তোমাতেই বসবাস পর্ব-১০

0
256

#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ১০

আদ্রিতা নিজের বাবাকে বিদায় দিয়ে ছুট লাগায় নীড়ের খোজে আর পেয়েও যায় একটু দূরেই নীড় দাঁড়িয়ে থেকে ফোনে কথা বলছে আদ্রিতা আর কোন কিছু না ভেবেই নীড়কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।সাথে সাথেই নীড়ের হাত থেকে ফোনটা স্লিপ হয়ে নিচে পড়ে যায়।তার হার্টবিট এর গতি মহূর্তে বেরে যায় কয়েকশগুন।হাত অনবরত কাপতে শুরু করে।

—থ্যাংঙ্ক ইউ সো মাচ। আজ আপনার জন্য আমার মনের অনেক বড় কষ্ট দূর হয়ে গেলো আজ।
—কিন্তু এই ধন্যবাদ যে আমার না অন্যকারো।

চটজলদি আদ্রিতাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কথাটা বলে উঠে নীড়
—মানে?(অবাক চোখে তাকায় নীড়ের দিকে)
—কাজটা নানাজানের একটু আগেই নানাজান আমাকে কল দিয়ে সব জানালো আর তার কথা মতোই খালুকে নিয়ে ভিতরে আনলাম আমার অবদান এইটুকুই।
—ওহ তাও ধন্যবাদ।
—হুম যাও এবার তোমার নাম একটু পরেই এনাউন্স করা হবে।
—আমার নাম কিন্তু কেন?আমিতো কিছুতে ভাগ নি নাই।
—তুমি নাচ দিবা
—পাগল হইলেন আমি এইসব নাচ টাচ পারিনা।
—মিথ্যা কথা আমার সাথে বলে লাভ নেই আদর পাখি তোমার সবকিছুই জানা আমার।
—কিন্তু!
—যাও। কিছু বলে এখন লাভ নেই।
—আপনি আসলেই একটা রাক্ষস আপনি কার অনুমতি নিয়ে আমার নাম দিয়েছেন বলেন।
—এর আগেও তোমাকে বলেছি তোমার ব্যাপারে আমাকে কারো থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই বরং তোমার সব কিছুর জন্য আমার থেকে অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।
—আমি মানি না কিসের এতো জোর আমার উপর হ্যা আপনি কোন অধিকারে আপনি অধিকার ফলান।
—আমি কোন অধিকারে অধিকার ফলাই তা জানার অধিকার তোমার আছে?
—কেন থাকবে না।
—কেনো থাকবে?
—আরে আজব,,,

আদ্রির কথা শেষ হওয়ার আগেই নীড় আদ্রির কোমর জড়িয়ে নিজের বুকে টেনে নেই।হঠাৎ এমন হওয়াই টাল সামলাতে না পেরে আদ্রিতাও নীড়ে বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।নীড় আলতো হাতে আদ্রির চুল গুলা কানের পিঠে গুযে দেয়। মুখটা আদ্রির কানের কাছে নিয়ে এসে বলে উঠে।

—একটা কথা মাথায় সাজায় নেও আদর পাখি। তুমি আমার। একান্ত ব্যক্তিগত আমার। তুমি সেটা চাও আর না চাও
এই জন্মে পরকালে সব জায়গায় তোমার পিছে পাবা আমাকে।
তোমার ছায়াও অব্দি তোমার সাথে না থাকলেও পাবা আমাকে।
তোমার নিশ্বাসে ঘনত্বের প্রতিটা তাপে পাবা আমাকে।
তুমি উড়বা খোলা আকাশেই উড়বা কিন্তু সে আকাশেও পাবা আমাকে।

কথাটা বলেই আদ্রিকে ছেড়ে নীড় চলে যায়।আদ্রিতা সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায় আছে।তার কানে বাজছে নীড়ের বলা সব কথা। তার প্রতিটা লোম জানান দিচ্ছে তার শরীরের শীহরণ নীড়ের কাছে আসা। নীড়ের স্পর্শ যেনো ঝড় তুলে দিয়েছে।এ কেমন অদ্ভুত অনুভূতি কেমন এক শিহরণ।

