তোমাকে_প্রয়োজন
আরোশি_ইসলাম_তিশা
পর্ব :১১
” চারদিগে আলো ঝলমল করছে”।মেহমানদের আনাগোনা বাড়ছে। অনু ওর ফ্রেন্ডদের সাথে পার্লারে গেছে।বাচ্চারা হইচৈই আনন্দে মেতে উঠছে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান নিজ নিজ বাড়িতেই হবে।
মেঘ তুমি তৈরি হবে কখন?
মেঘ পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেল
সুঠাম দেহের অধীকারী একজন সুদর্শন যুবক। পরনে নীল পাঞ্জাবি। হাতে ব্রান্ডের ঘড়ি। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা। অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
ও নিবিড় এতো লেট কেন হলো?
লেট হয়নি মেম, আর তুমি এখনো তৈরি হওনি। যাও তাড়াতাড়ি তৈরি হও।
এইতো তৈরি হওয়ার জন্য যাচ্ছিলাম।
অনুকে স্টেজে এনে বসানো হয়েছে। একে একে সবাই হলুদ দিয়ে যাচ্ছে। অনু তার কাজীনকে মেঘের কথা জিজ্ঞেস করেছিল কয়েকবার। বলেছে মেঘ তৈরি হচ্ছে।
দূরে নিবিড় দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ একটা মেয়ে এসে নিবিড়ের পাশে দাড়ালো। নিবিড় একপলক তাকিয়ে আবার চোখ সড়িয়ে নিল।
এইযে, মিষ্টার নাম কী?
“আমাকে বলছেন ”
যেহেতু আপনি এখানে দাড়িয়ে আছেন তো আপনাকেই বলছি।
ও আমি নিবিড় শাহরিয়া। মেঘের ফ্রেন্ড।
ও আমি তানিশা। মেঘের কাজীন। তো আপনি দাড়িয়ে আছেন কেন?
আসলে মেঘের জন্য ওয়েট করছি। ও আসলে একসাথে যাবো।
মেঘ একটা হলুদ কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে। হাতে চুড়ি, হালকা লিপিষ্টিক, চোখে কাজল সিম্পল মেকাপ, কানে ঝুমকো। সবকিছু ঠিক ঠাক করে আয়নার সামনে দাড়ালো।
হঠাৎ আলো নিভে গেল। মেঘ আলো নিভে যাওয়াতে ভয় পেল। তবে বাইরের কিছুটা আলো আসছে। তারমানে কী ওর রুমের লাইট নষ্ট হয়ে গেল।
আচমকা একটা হাত এসে হেচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। মেঘ আচমকা টান দেওয়াতে ভীত হলো।
নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলো। তবে লম্বা দেহের অধীকারী মানুষটার সাথে পেরে উঠলো না।
মেঘের কানের সামনে একটা কন্ঠসর ফিসফিসিয়ে বলল
“নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করোনা মেয়ে”
আচ্ছা, এভাবে সেজেছো কেন? আমিকে মাতাল করতে। আমিতো এমনিতেই মাতাল। তোমার মাতাল করা ভালোবাসায়।
কন্ঠসর টা শুনে মেঘ ভীত হলো।কারো আসার শব্দ শুনে লোকটা মেঘকে ছেড়ে দিল।
মেঘ যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।
মেঘ তুমি কী ভিতরে আছো?
কে?
আমি নিবিড়।
ও নিবিড়।
নিবিড় রুমে ডুকে দেখতে পেল লাইট অফ। তোমার রুমের লাইট অফ কেন?
জানিনা, হঠাৎ লাইট চলে গেল।
আচ্ছা, চল বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে হয়তো। রুমের লাইট জ্বলে উঠলো। নিবিড় মেঘের দিগে তাকাতেই দেখলো যেন কোন পরী পৃথীবীতে নেমে এসেছে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
কী হলো চলো?
মেঘের কথায় হুশ ফিরলো নিবিড়েরর। হ্যা্ঁ যাচ্ছি।
অনুকে মেঘ আর নিবিড় হলুদ ছোয়ালো।অনুকে তার বান্ধবীরা মিলে মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে। মেঘ আর নিবিড় একসাথে বসে রয়েছে।
মেঘ তুমি মেহেদী কখন লাগাবে?
নিবিড় আমি মেহেদী লাগাবো না। ভালো লাগছে না।
ওহ্ মেঘ প্লিজ এভাবে মন খারাপ করে থেকোনা। কারো জন্য জীবন থেমে থাকেনা।
আমার জীবন তো থমকে রয়েছে নিবিড়!
তপ্ত শ্বাস ফেললো নিবিড়। উঠে গিয়ে হাতে করে একটা মেহেদী নিয়ে আসলো।
মেঘ নিবিড়ের হাতে মেহেদী দেখে জিজ্ঞেস করলো তুমি মেহেদী দিবে?
