তোমাতেই বসবাস পর্ব-০৫

0
231

#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পর্বঃ৫

শপিং মলের ভিতরে ঢুকতেই নীড় তাকে নিয়ে মেয়েদের সেকশানে রেখে বেড়িয়ে এলো। কারন সেখানে মেয়েদের ভীড় বেশি সেজন্য নীড় তাকে ওইখানে রেখে শাড়ির দিকে চলে এলো।

আদ্রিতা ড্রেস পছন্দ করচ্ছিলো তখন ই তার চোখ পড়ে পুতুলের শরীরে জড়ানো একটা গোল ড্রেস সাধারন কিন্তু সৌন্দর্যটা একটু বেশিই ফুটে উঠেছে তাতে করা সাদা পুতির কাজের জন্য। শুভ্র রঙ্গে জামাইটাতে শুভ্র পুতি যেনো ড্রেস টার মান আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।আদ্রিতা সেটা হাতে নিতে গেলেই কোথা থেকে এক মেয়ে এসে সেটাতে হাত দিয়ে বলে উঠে।

—আই লাইক ইট। একদম আমার জন্য তৈরি।

আদ্রিতা ড্রেস টা রেখে আসতে নিলেই সেলস ম্যান বলে উঠে
—সরি মেম এই ড্রেস টা উনার জন্য অলরেডি বুকিং হয়ে গেছে(আদ্রিতাকে দেখিয়ে)

মেয়েটা সাথে সাথে চেচিয়ে উঠে
—হুয়াট দা হেল আমি আগে দেখেছি এই ড্রেস এন্ড আই ওয়ান্ট দা ড্রেস এট এনি কস্ট এটার প্রাইজ কতো তার দ্বিগুন দিবো আমি।

—সরি ম্যম আমরা বুক হয়ে যাওয়া জিনিস টা সেল করিনা। (মাথা নিচু করে)

আদ্রিতা কি বলবে বুঝতে পারছেনা একবারে জন্য ভাবলো ড্রেস টা তাকে দিয়ে দেওয়া উচিত পরে মনে পড়ে গেলো লিনার কথা সাথে সাথেই আদ্রিতা নিজের মন পরিবর্তন করে নিলো

—অনেক তো ছেড়েছি নিজের পছন্দের জিনিস জীবনে যদি একটা বার নিজের পছন্দের কিছু পেতে কাউকে কষ্ট দিতে হয় তাহলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। (মনে মনে)

আদ্রিতা সেখান থেকে সরে আসলো সেলসম্যান এর কথা অনুযায়ীই হলো ড্রেস টা আদ্রিতার হলো কিন্তু তার মাথাতে আসলোনা সে তো জামাটা বুক করেনি সেতো শুধু দেখছিলো তাহলে সেলসম্যান ওইটা বললো কেন।আদ্রিতা ওইদিকে মাথা না ঘামায়ে নিজের মতো কেনাকাটা করতে লাগলো।কিন্তু সে টের পেলোনা দুই জোড়া চোখ তার দিকেই আটকে আছে এক চোখে রয়েছে ক্রোধ অন্যচোখে রয়েছে গর্ব এবং মুগ্ধতা।

আদ্রিতা কেনাকাটা শেষ এ বের হতেই ধাক্কা লাগে কারো বুকে পরে যেতে নিলেই নীড় তাকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেই।ভয়ে চোখ মুখ খিচে রেখেছে আদ্রিতা। সেদিকেই তাকিয়ে আছে অগুন্তিক। নীড় নম্র স্বরে যুবোকটির উদ্দেশ্য বলে উঠে

—সরি ব্রাদার।আসলে মেয়েটা একটু বেশিই বান্দর। সামনে তাকায়ে হাটতে ভুলে যায়। কিছু মনে করোনা।

ছেলেটা কি বলবে সে তো এক ধ্যানে তাকায় আছে ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে রাখা রমনীর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে যে দৃষ্টি মৌটেও সহ্য হলোনা নীড় এর শান্ত হয়ে থাকা মুখশ্রী মহূর্তে অশান্ত হয়ে গেলো।সাথে সাথে আদ্রিতাকে নিয়েই বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে।আর সেদিকে তাকিয়ে রইলো এক ধ্যানে ছেলেটি।

