তোমাতেই নৈঃশব্দ্য প্রহরে পর্ব-০৪

0
104

#তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্বসংখ্যা_৪

আঁধারে তলিয়ে তখন বসূধা। ঘুমে মগ্ন পরিবারের সদস্যরা। সে মুহূর্তে বাড়ির মূল দরজায় কড়া নাড়ার প্রবল শব্দ। একবার নয় দু’বার নয়। বরং তিন তিনবার। ঘুম ভেঙ্গে গেল অধিকাংশ সদস্যের। মুয়ীয উক্তি পানে একঝলক তাকিয়ে ত্রস্ত পায়ে বিছানা ত্যাগ করলো। ঘর থেকে গেল বেরিয়ে। কৌতূহলী উক্তি স্বামী মানুষটির পিছু নিলো। ততক্ষণে বাড়ির মূল দরজায় জমায়েত হয়েছে জান্নাত, মোমেনা বেগম। মুয়ীয এগিয়ে গেল। অসন্তোষের সুরে বললো,

” রাতদুপুরে শুরু হইছেডা কি? অ্যামন বেক্কলের লাহান দরজা পিডায় কেডা? ”

জান্নাত ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,

” ভ্ ভাইয়া! চোর নাহি? চোর ডাকাইত কিন্তু কহনো কহনো অ্যামনেই হানা মা^রে। ”

মোমেনা বেগম পুত্রবধূকে দিলেন এক ধমক,

” তোমার ওই পচইন্না মুখখান বন্ধ করতা? খালি আনাপ সানাপ কইতে থাহে। ”

” মুই ভুল কিছু কইছি নি? হাছাই তো… ”

অসমাপ্ত রইলো বাকবিতন্ডা। স্তব্ধ নয়নে তাকিয়ে জান্নাত, মোমেনা বেগম। উক্তিও কেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে। সকলের অধরোষ্ঠে কে যেন অদৃশ্য ফুলস্টপ বসিয়ে দিয়েছে। মুন্নি তখন চোখ কচলাতে কচলাতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বিরক্তিকর অনুভূতি প্রকাশ করে ঘুমে ঢুলুঢুলু কণ্ঠে বললো,

” ও মা! মাঝ রাইতে এইয়া কি শুরু হইছে? ”

” বড় আপা! ”

মুয়ীয বিস্ময়কর চাহনিতে তাকিয়ে! মুন্নি চমকালো! ঘুম হতে ছিটকে বেরিয়ে এলো। দরজায় তাকিয়ে লক্ষ্য করলো আসলেই বড় আপা দাঁড়িয়ে। মুয়ীয একবিন্দু কালক্ষেপণ না করে বড় বোনকে আগলে নিলো। যত্নশীল হাত দু’টো বোনের কাঁধ জড়িয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। উক্তিও এলো এগিয়ে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে এ বাড়ির জ্যেষ্ঠ কন্যা ময়না’কে চলতে সহায়তা করলো। তাকে নিয়ে প্রবেশ করলো মায়ের ঘরে। যেথায় থাকে মা ও ছোট বোন মুন্নি। ময়না’কে মাঝারি আকৃতির চৌকিতে বসানো হলো। উক্তি করার পূর্বেই স্টিলের গ্লাসে পানি ঢেলে আপার দিকে বাড়িয়ে দিলো মুয়ীয। ময়না দুর্বল হাতে গ্লাসটা ধরলো। তবুও গ্লাস ছাড়লো না মুয়ীয। যতন করে বোনকে পানি পান করতে সহায়তা করলো‌। ক্ষুদ্র এ আচরণ মুগ্ধ করলো উক্তি’কে! তবে এ মুহূর্ত মুগ্ধতার নয়। বরং সমবেদনার। বড় আপার শারীরিক অবস্থা দেখে উক্তি চরম দুঃখিত! এ কি হাল হয়েছে আপার! আপাকে ইতিপূর্বে সে একবারই দেখেছে। তাদের বিয়ের দিন। আপা দেখতে কৃষ্ণবর্ণ। তবে ওনার চেহারায় আলাদাই এক গ্লো বিদ্যমান। যার জন্যে শুধু দেখতেই চায় মন। মমতাময়ী লাগে। আজ সে আপার কি দুরবস্থা!

