তোমাকে_প্রয়োজন
আরোশি_ইসলাম_তিশা
পর্ব ৬
হঠাৎ একজোড়া শক্তপক্ত বাহু এসে মেঘকে জড়িয়ে দরলো। মেঘ নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আপ্রান চেষ্টা করছে কিন্তু শক্তপক্ত বাহুর সাথে পেড়ে উঠলো না।
“হঠাৎ একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসলো নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করো না মেয়ে”
এতক্ষণ মেঘের রুমের লাইট অফ ছিল বাইরের আলো রুমে প্রবেশ করার কোন উপায় ছিল না। হঠাৎ আলোটা জ্বলে উঠলো মেঘ আর কাউকে দেখতে পেল না। তবে কে তাকে জড়িয়ে ধরেছিল এটা তার বোধগম্য হলো না। এদিকে মেঘের মনে অজানা এক কষ্ট অনুভব করছে সে কেন এই ক*ষ্ট জানা নেই তার।
মেঘের মা আদ্রদের বিদায় দিয়ে অনুকে মেঘের রুমে পাঠাল হঠাৎ এভাবে চলে আসার কারণে মেঘ বেলকানিতে দাঁড়িয়ে ছিল। পিছন থেকে কারো হাতের স্পর্শে ফিরে তাকালো।
কীরে এভাবে চলে আসলি যে?
“এমনিই ”
“মেঘ তোর কী কোন কারণে মন খা*রাপ?”
“কেন বলতো”?
“না তোকে দেখে মনে হচ্ছে তোর মন ভালো নেই ”
মেঘ উওর দিল না। তপ্ত শ্বাস ফেললো।
অনু আর কিছু বললো না। চলে গেল।
মেঘ আজ অনেক দিন পর উষার সাথে দেখা করলো। মেয়েটা বড্ড বুদ্ধীমতি চট করে মেঘের মন খা*রাপ বুঝে গেল। তবে সে প্রকাশ করলো না। সে জানে মেঘ বড়াবড়ই চাপা স্বভাবের ও যদি নিজ থেকে কিছু বলছে নিশ্চই কোন কারণ আছে তাই জিজ্ঞেস করলো না।
মেঘ চলনা আজকে ফুচকা খাই।
মেঘ এতক্ষণ আকাশের দিকে চেয়েছিল উষার কথায় তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো চল।
মেঘ আর উষা ফুচকা খাচ্ছিল হঠাৎ বিষম খেল মেঘ
এক বোতল পানি এগিয়ে দিল একটা হাত মেঘ তাড়াতাড়ি পানির বোতলাটা নিয়ে পানি খেলো।
এতক্ষণে পানি খাওয়ার চক্করে সামনে থাকা ব্যাক্তিটির দিগে তাকাতেই ভুলে গেছিল। ছেলেটি সুদর্শন যুবক, অপলোক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে উষা কন্ঠে হুশ ফিরলো মেঘের। মেঘের জন্য পানি আনতে গিয়েছিল উষা। মেঘ ঠিক আছিশ তুই এই নে পানি।
মেঘ বললো আর লাগবেনা।
“সামনে থাকা লোকটি বলল কেউ সাহায্য করলে তাকে ধন্যবাদ জানাতে হয় ম্যাম ”
“ধন্যবাদ”
আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে কী আপনার নাম জানতে পারি?
