তোমাকে প্রয়োজন পর্ব-২+৩

0
1561

তোমাকে_প্রয়োজন
আরোশি_ইসলাম_তিশা
পর্ব২

” সেদিন আদ্রদের বাড়ি থেকে অনু আর মেঘ চলে আসে । ফুপি কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না পরে মেঘ তাকে মায়ের অসুস্থতার কথা বুঝিয়ে চলে আসে।

” ভোরবেলা থেকে বৃষ্টি শুরু হলো। সকালের ঘুম আর ভাঙছিল না মেঘের। এদিকে মা ডাকাডাকি করছে। ঘুমের ঘোরে শুনতে পেল ‘ তাড়াতাড়ি ওঠ, ভার্সিটিতে যাবি না? ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল বেলা সাড়ে আটটা বাজে। মেঘ চিন্তিত হয়ে পড়ল কখন রেডি হব? কখন নাশতা খাব এবং ভার্সিটিতে যাবো ।

তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠলো মেঘ। দ্রুত রেডি হয়ে বের হলো। মা আর অনু ডাইনিং টেবিলে বসে আছে মা তুমি একটু আগে ডেকে দিতে পারলে না বলতে বলতে ডাইনিং টেবিলে বসলো মেঘ। তোকে সাত টা থেকে ডাকছি । অনু তুই কী আজ ভার্সিটিতে যাবি। না মেঘ আজ যাবো না তুই যা।

( অনু আর মেঘ দু বোন অনু অনার্স তৃতীয় বর্ষে আর মেঘ ১ ম বর্ষে)

নাশতা করে বাইরে এসে দেখল তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। কোনো রিকশা ও আশে পাশে দেখছেনা মেঘ। হঠাৎ একটি রিকশার দেখা পেল মেঘ কিন্তুু ৫০ টাকর ভাড়া ১৫০ টাকা। অগত্যা রাজি হয়ে রিকশায়,উঠে পড়ল মেঘ। রিকশাওয়ালার ছোট পলিথিন দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করল মেঘ কিন্তু ভার্সিটিতে পৌঁছাতে ভিজে জুবুথুবু হয়ে গেল। মনে মনে তার বানদুবি উষা কে বকা দিল তার জন্য আজকে এই বৃষ্টি মধ্যে তাকে ভার্সিটিতে যেতে হচ্ছে।

” ভার্সিটিতে ঢোকার কিছু সময় পর বৃষ্টি থেমে গেছে। মেঘ ভার্সিটি ভিতরে লাইব্রেরি রুমে অপেক্ষা করছে উষার জন্য। হঠাৎ পিছন থেকে উষা মেঘ কে ডাক দিল কী রে তুই তো পুরো কাক ভেজা হয়ে আসছিস। মেঘ কিছু টা রে*গে বলল এতো সময় লাগে তোর নিজেই আসতে বললি এখন এসে দেখি তোর কোন খবর নেই। সরি মেঘ বৃষ্টি তো সেজন্য দেড়ি হয়ে গেছে। তোর ও-ই সরি তোর কাছে রাখ আমার শরীর পুরো ভিজে গেছে। আর কী দরকারী কথা বলবি যা তোর ফোনে বলা যাচ্ছিল না এখানে বলতে হবে।

” উষা কিছু টা চিন্তায় পরে গেল কী করে বলবে মেঘকে নীলের কথা সেটা ভাবতে লাগলো। হঠাৎ মেঘের ডাকে হুশ আসলো উষার। কী বলবি বল উষা। হুম বলছি বল আসলে আমি আমি মানে কী আসলে আমি মানে করছিস তখন থেকে আসলে আমি একজন কে ভালোবাসি মেঘ চোখ বন্ধ করে একদমে কথাগুলো বললো উষা। মেঘ উষার কথা শুনে বিস্মিত! হয়ে চেয়ে রইলো চোখ খুলে উষা দেখল মেঘ এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বল মেঘ আমি সত্যি নীল কে ভালোবাসি। মেঘ কিছু সময়ে জন্য যেন অন্য জগতে চলে গেছিল উষার কথায় হুশ আসে কী তুই নীল কে ভালোবাসিস ( নীল, মেঘ, উষা

তাড়াতাড়ি তিনজন খুব ভালো বন্ধু একই ক্লাস পড়ে)

” তাহলে আমাকে কেন বলছিস নীল কে বল। হুম বলবো তো কালকে কিন্তু কীভাবে যে বলি আর তাছাড়া কাল তো ভার্সিটিতে একটা পোগ্রাম আছে কে জানি আসবে চিপ গেস্ট হয়ে আদিয়াত আয়মান নাকি কী যেন নাম। হঠাৎ আদ্রিয়ান আয়মান নাম শুনে অবাক হলো মেঘ মনে মনে ভাবলো আদ্রের কথা না ওনার নাম তো আদ্রিয়ান আয়মান আদ্র ওনি না আর ওনি এখানে আসবেনই বা কেন? কীরে কী ভাবছিশ মেঘ না কিছু না তাহলে এটাই কথা থাকলো কালজে তুই নীলকে প্রপোজ করছিস হুম। আর শুন উষা কালকে তুই একটা শাড়ি পরে আসবি। তাহলে তোকেও শাড়ি পরে আসতে হবে মেঘ যেহেতু কাল অনুষ্ঠানে সবাই শাড়ি পরে আসবে তাই তোকেও পরে আসতে হবে। আচ্ছা। তাহলে কালকে দেখা হচ্ছে। হুম