ময়না’র চুলগুলো এলোমেলো হয়ে খোঁপা হতে বেরিয়ে এসেছে। ডান চোখের কিনারে কালশিটে দাগ জায়গা করে নিয়েছে। দু গালে বড় বড় আঙ্গুলের ছাপ। যা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছিলো কোনো ব্যক্তির নির্দয়-নির্মম অমানোবচিত আচরণের শিকার হয়েছেন আপা। কিন্তু কার?

” আপা! ঠিক আছোছ? ”

উদ্বিগ্ন মিহি স্বরে শুধালো মুয়ীয। হালকা কৃত্রিম হাসি অধরে ঝুলিয়ে মাথা নাড়লেন ময়না। তবে এ হাসিতে মন গললো না মুয়ীয হাসানের। দাঁতে দাঁত পিষে শুধালো সে,

” কু** বাচ্চাডা কই? ”

ভয়চকিত নজরে তাকিয়ে ময়না। হারিয়ে মুখের বুলি। উক্তি কিছুই বুঝতে পারলো না। অর্থহীন তাকিয়ে শুধু। তবে এতসবের ভীড়ে অনুপস্থিত মুয়ীযের বড় ভাই মারুফ, যা ওর দৃষ্টি এড়ালো না।

ঘড়ির কাঁটা স্থির নেই। একটু একটু করে সময় অতিবাহিত হচ্ছে। ঘরময় পায়চারী করে চলেছে উক্তি। চিন্তানিমগ্ন মনটা ছটফট করে চলেছে। এখন সময় রাত্রি সাড়ে তিনটা। মানুষটা সে-ই যে রাগান্বিত রূপে বেরিয়ে গেল। এখনো ফিরলো না। অমন হুড়ুম গুড়ুম করে গেল কোথায়? কাউকে তাড়া করতে গেল কি? তাই তো মনে হলো। তবে বাড়ির অন্য কেউ কেন বাঁধা দিলো না? তারা এতটা নিশ্চিন্তে থাকছে কি করে? চিন্তায় যে ওর হা হাপিত্যেশ করার মতো অবস্থা। মানুষটা যেখানেই আছে ঠিক আছে তো?

মানব মন বড়ই অদ্ভুত। এর ছলাকলা বোঝা সকলের কর্ম নয়। এই তো বিগত কিছুদিন পূর্বের কথা। ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে নিচু জাতের এক মানুষের সঙ্গে বিয়েটা হলো। যাদের সঙ্গে আকাশ পাতাল তফাৎ উক্তি’র। স্বাভাবিক ভাবেই এ মানুষটা, তার পরিবারকে মানতে ওর অসুবিধা হচ্ছিল। মুয়ীয মানুষটাকে দেখলেই কেমন ভয় হয়। ওনার চাহনি বড় প্রখর। হৃদয়ের অঙ্গনে যেন রঙিন আলপনা এঁকে যায়। দুরুদুরু করে কাঁপে সরল-ভীতু হৃদ যন্ত্রটা। বছর উনিশের উক্তি শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। ঝুটঝামেলা, অশান্তি হতে শত দূরে যার বসবাস। সে মেয়েটাই এসে ফাঁ’সলো অশান্তির ইয়া বড় কূপে। স্বামী মানুষটাও কেমন যেন। দেখতে গু’ণ্ডা গু’ণ্ডা লাগে। ভালো ভাষায় সুন্দর করে কথা বলে না। পঁচা গালি দেয়। সে বেশ কয়েকবার গালি দিতে শুনেছে। দেখেছে লোকটার রাগ কতখানি ভ’য়ঙ্কর। মাত্র ক’দিনেই এতকিছুর সাক্ষী হলো উক্তি। আরো দিন তো পরেই রয়েছে। তখন না জানি কি হবে। উক্তি নামক কোমলমতি মেয়েটা এই অস্থির-অশান্ত পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে তো? নাকি নীরবে-নিভৃতে যাবে হারিয়ে!

