তোমাতেই বসবাস পর্ব-১১

0
254

#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকা_নওশিন_আদ্রিতা
#পর্ব_১১

কান্না করতে করতে এক পর্যায়ে যেয়ে চুপ করে যায় নওমি।নওমিকে চুপ করতে দেখেই আদ্রি এবার জিজ্ঞেস করে উঠে।
—বল এবার কি হয়েছে।
—কিছুনা রে (হাসার চেষ্টা করে)

সাথে সাথেই আদ্রি নওমির গালে ঠাস করে থাপ্পড় বসায় দেয়।
—কি জিজ্ঞেস করেছি তোকে (রেগে যেয়ে)
—তুই আমাকে মারলি?(গালে হাত দিয়ে)
—হ্যা মেরেছি যদি এখন সোজা সোজি উত্তর না দিস আরও মারবো আমি তোর তিন মাসের বড় ভুলে যাস না।
—ভাই বোন দুইটাই শয়তান।(বিরবির করে)
—কি হয়েছে বলবি এবার।
—তোর ভাই ডিভোর্স ফাইল করেছে।(গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে)
—ডিভোর্স মানে তোদের বিয়ে হলো কবে
নওমি এবার নিজের মাথায় নিজেই থাপ্পড় মারে কি বলতে যায়ে কি বলে ফেলেছে। আদ্রিয়ানের মুখে ডিভোর্স শুনেই তার মাথা ঘুরে উঠেছিলো। ওর সাথে যে আদ্রু ও থাকবে সেটা সে বেমালুম ভুলেই গেছিলো। আবার আদ্রু জড়ায় ধরায় জেনো কষ্টটা আরও বেরে দ্বিগুন হয়ে গেছিলো।

—কি হলো বল কিছু আদ্রিয়ান ভাইয়ার ডিভোর্স হবে কিভাবে তার বিয়ে হলো কবে আর তুই বা কেন এই বিষয় নিয়ে কান্না করচ্ছিস আজব।

—কারন তোর আদ্রিয়ান ভাইয়ার বউ আমিই।
—হোয়াট কি বলচ্ছিস এইসব।
(চেচিয়ে)তোর মাথাতো ঠিক আছে?

নওমি মাথায় দুলাই সাথে সাথে আদ্রু আরও একটা থাপ্পড় বসায় দেয়।
—আবার মারলি কেন(কাদো কাদো হয়ে)

সাথে সাথেই আরও একটা থাপ্পড় মারে নওমির গালে
—আর তোর মাঝে কি নীড় ভাইয়ার আত্না ভর করসে নাকি আজব হ্যা।

ব্যাস সাথে সাথেই আরও একটা থাপ্পড় পড়ে নওমির গালে
—তোদের বিয়ে হইসে আর আমাকে বলার
প্রয়োজনবোধ অব্দি করিসনি।আরে বাহ না ভাইয়া কিছু বলেছে না তুই আর পরিবারের
কথা না হয় বাদ ই দিলাম।
—আরে শান্ত হ বলছি তো সব (মুখটা কাচুমুচু করে)।
—জলদি।
—তখন আমি ক্লাস সিক্স এ পড়ি,,,

