#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকা_নওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ১৩
আদ্রিতা কফির মগ নিয়ে উপরে উঠতে নিলেই চোখ যায় লিনা আর আবিরের রুমের দিকে।দূর থেকেই চোখে পড়ে আবিরের পিঠে মুখ গুজে দাঁড়িয়ে আছে লিনা।আর আবির অন্যদিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলছে।আদ্রি মুচকি হাসে।
—তুই যদি শুধু আমার থেকে আবির কে কেড়ে নিতে আমি কিছু বলতাম না।কারন আবির কোনদিন আমার ছিলোও না সে তো প্রথম থেকেই তোর ছিলো তাই এটা নিয়ে আমার অভিযোগ ও ছিলোনা তেমন। কিন্তু তুই আমার থেকে আমার সব কেড়ে নেওয়ার খেলাই নামলি মাঝেমধ্যে মনে হয় তোকে ক্ষমা করে দেয়।কিন্তু যখন সে রাত গুলার কথা মনে পড়ে যখন আব্বু আম্মুর কথা মনে করে চিৎকার করে কান্না করেছি নিজের মায়ের অসহায় মুখটা মনে পড়ে নাজানি সে কতোটা কষ্ট পেয়েছিলো নিজের কলিজার টুকরো টাকে নিজে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করার সময়।এইসব মনে পড়লে তোর জন্য ঘৃণা ব্যতীত আর কিছু জন্ম নেয় না।
কথাগুলো আপন মনে আওড়ে সেখান থেকে চলে গেলো।সে যেতেই লিনা আবিরকে ছেড়ে দিলো।আবির হাসলো
—চলে গেছে নাকি আদ্রিতা।(সামনের দিকে তাকিয়ে)
আবিরের কথায় লিনা অবাক হয়ে গেলো
—মা মানে,
—মানেটা তুমিও জানো আমিও জানি। কি মনে করেছো আমি কিছু জানিনা বা বুঝিনা।আসলে কি জানো তুমি আমাকে ভালোবাসো না তুমি শুধু ওই মেয়েটার কাছ থেকে তার সব পছন্দের জিনিস কেড়ে নিতে চাও ব্যাস এতোটুকুই। তুমি তাকে হিংসা করো।
—এমন কিছুই না।(আমতা আমতা করে)
আবির হাসে লিনাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে তার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে।লিনা অবাক হয়ে যায় বিয়ের পর থেকে আবির তার সাথে কথা অব্দি বলেনি সেখানে আজকে তার কোলে মাথা রাখলো।
—লিনা কিছু কথা বলি শুনবা?
—হুম।(ধীরে)
—আমি খান বাড়ির বড় ছেলে।যখন আমি হয় তখন আমার কোন ভাইবোন ছিলোনা। একটু বড় হলাম তখন দেখতাম ছোট আম্মুর পেট ফুলা প্রথমে বুঝতাম না। পরে ছোট আম্মু আমাকে বলে সেখানে নাকি আমার বোন আছে। আর কইদিন পরেই সে নাকি আমার কোলে থাকবে।তার আদো আদো বুলিতে আমাকে ভাইয়া ডাকবে।আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। আর তার কিছুদিন পরে আসলেই আমার হাতে ছোট আম্মু পুতুলের মতো ছোট বাচ্চা থামায় দিয়েছিলো এখনো মনে আছে তার ছোট ছোট চোখ গাল হাত মুখ।একদম এইটুকু (হাত দিয়ে ইশারা করে)সেদিনের পর থেকে হয়ে উঠলাম তার বড় ভাই আর সে আমার কলিজার টুকরা।সেও সারাদিন ভাইয়া ভাইয়া বলে বাড়ি মাতিয়ে রাখতো। তুমি ছিলা হিমানি হলো কিন্তু তোমাদের চেয়ে বেশি আমি ভালোবাসতাম আদ্রিতাকে। কারন ভাই হওয়ার অনুভূতি সে আমাকে বুঝিয়েছিলো।