ভাবনার জাল এলোপাথাড়ি রূপে বিচ্ছিন্ন হলো। ঘরে প্রবেশ করলো একজন। উক্তি অনুভব করতে পারলো। ঘুরে দাঁড়ালো পিছে। দাঁড়িয়ে স্বামী মানুষটি। মুয়ীয। ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। উক্তি স্থির দাঁড়িয়ে। মায়াময়ী চোখ দুখানি বুলিয়ে যাচ্ছিল স্বামীর অবয়বে। মুয়ীযের নিগূঢ় দু’টো চোখ, অধরকোলের দুর্বোধ্যতা, হালকা চাপদাঁড়ির লুকোচুরি… সবটাই লক্ষ্য করলো। উপলব্ধি করতে পারলো ভেতরকার অবস্থা করুণ। কেমন যেন ঘোর লেগে যাচ্ছে তার। মুয়ীয অবশ্য এদিকে অত খেয়াল দেয়নি। সে নাখুশ বদনে ভেতরে এলো। এগিয়ে গেল আলনার ধারে। লুঙ্গি হাতে নিতেই যাচ্ছিল। তখনই অকস্মাৎ ছুটে এলো উক্তি। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে কিছু এক বলতে লাগলো ওকে। মুয়ীয চমকালো! হলো অপ্রস্তুত। কি বলছে এ মেয়েটা! সে যে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের ‘স’-টাও বোঝে না। আশ্চর্যজনক ভাবে তাদের এই পাঁচদিনের সংসার জীবনে এখন অবধি তেমন কথাই হয়নি। মানে উক্তি’কে কিছু বলতে হয়নি। যা বলার, বলেছে মুয়ীয। শুনেছে উক্তি। তাই তো সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের সঙ্গে ঠিকমতো পরিচিত নয় মুয়ীয।

” অ্যাই ছেমড়ি! কি কস? বুঝি না তো। ”

উক্তি পুনরায় সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে কিছু বললো। মুয়ীয বুঝলো না, যা তার চেহারায় স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছিল। উক্তি হতাশ হলো বোঝাতে না পেরে। চট করে কিছু এক মাথায় এলো। উজ্জ্বল বদনে বিছানায় ছুটে গেল মেয়েটা। বালিশের পাশেই মিললো কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা। সেটি হাতে নিলো। ফিরে এলো মুয়ীযের কাছে। মুয়ীয প্রচণ্ড অবাক! এ মেয়ে মোবাইল হাতে কি করছে! তা-ও দামী স্মার্টফোন!! ঘোর কাটলো মানুষটার। উক্তি মোবাইলে কিছু লিখেছে। তা-ই দেখাচ্ছে স্বামীকে। মুয়ীয চোখেমুখে বিরক্তি ফুটিয়ে তাকালো সেথায়। মোবাইলের যান্ত্রিক পর্দায় তখন প্রদর্শিত হচ্ছে,

‘ আপনার হাতে কি হয়েছে? ব্যথা পেলেন কিভাবে? ‘

” মোবাইল পাইছোছ কই? ”

প্রশ্নের বিপরীতে সম্পূর্ণ বিপরীত প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে চমকালো উক্তি! মুয়ীয ওর মোবাইলটা একপ্রকার ছিনিয়ে, নিজ হাতে নিলো। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো।

” হুম। ওপ্পো (Oppo) মোবাইল! কেডা দিছে? বাপ না ওই হা:রামি ভাই? ”

হতভম্ব উক্তি হাত নাড়িয়ে কিছু বললো।

” বাপ? ”

প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে মুয়ীয। উক্তি ইতিবাচক মাথা নাড়লো। হ্যাঁ, বাবাই দিয়েছে। কলেজ লাইফে ওঠার পর মিলেছিল নিজস্ব মোবাইল। এর-ও এক ইতিহাস রয়েছে। যা স্মরণে আসায় মনের আকাশে ঘনিভূত হলো কালো কুচকুচে মেঘমালা। উক্তি’র উত্তরে মোটেও খুশি নয় মুয়ীয। শীতল স্বরে বললো,

