তোমাতেই আমি মগ্ন পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0
702

#তোমাতেই_আমি_মগ্ন 🌸

#পর্ব_১৫(অন্তিম পর্ব)

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

অন্না রান্নাঘরে এসে দাঁড়িয়ে আছে।ফারাবী ফুপিদের সাথে বসে আছে ঠিকই কিন্তু চোখ রান্নাঘরের দিকে।ফারাবী ফুপিদের জোর করে রুমে পাঠালো।তারপরে রান্নাঘরে চলে আসলো।ফারাবীকে রান্নাঘরে আসতে দেখে অন্নার মুখে হাসি ফুটলো।

কি ম্যাডাম আপনি কিছুই পারেন না?(ফারাবী)

মাথা নাড়িয়ে না বললো।অন্না মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ফারাবী মুচকি হাসলো।

মন খারাপ করলে কিন্তু তোমাকে বেশ লাগে।আর একদম টেনশন নিও না।আমি আছি নাহ্!(ফারাবী)

আপনি রান্না করতে পারেন?(অন্না)

অবিয়াসলি।আমি লন্ডনে এক বছর থেকে আসছি।আর ওখানে নিজের কাজ নিজেরই করা লাগে।(ফারাবী)

ফারাবী রান্না করা শুরু করলো।অন্না ফারাবীকে হেল্প করছে।অন্না ফারাবীর দিকে তাকিয়ে আছে।

কত ভালো একজন মানুষ!এমন মানুষ দুনিয়ায় আছে আপনাকে না দেখলে জানতাম না ফারাবী বাবু।আপনার জন্য আমার মনে একটু না অনেকখানি জায়গা তৈরি হয়েছে।(অন্না মনে মনে বললো)

ফারাবী অন্নার দিকে তাকিয়ে দেখে অন্না তার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে।ফারাবী ভ্রু কুচকে অন্নার দিকে তাকিয়ে আছে।

কি ব্যাপার?এভাবে কি দেখছো অনুমা?(ফারাবী)

অন্না চোখ সরিয়ে নিলো।

ক ক কই কিছু না তো।(অন্না)

তা এমন তোতলাচ্ছো কেনো?(ফারাবী)

এমনি।(অন্না)

তোমার মনে কি ইচ্ছা জেগেছে আমি বুঝতে পেরেছি।(ফারাবী)

কি ইচ্ছা জেগেছে?(অন্না)

এই যে আমার ঠোঁট জোড়ায় কিস করার ইচ্ছা জেগেছে।(ফারাবী চোখ টিপ দিয়ে বললো)

অন্না মুচকি হেসে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।

কি সব বলছেন আপনি?(অন্না)

তুমি যা ভাবছো তাই বলছি!(ফারাবী)

আমি মোটেও ওইসব ভাবি নাই।(অন্না)

তোমার এই লজ্জামাখা মুখ দেখে আমার একটা ছন্দ মনে পড়ে গেলো।(ফারাবী)

কি ছন্দ?(অন্না)

“বেলীফুলের মালা গেঁথে খোঁপায় জড়িয়ে দিবো🖤
অভিমানে না-হয় জড়িয়ে ধরবো/
আর লজ্জা পেলে না হয় বলবো,
বড্ড ভালোবাসি তোমায়”—✨(ফারাবী)

অন্না মুচকি হেসে ফারাবীর দিকে তাকিয়ে আছে।

/🦋/

ফারাবী সব রান্না শেষ করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে।দুই ফুপি খেয়ে অনেক প্রশংসা করলো অন্নার।দুই ফুপি বাড়ি থেকে চলে গেলো।

এভাবে এক মাস কেটে গেলো!

