তোমায় হৃদমাঝারে রাখিবো পর্ব-০৭

0
4

#তোমায়_হৃদমাঝারে_রাখিবো ( সপ্তম পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<৮>
যাইহোক, এই ভাবনার ভিড়ে দুটো দিন কেটে
যাওয়ার পর একটা ঘটনা ঘটলো। অস্মিতা সেদিন একটু দেরিতে অফিস যাবে। তাই কিছুটা ধীরে সুস্থে আলগোছে এসে ডায়নিং টেবিলে বসেছিল। এই সময়েই দরজায় কলিংবেল বেজে উঠলো। সেটা শুনে অস্মিতার মা রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বললো,
———” দরজাটা একটু খুলে দে তো। তোর বাবা মনে হয় বাজার থেকে এলো। ”
কথাটা শুনে অস্মিতা উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই অবাক! বাবার সঙ্গে পিছনে অর্ণব দাঁড়িয়ে। দৃশ্যটা দেখে অস্মিতার পারদ চড়ে গেছিল হঠাৎ। তবে বাবা সেইসব দেখেও না দেখার ভান করে অর্ণবকে বেশ মিষ্টি স্বরে বলে উঠলো,
———-” কি হলো? তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে কেন? ভিতরে এসো। এসো এসো। ”
কথাটা বলে বেশ হাসি মুখে ঢুকলেন উনি ঘরে। আর অর্ণব পিছন পিছন বাজারের ব্যাগ নিয়ে অপরাধীর মতন মুখ করে ঢুকলো অস্মিতার সামনে। সেই সময় অস্মিতার মা ও রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। অর্ণবকে দেখে ওনার মুখে চওড়া হাসি। বেশ সহজ হয়েই বললেন উনি,
———-” কি ব্যাপার অর্ণব? তুমি এখানে? ”
এই প্রশ্নে অর্ণবের কিছু বলার আগেই অয়ন বাবু বলে উঠলেন,
——” আরে ওর সাথে রাস্তায় দেখা। আমার আসলে হাঁটুতে লাগছিল বেশ মাঝ রাস্তায়। এক ভারি ব্যাগ নিয়ে খোড়াচ্ছিলাম। অর্ণব সেটা দেখে নিজে থেকে এসেই ব্যাগ দুটো জোর করে নিয়ে নিল। আমিও বললাম ব্যাগ যখন নিয়েছ আজকের জলখাবার আমাদের সাথেই খেতে হবে। ব্যাস, ধরে নিয়ে চলে এলাম ছেলেটাকে। ”
কথাগুলো শুনে অস্মিতার মা বেশ খুশি হয়েই বললো,
———–” একদম ঠিক করেছো। আজ জলখাবারে লুচি ভাজছি। অর্ণবও না হয় আমাদের সাথে খাবে। ”
কিন্তু এর মধ্যে অস্মিতার মুখটা কেমন থম মেরে গেছে যেন। যাকে সামনে দেখতে চায় না সে ই সক্কাল সক্কাল হাজির! কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই অস্মিতা দেখলো অর্ণব ওর দিকে তাকাতে তাকাতেই গিয়ে ডায়নিং টেবিলে বসলো। এই সময় অয়ন বাবু মেয়েকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেই বলে উঠলো,
———” তুই দূরে দাঁড়িয়ে কেন? আয়। এসে বস। ”
কথাটায় আজ অস্মিতা কোন উত্তর না দিয়েই চুপ করে এসে টেবিলে বসলো। তবে ও নিঃস্তব্ধ ভাবে দেখলো বাবা বেশ ভালোই গল্প জুড়ে দিয়েছে অর্নবের সাথে। ওর কাজকর্ম কেমন চলছে, অফিসের পরিবেশ কেমন , কাজের কতটা চাপ, এইসব নানা রকম কথা বলে যাচ্ছে একের পর এক। অস্মিতা তো বাবার এই রূপ দেখে মেলাতেই পারছে না যে একদিন এই মানুষই অর্ণবের গায়ে হাত তুলেছিল!
