তোমার আমার প্রেম পর্ব-০৪

0
506

#তোমার_আমার_প্রেম (কপি নিষিদ্ধ)
#পর্ব_৪
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

টুসু দু সপ্তাহ তুলিদের বাড়ি এল না। দাদীমা অসুস্থ। টুসুকে ছেড়ে দাদীমা চলে যাবে ভাবতেই টুসুর বুক ভার লাগে। সে দাদীমাকে এখন ঝাপটে ধরে বসে থাকে। দূরদূরান্ত হতে নানান আত্মীয় স্বজন আসছে দাদীমাকে দেখার জন্য। দাদীমা বিছানায় প্রসাব পায়খানা করে দেয় মাঝেমধ্যে। টুসু আর টুসুর বাবা মিলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে। টুসুর আগে খুব বিরক্ত লাগতো। ঘৃণা হতো। কিন্তু ডাক্তার যবে থেকে বলেছে দাদীমা আর বেশিদিন নেই তবে থেকে টুসুর ভয়ে বুক কাঁপছে। যদিও অভিনব শারাফ বলেছে, তার দাদীমা তাকে বাড়ি থেকে বিদেয় করে তবেই মরবে। তাহলে তো অনেকদিন বাঁচবে দাদীমা। টুসুর বিয়ে হতে ঢের দেরী।

এদিকে পায়েলের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। একের পর এক সম্বন্ধ আসছে আর যাচ্ছে। পায়েল আপা কিছুতেই রাজী হয় না। বাড়িতে তা নিয়ে আরেক অশান্তি। তবে টুসু নিশ্চিত চৈত্র মাসের শেষের দিকে বিয়ের তারিখ পড়েই যাবে।

এরিমধ্যে টুসুর রেজাল্ট দিয়েছে। সে রোল দুই হয়েছে। বাড়িতে নবম শ্রেণির নতুন বই এসেছে।
খুশির খবরটা বিবেক ভাইকে সে জানালো রাতে। বিবেক ভাই কাঠকাঠ গলায় বলল,

“রোল এক তো হতে পারিসনি। এত নাচানাচির কিছু নেই। কমার্স নিচ্ছিস?”

টুসু নখ কামড়াতে কামড়াতে বলল,”হ্যাঁ, তুমি জেঠুকে একটু বকে দাও তো।”

বিবেক ভাইয়ের হয়তো ঠান্ডা লেগেছে। কেমন নাকে নাকে কথা বলছে। চাপা স্বরে বলল,”কেন?”

টুসু অভিযোগের সুরে বলল,”জেঠু বলছে আমি নাকি নাইনে উঠে লাইনে পড়বো।”

বিবেক ভাই বিরক্ত হয়ে বলল,”ওদের মুখে খালি বাজে কথা। শোন আমি আসার সময় তোর গাইড নিয়ে আসবো। কাকাকে বলে দিস।”

টুসু খুশি হয়ে বলল,”ওকে। শুনো শুনো তোমার একটা দাঁত যে রাক্ষসের মতো ওটাকে কি যেন বলে?”

বিবেক ভাই গমগমে স্বরে বললেন,”তোকে কে বলেছে রাক্ষসের গজদাঁত থাকে?”

টুসু বলল,”সরি সরি। আমি নাম জানতাম না। টা টা রাখি ফোনটা।”

টুসু বিবেক ভাইকে রাগিয়ে দিয়ে ফোনটা কেটে দিল।
__

এরিমধ্যে অভিনব শারাফের সাথে নিয়মিত কথাবার্তা চলছে। লোকটা এত ফ্লার্ট করতে জানে। টুসুর খুব সহজ প্রশ্নের উত্তরগুলো কি কঠিনভাবে দেয়। এত ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে জানাও একটা আর্ট। টুসুর ওই কঠিন কঠিন কথাগুলোর মিনিং খুঁজে বের করতে দারুণ লাগে। তারপর এত এত লজ্জা পায় সে। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে তার।

এই তো সেদিন বললো,”রাগিনী ওয়ান মোর থিং, তুমি চোখ বন্ধ করো।”

টুসু লিখলো,”করলাম।”

“তারপর চোখ খোলো ”

“খুললাম।”

“সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি।”

টুসু লিখলো,”ধ্যাত, আমি পালিয়ে গেলাম।”

হা হা ইমোজির বন্যায় ভাসলো মেসেঞ্জারে। টুসু হাসতে হাসতে খুন। তার জীবনে এত আনন্দের মুহূর্ত এর আগে কভু এসেছিল কিনা জানা নেই।
তারপর টুং করে আরেকটা মেসেজ এল,