বাহিরে এসে পার্কিং এর যাইতেই দুইজনার চোখ পড়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে থাকা রিয়াজের দিকে চোখে সানগ্লাস পড়ে ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।
—কি ব্যাপার তুই এখানে কেন।
—আর বলোনা ভাই মেহের কে নিয়ে এসেছি শপিং এ কাল রেশমিকা (নীড় এর চাচাতো বোন) এর বিয়েনা মেহের যেহেতু আমার উডবি তাই সেও ইনভাইটটেড তাই আরকি মেয়েদের ত জানোই যতোই ড্রেস থাকুক তাও তাদের কিছু নেই।
(বিরক্তি নিয়ে)

আদ্রিতা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দুইজনার কথা গিলচ্ছিলো।রিয়াজ কে দেখে তার হাত জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো
—ভাইয়া ফোন রাখো আর আমার জন্য আইস্ক্রিম নিয়ে আসোনা দেখো কি রোদ তোমার কিউট ছোট বোনটা গলে যাচ্ছেনা (কিউট ফেস করে)

নীড় রিয়াজ দুইজনেই হেসে উঠে।রিয়াজ আদ্রিতার গাল টেনে দিয়ে আইস্ক্রিম নিতে চলে যায়।আদ্রিতা গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়াতেই নীড়ের পুরুষালী দুই হাতের বাধনে আবদ্ধ হয়ে যায়
—আইস্ক্রিম খাবা তো আমাকে বলা যেতোনা(চোখ ছোট ছোট করে)

একে নীড় তার এতো কাছে তার উপরে তার দিকে ঝুকে যাওয়াই নীড়ের গরম নিশ্বাস এসে পড়ছে আদ্রিতার মুখ জুড়ে।আদ্রিতার তো কাদো কাদো অবস্থা।

—দে,,,দেখুন একটু দূরে সরে দাড়ান।
—কেন কি সমস্যা(আরও কাছে এসে)
—আমার অস্বস্তি হচ্ছে(বিরবির করে)
—হুম আমি আসলে অস্বস্তি আর আবিরের ছোয়াই স্বস্তি পেতে তাইনা।তার হওয়ার জন্য তাইতো এতো মরিয়া হয়ে থাকতে।

নীড় আদ্রিতাকে ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে কথাটা বলাই আদ্রিতা শুনতে পেলোনা। কিন্তু ঠিক ই বুঝলো নীড় কিছু একটা বলেছে।

—নির্ঘাত আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যানিং করছে তাকায় আছে যেভাবে মনে হচ্ছে এই মহূর্তে টুপ করে গিলে খাবে আমাকে।রাক্ষস রাজা নীড় চৌধুরী হু(ভেংচি কেটে)

আদ্রিতার এইসব উদ্ভট কথা কানে আসলেও নীড় রিয়েক্ট করলোনা তার মাথায় আগুন জ্বলছে কি এমন আছে ওই আবিরের মাঝে কি এমন কারনে সে তাকে নয় আবিরকে ভালোবাসে।এতোকিছুর পরেও তার চোখ মুখে নীড়ের জন্য অস্বস্তি আর আবিরের জন্য ভালোবাসা কথাটা ভাবতেই তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে।

হ্যা নীড় সবটাই জানে আদ্রিতার আবিরের প্রতি অনুভূতি তাদের বিয়ে। কিন্তু শামসুর রহমান সবাইকে শুধু জানিয়েছিলো বিয়ের পরেরদিনের কথা। সিটে মাথা এলিয়ে দেয়। চোখ জোড়া বন্ধ করে ভাবতে থাকে তিন বছর আগের কথা,,

অতীত,,
নীড় তখন তার নানীবাসাতেই থাকতো কারন শামসুর রহমানের আন্ডারেই সে শিক্ষতে চাইতো।প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করাই ছিলো তার লক্ষ। কিন্তু পড়াশুনার পাশাপাশি রাজনৈতিক কাজেও জড়িয়ে ছিলো সে সেখানের কিছু গেঞ্জামের কারণেই নীড় সেদিন প্রচন্ড রেগে ছিলো।অনেক কষ্টে নিজের রাগ সামলে নিলেও সে রাগ শেষ হয়েছিলোনা সম্পূর্ণ রুপে।

