#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকা_নওশিন_আদ্রিতা
#পার্ট_১৫
অনুষ্ঠান সুষ্ঠভাবে শেষ করে নওমি ঘরে ফিরতে নিলেই আদ্রিতা তার হাত ধরে ছাদে নিয়ে যায়।
—আরে কি করছিস কই নিয়ে যাচ্ছিস আমাকে?
—চুপচাপ চল আমার সাথে।
—আরে এই রাতে ছাদে কেন দেখ আমি খুব টায়ার্ড আমি ফ্রেশ হবো।
—ফ্রেশ হবি পরে হবি এখন আমার সাথে ছাদে যাবি।
—কেন তোর কি ভুতদের সাথে নাচানাচির করার শখ জেগেছে।
—হ্যা কিন্তু নাচবি তুই দেখবো আমি তালি মারবে আমার পাঠকগন।
—তোরে কিন্তু এবার আমি ছাদ থেকে ফেলাই দিমু(রেগে)
—ফেলে দিস আগে চলত ছাদে।(নওমিকে টানতে টানতে)
ছাদে নিয়ে এসে নওমিকে আদ্রিতা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে বাহির দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।এদিকে হঠাৎ এমন হওয়াই হচকচিয়ে যায় নওমি
—আরে কি হলো দরজা বন্ধ করলি কেন খুল বলছি দেখ আদু এমন মজা কিন্তু ভালোনা খুল না।বোন কই তুই।
নওমির চেচামেচির মাঝেই ছাদের আলো জ্বলে উঠে।হঠাৎ এমন হওয়াই নওমি পিছে ঘুরে দাঁড়ায়।আশেপাশে লাইটিং আর বেলুন দেখে অবাক হয়ে যায়। প্রতিটা বেলুনে সরি শব্দ টা দেখে ভ্রু কুচকে আসে নওমির। আশেপাশে খুজতে থাকে কাউকে আর কিছুক্ষন পরে পেয়েও যায়। ছাদের কোনা থেকে বেরিয়ে আসে আদ্রিয়ান তার পরণে এখনো অনুষ্ঠানের মেরুন পাঞ্জাবী সাদা জিন্স। নওমি না চাইতেও লোকটাকে দেখে ক্রাশ খেতে বাধ্য হয়।পুনরায় দরজা ধাক্কাতে শুরু করলে কানে আসে আদ্রিয়ানের গলা
I Am Sorry Mere Pyaare Jaane do
Hai Chhodo Bhi Jaane Do
I Am Sorry Oh Sorry Jaane Do
(কান ধরে মুখটা মলিন করে গেয়ে উঠে)
Hota Hai Chhodo Bhi Jaane Do
I Am Sorry Oh Sorry Jaane Do
Hota Hai Chhodo Bhi Jaane Do
(নওমি আদ্রিয়ানকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আদ্রিয়ান নওমির সামনে এসে বামদিকে হালকা ঝুকে কানে হাত দিয়ে পুনরায় বলে উঠে)
Ho Gayee Galti Chhodo Bhi Yaaron
Jib Nikalo Pyaaro Nimbu Namak Chatkaro
Ho Gayee Galti Chhodo Bhi Yaaron
(নওমি পুনরায় আদ্রিয়ানকে ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যায়)
I Am Sorry Oh Sorry Jaane Do
Hota Hai Chhodo Bhi Jaane Do
I Am Sorry Mere Pyaare Jaane Do
Hota Hai Chhodo Bhi Jaane Do
(আদ্রিয়ান নওমিকে পিছ থেকে জড়িয়ে ধরে)
Dekho Re Dekho Hai Koi Gadbad
Nain Hamare Padhke, Jaane Kyon Dil Dhadke
Sher Aaya Sher Aaya
Sher Aaya Sher Aaya Bhaago Re
Sar Neeche Pair Upar Bhaago re
(নওমি আদ্রিয়াকে ছেড়ে দিলে আদ্রিয়ান নওমির ঘাড়ে হাত রেখে দৌড় দেয়।আদ্রিয়ান এর এমন কান্ডে নওমি হাসবে না কান্না করবে কিছু বুঝতে পারছেনা)
Chohta Sa Yeh Ghar To Mahal Hai Kal Ka
Dekho Kaisa Rang Pade Chhalka
Dekho Kaisa Rang Pade Chhalka
Yeh Sapna Sachcha Ho Jaane Do
Has Khil Ke Hil Mil Ke Gaane do
(সরি নামের একটা বেলুন এনে নওমির সামনে ধরতেই নওমি সেটা ফুটিয়ে দেয়)
Yeh Sapna Sachcha Ho Jaane Do
Has Khil Ke Hil Mil Ke Gaane Do
I Am Sorry Oh Sorry Jaane Do
Hota Hai Chhodo Bhi Jaane Do
I Am Sorry Oh Sorry Jaane Do
Hota Hai Chhodo Bhi Jaane Do
আদ্রিয়ান এবার কান ধরে উঠবস করতে শুরু করে নওমি আর নিজের হাসি ধরে রাখতে পারেনা হেসে দেয় উচ্চস্বরে।
—মাফ করে দেও জানপাখি। আমি কখনো তোমার দিকটা বুঝতেই পারিনি আসলে বুঝার চেষ্টাই করিনি।তোমার অভিমান না ভাংগিয়ে নিজে ইগো নিয়ে বসে ছিলাম আই এম সরি। যা শাস্তি দিবা মাথা পেতে নিবো কিন্তু তোমাকে ছেড়ে থাকার কথা স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারিনা।একটাবার বিশ্বাস করে ফিরে আসো।
—পুনরায় এমন করলে।
—জান নিয়ে নিও উফ অব্দি করবোনা।
