তোমাতেই রহিব বিলীন পর্ব-০১

0
2713

#তোমাতেই_রহিব_বিলীন
#সূচনা_পর্ব
#নিশাত_জাহান_নিশি

এনগেইজমেন্টের পূর্ব মুহূর্তে বড় আপুর ছোট দেবরকে হবু বর ভেসে দেখা মাএই অকস্মাৎ তব্দিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি। প্রকান্ড চোখে ঘোর উত্তেজনা নিয়ে আমি “আহনাফের” দিকে তাজ্জব ভঙ্গিতে চেয়ে আছি। ট্যারা চোখে আহনাফ ঠোঁটের আলিজে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে আমার গাঁয়ের সাথে একদম চিপকে দাঁড়িয়ে আচমকা আমার কানে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে মিনমিনে কন্ঠে বললেন,,

“হায়এ! লাল শাড়ি! মার ডালা লুক ইয়ার! আমি তো রীতিমতো বেসামাল হয়ে পড়লাম আপনার এই হৃদমোহিনী রূপে, “মিস প্রভা!”

উনার আচমকা এই লাগামহীন কথা বার্তায় চোখের ব্যাসার্ধ অত্যধিক প্রকান্ড হয়ে এলো আমার। প্রকান্ড চোখ জোড়ায় এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকে উনি পুনরায় আমার কর্ণকুহরে উষ্ণতার শিহরণ তুলে বললেন,,

“কন্ট্রোল ম্যাম, প্লিজ কন্ট্রোল। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে এতো মায়া ভরা ঢাগড় আঁখি দিয়েছেন। নিশ্চয়ই কোটর থেকে আঁখিদ্বয়কে ভূমিষ্ট করার জন্য নয়! চোখবিহীন আপনাকে দেখতে ক্ষ্যাত লাগবে, ক্ষ্যাত! কোনো মাধূর্যই খুঁজে পাওয়া যাবে না তখন। উডবি হাজবেন্ড হয়ে আপনার এই বিশ্রী রূপ কিভাবে আমি মেনে নিবো বলুন? হৃদয়ে তো ছোট খাটো আঘাত আমার ও লাগবে তাই না?”

উনার তপ্ত শ্বাসের উষ্ণ আঁচে আমার শরীরের প্রতিটা লোমকূপে শীতল শিহরণের তান্ডব বয়ে গেলো। চেয়ে ও এই মন মাতানো শিহরণকে আমি উপেক্ষা করতে পারছিলাম না। নূন্যতম কয়েক মিনিটের জন্য সেই হৃদয় কাঁপানো অনুভূতিকে প্রশ্রয় দিয়ে আমি পুনরায় নিজের কাঠিন্য রূপে ফিরে এলাম। চোখ জোড়া লাল করে আমি চোয়াল শক্ত করে আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ দাঁত কেলিয়ে হেসে উনার বাঁ হাতটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,,

“লেডিস ফার্স্ট ম্যাম। ফার্স্টে আপনি রিংটা পড়ান! ”

শুকনো মুখে আমি উপস্থিত দু পরিবারের সবার দিকে কাঁপা দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। সবার মুখে প্রানোচ্ছ্বল হাসির রেশ লেগে আছে। বুঝাই যাচ্ছে, পরিবারের সবাই খুব খুশি আহনাফ এবং আমার এনগেইজমেন্টে। সবার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমি রাগান্বিত দৃষ্টিতে ধারালো নখ দিয়ে আহনাফের হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরলাম। আহনাফ উনার (-০.৩০) পাওয়ারের চশমাটা একটু নিচু করে আমার হাতের দিকে ক্ষীণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“হাতটা ধরতে বলি নি ম্যাম। জাস্ট রিংটা পড়াতে বলেছি! পরিবারের সামনে হবু বরের সাথে রোমান্স করার ভীষণ স্পিড দেখছি আপনার! ভাবতেই পারি নি, এত্তো রোমান্টিক টাইপ একটা মেয়ে, ওয়াইফ হিসেবে আমার ভাগ্যে জুটবে! আমার তো লাক লেগে গেলো “মিস প্রভা? আঁচড়ের দাগ ও পড়ে যাচ্ছে হাতে। তার মানে আমি কি ধরে নিতে পারি? আপনার ভালোবাসার প্রথম স্পর্শ এটা আমার?”