” এদিকে আদ্র কার সাথে যেন কথা বলছে হ্যা মিষ্টার আদি আমি ঠিক সময় পৌঁছে যাবো চিন্তা করবেন না।
তাহলে আমি এখন রাখি। হুম।ফোনটা রেখে দিয়ে একটা ডেভিল হাসলো আদ্র। মনে মনে বলল তৈরি থেকে জান কাল থেকে তোমার শাস্তি শুরু আমি যতোটা ক*ষ্ট পেয়েছি এই ১১ বছর তার থেকে বেশি ক*ষ্ট তুমি পাবে জান। রেডি থেকো।

চলবে,,,,,,

তোমাকে_প্রয়োজন
আরোশি_ইসলাম_তিশা
পর্ব : ৩

” সকাল বেলা মায়ের চিৎকারে ঘুম থেকে জেগে উঠল মেঘ। মনে হচ্ছে বাইরে কিছু হয়েছে তাই তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠলো মেঘ।

হায়! হায়! আমার শখের মুরগী টা কে চু*রি করলো। অনু মাকে শান্তনা দিচ্ছে। মেঘ গিয়ে দেখলো তার মায়ের শখের মুরগী টা কে যেন চু*রি করে নিয়ে পালিয়েছে। ও মা কী শুরু করলে সকাল বেলা একটা মুরগী জন্য কেউ এভাবে চিৎকার করে।মেঘ মার ওটা শখের মুরগী ছিল। জানি এখন চিৎকার করে কান্নাকাটি করলে কী চোর সেটা বাড়িতে এসে দিয়ে যাবে নাকি? হয়েছে তোর না আজকে ভার্সিটিতে পোগ্রাম আছে। হুম। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে উষা কল করেছিল।

” আজকে একটা নিল শাড়ি পড়ছে মেঘ। হাতে নীল চুড়ি, কানে ঝুমকো, কপালে টিপ,আর হালকা লিপস্টিক, কাজল এতোটুকু তে মেঘকে অপরুপ সুন্দর লাগছিল।চুলগুলো খোলা হাওয়ায় উড়ছিল। অনু মেঘের ফোন দিতে এসে আয়নার মেঘের প্রতিবিম্ব দেখে বলল বাহ্ মেঘ তোকে তো আজ পরীর মতো লাগছে। মেঘ পিছনে ঘুরে তাকালো বলল তাই বুঝি। অনু মেঘের কাছে এসে কপালে চুমু দিয়ে বলল হুম অনেক সুন্দর লাগছে।

” ভার্সিটির সামনে দাড়িয়ে আছে উষা মেঘ রিকশা ভাড়া মিটিয়ে উষার সামনে এসে দাড়াল। কীরে মেঘ আজকে তো তোকে পুরো হুর পরীর মতো লাগছে। আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে এখনই উঠিয়ে নিয়ে চলে যেতাম। উষা থাম আর তোকেও তো আজ কম সুন্দর লাগছে না নীল তোকে দেখলেই পা*গ*ল হয়ে যাবে। সত্যি বলছিস হুম সত্যি এবার চল কথা বলতে বলতে ভার্সিটিতে ঢোকল মেঘ উষা।

চারদিকে বেলুন আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। স্টেজ দিগে চোখ পড়ল মেঘের যেখানে একটা নাম ঝল ঝল করছে। নামটার দিকে একপলক তাকিয়ে ত*প্ত নিশ্বাস ফেললো মেঘ। মেঘ দেখ মেয়েরা আজকে এতো সেজেগুজে বসে আছে মনে হচ্ছে কারো জন্য অপেক্ষা করছে হু দেখে মনে হচ্ছে কারো আসার অপেক্ষা করছে।

কালো পাঞ্জাবি পরে নীল আসছে মেঘেদের কাছে উষা তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কীরে তোদের আসতে এতো লেট হলো কেন? আমরা তো কখন এসেছি তোর তো কোন দেখা নেই। জানিশ তো আজকে আমার উপর কতো দায়িত্ব ভাইয়া সব দায়িত্ব আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে এতো দায়িত্ব সামলে আসতে দেড়ি হয়ে গেল ( নীলের বড় ভাই ভার্সিটির প্রিন্সিপাল) আর আজকে তো আদ্রিয়ান আয়মান আসছে সেজন্য মেয়েরা আজ সেজেগুজে হাজির হয়েছে। হাজারো মেয়ের ক্রাশ হচ্ছে আদ্রিয়ান আয়মান টপ বিজনেস ম্যানদের একজন তাছাড়া তিনি ভার্সিটিতে ডোনেশন দেন। আজকে চিপ গেস্ট হয়ে আসছেন আদ্রিয়ান আয়মান আর অনেক নামীদামী লোকজন আসবে।

” একটা ছেলের জন্য এ-তো গুলো মেয়ে সেজেগুজে বসে আছে? মেঘ জানিশ তো আদ্রিয়ান আয়মান কে দেখার অনেক শখ আমার ওনার কথা আমি শুনেছি কিন্তু দেখেনি কখনো। থাম তুই একটা ছেলের জন্য এরকম করছিশ আর তুই না আজকে নীল কে প্রপোজ করবি ভুলে গেলি। না মেঘ আসলে আজ নীল খুব ব্যস্ত মনে হচ্ছে আজ যদি করি যদি না করে দেয় তখন, আরে এতো ভাবতে হবে না তোকে গিয়ে বলে তো দেখ কীরে তোরা দুজন কী ফিসফিস করে বলছিস (নীল)

কিছু না তো কিছু না আর শুন মেঘ আড উষা তোরা দুজন সামনে দাড়াবি আর মেঘ তোকে ভাইয়া বলছে চিপ গেস্ট কে স্বাগত জানাতে আর উষা তুমিও মেঘের সাথে থেকো। আচ্ছা নীল। আমার কিছু কাজ আছে আমি এখন আসছি।

চলবে………