” বাপের বাড়ি ছাইড়া আইছোছ তুই। তোর একমাত্র ঠিকানা অহন এই বাড়ি। এই বাড়ির লোকে য্যামনে চলে ফেরে, তোরেও হেইয়া করতে হইবে। মানাই নিতে হইবে। এহানে অত ঢ্যা°মনা ফু’ডানি চলতো না। হগলে চালায় বাটন, তুমি বাপের বাড়ির আলগা ফু’ডানি দেহাইয়া চালাইবা ভোপ্পো?! তা হইতো না। ”

উক্তি নির্বাক দাঁড়িয়ে। জানা নেই এমনতর কথার পৃষ্ঠে ঠিক কি প্রত্যুত্তর করা যায়। মুয়ীয হাতে থাকা মোবাইলে আরেক পলক তাকিয়ে মোবাইলটা ছুঁড়ে মা^রলো বিছানায়। নিঃশব্দে যান্ত্রিক মুঠোফোনটি আছড়ে পড়লো বিছানা চাদরের আবরণে। উক্তি অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে। আস্তে ধীরে হাত নাড়িয়ে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে কিছু এক বললো। বুঝলো না মুয়ীয। সে নিষ্পলক তাকিয়ে। দেখছিল ওই মায়াবিনী আদর আদর মুখখানি। অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে না! অবর্ণনীয় কিউট লাগছে দেখতে। ফর্সা গাল দুটো কেমন লাল বর্ণ ধারণ করেছে। রাগ হয়েছে নাকি অভিমান? নেই জানা। জানার চেষ্টাটুকুও করলো না ঘাড়ত্যা^ড়া মুয়ীয হাসান। বরং স্বভাবসুলভ ক্যাটক্যাটে কণ্ঠে বললো,

” তুই অহন মুয়ীযের বউ। এই মুয়ীয যা দিবার পারবো হেইয়াই চালাবি। নইলে চালাবি না। হ্যারপরও ওই বাড়ির কোনো বা*লছাল মোর চক্ষু সীমানায় দেখবার চাই না। বুঝছোছ? ”

জবাবের অপেক্ষা না করে মুয়ীয ব্যস্ত হয়ে পড়লো পোশাক পরিবর্তন করতে। এমন নির্লজ্জ আচরণে স্তব্ধ উক্তি! ত্বরান্বিত ভঙ্গিতে উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড়ালো। মানুষটার লজ্জা গ্ৰন্থিতে কি একটুও লজ্জা নেই! এভাবে ওর সামনেই ফটাফট পোশাক পরিবর্তন করে নিচ্ছে! ওদের মধ্যকার সম্পর্ক বোধহয় এ পর্যায়ের স্বাভাবিক হয়নি এখনো। তাই নয় কি?

” বৌমা! তুমি হাছাই তোমার এক বাপের মাইয়া তো? ”

মাটিতে বিছানো বড় মাদুর। তাতে তরকারির কড়াই রাখছিল উক্তি। পড়নে হলদিয়া শাড়ি। মাথা অর্থ আবৃত শাড়ির আঁচলে। শাশুড়ি মায়ের অবাঞ্চিত প্রশ্ন শুনে যথেষ্ট অবাক হলো মেয়েটা! তাকালো ডানে। মোমেনা বেগম দু পা ছড়িয়ে বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে মাদুরে বসে। পান চিবোতে ব্যস্ত উনি। পানের পুরনো এক ডালা কোলের ধারে রাখা। মূক উক্তি শাশুড়ি মায়ের প্রশ্নের উত্তরে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে কিছু বলতে যাচ্ছিল। তখুনি শোনা গেল,

” ও কি মা! তুমি এইয়া কি কও? মোর ভাই বউ বুঝি কুড়াই পাওয়া? ”

মুয়ীযের বড় বোন ময়না ভাতের পাতিল হাতে সেথায় উপস্থিত হয়ে কথাটা বললো। মোমেনা বেগম মেয়ের কথায় বললেন,

” কইতে হারি? মাইয়া বিয়া দিয়া হ্যারা তো ভুইল্লাই গ্যাছে গা। একবার খবর লইতেও দেখলাম না। আপন মাইয়া হইলে হেইয়া পারতো? খবর লইতো না? ”