—কি হচ্ছে এমন কেন হচ্ছে এমন।এইসব তো আগে হয়নি কেন নীড়ের কাছে আসায় আমি কিছু করতে পারলাম না তার কথায় কেন এই স্তব্ধতা।উফফ মাথা কাজ করছেনা আমার।

নীড়ের কথা মতোন ই একটুপর স্টেজে নাচ প্রদর্শনের জন্য ডাকা হলো আদ্রিতাকে বাধ্য হয়ে আদ্রিতাকে স্টেজে উঠতে হলো। আদ্রিয়ান, সিয়াম, রাদিব,চাদনী সাথে সাথে তালি আর সিটির বর্সন করতে শুরু করলো রামিসাও তাদের সাথে মিলে সমস্বরে তালি দিলো।

সাথে সাথেই গান বেজে উঠলো
Yeh bhi na jaane Woh bhi na jaane Nain’on ke rang naina jaane Mila jo sang tera Udaa patang mera Hawa mein hoke malang(বাকিটা শুনে নিয়েন)
নাচ শেষ হতেই চারিদিকে কড়তালির আওয়াজে মুখরিত হয়ে যায়।আদ্রিতাও এতোদিন পরে নাচ করে জেনো নিজের আনন্দ ফিরে পাই নাচতে নাচতে কখন যে নাচের মধ্যে ডুবে গেছিলো সে টেরই পাইনি। আরও একবার নীড়ের প্রতি কৃতঙ্গতা জানায়।

দূর থেকেই নীড় আদ্রির সম্পূর্ণ নাচ দেখেছে।আদ্রি যে এতো সুন্দর নাচে তা আদ্রির বাবা অনেক আগেই বলেছিলো ওকে সাথে স্টেজে পড়ে যাওয়ার কারনে স্টেজ ভিতি সম্পর্কেও জানিয়েছিলো। আর তাই নীড় না বলেই আদ্রির কাছে এমন সিচুয়েশন তৈরি করে যাতে তার মাথায় তখন স্টেজের চিন্তা না বরং নীড়ের বলা কথা গুলা ইফেক্ট করছিলো।

—তোমার রাস্তা তুমি নিজেই বের করবা তোমার যুদ্ধ তুমি নিজেই করবা আমি শুধু তোমার রাস্তা দেখাবো তোমাকে তোমার গন্তব্যের জন্য বাহন হবো।

****
আদ্রিতার নানি বাসার পরিচয় আগেই দিয়েছিলাম কিন্তু অনেকেই ভুলে গেছেন তাই আবার দিচ্ছি

(আদ্রিতার নানুবাড়ি তেমন বড় না। শামসুর রহমানের দুই ছেলে তিন মেয়ে।উনার বড় ছেলে আফতাব রহমানের দুই ছেলে আদ্রিয়ান,আর ছোট ছেলে আদ্রফ রহমান, আর ছোট ছেলে আকিব রহমান তার দুই মেয়ে নওমি রহমান এবং রুহি রহমান।দুইজনেই এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।আর শামসুর রহমানের তিন মেয়ে বড় মেয়ে ইরিনা চৌধুরী তারই ছেলে নির চৌধুরী উনার আরও একটি ছেলে রিয়াজ চৌধুরী আর মেঝো বোন ঐশি হাসান উনার এক মেয়ে। আর সবার ছোট রেনু মানে আদ্রিতার মা)

পুরা রহমান বাড়িতে আজ খুশির আমেজ হবেই না কেন বাড়ির মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে আর খুব শীঘ্রই রুহির বিয়ে হবে। সামনের শুক্রবার রিং পড়িয়ে চলে যাবেন তারা বলেই ঠিক করেন আর এই অনুষ্ঠান আওয়জন করা হবে আদ্রিতার নানু বাসা যেটা গ্রামা রয়েছে।রাইপুর(কাল্পনিক) এর ছোট এক গ্রামেই বাস করতেন তারা পরবর্তী সময়ে তারা শহরে চলে আসেন।কিন্তু এখনো তাদের জমি জমা রয়েছে সেখানে আর তা দেখাশুনা করার জন্য মানুষ ও রয়েছে।

