#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২৪
কেউ কোমর পেঁ*চি*য়ে নিজের দিকে টে*নে নেয়ায় কেঁ*পে উঠলো আরশি। মাথা গিয়ে ঠে*ক*লো সামনের ব্যক্তির বুঁকে। নাসারন্ধ্রে এসে ঠে*ক*লো পরিচিত ঘ্রাণ। ধীরে ধীরে পি*ট*পি*ট করে চোখ খুললো আরশি। মুখ টা সামান্য উঁচু করে সামনের মানুষটার দিকে তাকালো সে। সামনের মানুষটা কে দেখে মুখ টা হা হয়ে গেলো তার। কারণ সামনের মানুষ টা আর কেউ নয় বরং আবরার। যে এই মুহূর্তে এক দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলকটাও পড়ছে না। কেমন নে*শা*লো তার চাহনি। ওই নে*শা*লো চোখের দিকে তাকিয়ে বুঁকের ধু*ক*পু*কা*নি কয়েক গুন বেড়ে গেলো আরশির। সে চেয়েও নিজের চোখ সরাতে পারলো না। তাকিয়ে রইলো আবরারের ওই গভীর কালো চোখের দিকে।
——
আজ আহির গায়ে হলুদ। কিছুক্ষন আগেই আহির পাঠানো গাড়িতে করে তাদের বাসায় এসেছে আরশি। আহি বড়লোক বাড়ির মেয়ে তা আরশি আ*ন্দা*জ করেছিলো কিন্তু এতো বড়লোক বাড়ির মেয়ে তা আজ ওদের বাড়িতে আসার পর বুঝতে পারলো। বিশাল জায়গা নিয়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি আহিদের। আরশি যতো ভিতরের দিকে প্রবেশ করেছে ততোই অবাক হয়েছে। প্রায় সব রকমের বিলাসিতা রয়েছে আহিদের বাড়িতে। বাড়ির বাইরে অনেক অনেক গা*র্ড পা*হা*রা দিচ্ছে। আরশির মনে প্রশ্ন জ*মে*ছিলো গা*র্ড দেখে। কিন্তু ভিতরে আসার পর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ ই পেলো না আরশি। সে সবার পরে আসায় আহি তা*ড়া*হু*ড়ো করে তাকে রেডি হতে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাও আবার আজ নাকি তাকে শাড়ি পড়তে হবে। আরশি কিছুতেই রাজী হতে চাচ্ছিলো না। সে শাড়ি পড়তেও জানে না আর না সামলাতে জানে। কিন্তু আহির এক কথা আজ তারা সব বান্ধুবী একই গেট আপ নিবে। আরশি কেও পড়তেই হবে। আর শাড়ি পড়া নিয়ে সে যেনো কোনো চি*ন্তা না করে। পার্লারের মহিলারা তাকে শাড়ি পড়িয়ে দিবে। আরশি মানতে না চাইলেও আহির কাঁ*দো কাঁ*দো ফেস টা দেখে শেষমেষ রাজী হতে হলো। কমলা, হলুদের মি*শে*লে তৈরি শাড়ি। পারে সুন্দর কাজ করা। আরশি কে শাড়ি পড়ানো শেষ হতেই আহি, মোহনা, মুন সবাই হা করে তাকালো তার দিকে। কারণ এই প্রথম আরশি কে তারা শাড়িতে দেখলো।
আহি আরশির কাছে গিয়ে আরশির চারপাশে ঘুরে ঘুরে ওকে দেখতে লাগলো। বললো,
— দোস্ত তোকে তো হে*ব্বি মানিয়েছে রে। ‘শাড়িতেই নারী’ কথাটা আসলেই ঠিক।
কথা বলতে বলতে এক টা*নে আরশির চুলের কাঁ*টা খুলে দিলো আহি। চ*ম*কে উঠলো আরশি। খানিকটা চি*ল্লি*য়েই বললো,
— এইইই কি করলি এটা? চুল খুললি কেনো?
আহি মুখে হাত দিয়ে চোখ গোল গোল করে বললো,
— দোস্ত তোর চুল এতো বড়, ঘন আর এতো সুন্দর!! তাই বুঝি সবসময় খোঁপা করে রাখোস? যাতে আমাদের নজর না লাগে?