“না না পালিয়ে যেতে দিলেই তো। মোটা মোটা রশি আছে আমার কাছে। বেঁধে রেখে দেব। যাকে বলে কিডন্যাপিং। আমি ওসবে ওস্তাদ কিন্তু। আল্লাহ ছাড়া কাউকে পরোয়া করিনা।”

টুসু লিখলো,”মানলাম। এবার আপনি চোখ বন্ধ করুন।”

“ওকে।”

“চোখ খুলুন।”

“খুলছি।”

“সামনে একটা পেত্নী দাঁড়িয়ে আছে।”

আবারও হা হা রিয়েক্টের বন্যায় ভাসলো। অভিনব লিখলো,”আই লাইক পেত্নী। রাক্ষসের পেত্নীকেই তো পছন্দ হবে।”

টুসু হাসতে হাসতে লিখলো,”কচু কচু।”

“তোমার নাম কচু?”

“না, রাইমা আহসান।”

সাথে সাথে মেসেজটা আবারও ইডিট করলো,”না না। রাইদা আহসান। সরি টাইপিং মিসটেক।”

অভিনব শারাফ বলল,”আমি আসলটা দেখে ফেলেছি কিন্তু।”

টুসু বলল,”না না আমার নাম সত্যিই রাইদা।”

“অন্য নাম নেই?”

“টুসু।”

অভিনব শারাফ হা হা রিয়েক্ট দিল। টুসু রেগে গিয়ে বলল,”খুব মার দেব কিন্তু।”

অভিনব শারাফ বলল,

“আমাকে বেকুব বানানো হচ্ছে।”

টুসু বলল,”আচ্ছা বেশ আমার নাম রাইমা। তো?”

“কিচ্ছু না। রাগিনী নামটাই বেস্ট।”

“থ্যাংকস।”

“মোস্ট ওয়েলকাম। তুমি কীসে পড়াশোনা করছো?”

“অনার্সে।”

“ভেরি গুড।”

“আপনি?”

“সব পাস করা শেষ। এবার বিয়ে পাস করবো।”

টুসু হেসে লিখলো,”আমাকেও দাওয়াত দিয়েন বিয়েতে।”

“বেকার মানুষকে কে বিয়ে করবে?”

“বেকারটা কি সারাজীবন বেকার থাকবে?”

“তা থাকবে না।”

“তাহলে চিন্তা নেই।”

এমন কতশত কথা যে হলো। এত কথা, এত হাসি সবকিছুতে কেমন সুখ সুখ অনুভূতি হলো টুসুর। এসব অনুভূতি সত্যি। একফোঁটাও মিথ্যে নেই এতে।

_______

একদিন অভিনব শারাফকে জেলাস ফিল করানোর জন্য বিবেক ভাইয়ের একটা ছবি পাঠিয়ে দিয়ে সে বলল,

“এই মানুষটা আমার খুব পছন্দের। ওর গজদাঁতটা আরও বেশি। হাসলে ওকে কি দারুণ লাগে। কিন্তু খুব কম হাসে।”

যদিও টুসুর বুক কাঁপছিল এই ভেবে এটা অন্যায় হচ্ছে। কিন্তু তার কাছে অন্য ছেলের ছবি নেই। যদিও বিবেক ভাইয়ের চেহারাটা পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছিল না ছবিটাতে। মুখের একটাপাশ দেখা যাচ্ছিল। আর তাছাড়া তার বিবেক ভাইকে সে অপছন্দই বা করবে কেন? তার আপার বরের জায়গায় বিবেক ভাইকে সে কবে বসিয়ে রেখেছে। তার আপা নায়িকা হলে, বিবেক ভাইও হিরোদের মতো। ওদের বিয়েতে কি যে মজা হবে। বাড়ির মেয়ে বাড়ির বউ হয়ে যাবে। তখন আপা আর বিবেক ভাই স্বামী স্ত্রী হয়ে যাবে। বিবেক ভাইকে টুসু দুলাভাই ডেকে ডেকে জ্বালাবে।

অভিনব শারাফ বিবেক ভাইয়ের ছবিটা সিন করে একটা লাইক দিয়ে বলল,”মোটামুটি।”

টুসু রেগে গিয়ে বলল,”একদম নয়। উনি ভীষণ সুন্দর। এরকম ছেলে পারলে আর একটা দেখান আমাকে। গোটা পৃথিবীতে নেই।”

টুসুর রাগ লাগছিল এই ভেবে তার বিবেক ভাইকে অসুন্দর বলা? অভিনব শারাফ কি জানে বিবেক ভাইয়ের ব্যাপারে? কতটুকু জানে? একফোঁটাও জানেনা।

মেসেজ এল,”আমি এরচেয়ে বেটার তাই হয়তো আমার চোখে মোটামুটি লাগছে।”
সাথে একটা ঠোঁট বাঁকানো ইমুজি।

টুসুর রাগের বদলে লজ্জা লাগলো এবার। সে আনসার দিল না। কম্বলের তলায় চুপ করে শুয়ে থাকলো। যদি তার বর আপার বরের চাইতে সুন্দর হয় তাহলে সবাই ধন্যি ধন্যি করবে তাকে। বলবে কালো হয়েও বরটা সুন্দর পেল। টুসু কিছুক্ষণ পর লিখলো,”আপনি বেটার হতেই পারেন। তাতে আমার কি?”