দাঁতে দাঁত চেঁপে আমি আহনাফের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,,

“আপনার সাথে রোমান্স করতে আমার বয়ে গেছে, বুঝেছেন মিঃ চাশমিশ? আপনার ক্যারেক্টার সম্পর্কে হেব্বি নলেজ আছে আমার। ক্যারেক্টারলেস কাহিকা! চরিএে দোষ আছে আপনার। প্রখর রোমান্সে ভরা তো আপনি। ছুকছুকে টাইপ লোকদের আবার রোমান্টিক ওয়াইফ হওয়া চাই নাকি?”

মুহূর্তের মধ্যেই আহনাফ ভাব ভঙ্গি পাল্টে প্রখর রাগে ক্ষীপ্ত হয়ে চোয়াল শক্ত করে বললেন,,

“এক্সকিউজ মি, মিস প্রভা! হোয়াট আর ইউ সে এবাউট মি? আমি ক্যারেক্টালেস? চরিএে দোষ আছে আমার?”

আমি উড়নচণ্ডী ভাব নিয়ে বললাম,,

“আছে বৈ কি? আলবাত আছে। সত্যি কথা বলাতে গাঁয়ে খুব লেগেছে তাই না?”

আহনাফের পা থেকে মাথা অব্দি একবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে আমি ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে পুনরায় বললাম,,

“দেখি দেখি, কোথায় কোথায় ফোঁসকা পড়েছে? দেখানো যাবে তো ফোঁসকা গুলো?”

আহনাফ অগ্নিঝড়া চোখে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,,

“ইউ ইস্টুপিট গার্ল। ফোঁসকা আমার গাঁয়ে নয়, তোমার গাঁয়ে পড়বে। দেখানোর জায়গা ও খুঁজে পাবে না তখন! কেঁদে বুক ভাসিয়ে ও তখন কষ্ট নিবারণ করতে পারবে না। ইউ নো হোয়াট মিস প্রভা? তোমাকে টাইট করার জন্যই এই আহনাফ ফিরে এসেছে! তুমি না জাস্ট দেখতে থাকো, সামনে কি কি হয়!”

আমি উগ্র কন্ঠে বললাম,,

“জানি, জানি। আপনাদের মতোন অত্যাচারী পুরুষদের দৌঁড় আমার বেশ ভালো করেই জানা আছে! বধূ নির্যাতন করবেন তাই তো? আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন মিঃ আহনাফ, দেশে নারী নির্যাতনের অনেক কঠোর আইনবিধি আছে। একবার যদি কেইস ঠুকে দেই না? পারবেন তো ১০ বছরের পূর্বে গারোদের অন্ধকার জগত থেকে বেরিয়ে আসতে?”

আহনাফ আমার মাথায় আঙ্গুল ঠুকে তটস্থ কন্ঠে বললেন,,

“কেইস ঠুকার আগে আমিই তোমাকে ঠুকে দেবো। মার্ডার করে ফেলব একদম, মার্ডার। আহনাফকে চিনতে তুমি ভুল করছ, মস্ত বড় ভুল করছ! রিপেন্ড করবে একদিন বুঝেছ?”

ভ্রু যুগল কুঁচকে আমি কিঞ্চিৎ রাগী কন্ঠে বললাম,,

“আপনি যে ক্যারেক্টারলেস ওটা আমি আগে থেকেই জানতাম। তবে আজ নতুন করে জানলাম আপনি একজন খুনি ও বটে। যখন তখন লোকজনকে মার্ডার করার হুমকি দিন। বলি, কয়টা মার্ডার করেছেন এই পর্যন্ত হুম?”

আহনাফ উনার প্রখর রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে কপালে লেপ্টে থাকা বেসামাল চুল গুলো হালকা হাতে টেনে বললেন,,

“এনগেজমেন্টটা জাস্ট হয়ে নিক, এরপর বুঝাচ্ছি আহনাফের শেখের সাথে মুখে মুখে তর্ক করার ফল। তাকে ক্যারেক্টারলেস বলার ফল! হারে হারে টের পাবে তখন আহনাফ কি জিনিস। তোমাকে মার্ডার করেই তবে আমি খুনির তকমা গাঁয়ে মাখবো। এটাই হবে আমার ফার্স্ট মার্ডার! তোমাকে দিয়েই স্টার্ট করব বুঝতে পেরেছ?”

আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললাম,,

“ফান অফ দ্যা ইয়ার। আপনাকে বিয়ে করতে, আপনার সাথে এনগেজমেন্ট করতে বয়ে গেছে আমার। পৃথিবীতে নিশ্চয়ই ছেলের অভাব পড়ে নি? আমার মতো কিউট, সুইট প্রভা যদি ছোট্ট একটা তুড়ি মারে না? লাইনে হাজার হাজার ছেলে ভীড় জমাবে!”

আহনাফ ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে অকস্মাৎ বাঁকা হেসে আমার দিকে চেয়ে বললেন,,

“তার মানে তুমি স্বীকার করছ, হাজারটা ছেলের জীবন অলরেডি নষ্ট করে দিয়েছ? প্রেমের জালে তাদের খুব বাজেভাবে ফাঁসিয়েছিলে তাই না?”

থতমত খেয়ে আমি শুকনো কন্ঠে আহনাফকে বললাম,,

“মামামানে? কাকাকাদের আমি প্রেপ্রেপ্রেমের জালে ফাঁসিয়েছি?”

আহনাফ এক রহস্যময়ী হাসি দিলেন। উনার এই রসাত্মক হাসির পেছনে জানা, অজানা অনেক কথা লুকিয়ে আছে। আকস্মিক ভয়টা যেনো আমার প্রখরভাবে বেড়ে গেলো। যেই বিশেষ ভয়টার আঁচ করছিলাম আমি সেই ভয়টাই যেনো সত্যি হতে তৎপর হয়ে উঠেছে। ভয়াল দৃষ্টিতে আমি পাশে অস্থিরতা নিয়ে নখ কাঁমড়ে দাঁড়িয়ে থাকা তিস্তার (আমার বেস্ট ফ্রেন্ড) দিকে তাকালাম। তিস্তা শুকনো ঢোক গিলে আমায় ইশারা করে বলল,,

“দোস্ত। তু তো গায়া কাম চে!”

কম্পিত কন্ঠে আমি তিস্তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাথা নিচু করে নিজেই নিজেকে বকে বললাম,,

“ইসসসসস প্রভা। কি করলি এটা? ফটো না দেখে বিয়েতে রাজি হওয়ার ফল এবার ভোগ কর! এই বজ্জাত ছেলে নিশ্চয়ই এখন তোর বারোটা বাজিয়ে তেরোটায় লাগিয়ে ছাড়বে। সব গুপ্ত রহস্য এক এক করে টেনে হেঁছড়ে বের করে আনবে। জিনা হারাম করে দিবে আমার, জিনা!”

আমার মৌণতা দেখে আহনাফ হঠাৎ গলা খাঁকারি দিয়ে আমার দিকে খানিক ঝুঁকে পৈশাচিক হাসি দিয়ে জিগ্যাসু কন্ঠে বললেন,,

“কি মিস প্রভা? কিছু ভাবছেন?”

রাগান্বিত ভঙ্গিতে ও আমি জোর পূর্বক হাসি টেনে বললাম,,

“বেশি কিছু না মিঃ চাশমিশ। আপনাকে মার্ডার করার উপায় খুঁজছিলাম মাএ। ভাবছি, আপনার পূর্বেই আপনাকে মার্ডার করে একটু স্বস্তির শ্বাস নিবো আমি! মুক্ত, উচ্ছ্বল, উদাসী হাওয়া ফুসফুসে সঞ্চার করব। আসলে, দেশে ক্যারেক্টারলেস ছেলেদের সংখ্যা বেড়ে গেছে তো তাই!”

আহনাফ ভাব শূণ্য কন্ঠে বললেন,,

“ওহ্হ্হ্ আই সি। আমি তো ভাবছিলাম তুমি হয়তো এই ক্যারেক্টারলেস ছেলেটার সাথেই রোমান্স করার স্কোপ খুঁজছ। ওয়ার্ণ করার পরে ও হাতটা যেভাবে ধরে আছো! রোমান্সের শিহরণ তো আমারো হচ্ছে তাই না?”