মুন হাসলো। সে ছাড়া আর কেউ আরশি কে চুল খোলা অবস্থায় দেখে নি। আরশি সবসময় ই চুল খোঁপা করে রাখে। আহির কথায় বি*র*ক্ত হলো আরশি। বললো,
— আরে আমার চুল সামলাতে স*ম*স্যা হয়। খোলা রাখলে পেঁ*চি*য়ে যায়। পরে আ*চ*ড়াতে অনেক অ*সুবিধা হয়। তাই খোঁপা করে রাখি। এখন আমাকে খোঁপা করতে দে। দেখলি তো আমার চুল।
আহি সাথে সাথে বাঁ*ধা দিয়ে বললো,
— আজ খোঁপা হচ্ছে না। আজ আমরা সবাই এক সাজ দিবো আগেই তো বললাম। তাই আজ চুল খোলা রাখতে হবে তোর। আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না।
আরশি কিছু বলতে চাইলেও আহি থামিয়ে দিয়ে পার্লারের মহিলা কে বললো তাদের মতো হেয়ার স্টাইল করে দিতে। শেষে ভা*রী সাজ দেয়ার কথা বলতেই রে*গে যায় আরশি। সে ভা*রী সাজ স*হ্য করতে পারে না। মনে হয় দম ব*ন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই আহি পার্লারের মহিলা কে বললো আরশি কে হালকা করে সাজিয়ে দিতে। সাজানো শেষ হতেই রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে আরশি। ওখানে বসে থাকলে আহি আরও কি কি আবদার জুড়ে বসে সেই ভ*য়ে। আর এমনিতেও সে শাড়ি পড়ে হাঁটতে পারে না। তাই ভেবেছিলো আস্তে ধীরে নিচে নেমে বসে থাকবে। কিন্তু যেটার ভ*য় ছিলো সেটাই হলো। রুম থেকে বেরিয়ে কিছুদূর যেতেই শাড়িতে পা বে*জে পড়তে নিয়েছিলো আরশি। এমন সময় কেউ একজন তার কোমর পেঁ*চি*য়ে ধরে।
——
মুন আর মোহনার কথার আওয়াজ কানে পৌঁছাতেই ধ্যা*ন ভা*ঙে আরশির। এক টা*নে আবরারের হাত কোমর থেকে ছাড়িয়ে পিছিয়ে যায় সে। হাঁ*স*ফাঁ*স করতে থাকে কেউ দেখে ফেললো কিনা। আর মনের মধ্যে ঘুরপা*ক খেতে থাকে আবরার এখানে আসলো কি করে। অন্যদিকে আবরার সে যেনো এখনো ঘো*রে*র মাঝেই ডু*বে আছে। আরশির ভাবনার মাঝেই মুন আর মোহনা আহি কে নিয়ে এসে আরশির পাশে এসে দাঁড়ায়। এর মাঝেই আবির আর রাহুল ও রেডি হয়ে বেরিয়ে এসেছে। তাদের চেহারায় ও স্পষ্ট অবাক ভাব। আহি এগিয়ে গিয়ে আবরারের হাত জড়িয়ে ধরে বললো,
— কি অবাক হয়েছিস তোরা তাই তো? বলেছিলাম না তোদের জন্য surprise আছে? এই হলো surprise। তোদের সবসময় বলতাম না আমার একটা জ*ল্লা*দ ভাই আছে। মিট মাই জ*ল্লা*দ ভাই এমপি আজওয়াদ আবরার।
আহি হাত জড়িয়ে ধরায় ঘো*র ভা*ঙ*লো আবরারের। বোনের কথায় মৃদু হাসে আবরার। অন্যদিকে সবার মুখ টা হা হয়ে গেছে আহির কথায়। আরশি বুঝতে পারে আবরার কেনো আজ অফিসে যায় নি আর তাকেও ছুটি দিয়েছে। রাহুল অবাক ভাব নিয়েই বললো,
— এইগুলা তুই কি বলিস আনা? তুই এতো বড় একটা কথা আমাদের কাছ থেকে লু*কা*ইতে পারলি?