উত্তর এল,”তোমার পছন্দের মানুষ নিশ্চয়ই আপনাকে পাত্তা দেয় না।”

টুসু লিখলো,”কে বলেছে?”

অভিনব লিখে পাঠালো,”পাত্তা পেলে কেউ অন্য ছেলের সাথে কথা বলে?”

টুসু আর কিচ্ছু লিখলো না। একটাও মেসেজও না। তারপরের দিনও না। অভিনব শারাফ ঠিকই মেসেজ পাঠিয়েছে। কিন্তু একটা। টুসুর খুব রাগ লাগলো। সে মেসেজটা সিন করলো না।

__

এদিকে দাদীমার অসুস্থতা দিনদিন বাড়ছে। উনি চায় পায়েল আপার বিয়েটা দেখে যেতে। এ নিয়ে বাড়িতে রোজ ঝামেলা হচ্ছে। টুসুরও মন ভালো নেই। আপারও না। বিবেক ভাই আপাকে এবার বেশ কষ্ট দিচ্ছে। টুসু চায় আপারও বুঝ হোক। পুরুষ মানুষ রেগে গেলে মেয়েদের শান্ত থাকতে হয়। কিন্তু আপা উল্টো নিজেই রেগে যায়। এভাবে চলতে থাকলে কি যে হবে কে জানে?

পায়েল আপা তো ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। টুসু নিজেকে হালকা করতে তুলিদের বাড়িতে এল। কিছু ভালো লাগছেনা তার। তুলি তাকে বুঝিয়ে বলল,”মেসেঞ্জার আনইন্সটল করাটা উচিত হয়নি।একবার দেখ কি বলে।”

টুসু আনমনা হয়ে বলল,”না থাক।”

তুলি জোর করে মেসেঞ্জার ইন্সটল করলো। সেখানে অভিনব শারাফের একটা মেসেজ এসেছে ছোট্ট করে,”প্রেমিক নিয়ে এত্ত পজেসিভনেস দেখানো মেয়েরা গাধা হয়।”

টুসু রেগে বলল,”দেখলি কি বললো?”

তুলি জানতে চাইলো,”তোর প্রেমিক আবার কে?”

টুসু ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,”আরেহ বিবেক ভাইয়ের ছবি দিয়েছিলাম পছন্দের মানুষ বলে। প্রেমিক বানিয়ে দিয়েছে। ছাড়। ব্লক দে। মেজাজটাই খারাপ করে দিল ভাইকে প্রেমিক বানিয়ে দিয়ে।”

তুলি কি লিখে পাঠিয়ে দিল কে জানে? টুসু চট করে ফোন কেড়ে নিয়ে দেখলো তুলি লিখেছে,

“আমার কোনো প্রেমিক নেই। আমি যাকে পছন্দ করি সে আমাকে পছন্দ করেনা। যে আমাকে পছন্দ করেনা সে আমার প্রেমিক হয় কি করে?”

অভিনব শারাফ মেসেজটা সিন করে কিছু বললো না। কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই করলো,

“কে পছন্দ করেনা?”

“আপনাকে কেন বলবো?”

“এই মেয়ে তুমি ছবিটা দিয়ে আমাকে যাচাই-বাছাই করছিলে? আমি কিন্তু সত্যিই জেলাস।”

তুলি টুসুর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে লিখলো,”কাউকে জেলাস ফিল করানোর দরকার নেই আমার।”

অভিনব শারাফ হা হা রিয়েক্ট দিয়ে বলল,

“তোমার বিয়ের দাওয়াত আমি পাব?”

টুসু অবাক হলো। তুলি বলল,”এই ব্যাটা কিন্তু এবার তোকে যাচাই-বাছাই করছে টুসু।”

টুসু বলল,”লিখ, দাওয়াত দেব না।”

তুলি লিখলো,”দেব। দাওয়াত দিলে আসবেন?”

টুসু তুলির মাথায় চড় বসিয়ে বলল,”পাগল কোথাকার। এসব কি লিখেছিস?”

