#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্ট_১৭
আদ্রিতা ক্লাস থেকে বেরিয়ে চুপচাপ রাস্তা ধরে হাটা শুরু করে আজ বাড়ি যেতে মন চাচ্ছেনা বাড়িতে গেলেই নীড়ের অবহেলা মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।দূর দূরান্তে কোথাও হারানোর উপায় খুজা উচিৎ।
—আচ্ছা এই পুরো পৃথিবীতে আমার জন্য হারানোর কোন জায়গা নেয়।যে জায়গায় শুধু আমার রাজ হবে।যেখানে আমি থাকবো আমার নাম জপা হবে যেয় স্থানে। এই বিষাক্ত হাওয়াই নিশ্বাস নেওয়া দায় হয়ে গেছে।
আদ্রিতা হঠাৎ করে বারি খায় কারো সাথে।সরে আসতে নিলে কানে আসে কারো হৃদপিণ্ডের গতি। মনে হচ্ছে সে হার্ট বিটের প্রতি শব্দ বলছে আদর।মনে হচ্ছে সে কোন সুরক্ষা বলয়ে আবদ্ধ। পরিচিত ঘ্রাণে নাক ডুবাতেই যেনো দুনিয়া থমকে যায় তার।
—এইযে আমার দুনিয়া।এইযে আমার একান্ত বসবাসের জায়গা যেখানে আমার নাম জপা হয় প্রতিনিয়ম যেখানে শুধু চলে আমার রাজ্যেত্ব। আদর পাখির নিড় এটা।
আদ্রিতা দুই হাত দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে সামনে দাঁড়ানো মানুষ টিকে। এই আশায় তাকে আগলে নিবে বলিষ্ঠ হাতের অধিকারী মানুষটি। আর তাই হয়।আবাধ্য হয়ে যায় সে তার নীড়ের বন্ধনে তার বুকের স্পন্দনে। তার হৃদয়ের ঠিক বাম পাশটাই যেখানে থাকা প্রতিটা স্পন্দন যপে বেরায় তার নাম তাকে পাওয়ার কামনা এই মনে বন্দি যেখানে তার থাকার সন্ধি করা হয়েছে।
—কি আদরপাখি থাকতে পারলে না তো আমার থেকে দূরে। ঠিক ছুটে এলে আমার বুকে।
—হুম দূরে সরায় রাখতে চেয়েছিলেন তাইনা।
—ইচ্ছাটা তো সেটাই ছিলো কিন্তু হতে দিলে কই ঠিকই এসে লেপ্টে গেলে এখন আর কি করার এই আমি আবার আমার নীড়ে আসা আদর পাখিকে যেতে দেয়না।
—এতো ইচ্ছা আমাকে দূরে সরানোর?(অভিমানী কন্ঠে)
—যার ছোয়াই আমি পাগল প্রায় তার থেকে দূরে সরে আসা মানেই মৃত্যু।
—এই মৃতু স্বাদ গ্রহন তো নিজ ইচ্ছাই করতে চেয়েছিলেন।
—উহু দেখতে চেয়েছিলাম আমার ভালোবাসায় কতোটা জোড় আছে আমার না থাকা কতোটা জ্বালায় আমার অবর্তমানে কে তোমার মাঝে বাস করে। কিন্তু দেখো আমার ভালোবাসা জিতেছে আমার আদরপাখি দিনশেষে আমার নীড়ে ফিরেছে।
—কিভাবে ফিরতাম না তোমাতেই_বসবাস আমার সারাদিন যেখানেই ঘুরি বাসস্থানে না ফিরে কই যাবো।
হঠাৎ গাড়ির হর্ণে সম্মতি ফিরে পায় আদ্রিতা চোখ মেলে দেখে তার সামনে কেউ নেই। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সে মাঝ রাস্তাই দাঁড়িয়ে আছে।
—তারমানে এতোক্ষন সবটাই আমার ভ্রম ছিলো।নীড় আসেনি।
কোনপ্রকার টলতে টলতে সেখান থেকে চলে যায় আদ্রি।শরীর টা যেনো চলতে চাচ্ছেনা।হঠাৎ করেই জ্ঞান হারিয়ে মাঝ রাস্তাই লুটিয়ে পড়ে আদ্রিতা।দ্রুত আদ্রিতাকে পাশের হাসপাতালে নিয়ে যান সেখানকার লোকজন।