আহি মুখ টা গো*ম*ড়া করে বললো,
— আমি সাধারণ একজন মেয়ে হয়েই তোদের সাথে মিশেছি। আমি চাই নি কেউ আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড, টাকা পয়সা দেখে আমার সাথে বন্ধুত্ব করুক। এসব লু*কি*য়েছি বলেই তো প্রকৃত বন্ধুদের খোঁজ পেলাম। তোদের পেলাম যারা আমার ফ্যামিলি, ব্যাকগ্রাউন্ড না দেখেই আমাকে ভালোবেসেছে, আমার সাথে বন্ধুত্ব করেছে। আমি চাই না কেউ আমাকে এমপির বোন বলে, নামকরা একজন বিজনেস ম্যান এর মেয়ে বলে স্পেশাল ট্রিট করুক। আশা রাখছি সব টা জানার পর কেউ আমার সাথে স্পেশাল ট্রিট করবি না। আমি তোদের কাছে আগে যেমন ছিলাম ঠিক তেমনই থাকবো। আর তোরা কেউ আমার উপর রা*গ করিস নি তো?
আহির কথা শেষ হতেই সবাই আহি কে জড়িয়ে ধরলো। একত্রে বললো,
— নাআআআ। আমরা মোটেও রা*গ করি নি।
সবাই ছাড়তেই আবির আহির মাথায় গা*ট্টা মে*রে বললো,
— আর কিসের স্পেশাল ট্রিট রে? তুই আগেও ফ*কি*ন্নি আহি ছিলি আর ভবিষ্যতেও ফ*কি*ন্নি আহি ই থাকবি।
আহি মাথায় হাত বু*লি*য়ে হাসলো। আজ আর রা*গ করলো না। এমনটাই তো সে চায়। আরশি আহির গালে হাত রেখে বললো,
— রা*গ করার কোনো প্রশ্নই আসে না। বর্তমান যুগে এমন কয় জন আছে বল যারা পা*ও*য়ার থাকা সত্ত্বেও সেটা দেখায় না, প্রয়োগ করে না? কয়জন আছে যাদের এতো এতো পাওয়ার, অর্থ থাকার পরও তারা অ*হং*কার করে না? বিশ্বাস কর আজ তোর সম্পর্কে সব টা জানার পর তোর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গিয়েছে।
সবাই হেসে মাথা ঝা*কা*লো। নিচ থেকে ডাক পড়ায় মুন আর মোহনা আহি কে ধরে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। মোহনা আরশি কে বললো,
— কিরে দোস্ত তুই আসোস না কেন? তুই ও এই বেডি রে ধর।
আরশি দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,
— মজা নিচ্ছিস? দেখতেই তো পারতেসোস যে আমি নিজেই হাঁটতে পারতেসি না। আবার বলোস ওরে ধরতে। পারলে তোদের মধ্যে কেউ একজন আমারে ধর।
আরশির অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দিলো মোহনা। বললো,
— তুই ও বিয়া কর। তাইলে তোরেও এইভাবে ধরে নিয়ে যামু।
আরশি নাক ফু*লি*য়ে বললো,
— শ*য়*তা*নের দল যা তো এখান থেকে…
মোহনা আর মুন হাসতে হাসতে আহি কে নিয়ে নিচে নেমে গেলো। আরশি অ*স*হায় চোখে ওদের যাওয়া দেখলো। কি সুন্দর শাড়ি পড়ে হাটছে ওরা আর তার অবস্থা? আবির আর রাহুল আগেই দৌড় দিয়েছে। আবির দ্রুত গিয়েছে মেয়ে প*টা*নোর জন্য। এবার নাকি সে মিঙ্গেল হবেই। আর রাহুল আবিরের পিছে পিছে গিয়েছে তাকে হেল্প করবে বলে।
আরশি আস্তে আস্তে পা টি*পে টি*পে আগাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে তার পা দুটো শাড়ির মধ্যে আ*ট*কে গেছে। না*ড়া*তে পারছে না সে। কখন জানি ধু*ম করে পড়ে সে। বিয়ে বাড়িতে সবার সামনে পড়লে মান ই*জ্জ*ত আর থাকবে না তার। কোনোরকমে টে*নে*টু*নে বাড়ির বাইরে আসলো আরশি। বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় স্টেজ তৈরি করা হয়েছে। আহি কে স্টেজে বসানো হয়েছে। সেও ধীর পায়ে স্টেজে গেলো। একে একে সবাই হলুদ ছোঁয়ালো আহি কে। হলুদ ছোঁয়ানো শেষে আহি নিজের সব ফ্রেন্ডদের নিয়ে গ্রুপ ফটো তু*ল*লো।
