#তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্বসংখ্যা_১৭
” অপয়া মেয়েটাকে নিয়ে এত আদিখ্যেতার কোনো দরকার ছিল কি ভাইয়া? ”
আঁধারিয়া রজনী। নৈশভোজ সম্পন্ন হয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে। সোফায় বসে কায়সার সাহেব। হাতে ইংরেজি ভাষায় রচিত এক বিজনেস ম্যাগাজিন। পাশেই বসে বোন জামাই তোফায়েল সাহেব। সে মানুষটি দেশ-বিদেশের মুদ্রাস্ফীতি, সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে কথা বলছে। কায়সার সাহেব চুপচাপ শুনছেন। আস্তে ধীরে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টে যাচ্ছেন। সে মুহূর্তে সেথায় উপস্থিত হলেন কোহিনুর খানম। কায়সার সাহেবের ছোট বোন। এসেই বড় ভাইয়ের উদ্দেশ্যে উক্ত প্রশ্নটি ছুঁড়ে দিলেন। কায়সার সাহেব ম্যাগাজিন হতে দৃষ্টি সরিয়ে বোনের দিকে তাকালেন। তোফায়েল সাহেব অবাক কণ্ঠে স্ত্রীকে বলে উঠলেন,
” এসব কি ধরনের কথাবার্তা বলছো তুমি? ”
” ভুল কিছু বলিনি তো। ”
” অবশ্যই ভুল বলেছো। প্রশ্নের শুরুতেই ভুল। কে অপয়া? আমাদের উক্তি? ”
কোহিনুর খানম সোফায় বসলেন। তিক্ত স্বরে বললেন,
” আমাদের উক্তি! বাহ্! অপয়াকে অপয়া বলবো না তো আর কি বলবো? ওই একটা মেয়ের জন্য সবার জীবনে ফুলস্টপ বসে গেছে। কিছু ভুলিনি আমি। ”
” কোহিনুর! পুরনো কথা কেন তুলছো? ” তোফায়েল সাহেব যথেষ্ট অসন্তুষ্ট স্ত্রীর ওপর।
” শোনো। তুমি আমাকে বলে বলে এভাবে চুপ করাতে পারবে না। আমি আর চুপ থাকবো না। ”
” কবেই বা চুপ ছিলে তুমি? ”
কোহিনুর খানম এ কথার পৃষ্ঠে কিছু না বলে, বড় ভাইয়ের দিকে তাকালেন। বললেন,
” ভাইয়া, মেয়েটা আস্ত এক আপদ। বিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করলে ভালো কথা। কিন্তু ভাইয়া! বিয়েতে লাখ লাখ টাকা খরচ করার কি দরকার ছিল? শুধু শুধু টাকার অপচয়। ”
তোফায়েল সাহেব এবার স্ত্রীর ওপর রেগে গেলেন। কিসব বলছে এ মহিলা! উনি ঈষৎ রূঢ় স্বরে বললেন,
” তুমি কি একটু চুপ করবে? কিসব বলছো! বাবা হন ভাই সাহেব। একমাত্র মেয়ের বিয়েতে খরচ করবেন না তো কার বিয়েতে করবেন? তোমার মেয়ের? ”
” অ্যাই তুমি চুপ করো তো। আমি ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলছি। তুমি মাঝখানে নাক গলাচ্ছো কেন? ”
” কারণ তুমিও ভাই সাহেবের মেয়ের লাইফে নাক গলাচ্ছো।”
” হ্যাঁ গলাচ্ছি। কারণ ওর জন্য আমার ভাইয়ার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে। থমকে গেছে জাস্ট। ”
কায়সার সাহেব নিশ্চুপ। অবহেলিত হয়ে কোলে পড়ে ম্যাগাজিন। তোফায়েল সাহেব স্ত্রীকে বোঝানোর উদ্দেশ্যে বললেন,
