তোমাকে_প্রয়োজন
আরোশি_ইসলাম_তিশা
পর্ব ১৫ শেষ
মেঘ যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। সে থৈ থৈ জলে যেন মেঘ ভেসে যাচ্ছে। একটু আগে নিলা নামের মেয়েটার কথা গুলো বুকের ভিতর নুইয়ে থাকা ভালোবাসার জ্বালা টুকু হাজার খানেক যন্ত্রণা দিচ্ছে।
অতীত
নিলা নামের মেয়েটি কথা উপেক্ষা করে মেঘ পা বাড়াতেই নিলা বলে উঠলো মেঘ তোমায় আদ্র অনেক ভালোবাসে।
মেঘ চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিলো বলল কোন ভালোবাসার কথা বলছেন আপনি। এই যে আদ্র ভাই আমাকে কখনো ভালোবাসেন নি।এই যে এক আকাশ সমান ভালোবাসা কে ওনার কাছে অভিনয় মনে হতো।এই যে আমি ওনার জীবনের অভিশাপ। এই যে আমাকে ওনি বিয়ে করে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন। মেনে নিয়েছি তো? কেন বারবার আপনারা আমাকে আঘাত করেন আমি ওনাকে ভুলে যেতে চাই।
নীলা বলল কী বলছো তুমি? আদ্র তোমাকে ভালোবাসে না।
মেঘ বলল আমি ওনার জীবনে কাঁটা স্বরূপ। যেটা কে তিনি নিজ হাতে সড়িয়ে ফেলেছেন।
তুমি ভুল ভাবছো মেঘ এমন কিছু নয়। আর তোমাকো বিয়ে করার জন্য তোমার বোনকে আটকে রেখেছিল আদ্র আর সেই আদ্র তোমাকে ভালোবাসে না এটা তুমি কী করে বলছো?
মেঘ বিস্মিত নয়নে নীলার দিকে তাকালো কথা বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলছে।
একটা ছেলে এসে নীলা নামের মেয়েটি বলল সময় হয়ে গেছে চলে যেতে হবে। নীলা মেঘের দিগে একপলক তাকিয়ে চলে গেল।
বর্তমান
মেঘ বাড়িতে এসে অনুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে। অনু মেঘের এইভাবে কান্না করায় একটু অবাক হলো। মেঘ বলল সবাই আমায় ঠকালো তুমি কীভাবে আমাকে ঠকাতে পারলে আপু?
অনু বিস্মিত নয়নে তাকালো মেঘের দিগে। কী বলছিস মেঘ?
আমি তোমায় কতোবার জিজ্ঞেস করেছি ওইদিন কেন পালিয়ে গেছিলে তুমি কিছু বলো নি। এটা কেন বলোনি আপু আদ্র ভাই তোমাকে আটকিয়ে
রেখেছিল কেন বলোনি ওনি আমাকে ভালোবাসেন।সবাই কেন আমাকে ঠাকলে কেন?
অনু আমতা আমাতা করে বলল আমি মানে আমি আমি জানাতাম না মেঘ ।
মেঘ তাচ্ছিল্য হাসলো।আজ যদি তুমি আমায় সবকিছু না বলো তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। মেঘ ছুড়ি নিয়ে হাত কাটতে নিতেই অনু এসে মেঘের গালে
থাপ্পড় বসিয়ে দিল।
অনু বলল, আমি সত্যি জানতাম না আদ্র ভাই তোকে ভালোবাসে। আমি পরে জানতে পেরেছি। জয় আদ্র ভাইয়ার চাচাতো ভাইয়া সবচেয়ে ভালো বন্ধু যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে আদ্র ভাইয়া তাই জয়কে দিয়েই আমাকে কিডন্যাপ করেছিল। যখন আমাকে জয় বাড়িতে দিয়ে গেল যাওয়ার আগে আদ্র ভাইয়ার সাথে জয়কে কথা বলতে দেখেফেলেছিলা আমি । পরে সব জানতে পেরেছি। তোকে বলেনি কারণ তুই সব জানতে পারলে সহ্য করতে পারতি না। তাই বলি নি।
মেঘ অনুকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বলল কী এমন কথা যে আমি সহ্য করতে পারবো না। বল আমাকে আপু প্লিজ প্লিজ আজ চুপ থেকো না।