শেষের কথাটা আহনাফ কেমন যেনো ঘোর লাগানো স্বরে বললেন। উনার মুখ থেকে নিঃসৃত তপ্ত শ্বাস আমার সারা মুখে প্রখর রোমাঞ্চের ইঙ্গিত দিচ্ছিলো। সমস্ত রোমাঞ্চরকর অনুভূতিকে অগ্রাহ্য করে আমি জিভ কেটে আহনাফের হাতের দিকটায় হীন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। নখের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে উনার ফর্সা হাতটায়। ফোঁটা ফোঁটা রক্তের উদ্ভব ঘটেছে ঐ ক্ষত স্থান গুলো থেকে। ভীষণ হীনমন্যতা বোধ করে আমি ঝট করে আহনাফের হাতটা ছাড়তেই পল্লবী আপু (আমার বড় বোন) ব্যতিব্যস্ত ভঙ্গিতে আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। এনগেজমেন্ট রিংটা আমার হাতে এগিয়ে দিয়ে মৃদ্যু হেসে বললেন,,

“নে। রিংটা পড়িয়ে দে। এমনিতেই অনেকটা লেইট হয়ে গেলো রিংটা খুঁজতে।”

প্রখর রাগে ফুসফুস করে আমি আপুর কানে ফিসফিসিয়ে বললাম,,

“তোমরা আর পাএ খুঁজে পেলে না আপু? এই বিদেশ ফেরত লম্পট ছেলেটাকেই আমার গলায় ঝুলানোর সুন্দর একটা বন্দোবস্ত করে নিলে?”

আচমকা আপু ক্ষীপ্ত কন্ঠে বললেন,,

“মারব এক চড়। ভুলে যাস না, আহনাফ আমার দেবর।”

“সো? তোমার দেবর হয়েছে তো কি? আমার মাথা কেটে নিয়েছে? দেশের মন্ত্রীত্ব ছিনিয়ে নিয়েছে? আমার স্বাধীনতাবোধে হস্তক্ষেপ করার অধিকার অর্জন করে নিয়েছে?”

“আমরা মোটেও কিন্তু তোকে এক্ষনি বিয়ে করার জন্য জোর জবরদস্তি করি নি প্রভা। তুই নিজে থেকেই বলেছিলি তোর জন্য পাএ খুঁজতে! পাএ হিসেবে আহনাফকে আমাদের বেস্ট মনে হয়েছে। তাই আমরা এনগেজমেন্টের এই ব্যবস্থাটা করেছি। যখন আমরা বিয়েতে তোর মতামত জানতে চেয়েছিলাম, আহনাফের ছবি দেখাতে চেয়েছিলাম, তখন কিন্তু তুই আমাদের সিদ্ধান্তের উপর মতামত ছেড়ে দিয়েছিলি। এখন আর কোনো বার্কেটিং করা যাবে না ওকে? আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তোকে আহনাফকে এনগেজমেন্ট এবং বিয়েটা ও করতে হবে!”

আমি অধৈর্য্য কন্ঠে বললাম,,

“পাএ খোঁজার কথা আমি বলেছিলাম মানছি। তবে তোমার এই লম্পট দেবরের কথা তো বলি নি ঘুনাক্ষরে ও বলি নি আমি! বিশ্বাস করো আপু, হাজবেন্ড হিসেবে উনাকে আমি কস্মিনকালেও চাই নি! উনার সাথে কখনোই আমার বনাবনি হয় নি। না আগামীতে কখনো হবে!”

আপু রগচটা ভাব নিয়ে বললেন,,

“প্রভা। এবার কিন্তু আমি বাধ্য হবো তোর গাঁয়ে হাত তুলতে। অযথা ড্রামা ক্রিয়েট না করে, চুপচাপ আংটি টা পড়িয়ে দে আহনাফকে!”