এদিকে প্রায় দুই বছর পরেই আদ্রিতা এসেছিলো তার নানীবাড়ি আদরের হওয়াই আদ্রিতা আসা মানেই বাড়িতে ঈদ ঈদ পরিবেশ তৈরি হয়ে যেতো।আদ্রিতা মনের সুখে মামির সাথে রান্না দেখছিলো সে মহূর্তে ছোট মামি কফি হাতে আদ্রিতাকে ধরিয়ে দিলো আদ্রিতা সেটা নিজের ভেবে ঠোঁট ছুয়াতেই ছোট মামি নিষেধ করে উঠে

—আহা সোনা মা তোকে আমি অন্য কফি করে দিচ্ছি তুই এইটা একটু নীড়কে দিয়ে আই ছেলেটা রেগে বাসায় ঢুকলো।মাথা শান্ত হয়েছে নাকি আর এই কফি তুই খেতেও পারবিনা কড়া করে চিনি ছাড়া বানানো।

ছোট মামির কথা শেষ হতেই মুখের আকার বিকৃতি করে ফেলে আদ্রিতা।কেউ কিভাবে চিনি ছাড়া কফি খাই বুঝতে পারেনা
—চিনি খাবেনা তো মুখ তো রাগী রাগী হবেই। চিনি ছাড়া মানুষ থাকে কেমনে।

আদ্রিতা কফি হাতে নিয়েই রওনা নিলো নীড়ের রুমে। কিন্তু বেচারী নিজের মাঝে এতোটাই মত্ত ছিলো যে বিনা নক করেই নীড়ের রুমে প্রবেশ করে।নীড় কেবল ওয়াসরুম থেকে গোসল সেড়ে বেরিয়েছে।আদ্রিতাকে নক না কড়ে ভীতরে ঢুকতে দেখেই রেগে যায় কিন্তু সেদিকে কি আদ্রিতার কোন ধ্যান আছে সে তো মগ্ন নীড়ের রুম দেখতে সাদা নীল মিশ্রণের বড় আকারের রুমটি নীড় নিজে হাতেই সাজিয়েছিলো।নীলের মাঝে সাদাটা দারুন ফুটে উঠেছে এদিক ওদিক তাকাতেই নীড়ের সাথে ধাক্কা খেতেই হাতের গরম কফি পড়ে যায় নীড়ের বুকে।লোমহীন বুকটা সাথে সাথে জ্বলে উঠে। দেবে রাখা রাগটা আবার যেনো মাথা চাড়া দিয়ে উঠে

—এই মেয়ে নিম্ন কমসেন্স নেই হ্যা কারো ঘড়ে ঢুকার আগে নক করে ঢুকতে হয় সেটাও কি জানা নেই তোমার কে তুমি হ্যা।(চিল্লিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে আদ্রিতার হাত।)

আদ্রিতা ভয়ে চোখ মুখে খিচে বন্ধ করে ফেলে।আদ্রিতার এই ভয় মাখা চেহারায় সাথে সাথেই গলে যায় নীড় রাগ মিটে কখন মুগ্ধতা গ্রাস করে ভেবেই পায়না। চব্বিশ বছর পেরিয়ে কিভাবে সেদিন নীড়ে পড়েছিলো এক বাচ্চা মেয়ের ভয় মিশ্রীত শ্যমলা মুখের প্রেমে সে নিজেও টের পায়নি।আর এদিকে বোকা আদ্রিতা নীড়ের হাতের বাধন ঢিল হতেই ছুটে পালিয়ে যায়। কিন্তু পিছন ফিরে একবার ও দেখেনা নীড়ের চোখে থাকা মুগ্ধতা ভালোবাসা দেখলে হয়ত সেদিন তার পায়ের কদম এতো দ্রুত গতিতে ছুটতোনা।

নীড়ের ভাবনার মাঝেই আদ্রিতার চিৎকার কানে ভেসে উঠে সাথে সাথেই নীড়ের অতিত থেকে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে বেরিয়ে তাকাতেই রেগে আগুন হয়ে যায়,,,

চলবে?