পুরো সময় টা জু*ড়ে ছেলে পক্ষ থেকে আসা একটা ছেলে খুব বি*র*ক্ত করেছে আরশি কে। ছেলেটার নাম আসিফ। আসিফ একবার তার চোখের প্রশংসা করছে তো একবার তার চুলের। ছেলে পক্ষের সবাই হলুদ দিয়ে চলে গেলেও এই ছেলে যায় নি। আরশির আগে পিছে ঘুরছে। আহির শ্বশুর বাড়ির লোক বলে আরশি ও কিছু বলতে পারে নি। তবে যতটুকু পারছে এ*ড়ি*য়ে চলছে আসিফ কে। আসিফের এসব কর্মকা*ন্ড নজর এ*ড়া*য় নি আবরারের। সে তী*ক্ষ্ণ চোখে সব টা লক্ষ্য করেছে।
একে তো শাড়ি, খোলা চুল তার উপর আরও বড় আ*প*দ হলো আসিফ নামের ছেলে টা। ফটো তো*লা শেষ হতেই স্টেজ থেকে নেমে বাগানের দিকে চলে আসলো আরশি। এখনো অনেক সময় বাকি অনুষ্ঠান শেষ হতে। আর তার অবস্থা না*জে*হাল। তাই বাগানে এসে বড় একটা শ্বাস টা*ন*লো সে। মুক্ত বাতাসের সাথে ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে এসে ঠে*ক*লো। এমন সময় চুলে টা*ন পড়লো আরশির।
চলবে?
#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২৫
চুলে টা*ন পড়তেই ‘আ*হঃ’ শব্দ টা বেরিয়ে আসলো আরশির মুখ থেকে। পিছে ফিরতেই দেখলো আবরার তার চুল ধরে রেখেছে। এতদিন নাটক, সিনেমা তে দেখেছে ছেলেরা মেয়েদের শাড়ির আঁচল, ওড়না টে*নে ধরে। আর আজ কিনা একটা ছেলে তার চুল টে*নে ধরেছে। আরশি চোখ মুখ কুঁ*চকে বললো,
— এসব কি এমপি সাহেব? আপনি আমার চুল ধরেছেন কেনো?
আরশির কথায় পা*ত্তা দিলো না আবরার। পা*ল্টা প্রশ্ন করলো,
— মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি এটা কি আসল চুল নাকি ন*ক*ল?
অবাক হলো আরশি। এটা আবার কেমন প্রশ্ন? তার চুল কি ন*ক*ল চুলের মতো দেখা যায়? সে মুখ টা গম্ভীর করে জিজ্ঞাসা করলো,
— এটা কি ধরণের প্রশ্ন? আমার চুল ন*ক*ল কেনো হতে যাবে? আপনার কেনো মনে হলো আমার চুল ন*ক*ল? দেখি আমার চুল ছাড়ুন। আমি এসব আ*জ*গু*বি কথা শুনতে মোটেও ইচ্ছুক নই।
আরশি কথা শেষ করে আবরারের হাত থেকে নিজের চুলগুলো ছাড়িয়ে নিলো। আবরার পাঞ্জাবির পকেটে হাত গু*জে বললো,
— তোমার চুলগুলো দেখে মনে হচ্ছে….
বাঁ*কা হেসে থেমে গেলো আবরার। আরশি চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞাসা করলো,
— আমার চুলগুলো দেখে কি মনে হচ্ছে? থেমে গেলেন কেনো?
আবরার আরশির দিকে ঝুঁ*কে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— তোমার চুল দেখে মনে হচ্ছে এগুলো শেওড়া গাছের পে*ত্নী*র চুল। শোনো নি গল্প? শেওড়া গাছের পে*ত্নী*রা গাছের ডালে বসে নিজেদের লম্বা লম্বা চুল ঝু*লি*য়ে রাখে, মানুষদের ভ*য় দেখায়। তোমার চুলগুলোও ঠিক সেই পে*ত্নী*র মতো। তাই জিজ্ঞাসা করলাম আসল চুল নাকি পে*ত্নী*র কাছ থেকে ধা*র করে নিয়ে এসেছো। বাই দা ওয়ে তোমার সবকিছুই তো পে*ত্নী*র মতো। তুমিই আবার পে*ত্নী নও তো?