ফারাবী ছাদে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।শীতের কুয়াশার মাঝে চাঁদ দেখতে ভালোই লাগে তার।হঠাৎ ফারাবীর পিছনে অন্না এসে দাঁড়ালো।অন্না ফারাবীর কাঁধে হাত রাখতেই ফারাবী পিছনে ফিরলো।ফারাবী পিছনে তাকিয়ে দেখে অন্না দাঁড়িয়ে আছে।

যাক ভালোই হলো তুমি ছাদে এসেছো।আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।(ফারাবী)

জ্বি বলুন।(অন্না)

ফারাবী ছাদের বাগান থেকে একটা ফুল ছিঁড়ে অন্নার সামনে হাটুঁ গেড়ে বসলো।

ওগো মোর প্রিয়তমা,

তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি সেদিনই তোমার দিওয়ানা হয়ে গেছি।তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না।আমার মন জুড়ে শুধু তোমারই বসবাস!ভালোবাসাটা যখনটা সহজ তবে ভালোবাসি কথাটা বলা অনেক কঠিন।এই কথাটা বলার সময় নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে দূর্বল মানুষ মনে হয়।অনেক বার বলতে গিয়েও পারি নাই।আমি জানি আমাদের বিয়েটা এমন পরিস্থিতিতে হয়েছে তোমার আমাকে মেনে নিতে টাইম লাগতেছে।বিয়ে যেহেতু হয়েই গিয়েছে এখন কি আর করার!তবে তোমার কাছে একটা জিনিস চাওয়ার আছে।তুমি কি আমার বুড়ো বয়সে পান চিবানোর সাথী হবে!দুজনে পাশাপাশি বসে রাতের আকাশের চাঁদ দেখবো।আট অনেক গল্প করবো।

আমার কাউকে দেখার প্রয়োজন হয়নি তোমাকে দেখার পরে।#তোমাতেই_আমি_মগ্ন।যেদিন দেখেছি তোমার ওই হরিণী আঁখি সেদিনই বুঝে গেছি তোমাকেই আমার প্রয়োজন।

ℐ ℒℴ𝓋ℯ 𝒴ℴ𝓊 𝒪𝓃𝓃𝒶🧡

অন্নার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।সে ফারাবীর সামনে বসে পড়লো।

আই লাভ ইউ টু ফারাবী বাবু।(অন্না)

ফারাবী মুচকি হেসে অন্নাকে জড়িয়ে ধরলো।

—-🍂—-

দুজনে ছাদের দোলনায় বসে আছে।অন্না ফারাবীর কাঁধে অন্না মাথা দিয়ে রেখেছে।

অনুমা তোমাকে আরো কিছু কথা জানানো উচিত।(ফারাবী)

কি কথা?(অন্না)

তুমি হয়তো ভাবছো আমি তোমাকে প্রথম সিলেটেই দেখেছি।কিন্তু নাহ্!(ফারাবী)

মানে?(অন্না)

আমি তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম অনার্স প্রথম বর্ষে পড়া অবস্থায়।আমি গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি আসছিলাম আর তুমি সাইকেল নিয়ে রাস্তায় ঘুরছিলে।তোমার উড়ন্ত চুল,মুখের হাসি দেখে ওইদিনই আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।তারপরে তোমাকে আর দেখিনি।অনেক খোঁজ করেছি পাইনি।তারপরে তো ওমন একটা ঘটনা ঘটলো আর আমরা সিলেটে চলে গেলাম।(ফারাবী)

অন্না ফারাবীকে জড়িয়ে ধরলো।ফারাবী-ও অন্নাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

!💛!