জি, আমি মেঘ
“আমি নিবিড় শাহরিয়া ”
উষা মেঘকে চিমটি কেটে বললো আর কিছু জানাবি নাকি এভাবে দাড়িঁয়ে থাকবি।
মেঘ আর কিছু বললো না। ছেলেটার ফোন আসাতে পিছনে ফিরে কথা বলছিল।
ততক্ষণে মেঘ আর উষা চলে গেল।
নিবিড় পিছনে ফিরতেই আর মেঘ কে দেখতে পেল না। তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো
” কে তুমি মায়াবতী এ কোন মায়ায় জড়ালে আমায় ”
অন্যদিকে আদ্র ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছিল। ওদিকের কাজ সব ঠিকঠাক। লোকটি উওর দিল জি স্যার।
কলটা কেটে আদ্র বলে উঠলো। আর কিছু সময়ের অপেক্ষা করো জান। আমি সবকিছু ঠিক করে দিব।
চলবে,,,,,,
তোমাকে_প্রয়োজন
আরোশি_ইসলাম_তিশা
পর্ব-৭
আজ অনেকদিন পর মেঘ ভার্সিটি গেলো। ঊষা মেঘের জন্য অপেক্ষা করছিল মেঘকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসলো।
কীরে মেঘ কেমন আছিশ?
এই তো ভালো। চল ক্লাসে যাই মেঘ আর ঊষা পা বাড়াতেই একটা ছেলে মেঘ বলে ডেকে উঠলো। পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো একটা সুদর্শন যুবক তার দিগে এগিয়ে আসছে।
কাছে আসতেই মেঘ বললো আপনি এখানে কী করছেন?
তাহলে তুমি আমাকে চিনতে পেরেছো। আমি এই ভার্সিটিতেই পড়ি আর তোমার সাথেই। তোমাকে দেখতে পেলাম তাই আসলাম।
ও কিন্তু আগে তো আপনাকে কোনদিন ভার্সিটিতে দেখেনি।
আসলে আমি তোতটা ভার্সিটিতে আসি না
ও আচ্ছা চলি ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।
মেঘ পা বাড়াতেই নিবিড় আবার বলে উঠলো মেঘ আমরা কী বন্ধু হতে পারি?
মেঘ কিছুটা ইতস্তত বোধ করছিল ঊষা বললো আচ্ছা ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই। আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড হলাম। চলো ক্লাসে যাই।
ক্লাসে মেঘ আর ঊষা একই সাথে বসলো পিছনে নিবিড় বসলো। ক্লাসে স্যার আসতেই সবাই দাড়িয়ে উঠলো। মেঘ যেন বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে রইলো।
সিট ডাউন প্লিজ।
সবাই বসে পড়লেও মেঘ এখনো দাড়িয়ে আছে। ঊষা মেঘের হাতে চিমটি কেটে বললো কীরে মেঘ দাড়িয়ে আছিশ কেন?
মেঘ তো পুরো অবাক কারণ তার সামনে আর কেউ না দা গ্রেট আদিয়াত আয়মান আদ্র দাড়িয়ে আছে।
আদ্র মেঘকে ধ*ম*ক দিয়ে বসতে বললো।
মেঘ ঊষা কে জিজ্ঞেস করলো ওনি এখানে ঊষা বললো ওনি তো আমাদের নতুন টিচার হিসেবে জয়েন করেছে। জানিশ তো খুব রা*গি। আর তুই কী ওনাকে চিনিশ নাকি?