” ভুল বললে কোহিনুর। কারো জন্য কারোর জীবন থমকে যায় না। ঠিক চলে যায়। আর আমাদের উক্তি মা নির্দোষ। যা ঘটেছে তাতে ওর কোনো দোষ আদৌও ছিল কি? নিজের মনকে প্রশ্ন করে দেখো। ”
” প্রশ্ন করে দেখেছি। একবার নয়। শতবার। প্রতিটা প্রশ্নের একটাই উত্তর। ওই মেয়েটার জন্য আমার ভাইয়ার জীবনটা নরক হয়ে গেছে। ”
” মা। এই ভুলভাল কথা আর কতকাল বলবে? প্লিজ এবার তো নিজের মনোভাব চেঞ্জ করো। ”
আকস্মিক সে ঘরে আগমন হলো বিল্লালের। নিশাতও উপস্থিত হলো সেথায়। কোহিনুর খানম বরাবরের মতই ছেলের কথায় খুশি হতে পারলেন না। উনি বললেন,
” বিল্লাল! বড়রা কথা বলছে এখানে। তুমি এর মধ্যে ঢুকো না। ”
” আমি উইদাউট এনি হেজিটেশন ঢুকতে পারি। কারণ কথাটা হচ্ছে ছোট মেয়েটাকে নিয়ে। আমার বোনকে নিয়ে। ” দৃঢ় স্বরে বলল বিল্লাল।
” তুমি কিন্তু এবার লাগাম ছাড়া আচরণ করছো। আজ দেখোনি ও বাড়িতে কি হয়েছে। ওরা আমাদের সাথে ঠিক কি করেছে। আর ওই উক্তি! ও তো আস্ত এক আপদ। ওর উপস্থিতি মানেই সাংঘাতিক ব্যাপার। কোনো না কোনো প্রবলেম হবেই। ”
নিশাত নীরবতা ভঙ্গ করতে বাধ্য হলো। শ্বশুর বাবাকে আকুল হয়ে বললো,
” বাবা আপনি এখনো চুপ করে থাকবেন? কিছু তো বলুন। নাকি এত বছরে আপনার ধারণা এখনো অটুট রয়েছে। যা হয়েছে সবটার জন্য… উক্তি দায়ী। ”
কায়সার সাহেব কিছু বলতে চাইছেন। ওনার অন্তর উস্কানি দিচ্ছে কিছু বলার জন্য। তবে ওনার শব্দনালী অবরুদ্ধ। কিছু বলতে নারাজ। মানুষটা আস্তে ধীরে চুপচাপ উঠে দাঁড়ালেন। সকলের পানে নজর বুলিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললেন,
” আমি ক্লান্ত। রুমে যাচ্ছি। গুড নাইট এভ্রিওয়ান। ”
নিঃশব্দে ওই ঘরে উপস্থিত প্রতিটি মানুষকে হতাশ করে সেথা হতে প্রস্থান করলেন কায়সার সাহেব। ইতিবাচক মনোভাবের মানুষগুলো এতে অত্যন্ত নিরাশ হলো। অথচ যথেষ্ট প্রসন্ন কোহিনুর খানম। ওনার ঠোঁটে ঝুলন্ত ব্যঙ্গাত্মক হাসির রেখা।
•
রাতের আঁধারে তলিয়ে বসূধা। ক্লান্ত দেহে সবে ঘরে প্রবেশ করলো মুয়ীয। সহধর্মিণী সালাম দিলো হাতের ইশারায়।
” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ”
মুয়ীয সালামের জবাব দিলো। পায়ে পরিহিত জুতো দু’টো খুলে রাখলো দরজার বাম পাশে দেয়াল সংলগ্ন স্থানে। উক্তি মুচকি হেসে দরজা লাগিয়ে দিলো। স্বামীকে বসতে ইশারা করে চলে গেল ক্ষণিকের জন্য। মুয়ীয বসলো কাঠের একটি চেয়ার টেনে। শার্টের কলার টেনে কাঁধ ও ঘাড় ভালোভাবে অনাবৃত করে নিলো। ফ্যানের বাতাসে চনমনে অভ্যন্তর। উক্তি ফিরে এলো হাতে স্টিলের গ্লাস নিয়ে। ঠাণ্ডা তাপমাত্রায় অনেকটা সময় জুড়ে অবস্থান করার জন্য গ্লাসের দেহ স্বল্প ভেজা। শীতলতম রূপ ধারণ করেছে। উক্তি স্বামীর পানে গ্লাসটি বাড়িয়ে দিলো। বিনা