তোমাকে প্রয়োজন পর্ব-১৪

0
1025

তোমাকে_প্রয়োজন
আরোশি_ইসলাম_তিশা।
পর্ব ১৪

কেটে গেছে দুটো বছর। এই দুই বছরের এমন একটি দিন ও নেই যেই দিন মেঘ আদ্রকে মনে করে নি। এমন একটি দিনও নেই যেই দিন ও কান্না করেনি। তবে দিনশেষে কারো জীবন কারো জন্য থেমে থাকেনা ।

মেঘ ঊষার বিয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে। ঊষা অবশেষে তার ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাচ্ছে।মেঘেরও ইচ্ছে ছিল আদ্র কে নিয়ে ভালো থাকার কিন্তু আদ্র তো চায়নি। কথাটা ভাবতেই বুকের ভিতর টা ছ্যঁত করে উঠলো মেঘের। ভাবতে লাগলো সেই দিনটার কথা…..

অতীত

আদ্র চলে গেছে প্রায় দুসপ্তাহ হবে এই দুসপ্তাহ মেঘ রুম থেকে বের হয়নি। নিজেকে রুমের মধ্যে বন্ধি করে রেখেছিল। তানিশা আয়মান মেঘের মাকে সব জানানোর পর ওরা মেঘকে নিয়ে যেতে চেয়েছে কিন্তু মেঘ যায়নি। তানিশা আয়মান আদ্রর উপর রাগ করে আর ফোন করেনি। তানিশা আয়মান মেঘকে জোড় করে নি বলেছিল আজ থেকে তুই আমার মেয়ে হয়ে থাকবি। নিবিড় মেঘের বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি। পরে যখন মেঘের এই অবস্থা কথা জানতে পেরেছে ও মেঘকে এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে সাপোর্ট করেছে। তারপর প্রায় একমাস পর অনু বাড়িতে ফিরেছে সবাই অনুকে অনেক অপমান করে। অনুর মা ওকে মেনে নিতে চাইনি। মেঘের এই অবস্থা জন্য অনুকে দায়ী করেছে। অনু সবকিছু মেনে নিয়েছে। কেন পালিয়ে গেছে এই প্রশ্নের জবাব অনু দেয়নি? সবসময় এড়িয়ে গেছে।

কেটে গেছে প্রায় পাচঁ মাস। আদ্র চলে যাওয়ার পর প্রায় পাঁচ মাস মেঘ নিজেকে সবার থেকে আড়াল করে রেখেছে। এই পাঁচ মাস নিবিড় সবসময় মেঘকে সাপোর্ট করেছে। মেঘ অনার্স কমপ্লিট করেছে। আদ্র চলে যাওয়ার পর তানিশা আয়মান মেঘকে কতবার বলেছে তুই আবার নিজের জীবনটাকে সুন্দর করে গুছিয়ে নে নতুন কারো সাথে কিন্তু মেঘ চায়নি।

বর্তমান

মেঘের ভাবনা ব্যাঘাত ঘটলোহাতে থাকা মুঠো ফোনের আওয়াজে। নিবিড় কল করেছে। কখন বের হবে জানতে চাইছে?

মেঘ আজকে খুব সুন্দর করে সেজেছে। নীল রঙের শাড়ি হাতে নীল চুড়ি চোখে কাজল সিম্পল মেকাপ। দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।

অনু তড়িঘড়ি করে মেঘের রুমে ডুকল মেঘ অনুর দিগে তাকাতেই অনু হা হয়ে মেঘের দিগে তাকিয়ে রইলো…

মেঘ অনুকে এভাবে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে?

মেঘ তুই জানিশ আজকে তোকে কতো সুন্দর লাগছে? আজ তোকে যে দেখবে সেই ফিদা হয়ে যাবে। আজ কতো দিন পর তুই এতো সুন্দর করে সেজেছিশ? খু সুন্দর লাগছে। পুরো পরীর মতো লাগছে।

মেঘ বলল হয়েছে হয়েছে তুমি কখন যাবে?

অনু বলল ও জানিশ তো মেঘ জয় এখনো তৈরি হয়নি। আমি কতবার ফোন করে বলেছি তাড়াতাড়ি আসতে ও এখনো আসছে না।

মেঘ বলল আচ্ছা, একটা কথা বলো তুমি কী সেদিন জয় ভাইয়ার সাথে পালিয়ে ছিলে?

অনু নিরুত্তর ….

মেঘ এই নিয়ে বহুবার এই প্রশ্ন টা করেছে। কিন্তু কোন উওর দেয়নি অনু। মেঘ বলল আচ্ছা, ঠিকআছে আমি জয় ভাইয়াকে বলে দিবো যাতে আমার এই সুন্দরী আপুটাকে আর ওয়েট না করায়।

মেঘ অনুকে বলল আমি যাচ্ছি তুমি জয় ভাইয়ার সাথে তাড়াতাড়ি এসো। নিবিড় আমার জন্য ওয়েট করছে।

বাইরে একটা কালো গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিবিড়। নীল পান্জাবি হাতে ব্রান্ডের গড়ি চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা। কালো সানগ্লাস। দেখতে সুদর্শন যুবক।

মেঘ বাইরে বের হতেই নিবিড়ের চোখ পড়ল মেঘের দিগে নিবিড় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘের দিগে….