যাইহোক, এই সময়েই মা জলখাবারের প্লেট সাজিয়ে সামনে রাখলো। অস্মিতা এতক্ষণ এটার জন্যই অপেক্ষা করছিল। লুচির প্লেটটা আসতেই অস্মিতা এবার উঠে যাচ্ছিল সেটা নিয়ে, নিজের ঘরে গিয়ে খাবে বলে। তখনই অয়ন বাবু বলে উঠলেন,
———” কোথায় যাচ্ছিস মা? এখানে বসে সবার সঙ্গে খা। ”
কথাটায় এবার অস্মিতার যেন ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটলো। অস্মিতা শান্ত গলায়ই বলে উঠলো,
———–” আমি না হয় এই দেখনদারিটা না ই করলাম বাবা। তুমি তো আছো। তুমি তোমার ইউ এস এ রিটার্ন গেস্টের সাথে মনের আনন্দে গল্প করো। এত নামি দামি লোক বাড়িতে এসেছে বলে কথা! আগে যদিও এই ছেলেটাকে তোমার খুব একটা পছন্দ ছিল না। যাইহোক,একটা ভালো চাকরি, গোছানো কেরিয়ার সবারই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলে হয়তো! তবে আমি এইভাবে ভাবতে পারি না। তাই জলখাবার আমি নিজের ঘরে গিয়েই খাবো। ”
কথাগুলো বেশ কঠিন স্বরে বলে অস্মিতা আর দাঁড়ালো না। চলে এলো নিজের ঘরে। তবে অয়ন বাবু আর অর্ণবের মাঝে অদ্ভুত একটা নিঃস্তব্ধতার দেয়াল উঠে গেল যেন। এই মুহূর্তে কেউই আর ঠিক কোন কথা খুঁজে পাচ্ছিল না। কিন্তু অর্ণবের ভিতরে ভিতরে খারাপ লাগছিল খুব। মনে হচ্ছিল যত চেষ্টা করছে এই মেয়েটার কাছে আসার, ততই যেন দূরে ঠেলে দিচ্ছে অস্মিতা! একটা কাঁচের দেয়াল তুলে দিচ্ছে নিঃশব্দে।
তবে এই সময় শহরে শরৎ এসেছে। নীল আকাশে সাদা তুলোর মতন মেঘ, শিউলি ফুলের গন্ধ চারিদিকে। তারই মধ্যে অস্মিতাদের পাড়ায় পুজোর ফাংশনের প্রস্তুতি শুরু। অন্যান্য বছর গুলোতে যদিও অস্মিতাও এই ফাংশন নিয়ে যথেষ্ঠ মেতে থাকে। কিন্তু এই বছর একটু দূরে দূরেই আছে সব কিছুর থেকে, কারণ পাড়ার বন্ধুদের মুখে শুনেছে যে এই বছর অর্ণব না কি পাড়ার নাটকের দায়িত্ব নিয়েছে। স্ক্রিপ্ট রাইটার, ডিরেক্টর ও নিজেই। এইসব শুনেই অস্মিতা ক্লাব ঘরে রিহার্সাল রুমের দিকে পা বাড়ায়নি।
তবে এর মধ্যে একদিন অলি এসেছিল ওর সাথে দেখা করতে। ওর ছোটবেলার বন্ধু। পাশের বাড়িতেই থাকে। সেদিন অলি এসে বেশ চিন্তিত মুখেই বলেছিল,
———–” কি রে? তুই হঠাৎ পাড়ার গানের টিমটা থেকে বাদ হয়ে গেলি কেন? তুই তো লিড করতিস আমাদের। কেন যাচ্ছিস না এখন রিহার্সালে? ”
এই কথায় অস্মিতা কিছুটা আনমনেই বলে উঠলো,
————” ওই ব্যাংকে এখন কাজের খুব চাপ। তাই ! ”
এই কথায় অলি এবার সোজাসুজি বলে উঠলো,
————” শুধু কি এটাই কারণ? না কি আসল কারণের নাম অর্ণব? ”
এই প্রশ্নে অস্মিতা কিছুটা স্থির গলায় বললো,
————” যেটা ভাবার ভেবে নে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে গেলে আমি ওই ছেলেটার মুখোমুখি আর কোনভাবেই হতে চাই না। ”
এটা শুনে অলি সাথে সাথেই বলে উঠলো,