(এইটুকু বলে থামে আবির)তোমার প্রতি আমার কোন আলাদা দৃষ্টি কোনদিন ও ছিলোনা কিন্তু তুমি আমার আগে পিছে ঘুরার কারনে তোমার প্রতি আমার অনুভূতি জন্ম নেয়। আর এটা বুঝতে পেরেই তুমি নোংরা একটা খেলা খেলো আদ্রিতার মাথায় ঢুকাই দেও আমাকে সে ভালোবাসে আর ওর বাচ্চা মন ও সেটা বিশ্বাস করে নেয়।কিন্তু সে আমার বোন বোনের চোখেই ভালোবাসতাম তাকে।কি করতাম না পারে নিজের কলিজার টুকরাটাকে দূরে সরালাম। কথা কমাই দিলাম। তোমার প্রতি মনোযোগ দিলাম ভাবেছিলাম আমার ভালোবাসা পেলে তুমি আদ্রিতার সাথে ঠিক হবা কিন্তু না তার প্রতি তোমার হিংসা কমলোনা।আর তুমি যে আমাকে ভালোবাসতা না সেটা সেদিন হোটেলে তোমাকে আর তোমার প্রেমিককে অন্তরঙ্গ মহূর্তে দেখে নিয়েছিলাম। সেজন্যেই তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম কিন্তু তুমি তোমার প্রেমিকের বাচ্চা আমার নামে জানান দিলা। ভালোবাসতাম কি করবো মেনে নিলাম সেটাও। কিন্তু মানতে পারিনি তোমার ছোট মা আর ছোট বাবাকে বলা কথা গুলো।সেদিন সব শুনেও চুপ ছিলাম।
লিনা অবাক হয়ে যায় আবিরের কথায়।
—একটা কথা কি জানো লিনা ভালোবাসা মানুষকে কেমন জানি ছ্যাছড়া বানায় দেয়।যেমন আমি হয়েছি। এইযে এতো পাপ করেছো আমি চাইলেই তার শাস্তি দিতে পারি কিন্তু আমার মন সায় দেয়না ভাবেছিলাম আমার চুপচাপ থাকা তোমাকে ভাবাবে কষ্ট দিবে কিন্তু নাহ তুমি বদলাও নি আমাকে নিয়ে ভাবোনি।
লিনা এবার ভাবে আসলেই তো সে কোনদিন তেমন পাত্তা দেয়নি আবিরের নিশ্চুপ থাকাকে দেখেছে বুঝেছে কিন্তু তেমন একটা গায়ে মাখাইনি তাহলে কি সে নিজের ঘৃণাই এতোটাই ডুবে গেছিলো আবিরের নিশ্চুপি তাকে ভাবাইনি।এটা ঠিক সে আবিরের প্রতি এইজন্যই এগিয়েছিলো কারন আদ্রির মনোভাব তাছাড়া আবিরকে তো সে শুধু নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছে সে যাকে ভালোবাসতো সেতো তাকে ছেড়ে দিয়েছে তাইতো আবার ফিরতে হয়েছিলো আবিরের কাছে।
আবির উঠে যায় লিনার কোল থেকে পুরুষ মানুষ এর চোখ থেকে বলে পানি বের হতে নেয় কিন্তু আবির আজ পারছেনা নিজের চোখের পানি আটকাতে।ভালোবাসা এতোটা কষ্টদায়ক হলেও কেন ভালোবাসাকে ছাড়া যায় না কেন হয়না এই ভালোবাসার মুক্তি একটু রেহায় একটু শান্তির জন্য মানুষ বার বার ছ্যাছড়ার মতোই ত ছুটে যায় নিজের ভালোবাসার দরজায় ভিক্ষা চাইতে। আর তারা ভিক্ষুক ভেবে দরজা বন্ধ করে দেয়।
দরজার আড়াল থেকে সবটা শুনে মুখে হাত চেপে কান্না করে দেয় আদ্রিতা।এতোক্ষন সে দরজার আড়ালেই ছিলো নীড়ের জন্য করে নিয়ে যাওয়া কফি আদ্রিয়ান নিয়ে নেওয়াই পুনরায় যাচ্ছিলো কফি করতে আবিরের মুখে ছোট বেলার কথা শুনে পা জোড়া থমকে যায় সেখানে।
নীড় আদ্রিতার কাধে হাত রাখতেই আদ্রিতা নীড়কে জড়ায় ধরে।