মেঘ বলল কী দেখছো?

তোমাকে বলেই হুশ এলো নিবিড়ের মানে এইযে তোমার ড্রেস আমার সাথে মিলে গেল এটাই দেখছি।

“মেঘ বলল ও চলো তাড়াতাড়ি “।

“হ্যা চলো”।

চারদিকে আলো ঝলমলকরছে। বিভিন্ন রকমের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা।

মেঘ আর নিবিড় গাড়ি থেকে দাঁড়ালো। নিবিড় বলল মেঘ তুমি যাও আমি ঊষার গিফট টা নিয়ে আসছি।

“আচ্ছা “।

মেঘ বাইরে এসে দাড়াতে পরিচিত একটা কন্ঠস্বর মেঘ বলে ডেকে উঠলো। মেঘ পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে স্তব্ধ হয়ে রইলো। বুকের ভিতরটা ছ্যঁত করে উঠলো।মেঘ পিছনে ফিরতেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে পেল না। মেঘ নিরাশ হয়ে ভিতরে গেল। হয়তো সবসময় তার কথা ভাবতে থাকে বলে এরকম হয়েছে। মেঘ যতই বলুক ও আদ্র কথা ভাবে না।

” কিন্তু ওর মন মস্তিষ্ক জুড়ে শুধুই আদ্র রয়েছে”।

মেঘ ভিতরে যেতেই ঊষা জিজ্ঞেস করলো এই তোর আসার সময় হয়েছে? এই আমি তোর বান্ধবী তুই আমাকে একদম ভালোবাসিস না মেঘ। নাহলে তুই এটা আমার সাথে কিছুতেই করতে পারতি না। আমার একমাত্র বান্ধবী হয়েও তুই কীভাবে পারলি এতো লেট করে আসতে?

“আচ্ছা, সরি প্লিজ রাগ করিশ না “।

ঊষা বলল, নিবিড় কোথায়?

“ওর কথা বলিশ না। ও তোর গিফট বাড়িতে রেখে চলে এসেছে সেটাই আবার নিয়ে আসতে গেছে।”

“ও তুই কেন যেতে দিল মেঘ পরে কী দেওয়া যেত না”?

ও না বললে শুনতো। আর তোকে যে আজ কী সুন্দর লাগছে ঊষা।তবে অবশ্য বিয়ে বাড়িতে সবার থেকে বউকেই ভালো লাগে। কারণ সবাই বউকেই দেখে।

ঊষা বলল,সেটা না হয় বুঝতে পারলাম তোর দিগ থেকে তো চোখ ফিরানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। আমি যদি ছেলে হতাম তোকে নিয়ে এখনই গায়েব হয়ে যেতাম।

রেষ্টুরেন্ট বসে আছে আদ্র আর নিবিড়। নিবিড় নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। নিজেকে সংযত করে আদ্রকে প্রশ্ন করলো

আপনি এমন কেন করছেন?

আদ্র বলল কেমন?

নিবিড় বলল,বুঝেও কেন এরকম করছেন?আপনি মেঘকে ভালোবাসেন?

“আদ্র বলল,না”

নিবিড় বলল,তাহলে ছেড়ে দিন। ।

আদ্র বলল,ও চাইলে আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিবো।

নিবিড় তাচ্ছিল্য হাসলো। তাহলে আজকে ওকে ডাকলেন কেন?

আদ্র বিস্মিত নয়নে তাকালো নিবিড়ের দিকে। কিছু বলল না।

নিবিড় তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল।আমি জানি আপনি মেঘকে ভালোবাসেন তবে কেন এরকম করছে ন আমার জানা নেই আমি কারণ টা জানার চেষ্টা করবো।

আদ্র তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো, আসলে বিডিতে একটা কাজের জন্য এসেছিলাম। তো গাড়িতে ছিলাম হঠাৎ মেঘকে দেখে ডেকে ফেলছিলাম। আর তুমি ভুল ভাবছো।

মেঘ নিবিড়ের সাথে কথা বলছিল। একটা মেয়ে এসে বলল, তোমার নাম মেঘ না।

মেঘ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল, জি। কিন্তু আপনাকে তো চিন্তে পারলাম না।

মেয়েটি বলল, আমি নিলা। আদ্রর ফ্রেন্ড।আমরা এক সাথে পড়াশোনা করেছি। তোমাকে সামনাসামনি দেখার অনেক ইচ্ছে ছিল। তোমার ভাগ্যে দেখে খুব ঈর্ষা করতে ইচ্ছে করে জানো।তুমি খুব ভাগ্যেবতী।

চলবে