অতিত,,
ছোট বেলা থেকেই আদ্রিয়ান এর চোখে নওমিকে আলাদাই ভালো লাগতো। বোনের নজর থেকে আলাদায় অবশ্য ছোট বেলা বলতে আরকি ক্লাস এইট থেকে।তখন তার মাথায় বোন আর প্রেমিকার দৃষ্টান্ত আলাদাই ছিলো।আর সেই সুবাদেই নওমিকে যে সে বোন না অন্য নজরে দেখে তা প্রমান পায় নওমির প্রতি অগ্রাধিকার দেখেই যেহেতু তখন তার ১৬ বছর ছিলো আর নওমির ১০। দশ বছরের মেয়ের মাথায় এই প্রেম অনুভূতি এইসব তো কিছু ঢুকবেনা এইটাই স্বাভাবিক নওমির মাথাতেই তখন এইসব কিছু ছিলোনা ছোট বেলাই যখন বাকী ছেলেদের সাথে খেলতো তখন আদ্রিয়ান তাকে হয় ধমক দিতো নাহয় বাড়িতেই রেখে দিতো একপ্রকার জোড় করে।আর নাহলে নিজের সাথে খেলাতো।বড়রাও ব্যাপারটা তেমন আমিলে নেইনি। কিন্তু দূর্ঘটনা তখন ঘটে যখন নওমির বয়স হয় সতেরো আর আদ্রিয়ানের তেইশ তাগড়া যুবোক তখন সে রক্তের তেজই আলাদা।আর ততোদিনে নওমিও বুঝে যায় আদ্রিয়ান তাকে বোনের নজরে না অন্য নজর দেখে এতে তার ও সমস্যা ছিলোনা কারন আদ্রিয়ান এমনিতেই সুদর্শন ছিলো।জিম করায় হালকা বডিও ছিলো তখন যার কারনে দেখতে আকর্ষনীয় যুবক হিসেবেই ধরবে যেকেউ
তাকে
কিন্তু সমস্যা ছিলো আদ্রিয়ান এর রাগ। সতেরো বছরে নওমি যখন ক্লাস নাইন এ পড়ে তখন নওমিকে একটা ছেলে চিঠি দেয় আর সেটাই দেখে ফেলে রুহী। আর সেও আদ্রিয়ানকে চকলেট এর লোভে পড়ে বলে দেয় সবটা। আর সাথে সাথেই হাজির হয় পরেরদিন আদ্রিয়ান স্কুলে।বিনা কিছু ভেবেই দুই থাপ্পড় বসায় ছেলেটার গালে আর মারতে থাকে ক্লাস নাইনে পড়া ছেলে আর যায়হোক অনার্সে পড়া ছেলের সাথে ত পারবে।কলেজের টিচার এসে তাদের থামায়। যেহেতু আদ্রিয়ান এর দাদা এই কলেউ এর ট্রাস্টি ছিলেন তাই তাকে তেমন কিছুই বলা হয়না কিন্তু খবর চলে যায় বাড়িতে।। আর এতেই নওমির হয়ে যায় রাগ। সবার সামনেই আদ্রিয়ানকে থাপ্পড় মেরে বসে।
—সমস্যা কি তোমার সবসময় আমার লাইফে হস্তক্ষেপ করো কেন ভাল্লাগেনা আর আমার এইসব আমি বিরক্ত হয়ে গেছি তোমার এইসব গুন্ডামো দেখে।কথায় কথায় মারপিট। কেন কি হয় আপনার কিসের এই অধিকার দেখান আমার উপরে।

ব্যাস এইকই লাইন ই নওমির জীবনে কাল বয়ে এনেছিল।আদ্রিয়ান সেদিন ই বড়দের একপ্রকার জোড় করেই কাজি ডেকে এনে বিয়ে পড়ায় নেয়। কিন্তু শর্ত একটাই থাকে আদ্রিয়ান নিজের পায়ে না দাঁড়ানো অব্দি তাদের বিয়ে ধরা হবেনা আদ্রিয়ান নওমির কাছে যেতে পারবেনা।
আদ্রিয়ান সবার এই কথায় রাজি হয়ে যায়। আর তাদের কথা অক্ষরে অক্করে পালন ও করে। নওমিও ধীরে ধীরে আদ্রিয়ানের এই টক্সিক ভালোবাসাই মেতে উঠে।ঠিক টক্সিক ও বলা যায়না কারন আদ্রিয়ান নওমির উপর কিছু নিয়ে কখনো জোড় করেনি শুধু ছেলেদের বেলাই আদ্রিয়ান একটু স্ট্রিক হয়ে যায়।কিন্তু আদ্রিয়ান শুধু জেলাস হয় তা না সেদিন প্রথম বারের মতো নওমি জেলাস হয়েছিলো আর সেটাই তাদের সম্পর্কের কাল হয়ে দাঁড়ায়।