আবরারের কথাগুলো শুনে রা*গে ফু*সে উঠলো আরশি। তার এতো সুন্দর চুল কে অ*প*মান করলো? তার চুল পে*ত্নী*র চুলের মতো? তার সবকিছু পে*ত্নী*র মতো? আরশি দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে আবরার কে বললো,
— আপনার বউ হবে পে*ত্নী। তার চুল হবে পে*ত্নীর মতো। আর আপনি হবেন পে*ত্নীর জামাই বুঝেছেন?
আজ এতগুলো দিন পর আরশি কে রা*গা*তে সফল হলো আবরার। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো তার। আবরার কে হাসতে দেখে গা জ্ব*লে উঠলো আরশির। আর কথা না বাড়িয়ে স্টেজের দিকে হাঁটা দিলো।
— মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?
আরশির পা জোড়া থ*ম*কে গেলো আবরারের ডাকে। কি যেনো ছিলো আবরারের কণ্ঠে, যা আরশি কে আবরারের দিকে ফিরতে বাধ্য করলো। যেনো কণ্ঠে গভীর অনুভূতি মিশিয়ে তাকে ডাকা হয়েছে। যেই ডাক অ*গ্রা*হ্য করা আরশির পক্ষে সম্ভব হয় নি। আরশির ভাবনার মাঝে আবরার আরশির অতি নিকটে চলে আসলো। এতোটাই নিকটে যে আবরারের গরম নিশ্বাস আরশির চোখে মুখে আ*ছ*ড়ে পড়ছে। নিভু নিভু হয়ে আসলো আরশির আঁখি জোড়া। সে নিভু নিভু চোখেই তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে। আরশির কাছে মনে হলো আজ লোকটা কে বোধহয় একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। আরশি মনে মনে নিজের বি*রো*ধিতা করে বললো,
— না না আজ না লোকটা কে তো প্রতিদিন ই সুন্দর লাগে।
আবরার নে*শা*লো কণ্ঠে স্লো ভয়েসে বললো,
— এভাবে সামনে আসা টা কি খুব বেশি জ*রু*রী ছিলো মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? তুমি কি বুঝতে পারছো তোমাকে এভাবে দেখে কারোর হৃদস্পন্দন শত গুন বেড়ে গেছে, শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড় হয়েছে? তুমি কি শুনতে পাচ্ছ তার হৃদস্পন্দনের শব্দ?
আবরারের অনুভূতি মিশ্রিত কথাগুলো শুনে অবাক হলো আরশি। ঘো*রে*র মাঝে থেকেই প্রশ্ন করলো,
— আমাকে দেখে কারোর হৃদস্পন্দন কেনো বেড়ে যাবে?
আবরার কিছু সময় তাকিয়ে রইলো আরশির চোখের দিকে। তারপর মুহূর্তের মাঝে দূরে সরে গিয়ে বললো,
— কারণ তোমাকে আজ পা*ক্কা শেওড়া গাছের পে*ত্নীর মতো লাগছে। আর পে*ত্নী দেখলে মানুষ ভ*য় পায়, ভ*য় পেলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। এখন যদি তোমার কারণে কেউ ম*রে ট*রে যায় তাহলে এর দা*য় ভা*র কে নিবে বলো? আমার বোনের বিয়ে বলে কথা। কারোর কিছু হয়ে গেলে দো*ষ তো আমাদেরই হবে।
আরশির ঘো*র ভে*ঙে গেলো। চোখে মুখে রা*গ জ*ড়ো হলো। চোখে পানি চলে আসতে চাইলো। রা*গে ফোঁ*স*ফোঁ*স করতে লাগলো সে। তাকে কি এতোটাই বা*জে দেখাচ্ছে? এভাবে অ*প*মান করলো লোকটা? আরশি ধু*প*ধা*প পা ফেলে বাড়ির ভিতরে চলে আসলো। শাড়ি পড়ে দ্রুত হাঁটার কারণে পাঁচ থেকে ছয় বার উ*ষ্টা খেয়েছে সে। কিন্তু রা*গে*র সময় মান ই*জ্জ*তের কথা মাথায় থাকে না। আরশি আহির রুমে গিয়ে বসে রইলো। ঠিক করলো আর নিচে যাবে না।