নওমি আর নিজেকে সামলাতে পারেনা আদ্রিয়ান এর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে হাজার হোক নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে কতোদিন দূরে সরিয়ে রাখা যায়।আদ্রিয়ান এর বুকের হাহাকার যেনো এতোদিনে মিটে।
***
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিচে যেতেই পরিবেশ শান্ত দেখে অবাক হয় আদ্রি। নিচে নেমে লিনাকে নিচে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়।সব বড়রা স্তব্ধ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।আবির নীড় আদ্রিয়ান নওমি আদ্রফ রিয়াজ রুহী সবাই এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছে।আবিরের চোখের দিকে তাকাতেই আদ্রিতা অবাক হয় আবিরের চোখে স্পষ্ট পানি দেখে ধোক করে উঠে আদ্রিতার বুক।পাশেই নিজের ফুফুকে মুখ চেপে কান্না করতে দেখে তার দিকে এগিয়ে যায় আদ্রিতা
—ফুফু মনি তুমি কান্না করছো কেন কি হয়েছে সবাই এমন চুপচাপ কেন।
আদ্রিতার আওয়াজ পেতেই লিনা মাথা তুলে তাকায়। কোনরকম উঠে আদ্রিতার কাছে যেয়ে জড়ায় ধরে।আদ্রিতা যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে উঠে যায়
—অবাক হচ্ছিস তো। এর আগেও তোকে জড়ায় ধরেছি তোকে কিন্তু কোনদিন ভালোবেসে না। আজ তার জন্য আফসোস হচ্ছেরে। যদি ছোটবেলাই আমার মনে এতো টা বিষ না থাকত তাহলে আজ হয়তো কাহিনী টা অন্যরকম হতো।
—কি হয়েছে লিনা (লিনাকে জড়িয়ে ধরে)
—নিজের করা পাপের শাস্তি পাচ্ছি।(আলতো হেসে)
—মানে।
—মাফ করে দিস আমাকে। নিজের পাপের খেলায় এতোটা লিপ্ত ছিলাম কবে নিজেকে এতোটা নিচে নামিয়ে দিয়েছি টের ই পায়নি। আজ আমি শূন্য আর এই শূন্যতা আমার সহ্য হচ্ছেনা।
—নিজের ভুল বুঝা সবচেয়ে বড় ব্যাপার।এর চেয়ে বড় শাস্তি হয়না।
—হয়তো আমার ভাগ্যে এরচেয়েও বড় শাস্তি আছে।
—মানে।
—আমার ব্লাড ক্যন্সার ধরা পড়েছে।
আদ্রিতা অবাক হয়ে যায়।
—কি বলছিস এইসব
—পাপ বাপকেও ছাড়েনা কথায় আছেনা।
সবার চোখেই পানি। যতোই পাপ করুক লিলা তাদের বড্ড আদরের। একটা ভুলের জন্য নিজের সন্তানকে ঘৃণা করতে পারে না।
*****
৩ বছর পরে,,,
বিয়ের পিড়িতে বসে আছে নওমি আজ আরও একবার বিয়ে করতে চলেছে সে আদ্রিয়ানকে সবাইকে সাক্ষি রেখেই।কাজি মেহমান সব এসে হাজির কিন্তু যার জন্য অপেক্ষা তার আসার কোন নাম গন্ধ নেয়।
আদ্রি অধৈর্য হয়ে বলে উঠে
—সে আসবে না সে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত তুই কবুল বলে দে ভাইকে আর কতোক্ষন অপেক্ষা করাবি(বিরক্ত হয়ে)
—যতোক্ষন না অব্দি নীড় ভাইয়া আসছে তোর ভাইয়াকে অপেক্ষা করতে হবে।
—এটা কেমন ধারণের পাগলামো।(রেগে)
—পাগলামো মনে হলে পাগলামো বাট ভাইকে ছাড়া আমি বিয়ে করবোনা।
আদ্রিতা এবার তেতে উঠে রেগে বলে উঠে
—যা খুশি কর আমি গেলাম তোর এইসব ঢং দেখতে ইচ্ছা করছেনা।
আদ্রিতা কথাটা বলেই নিজের রুমে যেয়ে বসে থাকে।ফোনের স্ক্রিন অন করতেই ভেসে উঠে নীড়ের নাম্বার। ৭ মাস হয়ে গেলো এই নাম্বার থেকে কল আসেনা কোন খোজ আসেনা। অভিমান পুনরায় আদ্রিতার মনে বাসা বাধে।
আজ তিন বছর হয়ে গেলো নীড় সাউথ কোরিয়ায় soul নামক শহরের নামকরা মেডিকেলে নিজের ডাক্তারের হাইয়ার ডিগ্রি নিতে গেছে।সেখানে যাওয়ার পরে ফোনেই তাদের কথা চলতো। প্রতিদিন ভোর হলেই তার ফোনে জ্বল জ্বল করতো নীড়ের নামটা। ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে আসলো। ঠিক কবে কখন নীড়ের প্রতি অনুভূতি গুলা তার মনের মধ্যে বাসা বাধতে শুরু করলো সে নিজেও জানলোনা। কিন্তু মাস সাত এক হলো না নীড়ের নাম্বার থেকে কোন কল আসে আর না আদ্রির নাম্বার থেকে তাকে কল যায়।এক পর্যায়ে এসে আদ্রিতাও কল দেওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু প্রতিদিন ভরে নীড়ের কলের অপেক্ষা করা ছাড়েনা।
হঠাৎ বাহিরে হট্টগোল এর আওয়াজ পেতেই ব্যালকনিতে যেয়ে দাঁড়ায় আদ্রিতা।আর যা দেখে তার জন্য সে মৌটেও প্রস্তুত ছিলোনা,,,
চলবে?