দুইদিন আগেই সবাই রওনা দেয় রাইপুরের উদ্দেশ্য নিয়ে আদ্রিতার ফ্রেন্ড সহ সবাই একই বাসে করেই যায়।কিন্তু গ্রামে পৌছাতেই আদ্রিতার হাস্যজ্বল মুখটা অন্ধকার হয়ে আসে কারন তাদের সামনে খান বাড়ির সকলে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তাতে সমস্যা না সমস্যাটা আবির আর লিনাকে দেখেই হয়েছে।লিনার মুখটা দেখার সাথে সাথে আদ্রির মনে পড়ে যায় সব ঘটনা সব কষ্ট।তার আব্বু আম্মুর বলা কথা গুলা না চাইতেও চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোটা নোনাজল।আদ্রিতাকে দেখেই আদ্রিতার বড় আম্মু তাকে বুকে জড়িয়ে নেই এতোদিন পরে বড় আম্মুর সান্নিধ্যে পেয়ে কেদে উঠে আদ্রিতা। খান বাড়ি সকলে ঘিরে ধরে আদ্রিতাকে। শুধু বাদ থাকে আদ্রিতার বাবা মা আর আবির। আদ্রিতার বাবা মা লিনার ভয়ে এগুতে পারেনা দূর থেকেই মেয়েকে দেখে চোখের শান্তি করে।
আর আবির তার এখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে তাতে কিছু যায় আসেনা।

—কেমন আছো বড় আম্মু
—আমি ভালো আছি মা। তুই কেমন আছিস
—আমিও ভালো আছি।
—কেমন শুকাই গেছিস কেন হ্যা। নির্ঘাত খাওয়া দাওয়া করিস না। চেহারার হাল কি করেছিস।
—তোমার কাছে চিকন মনে হচ্ছে।ওইযে দেখছো(নীড় আদ্রিয়ান নানা, আর মামীদের দেখিয়ে)এরা পারেনা চব্বিশ ঘন্টা আমাকে খাওয়াতে। একজন তো নাক টিপে ধরে মুখের মধ্যে খাবার ঢুকাই দেয়(নীড় কে উদ্দেশ্য করে)।

আদ্রিতার বাচ্চা কথা শুনে সকলে হেসে দেয়
—আপাই
হিমানির কন্ঠ শুনে আদ্রিতা পিছনে ঘুরে।সাথে সাথেই হিমানী দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে আদ্রিকে।
—তুমি আমাকে ভুলে গেছো তাই না আপাই
—তোর মতো পাগলীকে ভুলা যায় নাকি
—একটা কল অব্দি করে খোজ ত নিলা না।
—আমিতো জানি আমার দুষ্টু বূড়ি ভালো আছে ত।পেত্নিরা কি খারাপ থাকে।
—আমি না তোমার বোন পেত্নি।
—আচ্ছা ত আমার বোন কে?(মুখ টিপে হেসে)
—কেন আমি।

সাথে সাথেই জিহবায় কামড় দেয়।একে একে সবাই একে অপেরর সাথে কুশল বিনিময় করে ভিতরে প্রবেশ করে।এতোক্ষন বাড়ির সকলের আদ্রিতার প্রতি ভালোবাসা দেখে ফুশে উঠে লিনা। মনে মনে ভয়ংকর পরিকল্পনা এটে নেই।শয়তানী হাসি দিয়ে সেও ভীতরে প্রবেশ করে।

আদ্রিতা ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বের হতেই দেখতে পাই নওমি চোখ নাক ফুলিয়ে তার বিছানায় বসে আছে।নওমির এমন অবস্থা থেকে আদ্রিতার বুক কেপে উঠে।কই এর আগে তো নওমিকে কখনো এইভাবে দেখেনি সে তাহলে আজ কি হলো।
নওমির কাছে আসতেই নওমি আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে কেদে উঠে।যা দেখে আদ্রিতার ভয় আরও বেড়ে যায়।

চলবে?
রি চেক করা হয়নি ভুল হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।