——-
আধা ঘন্টা যাবৎ আহির রুমে বসে আছে আরশি। ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলেছে সে। যেই ড্রেস পড়ে আহিদের বাসায় এসেছিলো সেটাই পড়ে নিয়েছে আবার। আহির রুমের জানালা দিয়ে বাইরের অনুষ্ঠান দেখছে সে। অনুষ্ঠান কম আবরার কে দেখছে বেশি। কিছু কিছু মেয়ে যে*চে পড়ে আবরারের সাথে কথা বলছে। আর আবরার ও হেসে হেসে কথা বলছে ওদের সাথে। এসব দেখে গা জ্ব*লছে আরশির। সে দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বিড়বিড় করে বললো,
— আমাকে অ*প*মান করে এখন মেয়েদের সাথে লু*চ্চা*মি করছে। শুধু শুধু লু*চ্চা এমপি বলি না। আমি পে*ত্নী না এই মাইয়া গুলা পে*ত্নী। পে*ত্নীর নানী দাদি।
এর মাঝেই ফোন বে*জে উঠলো আরশির। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আহির কল। রিসিভ করতেই আহি চি*ল্লি*য়ে বললো,
— কিরে কই তুই? কই হা*রা*ইলি? ঠিক আসোস তো? কই আসোস? কথা বলিস না …
আহির কথা শেষ হওয়ার আগেই আরশি বলে উঠলো,
— শ্বাস তো নে? একসাথে এতো প্রশ্ন? আর এতো চি*ন্তা করার কিছু নেই। আমি তোর রুমে আছি।
আহি বি*র*ক্ত কণ্ঠে বললো,
— তুই রুমে কি করিস? এখনই বাইরে আয়। আমি অপেক্ষা করছি। সবাই এখানে আনন্দ করছে আর তুই রুমে ঢুকে আছিস। কোনো কথা শুনতে চাই না। দুই মিনিটের মধ্যে নিচে আসবি।
ফোন কে*টে দিলো আহি। আরশি কে কিছু বলার সুযোগ দিলো না। আরশি নাক মুখ কুঁ*চ*কে বললো,
— দুই ভাই বোন ই ব*দের হা*ড্ডি । একজন ভা*গায় দিলো এখন আরেকজন আবার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। অ*স*হ্য।
আরশি সুন্দর করে ওড়না এক সাইডে মেলে নিয়ে পিন করে নিলো। তারপর নিচে নেমে আসলো। স্টেজের কাছাকাছি আসতেই আবরারের সাথে চোখাচোখি হলো আরশির। আরশি চোখ সরিয়ে আহির কাছে চলে গেলো। অন্যদিকে আরশি কে সাধারণ পোশাকে, চুল বাঁ*ধা অবস্থায় দেখে বিজয়ের হাসি হাসলো আবরার।
আরশি কে আগের ড্রেসে দেখে হ*তা*শ হলো ওর সব বন্ধুরা। কিন্তু এই বিষয়ে আর কিছু বললো না।
——
আসিফ ছেলে টা আবার বি*র*ক্ত করছে আরশি কে। আগে পিছে ঘুরছে আর জিজ্ঞাসা করছে শাড়ি চেঞ্জ করলো কেনো, চুল বেঁ*ধে ফেললো কেনো? আবার কখনো কখনো নাম্বার চেয়ে বসছে আরশির। আরশি যতটুকু পারছে ই*গ*নোর করছে। কিন্তু আসিফ ছে*চ*ড়ার মতো পিছনে লেগে আছে। শেষে স*হ্য না করতে পেরে দাঁড়িয়ে গেলো আরশি। আসিফের কাছে হাত জো*র করে বললো,
— মা*ফ করেন ভাই। আর আমার পিছনে ঘুইরেন না। লাইন মিলবে না। আমার একটা ‘উনি’ আছে বুঝলেন?
আসিফ মুখ টা সি*রি*য়াস করে বললো,
— আমি বিশ্বাস করি না। আপনি মি*থ্যা বলছেন। কই আপনার ‘উনি’?