জ্ঞান ফিরতেই সাদা এপ্রোনে জড়ানো আদ্রিয়ানকে দেখে অবাক হয় আদ্রি।
—ভাই তুই এখানে।
—তো কি ভেবেছিলি বোন অসুস্থ ভাই আসবেনা।
—আরে আমি সুস্থ আছি।
—জ্বি আপনি সুস্থ আছেন কিন্তু খাবার না খাওয়ার কারণে আপনার মাথা একদক ঘুরে গেছিলো(রেগে)
—আরে রাগ করো কেন। (মুখ ছোট করে)
—নাহ রাগ করবোনা মাথায় তুলে নাচবো।যদি কোন গাড়ি এসে টক্কর দিয়ে দিতো একটাবার ভেবেছিস কিছু হয়ে গেলে।
—আরে প্যারা নেও কেন শয়তান জলদি মরেনা।
—দিবো এক থাপ্পড় সব কিছু নিয়ে ফাজলামো না তোর।একটাবার ভাবেছিস নিউজ টা পেয়ে আমাদের কি অবস্থা হয়েছিলো নীড়ের কি অবস্থা হয়েছিলো বেচারা পাগল প্রায় অবস্থা বানিয়ে ফেলেছিলো।
—ফাজলামো করছো ভাইয়া। আমি মরি বাচি তাতে তার কি আদৌ যায় আসে।(তাচ্ছিল্যের হেসে)
—আসলেই কি তাই?
—হুম।(অভিমানী কন্ঠে)
—চল আমার সাথে।
—কই (অবাক হয়ে)?
আদ্রিয়ান কিছু না বলে ধীরে আদ্রির হাত থেকে ক্যানোলা খুলে ফেলে।আদ্রিতাকে নিয়ে তার পাশের কেবিনে যায়।কেবিনের দরজা খুলতেই অবাক হয়ে যায় আদ্রি মুখ চেপে সেখানেই বসে পড়ে।নীড় অজ্ঞান অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে কপালে বেন্ডেজ করা। পুরা রুম প্রায় তছনছ হয়ে আছে।
—এইসব কি হলো কিভাবে হলো।
—তোর মরা বাচা নিয়ে চিন্তা করেনা তার ব্যাপারে জেনে কি করবি।(গম্ভির গলায়)
—প্লিজ ভাইয়া(কান্না করে)
আদ্রির কান্না দেখে আদ্রিয়ান আর শক্ত থাকতে পারেনা বলে উঠে।
—তুই হস্পিটালে এডমিট শুনে সবার আগে নীড় দৌড়ে আসে।কিন্তু গাধাটা নিজের আর তোর নাম না বলে আদরপাখি আদরপাখি বলে চিল্লাতে থাকে যেহেতু এই হস্পিটালের কেউ ওকে দেখেনি নাম বললে চিনে যেতো কিন্তু তোর হস্পিটালে এডমিট ওর সব কিছু গুলিয়ে দিয়েছিলো।
অতীত ১ দিন আগে,,,
আদ্রিকে হস্পিটিলাইজ করার পরে ওর ফোনের লাস্ট ডায়েল থেকে নীড়ের নাম্বার পেয়ে ওয়ার্ডবয় নীড়কেই কল দেয় সব শুনার পরে কোনমতে দ্রুত ড্রাইভ করে হস্পিটালে এসে উপস্থিত হয়। হস্পিটালে ঢুকেই আদর পাখি আদর করে চেচাতে থাকে। নার্স ওয়ার্ড বয় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।যখন কেউ দুইজনকে চিনতে পারচ্ছিলোনা তখন রেগে নীড় ভাংচুর শুরু করে দেয়। নীড়কে হাইপার হতে দেখে তাকে কিছু স্টাফ দিয়ে একটা রুমে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে আদ্রির আইডি কার্ডে তার মেডিকেলের নাম দেখে সরাসরি সেখানে কল দেওয়া হয় মহূর্তে সবাই হস্পিটালে চলে আসে।নীড়কে খুজতেই পাশের রুম থেকে ভাংগাচুরার আওয়াজ পায় সেখানে তাকাতেই সবাই অবাক হয়ে যায় ইতিমধ্যে নীড়ের হাত পা কেটে বিচ্ছিরি অবস্থা সাথে সাথে তাকে ঘুমের ইঞ্জকশান পুষ করে দেওয়া হয়।