বাক্য ব্যয়ে গ্লাসটি হাতে নিলো স্বামী। ঠোঁটে ঠেকালো ঠাণ্ডা শীতল সে গ্লাস। ত্বরান্বিত সীমাহীন শান্তিতে ভিজে গেল গলদেশ। আহা! সে কি অফুরন্ত শান্তি! গরম কালে ঠাণ্ডা লেবুর শরবত। চরম শান্তি বয়ে আনে অন্তরে। সে কি শান্তি! ঢকঢক করে তিন ঢোকে পুরোটা শরবত পান করে ফেললো মুয়ীয। অকৃত্রিম এক কৃতজ্ঞতায় ঠোঁট ঈষৎ প্রসারিত হলো। সে চাহনি, কৃতজ্ঞতায় উক্তির প্রাণ প্রফুল্ল হলো। মুচকি হাসলো মেয়েটি। স্বামীর সামান্য এ খুশিটুকু অবলোকন করেই সে মহাখুশি। স্বামী স্ত্রীর এমন নিঃশব্দ, যত্নে ভরা মূহুর্তে ভাটা পড়লো সহসা। উপস্থিত হলো মুন্নি। এসেই,
” ভাইয়া! তোমার বউ নিজেরে কি মনে করে? লেডি হাতেম তাঈ? এইয়া কি শুরু করছে হা? ”
প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে মুন্নি। মুয়ীযের কপালে ধীরলয়ে সৃষ্টি হলো সরু ভাঁজ। পাশেই চুপটি করে দাঁড়িয়ে অর্ধাঙ্গী উক্তি।
” কি করছে? ” স্বল্প শব্দে প্রশ্ন মাখা নজরে তাকিয়ে মুয়ীয।
” তোমার বউরেই জিগাও কি করছে। ”
” রাইত দুপুরে ঢঙ মারাবি না মুন্নি। হারাডা দিন শেষে ঘরে আইছি। ক্লান্ত। যা কওয়ার হোজাহুজি ক। ”
মুন্নি মুখ বাঁকিয়ে বললো,
” তোমার বউরে না.. জিগাও কেডা আইছিল আইজ। ”
” বউরে জিগামু ক্যা? কথা তুই শুরু করছোছ, তুইই ক। ”
ভাবলেশহীন ভাবে বললো মুন্নি,
” ঠিক আছে। মুইই কইতাছি। আইজ আবারো তোমার বউয়ের বাপের বাড়িত থে লোক আইছিল। ”
মুয়ীয কিছুটা জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো স্ত্রীর পানে। দুর্বোধ্য আওয়াজে শুধালো,
” কেডা আইছিল? ”
উক্তি হাতের ইশারায় কিছু বলবার পূর্বেই মুন্নি বলে ফেললো,
” হ্যার ফুপু বাড়িত থে আইছিল। পুরা গুষ্টি। ”
আঙ্গুল গুণে গুণে,
” ফুপু, ফুফা, ফুফাতো একখান ভাই, বুইন। ব্যাবাক আইছিল। ”
” বুঝলাম। এইয়ার মধ্যে বেডি হাতেম তাঈ কোন থে আইলো? ”
মুন্নি আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে বললো,
” আইবো না? মেহমান আইলো। ম্যালা দামী দামী উপহার আনছিল। হ্যার ভাই, ফুপা কতবার হেইয়া সাধলো। কিন্তু হ্যায় রাখলোই না। ব্যাবাক ফিরাই দিলো। ”
মুয়ীয শেষের কথাটুকু মোটেও প্রত্যাশা করেনি। অপ্রত্যাশিত বাক্যে সম্পূর্ণ চমকালো মানুষটি! চোখেমুখে ফুটে উঠলো খুশির ঔজ্বল্য।
” ক্যা? ফিরাই দিলো ক্যা? মাইনষে হাজার চাইয়াও ভাগে পায় না। আর হ্যায় কিনা পাইয়া পায়ে ঠেইল্লা দিলো? লেডি হাতেম তাঈ হইছে নি? দয়াশ্বেরী? ” মুন্নি সহ্যসীমার বাইরে অসন্তুষ্ট।
” তুই ঠিক কোন নিয়তে মোর ধারে বিচার লইয়া আইছোছ মুন্নি? তোর কি মনে হয় উপহার ফিরাই দিয়া মোর বউ অন্যায় করছে? হ্যার লেইগ্গা মুই অর ওপর হাউকাউ করমু?”