————” তার মানে অর্ণবদা তোর জীবনে এখনো এতটা ম্যাটার করে! আর ওদিকে দ্যাখ, সে কিন্তু দিব্যি দেড় বছর তোর সাথে কোন যোগাযোগ না রেখে কাটিয়ে দিল। আচ্ছা, তোর মনে হয় না এই রিহার্সাল গুলোতে গিয়ে তুই ওকে আরো বেশি করে বুঝিয়ে দিতে পারিস ওই ছেলেটা সামনে থাকলেও তোর মনে ওকে নিয়ে আর কোন খারাপ লাগা তৈরি হয় না। আমার তো মনে হয় এটাই সব থেকে ভালো উত্তর হবে ছেলেটার জন্য। ”
কথাগুলো বেশ জোর গলায় বললো অলি। অস্মিতাও এই সময় আর আগের মতন কঠিন হয়ে থাকতে পারলো না। নিজের মনেই বলে উঠলো,
————” তুই ঠিকই বলেছিস। আমি কাল রিহার্সালে যাবো। ”
কথাগুলো শুনে অলির মনে শান্তি। যাক, মিশন সাকসেসফুল। এই দু সপ্তাহ ধরে অর্ণবদার মন মরা চেহারাটা দেখে অলি ক্লান্ত হয়ে গেছে। আর এদিকে এই দেড় বছরে অস্মিতাকেও তো দেখেছে। মেয়েটা একটা দিন মন খুলে হাসেনি। আসলে মনে মনে তো অর্ণবদাকে ভালোবেসেছে অস্মিতা চেতনে অবচেতনে। তাই আজ অভিমানের পাহাড়টা এত উঁচু! কিন্তু এই অভিমান ভেঙে যেভাবেই হোক দুজনকে আবার কাছে আসতে হবে। অলির মন নিশ্চুপে এই কথাগুলোই বলছিল।
<৯>
অস্মিতা এরপর পরেরদিন থেকেই পাড়ার ক্লাবে রিহার্সালের জন্য যেতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেখানেও এমন ভাব নিয়ে থাকতো যেন অর্ণবকে ও চিনেও চেনে না। কথা বলা তো দূরে থাক, একবার ফিরে তাকাতো অব্দি না। এই যেমন সেদিন হঠাৎ শরৎ এর আকাশে কালো মেঘ দেখা দিয়েছিল। এরপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বৃষ্টি। অস্মিতা সেই সময় ক্লাবের বারান্দায় বেশ চঞ্চল মনেই দাঁড়িয়ে ছিল। আসলে ওকে এক্ষুনি বাড়ি পৌঁছতে হবে। বাড়িতে গেস্ট এসেছেন কিছু। অর্ণব দূরে দাঁড়িয়ে সেটা খেয়াল করে কাছে এসে বলেছিল,
———–” এই নাও ছাতা। আগে হলে বলতাম এক ছাতার তলায় দুজন হাঁটবো। কিন্তু এখন সেটা সম্ভব না জানি। তাই আমার ছাতাটা নিয়ে তুমি বাড়ি যাও। ”
কথাটা বলেই নিজের লাল রঙের ছাতাটা এগিয়ে দিয়েছিল অস্মিটার দিকে। তবে অস্মিতার হঠাৎ এই ছাতাটা দেখে অনেক পুরনো স্মৃতি ভিড় করেছিল মনে। সত্যি দেড় বছর আগে এরকম অনেক দিন গেছে যেদিন এই ছাতার তলায় হেঁটেছে দুজন হাত ধরে। কিন্তু কথাটা মনে হতেই আবার অস্মিতা নিজের মনকে কঠিন করলো। তারপর অর্ণবের কথায় কোন উত্তর না দিয়েই নিজের মাথায় ওড়না চাপা দিয়ে বেরিয়ে গেল বৃষ্টির মধ্যে। দৃশ্যটা দেখে অর্ণবের মনটা ভারি হয়ে এলো। এত উপেক্ষা, এত শাস্তি অস্মিতা ঠিক করে রেখেছে ওর জন্য! কথাগুলো ভেবেই কেমন একা মনে হলো নিজেকে।
কিন্তু এই সময় রিহার্সালে এসে অস্মিতা একটা ব্যাপার খেয়াল করলো। ওদের থেকে দুটো বাড়ি পরেই থাকে ঘোষ কাকুর মেয়ে তিতলি। সে যেন অর্ণবদা অর্ণবদা করে পাগল। নিউইয়র্ক রিটার্ন ছেলে দেখে যেন হাতছাড়া করতে চায় না। অর্ণবদা অর্ণবদা বলে ডেকে নিউ ইয়র্কের সমস্ত খুঁটিনাটি ব্যাপারে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করাটা যেন রোজের কাজ তিতলির। তারপর নাচ করতে করতে ইচ্ছে করে পা স্লিপ কেটে অর্ণবের গায়ে পড়ে যাওয়া, ওর জন্য পুজোর গিফ্ট নিয়ে আসা, বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে আসা, এইসবও তিতলি প্রত্যেকটা রিহার্সালেই করে। আর অস্মিতার এইসব দেখলে যেন গা জ্বলে যায় আজকাল। দিনরাত এলিজিবল ব্যাচেলর সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই অর্ণব। এখন তো কথায় কথায় ইংলিশ বলে। দামি দামি জামা কাপড়, অফিসের গাড়িতে যাতায়াত, এইসব করে তো নিজের দাম বাড়াচ্ছে আসলে। আর এই তিতলি মেয়েটারও খেয়ে দেয়ে কাজ নেই। জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই হলো অর্ণবকে ইমপ্রেস করা। সারাক্ষণ কারণে অকারণে গায়ে ঢলে পড়ছে।
অস্মিতা বেশ রেগেই ছিল এই সময়। অর্ণব যদিও বুঝতে পারছিল সব কিছু। অস্মিতার চাহুনিই বলে দিচ্ছিল সব। তাই বেশ ভয়ে ভয়েই ছিল। আসলে মনে আছে, কলেজ লাইফে একবার একটা মেয়ে অর্ণবকে প্রপোজ করেছিল। সেই গল্প শুনে অস্মিতা সাতদিন কথা বলেনি ওর সাথে। আর এবার তো এমনিই অর্ণব নির্বাসনে আছে। তাই তিতলির এই আদিক্ষেতার এফেক্ট কি হবে ভগবান জানে! এই সময় তবে অলি একদিন অস্মিতাকে এসে বলে উঠেছিল,
———-” জানিস কি হয়েছে কালকের রিহার্সালে। তিতলি অর্ণবদার জন্য একটা শার্ট কিনে এনেছে। পুজোর গিফ্ট। আমরা তো সবাই হাঁ! একদম ওপেন লাইন মারছে! ”
কথাগুলো বেশ হেসে হেসে বলেছিল অলি। কিন্তু অস্মিতার কথাগুলো শুনে মুখটা ভীষণ গম্ভীর হয়ে গেছিল সেই মুহূর্তে। এটা দেখে অলি প্রশ্ন করে উঠেছিল,
———-” কি হলো বল তো তোর? এত সিরিয়াস কেন? ”
এই প্রশ্নে অস্মিতা বেশ ক্ষেপেই বলে উঠলো,
———-” এই শোন,আমাকে ওই নেকা তিতলির একদম গল্প শোনাতে আসবি না। অসভ্য মেয়ে একটা। কোন পার্সোনালিটি নেই! অর্ণবকে দেখলে তো আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। আর ত
আদিক্ষেতারও শেষ থাকে না। সব সময় শুধু অর্ণবদা অর্ণবদা! দেখলে রাগ উঠে যায়। ”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বললো অস্মিতা। কিন্তু এইসব শুনে অলি আলতো হেসে বলে উঠলো,
———–” তার মানে এখনো অর্ণব দা কে অন্য কোন মেয়ে লাইন মারলে তোর রাগ ওঠে বলছিস! নিজের মুখেই স্বীকার করলি কিন্তু। ”
এই কথায় অস্মিতা চুপ করে গেল যেন কয়েক সেকেন্ড। তারপর বেশ জোর দিয়েই বলার চেষ্টা করলো,
————” এই তুই থামবি। মোটেও কোন রাগ হয় না আমার। খেয়ে দেয়ে কাজ নেই না কি! আমি ওই নেকা তিতলি আর অর্ণব কে নিয়ে ভাববো! ”