সব কিছু শুনে হতদম্ভের মতো বসে থাকে আদ্রিতা কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা চোখের সামনে নীড়ের রক্তাক্ত মুখটা বারবার ভেসে উঠছে। আদ্রিতার যা বুঝা সে তা বুঝে নেয়।
—এতো পাগলামীর পরেও কিভাবে বলি আপনি আমাকে ভালোবাসেন না আমাকে চান না। যার সামান্য হস্পিটিলাইজ শুনে আপনার এই অবস্থা আপনি যদি এবার নিজেও এসে বলেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন না সেটাও আমার বিশ্বাসের বাহিরে হবে নীড়।এবার আদরপাখী নিজে আসবে তার নীড়ের কাছে।দেখি নীড় কিভাবে তাকে তার ই বসবাসের স্থান থেকে বের করে।(মনে মনে)
—ভাইয়া একটা হেল্প করবা,,?(চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়)
—কিসের হেল্প?(অবাক হয়ে)
আদ্রিতা হাসে। নিজের মাথায় চলা সব কিছু আদ্রিয়ানকে বলে দেয়।সব শুনে আদ্রিয়ান হাসবে না কাদবে বুঝে উঠতে পারেনা।
*****
নীড় চোখ খুলতেই নিজেকে খুলা আকাশের নিচে দেখে অবাক হয়ে যায় লাফিয়ে উঠে বসে।মাথায় হাত দিয়ে দেয় ব্যাথার চোটে কিন্তু ব্যাথা কমার কোন নাম গন্ধ নেয়।
—উফ এই মাথাটা এতো ব্যাথা করছে কেন। আমার আদর পাখি আমার আদর পাখি কই।
নীড় হাইপার হয়ে উঠে যেতে নিলেই নিজের দিকে আর সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় তার সামনে লম্বা সাদা পর্দা টাঙ্গানো তার পাশেই লাল লেহেঙ্গাই ইয়া লম্বা ঘোমটার আড়ালে বধূ বেশে সেজে বসে আছে। নীড় এবার নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো তার পড়নেও লাল গোল্ডেন কালারে পাঞ্জাবী।
—হোয়াট দা হেল এইসব কিছুর মানে কি?(চিল্লিয়ে)
—এইযে হবু জামাই চুপ করে বসেন বিয়ে হবে তারপর আপনার চিল্লাচিল্লি,।
কন্ঠ চিনতে এক মিনিট ও লাগলনা নীড়ের আদ্রিতার ভয়েজ বুঝতে পেরেই শান্ত হয়ে বসে পড়লো।সে জানে যতোক্ষন না আদ্রিতার ইচ্ছা হবে সে কিছু বলবেনা অযথা চেচামিচি করে বাঘিনী খেপানোর মানেই হয়না।নিজ থেকে যদি পাখি খাচায় বন্দি হতে চায় তাহলে খাচার কি দোষ।
—ভেবে নিয়েন মিসেস চৌধুরী হওয়া সহজ না। মিস্টার চৌধুরীর হুকুমের তামিল শুনা সহজ না। এতদিন বিয়ে ছিলোনা বলে লাগামে ছিলো একবার বিয়ে হলে লাগাম টা কিন্তু নিজ দ্বায়িত্ব নিয়ে সরাবেন।
—ছিহ অসভ্য।
—এই অসভ্যকেই তো অজ্ঞান অবস্থায় বর সাজিয়ে দিলেন জ্ঞান ফিরার তর সইলনা বুঝি।
—আর একটা কথা বললে গুলি করে দিবো।
—উফফ মারাত্নক এই আদার উপরেই তো ফিদা আমি আদর পাখি।
—এইযে ইয়্যাং ম্যান আমরাও আছি।
নীড় পাশে তাকিয়ে দেখে বাড়ির সবাই দাঁড়িয়ে আছে।সবার মাঝে আয়াজ কে দেখে অবাক হয় নীড়।কিন্তু তারচেয়ে বেশি খুশি হয় তার চোখে রাগ দেখতে পেয়ে।
—বাহ আমার বাঘিনী ভালো করেই জানে কাকে কই মাত দেওয়া লাগবে।(মনে মনে শয়তানী হেসে)
চলবে?