—আমি কতোবড় পাপ করে ফেললাম আমি কতোবড় অন্যায় করে ফেলেছি। আল্লাহ আমাকে কখনোই মাফ করবেনা। আমি ভাই বোনের পবিত্র ভালোবাসাকে কলংকিত করে ফেলেছি।আমি কিভাবে পারলাম ছোটবেলার কথা গুলো আবির ভাইয়া আমাকে আগলে রাখার মহূর্ত আমি ভুলে গেছি।আমি এ কি করলাম।
—আদর পাখি চুপ করো দেখি চোখ মুছো। কাউকে ভালোবাসা তো ভুল নয়।দেখি চুপ কান্না কাটি করো না।
—ভাইয়া আমাকে কতোটা নিচু মনে করছে।
—আবির তোমাকে একদম নিচু মনে করছেনা দেখি চলো আমার সাথে।
—কিন্তু,,,
—হুশ একদম না কোন কথা যেনো মুখ থেকে বের হয়না।
আদ্রিতা নীড়কে জড়ায় রেখেই হাটা ধরে।নীড় ওকে নিজের রুমে নিয়ে যেয়ে পানি খাওয়াই দেয়।
****
লিনা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে চোখ জোড়া দূরে থাকা গাছাপালার দিকে।আজ নিজেকে শূন্য মনে হচ্ছে। কিন্তু এটা তো হওয়ার কথা না উলটা এই শূন্য অনুভূতি হওয়ার কথা আদ্রিতার।তাহলে নিজেকে কেন মনে হচ্ছে এতো একলা।
—কেন হচ্ছে এমন আমার সাথে এমন। আবিরকে তো আমি ভালোবাসিনা তাহলে তার চোখে থাকা পানি আমাকে কেন শূন্যতা দিচ্ছে কই এর আগে ত ওর চুপ থাকাও আমাকে ভাবায় নি। তাহলে আজ তার কথা গুলা আমাকে কেন এতো একলা করে দিলো। আদ্রিতার প্রতি ঘৃণা কি আমাকে এতোটাই নিচে নামায় দিয়েছে।
—কেন এতো ঘৃণা তার প্রতি।
পুরুষালী কন্ঠ পেতেই পিছনে ফিরে তাকায় লিনা,,,
লিনা পিছনের দিকে ফিরে দেখে নীড় দাঁড়িয়ে আছে।নীড় লিনার দিকে পা বাড়ায়।
—নিজের প্রেমিকার ওয়াকালতি করতে এসেছেন।
—নাহ নিজের প্রেয়সির প্রতি এতো ঘৃণার কারন জানতে এসেছি।
—কি করবেন শুনে।
—কথাগুলো শুনতে ইচ্ছা করছে সব তো জানি কিন্তু এতোটা ঘৃণা যে ছোট বেলা থেকে তা জানতাম না আমি ভেবেছিলাম আবিরকে ভালোবাসার জন্য এই ঘৃণা কিন্তু তুমি তো তাকেও ভালোবাসো না তাহলে ।
—আদ্রি আর আমি সাত কিংবা আটমাসের ছোট বড়৷ আদ্রি আমার বড়। ছোট বেলাই নানু বাড়িতে আসতাম সবাই খুব ভালোবাসতো আদর করতো কিন্তু যখন ব্যাপারটা আদ্রি আর আমার মাঝে আসতো সবার ফার্স্ট চয়েজ হতো সে।তার কথা তার আচারণ সব কিছুতেই সবাই মুগ্ধ হতো আমি থাকতাম সর্বদা সাইড লিস্টে। আজ কি রান্না হবে আদ্রি যা খাবে কি কালারের পোশাক বানানো হবে আদ্রির পছন্দের।কিন্তু আমার দাদী বাসায় আমাকে কেউ ভালোবাসতোনা আদ্রি যেমন তার দাদী বাসায় মাথায় চড়ে থাকতো আমি কখনো থাকতাম না। এর মধ্যেই আম্মুকে বাসা থেকে বের করে দেয় কারন তার কোন ছেলে হচ্ছিলোনা আর মেয়ে দিয়ে তারা কি করবে (তাচ্ছিল্যের হেসে) ব্যাস নানী বাসায় থাকা শুরু করলাম আমার আর আম্মুর অবস্থার জন্য আদ্রির বাবা মা মানে মেঝো মামা মামী আমাকে খুব আদর করতো আমার কথা শুনতো আমার আবদার পূরণ করতো কিন্তু বাকীরা আদ্রি আদ্রি।ধীরে ধীরে ঘৃণা হতে লাগলো তার সব কিছু কেড়ে নিতে শুরু করলাম এন্ড সি আজ আমি একা আর সে পরিপূন্য,,,
চলবে?