তুলি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,”চুপ থাক। তোর পায়েল আপার বিয়েতে দাওয়াত দিবি।”

টুসু ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো,

“না না। বিবেক ভাই পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেবে। এমনিতেই বাবা আমাকে কেন ফোন দিয়েছে তা নিয়ে উনি বাবার উপর রেগে আছে। ভাই না এসব বলিস না।”

তুলি ঠোঁট উল্টে বলল,”বলে তো দিয়েছি। কি রিপ্লাই দিয়েছে দেখ।”

টুসু দেখলো অভিনব শারাফ রিপ্লাই দিয়েছে,

“আমি কি পরিচয়ে দাওয়াত খেতে যাব?”

তুলি লিখলো,”প্রেমিক।”

“সিরিয়াসলি!”

টুসু মেসেজের আনসার দেখে জিভে কামড় দিল। একলাফ দিয়ে সেখান থেকে সরে গেল। হাত নাড়িয়ে বলল,”সর্বনাশ সর্বনাশ। ছিহ ছিহ এসব কি লিখেছিস? আমি নেই আর।”

তুলি হো হো করে হেসে বলল,”কি জিজ্ঞেস করেছে দেখ।”

টুসু দু’হাতের নখ দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে রেখেছে। তার বুক কাঁপছে। জানতে চাইলো,

“কি বলেছে?”

তুলি হেসে বলল,”প্রেমিক সেজে আসবে বলছে।”

টুসু বলল,”না না ব্লক দে। আমি মরে যাব। সামনে যেতে পারবো না। আমি কি কুৎসিত। না না আমি যাব না সামনে।”

তুলি অভিনব শারাফকে লিখলো,”আমি কিন্তু আপনার সামনে যাব না।”

সাথে সাথে মেসেজ এল,”কেন?”

তুলি লিখলো,”কারণ আমি দেখতে ভালো না।”

অভিনব শারাফ পাঠালো,”আমিও দেখতে ভালো না।”

তুলি মেসেজটা টুসুকে দেখিয়ে বলল,”দেখ গাধী। ও আহামরি সুন্দরী চায় না।”

টুসু মেসেজটা দেখে শান্ত হলো। তুলির পাশে বসে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল,

“আমার খুব ভয় করছে। আমি এই চেহারা নিয়ে কিভাবে তার সামনে যাব?”

তুলি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,”শোন টুসু। তুই শ্যামলা। তোর আপার মতো সুন্দর না তা জানি। কিন্তু তোকে সুন্দর করে সাজালে বেশ সুন্দর লাগবে।”

টুসু চিন্তিত হয়ে বলল,”কিন্তু বিবেক ভাই? উনাকে কিভাবে বলবো। আমাকে খুব মারবে রে। তুই তো জানিস উনি কেমন। বাড়িতে তুলকালাম কান্ড ঘটবে। উনি এমনিতেই আপার উপর ভীষণ রেগে আছে। তারউপর আমার এসব দেখলে কি অবস্থা যে করবে। ধরা পড়লে আমি শেষ।”

তুলি কিছুক্ষণ ভেবে বলল,”আগে একটা কাজ কর। তুই অভিনব শারাফের সাথে কথা বল। মানে তোদের সম্পর্কটা জোরালো হোক।”

টুসু সাথে সাথে বলল,”আল্লাহ কি বলিস তুই! ওকে প্রেমিক সেজে আসতে বললাম। আর ও প্রেমিক হয়ে গেল?”

তুলি চ বর্গীয় শব্দ করে বলল,”আরেহ ও তো বলেই দিল তোর প্রেমিক হয়েই আসবে। এই দেখ কি বললো।”

“কি?”

তুলি তাকে মেসেজটা দেখিয়ে বলল,”বলছে তুই তার প্রেমিকরূপ সহ্যই করতে পারবি না।”

টুসু মৃদুস্বরে বলল,”এত ভয় দেখায় কেন?”

তুলি কি যেন ভাবলো। হঠাৎ বলল,”এই বুদ্ধু প্রপোজ করবি?”

টুসু চিৎকার দিল।

“না! পাগল বিয়াদ্দব রাক্ষসী। ফোন দে আমার।”

বলেই ফোনটা কেড়ে নিয়ে টুসু দৌড়াতে দৌড়াতে তাদের বাড়ি চলে গেল। ঘর থেকে অনেকক্ষণ বের হলো না। কারো কোনো কাজবাজ করলো না। জেম্মা বলল, টুসুটা আজকাল এত কাজচোর হয়েছে। এই টুসু ওঠ না রে। শুয়ে আছিস এখনো?”