কথাগুলো শুনেও অলি মুচকি মুচকি হাসছিল। তবে অস্মিতা আর সেসব পাত্তা দেয়নি।

কিন্তু এরপর তিন চার দিন পরে আরো একটা ঘটনা ঘটলো। অস্মিতা সেদিন অফিস যাওয়ার জন্য পাড়ার মোড়ের বাস স্টপে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময় অর্ণব অফিসের গাড়ি করে যাচ্ছিল বাস স্টপের পাশ দিয়েই। কিন্তু ও থমকে গেল সেই সকালে অস্মিতাকে দেখে। তাড়াতাড়ি গাড়ি থামিয়ে তাই অস্মিতার কাছে গিয়ে বললো,
———–” গুড মর্নিং। অফিস যাচ্ছো তুমি? চলো আমি ড্রপ করে দিচ্ছি। আমি কাকুর মুখে শুনেছি তোমার অফিস কোথায়। ”
এই প্রশ্নে অস্মিতা ভদ্রতার হাসি হেসে বললো,
———-” আমার বাসে ট্রামে যাওয়ার অভ্যাস আছে। তোমার অফিসের গাড়িতে আমি কেন যেতে যাবো। ”
এই কথায় অর্ণব একটু জোর দিয়ে বললো,
———-” আগেও তো এরকম কতবার হয়েছে আমি তোমার টাকায় ট্যাক্সিতে চেপেছি। তাহলে আজ তুমি আমার অফিসের গাড়িতে যেতে পারবে না? ”
এই প্রশ্নে অস্মিতা ভীষণ স্থির গলায় বলে উঠলো,
———” আগের দিনগুলোর সাথে তো এখনকার দিনের কোন মিল নেই। আর আমি সেটা মেলাতেও চাই না। তাই তোমার আর আমার রাস্তা আলাদা। ”
কথাগুলো বলতেই খেয়াল করলো অর্ণবের মুখটা অন্ধকার হয়ে গেছে। এটা দেখে হঠাৎ মনে হলো ও কি একটু বেশি রুডলি কথা বলে ফেলেছে! কথাটা ভাবতেই খেয়াল করলো পিছন থেকে হঠাৎ তিতলি এসে হাজির। ও অর্ণব কে দেখে বলে উঠলো বেশ আলতো সুন্দর গলায়,
———-” অর্ণবদা তুমি এখানে? আমাকে একটু লিফট দেবে প্লিজ। আমার একটা ইন্টারভিউ আছে। তোমাদের অফিসের ওদিকেই। ”
কথাগুলো শুনে অর্ণব খেয়াল করলো অস্মিতার মুখের রং বদলে গেছে। কেমন কটমট করে ওর দিকে তাকিয়ে। অর্ণব এটা দেখে ঢোঁক গিললো একবার। তারপর আধো আধো স্বরে বললো,
———–” না মানে আমি লিফট! ”
ওর কথাটাকে শেষ হতে না দিয়েই অস্মিতা বলে উঠলো,
———-” হ্যাঁ নিশ্চয়ই। অর্ণব কেন লিফট দেবে না তোমাকে। ওকে তো অফিস থেকে গাড়িটা এই জন্যই পাঠায়, যাতে ও লোকজনের হেল্প করতে পারে। তুমি দাঁড়িয়ে কেন তিতলি, উঠে বসো গাড়িতে। একসাথে গল্প করতে করতে যাও দুজন।”
কথাগুলো বেশ শুনিয়ে শুনিয়ে অর্ণবকে বললো অস্মিতা। অর্ণব এর তো মুখ চোখ ঘেমে যাচ্ছিল এই সময়ে। এই তিতলি মেয়েটা যে কেন এরকম করছে! যেখানে সেখানে বিনা নোটিশে এসে হাজির হয়, আর অস্মিতার পারদ চড়িয়ে দেয়। একেই অর্ণব কোনভাবেই মেয়েটার রাগ ভাঙ্গাতে পারছে না। তার ওপরে এই তিতলি। সব কিছুতে এসে জল ঢেলে দেয়। কথাগুলো ভাবতেই একটা বাস চলে এলো, আর অস্মিতা আর কোন কথা না বাড়িয়ে উঠে বসলো বাসে। তারপর অর্ণবের সামনে কিছুক্ষণের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে গেল যেন।
চলবে।