হ্যাঁ।ওনি আমার কাজিন হয়। তবে আর কাউকে বলবি না আদ্র ভাইয়া ব্যাক্তিগত লাইফ আলাদা রাখতে পছন্দ করেন।
তো স্টুডেন্টস তোমাদের গতকাল যে পড়া দিয়েছি সেগুলো কী কমপ্লিট হয়েছ আর যে না পারো তাড়া ক্লাসের বাইরে গিয়ে দাড়াও। মেঘ প্রায় অনেকদিন ভার্সিটিতে আসেনা তাই পড়াশোনাও ঠিকমতো করা হয় না। তাই সে ক্লাসের বাইরে দাড়িয়ে রইলো।
আদ্র৷ মেঘের দিগে একবার তাকিয়ে আবার সবাই কে জিজ্ঞেস করল তো বাকি সবার পড়া কমপ্লিট।
হঠাৎ নিবিড় বলে উঠলো স্যার আমার হয়নি। তাই সে ক্লাসের বাইরে এসে মেঘের সাথে দাড়ালো।
মেঘকে অন্য ছেলের পাশে দেখে আদ্রর বুকে ভেতরটা হঠাৎ কেপে উঠলো।
নিবিড় মেঘ কে বললো আচ্ছা মেঘ তুমি কী স্যারকে পছন্দ করো হঠাৎ নিবিড়ের কথায় বিস্মিত নয়নে তাকালো। আসলে ওই সময় তুমি যেই ভাবে তাকিয়ে ছিলে।
না তেমনটা নয়। স্যার আমার কাজিন হয়।
ও আচ্ছা তাই বলো আদ্র স্যার তোমার ভাই হয় আগে বলবে না।
আমি জানতাম না ওনি এইখানে জয়েন করেছে।
ও তাই বলো। আদ্র ওদের কথা বলতে দেখে বললো তোমাদের কী আমি কথা বলার জন্য বাইরে দাড় করিয়ে রেখেছি।
কাল থেকে আমার ক্লাসে পড়া শিখে আসবে। আজ তোমাদের কিছু বললাম না। যাও ভিতরে গিয়ে বসো।
আদ্র ক্লাস শেষ করে চলে গেল। ঊষার আজকে কী একটা কাজ আছে বলে আগেই চলে গেলো। তাই মেঘকে আজকে একাই ফিরতে হবে পিছন থেকে নিবিড় বললো চলো মেঘ আমি তোমাকে আজ ড্রপ করে দিয়ে আসি। মেঘ সরাসরি না বলতে পারলোনা।
না নিবিড় আপনি চলে যান আমি যেতে পারবো।
আরে চলো না প্লিজ। মেঘ আর কিছু বললো না।
মেঘ আর নিবিড় কে একসাথে দেখে একজোড়া চোখ থেকে যেন আ*গুন জড়ছে মনে হচ্ছে যেন সেই আগুন সবকিছু জালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিবে।
মেঘ বাড়িতে ফিরতেই অনু বলে উঠলো মেঘ জানিশ তো ভার্সিটিতে আদ্র ভাইয়া জয়েন করেছে।
হুম জানি। আজকে তো দেখলাম বলেই চলে গেল।
ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিল মেঘ পিছন থেকে অনু বলে উঠলো মেঘ তোর কী মন খা*রা*প।
না তো তাহলে এইখানে দাড়িয়ে আছিস কেন?
ভালো লাগছে না।
মেঘ মা বলেছে আদ্র ভাইয়া যেহেতু তোর ভার্সিটি তে জয়েন করেছে তোর তো সামনে পরীক্ষা তাই কিছু দিনের জন্য তোকে পড়াতে বলেছে।
ওনি কী রাজি হয়েছেন?
হুম।বলেছে কাল থেকে আসবে।
মেঘ অনেকদি আগের কথা ভাবতে লাগলো মেঘের যখন দশ বছর তখন আদ্র তাকে পড়াত। মেঘ সবসময় আদ্র কে বলতো আদ্র ভাই বড় হয়ে আপনাকে বিয়ে করবো। খুব ভালোবাসবো আপনাকে আমায় বিয়ে করবেন তো?
তখন আদ্র ধ*মক দিয়ে বলতো মেঘ তুমি এখনো ছোট আর এসব কথা যেন তোমার থেকে না শুনি। এসব বললে আমি আর তোমাকে পড়াবো না।
পরের দিন থেকে মেঘ কে আর পড়াতে আসলো না।আদ্র মেঘের খুব ক*ষ্ট হয়েছিল আদ্র তাকে পড়াতে না আসায়। পরে মাকে জিজ্ঞেস করতে বললো তোর জন্য ছেলেটা কোথাও যেতে পারেনা বন্ধু বান্ধবদের সময় দিতে পারে না তাই আর আসবে না।
তবে মেঘের ছোট মনটি বুজতে পেরেছিল আদ্র কেন তাকে পড়াতে আসবেনা।
মেঘের ভাবনার মধ্যে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো নিবিড় কল করেছে।
চলবে,,,,,,,