নিজের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে হবে তোকে। তুই আমার আপন বোন না। আমার আব্বুর বন্ধু মেয়ে তুই। তখন ফুপি আমাদের বাসায় থাকতো। তোর বাবা মার সাথে তুই কয়েকবার এসেছিলে আমাদের বাড়িতে তবে আদ্র ভাইয়ার আব্বু র সাথে তোর বাবা বিজনেস করতেন। আদ্র ভাইয়ার জন্মদিনে তুই ওদের বাড়িতে গিয়েছিলি। ওইদিন আদ্র ভাইয়াকে আদ্র ভাইয়ার আব্বু একটা গাড়ি গিফট করেছিল।আদ্র ভাইয়া তখন ছোট ড্রাইভ করতে পারতো না। তোর বাবা মা কোন বিষয় নিয়ে কথা কাটা কাটি করছিল।আদ্র ভাইয়া গাড়িতে বসে ড্রাইভিং শিখছিল হঠাৎ করে গাড়ির ব্রেক কাজ করছিল না। তোর বাবা মা ঝগড়ার এক পযার্য়ের চলে আসতে নিলে আদ্র ভাইয়ার গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে দুজন মারা যায়। কিন্তু এতে আদ্র ভাইয়ার দোষ ছিল না। আদ্র ভাইয়া তোর বাবা মাকে মারতে চায়নি।তখন তুই অনেক ছোট। তোর সেসব কথা মনে নেই। আদ্র ভাইয়ার আব্বু ভয় পেয়ো গেছিল যদি সবকিছু জানা জানি হয়ে যায় তাহলে যদি আদ্র ভাইয়াকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তাই তিনি আদ্র ভাইয়াকে লন্ডন পাঠিয়ে দিয়েছেন।
তবে আদ্র ভাইয়া তোকে ছোট থেকেই ভালোবাসতো। ওই দিন আদ্র ভাইয়া তোকে ছেড়ে যেতে চান নি। পরিস্থিতি তখন হাতের বাহিরে চলে গেছে তাই আদ্র ভাইয়াকে চলে যেতে হয়েছিল। ফিরে এসে যখন তোকে বিয়ে করতে চাইল তখন আদ্র ভাইয়ার আব্বু তোকে মেনে নিতে পারছিল না।ওনি আদ্র ভাইয়ার সাথে এ বিষয় নিয়ে অনেক ঝামেলা করেছেন।আদ্র ভাইয়া যখন সবকিছু ছেড়ে তোকে নিয়ে লন্ডন চলে যাবে বলল তখন আদ্র ভাইয়ার আব্বু আদ্র ভাইয়াকে ভয় দেখালেন এটা বলে যদি তুই জানতে পারিস আদ্র ভাইয়ার জন্য তোর বাবা মা মারা গেছে তাহলে তুই আদ্র ভাইয়াকে ছেড়ে চলে যাবি। পৃথিবীর সবার চেয়ে বেশি ঘৃণা করবি। হয়তো নিজেকে শেষ করে ফেলবি।তাই সেদিন আদ্র ভাইয়া তোকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। আদ্র ভাইয়া তোকে সত্যি খুব ভালোবাসে। আজ ওনার ফ্লাইট হয়তো আজ চলে গেলে আর ফিরবে না।
দু পা পিছেয়ে যায় মেঘ। নিজেকে শূন্য মনে হচ্ছে ওর।এতো যন্ত্রণা আগে কখনো হয় নি। মেঘের পৃথিবী যেন থমকে গেছে। অনুর দিগে ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো। ছুটে এসে অনুকে জড়িয়ে ধরলো।
নিবিড় বাইরে দাড়িয়ে সবকিছু শুনেছে। নিবিড় মেঘের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। তাকায় মেঘ। প্রচন্ড ব্যস্ত দেখাচ্ছে ওকে। কানে ফোন। নিবিড় বলল আদ্রর ফোন অফ। এখনো সময় আছে। সন্ধ্যায় ফ্লাইট।
মেঘ কথা বলে না। নিবিড় ড্রাইভ করতে থাকে।মেঘকে নিয়ে চলে এয়ারপোর্টে।
মাথা নিচু করে বসে আছে আছে আদ্র। কারো পায়ের শব্দ শুনে তাকাতেই মেঘকে দেখতে পায়। মেঘকে দেখে যেন হতবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে ছেলেটা। বলে মেঘ আপনি এখানে!
আমাকে এতো ভালোবাসেন আপনি কথাটা বলে আদ্র বুকে ঝাপিয়ে পরে মেঘ। আদ্র নিবিড়ের দিগে তাকাতেই নিবিড় বুঝিয়ে দিল মেঘ সবকিছু জানে।
আদ্র শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মেঘকে। চিৎকার করে বলে ভালোবাসি মেঘ খুব ভালোবাসি। আপনার থেকে ও বেশি৷মেঘ বলল আর ছেড়ে যাবে না তো। আদ্র বলল আমার বেঁচে থাকার জন্য তোমাকে প্রয়োজন।
[ সমাপ্ত]