ছয় মাস আগের কথা নওমি তখন এক্সাম দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষা করচ্ছিলো৷ তাই ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতে তাদের কলেজের পাশেই এক রেস্টুরেন্টে যায় সেখানেই দেখে আদ্রিয়ান একটা মেয়ের হাত ধরে বসে আছে। আর মেয়েটা আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে বসে আছে।যা দেখে মহূর্তে বিনা কিছু ভেবে নওমি রেগে সেখানে যেয়ে মহিলাটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আদ্রিয়ানের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
রেস্টুরেন্টে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে যায়
মহূর্তে। আদ্রিয়ান হতদম্ভ হয়ে কিছু বলতে
যাবে তার আগেই নওমি আবারো হাত উঠাতে যায় আর আদ্রিয়ান ধরে ফেলে
—নওমি এটা কেমন ধারণের ব্যবহার?(রেগে গেয়ে)
—আপনি আমাকে প্রশ্ন করেন আর নিজে কি করছেন হ্যা। এখানে অন্য মেয়েকে নিয়ে
রঙলিলা। ছি (কেদেই ফেলেছে নওমি)
—নওমি মুখ সামলে।
(চিল্লিয়ে)
—আপনি আসলেই একটা খারাপ।আর এই মেয়ে লজ্জা করেনা একটা ছেলের সাথে,,,

আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান নওমির গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

—আমি কার সাথে কি করি না করি তা একান্ত আমার বিষয় সেখাণে হস্তক্ষেপ করার তুমি কে।

নওমি ফেলফেল করে তাকায় আদ্রিয়ান এর দিকে।
—আমি কি কেউ না
—নাহ তুমি কেউ না।

নওমি আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়। ওই যেতেই মেয়েটা বলে উঠে
—ভাই এটা কি করলি তুই।রাগে তুই কি দিয়ে কি বলেছিস তোর মাথায় আছে।
—তো আর কি করতাম মেয়েটা মুখে যা আসচ্ছিলো তাই বলে দিচ্ছিলো
—স্বাভাবিক কি না এটা যেকোন মেয়ে তার স্বামিকে অন্যকারো সাথে দেখলে এমন রিয়েক্ট ই করবে।
—মানছি কিন্তু ওর কি উচিত ছিলোনা আমাকে জিজ্ঞেস করা।
—আচ্ছা শান্ত হো। আমারই উচিত হয়নি এইভাবে তোকে জড়ায় ধরা তুই ত শুধু আমাকে শান্তনাই দিতে চাচ্ছিলি।
—বাদ দে ওকে আমি মানায় নিবো আর আঙ্কেল আর আন্টিকেও আমি মানায় নিবোনি তোর আর আসিফের বিয়ের ব্যাপারে।
—থ্যাংক্স দোস্ত তুই না থাকলে আমি আর আসিফ এতোদিনে হয়তো আলাদায় হয়ে যেতাম।
—হুম যা আসিফ মেইবি ওয়েট করছে।
—হুম মেয়েটাকে মানায় নিস বকিশ না বয়স
কম তো।বুঝে আর কতোই।
—হুম।

আদ্রিয়ান এর ক্লাসমেটকে বিদায় দিয়েই বাসার
উদ্দেশ্য রওনা দেয় বাসায় যেতেই দেখে নওমি ততোক্ষনে কাউকে কিছু না বলেই নানী বাসায় চলে গেছে আর মাঝরাস্তাই যেয়েই সবাইকে জানায়েছে।বাড়ির কেউ আর এইটা নিয়ে তেমন কিছু মনে করেনি কারন সে মাঝেমধ্যেই নানী বাড়ি চলে যায়।আদ্রিয়ান ও আর নিজের ইগো ধরে রাখতে নওমিকে নিতে যায়না। আর এতেই নওমির অভমান বারে।

বর্তমানে,,
নওমির সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে আদ্রি সে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা।

চলবে?