স্পষ্ট-তীর্যক সে প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল মুন্নি। আমতা আমতা করতে লাগলো। চোরা নজরে তাকাচ্ছে ভাইয়ের পানে। উক্তি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাইবোনের আলাপচারিতা দেখছে। শুনছে। নীরব দর্শক সে।
” কি হইলো? ক। ”
শব্দ ও যথাপযুক্ত ব্যাখ্যা না পেয়ে মুন্নি বলে উঠলো,
” হ্যারা ম্যালা দামী দামী উপহার আনছিল ভাইয়া। কত্তগুলা গিফট বক্স। সব ফিরাই দিলো! ”
মুয়ীয এই অহেতুক প্রশ্নোত্তর পর্ব আর নিতে পারছিল না। যথেষ্ট ক্লান্ত সে। কপাল হালকা চুলকে উঠে দাঁড়ালো সে। বোনকে সোজা, খোঁচা মা রা শব্দে বললো,
” রায় ডা*কিনী ননদিনী না হইয়া ভালো হইয়া যা মুন্নি। ভালো হইতে পয়সা লাগে না। ”
চরম অপমানে ঝ’লসে উঠলো মুন্নি। ভাইয়া তাকে যারতার সামনে এভাবে অপমান করছে! মুয়ীয ঘুরে তাকালো স্ত্রীর পানে। লহু স্বরে বলল,
” তুই এহানে কি করোছ? ঘরে যা। মোর ঘরের জামা বাইর কর। ”
উক্তি একপলকের জন্য তাকালো ননদের রক্তিম মুখ পানে। অতঃপর ধীরপায়ে প্রস্থান করলো সেথা হতে। এদিকে ফুটন্ত জলের ন্যায় টগবগিয়ে ফুটছে মুন্নি নামক কিশোরী কন্যা।
•
তমস্র রজনী। বিছানায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে মুয়ীয। মোবাইল নামক যান্ত্রিক ডিভাইসে ব্যস্ত সে। উক্তি দাঁড়িয়ে ক্ষুদ্রাকার গোলাকৃতির দেয়াল আয়নার সম্মুখে। মাথার চুলগুলো বাঁ কাঁধ গড়িয়ে নেমে পড়েছে। বাম দিকে স্বল্প ঝুঁকে চুল আঁচড়ে চলেছে সে। ফলস্বরূপ দৃশ্যমান পিঠের ও ঘাড়ের খোলা-উন্মুক্ত অংশ। ল্যাভেন্ডার রঙের শাড়ি ও ব্লাউজে রমণীর দেহবল্লরী আবৃত, সজ্জিত। গৌর বর্ণের ত্বক, দৃশ্যমান শারীরিক অংশ নিঃসন্দেহে মোহনীয়! আবেদনময়ী। মুয়ীয অনেকটা সময় ধরে মোবাইলে ব্যস্ত। আর ভালো লাগছে না। তাই মোবাইলটি ডান পাশে বালিশের ধারে রেখে দিলো। অর্থহীন দৃষ্টি ঘুরতে ঘুরতে সহসা বিগলিত হলো প্রিয়তমায়! চুল আঁচড়ানোরত রমণীর সে-ই ঈষৎ বাঁকা অঙ্গভঙ্গি, পিঠের খোলা অংশ তার মস্তিষ্কে আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছে। চোখের সাদা অংশ কেমন ঘোলাটে হয়ে আসছে। বিমুগ্ধতার ঘোলাটে রূপ। মানুষটির অবাধ্য অঙ্গ কখন যে সচল হলো, জানা নেই। বিছানা ছেড়ে নেমে এলো মুয়ীয। উক্তি বেখবর এই মুগ্ধতা হতে। সে যে লম্বা কেশরাশি দৃঢ় বেনুনিতে আবদ্ধ করে নিতে মগ্ন। আয়নায় আনমনে তাকিয়ে ছিল মেয়েটি। অকস্মাৎ এক তীব্র হলকা বয়ে গেল তনুমনে। রমণীর দু কাঁধে গেঁথে বসলো শক্তপোক্ত পুরুষালী দু’টো হাত। উক্তি’র দেহমন কাঁপছিল। আস্তে ধীরে ঝাপটে চলেছিল চোখের পল্লব। অপ্রত্যাশিত মুহূর্তটির পুরোদমে সাক্ষী হতে আয়নায় নজর রাখলো সে। দেখলো এক জোড়া মনোমুগ্ধকর চোখের হাতছানি। এক নৈঃশব্দ্য আহ্বান। উক্তি’র হাতটি আপন তালে বেনুনি বেঁধে নিলো হেয়ার ব্যান্ডে। তখনো দু’জনের চোখ একে অপরেতে আবদ্ধ। মুয়ীযের বেপরোয়া হাত দু’টো কাঁধে স্থির থাকতে অনিচ্ছুক। আলতো স্পর্শে কাঁধ বেয়ে নেমে চলেছে তারা। হাতের ত্বকে প্রতিটি সমান্তরাল অংশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে নিম্নগামী হলো। এসে স্থির হলো হাতের উল্টো পৃষ্ঠদ্বয়ে। পাঁচ, পাঁচ দশটে আঙ্গুল সুনিপুণ ভঙ্গিতে গলিয়ে গেল নরম সে দু’টো হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে ভাঁজে। এক আশ্চর্য সুখের অংশ রূপে উক্তির চোখের পাতা বন্ধ হয়ে গেল। কাঁধ সামান্য বামে ঝুঁকে গেল। একান্ত পুরুষটিকে নিজ প্রণয় অঙ্কন করার সুযোগ করে দিলো বুঝি!
সে সুযোগের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার করলো মুয়ীয। আপন মনোহরা’র কোমলতায় ডুবে গেল পুরোদস্তুর। ওষ্ঠ, অধরের বিরামহীন আদরে দিশেহারা রমণী। নিজ ভারসাম্য হারালো একসময়। তাকে বিশ্বস্ত দুই হাতে আগলে নিলো মুয়ীয। তুলে নিলো কোলে। ঘোরাচ্ছন্ন দু’টো প্রাণের ঠাঁই হলো বিছানার নমনীয়তায়। কাছাকাছি, অতি কাছাকাছি তারা। শ্বাসে শ্বাস খাচ্ছে বাড়ি। প্রেমাকাঙ্ক্ষার তীব্র বর্ষণে সিক্ত হয়ে চলেছে তারা দু’জনে। শুধু দু’জনেই। ঘন শ্বাসের ধ্বনি অপরজনকে করে তুলছে আরো উতলা। আকাঙ্ক্ষী। মুয়ীয-উক্তি যুগলের সে রাতটি কাটলো অপ্রত্যাশিত স্বপ্নের ন্যায়। সুন্দর! নয়ানাভিরাম!
•
ভোরের স্বল্প আলোকিত প্রহর। পক্ষিকূলের হালকা কিচিরমিচির গানে মোহিত অন্তর! ছাদের একাংশে দাঁড়িয়ে জাওয়াদ। পড়নে হাতাকাটা কালো রঙের গেঞ্জি। পেশিবহুল দু হাতে ভারী ডাম্বেল। মুখশ্রীতে বিন্দু বিন্দু ঘাম। হাত দু’টো পরপর উঁচু নিচু করে ডাম্বেলের সহিত শরীরচর্চা করে চলেছে সে। কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো। ছাদের মেঝেতে বিছানো সুশ্রী শীতলপাটিতে উপুড় হয়ে ভর দিয়ে জাওয়াদ। বুক ডাউন করে চলেছে। তেমনই মুহূর্তে কর্ণপাত হলো,
” একই মায়ের পেটের ছোট বোনটা, তোমার এতখানি শত্রু কবে থেকে হলো? ”
চলবে।