টুসু চেঁচিয়ে বলল,”কোনো কাজ করতে পারবো না ভাই।”

মা চেঁচিয়ে উঠলো,”এভাবে জবাব দেয়া কখন শিখেছিস তুই? বেয়াদব মেয়ে ঘর থেকে বের হ।”

টুসু বের হলো। গাল ফুলিয়ে শব্দ করে হাঁটতে হাঁটতে সবাইকে চা দিয়ে এল। চায়ের কাপগুলো ধুয়ে আবার জায়গামতো রেখে দিল। দাদীমার সেবাশুশ্রূষা করলো। ঔষধ খাইয়ে দিল। রিশার ড্রয়িংয়ে সাহায্য করলো। ছাদ থেকে আনা শুকনো কাপড়গুলো ভাঁজ করে ওয়ারড্রবে রাখলো। আর ঠিক তখুনি অভিনব শারাফের মেসেজ,”সত্যি কিন্তু। আমি সুন্দর না। কাকের মতো কালো।”

টুসু মেসেজটা দেখে হাসলো। বলল,”ভালোই। কি করছেন?”

“মুড়ি চানাচুর আর সিগারেট খাই।”

“ছিহ! এসব কোনো খাবার হলো? ভাত নেই?”

“ভাত রাঁধার জন্য তো বউ লাগবে।”

টুসু ফিক করে হেসে লিখলো,”বিয়ে করে নিন।”

“বউ মনে হচ্ছে অকর্মার ঢেঁকি।”

টুসু চট করে লিখলো,”অ্যাহ আমি খুব কাজবাজ পারি।”

তারপর ফোনটা দূরে ছুঁড়ে মেরে বালিশের কভারের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়লো। তওবা তওবা সে কি লিখে ফেললো? লোকটা বোধহয় ঘর ফাটিয়ে হাসছে তার মেসেজ দেখে।

টুসু প্রায় আধঘন্টা পর দুরুদুরু বুকে ফোনটা নিল। সত্যি সত্যি লোকটা হা হা রিয়েক্ট দিয়ে, হাসির স্টিকারও পাঠিয়েছে। আর লিখেছে,

“কর্মঠ কিনা দেখার জন্য বিয়ে করে নিতে হবে?”

টুসু বলল,”করে নিন।”

“আচ্ছা!”

টুসু বলল,”জি।”

“কে করবে?”

টুসু লিখলো,”আপনি যাকে বিয়ে করবেন।”

“আমি তোমাকে করবো ভাবছি।”

টুসু মেসেজটা দেখে তব্দা খেয়ে বসে রইলো। কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ হতে লাগলো। পুরো মাথাটা ঝিমঝিম করছে। চোখ ঝাপসা হলো। লোকটা কি পাগল নাকি? কি বলে এসব? টুসু কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে পড়ে রইলো। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে রিপ্লাই করলো,

“আমাদের দেখায় হয়নি।”

“চেনা জানা সব তো হলো। দেখাটাও হয়ে যাবে।”

টুসু বলল,”আমি কিন্তু সত্যিই অসুন্দর।”

“আমিও সত্যিই অসুন্দর।”

“আমি খুব ছোট।”

“আমার বেশি বড়মানুষের সাথে ভাব জমে না।”

টুসু বলল,”আমি ছাদে যাচ্ছি। আকাশে আজ কত্তগুলো তাঁরা।”

“ওসব চাঁদ তাঁরা দেখলে আমার কিছু অনুভূতি হয় না।”

“আপনি একটা রোবট।”

“হয়তো।”

তারপরের দিন ঝড় হলো। টুসু বলল,

“ঝড়ে ভিজেছেন কখনো?”

“না।”

“আমি আজ আবারও ভিজলাম। খোলা আকাশের নীচে দু-হাত মেলে বুক উজাড় করে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজার যে আনন্দ এটা না ভিজলে কেউ জানবেই না।”

“একদিন ঝড়ে ভেজা পায়ের ছবি দিও।”

“আমার কাছে নুপুর নেই।”

“আমি পাঠাবো।”

“কোন ঠিকানায়?”

“আকাশের।”

টুসু হেসে বলল,”আকাশে তো আমি নেই। আমি জমিনে।”

“আকাশের পরী পেত্নী সব জমিনে নেমে এলে আমার কি দোষ?”

টুসু চুপ হয়ে গেল। তাকে কেউ কোনোদিন সুন্দর বিশেষণ দেয়নি। কেউ না। এই লোকটা তাকে দেখার পর সুন্দর বলবে তো?

____

পায়েল আপার বিয়ে এখনো পাকাপোক্ত হয়নি। বৈশাখ মাস চলে এসেছে। শুরুতেই কালবৈশাখী ঝড়। টুসু তুলিদের বাগানবাড়িতে আম কুড়াতে গেল। গায়ে সাদামাটা সেলোয়ার-কামিজ। টুসু ভালো করে ওড়নাও সামলাতে জানেনা। কাঁদা মেখে ওড়নার আঁচলে করে সে অনেকগুলো আম কুড়িয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরলো।

তখন দেখলো সোফায় পিঠ করে একটা ছেলে বসে আছে। গায়ে আকাশী রঙের শার্ট। টুসুর বুকটা ধড়ফড়িয়ে উঠলো আচমকা? কে সে?

ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতেই বিবেককে দেখে টুসু একগাল হেসে উঠে বলল,

“তুমি? আমার গাইড এনেছ?”

বিবেক ভাই আশ্চর্য হয়ে বলল,”এতদিন পর বাড়ি এসেছি। তুই আমাকে বলছিস গাইড এনেছি কিনা? এই শিখেছিস?”

টুসু মৃদুস্বরে বলল,”সরি। ভালো আছ তুমি?”

বিবেক ভাই জবাব দিলেন না। টুসু বলল,

“আম এনেছি। তুমি লবণ মরিচ দিয়ে কাঁচা আম খাবে?”

বিবেক ভাই জবাব দিল না। জেম্মা ইশারায় বললো আর কিছু না বলতে। টুসু জেম্মার কাছে এসে জানতে চাইলো,

“কি হলো তোমার ছেলের?”

“ওকে দেখে রাইমা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই মেজাজ বিগড়ে গেছে। এদের নিয়ে কি যে হবে আমার। ওর একটা চাকরি বাকরি হয়ে গেলে তাও হতো। বিয়ে পরিয়ে দিতাম। এত ঝগড়াঝাটি আমার আর ভালো লাগেনা।”

টুসু খুশি হয়ে বলল,”বিয়ে পরিয়ে দাও জেম্মা। আপা এখন যেমন আছে তেমন থাকবে। চাকরি হলে বিবেক ভাই আপার দায়িত্ব নেবে।”

“তোর বাপ দেবেনা। তুই তো চিনিস তোর বাপকে। আর বিবেকও এভাবে বিয়ে করবে না। তাছাড়া তোর জেঠু তো এসব জানেনা।”

তাদের কথার মাঝখানে বিবেক হঠাৎ ডেকে উঠলো,

“মা আমি বেরোচ্ছি। সোহমের সাথে দেখা করে চলে যাব।”

জেম্মা বলল,”এভাবে চলে যাবি? রাইমাকে আমি ডেকে দিচ্ছি। তুই দাঁড়া।”

বিবেক ভাই বলল,”ও চুলোয় যাক না। আমি একটা সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। তারপর ওর এমন হাল করবো। সব দেমাক আর ইগো বের করবো।”

বলেই হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল। টুসু পেছন পেছন বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে এসে বলল,

“দাঁড়াও দাঁড়াও।”

বিবেক ভাই দাঁড়িয়ে পড়লো। টুসু তার ওড়নার আঁচল থেকে দুটো কাঁচা আম বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“তুমি না খেলেও নাও। বাড়ির সবাই খাবে অথচ তুমি খাবে না? তাই দিচ্ছি। নাও।”

বিবেক ভাই নিল। পকেটে ভরতে ভরতে বলল,

“যা কাপড় চেঞ্জ করে নে। ঠান্ডা লেগে যাবে। এগুলো রাখ।”

বিবেক ভাই তার হাতে লাল কাচের চুড়ি তুলে দিয়ে বলল,”চুড়ি।”

টুসু ঠোঁট টিপে হাসলো। কার জন্য জানতে চাওয়ার আগেই বিবেক ভাই চলে গেল। বিবেক ভাইকে যতদূর দেখা গেল টুসু ততোদূর চেয়ে রইলো। আপা কেন এমন করে কে জানে? কত মনখারাপ নিয়ে চলে গেল মানুষটা। অথচ তার জন্য ঠিকই চুরি এনেছে।

আপা ঘর থেকে বের হতেই জেম্মা চেঁচিয়ে বলল,”ওর সামনে এসব নাটকের মানে কি? তোর বোধবুদ্ধি হবে কখন?”

আপা রেগে বলল,”তোমার ছেলে আমাকে ব্লক করে রেখেছে। আগে আনব্লক করতে বলো। নইলে জীবনেও ওকে আমি আমার মুখ দেখাবো না।”

মা এসে আপাকে টেনে ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল,”তোমার মুখ সামলে রাখো রাইমা। বড়দের সামনে উঁচু গলায় কথা বলো না।”

আপা মায়ের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,”মা তার ছেলের একতরফা গান গাইলে এমন বলবোই। তার ছেলের দোষ দেখেনা? শুধু পরের মেয়ের দোষ দেখে। আমাকে সব জায়গা থেকে ব্লক করে রেখেছে আর আমি তার ছেলের পা ধুয়ে পানি খাব?”