না, মেম আপনাকে দিয়ে দিবো। মানুষ বলে যার মেহেদীর রং যত লাল হয় তাঁর বর তাকে তত বেশি ভালোবাসে।
তুমি মেহেদী দিতে পারো।
হুম, ছোট বেলায় আমার বোনকে দিয়ে দিতাম। ও বলে আমি অনেক সুন্দর করে দিতে পারি।
মেঘের হাতে নিবিড় মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে। দূর থেকে একজোড়া চোখ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। তার চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে।
বাহ্ তুমি তো অনেক সুন্দর করে মেহেদী দিতে পারো।
“পছন্দ হয়েছে”।
“হুম”।
তানিশা মেঘের পাশে এসে বসলো। মেঘের উদ্দেশ্য বললো মেঘ আজকে আমি তোর রুমে থাকবো। আর অনু আপু ওর ফ্রেন্ডদের সাথে থাকবে বলেছে।
আচ্ছা।
বাহ্ তোর হাতের মেহেদী ডিজাইন টা তো খুব সুন্দর হয়েছে। কে দিয়ে দিল।
ও জানিশ তো নিবিড় খুব সুন্দর করে মেহেদী দিতে পারে। ও আমাকে দিয়ে দিল।
তো, মিষ্টার নিবিড় শুধু নিজের ফ্রেন্ডকে মেহেদী দিয়ে দিলে হবে৷ কাজিনরা কোথায় যাবে?
ও মিস্ তানিশা আপনি দাড়ান আমি মেহেদী নিয়ে আসছি।
অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে প্রায় একঘন্টা আগে। অনু আর পারছেনা খুব টায়ার্ড লাগছে। তাই ও ওর বান্ধবী কে বলো তোরা গিয়ে শুয়ে পড়। আমি ফ্রেশ হয়ে যাচ্ছি।
অনু ফ্রেশ হয়ে আসতেই লাইট অফ হয়ে গেল। হঠাৎ একজোড়া হাত এসে মুখ রুমাল দিয়ে চেপে ধরলো। সাথে সাথে অনু জ্ঞান হারালো।
অনেক রাত হয়েছে বিধায় এদিকটায় মানুষ নেই বললে চলে। লোকটি সহজেই অনুকে বেড় করে আনতে পারলো।
বাইরে একটা কালো গাড়ি দাড়িয়ে রয়েছে। লোকটি অনুকে সেই গাড়িতে উঠিয়ে দিল। নিজে ড্রাইভিং সিটে এসে বসে পড়লো।গাড়ি চলছে আপন গতিতে।
” রাতে পূর্ণিমার চাঁদের দিগে তাকিয়ে আছে মেঘ “।
মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখছে পূর্ব আকাশের বুকে দ্বাদশী চাঁদ অপরূপ সুধা নিয়ে জেগে উঠতে। চাঁদনি রাতের প্রকৃতি এক মায়াময় সৌন্দর্যের অধিকারী।আকাশের বুক থেকে জ্যোৎস্না রাশি ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত পৃথিবীর বুকে আর জাগিয়ে তোলে মোহাময় রূপমাধুর্য।
জ্যোৎস্নার অজস্র ধারায় স্নাত হয় নীরব প্রকৃতি। দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে মেঘের। আজই তার শেষ কান্না আর সে কাঁদবে না। তাকে এগিয়ে যেতে হবে। নিজের জন্য না হলেও তার পরিবারের জন্য।
চলবে।
তোমাকে_প্রয়োজন
আরোশি ইসলাম তিশা
পর্ব ১২
” আলো – আঁধারের স্নিগ্ধ মিতালিতে ঝলমল করে ওঠে জ্যোৎস্নাপ্লাবিত রাত। এমন রাতের অস্পষ্ট মায়ালোকে নিমজ্জিত থাকে প্রকৃতি।জ্যোৎস্নার আলো -ছায়ায় নৃত্য প্রকৃতিপ্রেমী। হাত পা বাধা অবস্থায় একটা মেয়েকে অন্ধকার ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। কালো মাস্ক পড়া একটা ছেলে জ্যোৎস্নার আলোয় মেয়েটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। চাঁদের মায়াবী আলোয় মেয়টার সৌন্দর্য দিগুণ ফুটে উঠেছে।”
ছেলেটা মেয়েটাকে ভালোভাবে দেখে মনে মনে বললো তোমার মতই এক মায়াবতীকে আমার রাজ্যের রাণী করার কথা ভেবেছিলাম।
” এখন মনে হচ্ছে কী জানো”?