দৃষ্টি সংকুচিত করে আমি মুখে তিক্ততার ছাপ ফুটিয়ে বললাম,,

“না আপু। আমি কিছুতেই উনাকে আংটি পড়াতে পারব না। উনাকে বিয়ে করার মোটে ও ইচ্ছে নেই আমার। প্লিজ তোমরা আমাকে ফোর্স করো না! বিয়েটা এক্ষনি ভেঙ্গে দাও।”

আপু দাঁতে দাঁত চেঁপে আমার ডান হাতটা চেঁপে ধরে বললেন,,

“নাটক করছিস তুই? নাটক? আমার শ্বশুড় বাড়ির সবার সামনে আমাদের পরিবারের মান সম্মান নিলামে তুলতে তুই উঠে পড়ে লেগেছিস তাই না? জানিস, তোর এই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য দুই পরিবারের সবাই কতোটা কষ্ট পাবে? আমাদের মধ্যকার সুন্দর সম্পর্কটা কতোটা নষ্ট হবে? ভালোয় ভালোয় বলছি, আংটিটা পড়িয়ে দে আহনাফকে। আহনাফের চে ভালো পাএ তুই দু কূলে ও খুঁজে পাবি না!”

আপু অবশ্য ভুল কিছু বলে নি। আমার এই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য দুই পরিবারের সবাই ভীষণ কষ্ট পাবেন। এতো সুন্দর সম্পর্কটা ও নষ্ট হয়ে যাবে। জীবনে অনেক পাপ করেছি আমি। সেই পাপের মোচন আমাকে ঐ চাশমিশ, ক্যারেক্টারলেস, উগ্র আহনাফকে বিয়ে করেই সাফ করতে হবে। মাথা নিচু করে আমি অপারগ হয়ে আহনাফের বাঁ হাতের অনামিকা আঙ্গুলটা চেঁপে ধরে রিংটা পড়িয়ে দিয়ে তেজর্শিনী দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম,,

“কি ভেবেছেন আপনি? আমি আপনাকে ভয় পাই? ভয়ে খুব সিঁধিয়ে যাবো? আপনার মতো লম্পটকে বিয়ের করার সাহস পর্যন্ত পোষণ করাতে পারব না? আমার বুঝি থরথরিয়ে হাত, পা কাঁপবে?”

আহনাফ দুষ্টু ভঙ্গিতে হেসে সাদা পায়জামার পকেট থেকে ডায়মন্ডের এনগেজমেন্ট রিংটা আমার বাঁ হাতের আঙ্গুলে পড়িয়ে দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললেন,,

“লম্পট না? সাহসের ভালোই পরিচয় দিচ্ছ! আমি যদি লম্পট হই না? তুমি ও কিন্তু লম্পটের স্ত্রী বাচক লিঙ্গ হবে। এজ লাইক “লম্পটিনী।” এই বিষয়ে তুমি আমার থেকে এক ধাপ এগিয়ে বুঝলে?”

কথার ফুল ঝুড়ি যেনো মুহূর্তের মধ্যে স্তব্ধ হয়ে গেলো আমার। শুকনো মুখে আমি আহনাফের দিকে চেয়ে আছি। আহনাফ চোয়াল শক্ত করে পুনরায় বললেন,,

“হাসি খুশি মুখের আড়ালে যে একটা তেজীয়ান রূপ লুকিয়ে আছে তা হয়তো এখনো তুমি টের পাও নি। আর সেজন্যই ভীষণ পটর পটর করছ! তোমার ফিউজ কিভাবে উড়াতে হয় আমার ভীষণ ভালোভাবে জানা আছে মিস প্রভা! পুরোপুরি হাতের মুঠোয় তোমাকে বন্দি করে নেই, এরপর দেখো, তুড়ি মেরে তোমাকে উড়িয়ে দিতে ঠিক কতো সময় লাগে আমার।”

ভীতসন্ত্রস্ত দৃষ্টিতে আমি আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ ঝাঁঝালো কন্ঠে আমার একদম সম্মুখে দাঁড়িয়ে বললেন,,

“আগে আগে দেখো, হোতা হে কেয়া!”

অসহায় ভাবভঙ্গি পাল্টে আমি চোয়াল শক্ত করে জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,

“এই? আপনি কি কোনোভাবে আমাকে থ্রেড দিচ্ছেন?”