কথাগুলো বলার সময় আপার চোখ জলে টুইটুম্বুর। মা বলল,”তোমাদের মধ্যে কি সমস্যা হয়েছে সেটা তোমরা দুজনেই মিটিয়ে নাও রাইমা। বাড়িতে তোমার ছোট বোনেরা আছে। ওদের সামনে এসব বাড়াবাড়ি করো না।”

তারপর টুসুর দিকে তাকিয়ে ধমক দিল,

“কি শুনছিস এভাবে? এখনো ভেজা কাপড় পাল্টাসনি কেন?”

টুসু তখুনি সরে গেল। বাবা ডাকলো,

“আমার রাইদারাণী কোথায়?”

টুসু একদৌড় দিয়ে বাবার সামনে হাজির হয়ে বলল,”বাবা আম এনেছি। আমের কাঁচা আমের টকঝাল ভর্তা বানাবো। তুমি আমায় হেল্প করবে। ঠিক আছে?”

বাবা সরল হেসে বলল,”অনেক বড় আম তো।”

“হ্যাঁ। আমি গোসল করে আসি। তুমি এগুলোর খোসা ছাড়িয়ে ফেলো।”

টুসু বাবাকে সব সরঞ্জাম পাতি এনে দিল। তারপর সে গোসল করে এসে বাবাকে সাহায্য করতে লাগলো। চাচাতো বোন রিশা আর তার ছোট ভাই ঈশানও এসে যোগ দিল সেখানে। বলল,”মেঝ কাকা কাঁচা আম খুব মজা।”

বাবা মাথা দুলিয়ে বললেন,”কে এনেছে দেখতে হবে না?”

মা বাবা মেয়েকে বকাঝকা দিতে লাগলো,

“দুপুরের খাওয়াদাওয়া রেখে মানুষ আমের ভর্তা বানাতে বসে? হায় আল্লাহ এদের কাণ্ডজ্ঞান বলতে কিচ্ছু নেই।”

আমের ভর্তা বানিয়ে টুসু সবাইকে বিলি করলো লাঞ্চের পর। জেঠু খেতে খেতে বলল,

“আহ! ওদের গাছের আম এমনিতেই মিষ্টি। ওই গাছের আম জীবনেও ফুরোবে না বুঝলি। আমি তোর বাপ, চাচা কত আম কুড়িয়েছি ছোট বেলায়।”

টুসু তার ভাগ থেকে জেঠুকে আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে বলল,”দাদী খাচ্ছে না। সেটা ভাগ তোমাকে দিলাম।”

জেঠু হেসে বলল,”তোর বিয়ে হয়ে গেলে আমাদের কি হবে রে মা? কে আর আম জাম কুড়িয়ে খাওয়াবে?”

“কিনে খাবে। ব্যস। তাই বলে আমি বিয়ে করবোনা?”

বাবাসহ উপস্থিত সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। জেঠু বলল,”তা তো কিনবোই। কিন্তু কিনে খাওয়া আমে কি তোর কুড়িয়ে আনা আমের স্বাদ পাব রে মা?”

টুসু বলল,”পাবে পাবে। এই বাবা আপাকে ডাকো না।”

বাবা আপাকে ডেকে নিজের পাশে বসিয়ে ভর্তা দিল একটা ছোট বাটিতে করে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

“পায়েলের বিয়ের কথাবার্তা শুরু হওয়ার পর থেকে তুই এমন শুকিয়ে যাচ্ছিস কেন রে? সারাজীবন কি আপার সাথে সাথে থাকতে পারবি মা?”

পায়েল আপা রাইমার আপার দিকে তাকিয়ে মলিন হাসলো তা শুনে। আপা তাকে হাসতে দেখে ভর্তা খেতে খেতে বলল,”ওরা দুই ভাইবোন আমাকে জ্বালিয়ে মারে। চলে যাক বিয়ে করে।”

জেঠু বলল,”মেয়েমানুষের এত রাগ থাকা ভালো না।”

আপা জেঠুর কথা শুনে ভর্তাটুকু পুরোটা না খেয়ে রাগ করে চলে গেল সেখান থেকে।

____

টুসু রাতে আপাকে জোর করে চুড়িগুলো পরালো। আপা খুশি হয়েছে। টুসুকে বলল,

“আমার জন্য চুড়ি আনলো। অথচ আমি কি করলাম ওর সাথে?”

টুসু বলল,”আফসোস করতে করতে তোমার দিন যাবে।”

সে জোর করে আপার হাতের ছবি তুললো। সাদাকালো ফিল্টার দিয়ে ছবিটা অভিনব শারাফকে পাঠালো। গায়ে রঙ ওখানে বোঝা যাচ্ছে না।

অভিনব শারাফ ছবিতে লাইক রিয়েক্ট দিয়ে বলল,”চুড়ি কে দিয়েছে?”