ময়না অসম্মত হয়ে বললো,

” তুমি যে কি কও না মা! উক্তি’র বাপ, ভাই আছে। হেরা হাছাই ওর বাপ, ভাই। নহল না। ”

” তইলে খোঁজখবর লয় না ক্যা? ফিরতি নাইওরে’ও তো নিলো না। ”

ময়না মা’কে আশ্বস্ত করে বললো,

” নিবো নিবো। তুমি অত চিন্তা কইরো না তো। ”

মোমেনা বেগম পান চিবোতে চিবোতে বললেন,

” কে জানে এই মাইয়া কুড়াই পাওয়া নি! হয়তো বেজ’ন্মা। অনাথ। ”

উক্তি যে এখানেই উপস্থিত। সবটা দেখছে, শুনছে। তাদের যেন কোনো ভ্রূক্ষেপ ই নেই। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে উক্তি এখানেই উপস্থিত ছিল। সে সবটা দেখলো। শুনলো। পিতা-মাতা থাকা সত্বেও ‘ অনাথ ‘ উপাধি পেল। বেজ’ন্মা তকমা পেল। অন্তরে অসহনীয় যন্ত্রনা। একের পর এক ছু^রিকাঘাতে ভেতরটা রীতিমতো ধ্বং^সস্তূপে পরিণত হয়েছে। মুখে ডান হাতের তালু চেপে ধরলো উক্তি। মনের গহীনে লুকায়িত প্রবল মনোবেদনা অশ্রু বিন্দু রূপে ঝড়ে ঝড়ে পড়ছিল। দ্রুত পায়ে ঘরের পানে ছুটলো মেয়েটা। শাড়ির আঁচল মাথা হতে সরে গেল। লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে। মেঝেতে গড়াগড়ি খেতে খেতে বাধ্যগত রূপে পিছু নিলো অভাগিনী উক্তি’র।

ধূলোমাখা পথে যথাসাধ্য দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে বাইকটা। তাতে আরোহী রূপে বসে জনাব মুয়ীয। বেলা শেষের রোদ্দুর ছুঁয়ে শ্যাম গড়ন ত্বক। চিকচিক করছিল বিন্দু বিন্দু ঘাম। শার্টের ওপরের দু’টো বোতাম উন্মুক্ত। সেথা হতে উঁকিঝুঁকি দিয়ে খেলা করছিল বক্ষের উপরিভাগ লাগোয়া চেইনটি। পথ চলতে চলতে গন্তব্যে পৌঁছে গেল মুয়ীয। থামলো সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক। বাইক স্ট্যান্ড করিয়ে নামলো মানুষটি। পদযুগল ছুঁলো জমিন। বাইকের চাবি জিন্সের বাম পকেটে ঢুকিয়ে নিলো। আলতো করে ডান হাতের স্পর্শে বুলিয়ে নিলো চুলগুলো। চালচলনে বেশ আড়ম্বরতা বজায় রেখে হাঁটা শুরু করলো সে। প্রবেশ করলো স্থানীয় বড় বাজারে।

পাশাপাশি সাজিয়ে রাখা কয়েক পদের ফল। লোভনীয় ফলগুলো দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল পাশ কাটিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর। দোকানদার বেশ ব্যস্ত সময় পাড় করছিলেন। একের পর এক ক্রেতা ক্রয় করছিল ফলমূল। সে সকল ক্রেতাদের ভীড়ে জায়গা করে নিলো মুয়ীয। দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে নিলো একটি বরই। টপাটপ মুখে চালান হলো বরইয়ের অর্ধেক অংশ। দোকানদার ব্যস্ত ভঙ্গিতে আগত মানুষটির চেহারা লক্ষ্য না করেই বলে উঠলো,

” ওই মিয়া! না কিইন্নাই ফটাফট বরই খাইতাছেন ক্যান? ”

মুয়ীয বাঁ হাতে কান চুলকে বরইয়ের বাকি অংশ মুখে পুরে নিলো। চিবোতে চিবোতে বললো…

চলবে।