নিশান আর দিশার বিয়ে হয়ে গেছে।অন্নার আজ ডেলিভারি হয়েছে।তার কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে।

ফারাবী বাবু এই বাচ্চাকে কি তুমি মেনে নিতে পারবে?(অন্না)

অন্না যতই হোক ওর শরীরে আমাদের বংশের রক্ত বইছে।আমি ও-কে নিজের পরিচয়ে বড় করবো।বাই দ্যা ওয়ে নাম রাখবে কি?(ফারাবী)

তুমি বলো।(অন্না এক গাল হেসে বললো)

অরহিন।(ফারাবী)

বাহ্ অনেক সুন্দর।(অন্না)

অন্নাকে বাসায় নিয়ে আসা হলো।এভাবে বেশকিছু দিন চলে গেলো।

অন্না বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।ফারাবী গিয়ে অন্নাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

অনুমা সবই ঠিক আছে কিন্তু আমাদের বাসরটাই তো হলো না।(ফারাবী)

তা করলেই হয়।বারণ করেছে কে!(অন্না)

কি সত্যি বলতেছো?(ফারাবী)

তা তোমার কি মিথ্যা মনে হচ্ছে?(অন্না)

ফারাবী হাসি দিয়ে অন্নাকে কোলে তুলে নিলো।তারপরে অন্নাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।তারপরে অন্নার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো।

/🧡\

পাঁচ বছর কেটে গেলো।ফারাবী আর অন্নার একটা মেয়ে হয়েছে।মেয়ের নাম অনুবী।ফারাবী ছেলেকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর অন্না অনুবীকে কোলে নিয়ে।আজকে মিমির বিয়ে।মিমির সাথে খান পরিবারের একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।মিমির বিয়ে হচ্ছে ফারাবীর বন্ধু তাজের সাথে।

অনুমা আমাদের বিয়েটা আর হলো না।(ফারাবী)

বিয়ে না হলে এখন আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছো কিভাবে!(অন্না)

ওই তো গুন্ডা স্টাইলে তোমাকে ধরে নিয়ে কাজি অফিসে বিয়ে করেছিলাম।(ফারাবী)

তোমার কাছে ওটা গুন্ডা স্টাইল মনে হয় তবে সেদিন তোমার মাঝে আমি রিয়েল লাইফের হিরোকে দেখেছিলাম।যেই হিরো অন্যায়কে প্রশয় দেয় না।মানুষকে কষ্ট দিয়ে কথা বলে না।আর প্রচুর ভালোবাসতে জানে।(অন্না)

ফারাবী হেসে অন্নার কাঁধে হাত রাখলো।অন্না ফারাবীর কাঁধে মাথা রাখলো।

বাহ্ পাপা আল মামুনি কত্ত লুমান্টিক।(অরহিন)

ছেলের কথায় ফারাবী আর অন্না হেসে দিলো।অনুবী পুচকু মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে।

২৫ বছর কেটে গেলো!

অন্নার কোলে মাথা দিয়ে ফারাবী শুয়ে আছে।দুজনে চন্দ্র ম্লান করছে।এতো বছরেও দুজনের মাঝের ভালোবাসা একটুও কমেনি।

অনুমা দেখতে দেখতে বুড়ো হয়ে গেলাম।(ফারাবী)

বুড়ো তো হবেই।আর কতো জোয়ান থাকবে!(অন্না)

এতো বয়স হওয়ার পরেও তুমি আমার কাছে সেই শিশু বউটিই রয়েছো।(ফারাবী)

একদম আমাকে এইসব বলবে নাহ্।(অন্না মুখ গোমড়া করে বললো)

ফারাবী হেসে দিলো।

বাবা-মা মারা গেলেন,ছেলেটা বিদেশে থাকে,মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলো আমরা এখন একা হয়ে গেলাম।(অন্না)

দুজনে একা থাকলেই তো প্রেম আরোও বাড়বে।জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত একে অপরকে ভালোই বেসে যাবো।(ফারাবী)

অন্না ফারাবীর মুখে একটা পান গুঁজে নিজেও একটা খেলো।

দেখলে আমরা কিন্তু একে অপরের পান চিবোনোর সাথী হয়ে গেছি।(অন্না)

অন্নার কথায় ফারাবী হেসে দিলো।
—————–#সমাপ্ত——————-

(আল্লাহ হাফেজ।আশা করি গল্পটা সবার ভালো লেগেছে।)

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]