আহনাফ ভাবশূণ্য হয়ে পায়জামার পকেটে দু হাত গুজে বললেন,,

“যা খুশি ভাবতে পারো! আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার!”

পরমুহূর্তে উনি খানিক ঝুঁকে আমার মুখের কাছে এসে বাঁকা হেসে বললেন,,

“বাই দ্যা ওয়ে, কংগ্রাচুলেশান “মিসেস প্রভা।” আজ থেকে আপনি এই “আহনাফ শেখের” উডবি ওয়াইফ। জারা সামহালকে রেহে না ওকে?”

ঠোঁটের কোণে একই হাসি বজায় রেখে আহনাফ তড়িঘড়ি করে আমার সম্মুখ থেকে সরে এসে ইয়ানাত আঙ্কেলের (আহনাফের বাবা) মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বললেন,,

“আই থিংক বাবা, এনগেজমেন্ট আপাতত ডান। আমি নিশ্চয়ই এবার আসতে পারি?”

আঙ্কেল বেশ গুরুগম্ভীর কন্ঠে বললেন,

“নো আহনাফ। আজ তোমার অফিসে যাওয়া হবে না। এই শুভ দিনে বাড়ির বাইরে একদম পা রাখা চলবে না! জাস্ট একদিন অফিস মিস করলে মহা ভারত কিছু অশুদ্ধ হয়ে যাবে না!”

আহনাফ বিরক্তি ভরা চোখে আঙ্কেলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই আপু মৃদ্যু হেসে পেছন থেকে আহনাফের কাঁধে হাত রেখে বললেন,,

“আজ থাক না আহনাফ। মাএ তো এনগেজমেন্টটা হলো। আই থিংক প্রভার ও তোমার সাথে কিছু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করা দরকার!”

আহনাফ ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,,

“ইউ নো হোয়াট ভাবি? ঠিক ৮ টায় আমার ইম্পর্টেন্ট একটা মিটিং আছে। কিভাবে স্কিপ করি মিটিংটা বলো?”

“তোমার বড় ভাই তো আছেই আহনাফ। আজ ছেড়ে দাও না। প্রভার ও হয়তো মন খারাপ হতে পারে তাই না? এই বিশেষ দিনটায় তুমি ওর পাশে থাকবে না!”

মুখ বাঁকা করে আমি চোখে প্রখর রাগ সমেত আপুর দিকে চেয়ে আছি। ঐ লম্পট আহনাফের সাথে টাইম স্পেন্ড করতে আমার বয়ে গেছে। পারলে তো একে আমি গলা টিপে মেরে দেই। একদম এটেম টু মার্ডার করে দেই। এই লম্পট ছেলের গার্লফ্রেন্ডের আবার অভাব আছে নাকি? মুহূর্তে মুহূর্তে তার এই ফোন থেকে সেই ফোন থেকে হাজার হাজার মেয়েদের কল আসে। সেই লম্পট ছেলে নাকি আবার এই প্রভার হাজবেন্ড হবে। হা, হাসালে আমায়! বিয়ের আগের রাতেই কিভাবে পালাই দেখো না। পুরো শহর সার্চ করে ও খুঁজে পাবে না আমায়।

আচমকা আহনাফ পিছু ঘুড়ে আমার দিকে ট্যারা চোখে তাকিয়ে বাঁকা হেসে আপুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“আমার এবসেন্সে তোমার বোনের মোটে ও বোরিং ফিল হবে না ভাবী। রেদার সে সময়টাকে ভীষণভাবে এন্জ্ঞয় করবে। কতো কি লুকিয়ে আছে ফোনে। সিম সহ একটা ফোন পেলেই হলো তার! আশেপাশে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির প্রয়োজন নেই!”

পুনরায় আহনাফ চশমার নিচ থেকে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমায় প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“কি? ঠিক বলছি তো মিস প্রভা? উফফস স্যরি, মিসেস প্রভা!”

উনার গাঁ জ্বলা মুখভঙ্গি এবং বেহুদা প্রশ্নের কোনো রূপ প্রতিত্তুর না করে আমি রাগে গজগজ করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তিস্তার হাত ধরে দ্রুত পায়ে দু তলার ছাঁদের দিকে অগ্রসর হলাম।

#চলবে….?