আরশি আসিফ কে ভ*য় পাওয়ানোর জন্য বললো,
— আপনার ভাগ্য ভালো আমার ‘উনি’ এখনো আপনাকে দেখে নাই। নাহলে আপনার হাত পা আ*স্ত রাখতো না। তাই ভালো হবে সে দেখার আগে আপনি আপনার রাস্তা মা*পু*ন।
আরশি কথা শেষ করেই অন্য দিকে চলে গেলো। আসিফ আবার আরশির পিছনে যাওয়া ধরতেই সামনে এসে দাঁড়ালো আবরার। চ*ও*ড়া একটা হাসি দিয়ে বললো,
— ঐদিকে কই যাওয়া হচ্ছে? আমাদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার দরজা ওই দিকে।
আসিফের মুখ থ*ম*থ*মে দেখালো। বললো,
— আপনি কিন্তু আমাকে অ*প*মা*ন করছেন…
আবরার হেসে বললো,
— কই অ*প*মান করলাম? ভদ্র ভাবে রাস্তা দেখিয়ে দিলাম।
আসিফ বললো,
— দেখেন..
আবরার সি*রি*য়াস হয়ে বললো,
— সব দেখবো আগে একটু আমার সাথে তো এসো।
কথা শেষ করে আবরার আসিফের গলা জড়িয়ে ধরে স্টেজ থেকে দূরে বাইরে যাওয়ার দরজার কাছে নিয়ে আসলো। এখানে গা*র্ড ছাড়া আর কেউ নেই। আসিফ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
— আমি পাত্র পক্ষের লোক। আর আপনি আমাকে এভাবে অ*প*মান করছেন?
আবরার গম্ভীর স্বরে বললো,
— সাধে কি অ*প*মান করছি? অ*প*মান করার মতো কাজ করেছো তাই অ*প*মান করছি। তুমি আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের মেহমান কে বি*র*ক্ত করবে, একটা মেয়ে কে টি*জ করবে আর আমি তা স*হ্য করবো?
আসিফ বললো,
— আমি কাকে বি*র*ক্ত করেছি? ওই মেয়েটা কে আমার …
আসিফের কথা শেষ হওয়ার আগেই আবরার ভ*য়ং*কর কণ্ঠে বলে উঠলো,
— হুসস। এর সামনে আর একটা ওয়ার্ড উচ্চারণ করার দুঃ*সা*হস দেখাবে না।
আসিফ তে*ড়া*মি করে বললো,
— কি করবেন? আমি বলবো অবশ্যই বলবো। ওই মেয়েটা কে আমার ভালো লেগেছে। আর আমি ওর নাম্বার ও নিবো। কি…
আবরারের দিকে তাকাতেই আসিফের মুখ থেমে গেলো। ভ*য়ং*কর ভাবে আসিফের দিকে তাকিয়ে আছে আবরার। চোখ, মুখ র*ক্তি*ম বর্ণ ধারণ করেছে। আসিফ আবরারের চাহনি দেখে একটা ঢো*ক গি*ল*লো। আসিফ কে থামতে দেখে ক্রু*র হাসলো আবরার। গা*র্ড দের ইশারা করতেই দুইজন গা*র্ড এসে দাঁড়ালো। আবরার একবার আসিফের দিকে তাকিয়ে ওদের উদ্দেশ্য করে বললো,
— এই আ*ব*র্জনা কে নিয়ে যাও আর এমন ভাবে মুখের হা*ড় ভা*ঙ*বে যেনো দুই মাস মুখ দিয়ে কোনো কথা না বের হয়। বুঝতে পেরেছো?
আসিফ ভ*য়ে কে*পে উঠলো। কিন্তু কিছু বলার সুযোগ পেলো না তার আগেই গা*র্ড দুইজন ওকে চ্যাং*দো*লা করে উঠিয়ে নিয়ে গেলো। আবরার বাঁ*কা হেসে সি*টি বা*জা*তে বা*জা*তে আবার স্টেজের কাছে ফিরে আসলো। একবার আরশির দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। বাঁ*কা হেসে পাঞ্জাবির হাতা গো*টাতে গো*টাতে বিড়বিড় করে বললো ,
— অনেক হয়েছে লু*কো*চু*রি। এবার সব শেষ করার পা*লা এসেছে।
চলবে?