছি বলেই হয়তো)
–আলো জ্বালান।আমার খুব ভয় করছে অন্ধকারে(আমি প্রায় কেঁদে ফেললাম ভয়ে)
–আলো এখন কোথায় পাবো?দাড়াও আমি ম্যানেজ করছি।রুমে তো ক্যান্ডেল থাকার কথা।ভয় পেয়ো না তুমি।আমি তো আছি।

অভ্র ভাই ক্যান্ডেল খুজতে থাকলেন।অন্ধকারে ধাক্কাও খাচ্ছেন বেশ কয়েকবার উনি।শব্দও হচ্ছে জোরে জোরে কিন্তু বেচারা চুপচাপ তা সহ্য করে হন্নে হয়ে মোমবাতি খুজছে।বেশ খোজার পর উনি মোমবাতি খুজে পেলেন।যেহেতু উনি সিগারেট খান তাই লাইটারও ছিলো হাতের কাছে।লাইটার জ্বালিয়ে মোমবাতিটা ধরালেন।আমি ওনার বাম সাইডে কিছুটা দুরে দাঁড়িয়েছিলাম।
–পাখি আলো এসে গেছে।আর ভয় নেই..

উনি কথাটা বলে আমার দিকে তাকাতেই চুপ করে গেলেন।আমি ওনার কাছে এসে দাড়ালাম।ওনার মুখে কোন কথা নেই।আমি ভ্রু নাচিয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলাম।উনি কিছু না বলে ইশারা করলেন কিছু হয়নি।তারপর দুই পা পিছিয়ে গিয়ে আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বললেন,
–ভালোই লাগছে কিন্তু আমার জামাকাপড়ে।

আমি কোন কথা বললাম না।মুখ ভেংচি দিয়ে বিছানার ওপর গিয়ে বসলাম।উনি টেবিলের ওপর মোমবাতিটা রেখে আমার পাশে এসে বসে পড়লেন।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
–সত্যি ভাল লাগছে।বেশ অন্যরকম লাগছে।
–আচ্ছা ভালো হয়েছে।ক্ষুদা লেগেছে কিছু খাওয়ার হবে??
–তোমার ক্ষুদা লেগেছে সূচী?
–একটু..
–আচ্ছা তুমি বসো আমি চেক করে আসি কিছু খাবার আছে নাকি??
–না না আপনি একা যাবেন না।আমিও যাবো(আমি উত্তেজিত হয়ে বলি)
–হাহাহহাহাহ।।কেন গো?ভূত এসে তোমায় ধরে যাবে বুঝি?
–হ্যা যাবে।
–ঠিক আছে চলো।

আমি আর অভ্র ভাই রান্নাঘরে আসি।খাবার তেমন কিছুই নেই।হতাশ হয়ে ফ্রীজে চেক করি ওখানেও তেমন কিছু পেলাম না।আমি মুখ শুকনো করে ওনার দিকে তাকাই।উনি কিচ্ছুক্ষন ভেবে বলেন,
–পাখি নুডুলস খাবে?
–নুডুলস! এই রাতে?
–হ্যা।
–রান্না করবে কে?আমি এখন নুডুলস রান্না করতে পারবো না।
–লাগবেও না।তোমার ডাক্তার বর এইটুকু রান্না পারে।সো প্যারা নাই চিল।
–ডাক্তার বর?!সে আবার কে?(আমি বাম ভ্রু উচু করে বলি)
–আরে হবু তো।না কি??
–হুম সেটাই বলেন।তা করেন রান্না দেখি কিরকম হয়।
–ওক্কে ম্যাডাম আমাকে ২০ মিনিট টাইম দাও।

অভ্র বাইরে থেকে একটা চেয়ার এনে আমাকে বসতে দেয়।আমি বেশ ভাব নিয়ে বসি।অভ্র ড্র‍য়ার থেকে নুডুলস বের করে সিদ্ধ করতে দেয়।তারপর শুরু হয় অভ্রর কান্নার পালা আই মিন সবজি কাটার পালা।বেচারা গাজর,মরিচ,ব্রোকলি কোনরকম কাটলেও পেয়াজ কাটতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে যায়।ওনার দুই চোখ জলে ভেসে যাচ্ছে তারপরও মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে জোর করে হাসি দিচ্ছে যা দেখে আমার খুব মজা লাগছে।একটা পেয়াজের ৪ ভাগের এক ভাগও কাটতে পারেনি ওনার অবস্থা খারাপ।তাই না পেরেই আমিই উঠলাম।
–আমাকে দিন আমি করে দিচ্ছি।
–না না পাখি তুমি কেন করবা আমি আছি তো,তুমি বসো।
–বললাম তো আমি করে দিচ্ছি।
–না আমি পারবো..
–আমি করে দিচ্ছি বললাম না।

চোখ বড়বড় করে একটু গম্ভির সূরেই বললাম।অভ্র ভাই ভয়ে আর কোন কথা না বলে সুরসুর করে আমার হাতে ছুরি আর পেয়াজ দিয়ে দিলো।আমি ওটা কেটে দিলাম।এদিকে ওনার নুডুলস ও সিদ্ধ হয়ে গেছে।আমি সিদ্ধ নুডুলসটা পানি ঝরিয়ে দেয়ার জন্যে হেলপ করতে চাইলাম কিন্তু স্যার তো বেশি বুঝেন।তিনি নিজেই করবেন বলে খালি হাতেই গরম কড়াইটা ধরে।ব্যাস!সাথে সাথে হাত থেকে ওটা পড়ে গেলো আর ওনার হাতটাও পুড়ে গেলোলো।

চলবে……
(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন।কোন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।
ধন্যবাদ)