স্মিথ হেসে বললো, তাকে আমার কাছাকাছি পেয়ে গেছি।
” জ্যোৎস্নার অমিও সুধা মেঘের শরীরের ওপর লুটোপুটি খাচ্ছে, আর মেঘ মুগ্ধ হয়ে আকাশে পানে চাঁদের দিগে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে পড়ছে অজস্র অশ্রুকণা সেদিকে তাঁর খেয়াল নেই। সে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে প্রকৃতির পানে। জ্যোৎস্নার অপরুপ সৌন্দর্যের মাঝে। জ্যোৎস্নার উপচে পড়া স্নিগ্ধতা রোমান্টিক স্মৃতির জগতে নিয়ে যায়।জ্যোৎস্নার এই অপরুপ সৌন্দর্য না দেখলে হয়তো অপূর্ণ রয়ে যাবে জীবন”।
আজ সারারাত হয়তো এভাবেই কেটে যাবে মেঘের চোখ দিয়ে অশ্রুকণা ঝরছে। মেঘের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে
” হে পৃথিবী যাকে পাবোনা তাকেই কেন ভালোবাসলাম”? পাবোনা জেনেও কেন তার পিছু ছুটলাম? আমার ভাগ্যে কেন তাকে লিখা হলোনা?
কথগুলো যেন স্তব্ধ হয়ে রয়ে গেছে মেঘের মাঝে। সে নির্বিক তার কথা যেন আটকে গেছে।তাঁর কাছে বেচে থাকা যেন দুষ্কর হয়ে গেছে।
“যদি আত্মহত্যা করা পাপ না হতো তাহলে সে নিসন্দেহে তা বেছে নিতো”
এই অসহ্য যন্ত্রণা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। তাঁর কাছে অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মৃত্যাু শ্রেয় বলে মনে হচ্ছে। মেঘ আকাশে পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
” পরের জন্মে সহস্র কোটি তাঁরা হবো। দূর থেকে দেখবো তোমায় সেখান থেকে বলবো তোমায় ভালোবাসি, ভালোবাসি খুব বেশি ভালোবাসি “।
তুমি শুনতে পাবে কী সেই ধ্বনি?
নিজের কথায় নিজেই হাসে মেঘ। জীবনটা তাঁর হেলায় ভাসছে। তাঁর মন মস্তিষ্ক দ্বিধায় পড়েছে। মেঘ তার ডায়েরি টা নিয়ে ফেলে দিল বারান্দা থেকে কী হবে ডায়েরি রেখে।ডায়েরির পাতায় পাতায় রয়েছে অজস্র স্মৃতি। ডায়েরির পাতায় পাতায় না হয় পরে থাকুক তার অব্যক্ত ভালোবাসা।
” আকাশে দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে একটা ছেলে হাতে তার নিকোটিন। নিকোটিনের ধোঁয়ায় তার গোলাপি ঠোঁট গুলো কালো দাগ পরে গেছে। ভিতর তার অজস্র আবেগ অনুভূতি লুকিয়ে রেখেছে”।
আর কিছু মুহূর্তের অপেক্ষা। সব অপেক্ষার অবসান ঘটবে কাল। প্রেয়সীর নিজের করে নিবে সে। তাঁর সব দুঃখ কষ্ট মুছে দিবে সে ।
” সকালের আলো পর্দা ভেদ করে মেঘের চোখে মুখে উপচে পড়ছে রাতে কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে শুয়ে ছিল মেঘ কখন ঘুমিয়ে পড়ছে মনে নেই “।
বাইরে থেকে চেচানোর আওয়াজ ভেসে আসছে। কেউ কাঁদছ চিৎকার করে কী বলছে শুনা যাচ্ছে না ঠিকমতো। মেঘের হুশ আসতেই কালকে ডায়রীর কথা টা মনে পরে যায় ওই ডায়েরি টা কেউ আবার পেয়ে যায়নি তো?
মেঘ ছুট লাগালো বাইরে আসতে মানুষের ভির। ঠেলেঠুলো ভিতরে যেতেই তাঁর মাকে দেখলো চিৎকার করে কাদঁছে।
মেঘ ছুটে গেল মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছ?
মেঘের মা কিছু বললো না মেঘকে জড়িয়ে দরে কাদঁতে লাগলো। মানুষ জন কী যেন বলাবলি করছে?
অনুর বান্ধবীরা দাড়িয়ে ছিল মেঘ সেখান থেকে একাট মেয়েকে জিজ্ঞেস করলো
শ্রেয়া আপু কী হয়েছে বলবে আমাকে? মা কেন কাদঁছে?
শ্রেয়া বললো অনু পালিয়ে গেছে। মেঘের হাতে একাট চিঠি দড়িয়ে দিল।
মেঘ চিঠি টা পরে বাকরূদ্ধ অবস্থায় দাড়িয়ে রইলো।
মাথায় তার আকাশ ভেঙে পড়েছে। বার বার একটা কথায় মাথায় বাড়ি খাচ্ছে, অনু পালিয়েছে।
মেঘের মা মেঘকে জড়িয়ে দরে বললো এবার কী হবে আমাদের। তোর বাবার মানসম্মান তো থাকবে না আর। তোর ফুপি যদি জানতে পারে খুব কষ্ট পাবে। তাদের সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে। এতো মেহমানের সামনে আমাদের সম্মান নিঃশেষ হয়ে যাবে।
মেঘ কিছু বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সবকিছু এলোমেলো লাগছে তাঁর কাছে। অনু কার সাথে পালিয়ে গেল আর কার সাথেই বা গেল?
চলবে।