টুসু লিখলো,”মানুষ।”

“কোন মানুষ?”

“একটা রাগী মানুষ। কেমন লাগছে?”

“মোটামুটি।”

ওই যে মোটামুটি বললো তার আর খবর নেই। একদিন, দুদিন, তিনদিন, চারদিন, পাঁচদিন। টুসুর ছটফটানি গেল না। একটা মানুষ এভাবে হারিয়ে যেতে পারে?

টুসু নিজের আবেগ দমিয়ে রাখলো তারপরও। তুলি বলল,”পাগল। একটা ফোন নাম্বার তো রাখবি। কোনো বিপদআপদ হলো না তো?”

টুসুর মনটা অদ্ভুতভাবে ভারী লাগছিল। ঠিক কী কারণে এমনটা হচ্ছে তা তুলিকে বোঝানোর মতো শব্দ খুঁজে পেল না সে। মেসেঞ্জারের চ্যাটবক্সটা নীরবতার বোঝা নিয়ে ঝুলে থাকলো। দিনের প্রতিটি প্রহর—সকাল, দুপুর, বিকেল নিষ্প্রাণ ও তিক্ত লাগছিল টুসুর কাছে। চারপাশে সব কিছু ঠিকঠাক চললেও তার ভেতরের অশান্তিটুকু একটুও কমলো না। যদি এমন হয় অভিনব শারাফ আর না ফেরে?”

______

এদিকে বাড়িতে আরেকটা কান্ড ঘটলো। পায়েল আপাকে দেখতে এসে টুসুর আপাকেই পছন্দ করে গেল পাত্রপক্ষ। আপাকে যেকোনো মূল্যে তারা ওদের বাড়ির বউ করতে চায় জানিয়ে গেল। বাড়ির সবার কাছে এটা আশ্চর্যের হলেও
পায়েল আপা বেজায় খুশি। সে ঠোঁট কামড়ে কামড়ে তার ভাইয়ের মতো বদমায়েশি হাসছে আপার সামনে। আপা স্তব্ধ! টুসু শুধু দেখলো আপার চোখের জলগুলো চোখে জমে আছে। কিন্তু বেরিয়ে আসছেনা। পায়েল আপা বলল,

“ভাইয়াকে ফোন করবো?”

আপা তার হাত চেপে ধরে বলল,”না না। এমন করো না। বলবে বিয়ে দিয়ে দাও। আব্বা উনার কথা সিরিয়াসলি নিয়ে নেবে। আমি কি করবো এখন?”

এদিকে জেঠুর অনুমতি পেয়ে টুসুর বাবা তো ভীষণ খুশি। ফোনে সবাইকে বিয়ের কথা জানিয়ে দিতে দিতে বলল,

“এবার শুধু বিবেককে বুঝিয়ে বলা বাকি। বড়ো ভালো পাত্র বুঝলে? নিজেদের ফ্যামিলি বিজনেস। রাইমাকে লন্ডনে নিয়ে যাবে। আমার ভাইও মত দিয়েছে। এত ভালো ছেলে হাতছাড়া করা যাবে না।”

এসব অশান্তির মধ্যে টুসুর অভিনবের কথা মনেই ছিল না। কিন্তু যখন আপাকে ঘরে কাঁদতে দেখলো টুসুর বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। আপা বিবেক ভাইকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে কাঁদছে ওই ভয় কেন তার মনে উঁকি দিচ্ছে? তাহলে আপা যেমন বিবেক ভাইকে ভালোবাসে, সেও সেভাবে অভিনব শারাফকে ভালোবাসে?

নিজের মনের সাথে সারারাত যুদ্ধ করলো টুসু। আপার ফোঁপানির শব্দের সাথে সাথে টুসুর চোখের কোণা বেয়েও একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। টুসু কখনো কাঁদেনা। সে ছোট হলেও খুব আঘাত না পেলে কাঁদেনা। কিন্তু আজ একফোঁটা চোখের জল তার বুকটা কেমন ভারী করে ফেললো টুসু তা কাকে বোঝাবে?

চুপিচুপি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বারান্দার এক কোণে দাঁড়ালো টুসু। চারদিকে ঘন অন্ধকার, গাঢ় নীরবতা। দূরে কোথাও ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে, আর আকাশে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা তারাদের দিকে তাকিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুগুলোকে আর আটকালো না। অঝোরে কাঁদলো। তার আপার কষ্টগুলো দূর হয়ে যাক। সে যেন আর কোনোদিন না কাঁদে। তার কষ্টগুলোও দূর হয়ে যাক। কাল ভোরে এক নতুন সূর্য উঠুক। বিবেক ভাই আর অভিনব শারাফ দুজনেই ফিরে আসুক।

চলমান….